User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
শিল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় জাপান। এ স্বীকৃতির পেছনে যে লোকটির নিরন্তর চেষ্টা ছিল, তিনি জাপানের একজন সাংসদ ও মন্ত্রী তাকাশি হায়াকাওয়া। মূলত বাংলাদেশকে দেখার আগেই তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এটি আসলে মানবতাবাদী একজন সংবেদনশীল মানুষের সঙ্গে বিপদগ্রস্ত মানুষের সম্পর্ক। ১৯৭০ সালের নভেম্বর মাসে প্রলয়ংকরী এক ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বা আজকের বাংলাদেশে। ওই ঝড়ে লাখ লাখ মানুষ মারা যায় এবং আরও অসংখ্য মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। তাকাশি হায়াকাওয়া তখন টোকিওর রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য চাঁদা তোলেন। ওই একই সময় পূর্ব পাকিস্তানে জাতিগত আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে। সাহায্যের অর্থ তোলার সময় বাংলার ভূমি আর মানুষ সম্বন্ধে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত চারবার বাংলাদেশ সফর করেন তাকাশি হায়াকাওয়া। এই চারবারের সফরের স্মৃতি নিয়ে তিনি লিখেছেন আমার বাংলাদেশ বইটি। বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসায় মুগ্ধ হন তিনি। শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব তাঁকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করে। তিনি প্রথমবার বাংলাদেশে আসেন স্বাধীনতার পর, ১৯৭২ সালের মার্চে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের মানুষের মনোবল তাঁকে আলোড়িত করে। পারমাণবিক অস্ত্রের ভয়াবহতা এর আগেই পৃথিবীর মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। ফলে এর বিরুদ্ধে মানবজাতিকে এক পরিবারে পরিণত করার মানসিকতা নিয়ে তিনি বাংলাদেশে আসেন। জাপানের জন্য বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘটনাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের কূটনীতির ক্ষেত্রে প্রথম স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগ এটি। একই মহাদেশের বাসিন্দা হওয়ার কারণে বাংলাদেশের মানুষের দুঃখ-কষ্ট গভীরভাবে নাড়া দেয় তাকাশি হায়াকাওয়াকে। তা ছাড়া বাংলাদেশের মতো জাপানেরও অভিজ্ঞতা আছে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার। তাকাশির অন্যতম প্রিয় কবি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলার সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করেন তিনি। প্রথমবার বাংলাদেশ সফরে বিধ্বস্ত এই দেশের সামগ্রিক কাঠামোর উন্নয়নে জাপান সরকারের সাহায্যের প্রবল প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন তিনি এবং দেশে ফিরে তার জন্য সাধ্যমতো ব্যবস্থাও নেন। তাকাশি যখন প্রথমবার এই দেশে আসেন, তখন প্রায় তিন কোটি মানুষ গৃহহীন। ভয়াবহ খাদ্যসংকটে সমগ্র দেশ। যোগাযোগব্যবস্থা বিধ্বস্ত। কেননা, নদীমাতৃক এ দেশের প্রায় সব সেতুই যুদ্ধে বিধ্বস্ত। চট্টগ্রাম ও কলকাতা বন্দরে বিভিন্ন দেশ থেকে সাহায্য এসে পৌঁছালেও জনগণ তা হাতে পাচ্ছে না। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর ১৯৭৬ সালের ১৬ মার্চ তাকাশি হায়াকাওয়া বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে এক সপ্তাহের জন্য ঢাকায় আসেন। এটি ছিল বাংলাদেশে তাঁর তৃতীয় সফর। বাংলাদেশের নতুন প্রশাসনও তাঁকে আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করে। ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে তখন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি হচ্ছিল। কলকাতা বন্দরের পানির গভীরতা বাড়িয়ে বন্দরের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ভারত মোট পানির ৮০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে। এর ফলে বাংলাদেশে পানির প্রবাহ কমে যায় এবং এর প্রভাবে নানা রকম কুফল দেখা দেয়। তাকাশি হায়াকাওয়ার বর্ণনায় এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়। এর পরেরবার তাকাশি আসেন জাপানি লাল ফৌজ কর্তৃক বিমান ছিনতাই ঘটনায় মধ্যস্থতাকারী বাংলাদেশকে কৃতজ্ঞতা জানানোর উদ্দেশ্যে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এ দেশের মানুষ হয়তো তাঁকে সাগ্রহে গ্রহণ করবে না, এ রকম একটি ভাবনা তাকাশির মনে কাজ করছিল তখন। কিন্তু তাঁর ভাবনা ভুল প্রমাণিত করে এ দেশের সব স্তরের মানুষ তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায়। আমার বাংলাদেশ বইটির পুরোটা জুড়ে এ দেশের মানুষের প্রতি তাকাশি হায়াকাওয়ার গভীর ভালোবাসা অনুভব করা যায়। বইয়ে স্বামী সম্পর্কে মোতায়ে হায়াকাওয়ার একটি প্রবন্ধ সংযোজিত হয়েছে। এ ছাড়া লেখকের বাংলাদেশ ভ্রমণের বেশ কিছু চিত্র জুড়ে দেয়া হয়েছে এখানে। মাত্র ৮০ পৃষ্ঠার এ বইটি তৎকালীন বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে।