User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বুক রিভিউ : হাসির ট্যাবলেট 'বলা বাহুল্য' মাদক মামলার জামিন শুনানী চলছে। আসামি অবিনাশের বয়স অনুমান ২৬-২৭ বছর। হ্যাংলা-পাতলা গড়নের অবিনাশকে সামান্য গাজাসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করেছেন পুলিশ। তার জামিনের জন্য দাঁড়িয়েছেন শহরের প্রখ্যাত আইনজীবী প্রফুল্ল বাবু। জামিন শুনানির সময় একঘেয়েমি আইনি কথার মাঝে শুরু হয় বিচারক আইনজীবীর রম্য কথামালা। সেগুলো পড়তে পড়তে মনে হলো এ যেন আমার আদালতেই শুনানি চলছে। পড়ছি আর হাসছি। একসময় বিজ্ঞ আইনজীবীর চমৎকার উপস্থাপনা, মাদকের পরিমাণ ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় অবিনাশের জামিন হয়। এই গল্প বলতে গিয়ে লেখক একজন ভালো আইনজীবীর মানের প্যারামিটার গুলোও বলেছেন খোলা মনে। গল্পের শেষ এখানেই নয়। দুই বছর পর আসামি অবিনাশ ও তার আইনজীবী প্রফুল্ল বাবু অকল্পনীয় টুইস্ট নিয়ে হাজির হয়ে গল্পের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। আদালতনামা গল্পের মাঝেই আছে আরো দুটো বোনাস গল্প। সাইদুর-বেলীর অমর প্রেম ও বেলীর আনীত মামলায় সাইদুরের জামিন নামঞ্জুরের প্রেক্ষিতে উদ্ভূত ঘটনাবলী, চিকন বুদ্ধির আদালত পিয়ন আনোয়ারের দুষ্কর্ম ও শাস্তি ইত্যাদি বিষয়াবলী পড়ার পর মনে হচ্ছে এগুলোতো আমাদেরই গল্প, যে গল্পের চরিত্ররা ঘুরে বেড়ায় আমাদের চারপাশে। বলছিলাম বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত গ্রন্থ 'বলা বাহুল্য' এর 'আদালতনামা' গল্প থেকে। বইটি লিখেছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের মাননীয় রেজিস্ট্রার (জেলা ও দায়রা জজ) হাসানুজ্জামান রিপন মহোদয়। মার্জিত রুচি, বুদ্ধির দীপ্তি, অপূর্ব বাকচাতুর্য ও স্মিত রসিকতায় লেখকের প্রতিটি গল্প পড়ে মনে হয়েছে তাঁর রয়েছে বিশাল পাঠ সম্ভার ও অভিজ্ঞতার ঝুলি। এ দুইয়ের সংমিশ্রণে অসাধারণ শব্দ চয়নে রম্যের ডালি বুনেছেন সুনিপুণভাবে। তাই লেখককে 'শব্দের জাদুকর' বললে অত্যুক্তি হবে না। 'বৈকুন্ঠের রোদ পোহানো' এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ, যেখানে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকান্ত, শরৎচন্দ্র, ঈশ্বরচন্দ্র, বুদ্ধদেব আর হুমায়ূন আহমেদের কাল্পনিক কথোপকথন সত্যিই অসাধারণ। রম্য লেখকের অন্যতম কাজ লেখালেখির মাধ্যমে সমাজের আধমরাদের ঘা দেওয়া এবং সমসাময়িক সমস্যার বেড়াজাল ছিন্ন করা। তাইতো লেখক 'লজ্জা' গল্পে সমসাময়িক সামাজিক অসঙ্গতি তুলে ধরে বলেছেন, ''লজ্জা তখন নিজেই আহাম্মক হয়ে নির্বাক হয়ে যায়।" আবার 'ভাঁড়ুয়া' প্রবন্ধে পুরুষদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ''পৃথিবীর সব পুরুষই জন্মসূত্রে ভাঁড়ুয়া নয়কি!" বইটির অধিকাংশ গল্প বা প্রবন্ধে কেন্দ্রীয় চরিত্র লেখকের সহধর্মিনী 'আষাঢ়স্য রসনা বিলাপ' ও 'শাপে বর' গল্পের নায়িকা শ্রদ্ধেয় মৌসুমী ভাবি। কখনোবা তিনি এসেছেন 'নির্বাক ভাষা'য় চামেলী হয়ে, 'সভ্যতা’ গল্পে শম্পা হয়ে কখনোবা ’বিড়ালকাণ্ড’ গল্পে শরবতি বেগম হয়ে। 'বিড়ালকান্ড' পড়লে পাঠক বউকে শান্ত রাখার এক অভূতপূর্ব টেকনিক খুঁজে পাবেন তা আমি নিশ্চিত। জীবনে কম-বেশি সকলেরই বমির অভিজ্ঞতা রয়েছে। 'বমি' গল্পে এসাহাক মামা আর সুফিয়া খাতুনের গল্পটা পড়লে হাসতে হাসতে আপনারও বমি হয়ে যেতে পারে। তবে বিপুলের বমি কাহিনীটা দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত এক যুবকের কঠিন বাস্তবতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাবে। এভাবে রম্যের সাথে সমাজ ও ব্যক্তি সম্পর্কে তীক্ষ্ণ অনুভূতি লেখক অত্যন্ত সুন্দর ও সাবলীলভাবে মিশিয়েছেন। বইটি পড়তে গিয়ে একদিকে পেয়েছি শহরে আধুনিকতা, অন্যদিকে পেয়েছি গ্রামীণ স্নিগ্ধতা। এ দুটোর অপূর্ব সমন্বয়ে লেখকের লেখাগুলো এক অনন্য বৈশিষ্ট্য লাভ করেছে। নিজ গ্রামে বাসের লিকে নাক লাগিয়ে পেট্রোলের গন্ধ শুঁকে বাচ্চাদের নাকে মুখে ধুলা লাগানোর বিবরণ আমাকে নস্টালজিক করে তুলেছে। 'হেডস্যার' গল্পটি পড়তে গিয়ে বারবার নিজের কাদামাটি মাখানো শৈশবের কথাই মনে পড়েছে। গল্পের শেষের দিকে এক ধরনের অদ্ভুত উল্টো ভাষা আছে। শৈশবে আমি নিজেও এ ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারতাম। পুরো বই পড়তে গিয়ে হেসেছি হা হা, হি হি, হো হো করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে - যেন কেউ আমাকে নাইট্রাস অক্সাইড (লাফিং গ্যাস) খাইয়ে দিয়েছে। শুধুই যে হেসেছি তা নয়, কখনও কখনও ব্যথিতও হয়েছি। কষ্ট পেয়েছি ক্লাশের সবচেয়ে ভালো ছাত্র বলে খ্যাত নিরপরাধ মেহেদীর ৩৭ বেত্রাঘাতের শাস্তি দেখে। বেচারা অবিচারের শিকার হয়ে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গিয়েছিল। দোষ না করেও শাস্তি পাওয়ার নজির আমারও আছে। এতকিছুর পরেও কিছু মুদ্রন প্রমাদ চোখে পড়েছে। আশা করছি, পরবর্তী মুদ্রনে প্রকাশক সেই বিষয়টিতে নজর দেবেন। লেখকের প্রতি অনুরোধ তিনি যেন এভাবেই লিখতে থাকেন অবিরত। তাঁর লেখনীতে সমৃদ্ধ হোক বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি। সাইফুল ইসলাম পলাশ, রাজশাহী
Was this review helpful to you?
or
'বলা বাহুল্য' এর মুখবন্ধ নিজেই একটা গল্প। লেখক সেখানে তাঁর প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতি সাবলীল ভাষায় তুলে ধরেছেন। সবচেয়ে ভালো লেগেছে লেখক কোন ভনিতার আশ্রয় নেননি দেখে। "বলা বাহুল্য" এর প্রতিটা প্রবন্ধ/গল্পই জীবনের ছোট্ট ছোট্ট অনুভূতি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যক্তি জীবনের গল্প বলতে গিয়ে লেখকেরা নিজেদের সমস্যা, দোষ-ত্রুটি সচেতন ভাবে এড়িয়ে যান। আমার ভালো লেগেছে লেখক সেটা তো করেনেইনি বরং সহজভাবে সবটুক সত্য তুলে ধরেছেন। মুখবন্ধের কথাই ধরা যাক । সেখানে লেখক তার প্রতিটি গল্পের নায়িকা তাঁর সহধর্মিনীকে বই প্রকাশের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেছেন: "আমার লেখাগুলো প্রথমেই যাকে পড়ে শোনাতাম সে আমার সহধর্মিণী মৌসুমী। এর মূলত দুটো কারণ ছিল। প্রথমত গল্পের নায়িকা গল্পকারের স্ত্রী। অন্যের স্ত্রীর চাইতে নিজের স্ত্রীকে পচানো এবং পটানো দুটোই সহজ আর ঝুঁকিহীন। দ্বিতীয়ত সে আমার নির্বাক শ্রোতা। মোবাইলে ক্যান্ডি ক্র্যাশ গেম খেলার সময় গল্পের সিরিয়াস জায়গাগুলোতেও সে কনসেনট্রেট করতে পারত না। তাই গল্প পড়া শেষ হলেই সে অবলীলায় বলে ফেলত, ‘উফ দারুণ লিখেছো!’ তার এই উদার মানসিকতা আমাকে সাহস দিয়েছে, আশকারা দিয়েছে।" খিল খিল করে হেসেছি এই অংশটুক পড়ে। লেখকের লেখার হাত অসাধারণ। রম্যের ছলে জীবনের ছোট্ট ছোট্ট ঘটনা আনায়েসে তুলে এনেছেন। কিছু গল্প পড়ে যেমন মজা পেয়ে হেসেছি আবার অবিনাশের ভালো হওয়ার গল্প পড়ে আনন্দে কেঁদেছি। হাকিমপুরি জর্দা দিয়ে পান খাওয়া প্রবীণ জ্ঞানী আইনজীবী প্রফুল্ল বাবুর সাবমিশন পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছিল সব দেখতে পাচ্ছি । মনে হচ্ছিল এই তো আমি এজলাসে বসা আর আমার চোখের সামনে প্রফুল্ল বাবু দাঁড়িয়ে আছেন। আবার আদালত কক্ষে সাইদুর আর বেলীর চার হাত এক হতে দেখে নারী ম্যাজিস্ট্রেট যখন আবেগাক্রান্ত হয় মনে হচ্ছিল সেই নারী ম্যাজিস্ট্রেট আমি নিজে। "শাপে বর" গল্পটার বিষয়ে একটুখানি বলি: গল্পে দেখা যায় লেখকের নায়িকা অর্থাৎ তার স্ত্রীর হয়েছে গলা ব্যাথা। অনেক বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে ব্যর্থ হয়ে লেখক যখন আহ্লাদী কন্ঠে তার স্ত্রীকে বলছে "জানু যদি একটু চর্চাটা করতে তাহলে শ্রেয়াকে ড্রয়িং রুমে ঢুকাতাম না।" এরপর শুরু হলো নায়িকার কথার চাবুক: -তা কয় ঘন্টা ছিল তোমার শ্রেয়া? -তাইতো বলি কেনই বা আমাকে আদর করে বোনের বাড়ি উত্তরা পাঠানো হলো? -কেনই বা একুরিয়ামে চৌবাচ্চা ডান দিকে কাত হয়ে আছে? -এখন কি আমাকে তবে এঁটো ঘরে থাকতে হবে? আর বেশি কিছু শোনার আগে লেখক নায়িকাকে বুঝিয়ে বলে "আরে পাগলি আমি শ্রেয়া ঘোষালের কথা বলছি। তোমার গলায় একটু সমস্যা হয়েছে বলে আজ কানে এয়ারপড লাগিয়ে বুঝি পরস্ত্রীর গান শুনতে হবে? মাওয়া খাটে ইলিশের লেজ ভর্তার চাইতে বাড়ি তৈরি কলা ভর্তা আমার কাছে অমৃত।' উত্তরে আর্তনাদ করে নায়িকা বললেন "কি তুমি আমাকে কাঁচা কলা ভাবো?" এভাবেই চলতে থাকে লেখক এবং তার নায়িকার বাদানুবাদ। এক পর্যায়ে লেখক নায়িকাকে আশ্বাস দেন তাকে এবার আর অন্য কোন বিশেষজ্ঞ না দেখিয়ে ডাক্তার প্রাণ গোপালকে দেখাবেন। সে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করার কাহিনীই হলো গল্পের বিষয়বস্তু। পড়ে তো হাসতে হাসতে অস্থির।
Was this review helpful to you?
or
রম্য রচনা খুব পড়া হয়ে উঠেনা আমার! সে লিখেছে বলে আগ্রহের সাথে পড়লাম। এভাবেও পচানো যায়! এ এক শৈল্পিক পচানো! এমনভাবে পচতেও ভালো লাগে। খুব সাদামাটা ঘটনা হলেও উপস্থাপনের ধরনের জন্য তা অসাধারণ হয়ে উঠেছে। নিজের স্বামী বলে বলছিনা, লেখক একটা মিচকে প্রেমিক! মিচকের সাথে অন্য শব্দ হলে ভালো হতো। কিন্তু তার পরিশ্রম আর দারুন কাজের জন্য এটুকু সম্মান সে পেতেই পারে। ভালো হোক "বলা বাহুল্যের"!
Was this review helpful to you?
or
ফেইসবুক এ কাকুর লেখার বরাবরই ভক্ত আমি।লেখক কাকু আর ব্যক্তি কাকুর যেই জিনিস আমাকে সব থেকে অবাক করে তা হলো সাবলীলতা। জীবনের ছোট ছোট মুহুর্ত গুলোকে আলাদা ভাবে দেখার ক্ষমতা সবার থাকে না। লেখাতেও তার ব্যতিক্রম না। পুরো বইটাই এমন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনাকে অসাধারণ করে ফুটিয়ে তুলেছেন। অনেক অনেক শুভকামনা কাকু। পরের বইয়ের অপেক্ষায় রইলাম।
Was this review helpful to you?
or
শ্রদ্ধেয় বিচারক রিপন স্যারের অনেকগুলো লিখা ফেসবুক ওয়ালে পড়েছি এবং মুগ্ধও হয়েছি। আশা করছি স্যারের প্রথম প্রকাশিত "বলা বাহুল্য" রম্যরচনাটি আমার মত শত শত পাঠককে বরাবরের মতোই মন্ত্রমুগ্ধ করবে।