User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
“ভালোবাসার দহনে নিজেকে পোড়াতে মনে হয় বেশি ভালো লাগে।” ~শতাব্দী ঘোষ। বইয়ের নাম: এক পশলা বৃষ্টিতে তুমি। লেখিকা: শতাব্দী ঘোষ। প্রকাশনী: বইবাজার প্রকাশনী। প্রকাশক: সৈয়দ রবিউজ্জামান। প্রচ্ছদ: আদনান আহম্মেদ রিজন। জনরা: রোমান্টিক। পৃষ্ঠা: ১১০ প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ অনলাইন পরিবেশক: সেইসময় বিডি ও রকমারি। ব্যক্তিগত রেটিং: ৪/৫ রিভিউ দাতা: এম.আর.এ. আকিব। ভূমিকা: মানুষ যা চায় তা পায় না, আর যা পায় তা চায় না। এটাই দুনিয়ায় নিয়ম, ধ্রুব সত্য। অনির্বাণ তিতিরকে চোখে হারালেও তিতিরের মন চিত্তদা নামের নৌকায় বাঁধা। পাঠ প্রতিক্রিয়া: এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে লেখিকা শতাব্দী ঘোষের রোমান্টিক উপন্যাস 'এক পশলা বৃষ্টিতে তুমি'। ইতঃপূর্বে লেখিকার দুটি থ্রিলার উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছিল এবং দুটো বই-ই আমি পড়েছিলাম। দুটো বই-ই বেশ ভালো লেগেছিল পড়তে। তবে এবার লেখিকা নিয়ে এসেছেন রোমান্টিক উপন্যাস! থ্রিলার উপন্যাস ছাড়াও রোমান্টিক উপন্যাস লিখতেও লেখিকার যে বিশেষ পারঙ্গমতা রয়েছে তার উদাহরণ এই 'এক পশলা বৃষ্টিতে তুমি' উপন্যাসটি। উত্তম পুরুষের জবানিতে লেখা একজন ষোড়শী বালিকার ছোট্ট মনের নানান আবেগ ও ভালোবাসার কাহিনি নিয়েই এ উপন্যাসটি। উপন্যাসটি তিতির অর্থাৎ উপন্যাসের নায়িকার জবানিতে সকল কাহিনি ফুটে ওঠেছে। এছাড়াও উপন্যাসের শব্দ ও বাক্যগঠন বেশ প্রশংসনীয়। বিশেষ করে উপন্যাসের শেষ দিকে চিত্তদা ও তিতিরের বাক্যালাপে বেশ কাব্যিক ভাবও ফুটে ওঠেছে। সবমিলিয়ে উপন্যাসটি আমার যথেষ্ট ভালো লেগেছে। চরিত্র: উপন্যাসে বেশ কিছু চরিত্র রয়েছে। তবে আমি এখান থেকে কয়েকটি চরিত্র নিয়ে কথা বলছি। তিতির: স্কুলে পড়া এক ষোড়শী বালিকা। যাকে আমরা গল্পের নায়িকা বলতে পারি। যার ছোট্ট মনে শুধু একজনেরই বসবাস। সে আর কেউ নয়, তার প্রথম প্রেম, তার প্রথম ভালোবাসা 'চিত্তদা'। যাকে সে ছোটোবেলা থেকেই ভালোবাসে। কিন্তু চিত্তদা তাকে ভালোবাসে কি না সে জানে না। কখনো ভাবে হয়তো চিত্তদা তাকে ভালোবাসে, কখনোবা ভাবে ভালোবাসে না। তারপরেও তার হৃদয় ও মন জুড়ে শুধুই চিত্তদা। চিত্তদা মেডিক্যালে পড়ে বলে তিতিরও খুব ভালো করে লেখাপড়া করে সেই একই মেডিক্যালে ভর্তি হয়। চিত্তদা: মেডিক্যাল কলেজে পড়া এক মেধাবী ছাত্র। যার মনে সবসময় পড়াশোনাই ঘুরে। তিতিরের বাড়ি আর চিত্তদার বাড়ি পাশাপাশি। চিত্তদা তিতিরকে সবসময় ভালো করে লেখাপড়া করার পরামর্শ দেয়। নিজের আবেগ কখনোই কারো কাছে সহজে প্রকাশ করে না। সবমিলিয়ে চিত্তদাকে আমার বাস্তবধর্মী এক চরিত্র মনে হয়েছে। এ উপন্যাসে আমার প্রিয় চরিত্রও চিত্তদা। পুতুল পিসি: তিতিরের পিসি হলেও তাকে আমরা তিতিরের সবচেয়ে কাছের বন্ধুও বলতে পারি। তিতিরের থেকে তেমন একটা বড়ো নয় পুতুল পিসি। তিতিরের মায়ের যখন বিয়ে হয় তখন পুতুল পিসি অনেক ছোটো ছিলেন। তিতির তার পুতুল পিসিকে সবকিছু শেয়ার করে। তখন তিনি তিতিরকে নানারকম পরামর্শ দেন। কখনো উৎসাহ দেন, কখনোবা একটু শাসনও করেন, বর্তমান পরিস্থিতি বুঝানোর চেষ্টা করেন। নিজের এখনো বিয়ে হয়নি বলে মাঝেমধ্যে আফসোসও করেন। অনির্বাণ: তিতিরের বন্ধু অথবা শত্রু। তিতিরের সাথে একই ক্লাসে পড়ে অনির্বাণ। সে তিতিরকে ভালোবাসে কিন্তু তিতির বাসে না। অনির্বাণ সারাক্ষণ শুধু তিতিরের ক্ষতি করার চেষ্টা করে। যাকে ভালোবাসা যায় কখনো কি তার অমঙ্গল চাওয়া যায়? কিন্তু অনির্বাণ এসব ভাবে না। সে তার মতো কাজ করে যায়; কিন্তু এর ফল কী হবে তা হয়তো সে ভেবে দেখে না! আমার সবচেয়ে অপছন্দের চরিত্র এই অনির্বাণ। তিথি: তিতিরের বান্ধবী। স্কুল, কলেজ এবং মেডিক্যাল সব জায়গায়ই তারা দুজন একসাথে ছিল। সে তিতিরকে সবসময় সাপোর্ট করে। তিতিরকে সাহস জোগায়, শক্তি জোগায়। কষ্টে শক্ত হয়ে নিজের লক্ষ্য স্থীর রাখতে বলে। তিতির বিপথে গেলে তিথি তাকে ভালোটা বুঝিতে দেয়। সেঁজুতিদি: চিত্তদার ক্লাসমেট। দুজনই মেডিক্যালে পড়ে। তবে শুধু ক্লাসমেট বা বন্ধু বললে হয়তো ভুল হবে; দেখলে এরচেয়ে বেশি কিছুই মনে হয়। চিত্তদা আর সেঁজুতিদি সবসময় একসাথেই থাকে৷ তিতির এই সেঁজুতিদিকে অনেক হিংসে করে। সার-সংক্ষেপ: উপন্যাসের শুরু হয় তিতিরকে ও অনির্বাণের কাহিনি দিয়ে। অনির্বাণ যে তিতিরকে সবসময় জ্বালায় তার প্রমাণ আমরা প্রথমেই পেয়ে যাই। তারপর পরিচিত হই চিত্তদার সাথে যিনি তিতিরের বিপদে সবসময় এগিয়ে আসেন। তিতির মনে মনে চিত্তদাকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু বলতে পারে না। আকার-ইঙ্গিতে অনেকসময় বুঝাতে চাইলেও সে বুঝে না। একসময় তিতিরও মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখতে পায় চিত্তদা সেঁজুতি নামে একজন মেয়ের সাথে সবসময় লাইব্রেরিতে আসেন, দুজন মিলে লেখাপড়া করেন। একসময় সে তার এক বান্ধবীর কাছে শুনতে পায় চিত্তদা আর সেঁজুতিদি সম্পর্কে জড়িয়েছেন। এসব কথা শোনার পর তার আর পড়ায় মন বসে না। অনেক পরীক্ষায় সে খারাপ করতে থাকে। একইসাথে চিত্তদার ওপর প্রতিশোধ নিতে সে অনির্বাণ নামের ছেলেটার সাথেও মিশতে শুরু করে। কিন্তু এতে তার লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হলো কি না তা সে বুঝে না। তবে যে জিনিসটা তার সবচেয়ে কষ্ট লেগেছে তা হলো, সে তার পুতুল পিসির কাছ থেকে জানতে পারে চিত্তদা আর সেঁজুতিদির বিয়ের কথাবার্তা চলছে। চিত্তদার মা তাদের বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে এসেছেন। এসব শুনে তিতির একদম ভেঙে পড়ে। সে হোস্টেলে না-থেকে বাড়ি চলে আসে এবং শুধুই কান্না করে। তার মনে হাজারো প্রশ্ন উঁকি দেয়, ❝আসলেই কি চিত্তদা তাকে কখনো ভালোবাসেনি?❞ বইয়ের নামকরণ: 'এক পশলা বৃষ্টিতে তুমি' নামটা রোমান্টিক জনরার বইয়ের নাম হিসেবে বেশ মানিয়েছে। এক পশলা বৃষ্টি এবং সাথে প্রিয় মানুষ এমন এক দৃশ্য আমরা উপন্যাসে দেখতে পাই। এই অংশ থেকেই হয়তো এ নামকরণ করা হয়েছে। পরিশেষে, রোমান্টিক উপন্যাস হিসেবে নামটা বেশ ভালো লেগেছে। প্রচ্ছদ: বইয়ের প্রচ্ছদে আমরা দেখতে পাই বৃষ্টির মধ্যে প্রেমিক তার প্রেমিকার চুলে মালা গুঁজে দিচ্ছে। বইয়ের নামকরণ ও জনরার সাথে প্রচ্ছদটা বেশ মানিয়েছে। বইয়ে পছন্দের কয়েকটি উক্তি: বইয়ের বেশ কয়েকটি উক্তি আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি উক্তি নিচে তুলে ধরলাম। ১. অনেকসময় কিছু না-বলেও অনেককিছু বলা হয়ে যায়। নিশ্চুপ নির্লিপ্ত থাকাও যে প্রশ্নের উত্তর হতে পারে তা চিত্তদার কাছ থেকে আজ শিখলাম৷ ২. কিছু কিছু সময় অনেক সহজ কথাগুলোই সহজে বলা যায় না। হয়তো সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছু কথা উহ্য রাখতে হয়, আমাদের এই কথাগুলোই সম্পর্ক রক্ষার দলিল। ৩. ভালোবাসার দহনে নিজেকে পোড়াতে মনে হয় বেশি ভালো লাগে। ৪. মনের মন্দিরে দেবতার আসনে যাকে বসিয়েছি, কীভাবে এখন নামিয়ে দেবো? ৫. কিছু গল্প অসমাপ্ত থাকাই ভালো, কিছু কথা না-বলাই ভালো। পুনশ্চ: চলছে অমর একুশে বইমেলা। ঢাকা বইমেলায় স্টল নম্বার ২৪৩, ২৪৪, ও ২৪৫ এবং চট্টগ্রাম বইমেলার ১১৬ নম্বর স্টলে পেয়ে যাবেন 'এক পশলা বৃষ্টিতে তুমি' বইটি।