User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
<p><em>লিখতে বসলেই আঙ্গুল থেকে সার্চলাইটের মত আলো পড়ে কাগজে<br /> লিখে ফেলি ভাগ্যের হাতে হেরে যাওয়া কিছু মানুষের বিবৃতি.<br /> ভাবলেন,<br /> হাওয়া এসে টুটি চেপে লিখিয়ে দিয়ে যায়?<br /> নাতো।<br /> সবি উনার বদান্যতা!<br /> হেরে যাওয়া মানুষদের সব গল্প মূলত ঈশ্বরেরই লেখা [ রাবেয়া রব্বানি ]</em></p> <p>বিষয় যখনই আসমান থেকে ভূমিতে নেমে এলো, স্তুতির স্তর থেকে স্নায়বিক স্পৃহায় স্থানান্তরিত হলো আর তা তখনি অচ্ছুৎদের স্পর্শ করলো, কবিতার পরিবর্তন হলো সাথে এলো গল্প উপন্যাসের ধারা; স্রষ্টা থেকে সৃষ্টির ঘরে, গম্ভীর শ্লোক আর মন্ত্র থেকে অমার্জিত বা আদুলে মাটির ভাষায় রোপণ হলো গল্প - কথার যার বিস্তর আবাদ হলো বলা নাবলা হাসি কান্না ভালোবাসা ঘৃণায় মানবিক ধর্মের মানুষ ধর্মের । বলা হয়েই থাকে মুক্তি বুদ্ধির চর্চা হতে আধুনিক সাহিত্য । যে জীবনে বসবাস তাতেই সৃষ্টি হতে থাকলো যে সাহিত্য । সৃষ্টির তুলে ধরা হাত নয় বরং স্রষ্টার আঙুল হাতড়াতে লাগলো সৃষ্টির শরীর<br /> আমূল স্পর্শ করতে । ওমর শামস এর লেখা , স্বপ্নের কলকবজা: খোয়াব নামা প্রবন্ধ পড়ে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস এর স্মৃতিচারণে পেয়েছি :<br /> "<strong>জনগোষ্ঠীকে আমূল স্পর্শ করার জন্য হাতড়ে বেড়াচ্ছি, আঙুল ব্যথা হলে গেলো, এখন পর্যন্ত ধরতে পারি নি । কেউ কেউ কয়েকটি গল্পে ব্যবহৃত ঢাকাইয়া স্ল্যাং নিয়ে আপত্তি তুলছিলেন । কিন্তু কথাবার্তায় অবিরাম এই-স্ল্যাং ব্যবহার করেন, এগুলো তাদের কাছে প্রকাশের অপরিহার্য মাধ্যম । এইসব কিন্তু গালাগালি নয় রাগ বিরক্ত ক্ষোভ গ্লানি এমনকি ভালোবাসা ও স্নেহ প্রকাশের উপায় ।</strong>"</p> <p>বলতে যাচ্ছি স্রষ্টা সৃষ্টির বিষয় আর ভাষা নিয়ে , সাহিত্য যিনি সৃষ্টি করছেন তিনি কী সৃষ্টি করবেন কী দিয়ে সৃষ্টি করবেন এবং সৃষ্টকে কোন ভাষা শিখাবেন এটা একান্তই তারই ইচ্ছাধীন । আখতারুজ্জামান ইলিয়াস জনগোষ্ঠীকে আমূল স্পর্শ করার ইচ্ছেই বলছেন স্পর্শের মাধ্যমটা কি হবে । গাভস্ পরা হাতে বস্তুর আকার আকৃতি বুঝতে পারি কিন্তু ঐবস্তুর ত্বক কি পুরোটাই অনুভব করতে পারি ? হাতের আঙুলের অনুভূতি শক্তি যেটা টের পায় তা হাতে জড়ানো গভসের উপাদান হয় তো রবার কিংবা লেটেক্স; তা অনুভূতিতে নিতে চাওয়া বস্তুটির উপাদান নয় । সেইক্ষেত্রে বস্তুর ভালো ধারণা পেতে খালি হাতে দেখাই হয় তো ভালো । খালি হওয়া মানে মার্জিত না বর্ধিত না বা বিকৃত না, যেমনি আছে তেমনি </p> <p>...<br /> <em>- হ ।-আইচ্ছা, মনু ভাই এত্ত ছুকনা ! মাইনছে হুদামিচাই হেরে ডরায় কেলা?<br /> -পেলেনের ইঞ্জিন কই থাকে কয়া পাড়চ ?<br /> -না ।<br /> -পেলেনের পাঙ্খায় । মাইনরের পাঙ্খা অইলো গিয়া মাইনছের মন । মনু ভাইয়ের ইঞ্জিন যেমতে স্টার্ট লয়, ছামনে থাকলে কইলজার লগে আতা উজুরী শুদ্দা লইরা উডে না?<br /> মন্টু আর রুস্তমের কথায় কথায় মনু মিয়ার গল্পটি এমনি ভাবেই শুরু হয়, শুরু হয় শ্বাপদ ভাত কাপড় ভালোবাসা ও অন্যান্য বইটির প্রথম গল্প । মনু মিয়ার আকার আকৃতি যেমন ; সাদা পাঞ্জাবি পরা, খুব ফর্সা এই যুবা পুরুষ নীলচে আলো আঁধারেও স্পষ্ট হয়ে ভাসে দুজনের কাছে । হালকা পাতলা গড়ন, টিকালো নাক,মেয়ে-সুলভ পাতলা ঠোঁটের কারণেই হয়ত চট করে খুব একটা ভয়াবহ লাগে না তাকে।<br /> আর মনু মিয়ার প্রকৃতি হলো যেটাকে গলভস খোলা হাতে ছোঁয়া কথা বলছি :<br /> দুজন এক সাথে আর্তনাদ করে উঠে ।মনু মিয়ার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তারা ভাল ভাবেই অবগত । ভয়ের একটা স্রোত (গ্রোত !) মন্টুর শরীর বেয়ে নামতেই সে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। রুস্তম নাকি কান্না শুরু করে । অর্বাচীন সুখে হেসে উঠে মনু । মোবাইলের সবুজ আলো উঁচু করে দেখতে চায় ঐ দুজনের মুখ । ভীত ( ভিত ! ) মানুষের চেয়ে দর্শনীয় আর বুঝি কিছু নাই। জগতে অর্থ, নারী , মাদক সব উত্তেজনার চেয়ে ত্রাস সৃষ্টির উত্তেজনাই সেরা আর সেটা মনু তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে চায় । কিছুক্ষণের মধ্যে মনুর আরো কিছু সহচর এসে জড়ো হয়েছে মাঠের কোনে। মন্টু আর রুস্তম এখন মনু মিয়ার পা জড়িয়ে ধরে কাঁদছে । মনু মিয়ার সেখানে মনোযোগ নেই । সে পায়ের কাছ হাতড়ে পুকুরে একটা বড় ঢিল ছুড়ে। পানিতে গোল গোল আলোড়ন হচ্ছে। একটা আদিম ক্ষমতা অনুভব করে আলোড়িত হচ্ছে মনু নিজেও । দ্বিপ্রহরের ছায়ার মত লম্বা হচ্ছে তার ভেতরের পৌরুষ।</em><br /> [ কথার মধ্যে বাজে কথা চলে এলো ভীতকে ভিত আর স্রোত কে গ্রোত এমন অনেক টাইপো ভুলের দায় কে নিবে ? পড়তে গিয়ে কখনো কখনো এসব ভুল পড়ার আগ্রহ কমিয়ে দিচ্ছিলো ]<br /> যাই হোক লম্বা হয়ে যাওয়া পৌরুষ ছায়াটির বোবা জন্তুর মতো গোঁ গোঁ শব্দে পরিনতি দেখ যায় এই গল্পে । আমি পরিনতির কথা বলছি মোরালিটি না ; রিয়েলিটি । রিয়েলিটির ভিতরকার রিয়েলিটি ; আবারও আখতারুজ্জামান ইলিয়াস এর স্মৃতিচারণ উদ্ধৃতি করি : </p> <p><strong>" ব্যাপার হচ্ছে আমি নির্দিষ্ট কোন philosophy মাথায় রেখে reality দেখি না । reality কে আমি ভিতর থেকে দেখতে চাই কিন্তু আমি তো journalist না । reality মানে যা দেখতে পাচ্ছি কেবল তাই নয় । এর ভিতরকার স্বপ্ন , সাধ, সংকল্প, সংস্কার, কুসংস্কার সবই reality ভিতরকার reality "</strong><br /> আবার মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন লিখি প্রবন্ধে বলেছিলেন :</p> <p><strong>"জীবনকে আমি যেভাবে ও যতভাবে উপলব্ধি করেছি অন্যকে তার ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ ভাগ দেওয়ার তাগিদে আমি লিখি। আমি যা জেনেছি এ জগতে কেউ তা জানে না [জল পড়ে পাতা নড়ে জানা নয়]। কিন্তু সকলের সঙ্গে আমার জানার এক শব্দার্থক ব্যাপক সমভিত্তি আছে। তাকে আশ্রয় করে আমার খানিকটা উপলব্ধি অন্যকে দান করি।দান করি বলা ঠিক নয়_ পাইয়ে দিই। তাকে উপলব্ধি করাই। আমার লেখাকে আশ্রয় করে সে কতকগুলি মানসিক অভিজ্ঞতা লাভ করে_ আমি লিখে পাইয়ে না দিলে বেচারী যা কোনোদিন পেতো না। কিন্তু এই কারণে লেখকের অভিমান হওয়া আমার কাছে হাস্যকর ঠেকে। পাওয়ার জন্য অন্যে যত না ব্যাকুল, পাইয়ে দেওয়ার জন্য লেখকের ব্যাকুলতা তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি। পাইয়ে দিতে পারলে পাঠকের চেয়ে লেখকের সার্থকতাই বেশি। লেখক নিছক কলম-পেষা মজুর। কলম-পেষা যদি তার কাজে না লাগে তবে রাস্তার ধারে বসে যে মজুর খোয়া ভাঙে তার চেয়েও জীবন তার ব্যর্থ, বেঁচে থাকা নিরর্থক। "</strong></p> <p>উপলব্ধি দানের কথা এলো, এলো মানসিক অভিজ্ঞতার কথা যা অন্য কেও জানে না লেখক ছাড়া কিন্তু তা আবার সকলের জানার সাথে শর্ব্দাথক ব্যাপক সমভিত্তি আছে । মানসিক অভিজ্ঞতার একটা ভুল অর্থ কিন্তু করে ফেলি মাঝে মাঝে তাকে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা মনে করে , অনেক উৎসুক পাঠক লেখকের সৃষ্টিকে লেখকের চরিত্র মনে করেন । তার উত্তরে একটি সহজ কথা মনে রাখলেই হলো<br /> <strong>... I write differently from what I speak, I speak differently from what I think, I think differently from the way I ought to think, and so it all proceeds into deepest darkness / Franz Kafka</strong></p> <p>দ্বিতীয় গল্পটি সম্ভবা রমিজার, রমিজা সন্তান সম্ভবা এক ডাকাতের গৃহিণী । সন্তান সম্ভবা বলেই যে গল্পটির নাম সম্ভবা ঠিক তা মনে হয় নি আমার শেষ করে মনে হলো আরো কোন সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে জীবনের স্বপ্নের বা শুধু বেঁচে থাকার ।<br /> ...<br /> <em>। সে দিকে তাকিয়ে রমিজা অবাক হয় না । তার চোখ কিছুটা ঝাপসা হতে থাকে । কিছুক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে শেয়ালের তীব্র ডাকে যেন তার যেন হুশ ফিরে । সে কানি বুড়িকে ঠেলে উঠায় । কানি বুড়ি ধরমর করে উঠে বসে,<br /> -কি হয়েছে ?<br /> -ইলাকা ছাড়ি চলি যাব । আমার লগে লও জংলার রাস্তা বালা চিনবির পারি না<br /> -গিরাম ছাড়ি চইলে যাবি! তা আমি তোক ক্যাবা লয়া যাব !<br /> -তুমি কয়া দিবা আমি চিনি চিনি যাতি পারবোনে ।<br /> -তা এত রাত্রি ব্যালা যাবি কোনে? তালিপারে এই বিডা খালি পড়ি থাকপে ? সুয়ামির লাশ দেখবিনানে ?<br /> - কতা কম কম কবা বুড়ি ।<br /> রমিজার বাজখাঁই কন্ঠ কানি বুড়ি ভয় পায় তবু সে নড়ে না । সে মনে মনে ভাবে, এই গ্রাম আর অন্য গ্রাম কি সব ই তার কাছে আধাঁর । তবু হঠাৎ এই গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার কথায় সে যেন কিছুটা দ্বিধাগ্রস্থ।<br /> রমিজা কিছুক্ষণ উত্তরের অপেক্ষায় উসখুস করে তার হাত ধরে হ্যাচকা টান দেয় । রমিজার শক্ত হাতের বাঁধনকে অবলম্বন ভেবে মুহূর্তেই সহজ হয় কানি বুড়ি। ... যন্ত্র চালিতের মত পথ বলে দিতে থাকে...<br /> অনেকটা রাত কেটে গেছে । আকাশে তবু চাঁদটা খোলতাই আলো ছড়াচ্ছে । রমিজা আর কানি বুড়ি ঘাটে লঞ্চের অপেক্ষায় বসে আছে । কখন লঞ্চ আসবে তাদের জানা নেই । ঘুম ঘুম চোখ বারবার মুদে আসে কানি বুড়ির । রমিজার চোখ তবু জ্বলজ্বল করে আসন্ন ভোরের কথা ভেবে ।</em></p> <p>আসন্ন ভোরের সম্ভাবনাই সম্ভবা করলো গর্ভবতী রমিজাকে ; গল্পের এই ধরণের যূথবদ্ধ রমিজার শারীরিক আবস্থা আর মানসিক সংকল্প যখন এক চিত্রপটে ধরা দিলো তখন পাঠক হয়ে ভীষণ অবাক হয়েছি, রাবেয়া রব্বানির গল্প সৃষ্টির মুনশিয়ানাতে । সম্ভবা আমার ভালোলাগা একটা গল্প । গল্প নিয়ে একটি কথা হলো তাদের জন্য যারা এটি পড়বেন হয় তো ভূপেন চরিত্রটি কিছুটা উশখুশ সৃষ্টি করবে মনে, বা রমিজা চরিত্রে কিছুটা প্রভাব খাটতে পারে , কিন্তু এটা গল্পেরই অংশ</p> <p><strong>চাষী বৌ নিজের দেহকে পণ্য করলে চাষীর জীবনের বাস্তবতাতেই খুঁজতে হবে তার মর্ম, তাতেই ফুটবে তার করুণ রূপ । নতুবা হবে অশ্লীলতা, ন্যাচারালিজম । আমরা ভদ্রলোকেরা বলি : আহা গরীবের বৌ অভাবের তাড়নায় দেহ বিক্রি করলো !<br /> আমাদের ভাব খানা এই, যেন আমাদের আহা বলার জন্যেই সে এই কাজটা করেছে, অন্যথা কোন প্রয়োজনই ছিলো না [ পাঠকগোষ্ঠীর আলোচনা / মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ]</strong></p> <p>তারপর এলো ছায়াপথ ; এটি শহুরে গল্প । শহুরে গল্প বলতে শহরের চিত্রপটে আকাঁ গল্প । আমরা যতোটা না ধনী তারচেয়ে অনেক বেশি গরীব আমরা যতোটা না শহুরে তারচেয়ে অনেক বেশি গ্রামীণ তাই হয় তো আমাদের সাহিত্যে গ্রাম বেশি আমাদের সাহিত্যের পেটে খিদে বেশি, তারপরেও পাঠক মন উঁচুতলার ভ্রমণ করতে পারবে না, সেখানকার জীবনযাপন দেখতে পারবে না অতোটা হিংসুক আমাদের সাহিত্য নয় কখনোই, তাই ঐ স্তর নিয়ে লেখা লিখি অপেক্ষাকৃত কম হলেও একবারেই সংবিধিবদ্ধ নিষিদ্ধ নয় ।</p> <p><strong>“ আমরা তিনজন বসে আছি । পরিপূর্ণ সোনালি গেলাশ<br /> টলটল করছে । চলছে গল্প ও গীবত চমৎকার ।<br /> ভাজা মুরগির মাংস , তার সঙ্গে প্রবল উচ্ছ্বাস ।<br /> ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে, তীব্র জলকণা বেশুমার<br /> এসে পড়ছে জানালার কাঁচে । ঘরে আমরা উত্তাল :<br /> - রাজনীতিবিদেরাই এদেশের খাঁটি খেলোয়াড় !<br /> - মিসেস ফারহানা নাকি যত্রতত্র শোয় আজকাল !<br /> - অমুক কী লেখে! – হো হো হাসি , ঘেন্না , বিদ্রূপ, চিৎকার ... [ সোনালি গেলাস / আ . মা . সৈয়দ ] “</strong></p> <p>তেমনি একটি উত্তাল ঘর থেকে শুরু হয় ছায়াপথ গল্পটি, যে ছায়া পথের নতুন তারকা বেমানান স্বপ্নার মানিয়ে যাওয়ার গল্প এটি ।<br /> <em>“রাকিবের সাথে এক ছাদের নিচে থাকার কোন প্রশ্ন আসে না তবু সব কিছু ছাপিয়ে গতমাসে তার মৃত বাবার শান্ত দেহ, আজকের সকালে প্রেগনেন্সি টেস্ট স্টিকে দুই লাল দাগ, ছোট দুই ভাই নিয়ে তার মায়ের উদ্বিগ্ন মুখ, নিম-তলীতে মামাদের যৌথ পরিবার এই ভিন্ন ভিন্ন দৃশ্যগুলো চোখের সামনে চলচ্ছবির মত ভাসতে লাগল। যদিও এষার তাকিয়ে আছেন মিসেস পাশা । এষার সাথে তাকে নিয়েই কিছু বলছেন কিন্তু সেটা শুনতে পাচ্ছে না স্বপ্না । বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটার শব্দ ছাপিয়ে এখন কিছুই কানে আসছে না তার। প্রচণ্ড তৃষ্ণায় সে চট করে এষার হাত থেকে গ্লাস টা নিয়ে নিলো । হাল্কা টক আর তিতকুটে পানীয় নিমেষেই ঢেলে দিল গলায় । মিসেস পাশা আর এষার তর্ক ও থেমে গেল হঠাৎ।এষা জয়ীর ভঙ্গীতে হাতের বুড়ো আঙ্গুল নাচিয়ে স্বপ্নাকে জড়িয়ে ধরল ।.... চেতনা লুপ্ত হবার ঠিক আগ মুর্হূতে স্বপ্নার মনে হল, তার সামনে অসংখ্য ছুটি, এষা আর মিসেস পাশা আর সংখ্যাটা এভাবে বেড়েই চলবে। “</em></p> <p>এইবার শিরোনামের কাছে ফিরি, গল্পটি ভাত কাপড় ভালোবাসা, এটিও শহুরে পটভূমির গল্প; এমন কি গ্রামীণও হতে পারে, এখানে আরেক স্বপ্নার মানিয়ে যাওয়ার গল্প যার নাম ডালিয়া । যখন প্রথম পড়ি এইগল্পটি শহীদ কাদরীর একটি বিখ্যাত কবিতা মনে পড়ে যায় ...<br /> <strong>“… ব্যারাকে ব্যারকে থামবে কুচকাওয়াজ<br /> ক্ষুর্ধাত বাঘ পেয়ে যাবে নীলগাই ,<br /> গ্রামান্তরের বাতাস আনবে স্বাদু আওয়াজ<br /> মেয়েলি গানের তোমার দুজন একঘরে পাবে ঠাঁই<br /> প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিকই<br /> কিন্তু শান্তি পাবে না পাবে না পাবে না [সঙ্গতি । শহীদ কাদরী ] ‘</strong></p> <p>জীবনানন্দ নাকি স্ত্রীজাতিকে দুভাগে ভাগ করেছেন ; নারী ও মেয়ে মানুষ । যে জীবনে প্রেম ভালোবাসা নিয়ে আসে প্রেরণা দিতে পারে, ভাবনার ধূসর রঙ পেয়েছে সে নারী । আর যে ব্যবহারে ক্ষয়িত হয়, ব্যর্থতায় বির্মষ , নিজেকে গৌরবে উদ্দীপ্ত করতে পারে না সে মেয়ে মানুষ । ভাত কাপড় ভালোবাসার যূথবদ্ধে যে সীমাবদ্ধ হয়, তার ভিতের আনন্দ সুখ কিংবা অভিনয় , গ্রাম শহরের প্রকাশের স্ত্রী শচী যেমন প্রকাশের দেয়া ভাত কাপড় ভালোবাসায় সন্তুষ্ট তেমনি আবার পুরাতন প্রেমিক আগোছানো সোমেন কে কাছে পেলে রোমান্টিক ভ্রমণে আগ্রহী হয় ।</p> <p><strong>“ এ রকম মেয়ে মানুষ জীবন থেকে ঢের গন্ধ-আস্বাদ কুড়িয়ে নিতে পারে; জীবন হাতে আছাড় খেলেও এরা টকটকে রঙিন রবারের বলের মতন লাফিয়ে উঠতে পারে .... [গ্রাম ও শহরের গল্প / জীবনানন্দ দাশ ]</strong><strong></strong></p> <p>ডালিয়ার সুখ কুড়নোর রোগটা তেমনি :<br /> <em>ফেসবুকে লিমনর সাথে কথা হল একদিন ও বলল তোকে নাকি ডিফরেন্ট ছেলেদের সাথে দেখা যায়।<br /> -হুম। এতটুকু শুনে থাকলে ঠিক আছে। ডীপ কিছু শুনে থাকলে তা ভুল।<br /> -একটা মেরেড মেয়েকে ডিফ্রেন্ট ছেলেদের সাথে দেখা যায় এর চেয়ে ন্যাস্টি কথা আর কি হতে পারে? । তোর আর শ্যামলের সম্পর্ক খারাপ?<br /> -হুম।<br /> -তাই তুই জেদে কিংবা ডিপ্রেশানে এরকম করিস?<br /> -হুম।<br /> -রামছাগল কোথাকার! আর বন্ধু নামক ধর্মের কোর্তা পড়া মানুষগুলো তোকে খুব স্যাটিস্ফাই করে? আরে বলদ তারাও ফায়দা লুটে। উলু বনে মুক্তা ছড়িয়ে লাভ কি?<br /> -আরে দূর কিসের লাভ। ভালোবাসা এখানে থাকেই না। বেশির ভাগই ফ্রেন্ড আন্ড সেক্স এই দুইটা মিলিয়ে একটা অদ্ভুত সম্পর্কে যেতে চায়। তোর কথা ঠিক তারা ফায়দাই লুটতে চায়। কয়েকদিন যেতেই নিষ্পাপ মুখগুলোতে ইনিয়ে বিনিয়ে প্রেম তারপর সেক্স কাইন্ড কথাই আসে। বাট বিশ্বাস কর দোস্ত দে কান্ট উইন। আমি প্রাইমারি পর্যন্তের পরই হতাশ হয়ে ফিরে আসি। তাই বেশিদিন বন্ধুত্ব থাকেনা।<br /> -তাহলে এত বুঝিস তবে কি সুখ পাস ফালতু বদনাম করে?<br /> -সুখ পাই না। এস্ক্যাপ করি ডিপ্রেসান থেকে।<br /> -তাই তুই এটাকে ডিপ্রেসান থেকে রিলিজ পাওয়ার গেটওয়ে বানিয়েছিস? মানসিক অশান্তিতে থেকে পালানোর আরো কত উপায় আছে। ডালিয়া তুই আসলে এক আবর্জনা থেকে বাচতে অন্য আবর্জনাতেই পা রাখছিস।<br /> -আসলে এস্ক্যাপ ও না।মাঝে মাঝে আমি নিজেও জানি না কেন এসব করি।</em></p> <p>গল্পটা পড়ে মনে হয়েছে লেখক ডালিয়াকে বলার সুযোগ কম দিয়েছেন কিংবা নিরোপেক্ষ থাকতে পারে নি , তার সাথে মনে পড়ে কবিগুরুর গানটি<br /> <strong>“এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম প্রেম মিলে না , শুধু সুখ চলে যায় , এই মনে মায়ার ছলনায়<br /> এরা ভুলে যায় কারে ছেড়ে কারে চায়<br /> ভুলে যায় ।।<br /> তাই কেঁদে কাটে নিশি তাই দহে প্রাণ ,<br /> ও তাই মান অভিমান<br /> তাই এতো হায় হায় ।। “</strong></p> <p>এর পরের গল্প সংসার মানে দাম্পত্য থেকে কিছুটা বাইরের গল্প, ওয়েটিং রুমে অপেক্ষারত দুজন অচেনা মানুষের গল্প, শান্তুনু একজন বিচক্ষণ সুপুরুষ তার একটি ডিজঅর্ডারের গল্প, যাকে বলা হয় ডিজ্যাভুঁ ।<br /> ...<em>. “মেয়েটির ভেজা মুখের নরম মায়া, ওয়েটিং রুমটির মানুষগুলোর ব্যস্ততার প্রলেপ খুলে রাখা মুখ, খুব সুন্দর শীতের সকাল! আপনার সিগারেট এবং স্কেচ দুটোতেই মন টানছে তাই না মিঃ শান্তনু? কিন্তু আপনি ভয়াবহ অস্বস্তি আর টেনশনে ডুবে যাচ্ছেন। আপনার কাছে মনে হচ্ছে এই সকালটা পাশের সব দৃশ্য, সমুদ্রের মত নীল রঙ্গা মেয়েটি সহ ঘটনাটি আগেই ঘটেছে। দৃশ্যগুলো পুরনো একটি ছবির মত। আসলে তা ঠিক নয়। আচ্ছা ধরুন ঘটনাটি যদি আগেই ঘটে থাকে তাহলে বলুন তো এর পরের মুহূর্তে কি হবে? চুপ করে আছেন যে ?পারছেন না তাই তো?এর মানে হলো ডিজ্যাঁভু ডিসঅর্ডারটা আবার ভর করল। এর পরেই ভয়াবহ ডিপ্রেশনে ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা। মিঃ শান্তনু আপনি মেয়েটার দিকে তাকাবেন না। আপনি বরং আপনার মৃত মাকে চিঠি লিখুন। মৃত মানুষকে মন খুলে সব বলতে পারার কথা। .. “</em></p> <p>গল্পের বিষয়ের অভিনবতার সাথে সাথে লেখকের বিচক্ষণতাও প্রকাশ পায় এই ধরণের জটিল বিষয়ে গল্প করা দেখে, একটা কথা বলার আছে হরদম লিখলেই লেখক হওয়া যায় না , ভালো লেখক হতে হলে অভিজ্ঞতার দরকার, দরকার সম্যক জ্ঞান , প্রতিভা বলে কিছু নেই যদিও থাকে তা হলো প্রচেষ্টার নামান্তর । মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া করেই বলেন “ প্রতিভা বাজে কথা”</p> <p><strong>... প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহণের কথাটা বাজে। আত্মজ্ঞানের অভাব আর রহস্যাবরণের লোভ ও নিরাপত্তার জন্য প্রতিভাবানেরা কথাটা মেনে নেন। মানসিক অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের ইচ্ছা ও উৎসাহ অথবা নেশা এবং প্রক্রিয়াটির চাপ ও তীব্রতা সহ্য করবার শক্তি অনেকগুলি বিশ্লেষণযোগ্য বোধগম্য কারণে সৃষ্টি হয়, বাড়ে অথবা কমে।...কেন লিখি / মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়</strong></p> <p>এই গল্পে ঘোর আছে তাই কবিতাও আছে নাজিম হিকমতের কবিতা আছে জীবনানন্দের আবেশে ডিজ্যাভুঁর মতো কিছু পঙক্তি ...<br /> “<br /> <em>“কবে যেন তারে আমি দেখিয়াছি<br /> কবে যেন রাখিয়াছি হাত<br /> তার হাতে কবে যেন তারপর শ্মশান চিতায় তার হাড়<br /> ঝড়ে গেছে কবে যেন, এ জনমে নয় যেন এই পাড়া গাঁর<br /> পথে তবু তিনশো বছর আগে হয়তো বা আমি তার সাথে<br /> কাটিয়েছি পাঁচশো বছর আগে হয়তোবা সাতশো বছর…<br /> কি অদ্ভুত রকম মিলে গেলো কবিতাটি।<br /> মনে হচ্ছে জীবন বাবু ডিজ্যাঁভু নিয়েই কবিতাটি লিখেছে কিংবা তিনি কি নিজেকে জাতিস্মর ভাবতেন?</em></p> <p>এর পরের গল্পটি বিসর্জন কোরবানির ঈদের পটভূমিতে শুরু গল্পটি কিন্তু বিসর্জন মূলত অন্য কিছুর কারো বিবেক নীতি বা বন্ধুত্বের বিসর্জন, মিহি মসৃণ ভবিষ্যতের লোভের কাছে ।<br /> <em>“পারুল যেন দিশেহারা বোধ করে কিছুটা । কোথায় রাখবে ভেবে এদিক ওদিক তাকিয়ে পালটা প্রশ্ন করে,<br /> -কই রাখবাম ?<br /> সোনা আর কথা বাড়াতে চায় না । পারুলের হাত থেকে টাকাগুলো নিয়ে তোষকের নিচে রেখে তার শরীরের ঘ্রাণে ডুবতে থাকে । ডুবতে ডুবতে তার চোখ বুজে আসে। সাথে সাথে বোজা চোখে জেগে জেগেই যেন সে দুঃস্বপ্ন দেখে সে যে একটা গরুর জবাই হচ্ছে অবুঝ পশুটি গোঙ্গানির মত শব্দ করছে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে । ঝট করে চোখ মেলে সোনা । ভাবে আর চোখ বুঝবে না । হারিকেনের আলো আর একটু বাড়িয়ে দিয়ে,শরীরের খেলায় কখনো ডুবে কখনো ভেসে দেখতে থাকে বউয়ের কালচে সোনালী শরীর তার মিহি মসৃণ ভবিষ্যৎ।</em></p> <p>গল্পের চরিত্র বিশ্লেষণে যেতে ভয় আমার সবসময়ে – মোড়ল একটা খল বাজে লোক , হাবলু গরীব মায়াবী অবহেলিত নরম মাটির , সোনা চতুর … এইভাবে ব্যবচ্ছেদ গল্পের আসল স্বাদ পাই না , নিজের চোখ দুটো বিচক্ষণ ভাব নিতে নিতে একচেটিয়া একটা বিক্ষণযন্ত্র হয়ে যায় , H. Taine এর একটা চিঠির সমালোচনা থেকে টুকে রেখেছিলাম The writers of today specialize too much shut themselves off from the world and concern themselves with microscopic examination of individual parts instead of fixing their eye upon whole … সেই দৃষ্টিতেই রাবেয়া রব্বানি সার্থক সব সময়েই ।<br /> ঐ লাইনের উপরের লাইনটি ছিলো The true artist must possess wide knowledge and superior attitude which will help him to see the over all pattern</p> <p>পরের গল্পটি হলো “ ঝরে পাতা মাদুর পাটিতে” বয়োবৃদ্ধ সিদ্দিক সাহেবের গল্প, গল্প তার পরিবারে অসুস্থ স্ত্রী পার্কে জগিং করতে আসা কমবয়সী মেয়েদের দেখে কোন গোপন ভাব জেগে ওঠার গল্প তারপর বোধ অপরাধ বোধের সংঘাত । ফ্রয়েডের একটা কথা সবার জানা " sex is the main spring of our unconscious mind " এই গোপন বোধের গল্প অবচেতন মনের গল্প এটি কিংবা নিসঙ্গতায় উঁকি দেওয়া বিবিধ চিন্তার যুদ্ধের গল্প ...<br /> <em>“। সিদ্দিক সাহেব বিস্ময়ের ঘোরে চলে যান । নানান প্রশ্ন তাকে ঘিরে ধরে দুই পাগলের মাঝে অবস্থান নিয়ে ধন্ধ হয় না তো ?ট্রাকের তলায় ঘুমানোর ইচ্ছের মধ্যে গভীর মনস্তত্ত্বটা কি ? দুর্ঘটনাতো ঘটতেই পারে । তার মা খাট থেকে পড়ে মরে গিয়েছিলেন । আর একটা পাগল দীর্ঘদিন রাস্তায় ট্রাকের নিচে পড়েও বহাল তবিয়তে আছে। প্রকৃতির নিয়মের ব্যাপারটা নিয়ে ভাবিত হয়ে পড়েন। আর পাপ পুণ্যের ব্যাপারও ইদানীং বেশ ভাবেন । মানুষের দুর্দশা যদি তার কর্মফল হয় তবে পশু পাখির ব্যাপারটা কি ? কত ভয়ানক রোগ তাদেরও তো হয় । তাদের নিশ্চয়ই পাপ নেই।<br /> সিদ্দিক সাহেবের চিন্তা কয়েক সেকেন্ডের জন্য থেমে যায় একজোড়া আন্দোলিত বুক দেখে । বুক থেকে মেয়েটির মুখের দিকে চোখ যেতেই বুঝেন আজকের মেয়েটিও ভ্রু কুঁচকে আছে। ছি ! অপরাধ-বোধটা আজও মাত্রা ছাড়ায় । উঠে দাঁড়ান তিনি । চাদরটায় নিজেকে ভালমতো জড়িয়ে হাঁটতে থাকেন এলোমেলো। শীতের সন্ধ্যার মধ্যে একটা ঝিমঝিমে মনোরম ব্যাপার আছে তা বয়সকালেও তাড়িয়ে উপভোগ করতেন তিনি । ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে একটা সঙ্গীর জন্য কিছু সুন্দর মুহূর্তের জন্য আনচান বোধ করতেন। হাল্কা কুয়াশা ঘেরা আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে হল,ফালি চাঁদটাও আজ শীতার্ত। অনেক দিন পর সেদিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণের জন্য হলেও ভুলে গেলেন তার বয়সের কথা, ছেলেদের কথা,অসুস্থ মাবিয়ার কথা। তরুণ চাঁদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আনমনে বুনতে থাকলেন কিছু উষ্ণ আর মহনীয় স্বপ্ন “</em></p> <p>শেষ গল্পটি “ গ্রহণ লাগা মানুষ” যদিও এটিই ছিলো আমার পড়া,প্রিয় লেখক রাবেয়া রব্বানির প্রথম গল্প , সবচেয়ে প্রিয় গল্প । আর এইগল্পটি পড়েই ভক্ত হয়েছি রাবেয়া রব্বানির, এই-গল্পেই তাঁর আত্মপ্রকাশ । মনে হয় নি কোন অপ্রস্তুত লেখকের লেখা, আগেই বলেছি প্রতিভা বাজে কথা, রাবেয়া রব্বানি যেন প্রস্তুত হচ্ছিলেন অনেক দিন ধরে এই “গ্রহণ লাগা মানুষ”দের জন্যে<br /> মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে বলে শেষ করি ...<br /> “<br /> <strong>কিন্তু একটা প্রশ্ন দাঁড়ায় এই : কোনো রকম প্রস্তুতি ছাড়াই কি একজন লেখকের সাহিত্য-জীবন শুরু হয়ে যেতে পারে?</strong></p> <p>আমি বলবো, না, এ রকম হঠাৎ কোনো লেখকই গজান না। রাতারাতি লেখকে পরিণত হওয়ার ম্যাজিকে আমি বিশ্বাস করি না। অনেক কাল আগে থেকেই প্রস্তুতি চলে। লেখক হবার জন্য প্রস্তুত হয়ে আসতে আসতেই কেবল একজনের পক্ষে হঠাৎ একদিন লেখক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করা সম্ভব।</p> <p>প্রস্তুতির কাজটা অবশ্য লেখক সচেতনভাবে নাও করতে পারেন। কীভাবে যে প্রক্রিয়াটা ঘটছে এ সম্পর্কে তার কোনো ধারণা পর্যন্ত না থাকতে পারে। জীবনযাপনের সমগ্র প্রক্রিয়ার সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে থাকায় লেখক হবার আগে এই প্রস্তুতি প্রক্রিয়ার বিশেষ তাৎপর্য ধরতে না পারাই স্বাভাবিক।</p> <p>সাহিত্য-জীবন আরম্ভ হওয়ার পর সংস্কার ও স্বপক্ষপাতিত্ব বর্জন করে বৈজ্ঞানিকের দৃষ্টিতে নিজের অতীত-জীবন বিশ্লেষণ করলে প্রস্তুতিটা কীভাবে ঘটেছিল তা কমবেশি জানা প্রত্যেক লেখকের পক্ষে সম্ভব।<br /> সাহিত্য করার আগে কয়েকটা বিষয়ে সকল হবু লেখকের মিল থাকে। যেমন, সাহিত্য সম্পর্কে বিশেষ আগ্রহ, জীবন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা ও জবাব খোঁজার তাগিদ, সাহিত্যে প্রতিফলিত জীবনকে বাস্তব জীবনে খুঁজে নেবার চেষ্টা, নতুন অভিজ্ঞতাকে চিন্তা জগতে সাহিত্যের টেকনিকে ঢেলে সাজা ইত্যাদি_ এ সমস্তই সাহিত্য-জীবনের জন্য প্রস্তুতির প্রক্রিয়াটা ঘটাবার কারণস্বরূপ হয়। দশজনের চেয়ে সাহিত্যকে ঘনিষ্ঠতর গভীরতরভাবে নেওয়ার ফলে চিন্তা ও ভাব জগতে সাহিত্যের প্রভাব সঞ্চিত হয়ে চলে, তার সঙ্গে মিশ্রণ ঘটে নিজের বাস্তব জীবনের সংঘাত ও পরিবেশের প্রভাব, আয়ত্ত করা জ্ঞানের প্রভাব আর সংস্কারের প্রভাব। মোটামুটি এইভাবেই গড়ে ওঠে সাহিত্যিকের চেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গি।<br /> ... সাহিত্য করার আগে “<br /> শুভ কামনা গ্রহণ লাগা মানুষদের রাবেয়া রব্বানির জন্যে ...</p> <p><em>“হাতে ভর দিয়ে গন্নায় খাওয়া শুক্কুর নেমে যাচ্ছে বাড়ির সিমানা থেকে ক্ষেতের আল বরাবর। সে হাসি হাসি মুখে একবার ফিরে তাকাল তার মার দিকে ।অগ্রাহায়নের হাল্কা কুয়াশায় দূর থেকে তার চোখের পানি আমেনা দেখতে পেল না।<br /> শুক্কুর ক্ষেত ছেড়ে রাস্তায় উঠে আসল। ভোরের কনকনে শীত তার শীর্ন শরীরটাকে বেশ কাপিয়ে তুলছে ।দূর থেকে হাল্কা শোনা যাচ্ছে আমেনার বিলাপ তবু সে তাকাল না আর।তার হঠাৎ মনে পড়ল অনেক অনেক দিন আগের একটি দৃশ্য।দিনটি ছিল শুক্রবার।সেদিন তার বাবা তাদের দুই ভাইকে দেওয়ানশরীফ পীরের দরবারে নিয়ে গিয়েছিল। শুক্রবারে সেখানে প্রচুর ভীর হত।একসময় সাত আট বছরের শুক্কুরকে এক জায়গায় বসিয়ে অযু করতে গিয়েছিল তার বাবা আর সাদেক। ফিরে এসে দেখে শুক্কুরের সামনে কিছু পয়সা ছড়ানো ছিটানো।তখন তার বাবা শুক্কুরকে কোলে নিয়ে কেঁদে ফেলেছিল।শুক্কুরকে আনেক শক্ত করে ই বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বার বার বলছিল,<br /> - আমার ছেরা ফইর মিছকিন নি কুন? ইড্ডা আমার পোলা। নবীর উম্মত।আমার ছেরা ভিক্ষা করে না।নবীর উম্মতরা ভিক্ষা করে না।<br /> শুক্কুর একটু থেমে তার চোখ মুছে আবার চলতে শুরু করল।আমেনার বিলাপ এখন আর শোনা যাচ্ছে না।হাতের তালুতে ভর দিয়ে রাস্তায় চলার কষ্ট এড়াতে সে মোটা কাপড়ের পট্টীটা বেধে নেয়, তারপর দ্রুত চলতে থাকে।এখন আর তার শীত লাগছে না।ভর দিয়ে চলার প্রচুর পরিশ্রম তৈ্রি করছে অতিরিক্ত তাপ।পিঠের ব্যাগে রাখা থালা আর টুকটাক হাল্কা জিনিস মিলে অদ্ভুত শব্দ করছে। শব্দটা শুক্কুরের মনোযোগে আসেনা সব কিছু ছাপিয়ে তার বাবার বলা সেই কথাটাই বার বার কানে বাজছে,<br /> “আমার ছেরা ভিক্ষা করে না”। /গ্রহণ লাগা মানুষ/ রাবেয়া রব্বানি ]<br />