User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বহু প্রসবিনী “প্রথম আলো ব্লগ”-এর পাঁচজন জনপ্রিয় কবির “একঝাঁক জোনাক” কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে। নীল সাধু, মেহেরাজ শারমীন [ব্লগার পাহাড়ী], আশরাফুল কবীর, অনিন্দ্য অন্তর অপু ও অসীম আহমেদের [ব্লগার স্বপ্নের ফেরিওয়ালা]। মোট ৫০টি কবিতা নিয়ে এ গ্রন্থটি কবি নীল সাধুর তৃতীয় এবং অন্যান্যদের প্রথম কাব্যগ্রন্থ । পাঁচজন কবির কবিতার বৈশিষ্ট্য স্বতন্ত্র। আধুনিকত্যবাদী কাব্যধারার একটি বৈশিষ্ট্য হলো দু:খবিলাস এবং নৈরাশ্য চর্চা। আজ চারিদিকে সবাই দুঃখ, বিলাপ সম্মন্ধে কেবল সচেতন নন, এ বিলাপ তাঁদের চেতনাকে এত বেশী অভিভূত করে রেখেছে যে জীবন নিয়ে তাদের আনন্দ, শ্রদ্ধা, বিস্ময় কৌতুহল বিলুপ্ত হয়ে জায়গা জুড়েছে বিরক্তি, বিতৃষ্ণা কিংবা নিরাশা। সে যাই হোক “কবি মানেই কালের কথক। দু:স্বপ্নের ঘোর নেমে এলে সোনার সংসার আঁকড়ে ধরে থেকে সহসা বেঁচে বর্তে উঠি আমরা মানুষ। স্মৃতির আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় সমস্ত দৈন্যতা, হাহাকার, বেদনা। অনাড়ম্বর জীবনের অনুত্তাপ শাদা ছাইয়েও কবিরা খুঁজে ফেরে অলীকমুক্তো; শব্দ, মেঘের সুতোয় গাথেঁ কবিতা। এ এক অন্য জীবন। কবিতারা হারায় না কখনো... কবিতা মানেই জীবনের উপাখ্যান।” অনেকে বলেন- যুগের প্রভাব। কারো মতে, কবিতা মানেই তীব্র অনুভূতির প্রতিফলন। কবি নীল সাধুর পাঁচটি কবিতা সেই অনুভূতিরই প্রতিফলন । বিষয়বস্তু প্রকৃতি এবং প্রেম কিন্তু উপস্থাপনার ক্ষেত্রে একেবারে স্বতন্ত্র। আবার সে-প্রেম অলীকও নয় বরং জীবনবাস্তবতারই অবচেতন স্বর, যা দক্ষ কবির চেতনায় একেবারে জীবন্ত হয়ে ওঠে। কবি নীল সাধুর কবিতায় ইমেজারিগুলো কিছুটা সাদামাটা কিন্তু ব্যতিক্রধর্মী উপস্থাপনায় চিত্রকল্প হয়ে উঠে অব্যর্থ । আর কাব্যভাষাও গতানুগতিকের মোড়ক ছেড়ে এক ব্যতিক্রমী রূপ নেয়। তিনি বুঝিয়ে দিতে সমর্থ হন - তাঁর কবিতা অন্য ধাঁচের, তাঁর অনুভূতির ডানা ভিন্ন গড়নের । কবিতাগুলো গদ্যছন্দে লেখা- শুরুতে মৌলিকতা আছে-তা হলো শুরুটা কিছুটা Dramatic বা নাটকীয় এক. “শীতের মদির বাতাসে উদ্দাম গন্ধম ফুল তুই তোর শরীরে অচেনা ভেজা ভেজা ঘ্রাণ নিবিড় বন্ধনের জোনাক দল হয়ে আমার অবাক চোখের তারায় লুটোপুটি খায়; হায়! ইশক! ..........” (শীতের মদির বাতাসে উদ্দাম গন্ধম ফুল তুই) দুই. তোমার গ্রীবাদেশে মুক্তো দানার মতো ছড়িয়ে আছে বিন্দু বিন্দু ঘামের জলকণা ..চোখ এবার তোমার ঠোট স্পর্শ করল আলতো করে ময়ুরাক্ষী নদী পেরিয়ে... আমি মুগ্ধ মুসাফির ডাকাত হয়েছি। (আমি মুগ্ধ মুসাফির ডাকাত হয়েছি ) পাঠকদের বুঝতে বাকী থাকে না কবি নীল সাধু হৃদয়ের অভ্যন্তরে ক্রিয়াশীল তীব্র আবেগ। বুঝা যায়, প্রেম সৌন্দর্য, নারী প্রকৃতির সাথে মিলন ঘটিয়ে এক স্বপ্নের পৃথিবী গড়ে তুলেছেন। কবিতার পংক্তিগুলো পড়লে পড়লেই অনায়াসে ধরা যায় কবিতা নির্মানের দক্ষতা। প্রথম কবিতার রূপকের আদলে “গন্ধম ফুল” কিংবা দ্বিতীয় কবিতায় উপমা “গ্রীবাদেশে মুক্তো দানার” ব্যবহার পাঠককে নাড়া দিবে। শব্দের ব্যবহার, চিত্র-কল্প নির্মান এবং কবিতার শরীরে লাবন্যের ঢেউ দেখে পাঠক মুগ্ধ হবেন-নিশ্চিত বলা যায়। কবিতায় প্রকৃতি কোমল, সুন্দর এবং শান্ত । নীল সাধুর প্রকৃতিতে মরণপণ প্রতিযোগীতা নেই, নেই সর্পিল জঠিলতা বা ভয়াবহতা। পাঠক কবিতার ভেতর প্রবেশ করেই পেয়ে যাবেন- “শীতের মদির বাতাস” সাথে “গন্ধম ফুল”, “ভোরের শিউলী”, পেলব স্বর্ণলতা”, “অতলান্তিক ঢেউ” “অমরাবতীর ঝোপের” কিংবা “কাশবনের ছায়া”। অসাধারণ কিছু ইমেজারি “ময়ুরাক্ষী নদী”, “অচেনা মানচিত্র”, “বিবশ শরীর”, “ কৃষ্ণচুড়ার নূপুর” কিংবা “সরিষার হলুদ মাখা রোদ” কবিতার আবেদনকে বহুগুনে বাড়িয়ে তুলেছে। পল্লী জীবনের খুব কাছে থেকে দেখা চিত্রকল্প গুলো অতি সাধারণ প্রাণের রসরূপ যা তিনি অসামান্য দক্ষতার সাথে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। এটি তাঁর কবিতার অনন্য সাধারণ বৈশিষ্ট্য। “ পালং বইতা শাক”, “পুকুর সেচা শোল টাকি মাছ”, “ধনে পাতা পেয়াজ ডগা ভর্তা” “লাউ মাচার পাশে দশ্যি ছেলেমেয়ে” “ নাড়ার বনে আগুন” - বিষয়গুলো একেবারে গ্রামীন যা প্রাত্যহিকতার তুচ্ছতার সহজে চোখে পড়ে না বা রসাল হয়ে ওঠে না। কিন্তু এ গুলোকে কবি নীল সাধুর তাঁর অনুভূতি-মাহাত্মে সজীব করে তোলেছেন। এ যেন চিত্রধর্মের নিপুনতা । তরতাজা ঘ্রাণের মুদ্ধতায় তিনি একেঁ দিলেন গ্রামীন চিত্রপট । এ গুলোকে স্বকীয়তার সাথে কবিতায় অবিকল বসিয়ে দেয়া- মুনশিয়ানার ব্যাপার। এগুলো কবির প্রকৃতি প্রেমের নিভুল স্বাক্ষর। লব্ধ অভিজ্ঞতা-নিশ্চিত প্রমাণিত। নীল সাধুর প্রকৃতি শান্ত কিন্তু গভীরভাবে আবিষ্ট প্রেমিকের হৃদয় ব্যবচ্ছেদ করলে কিছুটা উত্তালতা অনুভূত হতেই পারে । “আমি মুগ্ধ মুসাফির ডাকাত হয়েছি”/// “হায়! ইশক!” কিংবা “এই শীতে যাবো আমি! যাবে তোর কাছে!”- সে উত্তালতার কিছুটা ইংগিত বহন করে। সাদামাটা পাঠক হিসেবে বলি “এই শীতে যাবো আমি! যাবে তোর কাছে!” শিরোনামের কবিতাটির একটি দারুন দিক আছে। “এই শীতে যাবো আমি! যাবে তোর কাছে!/ সিম ফুলে ভরা ঝাড়টার পাশে নরম রোদ পোহাবো/ কুয়াশার চোখে ফাকিঁ দিয়ে জবুথবু বড়োর মতন/ গাঢ় আর অলস চোখে একজন আরেকজনকে দেখে নেবো// এক দৃষ্টিতে মনে হয়, প্রিয়াকে শান্তনা দিতে কবির প্রতিশ্রুতি । নাকি নস্টালজিক কবি প্রিয়ার বাহুতে ধরা দেবার জন্য ব্যাকুল বলেই স্বপ্নের জাল বোনা। মাঝে মাঝে কবিকে বুঝা বড় দায়। কবিতাগুলো যেন একই বৃন্তে প্রকৃতি, নারী এবং প্রেমের সাথে ঘনিষ্টতার অপূর্ব রূপায়ণ। কবি নীল সাধুর “বুনো ফুলেদের সাথে” একটি অসাধারণ কবিতা। এ কবিতায় আবহ-পরিবেশ-প্রেম কোনটিই আগের মতো নয়। কবি আধুনিক যুগের যান্ত্রিক জীবন- যান্ত্রিক প্রেমকে অব্যর্থ তুলির আঁচড়ে অবিকল একেঁ দিয়েছেন। মন আমার রোদে পুড়ে পুড়ে এলোপাথাড়ি হাটতে থাকে, শাহবাগের ফুলের দোকানগুলো ছাড়িয়ে ছায়াদের সংগে নিয়ে বাংলামোটরের জ্যাম পেরিয়ে আমার সামনে এসে দাড়ায়;আমি তাকে দেখেই আমার বুনো ফুলগুলো ফেরত চাই তার কাছে সে জানায় সে সব ফেলে এসেছে কালীগঙ্গার তীরে; ... কাশ বনের ছায়ায় বসে মেঘদের দিয়ে বার্তা পাঠায় আসবে না আর সে কোনদিন; অমরাবতীর ঝোপ থেকে প্রজাপতির দল আমাকে সাহস দেয় ভেবোনা, আমি তোমায় নিয়ে যাবো কালীগঙ্গার তীরে ফুলেদের সাথে থেকো তুমিও; (“বুনো ফুলেদের সাথে”) এ পংক্তিগুলোতে রোদ পোড়া মন নিয়ে বিরহকাতর প্রেমিকের মানসিক অবস্থা অসাধারণ নৈপুণ্যের সাথে পাঠকে হৃদয়ে ধরা দিয়েছে। যেখানে আবেগ-অনুভূতির স্রোতের তোড়ে তৈরি হয় অবিমিশ্র বিষাদের সূক্ষ্ম শিল্পকলা, ফিনফিনে সুতোর মতোই যার বিস্তার। এখানে প্রেমিককে কখনো ক্রোধস্ফুরিত বা প্রতিশোধপরায়ণ মনে হয়নি কারণ অমরাবতীর ঝোপের থেকে আসা প্রজাপতির সাথে কালীগঙ্গার তীর তার জন্য বড় শান্তনা— ........ ইট কাঠের পন্কিল শহর থেকে আবর্জনাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এখানে চিলদের দল উড়ে শুধু হরিনীর মাংসের লোভে: আমি মাংসাশী হতে পারিনি কোনদিন; (“বুনো ফুলেদের সাথে”) পংক্তিগুলো পড়ার পর একটি বিষয় সহজ হয়ে উঠে বলে মনে হয়- তা হলো কবি নীল সাধু যুক্তির পরম্পরায় পংক্তি বিন্যাস করেন না ; প্রতিটি পংক্তি তার নিজের ব্যাঞ্জনা নিয়ে বেজে উঠে; পরের পংক্তির সাথে অনুভবের সূত্র রয়েছে, তবে প্রতিটিই আলাদা সত্তা নিয়ে থাকে; সব মিলিয়ে পড়তে পড়তে পাঠকের মনে একটি সংগতিপূর্ণ স্তবকের প্রত্যাশা তৈরি হয়, কবি একালের যান্ত্রিকতা বা বিচ্ছন্ন-মানসিকতার কথা বলেছেন “এখানে চিলদের দল উড়ে শুধু হরিনীর মাংসের লোভে” ফলে মানুষের পারস্পরিক যোগাযোগের নীটফল শুন্য। জীবনের এতো তুচ্ছতা কিংবা গ্লানিতে কবিকে বিরহ কাতর হয়ে বিলাপ করতে দেখি না । কবি নৈরাশ্যবাদে বিশ্বাসী নন । কবি কন্ঠেই শুনি-- আমাকেও পাবে ঐ কালীগঙ্গার তীরেই বুনো ফুলেদের সাথে ” (“বুনো ফুলেদের সাথে”) কবি নীল সাধুর কবিতাতে তেমন কঠিন কিংবা জঠিল বিদেশী শব্দের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয় না। একেবারে জীবন ঘনিষ্ঠ বাংলা শব্দ নিয়ে ব্যতিক্রমধর্মী ভাষাশৈলির মাধ্যমে প্রকৃতির ঘ্রাণময় প্রেম যেমন পাঠককে পৌছে দিয়েছেন তেমনি গভীরতম বাক্য বিন্যাসে যান্ত্রিক জীবনের অন্ত:সারশুণ্যতাকে এঁকে দিয়েছেন অবিকল। ফলে আধুনিক কবিতার লক্ষনগুলো তাঁর কবিতায় এসেছে বিভিন্নভাবে। গতানুগতিক শিরোনামের প্রতি কবির আগ্রহ তেমন লক্ষ্য করা যায় না। কবিতাগুলোর শিরোনামের ক্ষেত্রে কবির পছন্দ প্রথম কিংবা শেষ পংক্তি যেখানে পুরো কবিতার রস লুকিয়ে থাকে। আবার ‘তুমি’/তুই/ আমি” সর্বনামের আবেগী ব্যবহার চোখে পড়ার মতো। তাছাড়া কবিতাগুলোতে সরাসরি কোনো ছন্দের ব্যবহার নজরে পড়বে না পাঠকের। কবি হয়তো ইচ্ছা করেই এখানে ছন্দের প্রথাগত গন্ডীতে বাঁধেননি কবিতাগুলোকে। তা সত্ত্বেও নিবিড় পাঠের মাধ্যমে বোঝা যায়, নীল সাধুর কবিতার ভেতর একটা অন্তর্গত ছন্দ আছে - তা অতি সূক্ষ্ম বুননের মতোই কবিতার ভেতর লুকিয়ে থাকে। তথ্যঋণ: “একঝাঁক জোনাক” পাঁচ কবির সিম্মিলিত কাব্যগ্রন্থ। প্রকাশক:- এক রঙ্গা এক ঘুড়ি। লেখক: মোহাম্মদ জমির হায়দার বাবলা ব্লগ প্রোফাইলঃ http://prothom-aloblog.com/profile/BABLA
Was this review helpful to you?
or
বইটি এমন চমৎকার! এতো সুন্দর!! হাতে নিলেই ভালো লাগা কাজ করে। অসাধারণ সুন্দর প্রচ্ছদ করেছেন চারু পিন্টু, যা মুদ্রণের পর ঝকঝক করছে। ভেতরের পাতায় অফ হোয়াইট প্রলেপ দেয়া- তাই কবিতাগুলোর শব্দেরা যেন ফুটে আছে আপন মহিমায়, পাতায় পাতায় যেন নিপুণ কারুকাজ করা। সবমিলিয়ে পাঠক খুব পছন্দ করেছেন বইটি। মেলায় বিক্রি হচ্ছে বেশ ভালো! গত পহেলা ফাল্গুন বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক, লেখক ও কলামিস্ট আনিসুল হক কাব্যগ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করেছেন এবং পাশাপাশি বইটি বেশ কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে দেখেছেন। আমার সহ অন্য কবিদের কবিতা পড়েছেন এবং যাবার সময় আগ্রহ করেই এক কপি নিয়ে গেছেন। নবীন কবিদের সঙ্গে সঙ্গে আমি নিজেও খুব খুশী। এই বইটিতে আমার কবিতার পাশাপাশি কবিতা রয়েছে মেহেরাজ শারমীন [ব্লগার পাহাড়ী], আশরাফুল কবীর, অনিন্দ্য অন্তর অপু ও অসীম আহমেদের [ব্লগার স্বপ্নের ফেরিওয়ালা]। এক রঙ্গা এক ঘুড়ি থেকে প্রকাশিত দৃষ্টি নন্দন এই বইটি রকমারি ডট কম ছাড়াও বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে লিটলম্যাগ প্রাঙ্গণের আগুনমুখা [স্টল নাম্বার ২৪] ও গদ্যপদ্য [স্টল নাম্বার ২৭৭] প্রকাশনীর স্টলে। - নীলসাধু