User login

Sing In with your email

Email Address
Password
Forgot Password?

Not Account Yet? Create Your Free Account

Send

Recipients:
Message:

Share to your friends

Copy link:

    Our Price:

    Regular Price:

    Shipping:Tk. 50

    • Size:
    • Color:
    QTY:

    প্রিয় ,

    সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
    মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?

    Please Login to Continue!

    Our User Product Reviews

    Share your query and ideas with us!

    Customer Reviews

      By Tuly Das

      06 Feb 2025 11:42 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      বইয়ের নাম: দ্বিখন্ডিতা লেখক: শারমিন আন্জুম প্রকাশনী: বইবাজার প্রচ্ছদ:সাদিতউজজামান ক্যাটাগরি: সমকালীন পৃষ্ঠা সংখ্যা:৫৫১ টি প্রচ্ছদ: আমার কাছে মনে হয় এরচেয়ে উপযুক্ত প্রচ্ছদ এই গল্পটির জন্য আর হতে পারে না। প্রচ্ছদ শিল্পীকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এতো সুন্দর অর্থপূর্ণ প্রচ্ছদের জন্য।বইটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একদম ফুটিয়ে তুলেছেন। গল্পটি পড়লেই শুধুমাত্র প্রচ্ছদটির গভীরতা বোঝা সম্ভব। পাঠ প্রতিক্রিয়া:আপাত দৃষ্টিতে গল্পটি একসময়ের প্রেম আরিজ কে ভুলে সুবহানা ও শামস নামক দুজন ব্যতিক্রমধর্মী মানুষের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পথচলার গল্প। অতীতকে ভুলে বর্তমানকে মেনে নিয়ে ভবিষ্যতের পথ পাড় দেবার গল্প মনে হলেও আসলে তা নয়। আমার মনে হয়েছে এই বইটির রিভিউ আসলে দেয়া সম্ভব নয়, কেননা লেখকের ক্ষুরধার লেখার মান শুধু কিছু শব্দ দিয়ে বোঝানো সম্ভব নয়। তবুও একটু চেষ্টা করছি কেননা এমন একটি বই সম্পর্কে কিছু না বললে নিজেকেই ফাঁকা ফাঁকা লাগবে।বইটিতে যেমন আছে উগ্ৰ প্রেমে উন্মাদনা ঠিক তেমনি আছে বিশুদ্ধ প্রেমের বর্ণণা।যেমন আছে নিষ্ঠুরতা ঠিক তেমনি আছে ভালবেসে জীবন দিয়ে আগলে রাখার চেষ্টা গল্প।এটা কোন পরকিয়ার গল্প না,এটা নিজের মূল্যবোধ জাগানোর বা বাড়ানোর গল্প।বইটি পড়লে জ্ঞানের পরিধি বাড়বে, হাদিসের কথা গুলো খুব সুন্দর করে দেয়া আছে যা যে কেউ পড়তে ও বুঝতে পারবে খুব সহজেই। ইসলাম এর কিছু বিধিনিষেধ দেয়া আছে যা সবার কাজেই আসবে আমার বিশ্বাস, তবে বানোয়াট বা বেশি বেশি মনে হয়নি একদম।সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষনীয়, শালীনতা, শিষ্টাচার এগুলো যেমন আছে পরিপূর্ণভাবে ঠিক তেমনি আছে কিছু কিছু নির্মমতা যা আপনাকে হতবাক করে দেবে। লেখক সবকিছুই এতোটা মেপে মেপে ব্যবহার করেছেন যে কোথাও মনে হয়নি অতিরঞ্জিত কিছু লেখক লিখেছেন বা বর্ণনা করেছেন। সবকিছুই একদম সুপার পারফেক্ট।গল্পটি শুরু করলে না শেষ করা পর্যন্ত একদম মনের মাঝে আঁকুপাঁকু করতেই থাকবে,ইভেন শেষ করার পরেও এর বেশ রেশ রয়ে যাবে। আমার কাছে দ্বিখণ্ডিতা একটি ব্র্যান্ড মনে হয়েছে যা নিজেই নিজের পথ তৈরি করে নিবে ,তবে আমরা যারা এ যাত্রাই অলরেডি সঙ্গী হয়েছি তারা একটু নিজগুণে যদি নিজেদের ভাললাগাটুকু ঠিক মতো শেয়ার করি তাহলে অন্যরাও একটু ভরসা বেশি পাবে (একান্ত ব্যক্তিগত মতামত)। লেখক সম্পর্কে কিছু মতামত: দ্বিখণ্ডিতা পড়তে গিয়ে আমার শুধু লেখককে বারবার ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করেছে কেননা উনি চাইলেই পারতেন দ্বিখণ্ডিতাকে খন্ড হিসেবে আনতে যা নিঃসন্দেহে ভালো মার্কেট পেত কিন্তু আমাদের পাঠককুলের জন্য একটু কষ্টকর হয়ে যেত।এই ব্যাপারটি লেখক মাথায় রেখেছেন নিঃসন্দেহে। আমার খন্ড টাইপ বই পড়তে একদম ভালো লাগে না। তাছাড়া উনি চাইলেই বইয়ের পেজ আরো বাড়াতে পারতেন যা আরকি নরমালি সবাই করে থাকেন কিন্তু দ্বিখণ্ডিতা পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে উনি বইটি লিখেছেনই পাঠকের খরচের কথা মাথায় রেখে। আমি যতগুলো বই পড়েছি সবগুলো বই পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে এমন ভাবে বা অমনভাবে ছাপালে হয়তো পেজ কম লাগতো যা কখনোই সম্ভব নয় কিন্তু দ্বিখণ্ডিতা পড়তে গিয়ে আমি আমার এই চাওয়াকে যখন দেখলাম দ্বিখণ্ডিতার পাতায় পাতায় তখন আমি আসলেই পরিতৃপ্ত হয়েছি। আমি আসলে একদম মুগ্ধ হয়ে গেছি। উনি আসলেই পাঠকের বাজেটের খেয়াল রেখেছেন মন থেকেই, উনার এই ভালবাসার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। কেননা দ্বিখন্ডিতা কখনোই ৫৫১ পেজের গল্প না, কিন্তু উনি তা করে দেখিয়েছেন তবে এখানে বলে রাখা গল্পের মান একদম একটুও কমাননি।এই বইকে আর পাঁচটা বইয়ের মতো লিখলে অবশ্যই তা ৬০০পেজ ছাড়াতো, কিন্তু উনি পাঠকের কথা মাথায় রেখে বইটি বাজেট ফ্রেন্ডলি করেছেন সততার সাথে।আর একটি কথা গোলুমোলু দ্বিখণ্ডিতা একদম মন কেড়ে নিয়েছে, এতো মোটু বই অথচ একফোঁটাও বিরক্ত হয়নি বরং লেখিকার লেখার প্রেমে পড়ে গেলাম। দ্বিখণ্ডিতা সম্পর্কে উনি উনার লাইভে যতকথা বলেছেন তার একফোঁটাও মিথ্যে ছিল না বরং বারবার উনার বলা কথার সত্যতা পেয়েছি। আসলেই এই বইটি শুধু সুবহানার দ্বিখণ্ডিত হবার গল্প না,পাঠককেও দ্বিখণ্ডিত করেছেন,ইভেন উনি নিজেও হয়েছেন বলে আমার ধারণা।আমি পড়তে গিয়েই নিজেকে নিজের মাঝে আটকে রাখতে পারছিনা তাহলে উনি না জানি কতশতবার দ্বিখণ্ডিত হয়েছেন ,আমাকে বারবার এই কথাটাই ভাবিয়েছে। উনার ক্ষুরধার লেখার একটি জলজ্যান্ত উজ্জ্বল প্রমাণ "দ্বিখণ্ডিতা"। চরিত্র:আরিজ,শামস,সুবহানা,সাজিয়া খালা,আজম, সলিমুল্লাহ সাহেব, সাবরিনা,সারা,শওকত দেওয়ান,ফু আমরা,জালাল,নামিরা, নাজনীন ফুপু,শেখ জুনায়েদ,জয়তুন,হামিদা বানু,অনুফা,শামা,সালমা আন্টি,নীলান্তিকা,নাসিমা বানু,তূর্ণা,মইনুল হোসেন,মাসুদ গাজী,লিমন,নেহাল সহ আরো অনেকেই আছেন গল্পটিতে। তবে আমার মনে আজীবন গেথে থাকবে নীলান্তিকা,শেখ জুনায়েদ।আরো একজন আছে যার প্রতি আমার ভাললাগা ও ভালবাসা সবার উর্ধ্বে,নাম বলা যাবে না বই পড়লে নিজেরাই জেনে যাবেন।শামসের জন্য শুধুই মায়া আছে।প্রতিটি চরিত্রই গুরুত্বপূর্ণ বইটিতে,তাই পড়ার সময় নামগুলো একটু বেশি খেয়াল করে পড়তে হবে।বলা যাবে না কখন কোন চরিত্রের নাম কাজে লেগে যাবে। তবে কাদির/কবির নাম নিয়ে আমি একটু কনফিউজড। টাইপিং মিস্টেক হবে হয়তো। প্রিয় লাইন: ১. পোশাক দিয়ে আসলে মানুষ বিচার করতে নেই মেধাবীরা নাকি পর্দার মধ্যেও লুকিয়ে থাকে। ২. তরুণী কন্যা খুব ঝুঁকিপূর্ণ আমানত ।যে-কোন সময় অজগরের গ্রাস হয়ে যেতে পারে ,তাদের ইজ্জতের সাথে পাত্রস্থ করা সব বাবার কাম্য। ৩. মানুষ নিজের জীবনে পরিকল্পনা করে নিলেও আল্লাহর তার বান্দাকে নিয়ে করা পরিকল্পনাই সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ। ৪.সাগরের উপর উর্মিমালার উগ্ৰ সঞ্চালনে ঝড়ের প্রকোপ বোঝা যায় ।তবে কিছু ঝড় আসে গভীরে। ভেতরে প্রচন্ড চাপে সবকিছু এলোমেলো হলেও উপর থেকে টের পাওয়া দায়। ৫.নিজেদের যারা জাজ করতে দেয় না তারা কি পৃথিবীকে জাজ করার অধিকার পেয়ে যায়? ৬.আমরা সেখানেই নিজের সব আবেগ খরচ করে ফেলি যেখানে আমাদের ভাগ্য সহায় হয় না।অথচ এটা সবচেয়ে বড় বোকামি। ৭. পরাশ্রয়ী মানুষ পরজীবী কীটের চাইতে উন্নত হয়। ৮. বন্ধুদের সাহায্য করা মহৎ গুণ ,তবে সমস্যা বাদে যখন চরিত্রগুলো হয় স্থলিত। চোরাবালিতে ডুবন্ত মানুষ সাহায্যকারীর হাত-সহ নিয়ে ডুবে। ৯. মিষ্টিতে যার রুচি নেই ,তার হাতে মধু পাত্র ধরিয়ে দেওয়ার অর্থ আল্লাহতালাই ভালো জানেন। ১০. অযত্ন পেলেও একটা ভালো কোল থেকে কখনো ভুল মানুষ জন্ম নেয় না ।কিন্তু শত যত্নেও একজন রুক্ষ স্বভাবের রক্ত থেকে ভালো মানুষ জন্মানো বেশ দুরূহ। এমন কতশত আরো অনেক অনেক লাইন আছে আমার ভীষণ ভীষণ পছন্দের। বি:দ্র: উনার দ্বিখণ্ডিতা পড়ে আমি একদম শতভাগ মুগ্ধ হয়েছি, লেখকের জন্য শুভকামনা। আমি ভুলতে পারছিনা দ্বিখণ্ডিতার চরিত্রগুলো।একটি গল্প পড়ে যদি মাথার মধ্যে তার রেশ রয়ে যায় তাহলেই মনে হয় পয়সা উসুল। ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।

      By Leeon Haque

      29 Apr 2024 09:43 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      অনেক ক্রিটিকাল একটা বই।বুঝতে বেশ কষ্ট হয়েছে।

      By Israt Sharmin Trina

      27 Nov 2023 12:52 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      #আড্ডাখানায়_রকমারি #রিভিউ_২০২৩ আমার দ্বিখণ্ডিতা যাত্রা।। বইটা শেষ করার পর আমার উপলদ্ধি হলো, নিঃসন্দেহে এই বই তাঁর নিজের গন্ডি শুধু পুরাতন পাঠককে আকর্ষণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে রাখবেনা বরং নতুন পাঠক তৈরির ক্ষেত্রতেও ভূমিকা রাখবে। লেখিকার সুদক্ষ লেখনীর সুনিপুণতায়, দুর্দান্ত প্লটের কাহিনীতে নিজের অজান্তেই মন এতোই মোহাচ্ছন্ন হয়ে পরেছিলো যে ইহজাগতিক সকল চিন্তা থেকে শতক্রোশ দূরে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। লেখিকার ভাষায়ই তাই বলতে হচ্ছে, কিছু অনুভূতির ব্যাখ্যায় পৃথিবীর সব ভাষারা হেরে যায়। আমার শব্দের ভান্ডারও অনুভূতি গুলো প্রকাশের সঠিক বিশেষণের অপ্রতুলতার খরায় ভুগছে। চলুন এবার আমার দিখন্ডিতা সফরকালীন প্রাপ্ত আমেজ টুকুর একটুখানি রেশ আপনাদেরও দেয়ার চেষ্টা করি। ▫️ একজন দক্ষ কারিগর আমাদের চারপাশের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ঘটনাপ্রবাহ গুলোকে যা প্রতিদিন দেখছি, প্রতিনিয়ত অনুভব করছি এসব একত্রিত করে তার বাক্য ধারার মাঝে এনে লিখন শৈলীর এতো সুন্দর, গভীর মর্মার্থ দাঁড় করিয়েছেন যেন বাস্তবতারই প্রতিরূপ। রাজনীতির কলুষিত কুট কৌশল গুলোর একদম বাস্তব সম্মত ছাপ ছিলো প্রতি পদে। মানুষের ভালো খারাপ এ দুটো সত্তার দ্বন্দ, পাশাপাশি থেকে এগিয়ে গিয়েছে। গল্পের চরিত্র গুলোর সাথে সাথে বারবার মানুষিক টানাপোড়েনের মুখোমুখি হয়েছে আমার পাঠক সত্তা। সমস্যা সমাধাণের সুচিন্তিত ব্যাখ্যা গুলো আমার ঘুমন্ত বিবেককে ভাবতে বাধ্য করেছে এভাবে কেন সমস্যাটা নিয়ে চিন্তা করলাম না নিজের জন্য। পুরো গল্পটা জুড়ে মানুষের লোভ লালসা, ষড়রিপুর তান্ডব, অন্যায়, পরকীয়া, বিচ্ছেদ, ক্ষমতার লাড়াই, রাজনীতি, সম্পর্কের টানাপোড়েনের পাশাপাশি মানবতার জয় জয়কারও দেখেছি। ▫️গল্পটি মূলত তিনজন মানব মানবীর জীবনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এক বিশাল আখ্যান। তবে বহু কলেবরের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি অলংকৃত করেছে গল্পের কাহিনীর বিস্তারকে সাবলীলভাবে। চরিত্র তিনজনের মূলে রয়েছে, ▪️কঠিন পর্দা ও ইসলামী তবিয়তে বড় হওয়া ইরানী বংশভূত নীল নয়না সুবহানা জান্নাত আর দেওয়ান বাড়ির দুই রাজপুত্র। সুবহার গৃহ প্রবেশের মধ্য দিয়েই দেওয়ান বাড়ির ভীত নাড়িয়ে দেয়। কেউ হয় রিক্ত, কেউ হয় রক্তাক্ত। কেউ পেয়ে হারায়, কেউ হারিয়েও গুমড়ে মরে। ত্রিভুজ দৃশ্যপটের মাঝে উঠে এসেছে ঘুমন্ত অতীতের ভয়াবহ চিত্র আর তাতে বর্তমান হয়েছে ভূলুণ্ঠিত। দ্বিখন্ডিত হয়েছে হৃদয়, আর খন্ডিত হৃদয়ের আর্তনাদ তো সব সময় নীরবই হয় তাই না? ▪️দানবীয়, বোহেমিয়ান এক হতভাগ্য রাজপুত্র শামস যার ভালোবাসা সমুদ্রের মতো বিশাল, সুন্দর কিন্তু উথাল পাথাল ঢেউয়ে ভাসিয়ে নেয়া হুট করে আসা ঝড়ের মতোই বিধ্বংসী। নিজের ভাগ্যগুনে পাওয়া হীরা ফেলে কাঁচের মূল্য দেয়ার খেসারত যাকে দিতে হয়েছে শেষ পর্যন্ত। ▪️অন্যজন অভিজাত্যের গাম্ভীর্য আর ধর্মের বর্মে শানিত পুরুষ, মুকুট হীন রাজপুত্র আরিজ ভালোবেসে যে আকাশের মতো নির্মল পবিত্র ছায়া হয়ে থেকে যায়। দেশ সেবায় নিয়োজিত সৈনিক হওয়ার সুবাদে দেশের ডাকে সর্বদা যেমন প্রস্তুত তেমনি নিজের বিবেকের প্রশ্নে সে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ▪️পাঠ পতিক্রিয়া: গল্পের বিভিন্ন পর্যায়ে তিনজনের সব ইচ্ছা গুলোই পূরণ হয়। কিন্তু তারপরও তারা প্রত্যেকে দ্বিখণ্ডিত, সাথে সাথে আমরাও। সাধারণত যেকোন গল্পে দুজন নায়ক থাকলে পাঠকরা দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়, কিন্তু এখানে শেষ পর্যন্ত আমি এক পাক্ষীক হয়ে নিজেকে দাঁড় করাতে পারিনি। বিভিন্ন জায়গায় রিভিউ পড়ে বুঝতে পারছিলাম একজন খুব বাজে ভাবে ধোঁকা দিবে সামনে তাই ডিটারমাইন্ড ছিলাম এর প্রতি বিরূপ থাকাবো কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি ব্যার্থ, এতো ধোঁকা দেয়ার পরও ওকে ঘৃণাটা অবধি করতে পারিনি। কিন্তু একই সাথে এটাও ঠিক যে আর একজন নায়ককে আমি অগ্রাহ্য করতেও পারছিলাম না, কারন অনুভূতির দোলাচলে তাকে এড়ানো অসম্ভব গল্পে তার বিস্তৃতিই আমার কাছে তার গুরুত্ব তার মাহাত্ম্য একটুখানিও কমতে দিচ্ছিলোনা। ঠিক এখানটাতেই আমি আবার আর একবার দ্বিখন্ডিত হয়েছি। তবে গল্পের শেষটুকু আক্ষেপ গুলোকে ছাপিয়ে কোথাও যেন একটা পূর্ণতা দিয়ে গেছে সুবহানার অন্তঃকোণ থেকে বেজে ওঠা শামসের সেই কথাটায়, " ভালোবাসা কখনো ফিরিয়ে নেওয়া যায় না, কখনো মরে যায় না জান্নাত। রাশি রাশি ঘৃণার মাঝেও এক বিন্দু হয়ে ভালোবাসা বেঁচে থাকে। " এখানেই মনে হয় শামস্ থেকে গেছে সব কিছু হারিয়েও কোথাও জিতে গেছে ওর ভালোবাসাটা।আর সব শেষের মূর্ছনাটা... " ভালো থেকো ব্লু সাফায়ার।। " গল্পের পারফেক্ট সমাপ্তিতে শেষ পেরেক হিসেবে তার সিল মোহর দিয়ে গেছে। ▫️পুরো গল্পে একটা লাইনও স্কিপ করার কোন পরিস্হিতি ছিলো না প্রতি পরতে পরতে টুইস্ট আর রহস্যের বিচরণ ছিলো। সমাপ্তি পৃষ্ঠার আগ পর্যন্ত কখনো এই ভেবে নিশ্চিত হওয়া যাবে না যে আসল রহস্য আমি ধরে ফেলেছি এটা ভাবলেই মূল রহস্যের উপর থেকে সকল পর্দা উঠনোর পরে ধাক্কাটা বেশী লাগবে। আবেগের এমন একটা স্তরে পৌঁছে ছিলাম বার বার হৃদয়ের রক্তাক্ততা ঠেকাতে পার ছিলাম না।দূর্দান্ত ওদের মুখোমুখি মুহূর্ত গুলোর টাইমিং, কাহিনীর ডিমান্ড অনুযায়ী প্রতিটা চরিত্রের অভিব্যক্তি, পরিস্থিতির নিরিক্ষে ডায়লগ ডেলিভারিতে আমিও যেন সাথে ছিলাম আত্মচিৎকার গুলো যেন আমার ভেতর থেকে আসছিলো। থমকে গেছি আবেগে ভেসেছি কয়েকটা বিশেষ জায়গায়। ▫️লেখিকা তার স্টোরি টেলিংএ এক নিজস্ব ঘরানা নিয়ে এসেছেন, গুণমুগ্ধ পাঠক হিসেবে অচিরেই তা আঞ্জুমীয় সাহিত্য ধারা হিসেবে স্বীকৃতি পাবে এই আশা রাখছি। যদিও তাঁর লেখা না পড়ে এর রেশটুকু পুরোপুরি ইন্দ্রিয়লব্ধ করা যাবে না তবুও আমার ভাষায় বলার লোভ সামলাতে পারছিনা, গল্পের বড় কোন টুইস্ট এর পরপরই তিনি সুচারু ভাবে অন্য দৃশ্যপটে চলে যান, এতে পাঠকের একটু মনোযোগ সরানোরও কোন উপায় থাকে না। পরে আবার দক্ষ হাতে প্রয়োজন অনুযায়ী বাকী অংশটুকু কাহিনীতে অন্যরকম মাধুর্য দিয়ে জুড়ে দেন। ▫️রেনেসাঁস আমলের ভাস্কর, দেয়াল চিত্রকর বা সাহিত্যিকরা যেমন নিজের শিল্প কর্ম সৃষ্টির মাঝে অন্যায়ের তীব্র প্রতিবাদ ফুটিয়ে তুলতেন। প্রাচীনকালের জ্ঞানে আলোকিত মানুষদের মতোই লেখিকা কখনো ব্যাঙ্গাত্মক ভাবে আবার কখনো সিম্বোলজীর সাহায্য নিয়ে বর্তমান সময়ের ঘটমান বিভিন্ন সমস্যা তুলে এনেছেন প্রচন্ড সাহসীকতার সাথে। ▫️ধর্মীয় বিভিন্ন দিক, কোরআনের বাণী, একজন প্র্যাক্টিসিং মুসলিম ও তার পরিবারের জীবন ধারণ, নিয়ম-কানুন, অনুশাসনের উল্লেখ থাকলেও অন্য ধর্মাবলম্বী কেউ বিব্রত হতে পারে এমন কিছু খুব সতর্কতার সাথে বিচক্ষণ ভাবে দেখানো হয়েছে তাই ভিন্ন মতাবলম্বীরাও স্বস্তির সাথে বইটি পড়তে পারবে। প্রতিটা গল্প প্রেমীর কাছে আমার অনুরোধ থাকবে অন্তত একবার হলেও ফেইসবুকে দেয়া গল্পের প্রমোশনাল পর্ব গুলো পড়বেন। কথা দিচ্ছি নিজেকে আটকাতে পারবেন না। বঞ্চিত করতে ইচ্ছা করবে না নিজের পাঠক সত্তাটাকে এতো সুন্দর সাবলীল সাহিত্য কর্মের সৌন্দর্য্য আস্বাদন থেকে। বইটা কিনে পড়ার আগে খুব দরকারি কোন কাজ থাকলে শেষ করে নিবেন কারণ একবার পড়া শুরু করলে শেষ না করা পর্যন্ত দু তিন দিনের মধ্যে আর কিছু করতে পারবেন না। ▫️ সবশেষে এটুকু বলেই আমার যাত্রা স্হগিত করছি, বইটিকে ত্রিকোন প্রেমের উপন্যাস বা পরকীয়া কেন্দ্রীক ভেবে এড়িয়ে গেলে দারুণ এক সাহিত্য শিল্প থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবেন। যদিও কয়েকটা সাধারণ শব্দে টাইপিং মিসটেক ছিলো এতো বড় বইয়ে যা গোণায় ধরার মতো না এবং এটা বই পাঠের আনন্দ উপভোগের ক্ষেত্রে কোন রূপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারেনি। দ্বিখন্ডিতার যবানীকার দ্বারপ্রান্তে এসে কারো সময় বা অর্থ নষ্ট হয়েছে এমন বোধ আসবেনা দারুন কিছু মুহূর্তের সাক্ষী হিসেবে নিজেকে সামিল করতে পেরে অন্য রকম তৃপ্তি অনুভব করতে বাধ্য সাহিত্য প্রেমী প্রতিটি পাঠক। এক নজরেঃ ▪️ বই: দ্বিখন্ডিতা ▪️ লেখক: শারমিন আঞ্জুম ▪️ জনরা: সমকালীন সামাজিক উপন্যাস ▪️ প্রকাশনী: বইবাজার ▪️ প্রচ্ছদ: সাদিতউজ্জামান ▪️ পৃষ্ঠা:৫৫১ ▪️ মুদ্রিত মূল্য: ১০০০ টাকা ▪️পারসোনাল রেটিং: ৪.৮/৫

      By MifTa TiMu

      30 Apr 2023 05:34 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      • বই: দ্বিখণ্ডিতা • লেখক: শারমিন আঞ্জুম • প্রকাশনী: বই বাজার • প্রচ্ছদ: সাদিতউজ্জামান • পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৫৫১ • মুদ্রিত মূল্য: ১০০০ টাকা • রিভিউদাতা: মিফতা তিমু ✓প্রচ্ছদ: যেকোনো বইয়ের ক্ষেত্রে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষিত হয় সর্বপ্রথম তার প্রচ্ছদের গুনে। প্রচ্ছদ যদি উৎকৃষ্ট হয় তাহলে পাঠকের সেই বই পড়ার প্রতি আগ্রহ জেগে উঠে। একটি বইয়ের প্রচ্ছদেই বইয়ের কাহিনীর বিষয়বস্তু ফুটে উঠে। ফুটে উঠে তার গভীরতা। সেই দিক থেকে প্রচ্ছদ শিল্পী বইয়ের বিষয়বস্তু খুব সূক্ষ্ম ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। বইয়ের প্রচ্ছদ ভেসে উঠা নীল দৃষ্টি যেন তারই ইঙ্গিত দেয়। ✓বইয়ের বাইন্ডিং: রয়েল সাইজের বই সাধারণত এমন শক্তপোক্তই হয়। তবুও বইকে এত যত্ন করে বাঁধিয়ে আমাদের কাছে তুলে দেওয়াতে প্রকাশনীরও অবদান আছে। বই বাজারের বই আমার আগে তেমন পোড়া হয়নি। তবে যেই কটা পড়েছি তাতেই ভালো করে বুঝতে পারছি যত্নশীল প্রকাশনী হিসেবে তারা শীর্ষে। বইয়ের বাইন্ডিং এতটাই ভালো যে হাতে নিলেই বইয়ের প্রতি প্রেম প্রেম পায়। ✓সার-সংক্ষেপ: গল্পটা ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা এক নারীর দ্বিখণ্ডিত হওয়ার গল্প। গল্পটা কঠিন বাস্তবতার কাল্পনিক রূপে গড়ে উঠা জীবনের গল্প। গল্পের ছলে এখানে ফুটে উঠেছে আমাদেরই আশেপাশে ঘটে চলা নিত্যদিনের বাস্তব গল্প। উপন্যাসটা কল্পনাপ্রবণ বটে কিন্তু বাস্তব নয় এটা বলার সুযোগ নেই। লেখক তার লেখার গুনে কল্পনা ও বাস্তব মিশিয়ে তৈরি করেছেন এই মাস্টারপিস। আমার পড়া সেরা বইয়ের একটা। ✓ফ্ল্যাপ থেকে: প্রচন্ড ভালোবাসার মানুষটা হঠাৎ ভালোবাসা ছেড়ে দিলেও আমরা কেন যেন তাকে ভালোবাসার বদভ্যাসটা কাটাতে পারি না। তার থেকে দূরে সরে গিয়েও তাকে আটকে ফেলি বুকের মাঝে। তাকে মনে করি না, তার নাম নেই না, তবুও সে রয়ে যায় মনের অজানা গভীরে। সময়ের ফেরে সেই একই মনে যখন নতুন কারো পদার্পণ হয়, নিজের কাছেই কেমন অপরাধী মনে হয়। মনে হয় এতদিনের স্বযত্নে লালিত মমতাকে যেন নিজেই অপমান করছি। একনিষ্ঠতার অহংকার ভাঙার কষ্ট কি কেউ বোঝে? না অতীতকে ভোলা হয়, না বর্তমানকে অস্বীকার করা যায়। শুধু হৃদয় দ্বিখণ্ডিত হয়ে নীরব আর্তনাদ করতে থাকে। এটা হয়তো কিছু মনের নিয়তি । ✓পাঠ প্রতিক্রিয়া: শারমিন আঞ্জুম আপুর আমি নতুন পাঠক। এখনও সেভাবে করে তার সব উপন্যাস পড়া হয়নি। পড়েছি এই নিয়ে মাত্র তিনটা। কিন্তু নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস আমারও আছে। যার কারণে আপুর ফেসবুকে চলমান উপন্যাস পড়েই আন্দাজ করেছিলাম লেখক নিঃসন্দেহে অভিজ্ঞ। জীবনে এতটা বছর কাটিয়ে বাস্তবতা তার হাতে। সেই থেকেই তার লেখা পড়া শুরু। আমি পাঠক হিসেবে খুবই ধৈর্যশীল। বলা যায় কোনো লেখা আমায় অস্থির করতে পারেনা। অথচ দ্বিখণ্ডিতা পড়ে একসময় আমার মেজাজ খারাপ হয়েছে তো আবার কখনো মন ভালো হয়েছে। শুনেছি অনেক কেঁদেছেও। আসলে একেকজনের আবেগ অনুভূতি একেক ধাঁচে গড়া। আমি কঠিন তাই কাদতে পারিনি। তবে একেবারেই যে আবেগী হইনি এমনও নয়। কখনও বিরক্ত হয়েছি তো কখনও খুশি হয়েছি। সবটাই হয়েছে আপুর লেখার গুনে। আপুর লেখার ধরন ইউনিক। বর্তমান অতীতের মিশেলে এক অন্যরকম ধরন। ✓প্রিয় চরিত্র: এই বিরাট কলেবরের উপন্যাসে প্রিয় চরিত্র খুঁজে বের করা কঠিন তবে নেহাতই অসম্ভব নয়। একটা উপন্যাসে আমার কাছে মুখ্য চরিত্রদের থেকে পার্শ্ব চরিত্রগুলো আকর্ষিত করে বেশি। তারাই হয়ে উঠে আমার প্রিয়। সেই হিসেবে দ্বিখণ্ডিতাতেও আমার প্রিয় চরিত্র আছে। তারা হলেন জুনায়েদ শেখ, সালমা আন্টি, তূর্ণা চৌধুরী, নামিরা, ইউসুফ। তবে আরেকজন প্রিয় হলেন হৃদা। এখন কেন সেটা জানিনা। মুখ্য চরিত্রদের মধ্যেও প্রিয় আছে। আর সে হলো আরিজ। ✓অপ্রিয় চরিত্র: এই উপন্যাসে আমার অপ্রিয় চরিত্র ধরতে গেলে তার লিস্ট শেষ হবে না। তার মধ্যে শওকত দেওয়ান সবার আগে। তারপর অনুফা, শামা, সারা, নেহাল। আরেক চরিত্র আছে। শামস তবে তাকে আমি প্রিয় অপ্রিয় কোনো চরিত্রের কাতারে ফেলতে পারছিনা। তার উপর আমি বিরক্ত বটে কিন্তু ঘৃণিত নয় সে। তার প্রতি ভালোবাসা নেই তবে করুণা আছে। বরাবর মাথা গরম করে শুধু ভুল কাজই করে গেলো সে। ✓প্রিয় উক্তি: এই উপন্যাসে আমার প্রিয় উক্তির শেষ নেই। বলা যায় গোটা উপন্যাসটাই প্রিয়। সেখানে বেছে বেছে প্রিয় উক্তি বের করা কঠিন। তবে কিছু উক্তি, কিছু অংশ আমার প্রিয় আছে। সেগুলোই তুলে ধরলাম। • এক মহার্ঘ্য রত্নজয়ে দুই কালপুরুষের লড়াই। • প্রচন্ড ভালোবাসার মানুষটা হঠাৎ ভালোবাসা ছেড়ে দিলেও, আমরা কেন যেন তাকে ভালোবাসার বদ অভ্যাসটা কাটাতে পারি না। • যে হারিয়ে যায় তাকে খোঁজা যায়। যে স্বেচ্ছায় চলে যায় তাকে ফিরিয়ে আনার কোনো মানে হয়। • এখনো যে আসেনি, সে ইরান গেল কী করে?" (মজার একটা অংশ) • খন্ডিত হৃদয়ের আর্তনাদ সব সময় নীরবই হয়। মজার কথা হলো আমার আরও অনেক প্রিয় উক্তি আছে কিন্তু সেগুলো দিলে স্পয়লার হয়ে যাবে তাই দিলাম না। প্রিয় উক্তির সংখ্যা গুনলে শত পেরিয়ে যাবে। ✓রেটিং: এই উপন্যাসের রেটিং দিবো কি সেটাই বুঝতে পারছি না। একে হান্ড্রেড অন হান্ড্রেড দিলেও কম পড়বে। তাই রেটিং দেওয়ার চিন্তা বাদ। তবে স্বীকার করতে হয় এটা শারমিন আঞ্জুম আপুর মাস্টারপিস। মোস্টলি রিকমেন্ডেবল। সমাপ্ত...

      By Sakib

      16 Apr 2023 06:09 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      #দ্বিখণ্ডিতা #পাঠ_অনুভূতি ♦এক নজরেঃ •উপন্যাসের নামঃ দ্বিখণ্ডিতা •লেখকঃ শারমিন আঞ্জুম •ধরনঃ সামাজিক •প্রকাশনীঃ বইবাজার প্রকাশনী •প্রচ্ছদঃ সাদিতউজজামান •মুদ্রিত মূল্যঃ ১০০০ •পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৫৫১ •প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ লেখনীতেঃ রিফায়াত হাসান সাকিব ♦ভূমিকাঃ সেদিন অনেক রাত ছিল । রাতের সৌন্দর্যে মাতাল হতে আমার মন সর্বদাই ভালোলাগায় বিরাজ করতে থাকে । সে রাতে আমি হেঁটে বেড়িয়ে ছিলাম চেনা অজানা রাস্তায় । এই রাস্তা আমার চেনা হলেও কতটা যে অজানা তা অন্ধকার হয়ে আসা আলোয় বুঝতে পারছিলাম না । অন্ধকারে হাঁটতে থাকলে আমি নিজের সাথে যা করি, তা হলো একাকী থেকেই প্রচুর কথা বলি । হয়তো জীবনে কখনও এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে যার ছাপ মনে একবারই শুধু দাগ ফেলেছে । সেই ঘটনাই এতদিন পরে মনে কিভাবে এসে জড়ো হলো তা বুঝতে না পেরে একাকী কথা বলা চালিয়ে যাচ্ছি । আমি যখন এখন নিজের অনুভূতি জানাতে চাচ্ছি, তখন কেনো যেন খুব একাকী হাঁটতে ইচ্ছে করছে অনেক । অজানায় হাঁটতে হাঁটতে একা থেকে কথা বলতে ইচ্ছে করছে । এই অনুভূতি আমার জন্য পুরোপুরি নতুন । এই অনুভূতিতে আমার মনে হচ্ছে, আমি কতদিন হয়ে গেল একাকী হেঁটে হেঁটে মনের রাজ্যে কথা পাঠাই না । কেনো পাঠাই না! ♦পারিপার্শ্বিক দিকঃ পৃথিবীতে ভীষণ গরম । সাথে রামাদান এর দিন । এই মুহূর্তগুলো কি যে ভীষণ অন্যরকম । আজকের সকালটা কি জানতো তার ভোররাতের সময়টা এতটা মনোকষ্টে ভুগতে থাকবো আমি । সকাল হয়েছিল । আমার ঘুমও ভেঙেছিল । হয়তো সময়টা মনের মতো হওয়াতেই মনে হয়েছিল আজকের দিনটাই এই উপন্যাসটি পড়ার যথোপযুক্ত দিন । জানি না কেনো আমার তা মনে হয়েছিল । আমি এক মুহূর্ত সময় আর ভাবনায় অন্য কিছু আসতে দেইনি । শুধু বইটা পড়ে গিয়েছি । ঠিক সকাল ১০টা বই পড়া শুরু করেছিলাম । কিন্তু পড়ার মাঝে মাঝে বিভিন্ন সময়েই আমি পড়া থামিয়ে দিয়েছিলাম । আমার নিজের মনের বিশ্রাম খুবই দরকার ছিল । এখন যখন উপন্যাসটি পড়া শেষ হয়ে গেল তখন সময়টা রাত ৩টা । ঠিক একনাগাড়ে না পড়া হলেও আমি উপন্যাসটি পড়ার মাঝে অন্য কোনো অনুভূতি মনে জায়গা দেইনি । রোজকার অনুভূতি জানে, আমার এই অনুভূতিসম্পন্ন মনটা কি ভীষণ মায়া নিয়ে দ্বিখণ্ডিতায় পুড়তে চাচ্ছিল একটু একটু করে । ♦নামকরণঃ পৃথিবীতে মন নামক অচিন পাখিটিকে বশ করা আসলেই কঠিন । কি যে ভারি বস্তু এটি । না বহন করা যায়, না সামাল দেয়া যায় । তবুও অনুভবে বহন করে নিতে হয় । হায়রে মন, এটা কি যে পোড়ায় । মনের অনুভূতিতে কথার আঘাত কিংবা সাময়িক কিছু স্পর্শের আঘাতে মন খণ্ডিত হয়ে যেতে চেয়েও যেন একটা গোলক ধাঁধা ধরে আটকে থাকে । পৃথিবীতে এই মন পুরোপুরি খণ্ডিত হতে চেয়েও হয় না । সমস্ত খণ্ডগুলো জোড়া লেগে তৈরি হতে চায় । সেই জোড়ায় যেন খণ্ড খণ্ড অনুভূতিগুলো শব্দের মিছিলে তৈরি করে দ্বিখণ্ডিত হয়ে থাকার অনুভূতি । এই পৃথিবীতে কিছু মানুষ থাকে দ্বিখণ্ডিত হওয়া । আর যারা মন নামক এই স্বপ্নরাজ্যে ভেঙ্গে যাওয়া কষ্টের আহ্বান নিয়ে ফিরে ফিরে এসে নতুন করে সব গুছিয়ে নিতে চায় । দ্বিখণ্ডিত হয়ে থাকা মনের দ্বিখণ্ডিতা হওয়ার আহ্বানে সুবহানা জান্নাতের মনের দুই খণ্ডের জোড়া লাগানোর আঁচ নিয়ে থাকা গল্প এটি । ♦ফ্ল্যাপে লেখাঃ প্রচন্ড ভালোবাসার মানুষটা হঠাৎ ভালোবাসা ছেড়ে দিলেও আমরা কেন যেন তাকে ভালোবাসার বদভ্যাসটা কাটাতে পারি না । তার থেকে দূরে সরে গিয়েও তাকে আটকে ফেলি বুকের মাঝে । তাকে মনে করি না, তার নাম নেই না, তবুও সে রয়ে যায় মনের অজানা গভীরে । সময়ের ফেরে সেই একই মনে যখন নতুন কারো পদার্পণ হয়, নিজের কাছেই কেমন অপরাধী মনে হয় । মনে হয় এতদিনের স্বযত্নে লালিত মমতাকে যেন নিজেই অপমান করছি । একনিষ্ঠতার অহংকার ভাঙার কষ্ট কি কেউ বোঝে? না অতীতকে ভোলা হয়, না বর্তমানকে অস্বীকার করা যায় । শুধু হৃদয় দ্বিখণ্ডিত হয়ে নীরব আর্তনাদ করতে থাকে । এটা হয়তো কিছু মনের নিয়তি । ♦প্রচ্ছদঃ এই প্রচ্ছদটি যেদিন আমি প্রথম দেখেছিলাম আমার কিছুই মনে হয়নি । হয়তো এখনও মনে হচ্ছে না । আমার কেনো জানি কখনও অদ্ভুতভাবে এই প্রচ্ছদটি নিয়েও ভাবা হয়নি । আজ হঠাৎ এই বিভাগটি লিখতে গিয়ে মনে হলো, আসলেই তো । আমার কেনো কখনও প্রচ্ছদটি নিয়ে ভাবা হলো না! কেনো কখনও বিশেষ নজরে দেখা হলো না! কিন্তু প্রচ্ছদটি নিয়ে ভাবতে গেলেই মনে হয় এই নীল চোখের আবেশে হৃদয় ভাঙ্গা যেন মনের অদূরে দেয়াল ভাঙ্গার শব্দের থেকেও বেশি ক্ষত নিয়ে আসে । এই ক্ষত সহ্য করার মতো নয় । রূপক অর্থে প্রচ্ছদটা এত সুন্দর করে দেখানো হয়েছে যে ভাবতে এখন ভালো লাগে । ♦উৎসর্গঃ উৎসর্গ পড়ে ভালো লাগছে খুব । বারবার মনে হচ্ছে, সত্যিকার বাস্তবিক জীবনে সবাই কি সুখ পায়? কেউ কেউ তো ফিরে ফিরে আসে যে কষ্টে দমবাঁধা অনুভূতি নিয়ে তাকিয়ে থাকে জীবনের শেষ দিনটা দেখার । তাদের নিয়ে করা এই উৎসর্গ ছোট শব্দ হলেও মনে গিয়ে বেশ লাগে । ♦উপন্যাসের ভূমিকাঃ আমি উপন্যাসের ভূমিকা অংশটি না থাকলেও একটা অংশ বারবার মনের কাছে গিয়ে সাজিয়েছি যে এই অংশটি নিয়ে লিখবো । হয়তো আমার বই পড়াটা আজকে হলো । কিন্তু এই প্রস্তাবনা অংশটি আমি উপন্যাসটি না পড়েই শুধু বইটি নাড়াচাড়া করার জন্যেই আগেও দুইবার পড়েছিলাম । আজকে আরেকবার পড়া হলো । একেকটা উপন্যাসের পটভূমি সাজিয়ে তোলার জন্য লেখকদের পরিশ্রম যে কিভাবে করতে হয়, কিভাবে সাজিয়ে তুলে মনের কাছাকাছি নিয়ে যেতে হয় তা অদ্ভুত ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে । ♦চরিত্র বিশ্লেষণঃ অনেকগুলো চরিত্র আছে এই উপন্যাসে । তবে আমার মনে হয় এই উপন্যাসের চরিত্র বিশ্লেষণ আসলে একেকজনের অনুভূতির কাছে একেকরকম লাগে । এই অনুভূতি বুঝিয়ে লেখা কি যে কষ্টকর! •সুবহানা জান্নাতঃ নির্ভীক পথচলায় সাহসী স্বভাবের অসাধারণ একজন নারী । যার জীবনে প্রতিটি মূল লক্ষ্য অসাধারণ এক নিপুণ আবহে এগিয়ে গিয়েছে । প্রবল ধৈর্যশীলা একজন নারী । যার পর্দায় থাকা প্রতিটি অনুভূতি মনে গিয়ে ভালো লাগা সৃষ্টি করে । ধর্মের প্রতি অদ্ভুত ভালো লাগা তার । •শামসঃ অদ্ভুত চিন্তায় ভেসে যাওয়া চুপিসারে জীবনের বৈরাগ্যে ভাসমান একজন পুরুষ । যার মন আর শরীর নামক দুইটি তলেরই খুঁজে পাওয়া বড় দায় । বেপরোয়া স্বভাবের সাহসী মানুষটি কখন কি করে ফেলে তা নিয়ে তেমন ভাবে না । তবে তার করে ফেলা বিভিন্ন কাজের দায় কখনও তাকে ভাবতে বাধ্য করে । জীবনের করা কিছু দোষ আর ভুল জীবনজুড়ে বয়ে যায় । •আরিজঃ অসাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন পুরুষ । যার মানসিকতা বেশ প্রখর । ভাইকে ভালোবেসে তাকে নিয়ে ভাবতে বেশ পছন্দ করে । সবাইকে যথোপযুক্ত সম্মান দিতে চাওয়া মানুষটার জীবনের অদ্ভুত কিছু দর্শন আছে । যে দর্শনগুলো অদ্ভুত ভাবে ভালো লাগাতে বাধ্য করে । •শওকত দেওয়ানঃ প্রবল স্বার্থান্বেষী স্বভাবের সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে একজন মানুষ । যিনি জানেন নিজেকে সুবিধাজনক নিয়ে যেতে কি কি করতে হবে । প্রতিটি পরিস্থিতি এবং কাজের পরিবেশ আগেই ঠিক করে রাখতে বদ্ধপরিকর । তাতে তা ভুল কিংবা দোষ পথের হলেও তার কিছুই যায় আসে না । •হামিদাঃ মমতা দিয়ে ঘেরা স্বভাবের নারীটি প্রবল ভালোবাসতে জানে । যত্ন এবং সেবা দিয়ে মানুষের পাশে এগিয়ে যেতে চায় সারাটা জীবন ধরে । •সারাঃ ভালোবাসার আসলে বিভিন্ন ধাপ আছে । যখন সেই ধাপটা ভুল জায়গায় ভুল ভাবে পতিত হয়, তখন তা ভালোবাসার নামান্তরে মারাত্মক অন্যায় খেলা হয়ে থাকে । এই খেলার ছাপ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দিতে হয় । স্বার্থের প্রতি লোভ কিংবা বিভিন্ন মুহূর্তের প্রতি লোভ তাকে স্বার্থান্বেষী একজন মহিলা তৈরি করে দিয়েছে । •নীলান্তিকাঃ কিছু উপস্থিতি আসলে একটা সময় পরে সুখ সুখ থেকেও অদ্ভুত কষ্ট দিতে থাকবে । মিষ্টি স্বভাবের বাচ্চা মেয়েটিকে ঘিরে মায়ের জগত । প্রবল ভালোবাসা নিয়ে মাকে নিজের প্রতি আগ্রহ দেখাতে তার যে কত ইচ্ছে! ♦টুকিটাকিঃ এছাড়াও আরো কতশত চরিত্র ভেসে আসে । জীবন বয়ে যায় । কত আখ্যান যেন নাম না জানা গোপন রহস্যের মতো অলিতে গলিতে জড়িয়ে ঢুকে পড়ে যায় । সেভাবেই চরিত্র আসে । এসে তালেগোলে ঢুকে বসে থাকে । জুনায়েদ শেখ এর কিছু সময়ের সাথে করা সিদ্ধান্ত উপন্যাসকে নতুন ভাবে এগিয়ে নিয়ে ফেলে । তাছাড়া নেহাল এর বন্ধুত্ব সম্পর্কের মাঝে ধূর্ত স্বভাব বেশ হতাশ করে দেয় । তাছাড়া নামিরা এর মতো মিষ্টি, বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাবের বোন বেশ ভালো লাগা তৈরি করায় । ♦প্রিয় চরিত্রঃ পৃথিবীতে অনেক মানুষের সাথে অনেকের জীবন যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় । কত মানুষের কতরকম জীবন । অথচ সব যেন কোনো না কোনো জায়গায় গিয়ে কেনো অন্যরকম হয়ে তাড়িয়ে বেড়ায় । এই পৃথিবীতে করা জীবনের এই বিভিন্ন রকম খোলস অন্যরকম ভাবে ভাবতে শেখায় । বারবার ভাবায় কিছু গল্প, নতুন করে সবকিছু ভাবতে শেখাবে । নতুন করে অনুভূতির রাজত্ব দিবে ‌। এই রাজত্বের রাজা শুধু তোমার মন ঘিরে থাকা শরীরটাই, কিন্তু তবুও ভাবতে বাধ্য করবে । আমার কাছে এই উপন্যাসের প্রিয় চরিত্র এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল গল্পের প্রয়োজনে আসা প্রতিটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুহূর্ত ব্যয় করে চলা প্রতিটি ছোট ছোট চরিত্রও । তবুও লিখতে গিয়ে মনে হয়, আমি প্রচুর পরিমাণে আরিজ নামক চরিত্রটির প্রতি মুগ্ধ হয়ে আছি । তার মানুষ থেকে মানুষে ভালোবাসার এই বিশেষ গুণ বেশি মুগ্ধ করে দেয় । তাই আরিজ হয়ে থাকুক আমার প্রিয় চরিত্র । ♦একক উক্তিঃ “আসসালামু আলাইকুম জনাব, আপনি কেমন আছেন?” “ওয়ালাইকুম আসসালাম বেগম সাহেবা, আপনার বিরহে আছি ।” ♦পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ √এই উপন্যাসের পটভূমি নিয়ে কিংবা তা নিয়ে ব্যাখ্যা করার মতো অনুভূতি আমার কাছে যথেষ্ট নেই । এবং আমি তা নিজে স্বীকারও করি । আমার বারবার মনে হয়েছে আমার মনের অভিধান থেকে যত শব্দ অনুভূতি হয়ে বেরিয়ে আসে সেখানে এই উপন্যাসের ব্যাখ্যা করার মতো অনুভূতি কোথাও নেই । পৃথিবীর কোথাও আমি কোনো জায়গায় এর যথোপযুক্ত অনুভূতি আমি ফুটিয়ে তুলতে পারবো না । এটা যে পাঠক হিসেবে কতটা কষ্টের তা ভেবে কান্না পাচ্ছে খুব । কিন্তু আমি সহজে কাঁদতে পারি না । এই উপন্যাসটি পড়তে গিয়েই আমার মনে হচ্ছে আমার এর ভার বহন করতেই যত কষ্ট । এর অনুভূতি ব্যাখ্যা করার যে খুব দায় । এই দায় নিয়েই এখন মনে হয় পৃথিবীতে অনুভূতি আসলে ব্যক্ত না করাই কখনও কখনও ঠিক হয়ে বসে থাকে । √উপন্যাসে পটভূমি যেভাবে বিস্তৃতি পেয়েছে তা অসাধারণ ভাবে বুনন করা হয়েছে । যেভাবে পটভূমিতে একের পর এক ঘটনা ছেপে এনে ব্যবহার করা হয়েছে জীবনধারায় ঘটনাপ্রবাহ এসেছে তত যেন আমার মনে হচ্ছিল আমি জড়িয়ে যাচ্ছি । ভীষণ ভয়ের সাথে মুগ্ধতার মতো কিছুতে আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল । এই ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ায় কি যে শান্তি । কি যে মায়া! যত গল্পটি এগোচ্ছিল তত বিভিন্ন আবহের সাথে সাথে ঘটনার মোড়কে মনে হচ্ছিল এখান থেকে পটভূমি হয়তোবা এদিকে ঘিরে থাকবে । কিন্তু উপন্যাসে বারেবারে নতুন মোড় এসেছে । নতুন মোড়ের সামনে গিয়ে আবহতে আমি আরো মুগ্ধ হয়েছি । মানবিকতার টানাপোড়েন এর সাথে মানসিকতার পরিবর্তন দারুণভাবে প্রভাবিত করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । এই উপন্যাসে যতটা না পটভূমি পছন্দ তার থেকেও আমার বেশি পছন্দ হয়েছে যেভাবে পটভূমিকে সাথে রেখে রহস্য তুলে ধরা হয়েছে প্রতিটি ঘটনাপ্রবাহের সাথে সাথে ছাপ রেখে রেখে । জীবনধারার সাথে আবহের প্রেক্ষাপটের সংযোগে আমি বারবার কল্পনা করেছি । কখনও কল্পনা করতে গিয়ে মনে হয়েছে কি অসাধারণ ভাবে পুরো উপন্যাসটি আমার কল্পনার থেকেও জোরালো ভাবে উপস্থাপন হয়ে আমাকে অনুভূতির দিক থেকে আরো ভাসিয়ে দিয়েছে । এই অনুভূতিতে ভেসে যাওয়া কি যে আনন্দের, আর কি যে অভূতপূর্ব সাফল্যের তা আমার পাঠকমনই শুধু জানে । √উপন্যাসের পটভূমিতে ঘটনাপ্রবাহের ছাপ জীবনধারায় বিভিন্ন তারতম্য আনে । বিভিন্ন পরিস্থিতিতে চরিত্র গঠন কিংবা তাদের উপস্থিতি সুন্দর করে তোলার গুরুত্ব বুঝিয়ে তুলতে সাহায্য করে । প্রতিটি চরিত্রের গঠন তখন অনেকটা মায়া নিয়ে পটভূমি অনুসারে তৈরি করে সাজাতে হয় । এই সাজানোটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । বিশেষ করে এই ধরনের পটভূমিতে সাজানোটা আরো গুরুত্বপূর্ণ । কি যে ভীষণ যত্ন করে সাজানো যে হয় তখন! এই উপন্যাসের চরিত্র গঠন এর ব্যাপারে বলতে গেলেই প্রথমে মনে আসে শামস চরিত্রটির কথা । যেভাবে তার অনুভূতি, বিভিন্ন মানসিকতার পরিবর্তন, কিংবা টানাপোড়েনে আটকে থাকা মনোভাব দেখানো হয়েছে তা এক কথায় অসাধারণ ছিল । এছাড়াও সুবহানা জান্নাত এর চরিত্রটির অদ্ভুতভাবে গঠন এবং তার উপস্থিতি যেন জ্বলজ্বল ভাবে সাহায্য করে দেয় প্রতিটি সময়ে । আরিজ এর সময়বোধ, অনুভূতি বিশ্লেষণ, কিংবা প্রতি পদে পদে সত্যের পাশে থেকে এগিয়ে চলা চরিত্রটির অসাধারণ মানসিকতা এবং গঠনও বেশ লাগে । নীলান্তিকা চরিত্রটি ছোট হয়ে এসেও কি যে প্রবল মায়া দিয়ে সাজানো । প্রতিটি চরিত্রের উপস্থিতি যথোপযুক্ত সময়ে এসেছে । যখন যতটুকু দরকার ততটুকুই যেন পদক্ষেপ ফেলে এগিয়ে গিয়েছে । √তিনটি বিশেষণ নিয়ে লিখতে খুব ইচ্ছে করছে । যে বিশেষণ গুলো মানব জীবনকে করে অদ্ভুত ভাবে সুন্দর । এবং তিনটি বিশেষণই একসময় এগিয়ে নিয়ে যায়, কিছু বলে দেয় । ধৈর্য, সময় কিংবা পরিশ্রম । এই তিনটি মূল্যবোধ অনেককিছুই ভাবতে শেখায় । অনেক ধরনের অদ্ভুত মানসিকতা সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলে তার রেশ সামনে অন্য এক নতুন রূপে সাজিয়ে দেয় । এছাড়াও ধর্মের বিভিন্ন মনোভাব কিংবা পবিত্র কোরআন শরীফ এর আয়াত অদ্ভুত এক স্নিগ্ধতা সৃষ্টি করে দেয় । ♦প্রিয় অংশঃ এই উপন্যাসের প্রিয় অংশ বলতে গেলে সবার আগে যেটি মনে পড়ে সেটি হলো উপন্যাস লিখতে গিয়ে যে আবহতে উপন্যাসটি লেখা হয়েছে । সোজা ভাবে বলতে গেলে, উপন্যাসের লিখনশৈলী । এতটা তীব্র ভাবে উপন্যাসকে উপস্থাপন করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে যে কষ্টের মুহূর্তকেও তীব্র ভাবে অনুভব করে তা আমার প্রিয় অংশ মনে হয়েছে বারবার । বারবার মনে হয়েছে এই অংশটি যে কতটা প্রিয় হয়ে উঠেছে শুধুমাত্র কষ্টের জন্য । তাছাড়া উপন্যাসের ঘটনাপ্রবাহে যেভাবে গতিবিধি টানা হয়েছে তা অসাধারণ ছিল । বিশেষ করে যেভাবে প্রেক্ষাপটে তা চলতে থেকেছে । বেশ কিছু কিছু জলছাপে কখনও ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে সামান্য অতীতের কিছু অনুভব কিংবা দর্শন হোক কিংবা অনেকটা আগের অতীতের অনুভূতি প্রতিটি মুহূর্তকেই ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ফুটিয়ে তুলতে যেভাবে ব্যবহার করে পটভূমিতে আবহ এসেছে তা বেশ প্রিয় লেগেছে আমার কাছে । এই বিষয়টিই কেনো যেন আমাকে বারবার মুগ্ধ করেছে । আমি প্রতিটি মুহূর্তে খেয়াল করেছি এরকম করে পূর্বের অনুভূতি কিভাবে অসাধারণ ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে । তবে আরেকটা বিষয়ও আমার প্রিয় অংশ বিভাগে জায়গা নিবে । পটভূমি হিসেবে একটা আবেশ থাকলেও তাকে আবহ হিসেবে ভাগ করা, আবহ দেখে তা নিয়ে জীবনধারায় সাজানো, জীবনধারায় সাজানোর পরে চরিত্রে গতিবিধি আনা প্রতিটি বিষয় থেকে থেকে ভালোলাগা বাড়িয়েছে । এছাড়াও উপন্যাসের আবহের দিকে বলতে গেলে পরিবেশগত সৌন্দর্য যেভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তার কথাও মনে পড়ে ‌। পরিবেশের সৌন্দর্য হিসেবে সান্তোসা কিংবা লাঙ্কাভি এর বর্ণনা বেশ মায়া নিয়ে ভাবতে সাহায্য করে । উপন্যাসের শেষের দিকের কাহিনী বর্ণনা করার আবেশও আমার প্রিয় অংশের একটি । এই অনুভূতিতে আসলে ভেসে যাওয়ার মতো অনেক আবেগ জড়িয়েছে । আরিজের প্রিয়তমা স্ত্রীর প্রতি মুগ্ধতা প্রকাশে বেগম সাহেবা ডাকটা এত মধুর কেনো লেগেছিল আমার তা জানা নেই । এই উপন্যাস নিয়ে ভাবতে গেলেই মনের মাঝে স্নিগ্ধতা জড়িয়ে আসে । ♦অন্যান্য বিষয়ঃ √প্রকাশনীঃ প্রকাশনী হিসেবে বইবাজার প্রকাশনী এর বই আমার অনেকবার পড়া হয়ে গেল । আমার বেশকিছু প্রিয় প্রিয় উপন্যাস তাদের প্রকাশনী থেকে আসার কারণেই বোধহয় তাদের লেখা আমার খুবই প্রিয় । বইটির প্রচ্ছদটি দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । অসাধারণ লাগে দেখতে । কিন্তু বইটির আকৃতি বিশাল বলেই কিনা জানি না, বইটির বাঁধাই নিয়ে সামান্য সমস্যা হয়েছে । বাঁধাই আরো সুন্দর এবং মনকাড়া হতে পারতো । যাহোক বইটিতে বেশ কিছু টাইপিং মিস্টেক আছে । যা পড়তে সমস্যায় ফেলে না । তবে বেশ বড়সড় উপন্যাস বলেই তা মেনে নিতে সমস্যা হয় না । ♦লেখক প্রসঙ্গেঃ লেখক শারমিন আঞ্জুম এর লেখা আমার এখন পর্যন্ত বেশ কতগুলো পড়া হয়ে গেল । আমি তার লেখা যত পড়ছি তত যেন মুগ্ধতার থেকেও বেশি গভীরে পৌঁছে যাচ্ছি । বর্ণনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি হোক কিংবা অনুভূতিতে আকর্ষণ তা যেন শব্দপ্রয়োগ এর মাধ্যমে দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেন তিনি । এই সুচারুভাবে করা কাজের জন্যেই কিনা জানি না, আমি উপন্যাস পড়তে পড়তে দিন দিন মুগ্ধ হই । অনুভূতি নিয়ে বারবার বলতে ইচ্ছে করে এরকম উপন্যাস হয়তো তৈরি করা খুব কষ্ট একজন লেখক হিসেবে । কিন্তু লেখক হিসেবে তৈরি করা গেলেও পাঠক হিসেবে অনুভব করার যে প্রবল আকর্ষণ আর মায়া তা পাওয়ার দরুণ এক মন কেঁপে যাওয়া অনুভূতিতে ভেসে যেতে বারবারই ইচ্ছে করে । বারবার ইচ্ছে করে এরকম উপন্যাসের শব্দপ্রয়োগে রীতিমতো অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে । এই তাকিয়ে থাকার শক্তির মাঝে কি যে মায়া তা পাঠক হিসেবে অনুধাবন করতে বেশ শক্তি লাগে । যা কখনো ভেবে আসার মতো ধৈর্য হয় না । তাই এরকম উপন্যাসে এরকম জীবনীসর্বস্ব গভীরতা সম্পন্ন ঘটনাপ্রবাহে বারবার পড়তে পড়তে আমি শুধু ধুঁকছিলাম এক অদ্ভুত লেখনীতে । আমি জানি না, লেখক শারমিন আঞ্জুম এর পরবর্তী উপন্যাসগুলো কিরকম পটভূমিতে হবে । কিরকম ভাবে তা আচ্ছন্ন করতে চাইবে আমার পাঠকমনে ভেসে আসা মারাত্মক অনুভূতিকে, কিন্তু আমি প্রবলভাবে না চাইতেও মনের রাজ্যে ঝড় দেখতে পাচ্ছি । এ এক অদ্ভুত ঝড়, অনেক কিছু ভেবে ফেলে আশায় পাঠকমনে শান্তি খোঁজার ঝড় । পটভূমি কেমন হবে জানি না, কিন্তু গভীরতায় যেন আমি ভেসে যেতে পারি সেজন্য তার প্রতি শুভকামনা রইলো । ♦রেটিংঃ ৫/৫ ♦প্রিয় উক্তিঃ •তুমি তো রাজপুত্র গো ভাই, তোমার ধৈর্য হবে সাগরের মতো । হৃদয় হবে আকাশের মতো । ওটাই তো তোমার শক্তি । •একজন ছেড়ে চলে গেছে এ ভাবনার চেয়ে কখনো সে পাশে ছিল, আর যতক্ষণ ছিল সময়টা অসাধারণ ছিল এই বোধটা অনেক বেশি সুন্দর! কারণ, এই জগতে চিরন্তন কেউ নয় । ♦উপসংহারঃ উপন্যাসটি যখন মাত্র একটি পৃষ্ঠা পড়া বাকি তখন আমি কেনো জানি না, আমি অদ্ভুত ভাবে থেমে গিয়েছিলাম । বারবার মনে হচ্ছিল এই একটা উপন্যাস যে উপন্যাস নিয়ে আমার মনে হচ্ছিল সহজে শেষ করতে পারবো না সেই উপন্যাসটিই শেষ না করতে দেয়ার এই তীব্র আকর্ষণ কেনো আমার মনে । কেনো আমি প্রবল ভালোবাসা নিয়ে অপেক্ষা করছি শেষ পৃষ্ঠাটি না পড়ে রেখে দেই অজানায় ভাসিয়ে দেয়ার তরে । যেন আরো কতকগুলো সময় আমি বয়ে নিয়ে যেতে পারি দ্বিখণ্ডিতা উপন্যাস পাঠরত অবস্থায় আছি সেই ব্যাখ্যা তুলে ধরার জন্য । আমার বারবার মন বলছিল, এখন আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করুক, এই তুমি কি ভাবো, কি নিয়ে বসে থাকো! আমি বলবো দ্বিখণ্ডিতা নিয়ে না পড়েও বসে আছি । দ্বিখণ্ডিতায় খণ্ডিত খণ্ডিত হয়ে বসে আছি । যদি পড়া হয়ে যায়, তখন কেউ জিজ্ঞেস করে তখন কি বলবো! তখন তো বলার কিছু থাকবে না । এই অনুভূতি নিয়ে অপেক্ষা করতে করতে মনে হলো, একটা সময়ে আসলে শেষ হয়ে যেতেই হয় । আমি প্রবল ভালোবাসা নিয়ে অপেক্ষা করেছি, কিন্তু দ্বিখণ্ডিতা পুরো মনের আকাশের পৃথিবীতে ছড়িয়ে প্রতিটি কোণায় কোণায় লুকিয়ে থাকা ভালোবাসা তুলে নিয়েছে । হয়তো মন থেকে বলে ফেলে, তুমি যথেষ্ট শব্দ আমার জন্য তুলে না নিতে পারলে কি হবে! আমি যথেষ্ট ভালোবাসা যা আছে সবই তুলে নিয়েছি । তাও খুবই কষ্ট লাগে, হায়রে অনুভূতি । কেনো অজস্র হাওয়ার মতো বোঝাতে পারে না! ব্লু সাফায়ার এর মতো ছোট শব্দেই কেনো বুঝিয়ে তুলতে পারে না যে আসলেই আমার মন জুড়ে থাকা ভালোবাসা নামক বর্তমান সবকিছু দ্বিখণ্ডিতা জুড়ে ।

      By Sharmin Afroz

      14 Apr 2023 11:13 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      আঞ্জুম আপুর সবচেয়ে সেরা সৃষ্টি। খণ্ডিত হৃদয়ের আত্মকথন, আর মুকুটহীন রাজপুত্রের গল্পটা সারাজীবনে হৃদয়ের বিশেষ স্থান জুড়ে রবে। মাস্ট রিড একটা বই।

      By marjiya

      17 Mar 2023 10:59 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      বই- দ্বিখণ্ডিতা লেখক- শারমিন আঞ্জুম প্রকাশনা- বইবাজার প্রকাশনী অনুভূতি যেখানে গভীরে ভাষা সেখানে স্তব্ধ। বইটার পাঠপতিক্রিয়া লিখতে অনেক লেখকেরই পরিশ্রম করতে হবে সেখানে আমি তো সামান্য একজন পাঠক। দ্বিখণ্ডিতার রিভিউ লেখার জন্য আমার শব্দ ভান্ডারে পর্যাপ্ত, যোগ্য শব্দ নেই। তাও কিছু লেখার চেষ্টা করছি। বইটা হাতে নেয়ার পর ভাবছিলাম বইটা প্রচার করা হবে না, এতো বড় বই অনেক পাঠকই পড়ার ধৈর্য রাখে না। পড়া শেষে বুঝলাম এ বই বই শুধু পাঠক না নতুন করে পাঠক তৈরির ক্ষমতাও রাখে❤️। লেখক বোধহয় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েই লিখেছেন যে পাঠকের হৃদয় ঝাজড়া করে দিবেন। 'দ্বিখণ্ডিতা' নামটা বইটার জন্যে একদম পারফেক্ট হয়েছে। শুধু বইয়ের ভেতরের চরিত্রগুলোকে না পাঠককেও খন্ডিত করবে। গলার কাছে কান্না আটকে ছিলো চোখে পানি আসেনি বইটা পড়ে বুঝেছি আমি কতটা কঠিন হৃদয়ের। বইটার যে অংশগুলোতে খুব কান্না পেয়েছে ঠিক ওই অংশগুলোই আমার খুব প্রিয়। চরিত্রের ডিটেইলিং, স্মার্টলি বর্ণনা। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক দুই ভাই, বোনেদের আগলে রাখা, বাবা ছেলে, বন্ধুত্ব, রাজনীতি, দেশপ্রেম, শিল্প প্রতিষ্ঠান। আরো অনেক কিছুই আছে, লিখে শেষ করা যাবে না। বইটা পড়ে শেষ করার সাথে সাথে তেমন আহামরি মনে হয়নি। একদিন পর ঠিক পড়ার সময়ের মূহুর্তের অনুভূতি ফিরে আসছে। চরিত্রগুলো মাথার ভেতর ঘুরছে যেন বাস্তবে এদের অস্তিত্ব আছে। দ্বিখণ্ডিতা আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রাখছে অনুভূতিগুলো ভোলার না। বাস্তবে খুঁজলে শামসের মতো চরিত্রের অভাবে হবে না কিন্তু শেষে যে সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে অনুতপ্ত হয়েছে এমন খুব কমই হয়। ভুল বুঝতে না পারলেই ভালো হতো পাঠকদের কষ্ট কম হতো। ভয়ংকর একটা চরিত্র। শামসের কবিতার শেষের অংশ টা আসলেই সত্যি হয়েছে । How can I la_gh Without U? How can I take A c_p of tea or coffee Without U? How can I enjoy the s_nshine Without U? How can I have f_n Without U? *And that makes you..u *More important than I সোনার মুকুট মাথায় দিয়ে কুমার হারায় বনে গিয়ে রাজপাটে দানব হাসে ধ্বংস ছায়ার আশেপাশে পার করে সাত সমুদ্দুর আসবে যেদিন রাজপুত্তুর বিলীন হবে সকল কালো রাজ্যে তখন জ্বলবে আলো কিউট না কবিতাটা? এটা শুধুমাত্র কবিতাই না এটার মধ্যে একটা সত্য লুকিয়ে আছে। নিঃসন্দেহে আরিজ চমৎকার একটা চরিত্র কিন্তু ভাবিকে নিয়ে তার অতিমাত্রায় কনসার্ন না হলেই ভালো ছিল যদিও এ নিয়ে তার কিছু যুক্তি ছিলো। কিউট না কবিতাটা? এটা শুধুমাত্র কবিতাই না এটার মধ্যে একটা সত্য লুকিয়ে আছে। নিঃসন্দেহে আরিজ চমৎকার একটা চরিত্র কিন্তু ভাবিকে নিয়ে তার অতিমাত্রায় কনসার্ন না হলেই ভালো ছিল যদিও এ নিয়ে তার কিছু যুক্তি ছিলো। সুবহানা জান্নাতকে নিয়ে আসলেই কিছু লেখার নেই। কি অসাধারণ ব্যাক্তিত্ব, দৃঢ়, আত্বসাম্মানবোধ পূর্ণ এক নারী। প্রচ্ছদই তাকে প্রকাশ করে। ভাইয়ারা বলে এসব নোভেল পড়ে সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছুই না। আমি বলতাম, মনের খোরাক, বিনোদন। দ্বিখণ্ডিতা পড়ে বলতে পেরেছি অনেক কিছু শিখতেও পেরেছি। লেখক কি সুন্দর করে যার যার প্রাপ্য ফল তাকে বুঝিয়ে দিয়েছে। আসলেই বাস্তবেও সবাই নিজের কৃতকর্মের ফল পায়। আরিজের কথাটা ভাল লাগছে ? এন্ড ইউ আর বিউটিফুল বাট কোয়াইট স্টুপিড। নাহলে জানতেন যে একবার হীরে দেখেছে তার স্ফটিক পাথরে কখনো রুচি হয় না। আপনি আপনার এইম চেন্জ করুন এন্ড দ্যাট ইউল বি বেস্ট ফর ইউ। নেহালের বলা কথাটা একদম সত্যি, ও আসলে সোনার চামচ মুখে দেয়া গাধা মে সবসময় আলো রেখে আলেয়ার পেছনে ছুটে। কাল্পনিক চরিত্র তূর্ণার জন্যে শুভকামনা তার সামনের চলার পথ মিসৃন হোক। # আল্লাহর ফায়সালার ওপর যারা ভরসা করে তারা জীবনের নতুন মোড় দেখে ভয় পায় না। # কিছু কিছু মানুষের কাছাকাছি এলে আর কাউকে ভালোবাসার ক্ষমতা চলে যায়। # ছোট ছোট দূর্ঘটনায় জীবন থেকে এভাবে হারতে নেই। শামস আমাদের ধৈর্য রাখতে হবে সবর যারা করে ক্ষোদ মহা পরীক্ষক তার সাথে থাকেন। তিনিই আমাদের জিতিয়ে দেন। # এই জগতে প্রতিটি মানুষ কিছু পাবার আশায় বিভিন্ন ভূমিকায় অভিনয় করে যায়। সান্নিধ্যের আশায় কেউ প্রেমিক হয়, সেবা আর বংশধরের আশায় কেউ স্বামী হয়। কিন্তু নিখাদ বন্ধু হবার প্রথম শর্ত হলো কোনো কিছুর আশা না করে সব মোড়ে পাশে হেঁটে চলা। # আজ বুঝি একাকীত্ব কী তা না জেনেই মানুষ নিজেকে একা ভাবতে শুরু করে। জীবনের অর্জনগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে এই ভাবনাই সত্যিকার অর্থে তাকে একা করে দেয়। # একজন ধর্মভীরু পর্দাশীলা নারীর সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, সে দুর্বল হতে পারে। কিন্তু একজন মা সব অবস্থায় সাহসীনি, শক্তিময়ী মাতৃত্বের তাগিদে আজরাইলের সাথে লড়তে তৈরি যে হয়ে যায়। ঘোরের মাঝে আগুনে পুড়ে ছাই হতে থাকলেও বুঝবে না সে কি করছে। # অচেনা আগন্তুকের দিকে কেমন করুণমুখে তাকিয়ে আছে। সাহায্য চায়। শামস ফোন রেখে সম্মোহিতের মতো চেম্বারের দরজা ঠেলে ভেতরে চলে এলো।? # জুনায়েদ শেখ অবাক হয়ে দেখলেন তার সামনে বসা যুবকটার চোখে অশ্রু। ক্রোধ বা ক্ষোভ নয়, লজ্জা আর মমতা মাখা অশ্ৰু । # ধর্ম নিয়ে এই অহংকার খুব সূক্ষ্মভাবে ধর্ম থেকেই আপনাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। ধর্ম আমাদেরকে নিরহংকার হতে শেখায়, মাটির কাছাকাছি থাকতে শেখায়। আক্রোশ প্রকাশ করতে শেখায় না। # একবার ট্রাফিক জামে গ্রিন সিগনাল পড়লেও শামস গাড়ি আগায়নি। পাশের সিটে বসা তূর্ণা ডাকতে গিয়ে দেখে, তার চোখ আটকে আছে রাস্তার অন্য পারে। একজন রিকশাওয়ালা বছর পাঁচেকের একটা মেয়েকে রিকশার সিটে বসিয়ে ছোট্ট বাটন মোবাইল দিয়ে নানা ভঙ্গিতে ছবি তুলছে। বিএমডাব্লিউতে বসে শামস নির্নিমেষ দেখে চলেছে পিতা কন্যার অপূর্ব সুন্দর সেই দৃশ্য।? # কান্নায় ভেঙে পড়া শামসকে দেখে হঠাৎই বুকটা কেঁপে উঠলো। আরিজ নিজেকে আলাদা করতে পারলো না। শামসও সামলে উঠতে চাইছে, পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রাণখুলে কাঁদারও অধিকার থাকে না সেই নিয়মটা ভুলেছিল কিছুক্ষণ। ভুল বশত তার হৃদয়ের ঘাতককে জড়িয়ে ধরেই কেঁদে ফেলল। কিছু কিছু লেখাকে রেটিং দিয়ে বিবেচনা যায় না এটা তেমনই একটা বই ?

      By Tuly das

      13 Mar 2023 12:45 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      বইয়ের নাম: দ্বিখন্ডিতা লেখক: শারমিন আন্জুম প্রকাশনী: বইবাজার প্রচ্ছদ:সাদিতউজজামান ক্যাটাগরি: সমকালীন মুদ্রিত মূল্য:১০০০টাকা পৃষ্ঠা সংখ্যা:৫৫১ টি প্রচ্ছদ: আমার কাছে মনে হয় এরচেয়ে উপযুক্ত প্রচ্ছদ এই গল্পটির জন্য আর হতে পারে না। প্রচ্ছদ শিল্পীকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এতো সুন্দর অর্থপূর্ণ প্রচ্ছদের জন্য।বইটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একদম ফুটিয়ে তুলেছেন। গল্পটি পড়লেই শুধুমাত্র প্রচ্ছদটির গভীরতা বোঝা সম্ভব। পাঠ প্রতিক্রিয়া:আপাত দৃষ্টিতে গল্পটি একসময়ের প্রেম আরিজ কে ভুলে সুবহানা ও শামস নামক দুজন ব্যতিক্রমধর্মী মানুষের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পথচলার গল্প। অতীতকে ভুলে বর্তমানকে মেনে নিয়ে ভবিষ্যতের পথ পাড় দেবার গল্প মনে হলেও আসলে তা নয়। আমার মনে হয়েছে এই বইটির রিভিউ আসলে দেয়া সম্ভব নয়, কেননা লেখকের ক্ষুরধার লেখার মান শুধু কিছু শব্দ দিয়ে বোঝানো সম্ভব নয়। তবুও একটু চেষ্টা করছি কেননা এমন একটি বই সম্পর্কে কিছু না বললে নিজেকেই ফাঁকা ফাঁকা লাগবে।বইটিতে যেমন আছে উগ্ৰ প্রেমে উন্মাদনা ঠিক তেমনি আছে বিশুদ্ধ প্রেমের বর্ণণা।যেমন আছে নিষ্ঠুরতা ঠিক তেমনি আছে ভালবেসে জীবন দিয়ে আগলে রাখার চেষ্টা গল্প।এটা কোন পরকিয়ার গল্প না,এটা নিজের মূল্যবোধ জাগানোর বা বাড়ানোর গল্প।বইটি পড়লে জ্ঞানের পরিধি বাড়বে, হাদিসের কথা গুলো খুব সুন্দর করে দেয়া আছে যা যে কেউ পড়তে ও বুঝতে পারবে খুব সহজেই। ইসলাম এর কিছু বিধিনিষেধ দেয়া আছে যা সবার কাজেই আসবে আমার বিশ্বাস, তবে বানোয়াট বা বেশি বেশি মনে হয়নি একদম।সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষনীয়, শালীনতা, শিষ্টাচার এগুলো যেমন আছে পরিপূর্ণভাবে ঠিক তেমনি আছে কিছু কিছু নির্মমতা যা আপনাকে হতবাক করে দেবে। লেখক সবকিছুই এতোটা মেপে মেপে ব্যবহার করেছেন যে কোথাও মনে হয়নি অতিরঞ্জিত কিছু লেখক লিখেছেন বা বর্ণনা করেছেন। সবকিছুই একদম সুপার পারফেক্ট।গল্পটি শুরু করলে না শেষ করা পর্যন্ত একদম মনের মাঝে আঁকুপাঁকু করতেই থাকবে,ইভেন শেষ করার পরেও এর বেশ রেশ রয়ে যাবে। আমার কাছে দ্বিখণ্ডিতা একটি ব্র্যান্ড মনে হয়েছে যা নিজেই নিজের পথ তৈরি করে নিবে ,তবে আমরা যারা এ যাত্রাই অলরেডি সঙ্গী হয়েছি তারা একটু নিজগুণে যদি নিজেদের ভাললাগাটুকু ঠিক মতো শেয়ার করি তাহলে অন্যরাও একটু ভরসা বেশি পাবে (একান্ত ব্যক্তিগত মতামত)। লেখক সম্পর্কে কিছু মতামত: দ্বিখণ্ডিতা পড়তে গিয়ে আমার শুধু লেখককে বারবার ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করেছে কেননা উনি চাইলেই পারতেন দ্বিখণ্ডিতাকে খন্ড হিসেবে আনতে যা নিঃসন্দেহে ভালো মার্কেট পেত কিন্তু আমাদের পাঠককুলের জন্য একটু কষ্টকর হয়ে যেত।এই ব্যাপারটি লেখক মাথায় রেখেছেন নিঃসন্দেহে। আমার খন্ড টাইপ বই পড়তে একদম ভালো লাগে না। তাছাড়া উনি চাইলেই বইয়ের পেজ আরো বাড়াতে পারতেন যা আরকি নরমালি সবাই করে থাকেন কিন্তু দ্বিখণ্ডিতা পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে উনি বইটি লিখেছেনই পাঠকের খরচের কথা মাথায় রেখে। আমি যতগুলো বই পড়েছি সবগুলো বই পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে এমন ভাবে বা অমনভাবে ছাপালে হয়তো পেজ কম লাগতো যা কখনোই সম্ভব নয় কিন্তু দ্বিখণ্ডিতা পড়তে গিয়ে আমি আমার এই চাওয়াকে যখন দেখলাম দ্বিখণ্ডিতার পাতায় পাতায় তখন আমি আসলেই পরিতৃপ্ত হয়েছি। আমি আসলে একদম মুগ্ধ হয়ে গেছি। উনি আসলেই পাঠকের বাজেটের খেয়াল রেখেছেন মন থেকেই, উনার এই ভালবাসার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। কেননা দ্বিখন্ডিতা কখনোই ৫৫১ পেজের গল্প না, কিন্তু উনি তা করে দেখিয়েছেন তবে এখানে বলে রাখা গল্পের মান একদম একটুও কমাননি।এই বইকে আর পাঁচটা বইয়ের মতো লিখলে অবশ্যই তা ৬০০পেজ ছাড়াতো, কিন্তু উনি পাঠকের কথা মাথায় রেখে বইটি বাজেট ফ্রেন্ডলি করেছেন সততার সাথে।আর একটি কথা গোলুমোলু দ্বিখণ্ডিতা একদম মন কেড়ে নিয়েছে, এতো মোটু বই অথচ একফোঁটাও বিরক্ত হয়নি বরং লেখিকার লেখার প্রেমে পড়ে গেলাম। দ্বিখণ্ডিতা সম্পর্কে উনি উনার লাইভে যতকথা বলেছেন তার একফোঁটাও মিথ্যে ছিল না বরং বারবার উনার বলা কথার সত্যতা পেয়েছি। আসলেই এই বইটি শুধু সুবহানার দ্বিখণ্ডিত হবার গল্প না,পাঠককেও দ্বিখণ্ডিত করেছেন,ইভেন উনি নিজেও হয়েছেন বলে আমার ধারণা।আমি পড়তে গিয়েই নিজেকে নিজের মাঝে আটকে রাখতে পারছিনা তাহলে উনি না জানি কতশতবার দ্বিখণ্ডিত হয়েছেন ,আমাকে বারবার এই কথাটাই ভাবিয়েছে। উনার ক্ষুরধার লেখার একটি জলজ্যান্ত উজ্জ্বল প্রমাণ "দ্বিখণ্ডিতা"। চরিত্র:আরিজ,শামস,সুবহানা,সাজিয়া খালা,আজম, সলিমুল্লাহ সাহেব, সাবরিনা,সারা,শওকত দেওয়ান,ফু আমরা,জালাল,নামিরা, নাজনীন ফুপু,শেখ জুনায়েদ,জয়তুন,হামিদা বানু,অনুফা,শামা,সালমা আন্টি,নীলান্তিকা,নাসিমা বানু,তূর্ণা,মইনুল হোসেন,মাসুদ গাজী,লিমন,নেহাল সহ আরো অনেকেই আছেন গল্পটিতে। তবে আমার মনে আজীবন গেথে থাকবে নীলান্তিকা,শেখ জুনায়েদ।আরো একজন আছে যার প্রতি আমার ভাললাগা ও ভালবাসা সবার উর্ধ্বে,নাম বলা যাবে না বই পড়লে নিজেরাই জেনে যাবেন।শামসের জন্য শুধুই মায়া আছে।প্রতিটি চরিত্রই গুরুত্বপূর্ণ বইটিতে,তাই পড়ার সময় নামগুলো একটু বেশি খেয়াল করে পড়তে হবে।বলা যাবে না কখন কোন চরিত্রের নাম কাজে লেগে যাবে। তবে কাদির/কবির নাম নিয়ে আমি একটু কনফিউজড। টাইপিং মিস্টেক হবে হয়তো। প্রিয় লাইন: ১. পোশাক দিয়ে আসলে মানুষ বিচার করতে নেই মেধাবীরা নাকি পর্দার মধ্যেও লুকিয়ে থাকে। ২. তরুণী কন্যা খুব ঝুঁকিপূর্ণ আমানত ।যে-কোন সময় অজগরের গ্রাস হয়ে যেতে পারে ,তাদের ইজ্জতের সাথে পাত্রস্থ করা সব বাবার কাম্য। ৩. মানুষ নিজের জীবনে পরিকল্পনা করে নিলেও আল্লাহর তার বান্দাকে নিয়ে করা পরিকল্পনাই সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ। ৪.সাগরের উপর উর্মিমালার উগ্ৰ সঞ্চালনে ঝড়ের প্রকোপ বোঝা যায় ।তবে কিছু ঝড় আসে গভীরে। ভেতরে প্রচন্ড চাপে সবকিছু এলোমেলো হলেও উপর থেকে টের পাওয়া দায়। ৫.নিজেদের যারা জাজ করতে দেয় না তারা কি পৃথিবীকে জাজ করার অধিকার পেয়ে যায়? ৬.আমরা সেখানেই নিজের সব আবেগ খরচ করে ফেলি যেখানে আমাদের ভাগ্য সহায় হয় না।অথচ এটা সবচেয়ে বড় বোকামি। ৭. পরাশ্রয়ী মানুষ পরজীবী কীটের চাইতে উন্নত হয়। ৮. বন্ধুদের সাহায্য করা মহৎ গুণ ,তবে সমস্যা বাদে যখন চরিত্রগুলো হয় স্থলিত। চোরাবালিতে ডুবন্ত মানুষ সাহায্যকারীর হাত-সহ নিয়ে ডুবে। ৯. মিষ্টিতে যার রুচি নেই ,তার হাতে মধু পাত্র ধরিয়ে দেওয়ার অর্থ আল্লাহতালাই ভালো জানেন। ১০. অযত্ন পেলেও একটা ভালো কোল থেকে কখনো ভুল মানুষ জন্ম নেয় না ।কিন্তু শত যত্নেও একজন রুক্ষ স্বভাবের রক্ত থেকে ভালো মানুষ জন্মানো বেশ দুরূহ। এমন কতশত আরো অনেক অনেক লাইন আছে আমার ভীষণ ভীষণ পছন্দের। বি:দ্র: উনার দ্বিখণ্ডিতা পড়ে আমি একদম শতভাগ মুগ্ধ হয়েছি, লেখকের জন্য শুভকামনা। আমি ভুলতে পারছিনা দ্বিখণ্ডিতার চরিত্রগুলো।একটি গল্প পড়ে যদি মাথার মধ্যে তার রেশ রয়ে যায় তাহলেই মনে হয় পয়সা উসুল। ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।

      By Arfia Jahan

      10 Mar 2023 08:25 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      উপন্যাসের নামঃ দ্বিখণ্ডিতা লেখকঃ শারমিন আঞ্জুম প্রচ্ছদঃ সাদিতউজজামান প্রকাশনীঃ বইবাজার মুদ্রিত মূল্যঃ ১০০০ টাকা পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৫৪১ প্রকাশকালঃ একুশে বইমেলা ২০২৩ রিভিউ লেখনীতেঃ আরফিয়া ? ভূমিকাঃ ফেসবুকে যেকোনো ধরনের গল্প পড়তে আমার সমস্যা নেই। কিন্তু যখন বই হাতে নেই তখন মনে হয়, সীমার বাইরে গিয়ে রিয়েলিটির সাথে ফ্যান্টাসি মিশিয়ে সাহিত্য রচনা ঘোর অন্যায়। হয় পুরোটাই বাস্তবিক নির্ভর হবে অথবা পুরোটাই নিছক কল্পনা কিন্তু তাতেও বাস্তবিকতা থাকতে হবে। বই আমরা পড়ি কিছু শেখার জন্য, জ্ঞান আহরণের জন্য। যা দ্বিখণ্ডিতায় আছে ভরপুর। ধর্ম, কর্ম, হাদিস, প্ররচণা, ধোঁকা, ভালোবাসা, বিরহ, ধৈর্য্য, ন্যায়, অন্যায়ের দ্বন্ধের মাঝে আসলেই কোনটা ভালো কোনটা খারাপ তারই দিকনির্দেশনা। ? নামকরণঃ ‘দ্বিখণ্ডিতা' নামের মাঝেই হৃদয় খন্ডনের সুর। একই হৃদয়ে আবার একের অধিকের অধিপত্য থাকে কীভাবে থাকে সেই উত্তর খুঁজতে গিয়ে পাঠক নিজেই দ্বিখণ্ডিত হয়ে যাবে, সেই সাথে পরে যাবে দ্বিধায়। এ শুধু জান্নাতের দ্বিখণ্ডনের সূচনা নয়, পাঠকের ভাবনারও। ? প্রচ্ছদঃ প্রচ্ছদ যখন দেখেছিলাম তখন মনে একটা কিন্তু ছিলো। কিন্তু বই হাতে নিয়ে নীল নয়ন জোড়ায় আটকে গেছি। গভীর নয়নজোড়ায় বহুক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায়। সে যেনো চোখে চোখ রেখে দৃঢ়তার সাথে কিছু একটা বলে যায়। ? ফ্ল্যাপ থেকেঃ প্রচন্ড ভালোবাসার মানুষটা হঠাৎ ভালোবাসা ছেড়ে দিলেও আমরা কেন যেন তাকে ভালোবাসার বদভ্যাসটা কাটাতে পারি না। তার থেকে দূরে সরে গিয়েও তাকে আটকে ফেলি বুকের মাঝে। তাকে মনে করি না, তার নাম নেই না, তবুও সে রয়ে যায় মনের অজানা গভীরে। সময়ের ফেরে সেই একই মনে যখন নতুন কারো পদার্পণ হয়, নিজের কাছেই কেমন অপরাধী মনে হয়। মনে হয় এতদিনের স্বযত্নে লালিত মমতাকে যেন নিজেই অপমান করছি। একনিষ্ঠতার অহংকার ভাঙার কষ্ট কি কেউ বোঝে? না অতীতকে ভোলা হয়, না বর্তমানকে অস্বীকার করা যায়। শুধু হৃদয় দ্বিখণ্ডিত হয়ে নীরব আর্তনাদ করতে থাকে। এটা হয়তো কিছু মনের নিয়তি । ? চরিত্রকথনঃ √ শামস: কিছু খামখেয়ালি রাজকুমার থাকে, যাদের ভেতরটা হয় কাঁদা মাটির মতোন শামস তেমনি একজন। যার আর্কষণ এড়ানো দায়। ভালোবাসায় যেমন জড়িয়ে ফেলে তেমনি তীব্রভাবে ভালোবাসে। তবে ভালোবাসার শুদ্ধতা তার অজানা। কাঁদা মাটিকে সহজেই আকার দেওয়া যায়, সেটা হয়তো সুন্দর কিংবা কুৎসিত। √ আরিজ: ক্ষুরধার মেধাবী, গম্ভীর, দৃঢ় মানসিকতার এই মানুষটি সারাক্ষণ অন্যদের ঝামেলা থেকে উদ্ধারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে ঘুরে। অথচ তার নিজের জীবনের রহস্য উদঘাটনের সময় তার কাছে নেই। পরের উপকার করতে গিয়ে নিজের ক্ষতি করে আবার উল্টোদিকে নিজেই দোষী বনে বসে। কিন্তু সুন্দর হৃদয়ের মানুষ কখনো ঠকে না। √ সুবহানা জান্নাত: পুরো উপন্যাস জুড়ে আমার মনে হয়েছে আল্লাহর পথে চলা একটা মানুষের আর কতো পরীক্ষা নেওয়া বাকি! কিন্তু জান্নাত শেষ পর্যন্ত লড়ে গেছে। শতবার খন্ড বিখন্ড হয়েও টিকে থাকার শক্তি, ধৈর্য্য আল্লাহ তাকেই দিয়েছেন। √ সারা: শুধু মেধা, সৌন্দর্য থাকলেই মানুষ প্রশংসনীয় হয়না। কয়লাও গুন আছে কিন্তু তবুও সে কয়লাই। ভালোবাসার যে বুলি সে ছড়াতো শেষে এসে সেই ভালোবাসা যেনো বাষ্পের ন্যায় উড়ে গেছে, সামান্য চিহ্নও অবশিষ্ট নেই। √ নীলান্তিকা: খুব অল্প কিছু বর্ণনার পরেও মনে ছাপ ফেলে যাওয়ার মতো চরিত্র। হামাগুড়ি দিয়ে এসে জায়নামাজেই মায়ের কোলে মাথা দেওয়ার মুহূর্তটা মনে মনে শতবার কল্পনা করি। আমার কাছে জীবন্ত মনে হয়। √ শওকত দেওয়ান: বইয়ের ভিতরে ঢুকে কারও কপালে গু-লি করার ইচ্ছা আমার এই প্রথম হয়েছে। পুরো উপন্যাসে ছলাকলার মাস্টারমাইন্ড এই একজন ব্যক্তি। পরিস্থিতিকে যেনো সে পুতুলের মতোন নিয়ন্ত্রণ করছে। সুদূর পরিকল্পনাকারী এই মানুষ যদি তার বুদ্ধি সৎউপায়ে খরচ করতো তাহলে গল্পটা অন্যরকম হতো। খুব জানতে ইচ্ছে করে এমন শীতল মস্তিষ্কের মানুষটির রক্তও কি শীতল? না হলে তার হৃদয়ে ভালোবাসা নেই কেনো? ? প্রিয় চরিত্রঃ কারও জন্য হৃদয় পুড়ে, কারও জন্য আফসোস হয় আবার কারও জন্য করুণা। তবুও সব মিলিয়ে আরিজ প্রিয় চরিত্র। নিজের দায়িত্ব, অধিকার, নিজস্ব সীমারেখা সবটাই যে জানে এবং নিষ্ঠার সাথে পালন করে। ভাইয়ের সাফাই গাওয়া বাদ দিয়ে তার সবকিছুই আমার পছন্দ। এমন ধৈর্য্যশক্তির পুরুষ খুঁজে পাওয়া দায়। ? পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ ৫৪১ পেজের একটি বইয়ের প্রতিটা অংশ আমার ব্যাখ্যা করতে ইচ্ছে করে। বই বন্ধ করে নিজের সাথে কথা বলি, যুক্তি তর্ক করি। পড়ার সময় মনে হচ্ছিলো অনেক কিছু লিখবো, হয়তো লিখতে গিয়ে নিজেই হাঁপিয়ে যাবো। কিন্তু লিখতে এসে দেখি অনুভূতিগুলো কেমন এলোমেলো! কই থেকে শুরু করবো বুঝতেছিনা। গল্পটি সুবহানা জান্নাতের। শেখ পরিবারের কঠোর নিয়মতান্ত্রিক পরিবেশে বড় হওয়া ইসলামিক ধারায় জীবনযাপন করা একটি মেয়ে ভালোবাসার মতোন একটা ভুল করে বসে। কিন্তু হাত ধরি ধরি করেও যখন হাত ছুটে যায় তখন ভাগ্যের ফেরে জীবন জুড়ে যায় একজন রাজকুমারের সাথে। শামস-জান্নাতের বিয়ে পর্যন্ত মনে হয় সবটাই ঠিক ছিলো। নিজের ভুল বুঝতে পেরে আল্লাহ প্রদত্ত নিয়তি মেনে জান্নাত নিজেকে প্রস্তুত করেছিলো। কিন্তু আল্লাহর পথে চলা মানুষটির পথ কখনো সহজ হয় না। আমি মাঝেমধ্যে ভাবছি, জান্নাতের আসলে কোন পরীক্ষাটির মধ্যে দিয়ে যাওয়া বাকি ছিলো? পরিবার, পর্দা, ভালোবাসা, স্বামী, সন্তান, ক্যারিয়ার এমনকি জানের উপরেও আঘাত। কখনো মনে হচ্ছিলো আর কতো! এবার তো মুক্তি দেও। দ্বিখণ্ডিতা হ্যাপি নাকি স্যাড এন্ডিং এটা যখন কেউ জানতে চায়, উত্তর দেওয়া কঠিন। কারন দ্বিখণ্ডিতার পুরো আবহটাই বেদনাগাঁথা। নামকরণ থেকে শুরু করে সবকিছুই। যেখানে প্রতি মুহূর্তে ভাঙতে হয়েছে, নতুন মোড়ে ধাক্কা খেতে হয়েছে। কিছু জায়গায় এসে আর পড়া সম্ভব হচ্ছিলো না। ঘৃণায় মুখ তেঁতো হয়ে আসছিলো। এজন্য আমি একটানা বইটি পড়তে পারিনি। কিছুদিন ব্রেক নিয়ে আবার পড়েছি। কারন চরিত্রদের সাথে আমার একটা মেন্টাল বন্ডিং তৈরী হয়ে গিয়েছিলো। তাদের পিঠপিছে হওয়া অন্যায় আমার নিজের সাথে হওয়া অন্যায় মনে হচ্ছিলো। মানসিকভাবে ভেঙে পরেছিলাম দেখে ব্রেক নিয়ে আবার পড়তে বসতাম। জান্নাত যখন সত্যের মুখোমুখি হবে শামস কি জবাব দেবে, জান্নাতের রিয়েকশনই বা কেমন হবে? এই কথা চিন্তা করে আমার রাতের ঘুম উড়ে যাচ্ছিলো অথচ সেই মুহূর্তটা ছিলো কতোটা শান্ত। যেনো ঝড়ের আগের নীরবতা। যতোটুকু আশা ছিলো তা ভেঙেছে পার্টির দিন শামসের ওই রুমে যাওয়ায়। ‘সুবহা পরিণত হয়েছিলো পাথরের মূর্তিতে। তবে মূর্তির অনুভূতি থাকে না বলেই তারা ভালো থাকে।' এই সামান্য লাইনটায় জান্নাতের সমস্ত কষ্ট যেনো অনুভব করতে পারছিলাম। অথচ শামসের সহজ স্বীকারোক্তি। ‘আমার মন ভাঙতে কোনো আপত্তি নেই?’ - যেখানে আমার হৃদয় কেঁপে উঠছিলো অথচ সামনের মানুষটা কতো নির্বিকার। এতো সহজ ভালোবাসা! আসমান থেকে জমিনে পরে গিয়েছিলাম ‘আই লাভ ইউ হাবি' লাইনটা পরে। আমি থমকে গিয়েও বারবার পড়েছি। সংলাপটি আসলে কার? কেনো যেনো বিশ্বাস হচ্ছিলো না। সবকিছু এতো সহজ! কারও প্রতি এতোটা সদয়, আর কারও ভাগ্যে এতোটা অনাদার কীভাবে সম্ভব? অথচ অধিকার তো আরেকজনের বেশি থাকা উচিত ছিলো। শামসের রেগে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও আমার কষ্ট হচ্ছিলো না, কেমন স্বস্তি পেয়েছি। অনেক তো হলো এবার একটু মেয়েটা মুক্তি পাক। কিন্তু নীলান্তিকার ব্যাপারটায় আমি সর্বোচ্চ আঘাত পেয়েছি। এটা মিথ্যা হোক অথবা সবকিছু এখানেই থেমে যাক। এরপরের জান্নাতকে আমি আর জানতে চাই না। কিন্তু নির্মম নিয়তি জান্নাতের এই রুপটাও দেখিয়ে দিলো। শামসের পরিণতি, সারার বদলে যাওয়া রুপ সবকিছু তখন পৈশাচিক আনন্দ দিচ্ছিলো। এসবের মাঝেও আরিজের অনুপস্থিতিতে অপূর্ণতা থেকেই যায়। জান্নাতের যখন আঘাত লাগলো প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলাম। সব বিপদ তার দিকেই ধেঁয়ে আসে। পরিস্থিতি বিরুপ হলেও শওকত দেওয়ানের একটা কূটনৈতিক চালের পরেও মনে হচ্ছিলো এখন সব ঠিক হবে৷ তবুও যেনো উৎকন্ঠা রয়েই যায়। পুরো বইয়ে চাপা একটা উত্তেজনা। সব জেনে বুঝেও অশুভের ইঙ্গিতেও ভয়। বই পড়া শেষে আমার মনে পড়লো, বইয়ের কোথাও আমি হাসতে পারিনি। হয়তো কিছু মন ভালো করে দেওয়ার মতো মুহুর্ত ছিলো কিন্তু মুখে হাসি ফুটেনি৷ চাপা আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াতো। খুশি কার জন্য হবো? একই সময় তিনজন ব্যক্তির জন্য খুশি হওয়া যায় না। শামসকে আমার কখনোই পছন্দ ছিল না। তবে তার ভালোবাসা মিথ্যে নয়। বাড়াবাড়ি রকমের ভালোবাসাকে অস্বীকার তো করতে পারবো না। ব্লু সাফায়ারের জন্য তার চোখে মুগ্ধতা অহেতুক নয়। হৃদয়ে যে রাণী রাজ করছিলো তা শামস বুঝতেই পারেনি। শেষের দিকে এসে একসময় তার জন্য খারাপ লাগছিলো। জীবনে কিছুই পেলো না। অথচ সব আছে এই অহংকারেই জীবনের অর্ধেকটা কেটে গেছে। খারাপ লাগাটা আবার ম্লান হয়ে গেছে শামসের পাগলামী দেখে৷ আফসোস হয়, শামসের ভেতর এতো বাচ্চামী ভরা কেনো। শওকত দেওয়ানের অপশন থেকে যখন আরজুর নামটা নিয়েছিলো আমি অবাক হয়ে গিয়েছি। এইদিনও দেখার ছিলো। কিন্তু আমি জানি না কেনো লাস্ট পেজে এসে ‘কেনো লালসা আমাকে বিভ্রান্ত করে রাখতো?' এই লাইনে এসে আমি মুখ ফুটে বলে ফেলেছি “আই ফিল পিটি ফর হিম"। “ভালো থেকো ব্লু সাফায়ার" এই লাইনটার দিকে তাকাতে পারি না। ভেঙেচূড়ে কান্না আসে। নিজেকে নিজের কাছে অপরাধী লাগলেও কিছু করার নেই। তার জন্য সত্যি কষ্ট হচ্ছে। সবসময়ের অন্যের স্বার্থে ব্যবহার হয়ে গেছে। এমনকি নিজের বাবাও তাকে ব্যবহার নিজের স্বার্থে করতে গিয়ে তার জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। তবে চরিত্র স্খলনের ব্যাপারটি এড়িয়ে যেতে পারবো না। এটি ব্যক্তির নিজস্ব চিন্তা, মনোভাবের দ্বারাই সম্ভব। কাউকে বলে কয়ে দিতে হয় না, আবার পথ চিনিয়েও দিতে হয়না। বিবেকবোধ জাগ্রত থাকাটাই যথেষ্ট। তবুও আরজুর মতোন একজন মানুষ তাকে সবসময় সঠিক পথ চেনাতে চেয়েছিলো, এমনকি জোর-জবরদস্তিও করেছিলো। শামস তো রাগে, ক্ষোভে, অহংকারে অন্ধ হয়েছে ছিলো। তবে ভালোবাসা প্রকাশে তার জুড়ি মেলা ভার। যখনি মুখ ফুটে ভালোবাসার কথা বলতো, গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠতো। সমস্ত আবেগ ঢেলেই কাছে ডাকে, ভালোবাসার কথা বলে। জান্নাতের ওতো শক্তি কোথায় এমন ভালোবাসা ভুলে যাওয়ার! আরিজের জন্য অনুভূতিতে কোনো দ্বিধা নেই। সে নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। ঠান্ডা মাথায় ভেবে চিনতে সিদ্ধান্ত নেয়। সাধারণ কেউ হলে অন্যের চিন্তায় এতোটা বিভোর থাকতো না। নিজের ভালোবাসাকে চাপা দিয়ে এভাবে সাহায্য করার জন্য যোগ্যতা লাগে, যা আরিজের আছে। আরিজের ডায়েরির লেখাটা পড়ে আমার চোখ আদ্র হয়ে এসেছিলো। নিম্ন পর্যায়ে ধোঁকা, এমনকি জান্নাতের দুঃখগুলো যেখানে শুধু মন খারাপ করাতো যেখানে আরিজের আত্মদহনের বর্ণনা আমাকে প্রচুর কষ্ট দিয়েছে। শেষে এসে আমার মনের দোয়া শুধু আরজুর জন্য। মনে একটাই প্রশ্ন আরজু কোথায়? কয়েকটা পেজ শুধু খুঁজে গেছি। লাস্ট লাইনে এসে আমি চিল্লায় উঠছি। আশেপাশের সবাই আমার দিকে ঘুরে তাকাচ্ছিলো। আমার চেহারা ছিলো দেখার মতোন। জান্নাত প্র‍্যাকটিসিং মুসলিমা ছিলো। তার মধ্যে ভুল ত্রুটি ছিলো যা সে বুঝতে পারেনি৷ যার জন্য যথেষ্ট শাস্তিও পেয়েছে। আমি বরাবর বিশ্বাস করতাম, মন থেকে কারো স্মৃতি মুছে ফেলা সম্ভব নয়। মনের সাথে মস্তিষ্কেও তো আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। মস্তিষ্ক স্মৃতি ধারণ করে আর মন অনুভূতি। জান্নাতের জীবনে আসা ভালোবাসার স্মৃতি এবং অনুভূতিতে তার নিয়ন্ত্রণ নেই। চাইলেও কাউকে ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। এটাই অমোঘ সত্য। কিন্তু সময় প্রয়োজনের তাগিদে মনে ফাঁকা জায়গা তৈরী করে দেয়। যেখানে হয়তো নতুন কারোও আগমন ঘটে কিংবা শুন্যস্থান পরে রয়ে। কিন্তু অতীত বুকের অতলে চাপা থাকে। শামসের প্রতি জান্নাতের ভালোবাসা নিঁখাত ছিলো। স্বামীর প্রতি স্ত্রীর হালাল অনুভূতি, যাতে কোনো পাপ নেই। দ্বিখণ্ডিত হৃদয়ের দহন শুধু হৃদয়ের মালিকই বুঝে। বাইরে থেকে তার দুঃখের আন্দাজ করার প্রচেষ্টা বৃথা। শেষ মুহূর্তে এসেও যেনো রহস্যের শেষ ছিলো না। নাজমুল এবং শোভনের মৃত্যু রহস্য জেনে আমি হতবাক হয়ে গেছি। শুরু থেকে আরেকবার ভাবতে বাধ্য হয়েছিলাম। আসলেই কি সম্পদ আর আভিজাত্যের লোভ এই লোকটিকেও গ্রাস করেছিলো! আমার যে বিশ্বাস হতে চায় না। সারার বিয়ে, শামসের সিগনেচার, নীলান্তিকার পরিণতি, জান্নাতের হৃদয়ের খন্ডন গল্পের এই মোড়গুলো মনে প্রভাব ফেলেছে। শেষে এসে মনে হচ্ছে গল্পটা অন্যরকম হলেও পারতো, শামস সেই নীলনয়নের খোঁজ নাই বা পেতো। তার রুচির সাথে মিলে এমন একজনের সাথেই সুখে থাকতো। কিংবা সেই নীলনয়নার প্রতি তার ভালোবাসা অকালে ভেসে যেতো না। একটু বেশিই চালাক হলে প্ররোচনায় বিবেক হারাতো না। জান্নাত সেদিন হোস্টেল থেকে বেরিয়ে তার উদ্দেশ্য সফল করে এলেই এমন হতো না। শুরুটা অন্যরকম হোক, তবুও মাঝখানের গল্পগুলো মুছে যাক। যারা বইটি পড়বেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলি, ডিপ্রেশনে থাকাকালীন এই বইটি পড়া থেকে দূরে থাকুন। কারন বইয়ের ব্যপ্তি বিশাল। পড়তে অনেক সময় লাগবে। সূচনালগ্ন থেকে বারংবার এতোটাই আঘাত পাবেন, যে শেষ পর্যন্ত যেতে পারবেন কিনা এ ব্যাপারে আমি সন্দিহান । ধৈর্য্য ধরে যদি পড়তে পারেন, তবে বুঝে যাবেন আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের পরীক্ষা নেন ঠিকই কিন্তু নিরাশ করেন না। ?আলোচনাঃ এবার একটু লেখিকার প্রশংসা করি প্রাণ খুলে। আসলে আমি প্রতিবার একই বিশেষত্বে মুগ্ধ হই। বর্ণনায় অতীত, বর্তমানের মিশেলে যে আবহ তৈরী করেন - এটাই লেখিকার বিশেষত্ব। যা প্রতিটি বইয়ে তার নিজস্ব পরিচয় বহন করে। জান্নাত শামসের উদ্দেশ্যে একটা চিঠি লিখেছিলো সেটার দেখা মিললো কতোদূরে এসে৷ নাজমুল-শোভনের ব্লাকমেইলের কারনটাও জানলাম শেষে এসে। ৫৪১ পেজে বইটির পুরো ঘটনা মাথায় নিয়ে পড়তে হয়েছে। উপসংহারে এসে গুটি মেলাতে যেতে হয়েছে সূচনায়। ভাবতে হয়েছে, এটা যেনো কোনদিনের ঘটনা? অমনোযোগের কোনো স্থান নেই এখানে। সহজ সাবলীল বর্ণনার কথা ভুলেই যান। চোখের সামনে প্রমাণ ঘুরবে তবুও মনে কিঞ্চিৎ সন্দেহ নয়, পুরোটাই ভ্রম মনে হবে। দুটো পেজ পুরোটা আরিজের বাবার পরিচয় একটু একটু বর্ণনা করা হচ্ছিলো আর আমার সন্দেহ গাঢ় হচ্ছিলো। তবুও লেখিকাকে বিশ্বাস নেই। কারন আমি পুরোটা সময় ভেবেছিলাম আরজু একজনের ছেলে আর এখন আরেক ইঙ্গিত। তৃতীয় পেজে এসে যখন পড়লাম, কেবল এবং কেবল তখনি ক্লিয়ারলি বুঝতে পেরেছি। কথা জালে পেঁচিয়ে ফেলা আর কাকে বলে! চোখের সামনে থেকেও ধরা যায় না। শব্দের মাঝে এতোটাই ধাঁধা। এরপর আসি চরিত্রায়ন, পরিবেশ ও দৃশ্যায়নের ব্যাপারে। সবকিছুতেই থাকে আভিজাত্যের ছোঁয়া। হাইক্লাস সোসাইটির আনাচে কানাচে ঘুরে ফিরে আসা যায়। তাদের জীবনে প্রতিটা চেনা অচেনা গলির দর্শনে বাস্তবিকতার মুখোশ উন্মুক্ত হয়। চরিত্রদের প্রশংসনীয় বৈশিষ্ট্য এবং আত্মসম্মানবোধ থাকে প্রবল, যা পাঠকরা চাইলে নিজেদের মধ্যে সঞ্চালন করতে পারে। আমার মনে হয় করাও উচিত। ? প্রিয় উক্তিঃ √ আঁধার রাত্রি পার করা মানুষ আমি সুবহা, আপনি আমার জীবনের সকাল হবেন? √ কেমন হবে এই মানুষটা? ভাঙা দেওয়ালের মতো ভাঙা হৃদয়জুড়ে দেবার ক্ষমতা কি তার থাকবে? √ অন্তঃপুরবাসিনী হয়েও মেয়েদের জীবনের মতো যাযাবর জীবন আর নেই। স্থান পরিবর্তনের ধাক্কা সামলাতে সামলাতে একটা জীবন কোথায় পার হয়ে যায়। √ মূলত নিজ দোষে সর্বস্ব হারালে মানুষ বিবাগী হবার গর্বে গর্বিত হয়। তবুও বুকে গুমড়ে ওঠা হাহাকারগুলো কেন যেন নিশ্চিহ্ন হতে চায় না। √ অভিমানের অধিকার খর্ব হলে জবাবদিহিতার দায়টাও থাকে না √ স্বার্থ হাসিলে মানুষ কখনো নিজের মনের সাথেই ছলচাতুরী করে। √ শুনেছি আল্লাহর কাছে ভালো কর্মের খুব অসামান্য পুরস্কার হয়, তবে কিছু দুর্ভাগা মানুষ সেই পুরস্কারটা চিনতে পারে না। দম্ভ আর হেলায় হারায়। এমন মানুষের মতো নিঃস্ব পৃথিবীতে আর হয় না। √ সত্যির ধর্ম অদম্য, আগুনের মতো; ঢেকেও ঢাকে না। √ তুমি তো রাজপুত্র গো ভাই, তোমার ধৈর্য হবে সাগরের মতো । হৃদয় হবে আকাশের মতো। ওটাই তো তোমার শক্তি। √ ভালোবাসা কখনো ফিরিয়ে নেওয়া যায় না, কখনো মরে যায় না জান্নাত। রাশি রাশি ঘৃণার মাঝেও এক বিন্দু হয়ে ভালোবাসা বেঁচে থাকে। √ যেখানে তুচ্ছ সব ধর্মীয় বিধান, সামাজিক স্বীকৃতি, হৃদয়, অভিমান, আবেগ সবকিছু। এটা হয়তো স্খলনের সেই স্তর যেখানে স্বেচ্ছাচারিতার কাছে সব নীতি-নৈতিকতা লজ্জায় মাথা নত করে ফেলে। √ অন্যায় করবে একজন, তাকে ভুল পথ থেকে ফেরাতে কাঁদতে হবে তার সহধর্মিণীর? এটা কি আসলেও ভালোবাসা না গোলামী? √ তৃতীয় কেউ দুজন মানুষের মাঝামাঝি ফাঁক পেলেই আসতে পারে তার আগে নয়। কিন্তু জানতে ইচ্ছে করে এখন ফাঁকটা কীসের ছিল, ভিন্ন মূল্যবোধের, চাহিদার না-কি অর্থের মিথ্যা দম্ভের? √ দাম্পত্য সম্পর্ক কাচের পাত্রের মতোই। এটার সৌন্দর্য যত্নে বাড়ে। তবে সাবধানে আগলে না রাখলে ভাঙতে সময় লাগে না। কিন্তু একবার এই সম্পর্ক ভেঙে গেলে এর টুকরোগুলো সামনের জীবনের চলতি পথে ছড়িয়ে যায়। তখন সামলে চলতে গিয়ে সেসব আবার আপনার পায়ের তলায় বিধবে। সোশাল সিকিউরিটি, সম্মান, মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি সবকিছু কঠিন হয়ে যায় বিশেষ করে মেয়েদের জন্য। √ নিজের সহনশীলতা, ঈমান ও আমলের উপর অহংকার ছিল আমার। আজ যা ভেঙে চুর হয়ে গেল। মনে শুধু একটাই প্রশ্ন, ধর্মীয় বিধানে খণ্ডিত ভালোবাসা যদি আমাদেরই নিয়তিতে থাকে তাহলে করুণাময় আমাদের হৃদয় কেন দিলেন? হৃদয় ভেঙে খণ্ড হতো আপত্তি ছিল না, তাহলে সেখানে অনুভব কেন দিলেন? ? প্রোডাকশন: কিছু বানান ভুল ছিলো। তবে পড়তে অসুবিধা হয়নি। প্রচ্ছদ বেশ নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তবে বইয়ের বাজেট কম রাখতে গিয়ে দুরকম কাগজের ব্যবহার করা হয়েছে মনে হয়৷ কভারের অবস্থা একটু নাজুক। রয়েল সাইজের বেশ মোটা বই হিসেবে কভার আরও মজবুত করা ভালো। পড়তে গেলে কেমন ছিঁড়ে যাওয়ার ভয় পাচ্ছিলাম। পরবর্তী মুদ্রণে দামের থেকেও বাইন্ডিং এর দিকটাতে নজর দিতে পারেন। ? ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৪.৯/৫ ? উপসংহারঃ বইপ্রেমী প্রতিটি মানুষের উচিত একবার হলেও বইটি পড়া। খামখেয়ালীপনা ও অহংকারে শামসের পরিনতি চরিত্র গঠনে সাহায্য করবে। জান্নাতের বারংবার বিরুপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া আল্লাহর পথে চলতে মনোবল আরও দৃঢ় করবে। আরিজের অসাধারণ ব্যক্তিত্ব শেখাবে ধৈর্য্য, একনিষ্ঠতা, ন্যায়-নিষ্ঠার মাঝে পারিবারিক দায়িত্ব পালন করে তাদের ছায়া দেওয়া। ক্ষমতা, লোভ, জনপ্রিয় হওয়ার ইচ্ছা মানুষকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। আল্লাহ যতোটুকু দিয়েছেন তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকাই শ্রেয়। নিছক গল্প হয়েও কিছু চরিত্র খুব কাছের মানুষের মতো নিজের উপর প্রভাব ফেলে, দ্বিখণ্ডিতার চরিত্ররাও এমন। বিদায় জানাতে কষ্ট হচ্ছে।

      By Priyanka Ganapati

      07 Mar 2023 11:43 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      #বুকরিভিউ #দ্বিখণ্ডিতা "খন্ডিত হৃদয়ের আর্তনাদ সব সময় নীরবই হয়।" জীবনের চলার পথে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে, বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের সম্মুখীন হয়ে কিছু মানুষের হৃদয় হয়ে যায় খণ্ড-বিখণ্ড। ভালোবাসা-সংসার, প্রেম-ক্ষমতা, স্বপ্ন-দায়িত্ব ইত্যাদির মাঝে বিভক্ত হয়ে যায় তাদের হৃদয়ের অলিগলি। সেরকমই কিছু চরিত্রকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে লেখক শারমিন আঞ্জুমের উপন্যাস 'দ্বিখণ্ডিতা'। ★ প্রচ্ছদ ও নামকরণ : ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, ''Don't judge a book by it's cover."। একটি ভালো বইয়ের ক্ষেত্রে প্রচ্ছদ ও নামকরণের চেয়ে বইয়ের বিষয়বস্তু ও লেখনশৈলীই বেশি গুরুত্ব বহন করে। তবে বর্তমানে বেশিরভাগ পাঠকই সম্ভবত কোন বইয়ের প্রতি প্রথম আকর্ষণ অনুভব করে বইটির সুন্দর একটি নাম ও আকর্ষণীয় প্রচ্ছদের মাধ্যমে। 'দ্বিখণ্ডিতা' বইয়ের ক্ষেত্রে এই দুইটি উপাদানই যথেষ্ট আকর্ষণীয়। আপাতদৃষ্টিতে বইটির প্রচ্ছদে দেখে মনে হতে পারে যে প্রধান নারী চরিত্রকে প্রচ্ছদে চিত্রায়িত করা হয়েছে। কিন্তু সম্পূর্ণ বইটি পড়ার পরে পাঠকরা উপলব্ধি করবে যে বইয়ের কাহিনীর ও চরিত্রদের অনুভূতির চমৎকার প্রতিফলন ঘটেছে নামকরণ ও প্রচ্ছদের মধ্যে দিয়ে। ★ কাহিনী সংক্ষেপ : চতুর, ক্ষমতাধর এক মন্ত্রী শওকত দেওয়ানের বহুদিন ধরে গড়ে তোলা সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী বেপরোয়া জীবনযাপনকারী যুবক শামস। নিজের আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করার জন্য শওকত দেওয়ান নিজ পুত্রের অমতে তার সাথে বিবাহ ঠিক করে ধর্মপ্রাণ সুবহা জান্নাতের। নিজের হৃদয়ে অন্য কাউকে নিয়ে জীবন কাটানোর স্বপ্ন লালন করেও সুবহা ভাগ্যচক্রে বাঁধা পড়ে যায় নিজস্ব চিন্তাধারার বিপরীত এক যুবকের সাথে সংসার নামক মায়াজালে। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে নতুন জীবনকে আপন করে নেয়ার চেষ্টার মাঝেই তার জীবনে আগমন ঘটে অতীতের। ধর্মভীরু সুবহা কি পারবে অতীতের আগমনেও নিজের ধর্ম ও দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে অটল থাকতে? শামস ও সুবহা পারবে কি ভিন্ন চিন্তাভাবনার মানুষের সাথে নিজের জীবন অতিবাহিত করতে? এক সময় নিজের মনে অন্য কাউকে স্থান দেয়া সুবহা পারবে কি নিজের স্বামীকে ভালোবাসতে? সুবহার আগমনে শামসের নিজস্ব জীবনধারার কতটুকুই বা পরিবর্তন ঘটবে? অন্যদিকে আরিজ নিজের অতীত ও ভালোবাসার দ্বন্দ্বে হারিয়ে ফেলে জীবনের প্রিয় ভালোবাসার মানুষটিকে। একসময় তাকে খুঁজে পেলেও আবিষ্কার করে নতুন পরিচয়ে। অস্তিত্বের লড়াই আরিজকে এমন কিছু সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করায় যা তার হৃদয়কে করে তোলে খণ্ডিত। পারবে কি আরিজ বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে জীবনের কঠিন সত্যের সাথে লড়াই করতে? সময়ের পরিক্রমায় একসময় সবকিছুতে স্থিরতা আসে। শামস তার ব্লু সাফায়ের সাথে সুন্দর একটি জীবনের সূচনা করে। হয়তো সেখানেও মতের অমিল হতো, তবুও ছিল মানিয়ে চলার প্রচেষ্টা এবং সুবহার ধর্মের প্রতি বিশ্বাস। কিন্তু এক কালবৈশাখী ঝড়ে ওলট-পালট হয়ে যায় সবকিছু। ক্ষত-বিক্ষত হয় অসংখ্য হৃদয়! খন্ডিত হৃদয় কি কখনো জোড়া লাগে? কী হয় চরিত্রদের ভবিতব্য? জানতে হলে ডুব দিতে হবে 'দ্বিখণ্ডিতা' উপন্যাসের পাতায় পাতায়। ★ চরিত্র বিশ্লেষণ : সুবহা : ধর্মভীরু, ধৈর্যশীলা, আত্মসংযমী, সাহসী, সততা ও ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হৃদয়ের অধিকারী এক চরিত্র শেখ সুবহানা জান্নাত। অসংখ্য ঘাত-প্রতিঘাতে যার জীবন বারবার হয়েছে ক্ষত-বিক্ষত, হারিয়েছে জীবনের প্রিয় কিছুকে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রেখে সে সবসময় এগিয়ে গিয়েছে জীবনের পথে, ভেঙে পড়েও বারবার উঠে দাঁড়িয়েছে এক অদম্য সাহস নিয়ে। উপন্যাসের সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র নীল নয়নের অধিকারী এই নারী। শামস : উচ্ছল, বেপরোয়া, নিখুঁত সৌন্দর্যের অধিকারী এক চরিত্র মির্জা সাহির আলি দেওয়ান ওরফে শামস। পরিণতির তোয়াক্কা না করেই বিভিন্ন কাজ করা যার স্বভাব। জীবনে অসংখ্য নারীর আগমন ঘটলেও স্ত্রীর ভালোবাসার ছোঁয়া লেগেছিল যার জীবনে। কিন্তু স্বভাব কি সহজে পরিবর্তন করা যায়, যেখানে পদে পদে রয়েছে ক্ষমতা, অর্থ ও নারীসঙ্গের হাতছানি! আরিজ : সৎ, দ্বায়িত্ববান, কর্তব্য পরায়ণ, বুদ্ধিমান ও গাম্ভীর্যে পরিপূর্ণ এক চরিত্র মির্জা আরিজ আলি দেওয়ান। অন্তর্মুখী চরিত্রের এই যুবক সবসময় সমতা রক্ষা করে চলেছে নিজের দ্বায়িত্ব-কর্তব্য, পরিবার ও ভালোবাসার মধ্যে। তবুও আঘাতে জর্জরিত হতে হয়েছে অসংখ্য বার কিন্তু নিজ কর্মে ছিল সে একনিষ্ঠ। বহু নারীর জন্য আকাঙ্ক্ষিত চরিত্রের অধিকারী এই যুবক উপন্যাসের অন্যতম এক প্রিয় চরিত্র। নীলান্তিকা : উপন্যাসে সবচেয়ে কম সময়ের জন্য উপস্থিত হওয়া এই চরিত্র সম্ভবত পাঠকের হৃদয়ে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছে। এই মিষ্টি কন্যাটি ভালোবাসার মোহে বেঁধে রেখেছিল মনের একটি অংশকে। জুনায়েদ শেখ : উপন্যাসের আরেকটি পছন্দের চরিত্র। ধর্মপ্রাণ, দায়িত্ববান, সৎ চরিত্রের অধিকারী এক ব্যক্তি। সন্তানের প্রতি যার ভালোবাসা অপরিসীম। যার কর্মকাণ্ড বারবার তাকে শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছে। শওকত দেওয়ান : অর্থ ও ক্ষমতা লোভী এক চরিত্র। কুটিলতায় পরিপূর্ণ যার হৃদয়। নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এহেন ঘৃণ্য কর্ম নাই যা তিনি করেননি। নিজের সাফল্যের জন্য পরিবারের মানুষের ক্ষতি করতেও যিনি কখনো পিছপা হন না। যিনি উপন্যাসে আমার সবচেয়ে অপ্রিয় ও ঘৃণ্য চরিত্র। সারা : অর্থলোভী ও ঘৃণ্য চরিত্রের এক নারী সারা ইয়াসমিন আজিজ। যে নিজের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য অন্যের সংসার ভাঙতে উদ্যোগী হতে পারে, আবার বিকিয়ে দিতে পারে নিজকে। এছাড়াও উপন্যাসে রয়েছে আরও অসংখ্য চরিত্র। কারো উপস্থিতি হয়তো সল্প সময়ের জন্য, আবার কারো উপস্থিতি সম্পূর্ণ উপন্যাস জুড়ে। চরিত্রদের উপস্থিতি যেটুকু সময়ের জন্যই হোক না কেন সব চরিত্রগুলোই নিজ নিজ অবস্থানে যথার্থ। ★ পাঠ প্রতিক্রিয়া : মানব জীবনের সুন্দর এবং মধুর এক অনুভূতি হচ্ছে ভালোবাসা। আমরা যখন কাউকে ভালোবেসে মনের গহীনে স্থান দেই, তখন স্বপ্ন দেখি তার সাথে সারাজীবন একসাথে কাটানোর। কিন্তু চাইলেই কি এই জীবনের সব ইচ্ছে পূরণ হয়? সময়ের পরিক্রমায় হয়তো ভালোবাসার মানুষটি ছেড়ে চলে যায় আমাদের এবং নতুন কারো আগমন ঘটে আমাদের জীবনে। তখন অতীত ও বর্তমান দুটোই সত্য রূপে পাশাপাশি অবস্থান করে আমাদের মনে। দুটি অনুভূতিতে খন্ডিত হয়ে নীরবে আর্তনাদ করে অন্তর। সেই অনুভূতিকেই তুলে ধরা হয়েছে 'দ্বিখণ্ডিতা' উপন্যাসের মধ্যে দিয়ে। ধর্মীয় বিশ্বাস, পারিবারিক বন্ধন, সম্পর্কের টানাপোড়েন, অস্তিত্বের লড়াই, ভালোবাসা, ত্যাগ, স্বপ্ন ভঙ্গের কষ্ট, ইচ্ছে পূরণের আনন্দ, বাস্তবতার কষাঘাত ইত্যাদির অদ্ভুত এক যোগসূত্রে রচিত হয়েছে উপন্যাসটি। উপন্যাসটিতে তুলে ধরা হয়েছে আমাদের ঘুণে ধরা সমাজের কিছু কদর্য রূপ। অর্থ-সম্পত্তির লোভ, ক্ষমতার অপব্যবহার, খুন, সন্ত্রাস, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ইত্যাদি সবকিছু তুলে ধরা হয়েছে দক্ষতার সাথে। উপন্যাসের চরিত্রদের জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না বারবার নাড়া দিয়ে যাচ্ছিল হৃদয়কে। কিছু চরিত্রের পরিণতি মনে আনন্দের উদ্রেক ঘটালেও কিছু চরিত্রের পরিণতি করে তুলছিল বিমূঢ়। ধর্মের পথে চললেও অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয় কিন্তু নিজ বিশ্বাসে অটল থাকতে হয়। সুবহা চরিত্রটি সে কথা বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিল। সব প্রতিকূলতায়ও শামস ও আরিজের ভাতৃত্বের বন্ধন ছিল মুগ্ধ করার মতো। লেখকের লেখনশৈলী মুগ্ধ করার মতো। উপযুক্ত শব্দচয়ন, পারিপার্শ্বিক পরিবেশের চমৎকার বর্ণনা ও চরিত্রদের মনের অনুভূতির প্রকাশ উপন্যাসের ঘটনাবলীকে চোখের সামনে জীবন্ত করে তুলছিল। বেশ সাবলীল বর্ণনা ছিল সম্পূর্ণ উপন্যাস জুড়ে। বেশ দীর্ঘ কলেবরের উপন্যাস হওয়া সত্ত্বেও উপন্যাসের কোনো অংশকে অপ্রয়োজনীয় বা অতিরঞ্জিত বলে মনে হয়নি। লেখকের বর্ণনাশৈলী পাঠককে আকৃষ্ট করার জন্য যথেষ্ট আকর্ষণীয়। উপন্যাসটির সূচনা আমাদের সমাজ জীবনের সাধারণ এক ঘটনার মধ্যে দিয়ে। কিন্তু উপন্যাসের কাহিনী যত বিস্তৃত হয়েছে ততই যেন অদ্ভুত এক আকর্ষণ অনুভব করছিলাম। অঘোম কৌতূহল আমাকে টেনে নিয়ে গিয়েছে উপন্যাসের সমাপ্তি পর্যন্ত। এই যাত্রা পথে মনের মধ্যে বিভিন্ন মুহূর্তে সৃষ্টি হয়েছে আনন্দ, বেদনা, রাগ, অভিমান, বিষণ্নতাসহ অসংখ্য অনুভূতির। উপন্যাসটি শেষ হওয়ার পরেও যার রেশ রয়ে গিয়েছিল বহুক্ষণ। অকল্পনীয় এক সমাপ্তি নাড়িয়ে দিয়েছে হৃদয়কে। সবমিলিয়ে সুখপাঠ্য এক উপন্যাসের নাম 'দ্বিখণ্ডিতা'। ★ শিক্ষণীয় দিক : সাহিত্যকে আমাদের সমাজের দর্পণ রূপে অভিহিত করা হয়। সমাজের বিভিন্ন দিককে শিক্ষণীয়রূপে সাহিত্যে ফুটিয়ে তোলা হয় সেই সাহিত্যের অন্তর্গত বিভিন্ন চরিত্রের জীবনে ঘটা বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে দিয়ে। দ্বিখণ্ডিতাও এর ব্যতিক্রম নয়। * কোনো দাম্পত্য সম্পর্কে ভালোবাসা থাকলেই সেই সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয় না। সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের উপর বিশ্বাস, সম্মান, ভালোবাসা যেমন থাকা প্রয়োজন ; তেমনি প্রয়োজন একে অপরের বিশ্বাস রক্ষা করার মানসিকতা। * জীবনে অসংখ্য বাধা-বিপত্তি আসে কিন্তু কখনো ভেঙে পড়া উচিৎ নয়। সবসময় সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রেখে এগিয়ে যেতে হবে সাহসের সাথে। * মানুষ অর্থ ও ক্ষমতার মোহে অসংখ্য পাপ কাজ করে। নিজেকে সর্বেসর্বা মনে করে। কিন্তু কারো এটা ভুলে যাওয়া উচিৎ নয় যে, পাপ করলে তার পতন অনিবার্য। * লোভ, লালসা, ষড়রিপুর আকর্ষণ মানুষকে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তাই এদের নিয়ন্ত্রণ করে ধর্ম ও মূল্যবোধকে জীবনের পথে পাথেয় করা উচিৎ। * উপন্যাসের অসংখ্য স্থানে সংযুক্ত করা হয়েছে কোরআনের আয়াত ও বাণী। যা সবাইকেই ধর্মীয় অনুশাসনের কথা মনে করিয়ে দিতে যথেষ্ট। ★ সম্পাদনা, বানান ও অন্যান্য : বইটি প্রকাশিত হয়েছে 'বইবাজার' প্রকাশনী থেকে। বইটির প্রোডাকশন, বাঁধাই, পৃষ্ঠার মান সবকিছুই চমৎকার। দীর্ঘ কলেবরের একটি বই হওয়া সত্ত্বেও দারুণ বাঁধাইয়ের জন্য পড়তে একটুও অসুবিধা হয়নি। বইয়ের সম্পাদনাও যথেষ্ট ভালো। তবে অল্প কিছু টাইপিং মিস্টেক রয়েছে। কিন্তু এসব সামান্য ত্রুটি উপন্যাসের সৌন্দর্য একটুও ম্লান করতে পারেনি এবং বই পাঠের আনন্দ উপভোগের ক্ষেত্রে কোনরূপ বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি। তবে ভুলের পরিমাণ খুব নগন্য হলেও পরবর্তী মুদ্রণে সেগুলো ঠিক করে নিলে বইয়ের মান আরও কিছুটা বৃদ্ধি পাবে বলেই আমার বিশ্বাস। ★ প্রিয় উক্তিসমূহ : দীর্ঘ কলেবরের গ্রন্থটিতে অসংখ্য প্রিয় উক্তি রয়েছে। তার মধ্যে কিছু উক্তি - ~ মনের কথা বাস্তব জ্ঞান আর যুক্তি না মেনে শুনলে ধ্বংস অনিবার্য। ~ পৃথিবীর সবচে কষ্টকর হলো প্রিয়জনের সামনে মুখোশ পরে থাকা। ~ স্বচ্ছতার নিজস্ব একটা অদ্ভুত আকর্ষণ আছে। ~ সময়ের গতি কখনো মানুষের অনুভবের তীব্রতার উপর নির্ভর করে। অনুভব যত তীব্র, সময় যেন তত মন্থর। ~ শুধু পাশে থাকার নাম ভালোবাসা নয়। মন থেকে কারো ভালোর মধ্যে বাসের নাম ভালোবাসা ; সব অবস্থায় প্রিয়জনকে আন্তরিকভাবে আগলে রাখার নাম ভালোবাসা। ~ ভালোবাসা মানুষের পরিবর্তন আনে না, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা মানুষের মধ্যে পরিমার্জন আনে। ভালোবাসা মানুষকে বদলায় না, তবে শোধরায়। ~ পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর ভাবনা বোধহয় কেউ আমার জন্য অপেক্ষায় আছে। ~ জীবনের বেশিরভাগ মোড় পরিবর্তনের মুহূর্তগুলো অনাড়ম্বরই হয়। অনুভবের গভীরতাই তাদের বিশেষ করে দেয়। ~ কিছু মানুষ একান্তভাবে কারোর একার হয় না। এর জন্য দায়ী সে থাকে না। ছেড়ে যাবার অভিযোগ দেওয়া সহজ হলেও ধরে রাখতে না জানার দায়টা এড়ানো যায় না। ~ ভালোবাসা তো বহমান নদীর মতো, জীবনের প্রয়োজনে গতিপথ বদলে ফেলে। তাই নতুন করে ভালোবাসা হতেই পারে ; হওয়াই উচিত। প্রথম ভালোবাসা আর তার পরিপূর্ণতা একসাথে মেলে না, তখন মন খণ্ডিত হয়ে রয় অতীত আর বর্তমানের মাঝে, তাদের জন্য দুইটা সত্য দুইটা সুন্দর। ★ বই পরিচিতি : বইয়ের নাম ~ দ্বিখন্ডিতা লেখক ~ শারমিন আঞ্জুম জনরা ~ সমকালীন সামাজিক উপন্যাস প্রকাশনী ~ বইবাজার প্রকাশনী প্রচ্ছদ ~ সাদিতউজ্জামান পৃষ্ঠা সংখ্যা ~ ৫৫১ প্রকাশকাল ~ বইমেলা ২০২৩ মুদ্রিত মূল্য ~ ১০০০ টাকা #বুকরিভিউ #দ্বিখণ্ডিতা "খন্ডিত হৃদয়ের আর্তনাদ সব সময় নীরবই হয়।" জীবনের চলার পথে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে, বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের সম্মুখীন হয়ে কিছু মানুষের হৃদয় হয়ে যায় খণ্ড-বিখণ্ড। ভালোবাসা-সংসার, প্রেম-ক্ষমতা, স্বপ্ন-দায়িত্ব ইত্যাদির মাঝে বিভক্ত হয়ে যায় তাদের হৃদয়ের অলিগলি। সেরকমই কিছু চরিত্রকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে লেখক শারমিন আঞ্জুমের উপন্যাস 'দ্বিখণ্ডিতা'। ★ প্রচ্ছদ ও নামকরণ : ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, ''Don't judge a book by it's cover."। একটি ভালো বইয়ের ক্ষেত্রে প্রচ্ছদ ও নামকরণের চেয়ে বইয়ের বিষয়বস্তু ও লেখনশৈলীই বেশি গুরুত্ব বহন করে। তবে বর্তমানে বেশিরভাগ পাঠকই সম্ভবত কোন বইয়ের প্রতি প্রথম আকর্ষণ অনুভব করে বইটির সুন্দর একটি নাম ও আকর্ষণীয় প্রচ্ছদের মাধ্যমে। 'দ্বিখণ্ডিতা' বইয়ের ক্ষেত্রে এই দুইটি উপাদানই যথেষ্ট আকর্ষণীয়। আপাতদৃষ্টিতে বইটির প্রচ্ছদে দেখে মনে হতে পারে যে প্রধান নারী চরিত্রকে প্রচ্ছদে চিত্রায়িত করা হয়েছে। কিন্তু সম্পূর্ণ বইটি পড়ার পরে পাঠকরা উপলব্ধি করবে যে বইয়ের কাহিনীর ও চরিত্রদের অনুভূতির চমৎকার প্রতিফলন ঘটেছে নামকরণ ও প্রচ্ছদের মধ্যে দিয়ে। ★ কাহিনী সংক্ষেপ : চতুর, ক্ষমতাধর এক মন্ত্রী শওকত দেওয়ানের বহুদিন ধরে গড়ে তোলা সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী বেপরোয়া জীবনযাপনকারী যুবক শামস। নিজের আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করার জন্য শওকত দেওয়ান নিজ পুত্রের অমতে তার সাথে বিবাহ ঠিক করে ধর্মপ্রাণ সুবহা জান্নাতের। নিজের হৃদয়ে অন্য কাউকে নিয়ে জীবন কাটানোর স্বপ্ন লালন করেও সুবহা ভাগ্যচক্রে বাঁধা পড়ে যায় নিজস্ব চিন্তাধারার বিপরীত এক যুবকের সাথে সংসার নামক মায়াজালে। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে নতুন জীবনকে আপন করে নেয়ার চেষ্টার মাঝেই তার জীবনে আগমন ঘটে অতীতের। ধর্মভীরু সুবহা কি পারবে অতীতের আগমনেও নিজের ধর্ম ও দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে অটল থাকতে? শামস ও সুবহা পারবে কি ভিন্ন চিন্তাভাবনার মানুষের সাথে নিজের জীবন অতিবাহিত করতে? এক সময় নিজের মনে অন্য কাউকে স্থান দেয়া সুবহা পারবে কি নিজের স্বামীকে ভালোবাসতে? সুবহার আগমনে শামসের নিজস্ব জীবনধারার কতটুকুই বা পরিবর্তন ঘটবে? অন্যদিকে আরিজ নিজের অতীত ও ভালোবাসার দ্বন্দ্বে হারিয়ে ফেলে জীবনের প্রিয় ভালোবাসার মানুষটিকে। একসময় তাকে খুঁজে পেলেও আবিষ্কার করে নতুন পরিচয়ে। অস্তিত্বের লড়াই আরিজকে এমন কিছু সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করায় যা তার হৃদয়কে করে তোলে খণ্ডিত। পারবে কি আরিজ বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে জীবনের কঠিন সত্যের সাথে লড়াই করতে? সময়ের পরিক্রমায় একসময় সবকিছুতে স্থিরতা আসে। শামস তার ব্লু সাফায়ের সাথে সুন্দর একটি জীবনের সূচনা করে। হয়তো সেখানেও মতের অমিল হতো, তবুও ছিল মানিয়ে চলার প্রচেষ্টা এবং সুবহার ধর্মের প্রতি বিশ্বাস। কিন্তু এক কালবৈশাখী ঝড়ে ওলট-পালট হয়ে যায় সবকিছু। ক্ষত-বিক্ষত হয় অসংখ্য হৃদয়! খন্ডিত হৃদয় কি কখনো জোড়া লাগে? কী হয় চরিত্রদের ভবিতব্য? জানতে হলে ডুব দিতে হবে 'দ্বিখণ্ডিতা' উপন্যাসের পাতায় পাতায়। ★ চরিত্র বিশ্লেষণ : সুবহা : ধর্মভীরু, ধৈর্যশীলা, আত্মসংযমী, সাহসী, সততা ও ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হৃদয়ের অধিকারী এক চরিত্র শেখ সুবহানা জান্নাত। অসংখ্য ঘাত-প্রতিঘাতে যার জীবন বারবার হয়েছে ক্ষত-বিক্ষত, হারিয়েছে জীবনের প্রিয় কিছুকে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রেখে সে সবসময় এগিয়ে গিয়েছে জীবনের পথে, ভেঙে পড়েও বারবার উঠে দাঁড়িয়েছে এক অদম্য সাহস নিয়ে। উপন্যাসের সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র নীল নয়নের অধিকারী এই নারী। শামস : উচ্ছল, বেপরোয়া, নিখুঁত সৌন্দর্যের অধিকারী এক চরিত্র মির্জা সাহির আলি দেওয়ান ওরফে শামস। পরিণতির তোয়াক্কা না করেই বিভিন্ন কাজ করা যার স্বভাব। জীবনে অসংখ্য নারীর আগমন ঘটলেও স্ত্রীর ভালোবাসার ছোঁয়া লেগেছিল যার জীবনে। কিন্তু স্বভাব কি সহজে পরিবর্তন করা যায়, যেখানে পদে পদে রয়েছে ক্ষমতা, অর্থ ও নারীসঙ্গের হাতছানি! আরিজ : সৎ, দ্বায়িত্ববান, কর্তব্য পরায়ণ, বুদ্ধিমান ও গাম্ভীর্যে পরিপূর্ণ এক চরিত্র মির্জা আরিজ আলি দেওয়ান। অন্তর্মুখী চরিত্রের এই যুবক সবসময় সমতা রক্ষা করে চলেছে নিজের দ্বায়িত্ব-কর্তব্য, পরিবার ও ভালোবাসার মধ্যে। তবুও আঘাতে জর্জরিত হতে হয়েছে অসংখ্য বার কিন্তু নিজ কর্মে ছিল সে একনিষ্ঠ। বহু নারীর জন্য আকাঙ্ক্ষিত চরিত্রের অধিকারী এই যুবক উপন্যাসের অন্যতম এক প্রিয় চরিত্র। নীলান্তিকা : উপন্যাসে সবচেয়ে কম সময়ের জন্য উপস্থিত হওয়া এই চরিত্র সম্ভবত পাঠকের হৃদয়ে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছে। এই মিষ্টি কন্যাটি ভালোবাসার মোহে বেঁধে রেখেছিল মনের একটি অংশকে। জুনায়েদ শেখ : উপন্যাসের আরেকটি পছন্দের চরিত্র। ধর্মপ্রাণ, দায়িত্ববান, সৎ চরিত্রের অধিকারী এক ব্যক্তি। সন্তানের প্রতি যার ভালোবাসা অপরিসীম। যার কর্মকাণ্ড বারবার তাকে শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছে। শওকত দেওয়ান : অর্থ ও ক্ষমতা লোভী এক চরিত্র। কুটিলতায় পরিপূর্ণ যার হৃদয়। নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এহেন ঘৃণ্য কর্ম নাই যা তিনি করেননি। নিজের সাফল্যের জন্য পরিবারের মানুষের ক্ষতি করতেও যিনি কখনো পিছপা হন না। যিনি উপন্যাসে আমার সবচেয়ে অপ্রিয় ও ঘৃণ্য চরিত্র। সারা : অর্থলোভী ও ঘৃণ্য চরিত্রের এক নারী সারা ইয়াসমিন আজিজ। যে নিজের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য অন্যের সংসার ভাঙতে উদ্যোগী হতে পারে, আবার বিকিয়ে দিতে পারে নিজকে। এছাড়াও উপন্যাসে রয়েছে আরও অসংখ্য চরিত্র। কারো উপস্থিতি হয়তো সল্প সময়ের জন্য, আবার কারো উপস্থিতি সম্পূর্ণ উপন্যাস জুড়ে। চরিত্রদের উপস্থিতি যেটুকু সময়ের জন্যই হোক না কেন সব চরিত্রগুলোই নিজ নিজ অবস্থানে যথার্থ। ★ পাঠ প্রতিক্রিয়া : মানব জীবনের সুন্দর এবং মধুর এক অনুভূতি হচ্ছে ভালোবাসা। আমরা যখন কাউকে ভালোবেসে মনের গহীনে স্থান দেই, তখন স্বপ্ন দেখি তার সাথে সারাজীবন একসাথে কাটানোর। কিন্তু চাইলেই কি এই জীবনের সব ইচ্ছে পূরণ হয়? সময়ের পরিক্রমায় হয়তো ভালোবাসার মানুষটি ছেড়ে চলে যায় আমাদের এবং নতুন কারো আগমন ঘটে আমাদের জীবনে। তখন অতীত ও বর্তমান দুটোই সত্য রূপে পাশাপাশি অবস্থান করে আমাদের মনে। দুটি অনুভূতিতে খন্ডিত হয়ে নীরবে আর্তনাদ করে অন্তর। সেই অনুভূতিকেই তুলে ধরা হয়েছে 'দ্বিখণ্ডিতা' উপন্যাসের মধ্যে দিয়ে। ধর্মীয় বিশ্বাস, পারিবারিক বন্ধন, সম্পর্কের টানাপোড়েন, অস্তিত্বের লড়াই, ভালোবাসা, ত্যাগ, স্বপ্ন ভঙ্গের কষ্ট, ইচ্ছে পূরণের আনন্দ, বাস্তবতার কষাঘাত ইত্যাদির অদ্ভুত এক যোগসূত্রে রচিত হয়েছে উপন্যাসটি। উপন্যাসটিতে তুলে ধরা হয়েছে আমাদের ঘুণে ধরা সমাজের কিছু কদর্য রূপ। অর্থ-সম্পত্তির লোভ, ক্ষমতার অপব্যবহার, খুন, সন্ত্রাস, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ইত্যাদি সবকিছু তুলে ধরা হয়েছে দক্ষতার সাথে। উপন্যাসের চরিত্রদের জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না বারবার নাড়া দিয়ে যাচ্ছিল হৃদয়কে। কিছু চরিত্রের পরিণতি মনে আনন্দের উদ্রেক ঘটালেও কিছু চরিত্রের পরিণতি করে তুলছিল বিমূঢ়। ধর্মের পথে চললেও অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয় কিন্তু নিজ বিশ্বাসে অটল থাকতে হয়। সুবহা চরিত্রটি সে কথা বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিল। সব প্রতিকূলতায়ও শামস ও আরিজের ভাতৃত্বের বন্ধন ছিল মুগ্ধ করার মতো। লেখকের লেখনশৈলী মুগ্ধ করার মতো। উপযুক্ত শব্দচয়ন, পারিপার্শ্বিক পরিবেশের চমৎকার বর্ণনা ও চরিত্রদের মনের অনুভূতির প্রকাশ উপন্যাসের ঘটনাবলীকে চোখের সামনে জীবন্ত করে তুলছিল। বেশ সাবলীল বর্ণনা ছিল সম্পূর্ণ উপন্যাস জুড়ে। বেশ দীর্ঘ কলেবরের উপন্যাস হওয়া সত্ত্বেও উপন্যাসের কোনো অংশকে অপ্রয়োজনীয় বা অতিরঞ্জিত বলে মনে হয়নি। লেখকের বর্ণনাশৈলী পাঠককে আকৃষ্ট করার জন্য যথেষ্ট আকর্ষণীয়। উপন্যাসটির সূচনা আমাদের সমাজ জীবনের সাধারণ এক ঘটনার মধ্যে দিয়ে। কিন্তু উপন্যাসের কাহিনী যত বিস্তৃত হয়েছে ততই যেন অদ্ভুত এক আকর্ষণ অনুভব করছিলাম। অঘোম কৌতূহল আমাকে টেনে নিয়ে গিয়েছে উপন্যাসের সমাপ্তি পর্যন্ত। এই যাত্রা পথে মনের মধ্যে বিভিন্ন মুহূর্তে সৃষ্টি হয়েছে আনন্দ, বেদনা, রাগ, অভিমান, বিষণ্নতাসহ অসংখ্য অনুভূতির। উপন্যাসটি শেষ হওয়ার পরেও যার রেশ রয়ে গিয়েছিল বহুক্ষণ। অকল্পনীয় এক সমাপ্তি নাড়িয়ে দিয়েছে হৃদয়কে। সবমিলিয়ে সুখপাঠ্য এক উপন্যাসের নাম 'দ্বিখণ্ডিতা'। ★ শিক্ষণীয় দিক : সাহিত্যকে আমাদের সমাজের দর্পণ রূপে অভিহিত করা হয়। সমাজের বিভিন্ন দিককে শিক্ষণীয়রূপে সাহিত্যে ফুটিয়ে তোলা হয় সেই সাহিত্যের অন্তর্গত বিভিন্ন চরিত্রের জীবনে ঘটা বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে দিয়ে। দ্বিখণ্ডিতাও এর ব্যতিক্রম নয়। * কোনো দাম্পত্য সম্পর্কে ভালোবাসা থাকলেই সেই সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয় না। সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের উপর বিশ্বাস, সম্মান, ভালোবাসা যেমন থাকা প্রয়োজন ; তেমনি প্রয়োজন একে অপরের বিশ্বাস রক্ষা করার মানসিকতা। * জীবনে অসংখ্য বাধা-বিপত্তি আসে কিন্তু কখনো ভেঙে পড়া উচিৎ নয়। সবসময় সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রেখে এগিয়ে যেতে হবে সাহসের সাথে। * মানুষ অর্থ ও ক্ষমতার মোহে অসংখ্য পাপ কাজ করে। নিজেকে সর্বেসর্বা মনে করে। কিন্তু কারো এটা ভুলে যাওয়া উচিৎ নয় যে, পাপ করলে তার পতন অনিবার্য। * লোভ, লালসা, ষড়রিপুর আকর্ষণ মানুষকে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তাই এদের নিয়ন্ত্রণ করে ধর্ম ও মূল্যবোধকে জীবনের পথে পাথেয় করা উচিৎ। * উপন্যাসের অসংখ্য স্থানে সংযুক্ত করা হয়েছে কোরআনের আয়াত ও বাণী। যা সবাইকেই ধর্মীয় অনুশাসনের কথা মনে করিয়ে দিতে যথেষ্ট। ★ সম্পাদনা, বানান ও অন্যান্য : বইটি প্রকাশিত হয়েছে 'বইবাজার' প্রকাশনী থেকে। বইটির প্রোডাকশন, বাঁধাই, পৃষ্ঠার মান সবকিছুই চমৎকার। দীর্ঘ কলেবরের একটি বই হওয়া সত্ত্বেও দারুণ বাঁধাইয়ের জন্য পড়তে একটুও অসুবিধা হয়নি। বইয়ের সম্পাদনাও যথেষ্ট ভালো। তবে অল্প কিছু টাইপিং মিস্টেক রয়েছে। কিন্তু এসব সামান্য ত্রুটি উপন্যাসের সৌন্দর্য একটুও ম্লান করতে পারেনি এবং বই পাঠের আনন্দ উপভোগের ক্ষেত্রে কোনরূপ বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি। তবে ভুলের পরিমাণ খুব নগন্য হলেও পরবর্তী মুদ্রণে সেগুলো ঠিক করে নিলে বইয়ের মান আরও কিছুটা বৃদ্ধি পাবে বলেই আমার বিশ্বাস। ★ প্রিয় উক্তিসমূহ : দীর্ঘ কলেবরের গ্রন্থটিতে অসংখ্য প্রিয় উক্তি রয়েছে। তার মধ্যে কিছু উক্তি - ~ মনের কথা বাস্তব জ্ঞান আর যুক্তি না মেনে শুনলে ধ্বংস অনিবার্য। ~ পৃথিবীর সবচে কষ্টকর হলো প্রিয়জনের সামনে মুখোশ পরে থাকা। ~ স্বচ্ছতার নিজস্ব একটা অদ্ভুত আকর্ষণ আছে। ~ সময়ের গতি কখনো মানুষের অনুভবের তীব্রতার উপর নির্ভর করে। অনুভব যত তীব্র, সময় যেন তত মন্থর। ~ শুধু পাশে থাকার নাম ভালোবাসা নয়। মন থেকে কারো ভালোর মধ্যে বাসের নাম ভালোবাসা ; সব অবস্থায় প্রিয়জনকে আন্তরিকভাবে আগলে রাখার নাম ভালোবাসা। ~ ভালোবাসা মানুষের পরিবর্তন আনে না, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা মানুষের মধ্যে পরিমার্জন আনে। ভালোবাসা মানুষকে বদলায় না, তবে শোধরায়। ~ পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর ভাবনা বোধহয় কেউ আমার জন্য অপেক্ষায় আছে। ~ জীবনের বেশিরভাগ মোড় পরিবর্তনের মুহূর্তগুলো অনাড়ম্বরই হয়। অনুভবের গভীরতাই তাদের বিশেষ করে দেয়। ~ কিছু মানুষ একান্তভাবে কারোর একার হয় না। এর জন্য দায়ী সে থাকে না। ছেড়ে যাবার অভিযোগ দেওয়া সহজ হলেও ধরে রাখতে না জানার দায়টা এড়ানো যায় না। ~ ভালোবাসা তো বহমান নদীর মতো, জীবনের প্রয়োজনে গতিপথ বদলে ফেলে। তাই নতুন করে ভালোবাসা হতেই পারে ; হওয়াই উচিত। প্রথম ভালোবাসা আর তার পরিপূর্ণতা একসাথে মেলে না, তখন মন খণ্ডিত হয়ে রয় অতীত আর বর্তমানের মাঝে, তাদের জন্য দুইটা সত্য দুইটা সুন্দর। ★ বই পরিচিতি : বইয়ের নাম ~ দ্বিখন্ডিতা লেখক ~ শারমিন আঞ্জুম জনরা ~ সমকালীন সামাজিক উপন্যাস প্রকাশনী ~ বইবাজার প্রকাশনী প্রচ্ছদ ~ সাদিতউজ্জামান পৃষ্ঠা সংখ্যা ~ ৫৫১ প্রকাশকাল ~ বইমেলা ২০২৩ মুদ্রিত মূল্য ~ ১০০০ টাকা #বুকরিভিউ #দ্বিখণ্ডিতা "খন্ডিত হৃদয়ের আর্তনাদ সব সময় নীরবই হয়।" জীবনের চলার পথে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে, বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের সম্মুখীন হয়ে কিছু মানুষের হৃদয় হয়ে যায় খণ্ড-বিখণ্ড। ভালোবাসা-সংসার, প্রেম-ক্ষমতা, স্বপ্ন-দায়িত্ব ইত্যাদির মাঝে বিভক্ত হয়ে যায় তাদের হৃদয়ের অলিগলি। সেরকমই কিছু চরিত্রকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে লেখক শারমিন আঞ্জুমের উপন্যাস 'দ্বিখণ্ডিতা'। ★ প্রচ্ছদ ও নামকরণ : ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, ''Don't judge a book by it's cover."। একটি ভালো বইয়ের ক্ষেত্রে প্রচ্ছদ ও নামকরণের চেয়ে বইয়ের বিষয়বস্তু ও লেখনশৈলীই বেশি গুরুত্ব বহন করে। তবে বর্তমানে বেশিরভাগ পাঠকই সম্ভবত কোন বইয়ের প্রতি প্রথম আকর্ষণ অনুভব করে বইটির সুন্দর একটি নাম ও আকর্ষণীয় প্রচ্ছদের মাধ্যমে। 'দ্বিখণ্ডিতা' বইয়ের ক্ষেত্রে এই দুইটি উপাদানই যথেষ্ট আকর্ষণীয়। আপাতদৃষ্টিতে বইটির প্রচ্ছদে দেখে মনে হতে পারে যে প্রধান নারী চরিত্রকে প্রচ্ছদে চিত্রায়িত করা হয়েছে। কিন্তু সম্পূর্ণ বইটি পড়ার পরে পাঠকরা উপলব্ধি করবে যে বইয়ের কাহিনীর ও চরিত্রদের অনুভূতির চমৎকার প্রতিফলন ঘটেছে নামকরণ ও প্রচ্ছদের মধ্যে দিয়ে। ★ কাহিনী সংক্ষেপ : চতুর, ক্ষমতাধর এক মন্ত্রী শওকত দেওয়ানের বহুদিন ধরে গড়ে তোলা সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী বেপরোয়া জীবনযাপনকারী যুবক শামস। নিজের আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করার জন্য শওকত দেওয়ান নিজ পুত্রের অমতে তার সাথে বিবাহ ঠিক করে ধর্মপ্রাণ সুবহা জান্নাতের। নিজের হৃদয়ে অন্য কাউকে নিয়ে জীবন কাটানোর স্বপ্ন লালন করেও সুবহা ভাগ্যচক্রে বাঁধা পড়ে যায় নিজস্ব চিন্তাধারার বিপরীত এক যুবকের সাথে সংসার নামক মায়াজালে। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে নতুন জীবনকে আপন করে নেয়ার চেষ্টার মাঝেই তার জীবনে আগমন ঘটে অতীতের। ধর্মভীরু সুবহা কি পারবে অতীতের আগমনেও নিজের ধর্ম ও দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে অটল থাকতে? শামস ও সুবহা পারবে কি ভিন্ন চিন্তাভাবনার মানুষের সাথে নিজের জীবন অতিবাহিত করতে? এক সময় নিজের মনে অন্য কাউকে স্থান দেয়া সুবহা পারবে কি নিজের স্বামীকে ভালোবাসতে? সুবহার আগমনে শামসের নিজস্ব জীবনধারার কতটুকুই বা পরিবর্তন ঘটবে? অন্যদিকে আরিজ নিজের অতীত ও ভালোবাসার দ্বন্দ্বে হারিয়ে ফেলে জীবনের প্রিয় ভালোবাসার মানুষটিকে। একসময় তাকে খুঁজে পেলেও আবিষ্কার করে নতুন পরিচয়ে। অস্তিত্বের লড়াই আরিজকে এমন কিছু সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করায় যা তার হৃদয়কে করে তোলে খণ্ডিত। পারবে কি আরিজ বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে জীবনের কঠিন সত্যের সাথে লড়াই করতে? সময়ের পরিক্রমায় একসময় সবকিছুতে স্থিরতা আসে। শামস তার ব্লু সাফায়ের সাথে সুন্দর একটি জীবনের সূচনা করে। হয়তো সেখানেও মতের অমিল হতো, তবুও ছিল মানিয়ে চলার প্রচেষ্টা এবং সুবহার ধর্মের প্রতি বিশ্বাস। কিন্তু এক কালবৈশাখী ঝড়ে ওলট-পালট হয়ে যায় সবকিছু। ক্ষত-বিক্ষত হয় অসংখ্য হৃদয়! খন্ডিত হৃদয় কি কখনো জোড়া লাগে? কী হয় চরিত্রদের ভবিতব্য? জানতে হলে ডুব দিতে হবে 'দ্বিখণ্ডিতা' উপন্যাসের পাতায় পাতায়। ★ চরিত্র বিশ্লেষণ : সুবহা : ধর্মভীরু, ধৈর্যশীলা, আত্মসংযমী, সাহসী, সততা ও ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হৃদয়ের অধিকারী এক চরিত্র শেখ সুবহানা জান্নাত। অসংখ্য ঘাত-প্রতিঘাতে যার জীবন বারবার হয়েছে ক্ষত-বিক্ষত, হারিয়েছে জীবনের প্রিয় কিছুকে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রেখে সে সবসময় এগিয়ে গিয়েছে জীবনের পথে, ভেঙে পড়েও বারবার উঠে দাঁড়িয়েছে এক অদম্য সাহস নিয়ে। উপন্যাসের সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র নীল নয়নের অধিকারী এই নারী। শামস : উচ্ছল, বেপরোয়া, নিখুঁত সৌন্দর্যের অধিকারী এক চরিত্র মির্জা সাহির আলি দেওয়ান ওরফে শামস। পরিণতির তোয়াক্কা না করেই বিভিন্ন কাজ করা যার স্বভাব। জীবনে অসংখ্য নারীর আগমন ঘটলেও স্ত্রীর ভালোবাসার ছোঁয়া লেগেছিল যার জীবনে। কিন্তু স্বভাব কি সহজে পরিবর্তন করা যায়, যেখানে পদে পদে রয়েছে ক্ষমতা, অর্থ ও নারীসঙ্গের হাতছানি! আরিজ : সৎ, দ্বায়িত্ববান, কর্তব্য পরায়ণ, বুদ্ধিমান ও গাম্ভীর্যে পরিপূর্ণ এক চরিত্র মির্জা আরিজ আলি দেওয়ান। অন্তর্মুখী চরিত্রের এই যুবক সবসময় সমতা রক্ষা করে চলেছে নিজের দ্বায়িত্ব-কর্তব্য, পরিবার ও ভালোবাসার মধ্যে। তবুও আঘাতে জর্জরিত হতে হয়েছে অসংখ্য বার কিন্তু নিজ কর্মে ছিল সে একনিষ্ঠ। বহু নারীর জন্য আকাঙ্ক্ষিত চরিত্রের অধিকারী এই যুবক উপন্যাসের অন্যতম এক প্রিয় চরিত্র। নীলান্তিকা : উপন্যাসে সবচেয়ে কম সময়ের জন্য উপস্থিত হওয়া এই চরিত্র সম্ভবত পাঠকের হৃদয়ে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছে। এই মিষ্টি কন্যাটি ভালোবাসার মোহে বেঁধে রেখেছিল মনের একটি অংশকে। জুনায়েদ শেখ : উপন্যাসের আরেকটি পছন্দের চরিত্র। ধর্মপ্রাণ, দায়িত্ববান, সৎ চরিত্রের অধিকারী এক ব্যক্তি। সন্তানের প্রতি যার ভালোবাসা অপরিসীম। যার কর্মকাণ্ড বারবার তাকে শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছে। শওকত দেওয়ান : অর্থ ও ক্ষমতা লোভী এক চরিত্র। কুটিলতায় পরিপূর্ণ যার হৃদয়। নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এহেন ঘৃণ্য কর্ম নাই যা তিনি করেননি। নিজের সাফল্যের জন্য পরিবারের মানুষের ক্ষতি করতেও যিনি কখনো পিছপা হন না। যিনি উপন্যাসে আমার সবচেয়ে অপ্রিয় ও ঘৃণ্য চরিত্র। সারা : অর্থলোভী ও ঘৃণ্য চরিত্রের এক নারী সারা ইয়াসমিন আজিজ। যে নিজের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য অন্যের সংসার ভাঙতে উদ্যোগী হতে পারে, আবার বিকিয়ে দিতে পারে নিজকে। এছাড়াও উপন্যাসে রয়েছে আরও অসংখ্য চরিত্র। কারো উপস্থিতি হয়তো সল্প সময়ের জন্য, আবার কারো উপস্থিতি সম্পূর্ণ উপন্যাস জুড়ে। চরিত্রদের উপস্থিতি যেটুকু সময়ের জন্যই হোক না কেন সব চরিত্রগুলোই নিজ নিজ অবস্থানে যথার্থ। ★ পাঠ প্রতিক্রিয়া : মানব জীবনের সুন্দর এবং মধুর এক অনুভূতি হচ্ছে ভালোবাসা। আমরা যখন কাউকে ভালোবেসে মনের গহীনে স্থান দেই, তখন স্বপ্ন দেখি তার সাথে সারাজীবন একসাথে কাটানোর। কিন্তু চাইলেই কি এই জীবনের সব ইচ্ছে পূরণ হয়? সময়ের পরিক্রমায় হয়তো ভালোবাসার মানুষটি ছেড়ে চলে যায় আমাদের এবং নতুন কারো আগমন ঘটে আমাদের জীবনে। তখন অতীত ও বর্তমান দুটোই সত্য রূপে পাশাপাশি অবস্থান করে আমাদের মনে। দুটি অনুভূতিতে খন্ডিত হয়ে নীরবে আর্তনাদ করে অন্তর। সেই অনুভূতিকেই তুলে ধরা হয়েছে 'দ্বিখণ্ডিতা' উপন্যাসের মধ্যে দিয়ে। ধর্মীয় বিশ্বাস, পারিবারিক বন্ধন, সম্পর্কের টানাপোড়েন, অস্তিত্বের লড়াই, ভালোবাসা, ত্যাগ, স্বপ্ন ভঙ্গের কষ্ট, ইচ্ছে পূরণের আনন্দ, বাস্তবতার কষাঘাত ইত্যাদির অদ্ভুত এক যোগসূত্রে রচিত হয়েছে উপন্যাসটি। উপন্যাসটিতে তুলে ধরা হয়েছে আমাদের ঘুণে ধরা সমাজের কিছু কদর্য রূপ। অর্থ-সম্পত্তির লোভ, ক্ষমতার অপব্যবহার, খুন, সন্ত্রাস, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ইত্যাদি সবকিছু তুলে ধরা হয়েছে দক্ষতার সাথে। উপন্যাসের চরিত্রদের জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না বারবার নাড়া দিয়ে যাচ্ছিল হৃদয়কে। কিছু চরিত্রের পরিণতি মনে আনন্দের উদ্রেক ঘটালেও কিছু চরিত্রের পরিণতি করে তুলছিল বিমূঢ়। ধর্মের পথে চললেও অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয় কিন্তু নিজ বিশ্বাসে অটল থাকতে হয়। সুবহা চরিত্রটি সে কথা বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিল। সব প্রতিকূলতায়ও শামস ও আরিজের ভাতৃত্বের বন্ধন ছিল মুগ্ধ করার মতো। লেখকের লেখনশৈলী মুগ্ধ করার মতো। উপযুক্ত শব্দচয়ন, পারিপার্শ্বিক পরিবেশের চমৎকার বর্ণনা ও চরিত্রদের মনের অনুভূতির প্রকাশ উপন্যাসের ঘটনাবলীকে চোখের সামনে জীবন্ত করে তুলছিল। বেশ সাবলীল বর্ণনা ছিল সম্পূর্ণ উপন্যাস জুড়ে। বেশ দীর্ঘ কলেবরের উপন্যাস হওয়া সত্ত্বেও উপন্যাসের কোনো অংশকে অপ্রয়োজনীয় বা অতিরঞ্জিত বলে মনে হয়নি। লেখকের বর্ণনাশৈলী পাঠককে আকৃষ্ট করার জন্য যথেষ্ট আকর্ষণীয়। উপন্যাসটির সূচনা আমাদের সমাজ জীবনের সাধারণ এক ঘটনার মধ্যে দিয়ে। কিন্তু উপন্যাসের কাহিনী যত বিস্তৃত হয়েছে ততই যেন অদ্ভুত এক আকর্ষণ অনুভব করছিলাম। অঘোম কৌতূহল আমাকে টেনে নিয়ে গিয়েছে উপন্যাসের সমাপ্তি পর্যন্ত। এই যাত্রা পথে মনের মধ্যে বিভিন্ন মুহূর্তে সৃষ্টি হয়েছে আনন্দ, বেদনা, রাগ, অভিমান, বিষণ্নতাসহ অসংখ্য অনুভূতির। উপন্যাসটি শেষ হওয়ার পরেও যার রেশ রয়ে গিয়েছিল বহুক্ষণ। অকল্পনীয় এক সমাপ্তি নাড়িয়ে দিয়েছে হৃদয়কে। সবমিলিয়ে সুখপাঠ্য এক উপন্যাসের নাম 'দ্বিখণ্ডিতা'। ★ শিক্ষণীয় দিক : সাহিত্যকে আমাদের সমাজের দর্পণ রূপে অভিহিত করা হয়। সমাজের বিভিন্ন দিককে শিক্ষণীয়রূপে সাহিত্যে ফুটিয়ে তোলা হয় সেই সাহিত্যের অন্তর্গত বিভিন্ন চরিত্রের জীবনে ঘটা বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে দিয়ে। দ্বিখণ্ডিতাও এর ব্যতিক্রম নয়। * কোনো দাম্পত্য সম্পর্কে ভালোবাসা থাকলেই সেই সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয় না। সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের উপর বিশ্বাস, সম্মান, ভালোবাসা যেমন থাকা প্রয়োজন ; তেমনি প্রয়োজন একে অপরের বিশ্বাস রক্ষা করার মানসিকতা। * জীবনে অসংখ্য বাধা-বিপত্তি আসে কিন্তু কখনো ভেঙে পড়া উচিৎ নয়। সবসময় সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রেখে এগিয়ে যেতে হবে সাহসের সাথে। * মানুষ অর্থ ও ক্ষমতার মোহে অসংখ্য পাপ কাজ করে। নিজেকে সর্বেসর্বা মনে করে। কিন্তু কারো এটা ভুলে যাওয়া উচিৎ নয় যে, পাপ করলে তার পতন অনিবার্য। * লোভ, লালসা, ষড়রিপুর আকর্ষণ মানুষকে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তাই এদের নিয়ন্ত্রণ করে ধর্ম ও মূল্যবোধকে জীবনের পথে পাথেয় করা উচিৎ। * উপন্যাসের অসংখ্য স্থানে সংযুক্ত করা হয়েছে কোরআনের আয়াত ও বাণী। যা সবাইকেই ধর্মীয় অনুশাসনের কথা মনে করিয়ে দিতে যথেষ্ট। ★ সম্পাদনা, বানান ও অন্যান্য : বইটি প্রকাশিত হয়েছে 'বইবাজার' প্রকাশনী থেকে। বইটির প্রোডাকশন, বাঁধাই, পৃষ্ঠার মান সবকিছুই চমৎকার। দীর্ঘ কলেবরের একটি বই হওয়া সত্ত্বেও দারুণ বাঁধাইয়ের জন্য পড়তে একটুও অসুবিধা হয়নি। বইয়ের সম্পাদনাও যথেষ্ট ভালো। তবে অল্প কিছু টাইপিং মিস্টেক রয়েছে। কিন্তু এসব সামান্য ত্রুটি উপন্যাসের সৌন্দর্য একটুও ম্লান করতে পারেনি এবং বই পাঠের আনন্দ উপভোগের ক্ষেত্রে কোনরূপ বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি। তবে ভুলের পরিমাণ খুব নগন্য হলেও পরবর্তী মুদ্রণে সেগুলো ঠিক করে নিলে বইয়ের মান আরও কিছুটা বৃদ্ধি পাবে বলেই আমার বিশ্বাস। ★ প্রিয় উক্তিসমূহ : দীর্ঘ কলেবরের গ্রন্থটিতে অসংখ্য প্রিয় উক্তি রয়েছে। তার মধ্যে কিছু উক্তি - ~ মনের কথা বাস্তব জ্ঞান আর যুক্তি না মেনে শুনলে ধ্বংস অনিবার্য। ~ পৃথিবীর সবচে কষ্টকর হলো প্রিয়জনের সামনে মুখোশ পরে থাকা। ~ স্বচ্ছতার নিজস্ব একটা অদ্ভুত আকর্ষণ আছে। ~ সময়ের গতি কখনো মানুষের অনুভবের তীব্রতার উপর নির্ভর করে। অনুভব যত তীব্র, সময় যেন তত মন্থর। ~ শুধু পাশে থাকার নাম ভালোবাসা নয়। মন থেকে কারো ভালোর মধ্যে বাসের নাম ভালোবাসা ; সব অবস্থায় প্রিয়জনকে আন্তরিকভাবে আগলে রাখার নাম ভালোবাসা। ~ ভালোবাসা মানুষের পরিবর্তন আনে না, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা মানুষের মধ্যে পরিমার্জন আনে। ভালোবাসা মানুষকে বদলায় না, তবে শোধরায়। ~ পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর ভাবনা বোধহয় কেউ আমার জন্য অপেক্ষায় আছে। ~ জীবনের বেশিরভাগ মোড় পরিবর্তনের মুহূর্তগুলো অনাড়ম্বরই হয়। অনুভবের গভীরতাই তাদের বিশেষ করে দেয়। ~ কিছু মানুষ একান্তভাবে কারোর একার হয় না। এর জন্য দায়ী সে থাকে না। ছেড়ে যাবার অভিযোগ দেওয়া সহজ হলেও ধরে রাখতে না জানার দায়টা এড়ানো যায় না। ~ ভালোবাসা তো বহমান নদীর মতো, জীবনের প্রয়োজনে গতিপথ বদলে ফেলে। তাই নতুন করে ভালোবাসা হতেই পারে ; হওয়াই উচিত। প্রথম ভালোবাসা আর তার পরিপূর্ণতা একসাথে মেলে না, তখন মন খণ্ডিত হয়ে রয় অতীত আর বর্তমানের মাঝে, তাদের জন্য দুইটা সত্য দুইটা সুন্দর। ★ বই পরিচিতি : বইয়ের নাম ~ দ্বিখন্ডিতা লেখক ~ শারমিন আঞ্জুম জনরা ~ সমকালীন সামাজিক উপন্যাস প্রকাশনী ~ বইবাজার প্রকাশনী প্রচ্ছদ ~ সাদিতউজ্জামান পৃষ্ঠা সংখ্যা ~ ৫৫১ প্রকাশকাল ~ বইমেলা ২০২৩ মুদ্রিত মূল্য ~ ১০০০ টাকা

      By Farsia Mahmud

      07 Mar 2023 08:02 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      ★বই বৃত্তান্ত: -------------------- বই: দ্বিখন্ডিতা লেখক: শারমিন আঞ্জুম জনরা: সমকালীন সামাজিক উপন্যাস প্রকাশনী: বইবাজার প্রচ্ছদ: সাদিতউজ্জামান পৃষ্ঠা:৫৫১ প্রকাশকাল: বইমেলা ২০২৩ মুদ্রিত মূল্য: ১০০০ টাকা ★নামকরণও প্রচ্ছদকথন: ---------------------------------------- প্রবাদ আছে " নামে কিবা আসে যায়।" একটি বইয়ের ক্ষেত্রে নাম মুখ্য না হলেও গৌণ ও নয় পুরোপুরি।দ্বিখন্ডিতা মুলত সুবহানা জান্নাতের খন্ডিত হৃদয়ের আখ্যান।বইটি পাঠশেষে প্রত্যেক পাঠক উপলব্ধি করবে নামটি এ বইয়ের জন্য পুরোপুরি যৌক্তিক। এরচেয়ে অধিক যথাযথ অন্য নাম হতেই পারেনা। প্রচ্ছদটি যখন প্রকাশিত হয় হুট করে দেখেই এত ভালো লেগেছিল।অবগুন্ঠিত, ব্লু সাফায়ারের মতো নীল নয়নের অধিকারী নারীটি যে সুবহানা জান্নাত তা বলার অপেক্ষা থাকেনা।বেদনার রঙ নীল বলেই বোধকরি নীল নয়না নীল হিজাবে প্রচ্ছদে দৃশ্যমান। ভীষণ নজরকাড়া এ প্রচ্ছদটি।খন্ডিত হৃদয়ের নিদর্শন ও প্রচ্ছদে চমৎকারভাবে অঙ্কিত।এককথায়, চোখে লাগা ও মনে লাগার মতো একটি প্রচ্ছদ। ★কাহিনী সংক্ষেপ: --------------------------- দ্বিখন্ডিতা তিনজন মানব মানবীর হৃদয় খন্ডিত হবার গল্প।দুজন রাজপুত্র আর একটি রাজকন্যার গল্প।পর্দাশীলা, ধর্মভীরু সুবহানা জান্নাত ও উগ্র, বেপরোয়া শামস এবং ভদ্র, ধৈর্য্যশীল আরিজ এর হৃদয় খন্ডিত হবার গল্প। লোভী, নিষ্ঠুর, ধূর্ত শওকত দেওয়ান এ রাজত্বের রাজা। যার আড়ালের একটি পরিকল্পনায় বদলে যায় কারো জীবনের গন্তব্য, কারো ভবিতব্য। ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় বহুদিনের লালিত স্বপ্ন। সুবহা ও শামস দুজন সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাক্তিত্বের মানুষ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। অতীত জীবনে সুবহার হৃদগহীনে অন্য কারো বাস থাকলেও বিবাহের পরে স্বামীই হয় ধ্যান জ্ঞান, যদিও এক গৃহে অন্য মানুষটির উপস্থিতিতে কিঞ্চিৎ কঠিন স্বাভাবিক জীবনযাপন করা তবুও সুবহানা জান্নাত কখনো প্রশ্রয় দেয়নি অতীতকে, অতীতের অনুভূতিকে। বিপরীতধর্মী হওয়া সত্ত্বেও শামস ও সুবহার মাঝে পবিত্র প্রণয়ের সৃষ্টি হয়। নীল নয়নের প্রতি মুগ্ধ শামস স্ত্রীকে ব্লু সাফায়ার সম্বোধন করে।স্বামীর অগাধ ভালোবাসায় সুবহাও মুগ্ধ, স্বামীর প্রতি একনিষ্ঠ এবং প্রণয়ে নিমজ্জিত। কিন্তু জীবন কখনো সমান্তরালে আগায়না। হঠাৎ, সুবহানা জান্নাতের জীবনেও কালবৈশাখী ঝড় আসে।সেই ঝড় সুবহানা জান্নাতের হৃদয় দ্বিখন্ডিত করে ফেলে।তবুও সৃষ্টিকর্তার প্রতি গভীর বিশ্বাসে ও আস্থায় সে অটল,অবিচল থাকে।কারো শত প্রচেষ্টাও তাকে মাথা নত করাতে পারে না। সুবহানা জান্নাতের দ্বিখন্ডিত হৃদয় কি আর কখনো জোড়া লাগবে? সুবহা, শামস, আরিজের শেষ গন্তব্য কী? কী হবে তাদের জীবনের পরিণতি? ★পাঠ অনুভূতি: ------------------------- দ্বিখন্ডিতা অনলাইন ভার্সন পড়ার পর থেকেই চাতক পাখির মতো বসে ছিলাম এবং হাতে পেয়েই ঝাপটে পড়েছি কিন্তু সময় নিয়ে ধীরে ধীরে পড়েছি, প্রতিটি মুহুর্ত তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেছি । আবেগী মানুষ হওয়ার দরুণ খরায় ফাটা জমিনের মতো আমার হৃদয়ও ফেটে চৌচির হয়ে গিয়েছে।কিছু মুহুর্তে দমবন্ধ হয়ে আসছিল আবার কখনো নেত্রকোণে অশ্রু জড়ো হয়ে নীরবে পতিত হয়েছে।পরক্ষণেই উচ্চরবে কেঁদে উঠেছি। এ বইয়ের চরিত্রদের পরিণতি নিয়ে অনুমান করেছিলাম।কিন্তু খানিকও মিলেনি, আর এটাই সবচেয়ে ভালো লেগেছে।অচিন্তনীয় সমাপ্তি। কাহিনীর ধারাবাহিকতাও অনুমানের বাহিরে। প্রকৃতপক্ষে, লেখকের লিখনী এত চমৎকার, সুনিপুণ এবং আকর্ষণীয় যা শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায়। হৃদয়ের আকুলতা, ব্যাকুলতা শেষ হয় পুরো বইয়ের সমাপ্তিতে, এর পূর্বে নয়।গল্পের গাঁথুনি এত শক্ত, দূর্দান্ত প্লট যে মন আচ্ছন্ন হয়ে থাকে।নিজের অজান্তেই কাহিনীর মধ্য প্রবেশ করে ইহজাগতিক সকল চিন্তা থেকে শতক্রোশ দূরে হারিয়ে গিয়েছিলাম। মোহগ্রস্থ হয়ে কেবল এরপরেরটুকু জানার আকাঙ্খায় ছিলাম। কঠিন মানুষের হৃদয়ও নাড়িয়ে দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে এ বইয়ের।বইটি এত বেশি আকৃষ্ট করেছিল, মনে হচ্ছিল আমি নিজেই বইয়ের একটি চরিত্র। চক্ষুদর্পণে অন্য একটা জগত তৈরি হয়েছিল আর চক্রাকারে আবর্তিত হতে লাগল বিভিন্ন ঘটনা।রাত্রে ঘুমের ব্যঘাতও ঘটেছে চরিত্রদের পরিণতিতে কষ্ট পেয়ে।তাদের সুখ, দুঃখ, যন্ত্রণা, প্রতারণা,উত্থান, পতন ভয়াবহভাবে হৃদয়ে দাগ কেটেছে। বস্তুত, বইটি পড়ার সময় আমার মিশ্র অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে। কখনো রাগান্বিত হয়েছি, কখনো আক্রোশে ফেটে পড়েছি। কখনো আরক্তিম হয়েছি।কখনো ঘৃণা,বেদনায় কাতর হয়েছি। কখনো শিহরিত হয়েছি।কিছু ঘটনায় বাকরুদ্ধ হয়ে পরেছি।কখনো দমবন্ধ হয়ে আসছিল।আবার কখনো কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে বসে ছিলাম। কিছু চরিত্রের পরিণতিতে হৃদয় এফোঁড়ওফোঁড় হয়েছে। তবে মর্মচক্ষু দিয়ে মূল্যায়ন না করে চর্মচক্ষু দিয়ে করলে পুরোপুরি যথাযথ মনে হয়। প্রেম,কাম, ক্রোধ, রাজনীতি, ক্ষমতার লড়াই,সম্পর্কের টানাপোড়েন, অন্যায়,বিচ্ছেদ সবকিছুর মিশ্র এক ম্যাজিক বক্স।মাধূর্যপূর্ণ উক্তিসমূহ, অচিন্তনীয় সব চমক, মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা সব মিলিয়ে হৃদয়ে দাগ কাটার মতো উপন্যাস। একজন প্র‍্যাকটিসিং মুসলিম নারীর পর্দা, জীবনধারা দেখে অন্যদের যে কটুক্তি, বক্রোক্তি তা লেখক সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। অধিকাংশ সময়েই মানুষের তীর্যক দৃষ্টি এবং বক্র কথার সম্মুখীন হতে হয় তাও আলোকপাত করেছেন। এ বইয়ের সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয়টি হচ্ছে, জীবনে শত উত্থান, পতন, ঘাত, প্রতিঘাত আসার পরেও আরিজ আর শামসের দৃঢ় বন্ধন ভঙ্গুর হয়নি কখনো। যে বইগুলো আমার খুব বেশি হৃদয়ে গেঁথে যায়।পাঠের সময় এবং শেষেও বিভোর হয়ে থাকি সেসব বইয়ের সঠিক অনুভুতি আমি প্রকাশ করতে পারিনা। কিছু কমতি রয়েই যায়।এ বইয়ের ক্ষেত্রেও তেমন। অনুভূতির সঠিক মাত্রা আমি লিখে বুঝাতে অপারগ। পরিশেষে, লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ এত চমৎকার একটি বই পাঠককে উপহার দেয়ার জন্য। ভবিষ্যতে দ্বিখন্ডিতাকে বিট করবে এমন আরো অসংখ্য বই চাই।আরো অগণিতবার উচ্চরবে কাঁদতে চাই, বইয়ের কাহিনীতে অবগাহন করতে চাই। ★চরিত্র বিশ্লেষণ : ------------------------- ?সুবহা: ------------- পর্দাশীলা,আল্লাহভীরু,সাহসী এক নারী। নীল নয়নের অধিকারী নারীটি সংযমী, ধৈর্য্যশীল। নামের মতোই উজ্জ্বল, স্নিগ্ধ, সুন্দর এক চরিত্র। জীবনে বহুবার আঘাতে জর্জরিত হয়ে পড়লেও এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসে অনড়, অবিচল। সৃষ্টিকর্তার প্রতি আস্থা, ভরসায় কখনো চির ধরেনি। সুবহানা জান্নাত হৃদয়ে ভীষণ গভীর দাগ কেটেছে, যার কথা স্মরণ করলে বক্ষস্থলে চিনচিনে ব্যথার উদ্রেক ঘটে একইসাথে স্নিগ্ধ অনুভূতির সৃষ্টি হয়। এই চরিত্রটিকে নিয়ে সঠিক অনুভুতি আমি লিখে প্রকাশ করতে পারব না।শুধু বলব, এ বইয়ে আমার সবচেয়ে পছন্দের চরিত্র এবং প্রচন্ড ভালোবাসি আমি এ চরিত্রটিকে। ?শামস: --------------- উগ্র, বেপরোয়া, উন্নাসিক এক যুবক। যার প্রতিপত্তি, ক্ষমতা নিয়ে অহমিকায় ভরা হৃদয়। নারীদের প্রতি আকর্ষণে জীবনে বেশ কয়েকজন নারীর আগমন ঘটে। কিন্তু, স্ত্রী সুবহানা জান্নাতকেই তিনি প্রকৃতপক্ষে ভালোবেসেছিলেন।শামস যতবার জান্নাতকে ব্লু সাফায়ার সম্বোধন করেছে ততবারই অন্তকরণ আন্দোলিত হয়েছে। এত ভালোবেসে,এত মধুর স্বরেও ডাকা যায়! অতি আধুনিক হলেও প্রকৃতপক্ষে সে খাঁটি নির্বোধ নয়ত কোহিনুর রেখে কেউ মরিচীকার পিছনে ছুটে না। বন্ধুবৎসল হওয়ার দরুন এবং অসৎ বন্ধুদের কুপ্ররোচনায় জীবনের অমূল্য বেশ কয়েকজন মানুষকে হারিয়ে ফেলে। তবে,শামসের ব্যাক্তিত্বে চৌম্বকীয় আবেদন রয়েছে যা অল্পবিস্তর প্রত্যেক পাঠককেই আকর্ষণ করবে। শামসের প্রতি মিশ্র অনুভূতি হয়েছে। কখনো রাগ হয়েছে, কখনো মুগ্ধ হয়েছি, কখনো ক্ষোভ প্রকাশ করেছি, কখনো ঘৃণা হয়েছে। পরিশেষে একরাশ মায়া ছাড়া আর কিছু পাইনি আমি। অনলাইনে পড়াকালীন শামস আমার প্রিয় চরিত্র ছিল এখনো আছে কিন্তু সে জায়গাটা কিঞ্চিৎ ঝাপসা হয়ে গিয়েছে। ?আরিজ: ------------------- আরিজ ভদ্র, জ্ঞানী,সৎ,বুদ্ধিমান, কঠোর ব্যাক্তিত্ববান,কর্তব্যপরায়ণ, দায়িত্বশীল, অন্তর্মুখী স্বভাবের এক যুবক। নিঁখুত গাম্ভীর্যে ভরা মুখাবয়ব, বনেদিআনা আচরণে আকর্ষণীয় একটি চরিত্র। পিতার বাধ্য সন্তান, ভাইয়ের প্রতি স্নেহশীল এবং প্রিয়তমার প্রতি একনিষ্ঠ।কর্মক্ষেত্রেও দারুনভাবে সফল একজন ব্যাক্তি।বস্তুত, সে একজন সুপারম্যান যে এক নিমিষেই সব সমস্যা সমাধান করতে পারে।সব রহস্য উদঘাটন করে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসতে পারে। কঠোর ব্যাক্তিত্বের দেয়াল তুলে রাখা এ মানুষটির হৃদয়ের গহীনে খুব কম মানুষকেই প্রবেশাধিকার দিয়েছে।কেবল ভালোবাসার মানুষদের ঠাই হয়েছে। আরিজ এমন একটি চরিত্র যার প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা, মুগ্ধতা, ভালোবাসা সবকিছু অনুভুত হয়।একজন শুদ্ধ পুরুষ। বলা বাহুল্য, নারীদের জন্য বহুল আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের পুরুষ। কেননা, ভালোবাসার প্রতি একনিষ্ঠ কাউকেই প্রত্যেক নারী কামনা করে।দ্বিখন্ডিতা বইয়ের অন্যতম পছন্দের একটি চরিত্র। ?শওকত দেওয়ান: ------------------------------ কিছু মানুষ থাকে যারা আমৃত্যু অন্যায়ে বুঁদ হয়ে থাকে।শওকত দেওয়ানও এর ব্যাতিক্রম নয়। প্রচন্ড ধূর্ত, লোভী, ক্ষমতাবান, কুটিল একটি চরিত্র।এই বইয়ের সবচেয়ে ঘৃণ্য চরিত্র। তিনি নিষ্পাপ কাউকে যেমন ছেড়ে দেয়নি তেমনি নিজ সন্তানকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিতেও পিছপা হন নি। এই চরিত্রটিকে প্রচন্ড ঘৃণা করি। ঘৃণা ব্যতীত আর কোনো অনুভূতি তার প্রাপ্য নয়। ?সারা: ------------- আমাদের আশেপাশে এমন কিছু নারী রয়েছে যারা প্রচন্ড অর্থলোভী এবং নির্লজ্জ স্বভাবের।যাদের জীবনের লক্ষ্যই হচ্ছে পুরুষদের আকর্ষণ করা, বাহ্যিক রূপকে তুরুপের তাস বানিয়ে পুরুষদের বশীভূত করা।সারা চরিত্রটি ঠিক এর অনুরূপ। নর্দমার কীট এসব নারীরা। ঘৃণা শব্দটাও কম হয়ে যায় এমন ঘৃণ্য চরিত্রের জন্য। ?জুনায়েদ শেখ: ------------------------- জুনায়েদ শেখ ধার্মিক, ধৈর্য্যশীল, সৎ একজন মানুষ। পালক কন্যা হওয়া সত্ত্বেও সুবহার প্রতি যার সীমাহীন স্নেহ, ভালোবাসা লক্ষণীয় । কন্যার জীবনের সকল আঘাত,যন্ত্রণা, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মাথার উপর বটবৃক্ষ হয়ে ছায়া দিয়ে গেছেন।নিজ যুক্তি দিয়ে স্বান্তনা দিয়েছেন। স্নেহের পরশে সন্তানের দ্বিখন্ডিত হৃদয়ের যন্ত্রণা প্রশমিত করার প্রয়াশ করেছেন। বাবার সংজ্ঞা তো এমনই ঠিক জুনায়েদ শেখ এর মতো। ভীষণ শ্রদ্ধার এবং পছন্দের একটি চরিত্র। ?নীলান্তিকা: -------------------- মাখনের মতো মিস্টি, পিচফলের মতো ফোলা ফোলা গাল, নীল মনির ছোট ফর্সা বাচ্চা। ভীষণ আদুরে এ বাচ্চাটির উপস্থিতি খুবই কম থাকলেও উপন্যাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র। ছোট্ট নীলান্তিকা আমার হৃদয়ে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছে। নীলান্তিকার কথা আমার অনেকদিন মনে থাকবে।হৃদয়ে গেঁথে যাওয়া একটা চরিত্র। ?নামিরা: ---------------- পর্দাশীলা,ধীর, স্থির নামিরার বোনের প্রতি অগাধ সম্মান ও ভালোবাসা রয়েছে।সুবহার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়ে আগলে রেখেছিল নামিরা। বোনের পাশে থেকে, বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে আশ্বস্ত করে মনোবল বাড়িয়ে ছিল। মায়ের অভাব বুঝতে না দিয়ে দুহাতে বোনকে যত্ন করে, সব কটুক্তির উচিত জবাব দিয়ে ঢাল হয়ে দাড়িয়েছিল। স্নিগ্ধ, সুন্দর চরিত্র নামিরা। দ্বিখন্ডিতা বইয়ের পছন্দের চরিত্রদের একজন। ★লিখনশৈলী: -------------------- একজন লেখকই কেবল পারেন একটি সাধারণ পটভূমির বইকেও নিজ লিখনী দ্বারা অসাধারণ করে উপস্থাপন করতে।কিন্তু, দ্বিখন্ডিতা বইয়ের লেখক শারমিন আঞ্জুমের লিখনী যেমন অনবদ্য তেমনি বইয়ের প্লট দূর্দান্ত। চমৎকার লিখনশৈলী এবং দারুণ প্লটের মেলবন্ধনে বইটি অনন্য হয়েছে। সংলাপ, শব্দচয়ন,বাক্যগঠন, কাহিনীর গাঁথুনি এত আকর্ষণীয় ও চমৎকার যা পাঠকমনকে দৃঢ়ভাবে আটকে রাখে। মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে অন্তকোণ।একজন লেখকের সার্থকতা এখানেই তার লিখনী পাঠককে বইয়ের শেষ পর্যন্ত নিয়ে যায়। লেখক শারমিন আঞ্জুম এক্ষেত্রে দারুণভাবে সফল হয়েছেন।বইয়ের সমাপ্তি শেষেও মানসপটে বইটি বেশকিছু দিন বিচরণ করে এবং সারাজীবনের জন্য হৃদয়ে সিলগালা হয়ে বন্দি হয়ে গিয়েছে। আর এর সম্পর্ণ কৃতিত্ব লেখকের। ★প্রিয় উক্তিসমূহ: ------------------------- ?কখনো অনেক সুন্দর বিষয় উপভোগ্য থাকে না, যখন পরিবেশ বৈরি। ?কিছু কিছু কথা থেকে যায় স্বচ্ছ কাপড়ে মোড়া গোপন উপহারের মতো। ?অভিমানের অধিকার খর্ব হলে জবাবদিহিতার দায়টাও থাকে না। ?কোনো বস্তু নিয়ে অতিমাত্রায় মোহ স্রস্টা পছন্দ করেন না। ?কখনো কখনো হেরে যাওয়া এড়াতে জিতে যাওয়ার অভিনয় করতে হয়। ?সত্যির ধর্ম অদম্য,আগুণের মতো;ঢেকেও ঢেকে না। প্রকাশিত হতে চায় প্রতিনিয়ত। ?শান দেওয়া তলোয়ারও সময় শেষে ধার চলে যায়। ?মাই ওয়াইফ ইজ নট এন এক্সচেঞ্জেবল অবজেক্ট। ?কিছু ক্ষরণ কখনো থামে না তবে সময় ক্ষেপণে ধীরে ধীরে সয়ে যায়। ?সময় পরিবর্তনে জীবনে প্রাধ্যান্যর মর্ম বদলে যায় ?একজন ছেড়ে চলে গেছে এ ভাবনার চেয়ে কখনো সে পাশে ছিল, আর যতক্ষণ ছিল সময়টা অসাধারণ ছিল এই বোধটা অনেক বেশি সুন্দর! কারণ, এই জগতে চিরন্তন কেউ নয়। ?কিছু মায়া ম্লান না করলে নতুন মায়ার জাল তৈরি হয় না। ?ভালোবাসা কখনো ফিরিয়ে নেওয়া যায় না, কখনো মরে যায় না জান্নাত।রাশি রাশি ঘৃণার মাঝেও এক বিন্দু হয়েও ভালোবাসা বেঁচে থাকে। ★শিক্ষণীয় দিক: ----------------------- ?ঘটনার ধারাবাহিকতায় রেফারেন্সসহ বিভিন্ন কোরআনের বাণী উল্লেখ প্রশংসনীয়। ?এ বইয়ের মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যাগুলো চমৎকার। যা নতুন করে অনেককিছু ভাবতে বাধ্য করে, অনেককিছু শেখায়। ?সময় গেলে সাধন হয়না তাই সময় থাকতেই ভুল শোধরাতে হবে নতুবা আজীবন পস্তাতে হবে। ?পাপ এর শাস্তি সবাইকেই পেতে হয় এবং তা ভয়াবহ কঠিন। ?কিছু কিছু ভুলের শাস্তি আজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। ?আল্লাহ যা আমাদের জীবন থেকে কেড়ে নেন তার দ্বিগুণ ফিরিয়ে দেন এজন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তার উপর অগাধ ভরসা রাখতে হবে। ?স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে ভালোবাসার পাশাপাশি থাকতে হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সম্মান, বিশ্বাস। সম্পর্কের যত্ন নিতে হবে নতুবা ফাঁকফোকর দিয়ে তৃতীয় কেউ প্রবেশ করে সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলবে। ?কোনোকিছুকেই জীবনে বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ভাবা যাবেনা।এ অবলম্বনটি কোনোক্রমে হারিয়ে গেলে জীবন কঠিন হয়ে পরে। ?জীবনে যত জটিল পরিস্থিতি আসুক ধীর, স্থির হয়ে থাকতে হবে এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে। ?ষড়রিপুকে নিয়ন্ত্রণ এ রাখার প্রচেষ্টা করতে হবে কারণ এগুলো একজন মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। ★প্রোডাকশন কোয়ালিটি : -------------------------------------- বইবাজার প্রকাশনীর বেশ কয়েকটি বই পড়া হয়েছে। তাদের প্রোডাকশন মধ্যমমানের থাকায় এ বইটি নিয়েও তেমন আশা রাখিনি।কিন্তু বই হাতে পেয়ে বিস্মিত হয়েছি। রয়্যাল সাইজের এ বইটির বাইন্ডিং বেশ ভালো। পৃষ্ঠার মানও ভালো। বইয়ের আকার অনুযায়ী দাম নির্ধারণ ও তুলনামুলক কম।এতবড় বই কিন্তু পড়তে বেশ স্বস্তি লেগেছে। প্রচ্ছদের সাথে মিল রেখে চমৎকার বুকমার্ক এবং বইয়ের প্রচ্ছদ ও উক্তি সম্বলিত চাবির রিং এর ব্যবস্থাও প্রশংসনীয়। এক্ষেত্রে বইবাজার এর প্রোডাকশন কোয়ালিটি বেশ তৃপ্তিদায়ক। ★খানিক ভুল ত্রুটি: ----------------------------- হাতেগোণা অল্প কিছু ভুল চোখে পরেছে।বেশকিছু জায়গায় আরিজ এর নামের স্থানে আরিফ চলে এসেছে।কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত চিহ্নিত করা হয়নি। এছাড়া ৩৭০ পৃষ্টায়, পটাশিয়াম নাইট্রেড এর জায়গায় পটাশিয়াম নাইট্রেট, এমোনিয়াম নাইট্রেড এর স্থানে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট হবে। এছাড়া বড় কোনো ক্রুটি চোখে পড়েনি। ★ব্যাক্তিগত মতামত: ------------------------------ প্রতিটি বইপ্রেমী পাঠকের এ বইটি পড়া উচিত।এটি একটি অবশ্যপাঠ্য বই ।এ বইয়ের শিক্ষা বাস্তব জীবনে কাজে লাগানো উচিত।বই পড়ে যেভাবে কেঁদেছি বাস্তব জীবনে যেন কাঁদতে না হয় কাউকে। বইটিকে ত্রিকোণ প্রেমের উপন্যাস ভেবে অথবা পরকীয়াকেন্দ্রিক ভেবে কেউ এড়িয়ে গেলে দারুণ কিছু মিস করে ফেলবেন। ধর্মীয় বিভিন্ন দিক, কোরআনের বাণী এবং একজন প্র‍্যাকটিসিং মুসলিমের জীবনধরন, প্র‍্যাকটিসিং মুসলিম পরিবারগুলোর নিয়মকানুন, অনুশাসন উল্লেখ থাকলেও অন্য ধর্ম এবং ধর্মাবলম্বী কেউ বিব্রত হতে পারে এমন কিছু বইয়ে নেই।সব ধর্মের মানুষই স্বস্তির সাথে এ বইটি পড়তে পারবে এবং দ্বিখন্ডিতার এ সফর উপভোগ করতে পারবে। বইটির যবনিকার দ্বারপ্রান্তে এসে কারো সময় ও অর্থ নষ্ট হয়েছে এমন বোধ আসবে না।উপরন্তু, দারুণ কিছু মুহুর্তের সাক্ষী হবে। হৃদয়ে গেঁথে থাকবে বইটি,বইয়ের চরিত্রগুলো। লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন একটি বই পড়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য। রিভিউ শেষ করছি বইয়ের সবচেয়ে পছন্দের এবং হৃদয়গ্রাহী উক্তিটি দিয়ে, "খন্ডিত হৃদয়ের আর্তনাদ সব সময় নীরবই হয়" ★ব্যাক্তিগত রেটিং: ৯.৮/১০ (রিভিউকারী: ফারসিয়া মাহমুদ)

      By Himadree Morshed

      06 Mar 2023 10:29 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      #বই_রিভিউঃদ্বিখন্ডিতা লেখকঃ শারমিন আঞ্জুম প্রকাশনাঃ বই বাজার প্রচ্ছদঃ সাদিত উয জামান আমি আসলে সুন্দর করে গুছিয়ে লিখতে পারিনা। আর বই রিভিউ আমার কাছে অনেক কঠিন মনে হয়। পুরো বই পড়াকালীন যদি তার দৃশ্যপট বড় পর্দার মত চোখের সামনে ভেসে না উঠে আমি বই পড়া আর আগাতে পারি না। এখানেই লেখকের স্বার্থকতা। লেখক শারমিন আঞ্জুম বরাবরের মতই পাঠকদের নিরাশ করেন নি। বইয়ের প্রথম ২৫ পর্ব অনলাইনে পড়ার পর শুধু হাপিত্তেশ করেছি কবে পাবো বই, কবে পাবো!! তারপর যখন দেখলাম বইয়ের মলাটমূল্য নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে... বই মেলার সবচেয়ে বড় বই হলো দ্বিখন্ডিতা। একটুও ভয় পাই নি। আমার মনে হয় যারা সত্যিকারের পাঠক তাদের কাছে এগুলো মূখ্য বিষয় নয়, কন্টেন্ট হলো আসল, যা দ্বিখন্ডিতায় পুরোপুরি আছে। আর প্রচ্ছদের কথা কি বলবো! এতোটা চমৎকার উপস্থাপন! বইটা হাতে পাওয়ার মন ভরে গেল। এতদিনের প্রচারণায় যা দেখলাম তারচেয়ে অনেক সুন্দর! বইয়ের বাইন্ডিং, পৃষ্ঠা সব এ+ ক্যাটাগরির। এখন আসি মূল বিষয়ে, কন্টেন্ট। ২৫ পর্ব অনলাইনে পড়ে যাদের মাথা ঘুরে গিয়েছিল, যারা এখনো এই বই পড়েনি, তাদের বলবো টার্ণিং পয়েন্টর শুরু অনলাইন যেখানে শেষ। শর্ত ছিলো স্পয়লার না দিয়ে রিভিউ দিতে হবে। আমার তো ভয় লাগছে যে স্পয়লার দিয়ে ফেলছি। অনেকগুলো চরিত্রের সমাহার দেখা গিয়েছে দ্বিখন্ডিতায়, কিন্তু কোন চরিত্রই ফেলনা নয়। মূল ৩ টি চরিত্রকে কেন্দ্র করে পুরো কাহিনি, সাধারণভাবে ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনী মনে হলেও এর পিছনে অনেক প্রকটভাবে প্রকাশ পেয়েছে, রাজনৈতিক, পারিবারিক, ব্যাবসায়ীক কূটচাল। শারমিন আঞ্জুম আপুর লেখার যে দিকটা আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে যেটা হলো সিনেমার মত দৃশ্যপট সাজানো। টেনিসকোর্টে সেদিন কি হয়েছিলো, কে জিতেছিলো, আরিজ কেন হঠাত চলে গেলো তা একবারে উপস্থাপন না করে।কয়েকটি দৃশ্যের মধ্যে সেটা পরিস্কার করেছেন। দ্বিখন্ডিতার প্রধান চরিত্র "সুবহা" সবচেয়ে শক্তিশালী মনে হয়েছি, অন্যান্য নায়িকাদের চেয়ে একদম আলাদা। আপুর অন্য গল্পের নায়িকা চরিত্র গুলো যতটা প্রকটভাবে সামনে আসতো, সুবহা তার থেকে একদম ব্যাতিক্রম। যতটা উপস্থিতি অন্যান্য চরিত্রের ছিল, শুরুর দিকে সুবহা তার থেকে মোটামুটি কম কিন্তু তারপরও সবদিকে বিরাজমান যেন তার উপস্থিতি। সুবহা নামকরণ যথার্থ হয়েছে। শান্ত কিন্তু দৃঢ়, আপোষহীন। যে একাই যুদ্ধ লড়ে গিয়েছ নিজের সাথে, তার সবচেয়ে আপনজনের সাথে। সুবহার কষ্টের মা হতে চলার সময়গুলো মনে হচ্ছিল আগুন বিছানো পথের উপর দিয়ে হেটে চলা। এতটা কষ্ট এর আগে কখনো অনুভব করিনি। ইচ্ছ করছিলো ছুটে গিয়ে সুবহাকে সাহায্য করি। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র শামস। এই চরিত্র শুরু থেকে অনেক বেশি আকর্ষণীয় ছিলো, যেন সত্যি রাজপুত্র। চারপাশে এত এত মুখোশ পরা, সুবিধাভোগী মানুষ তার চারপাশে, যে প্রকৃত বন্ধু আর শত্রুর মাঝে ফারাক বুঝতে পারলো না। তেমনি সত্যিকারের হীরা ব্লুসাফায়ার, বন্ধু-ভাই-রক্ষা কবজ আরিজের মূল্য বুঝলো না। তার করা ভুলগুলোও ক্ষমার অযোগ্য। শুরুর দিকে যতটা আকর্ষণীয় ছিলো মাঝের দিকে ততটা ঘৃণা হচ্ছিলো।মানুষের স্বভাবই হলো নিজের ভুলগুলোকে জাস্টিফাই করার জন্য ব্যাখ্যা দাড় করানো। শামস ও তার বিচিত্র নয়। কিন্তু ভুলের সাথে ক্রোধ মিশিয়ে যা করলো তা ক্ষমার অযোগ্য।কিন্তু ভুলের মাশুল আবার যেভাবে দিল তার জন্য আমার মনটাও কেদে দিলো। আরিজ, দ্যা সুপার ম্যান, নিজের সাম্রাজ্যে নিজেই আশ্রিত। সবকিছু থাকার পরেও নিজের থেকে বরণ করে নেয়া বৈরাগ্য। ভাই এর জন্য সেরাটা দিতে গিয়ে নিজের প্রিয়তমাকে ঠকালো কি তা নিয়ে তারমধ্যে দ্বন্দ। ঢাল হয়ে ভাইয়ের আর সুবহার পাশে থাকা। সবকিছু মিলেয়ে অনন্য। তারপরও আমার মন, কাকে আগিয়ে রাখবে তা নিয়ে দ্বিধান্বিত। শওকত দেওয়ান, আরেকটি শক্তিশালী চরিত্র। যার কাছে সম্পত্তি, ক্ষমতার কাছে সব তুচ্ছ। উপরে উঠার জন্য যতটা নিচে নামা প্রয়োজন তা করতে কুন্ঠা বোধ করেন না। কিন্তু কথায় আছে না পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না। শওকত দেওয়ানের পরিনতিও উপযুক্ত হয়েছে। শুধু শওকত দেওয়ান নয় প্রতিটা চরিত্রের পরিনতি একদম নিখুত হয়েছে। মনে হয়েছে এর চেয়ে ভালো আর কিছু হতো না। সারা, নেহাল আর সাবরিনা এই চরিত্র ৩ টি সবচেয়ে বিরক্তিকর। মাঝে মাঝে আমার মন চেয়েছে সারাকে ছুড়ে ফেলে দেই। সৌন্দর্য প্রদর্শন করার মধ্যে কোন তাতপর্য নেই এটা সারা আর সুবহাকে দেখলে বুঝা যায়। নারী সৌন্দর্য প্রদর্শন আর সুস্বাদু খাবার খোলা রেখে তার উপর মাছি আসার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। পরিশেষে বলবো, বই পড়া শেষে মনটা ভেংে আমারো দ্বিখণ্ডিত হলো, যে পরিনতি তা একদম উপযুক্ত তাতে খুশিও হতে পারছি না, মনটা কেমন যেন ভাড়, বইটা অনেকক্ষণ বুকের জড়িয়ে বসে ছিলাম। অন্যান্য পাঠকদের বলবো, দামী যাবেন না। বইটা পড়লে বুঝবেন পুরো পয়সা উসুল। আর এটা শারমিন আঞ্জুম আপুর মাস্টার পিস। দ্বিখন্ডিতা পড়ার পর সত্যি আমার মাথায় আর কোন পড়া বই চোখের পাতায় ভাসছে না....

      By Deepa Bolly

      04 Mar 2023 06:34 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      বুক রিভিউ: দ্বিখন্ডিতা লেখক: শারমিন আঞ্জুম প্রকাশনী: বই বাজার প্রকাশনী প্রকাশকাল: বইমেলা ২০২৩ প্রচ্ছদ সাদিতউজ্জামান মলাট মূল্য :১০০০ টাকা কাহিনী সংক্ষেপ: অসাধারণ কিছু চরিত্রায়ণের সমন্বয়ে গ্রাম, শহর এবং দেশের বাইরের পরিমন্ডলে রচিত হৃদয়ের টানা পোড়েন মিশ্রিত বিশাল ব্যাপ্তির এক উপন্যাসের নাম দ্বিখণ্ডিতা।যেখানে হৃদয় কখনো ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছে , কখনো সন্দেহের ঘুনপোকায় আক্রান্ত হয়ে নিজেকে সহ অন্যকেও খন্ডিত করেছে। কাহিনীর শুরুতে দেখা যায় শেখ সুবহানা জান্নাত হৃদয়ের লেনাদেনায় তরুণ লেকচারার আরিজ দেওয়ানের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে পড়ে। কিন্তু ঘটনা পরিক্রমায় এ সম্পর্ক শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায়! দেওয়ান সাম্রাজ্যের সম্রাট শওকত দেওয়ান রাজনৈতিক চরিতার্থ হাসিল করার উদ্দেশ্যে নিজ পুত্র শামসের বিবাহ জুনায়েদ শেখের কন্যা সুবহানা জান্নাতের সাথে আয়োজন করে। সম্পূর্ন বিপরীত ধর্মী দুটি হৃদয় পরিবার এবং মননের ভিন্নতায় পরস্পরের কাছে আসার বদলে দূরত্ব তৈরি হয়। তবে আরিজ যে কিনা একাধারে শামসের ভাই/বন্ধু সর্বদা নিজ বলয়ে ঘিরে থাকে, তার একের পর এক প্রচেষ্টায় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভিন্নধর্মী রসায়নের অবতারণা হলেও তা মূলত স্থায়ী হয়নি। সারা নামের এক উচ্চাভিলাসী সুন্দরী নারীর আবির্ভাব তাদের মাঝে জটিলতা সৃষ্টি করে। এরপর ঘটনার পরিক্রমায় তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব জটিল রুপ নেয় এবং বিচ্ছেদের পথে চলতে থাকে। কিন্তু সব সময়ের মতো সব মুশকিলের আছান সুপারম্যান আরিজ কি পারবে তাদের মধ্যকার জটিলতা নিরসন করতে? শামস কি তার নিজের ভুলগুলো শুধরে নেবে ,নাকি একের পর এক আঘাতে জর্জরিত জান্নাতের কোমল হৃদয়টাকে আরো খন্ড-বিখন্ড করবে? জান্নাত কি নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে শামসের কাছে ফিরবে? জান্নাত নিজের বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বন টুকুর হেফাজত করতে পারবে ? এ সকল প্রশ্নগুলোর উত্তর জানার জন্য দ্বিখন্ডিতার সাথে জার্নি শুরু করেছিলাম। আরে পথ চলার পুরো সময়টুকুতে তীব্র উত্তেজনা অনুভব করেছি । কখনো প্রেমিক যুগলের ভালবাসায় সিক্ত হয়েছি। কখনো বা মন ভাঙ্গার কষ্টে নীল হয়েছি! কখনো স্বামী-স্ত্রীর খুনসুটিতে হৃদয় উদ্বেলিত হয়েছে আবার কখনো কারো একাকী হৃদয়ের কষ্ট অনুভব করেছি। পুরো উপন্যাসে গ্রাম ও শহরের পারিপার্শ্বিক বর্ণনা এবং ভ্রমণ অভিজ্ঞতা গুলো এত সুন্দরভাবে লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন যে মনে হয়েছে আমি যেন তাদের সাথেই একই অভিজ্ঞতা অনুভব করেছি। কোথাও কোন দ্বিরুক্তি নেই, এতোটুকু বিরক্তি আসে নাই পুরো বইটি পড়ে। উপন্যাসটিতে অসংখ্য ক্লাইম্যাক্স ছিল এবং পড়তে গিয়ে আমি খুব থ্রিলিং অনুভব করেছি। শেষ পৃষ্ঠা অব্দি বোঝা যাচ্ছিল না যে আসলে শেষটা কেমন হবে! বারবার পরের ঘটনা জানতে চাওয়ার জন্য লাস্টের পাতা পড়ার খুব ইচ্ছা হচ্ছিল! খুব কষ্টে নিজেকে বিরত রেখেছি ? চরিত্র বিশ্লেষণ: সম্পূর্ণ বিপরীত ও ব্যতিক্রমধর্মী দুটি চরিত্র যথাক্রমে শামস ও আরিজ এই উপন্যাসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দুটি চরিত্র। শামস যে কিনা তার নিজের নামের মতই তীব্র দহনে কখনো অর্ধাঙ্গিনীকে পোড়ায়, তো অন্যজন (আরিজ) মেঘ হয়ে তা শীতল করে। শামস মূলত রূপের পূজারী আর আরিজ গুণের সমঝদার। মূলত দুই ভাই বা বন্ধু একই নারীর ভালোবাসায় সিক্ত । শামস হৃদয়ের খেলায় পূর্বে বিশ্বাসী ছিল না। তাইতো সে বারবার জান্নাতকে কষ্টের নীল সাগরে ডুবায় আর আরিজ সেখানে ত্রাণকর্তা রূপে সর্বদা আবির্ভূত হয়। কোন মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। দ্বিখণ্ডিতার শুরুতেই শেখ জুনায়েদ ভুলের কারণে কুফু না মিলিয়ে তড়িঘড়ি করে সুবহানাল্লাহ জান্নাতের মতো কঠোর ভাবে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা কন্যাকে তুলে দেন রাজনৈতিক উচ্চাভিলাসী মির্জা পরিবারে। তার এই ভুলের মাশুল দিতে হয় নিজে সহ অনেকগুলো মানুষকে। ইরানি ও বাংলাদেশি মিশেলে অসামান্য রূপসী নীল নয়না রমনী সুবহানাহ জান্নাত উপন্যাসের মূল চরিত্র, যাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে ঘটনা প্রবাহ। আর আত্মমর্যাদাশীল সুবহার নিজের দ্বীনদারিতা নিয়ে গর্ব ছিল ,কিন্তু সেও করুণাময়ের পরীক্ষার সম্মুখীন হয় এবং ভুল করে। ফলশ্রুতিতে আল্লাহ তার সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটি ছিনিয়ে নিয়ে তাকে পরীক্ষায় অবতীর্ণ করেন। দ্বিখন্ডিতা উপন্যাসে আমার সবচেয়ে পছন্দের চরিত্র হচ্ছে আরিজ। কিন্তু আরিজ ও ভুলের সাগরে নিমজ্জিত ছিল। নিজের জন্ম পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশার কারণে ছোটবেলা থেকেই শওকত দেওয়ানের প্রতি আরিজ নির্ভরশীল ছিল। তার এই কৃতজ্ঞতা বোধের কারণে শামসের একের পর এক ভুল শুধরে না দিয়ে তার উপরে পর্দা টেনে দিয়ে আরো বড় ভুলের দিকে ধাবিত করে নিজের অজান্তে। শওকত দেওয়ান মূলত বহু পুরনো চরিত্রের একটি রুপ। এরা পৃথিবীর আদি থেকে শুরু করে বর্তমানেও নিজেদের পাপের রাজ্যে সক্রিয় রয়েছে। এরা স্বার্থের কারণে নিজ রক্তের সাথে হোলি খেলতেও দ্বিধা করে না আর তা এই উপন্যাসে বেশ ভালোভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। সাবরিনা এবং সারা এই চরিত্রগুলো আমাদের আশেপাশে হল হামেশাই দেখা যায়। যারা কোন ধর্নাঢ্য বা প্রতাপশালীদেরকে ব্যবহার করে অপরাজিতা লতিকার মতো লতিয়ে ওঠে। আবার নিজেদের অবস্থান শক্ত হওয়ার পর তাদেরকে ত্যাগ করতে এক মুহূর্ত দ্বিধা করে না। লিমন, নেহালের মত বন্ধুরা সর্বদা ধনী তনয়দেরকে দুধের মাছের মত ঘিরে থাকে। নিজ স্বার্থ হাসিলের কারণে তাদের মুখে মধু অন্তরে বিষ দিয়ে শামসের মত বন্ধুর জীবন বিষিয়ে তোলে । দ্বিখণ্ডিতা নামের যথার্থতা: "খন্ডিত হৃদয়ের আর্তনাদ সব সময় নীরবই হয়" -আর এই নীরব আর্তনাদ একসময় চাপা রোষানলে পরিণত হয়ে কখন সাইলেন্ট বোম ব্লাস্ট করবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ত্রিভুজ প্রেমের উপাখ্যানে ঘটনা পরিক্রমায় প্রতিটি চরিত্র অসংখ্য বার বেদনায়, দ্বিধায় খন্ডিত হয়েছে। সুবহা তার জীবনে বিপরীতমুখী দুটি হৃদয়ের পূর্ণ ভালবাসার অনুভূতি লাভ করেছিল। কিন্তু একজনের আঘাত যখন তার হৃদয়কে খন্ড বিখন্ড করেছে, অপরজন তা জোড়া লাগাতে চেষ্টা করেছে। যার কারনে কখনও তার ভালোবাসা পূর্ণ ঘৃণায় রূপান্তরিত হয়েছে। অথচ ঘৃণার পাশাপাশি ভালোবাসা ও তার হৃদয়ে পাশাপাশি অবস্থান করার কারণে সুবহার অস্তিত্ব খন্ড-বিখন্ড হয়ে গেছে যার প্রমাণ পুরো উপন্যাস জুড়ে রয়েছে। আরে এ কারণে লেখিকার মনোনীত দ্বিখণ্ডিতা নামটি আসলেই উপন্যাসের জন্য যথার্থ বলে আমার মনে হয়েছে। বইয়ের মুদ্রণে অল্প কিছু জায়গায় প্রিন্টিং মিসটেক ছিল যেটা চোখে পড়লেও এক্সাইটমেন্টের কারণে তত একটা খারাপ লাগেনি। মোটা বই অনুযায়ী বাইন্ডিংস ভালো ছিল। তবে বইয়ের শেষ পরিচ্ছদ ১৪৪ থেকে ১৫১ পর্যন্ত পৃষ্ঠা মিসিং ছিল। তাই সেই সময়টাতে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম তবে পরে বই পাল্টে নিয়েছি। ধন্যবাদ বই বাজার প্রকাশনী কে। পরিশেষে ধন্যবাদ জানাতে চাই আমার প্রিয় লেখিকা শারমিন আঞ্জুম আপুকে❤️।এত সুন্দর মনোমুগ্ধকর হৃদয় উদ্বেলিত বিশাল উপন্যাস পাঠকদের জন্য ধৈর্য সহকারে লেখার জন্য। আমি সামান্য রিভিউ লেখার জন্য লেখা সাজাতে পারছিলাম না এ কয়েকদিন ধরে। অথচ কত বিশাল উপন্যাস এত কাহিনীর ঘনঘটা নিয়ে কিভাবে এত নিখুত বুননশৈলী রচনা করেছেন তা আমার চিন্তারও বাইরে! বইটা পড়ার পরে বুঝতে পেরেছি যে আপুর কতটা মেধা শ্রম কষ্ট আত্মত্যাগ মিশে আছে এর প্রতিটি অক্ষরে। আমি টানা তিন দিন ঘরে রান্না করতে পারি নাই। এটা সেটা হাবিজাবি দিয়ে চালিয়েছি, কারণ মাঝখানে গ্যাপ দিলে পড়ার ফ্লো নষ্ট হয়ে যায়। আর এটা এমনই এক উপন্যাস যে তাকে রেখে ওঠা যায় না আসলে! প্রচ্ছদটা অসাধারণ- নীল নয়না সুবহা খন্ডিত হৃদয়ের বেদনায় তার অবয়বটাও নীল বিষাদে মাখা! এক টানে পড়ে ফেলার মত উপন্যাস ।পরিশেষে লেখায় আমার ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখা অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ।

      By Faiza Habib

      08 Mar 2023 08:20 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      বই:দ্বিখন্ডিতা লেখিকা:শারমিন আঞ্জুম প্রকাশনা:বই বাজার প্রচ্ছদ:সাদিত উজ্জামান মূদ্রিত মূল্য:১০০০ টাকা Time marches on but memories stays. Torturing silently the rest of our days! দ্বিখন্ডিতা তিনটি জীবনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এক বিশাল আখ্যান।গল্পের মূল চরিত্র ইরানি বংশোদ্ভূত সুবহা জান্নাত, একই রাজ্যের দুই রাজপুত্র আরিজ ও শামস।দেওয়ান বাড়ির এই রাজপুত্র যেন একে অপরের বর্ম,ভালোবাসা মমতায় একে অপরকে জড়িয়ে রেখেছে। এই দুই রাজপুত্রের বাহ্যিক জীবন যাপনের রীতি একে অপরের চেয়ে বিপরীত মেরুর হলো অন্তর এক সুতোঁয় বাধাঁ পড়েছে।কঠিন পর্দা ও ইসলামি তবিয়তে বড় হওয়া সুবহা জান্নাতের প্রবেশ দেওয়ান বাড়ির ভীত নাড়িয়ে দেয়।কেউ হয় রিক্ত,কেউ হয় রক্তাক্ত।কেউ পেয়ে হারায়,কেউ হারিয়েও গুমড়ে মরে।ত্রিভুজ চিত্রের মাঝে উঠে আসে অতীতের ভয়াবহ চিত্র আর বর্তমান হয় ভূলুণ্ঠিত। দ্বিখন্ডিত হয় হৃদয়, আর খন্ডিত হৃদয়ের আর্তনাদ সব সময় নীরবই হয়। পাঠপ্রতিক্রিয়া:এই বইটি পড়ার সময় প্রায়শই আমি থমকে গিয়েছি,বইটা বন্ধ করে চিন্তা করেছি,তারপর মনে হয়ে আমরা কি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম?গল্পটা যখন অনলাইনে লেখক শেয়ার করা শুরু করেন তখন পাঠকেরা সবাই একটি সুন্নতি তবিয়তে চলা মেয়েটির জীবনের দিকে ধাবমান ঝড়ে তার বেশামাল জীবন নিয়ে এতটাই মশগুল ছিলাম,লেখিকা যে লেখার মধ্যে দিয়ে চিৎকার করে আমাদের বলছে সূক্ষ্ম ব্যাপারগুলো খেয়াল করতে তা মনে হয় আমাদের অন্ধত্বের জন্য খেয়ালই করা হয় নি।Best seller Authour Dan Brown এর একটি চমৎকার বই আছে ভিঞ্চি কোড,সেখানে লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির লাস্ট সাপার এই বিখ্যাত ছবিটা যদি কেউ দেখে তাহলে আপাত দৃষ্টিতে সে অনন্ত কাল ধরে চলে একটি মিথ্যের বেঁড়াজাল ভেদ করে সত্যটাকে দেখতেই পায় না।শুধু সেই নয় হাজার হাজার দর্শনার্থী ঐ ছবিটা দেখে ইতিহাসের অনেক বড় সত্যকে এড়িয়ে যায় অজ্ঞতার জন্য।আর সেই প্রজ্ঞা যখন ধরা পড়ে তখন লিওনার্দোর করা চপেটাঘাত খেয়ে বিষ্ময়ে বিমূঢ় হয়ে পড়ে।দ্বিখন্ডিতার সাথেও যেন তাই হয়েছে।অন্ধের মতো আমাদের চোখে নিজস্ব কিছু প্রেজুডিস সূক্ষ্ম বিষয়গুলো এড়িয়ে গিয়েছে।আমি রাত ৩ টায় সেই জ্ঞানহীন মূর্খের হটাৎ পাওয়া জ্ঞানের পর যে লজ্জার আর অভিভূত হবার এক আশ্চর্য নেশায় আসক্ত হই।বিখ্যাত ছবি Last supper এ আপনি পুরো চরিত্রগুলোর ভেতরের রসায়ন তাদের অভিব্যাক্তিতে খুঁজে পাবেন,তেমনি গল্পের শুরু থেকেই এর রহস্যের বুনিয়াদ লেখিকা গড়ে চলেছিলেন,অন্ধের মতো আমরাই নিজেদের কান্ডজ্ঞান হারিয়ে ছিলাম। National Geography তে অক্টোপাসের জীবন নিয়ে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিলো।একজন মা তার সন্তানকে রক্ষায় কতোটা মরিয়া হতে পারে তা যেন ফুটে উঠেছিলো।এই গল্পে সেই মায়ের সন্তান নিয়ে যুদ্ধংদেহী মনোভাব ফুটে উঠেছে।কখনো বাঘিনীর ন্যায়, কখনো বা মহিষাসুর বধিনী দেবী দুর্গার প্রতিরূপ। মানুষের লোভ, লালসা আর ষড়রিপুর যে তান্ডব তা যেমন দেখেছি।তেমনি মানবতার জয়জয়কার ও দেখেছি। গল্পের মূল আকর্ষণীয় দিক: ১/ইসলামি ঘরানার এক মেয়ের জীবনের নানা টানা পোড়েনের মাঝে ক্ষুরধার লেখিকা সমসাময়িক অনেক স্পর্শকাতর বিষয়কে টেনে এনেছেন সূক্ষ্মভাবে যা করতেন প্রাচীনকালের জ্ঞানে আলোকিত মানুষেরা। আপনারা যদি রেঁনেসাস আমলের কোনো স্কাল্পচার দেখেন বা ফ্রেসকো দেখেন বা সাহিত্যের রস আস্বাদন করেন তাহলে বুঝবেন তখনকার সময়ে লেখকেরা বা শিল্প্রা নিজের সৃষ্টির মাঝে অন্যায়ের প্রতি তীব্র প্রতিবাদ রেখে গেছেন।কখনো বা Satire এর সাহায্য নিয়ে কখনো বা সিম্বলজির সাহায্য নিয়ে, কিন্তু প্রচন্ড সাহসিকতা ছাড়া এটা সম্ভব নয়।লেখিকা কখনো গল্পের প্রয়োজনে, কখনো বা সিম্বলজির সাহায্য নিয়ে বর্তমান সময়ে ঘটমান নানা সমস্যা তুলে এনেছেন দারুণভাবে।যে আলোকিত সে শুধু তার ভেতরের নিহিত তাৎপর্য অনুভব করতে পারবে আর বাকিরা শুধু অবলোকন করবে। ২/বিয়ের সময় আমরা বাহ্যিক নানান উপচারিক বিধিতে এতটাই ব্যস্ত থাকি যে কাবিন নামায় স্বাক্ষর করে অন্যের সাথে বাধা পড়তে যাচ্ছি,তার terms and conditions গুলোই ঠিকভাবে পড়তে ভুলে যাই। ৩/মানব সম্প্রদায়ের একটি চমৎকার গুণ হলো সে নিজের পরবর্তী প্রজাতির মধ্যে মানব ধর্মের শ্রেষ্ঠ গুণগুলোর পরিপূর্ণ বিকাশ দেখতে চায়।কিন্তু সে সব সময় ভুলে যায় DNA বলে কুদরতের এক অপার বিষ্ময়কর বস্তু আছে যার বদৌলতে নিজের ষড়রিপুর বদ গুণগুলো তার মাঝে চলে আসে। তাই পরবর্তী প্রজন্মের শুদ্ধতার পূর্বে প্রয়োজন নিজের আত্বশুদ্ধি। ৪/দেহ নামক পিঞ্জরে বাস করে মানব ও দানব স্বত্তা, মানুষ নিজের বিবেকের জন্যই আশরাফুল মাখলুকাত।ষড়রিপুর তাড়না থেকে নিজেকে উর্ধ্বে রেখে দায়িত্বের পথে এগিয়ে যায়,তার দানব স্বত্তাই পরাজিত হয়।জিতে যায় মানব স্বত্তা,জিতে যায় মনুষ্যত্ব। ৫/সুবহার জীবনের সমুদ্রের ঝড় যেন রামায়ণের সীতার সেই খন্ডিত হবার গল্প।রামের স্তুতিতেই যে গ্রন্থের পটভূমি রচিত তাতে সীতা অপহৃত, লাঞ্চিত।প্রিয় মানুষের অবিশ্বাসে রক্তাক্ত,অগ্নিপরীক্ষায় দ্বিখন্ডিত। ৫/শক্ত ঈমানের পরীক্ষায় যেখানে অনেকেই পদস্খলিত হয়, সেখানে আল্লাহর পরীক্ষা বড় কঠিন হয়।যেখানে খোদার উপর বিশ্বাসের প্রয়োজন সেখানে অহংকার যে চূর্ণ হতেই হতো।আল্লাহর বিশ্বাসের ঘরে পরিপূর্ণ সমর্পণ ছাড়া মুক্তি মেলে না। ৬/নীল রক্তের আভিজাত্য ও অহংকারকে। Balance করার জন্য একজন মেধাবী,মায়াবী মানুষের ভালোবাসার প্রয়োজন ছিলো।তাই তো নিজের রক্তের সেই অহংকারকে অবদমিত করতে প্রয়োজন ছিলো সেই আদর্শের যা পরবর্তী প্রজন্মকে কে করবে আরো শাণিত। ৭/রাজনৈতিক নানা মারপ্যাঁচ এর জ্বালে বন্দি হয়ে আমরা হারিয়ে যাই নিজের আপন স্বত্তা,নিজস্ব princepal থেকে।মসনদের মোহে পিতা হয় পুত্রের শত্রু আর ভাই হয় ভাইয়ের দুশমন। ৮/গল্পের প্রয়োজনে লেখিকা নারীলিপ্সু ব্যাক্তিদের চরিত্র অঙ্কন করেছেন খুব সুচারুভাবে ভাবে।হাই সোসাইটিতে চলে আসা অবাধ যৌনাচারের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন শব্দের ম্যাচপ্যাঁচে।কিন্তু পড়তে গেলে আপনি হোঁচট খাবেন না,বরং গল্পের প্লটের ক্রমাগত পরিবর্তনে বিবশ থাকবেন।আর বিবাহিত দম্পতির খুনসুটি ও ওমরাহর সময়ের স্মৃতি যেন পাঠক অন্তরকে সিক্ত করে। ৯/পরজীবী মানুষেরা পরগাছার মতো আরেক জনকে জড়িয়ে জীবনে উন্নতি লাভ করতে চায়,কিন্তু আরাধ্য বস্তুর জন্য লাগে ত্যাগ প্রতীক্ষা, শর্টকার্টে জীবনে উন্নতি সম্ভব নয়। চরিত্র বিশ্লেষণ: আরিজ: "প্রেমের দ্বারা চেতনা যে পূর্ণশক্তি লাভ করে সেই পূর্ণতার দ্বারাই সে সীমার মধ্যে অসীমকে, রূপের মধ্যে অপরূপকে দেখতে পায়— তাকে নূতন কোথাও যেতে হয় না । ” -রবি ঠাকুর। আরিজের চরিত্র বিশ্লেষণ করতে রবি ঠাকুরকে ছাড়া আমার গত্যান্তর নেই।অসম্ভব সুদর্শন ও আভিজাত্যের গাম্ভীর্য ও ধর্মের বর্মে শাণিত এক পুরুষ। নিজের দায়িত্বে যে বজ্র‍্যের মতো কঠিন আবার কিশোর সারল্যের একটি মানুষ তার প্রিয় মানুষের নিকট।নিজের প্রকৃত পরিচয়ের কুন্ঠায় প্রিয় মানুষের হাত ধরতে ছিলো যে প্রতিবন্ধকতা, তা নিজের দায়িত্বে বিশ্বস্ততা অর্জন করেছে।একজন দেশের নির্ভীক সৈনিককে মনে হয় ইস্পাতের মতো শক্ত করতে হয় হৃদয়।আরিজ নিজের দেশের জন্য যেমন প্রস্তুত তেমনি নিজের বিবেকের প্রশ্নে উজ্জ্বল এক দৃষ্টান্ত। শামস: এক হতভাগ্য রাজপুত্র হচ্ছে শামস।দানবীর, বোহেমিয়ান স্বভাবের এক নিজস্ব নিয়মে চলা অন্যরকম চরিত্র।সুরের জগতে বাস করা নিজস্ব জগতের এক রাজপুত্র।এই চরিত্রের চিত্রায়ণে শরৎচন্দ্র ও শেক্সপিয়ারের প্রভাব সুস্পষ্ট। তবে বাসনায় পরিপূর্ণ ভোগের বাসনায় লিপ্ত এই চরিত্রকে শুরুতে আমার গ্রিক দেবতা জিউসের মতো মনে হয়েছে। নিজের ভাগ্যগুণে পাওয়া হীরা ফেলে কাঁচের পেছনে ছুটার খেসারত দিতে হয়েছে।Inferiority complex এর জন্য যে সমস্যা তৈরী হয় তা নিজেকে যেমন ধবংস করে তেমনি দেশের জন্য বয়ে আনে বিধবংস। "Letting go means to come to the realization that some people are a part of your history but not a part of your destiny." -Steve marabally সুবহা:অনিন্দ্য সুন্দরী এই নারীর বাহ্যিক আবরণের চেয়ে আত্বিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছি।অন্তরাত্বার দোলাচলেও খোদার প্রতি অসীম ভক্তি।স্বামীর বোহেমিয়ান চরিত্রে যখন আহত,রক্তাক্ত দ্বিখন্ডিত হচ্ছেন তখন ও ধৌর্য্যের চরম পরীক্ষা দিচ্ছেন।সুবহার চরিত্রের বিকাশে বাঙালি একজন নারীকে যে কতোটা মেনে চলতে হয় তাই প্রকাশিত।একজনকে ভুলে আরেকজনকে মেনে নেবার যে যাত্রা তা অন্তরকে করে আহত,রক্তাক্ত। প্রিয় লাইন- ১.আমার আত্ম মর্যাদা আছে বলেই স্বামীর দেওয়া সম্পদ ও ক্ষমতার ব্যবহার করছি না।(পৃ-২৯৪) ২.তুমি জানো তুমি কে?যদি জানতে তাহলে তোমার নতুন ঠিকানার চাবি দেখাতে না! (পৃ-৩০৫) ৩.বিভ্রান্তি,লোভ আর স্বার্থপরতার যে রাস্তায় হাঁটছো তা শুরুতে ভালো লাগলেও সত্যিটা যেদিন বুঝতে পারবে সঞ্চিত সহমর্মিতা তখন কাজে দেবে!(পৃ-৩০৫) ৪.তুমিই শুধুই তার মোহ, খেয়ালের বশে যাকে প্রশ্র‍য় দিচ্ছে মাত্র।(পৃ-৩০৫) সমালোচনা:এই গল্পটির কিছু অংশ পড়ে অনেকেই প্রশ্ন করেছে,যে ব্যাক্তি আল্লাহর উপর এত নিবেদিত সে কেন স্বামীর বোহেমিয়ান স্বভাব মেনে নিচ্ছে না অথবা এত পূন্যবতীর স্বামী কিভাবে অন্যের দারস্থ হয়?এসব গুলোর যথাযথ উত্তর লেখক দেখিয়েছেন।হাদিসের চারটি বিয়ের বিষয়ে যে বিধান আছে তার ব্যাখ্যা ও দিয়েছেন। "Had i been in love,I could not have been more wretchedly blind. But vanity, not love has been my folly." -Jane Austen(pride and prejudice) ক্ষমা মানবজীবনের সবচেয়ে মহৎ গুণ।অন্যকে ক্ষমা করার মাঝে খুঁজে পাওয়া যায় নিজের ভেতরের প্রশান্তি।

      By Nusrat Jahan Antora

      28 Feb 2023 11:33 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      দিখণ্ডিতা শারমিন আনজুম প্রকাশনী: বইবাজার পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৫৫১ প্রচ্ছদ: সাদিতউজ্জামান পাঠ প্রতিক্রিয়া: এটার পাঠ প্রতিক্রিয়া দেবার আগে একটা বিষয় বলি। উপন্যাসে অনেক ধরনের চরিত্র থাকে। এক এক পাঠকের এক এক চরিত্রকে ভাল কিংবা খারাপ লাগবে। কিন্তু তার মানে এই না সে বাস্তবে সেই ঐরকম মানুষ কিংবা ঐরকম কাউকে খোঁজে। সেটা দিখণ্ডিতা হোক বা অন্য কিছু নামকরণ: এই উপন্যাসের নামটাই বিশাল সার্থকতা। কারন হৃদয়ে এরকম দুইরকম ফিলিংস প্যারালালি চলমান অবস্থা নিয়ে এখনো আমি রেশ কাটিয়ে উঠতে পারিনি। ফেসবুকের ক্ষুদ্রাংশ পড়ে মূলত আরিজ চরিত্রটার প্রতি একটা ইন্টারেস্ট গ্রো করেছিল। এখন বই পড়ার পর মনে হচ্ছে এটা একটা মাল্টি ডাইমেনশনাল উপন্যাস। যেখানে অনেকগুলো ঘটনা, অনেকগুলো অনুভূতির প্লাবন এবং একই চরিত্রের অনেকগুলো দিক। প্রচ্ছদ: এই উপন্যাসের প্রচ্ছদটা চোখে পড়লে হুট্ করে চোখ সরানো যায় না। অনেকটা "চোখ যে মনের কথা বলে" র মত ওই নীল নয়নার দিকে তাকালেই মনে হয় তার অন্তরটা দ্বিখন্ডিত। ওই দুইচোখে দুইজনের জন্যে অনেক হাহাকার, অনেক কষ্ট। বাইন্ডিং: আমার আসলে একদম পিউর হোয়াইট কালারের চেয়ে একটু অফ হোয়াইট কালার বেশি পছন্দ। পড়তে আরাম লাগে। জানিনা এই বিরল সমস্যা আর কোন পাঠকের আছে কি না নাকি আমি ই একমাত্র অধম(!) এটার প্রিন্ট হবার পরের যে নীল রঙটা সেটা আমার অত্যাধিক পছন্দ। আসলে এই বইটার রিভিউ দেবার মত প্রাপ্তমনস্ক আমি কি না আমি জানি না। এই বইয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জায়গায় জায়গায় মনের মধ্যে প্যারালালি দুইরকম অনূভুতি নিয়ে এগিয়েছি। তবুও চেষ্টা করছি, কারন কিছু কথা না বললে শান্তি লাগবে না সুবহানা জান্নাত: আপুর এপর্যন্ত লেখা সকল নারীচরিত্রদের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় সুবহানা জান্নাত। এই মেয়েটার হাসি, কিছুটা দ্বিধা নিয়ে স্যান্ডেল খুজা, তার ভাল লাগা, সেই ভাল লাগা নিয়ে স্রষ্টার কাছে আত্মসমর্পণ, নীরবে অনুভূতির শুদ্ধ বহিঃপ্রকাশ, ইসলামিক রীতিনীকে বৈবাহিক সম্পর্কে ও অন্তরে ধারণ করা, সম্পর্কের খুব খুক্ষ আন্ডাররেটেড বিষয়গুলোকে ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে জাস্টিফাই করার ক্ষমতা, ফ্যামিলির প্রতি ভালবাসা, স্রষ্টার প্রতি ভালবাসা, নিজের রূপকে আড়াল করার প্রচেষ্টা, স্বামীর প্রতি দায়িত্ব এবং সর্বোপরি সবচেয়ে মুগ্ধ করে যেটা সেটা হল তার আত্মসম্মান। গোড়া ধার্মিক সে না আবার আল্ট্রামর্ডান নারীও সে না। সে ধর্ম জিনিসটাকে খুব বিশুদ্ধতা দিয়ে ধারণ করেছে। তার থেকে ভিন্ন কোন মেয়েকে সে অসম্মান করেনি কিংবা গীবত করেনাই। সর্বদা স্রষ্টার ইবাদাতে নিমগ্ন থাকা সুবহানা জান্নাত প্রতিটা মুসলিম ফিমেল রিডারকে সবসময় ভাবতে শিখাবে নিজের ধর্ম এবং ধার্মিকতা নিয়ে। চূড়ান্ত মোমেন্টে এসে তার সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া ও এর পেছনে ব্যাখ্যা দেবার জায়গাটাতে আমি সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ হয়েছিলাম। আরিজ: এই উপন্যাসে আমার সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র। আমি জানি না কেন, যখনই কোন গন্ডগোল লাগতো বা ঝামেলা সৃষ্টি হয়ে সব এলোমেলো হয়ে যেত আমার মন আরিজকে খুঁজতো। এবং কিভাবে যেন ঠিক সময় জায়গামত সে হাজির আমার কলিজা ঠান্ডা করতে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজের দ্বিখন্ডিত হৃদয়টা নিয়ে সে প্রেমিক, ভাই ও পরিবারের জন্য দায়িত্বের জায়গা থেকে ১০০ তে ১০০ পাবার চেষ্টা করে গেছে। তার ক্ষুরধার ব্যাক্তিত্ব আমাকে দিখণ্ডিতা পড়তে বাধ্য করেছিল এটা আমার কনফেশন। কিন্তু সেই ক্ষুরধার ব্যাক্তিত্বের চরিত্রটা যখন একটা জায়গায় এসে সব ছেড়ে দিয়ে এমনকি নিজের অধিকারটাও ফিরিয়ে দিয়ে ভেঙে যেতে চাইল, আমি নিজেই তখন ঠিক থাকতে পারিনাই। ওই একটা জায়গায় আমার কান্না এসেছে আরিজের জন্যে। কারন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যাকে কঠোর দেখে অভ্যস্ত হুট্ করে তার ওই হৃদয়ভাঙা আকুতি নিতে পারিনাই। আমার মনে হত আরিজ মানেই সকল সমস্যার একটা সমাধান সকল অমীমাংসিত জটিলতার একটা সুরাহা। কিন্তু সেও আসলে গল্পে একজন রক্ত মাংসের মানুষের চরিত্র। কোন ফেরেশতা না। এই উপন্যাস পড়ার সময় আমার মনে হচ্ছিল দিখন্ডিতার ব্যাকবোন হল "আরিজ"। মাথা কুর্নিশ করে যদি কাউকে শ্রদ্ধা জানাতে হয় সেটা আরিজ। তার ডায়রি লেখা, শত্রুকে ফেস করা, কথা দিয়ে সবাইকে ঘায়েল করা সবখানে মুগ্ধতার জোনাকি ছড়ানো, এটাই মনে হয় তার কাজ। শামস: এত্ত বিশাল বড় পোস্ট দেবার পর এখনও যদি ওকে নিয়ে কিছু বলতে যাই তাহলে আমাকে "শামসের দিওয়ানা" খেতাব দিতে পারে অনেকেই(!) যাক, দিক সমস্যা নাই। ক্রিমিনাল সাইকোলজিতে একটা ব্যাখ্যা আছে যে পৃথিবীর সকল বড় বড় অপরাধীদের ব্যাকগ্রাউন্ড হিস্ট্রি ঘাটলে দেখা যাবে সেখানে অনেক পারিবারিক জটিলতা আছে, হৃদয়বিদারক ইতিহাস আছে। ব্যাতিক্রম যে নাই তা না কিন্তু সেটা সংখ্যায় কম। কার ছায়া কিংবা কার গ্রাসে আজকের শামস এমন "শামস" সেটা সব পাঠকই জানে। কিন্তু অন্যায় অন্যায়ই, ইনজাস্টিস করলে সেটার মূল্য দিতেই হবে। সেটা শামস হোক আর যেই হোক। মূল্যটা কিভাবে দিবে কিংবা নিজ থেকে দিবে কি না কিংবা দিলে কতক্ষন দিবে প্রশ্নটা সেখানে। নিজের অপরাধকে স্বীকার করা এবং নিজ থেকে প্রায়শ্চিত্ত করে জীবনটা কাটিয়ে দেয়া আসলে অন্যরকম ব্যাপার। হয়ত এজন্যই ওর প্রতি আমার মায়া অনেক বেশি। শওকত দেওয়ান, নেহাল, সারা, সাবরিনা এই ধরনের চরিত্র অজস্র মানুষের চোখের পানি, হৃদয়ের আর্তনাদের জন্য দায়ী। এদের কোনদিন অনুশোচনা হয় কি না আমি জানি না। এরা একটা শেডেই বিচরণ করে আমৃত্যু "বেঈমান"। অর্থের লোভ, হিংসা, পারিবারিক মূল্যবোধের অভাব, ষড়যন্ত্রের কুফল কিংবা দেশদ্রোহী আচরণ একটা মানুষকে না একটা পৃথিবীকে তছনছ করে দিতে পারে। হয়ত দিখন্ডিতার অনেকগুলো হিডেন মেসেজের মধ্যে এটা আমার সবচেয়ে বেশি মনে ধরে গেছে। আর মনে ধরেছে দাম্পত্য জীবন নিয়ে সুবহানা জান্নাতের দৃষ্টিভঙ্গি। নামিরা, নীলান্তিকা, জুনায়েদ শেখ, ইমতিয়াজ, ইশতি এই চরিত্রগুলার জন্য বিশেষ রকমের ভালবাসা। আসলে এদের নিয়ে কিছু বলতে গেলে স্পয়লার দিয়ে ফেলতেসি। তাই বলতে পারছিনা। আরো অনেক চরিত্র আছে যাদের কারোই উপস্থিতি আসলে অকারণ না। এটার সাইজ দেখে কেউ ঘাবড়াবেন না, এটার কন্টেন্ট বিচার করতে গেলে এই সাইজ তার সাথে একদম মানানসই। পুনশ্চ ১: আমি উপন্যাসটা পড়েছি আরো প্রায় ৫ ৬ দিন আগে। পড়ার পর এমন ঘোরে ছিলাম যে মাথার মধ্যে কিছুক্ষন শামস ঘুরতেসিল চরকির মত, সুবহানার অশ্রুগুলো খুব পীড়া দিচ্ছিল আর আরিজের শঙ্কাগুলো বারবার হৃদয় ভেঙে দিচ্ছিল। রিভিউ লিখতে পারছিলাম না। কারন "খন্ডিত হৃদয়ের আর্তনাদ সবসময় নীরবই হয়" পুনশ্চ ২: আমার ফোনের অবস্থা ভালো না। ছবির কোয়ালিটি দেখে কেউ বকা দিয়েন না(!) ? ভুল ত্রুটি করে থাকলে সেজন্য আগাম দুঃখিত।

      By Mannat Amaira Bade

      28 Feb 2023 04:38 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      #দ্বিখণ্ডিতা_রিভিউ লেখা : মান্নাত বই : দ্বিখণ্ডিতা লেখক : শারমিন আঞ্জুম ধরন : সামাজিক উপন্যাস প্রকাশনী : বইবাজার প্রচ্ছদ : সাদিতউজজামান মূল্য : ১০০০৳ পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৫৫১ প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ★প্রচ্ছদ : প্রচ্ছদের যেই চিত্র সেটা সবার আগে পাঠক মনে আকর্ষণ সৃষ্টি করে বইটির প্রতি; নীল বিষাদে ঘেরা খচিত, রক্তাক্ত খণ্ডিত হওয়া হৃদয়ের দ্বিখণ্ডিতা। একদম জীবন্ত মনে হওয়া দুটি চোখে যেন অদ্ভুত সব অনুভূতির খেলা। পুরো উপন্যাসের এক ঝলক যেন উঠে এসেছে এই প্রচ্ছদে। ★নামকরণ : নামকরণের ক্ষেত্রেও একই বৈশিষ্ট্য। পাঠক এই অন্যরকম, আনকমন নাম পড়েই ভাবতে বাধ্য খণ্ডিত হওয়া দ্বিখণ্ডিতা নামের কারণ জানতে এবং উপন্যাস পড়তে আকৃষ্ট অনুভব করবে। ★উৎসর্গ : উৎসর্গ করা হয়েছে উপন্যাসের মূল চরিত্রদের মতোই যাদের বাস্তব জীবনচরিত খণ্ডিত হয়ে বহমান। সাথে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন, আরেকজন পরিচিতমুখ সাহিত্যিবিদকে। ★প্রস্তাবনা : প্রস্তাবনা অর্থাৎ সূচনা বা ভূমিকা। এই অংশে লেখিকা জাহির করেছেন উপন্যাসের গল্পটা কীভাবে লিখতে চেয়েছিলেন, কোন পরিস্থিতিতে লিখেছেন। পাঠক তখন গল্পটার জন্য কেমন উৎসাহ দেখিয়েছিল। বইয়ের পাতায় এত বড়ো কলেবর উপন্যাস লিখতে হলে নিজেকে যে সেটা উপলব্ধি করতে হয়, লেখিকা নিজেকে সেখানে জীবন্ত অনুভবে পেয়েছেন সেই সম্পর্কে জানিয়েছেন। অনেকে দেখা যায়, ভূমিকাতে যে অংশে লেখক-লেখিকাদের কথা বলা থাকে, সেগুলো স্কিপ করে পড়ে চলে যায়। কিন্তু আমি মনে করি এটার মূল্য আগে, যার জন্য ভূমিকা গল্পের প্রথমে থাকে। একজন লেখিকার কতটা এফোর্ট দিয়ে লিখেছেন সেটা আমাদের জানা অবশ্যই আবশ্যক। ★কাহিনি সংক্ষেপ : প্রচ্ছদে ফুটিয়ে তোলা বাঙালি-ইরানি মিশেলের নীল নয়না এ যেন সুবহানা জান্নাতের কাহিনি। ভার্সিটি সময়কার প্রেমগাঁথার কাব্য ভুলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় যেখানে, সেখানে বিদেশ ফেরত উচ্চ শিক্ষিত ভবঘুরে, উচ্ছৃঙ্খল, উদ্ধত শামস নামক স্বামীর মুখোমুখি আশ্চর্য হতে হয় তাকে। জানার পরিধির মধ্যেও অজানা রয়ে যাওয়া বিপরীত চরিত্রের এই মানুষটার সাথেই শুরু হয় পথযাত্রা। আর তারই সাথে আবর্তিত আরো চরিত্রের আগমনে কাহিনি এগিয়েছে। একদিকে প্রাক্তন অতীত অন্যদিকে বর্তমান স্বামী, তবে অতীত-বর্তমানের যোগসূত্র একসুতোয় গাঁথা হয়েছে যে এখানে। দুই লক্ষ শব্দোপন্যাস এত অল্পতে সংক্ষেপে বলা খুবই দুর্লভ আর দুঃসাহসিক ব্যাপার। তবুও অল্প করে বলার চেষ্টা। ★পাঠপ্রতিক্রিয়া : শারমিন আঞ্জুম লেখিকার আমি নতুন পাঠক। ওনার লেখার সঙ্গে পরিচয় যদিওবা দ্বিখণ্ডিতার প্রচারণার মাধ্যমে তথাপি আপুর পেজের চলমান উপন্যাস ❝বাতাসে তার সৌরভ❞ এর মাধ্যমে। তখন আপুকে দ্বিখণ্ডিতার বিষয়ে জানার আগ্রহ প্রকাশে আপু ফেসবুকে থাকা দ্বিখণ্ডিতার প্রকাশ করা ২৫ পর্বের লিংকটা পড়তে দেন; এতে যেন বইটির বিষয়ে ধারণা পাই সেজন্যে, তবে আমি পড়িনি একেবারে বই পড়ব বিধায়। এই প্রক্রিয়াটা আমার বেশ ভালো লাগল। বড়ো কলেবরের এই বইটি যেহেতু দামী সেহেতু সবাই কিনে পড়ার আগে সেটার বিষয়ে ধারণা নিতে পারল। যাইহোক, গল্প-কাহিনি শুরু হয় আট বছরের সিঙ্গেল মাদার পয়তাল্লিশ বছরের সাবরিনা যে কি না ছাব্বিশ বছরের বয়ফ্রেন্ডের পিতার সাথে সাক্ষাৎ করতে এসেছে। এমন বড়োছোটো বয়সের প্রেম-ভালোবাসা নিবেদনের গল্প বহু শোনা, এখানে পড়লেও এমনটা মনে হবে। কিন্তু, নাহ এখানে প্রেম-ভালোবাসার চাইতে লোভ-লালসার উচ্চাভিলাষী বেশি। সাবরিনার দেখা করার মূল উদ্দেশ্য এমনটাই। সুবহানা জান্নাত যাকে গল্পের মধ্যমনি মনে হয়েছে আমার। পরের অংশে তার অতীতের ঝলকানিও দেখা দেয়। প্রিয় মানুষটার সাথে সাক্ষাতের সময়কার স্মৃতি আন্দোলিত করে চুরমার হয়ে ক্ষয়ে যাওয়া হৃদয়ে আবদ্ধ হতে হয় নতুন বন্ধনে। তখন সেই কষ্টোনুভবে আমার ভাবনায়ও প্রশ্ন আসে, ইশ! এমনটা কী করার খুব দরকার ছিল? ভালোবাসাগুলো কেন এত অসহায় হয়! সবচেয়ে ভালোলাগার ও লেখিকার দেওয়া শিক্ষণীয় দিক, অবশ্য পুরো বইটা থেকেই শেখার বহুকিছু রয়েছে। তবুও সব ছাপিয়ে এতএত কষ্ট-কাঠিন্যের মূহুর্তেও সুবহানা জান্নাতের আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস দৃঢ় বজায় রাখার প্রচেষ্টা, এটা আমাকে যেমন অবাক করে তেমনই শিক্ষা দেয়, শত-শত কঠিনতম বিপদের পরিস্থিতিতেও সৃষ্টিকর্তার বিমুখী না হওয়া। বইয়ে ছোটো-ছোটো দোয়া, আমল, আয়াত রয়েছে; যা পাঠকদের জন্য হেল্পফুল ও শিক্ষণীয়। এমন একজন সুন্দরী, অপরূপের রূপসী পর্দানশিন সুবহানা জান্নাত যখন সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশে বেড়ে ওঠা রাজকীয় উচ্চ বংশের ভিন্ন মানসিকতার শামস নামক মানুষটার সঙ্গী হয়; তখন গল্পের মোড় কোনদিকে ঘুরে? আচ্ছা, পুরো বিপরীতমুখীর একূল-অকূল মানুষ দু'টির কি এক কিনারায় মিলিত হয়? এখানে শক্তিশালী মন্ত্রী শওকত দেওয়ানের ভূমিকায় বা কতটুকু? যে কি না কোনো কাজই হিসাব ছাড়া করেন না, সেখানে ধর্মাভীরু সুবহাকে কেন নিজের উগ্র প্লেবয় ছেলের জন্য নির্বাচন করলেন? শুধু কি একটা ব্যক্তিজীবনের পরিবর্তন বিয়ে, পারিবারিক বাকি সকল চরিত্রের প্রকাশ তখন কেমন হয়? সুবহা থেকে জান্নাত হয়ে ওঠার প্রারম্ভিকে যখন অতীতের সুবহানা এসে ধাক্কা দেয় তখন সে কি মূর্ছা যায় নাকি শক্ত হাতে পরিস্থিতি সামলায়? এতএত প্রশ্নের যে সকল উত্তরের টুইস্ট অত্যন্ত মনোযোগ আকর্ষণীয়। বিবাহ পরমুহূর্তে অতীত-বর্তমানের দোলাচালে থাকা অবস্থানের কাহিনি যখন শামার মাধ্যমে সরব হয়ে একটু একটু করে পর্দা ছেড়ে বের হয়ে আসছিল, তখন আমার অবস্থা ছিল খোদাকে ডাকার মতো। অতীতকে ভুলে বর্তমানকে সঙ্গী হিসেবে আপন করার মাঝে পরিবর্তনে হঠাৎ এ কী ঝড়ের উদ্বেগ প্রকাশের সৃষ্টি হচ্ছে! এদিকে শওকত দেওয়ান শামসের খেলার পুতুল নিয়ে বিরক্ত করেছেন বলে এবার প্লেবয় শামসও তাঁর দেওয়া পুতুলের সাথে খেলবে ভাবল, আমার তো পুরো অনুভূতি প্রকাশের বাইরে তখন। এমনিতেই সুবহার কঠোর সময়ের সংযমে যে বাঁধ ছিল এবার মেয়েটার কী হবে ভাবতেই হৃদয়সিক্ত হয়ে যাচ্ছিল। শামসের অতিরিক্ত বিশ্বাস, মায়া, আবেগ কেবল সব অন্যদের বেলায় দেখায়। অথচ নিজ স্ত্রীর দিকে নজর না দেওয়ার অভিপ্রায়ে বেখবর, না জানার ভান ধরার মতো থাকে, তখন আমার মন রাগে ফুঁসতে থাকে। সেই ধারা অব্যাহত রইল বছর তিনেক পরবর্তী সময়ে, যখন সাবরিনার মুখোশ উত্তরণ দেখেও কীভাবে সারা নামক শক্ত জালে আঁটকে পড়ল; এটা আমার ভাবনার অন্তেও নাই। তার করা জেদের একেকটা ভুলের চেইন শিকলে যখন পরিণত হচ্ছিল, তখন সুবহার মতো আমারও ভাবনা এর শেষটাতে সেই শিকল না আবার শামসের গলার ফাঁস রূপ নেয় সেই দৃশ্য দেখার অপেক্ষা। এরমধ্যে আরিজ নামক মানুষটা যে কি না সবসময় প্রিয় দু'জন মানুষের ভালো চাইত, আগলে রাখার জন্য সবসময় নিবেদিত প্রাণ, সমস্যা মিমাংসায় মিটমাট করত। সে তখন লাঙ্কাভির টেনিস কোর্টে শামসের সাথে হওয়া ঘটনায় নিজেকে দূরে লুকিয়ে রাখল; যখন সুবহার উপর দিয়ে একটার পর একটা বিপদের পাহাড় ভাঙছিল। আমি-ও তখন হামিদা খালার মতো মনে মনে ভাবতাম, আরজু থাকলে সব ঠিক হয়ে যেত। আরেক মন তখন সুবহার কথা শুনে প্রবোধ দিয়ে ধমকাতো, সবসময় তাকে থাকতে হবে কেন। মানে কাহিনিতে যেন আমি নিজেকেই সামিল পেয়েছি এতোটাই ডুবে গিয়েছিলাম বইয়ে। উপন্যাসে অতি আপনজনদের ঘাত-প্রতিঘাত, দ্বন্দ্ব-প্রতিহিংসা, যোগ-বিয়োগের ধারায় আমি বাক্যহারা। সাথে বোধহয়, না পাওয়া রত্নের যথাযথ যত্নের সাথে মূল্যায়ন না করলে হারিয়ে পরে আফসোসের প্রায়শ্চিত্ত কাজে লাগে না। বইটি শুধু সামাজিক ঘরনার বলেই ক্ষান্ত দেওয়া যাবে না। এখানে আপনি সুবহানার ইসলামিক আবহচিত্র পাবেন, কিন্তু ইসলামিক বই ভেবে ভুল করবেন না। পাবেন শওকত দেওয়ানসহ আরো কিছু চরিত্রের রাজনৈতিক কলাকৌশল, কুটচালের প্রভাব-প্রতাপ, জঙ্গিদের বিষয়ও উঠে এসেছে। রোমান্টিকতার স্বাদ তো পাবেনই অতিরঞ্জিত রোমান্স ভেবে আবার ভুল করবেন না কিন্তু লেখিকা খুবই মার্জিতভাবে উপস্থাপন করেছেন সকল ভালোবাসার মূহুর্তদ্বয়, হৃদয় ভালোলাগায় এমনই সিক্ত হয়ে যায়। সাথে পাবেন নীল বিষাদের বিষণ্ণতায় খণ্ডিত নারীর দ্বিখণ্ডিত হৃদয় কথন, এই কথনে আরো দু'জনের হৃদয়ের খণ্ডিত আর্তনাদও রয়েছে। আর সামনে এগুতে থাকা একের পর এক পৃষ্ঠার রহস্যের উন্মোচনের আচানক ধাক্কা পরতে পরতে টুইস্ট দেবে আপনাকে। কারণ মুখের আড়ালেও মুখোশ থাকে, ঘটনার আড়ালেও কাহিনি থাকে। কিছু মানুষের কাম, ক্রোধ, মোহ, অহংকার, ঈর্ষার শেষটায় কী ছিল জানতে হলেও পড়তে হবে বইটি৷ এমন হাজারো দ্বিখণ্ডিতার বাস্তব চরিত্র রয়েছে, হয়তো আমরা দেখি না কিংবা আবার দেখলেও তা অনুভাবিত করে না। লেখিকা বইয়ের মাধ্যমে সেটা আমাদের উপলব্ধি করিয়েছেন। বইটি পুরোই একটা এ ট ম বো ম, যা আমার হৃদয়ে কোথাও ব্লা স্ট হয়ে ভাঙচুর করেছে। এমন মিশ্র অনুভূতিতে আমি বিধস্ত, এর রেশ বহুসময় বিকাশ ঘটাবে। এই ঘরানার বই আমার খুবই পছন্দ এবং পড়াও এই প্রথম। এত বড়ো উপন্যাস এতটুকুও বিরক্ত আসেনি, উলটো আগ্রহ ছিল একবসায় পুরোটা পড়ে জানার। আমার কাছে মনে হলো জীবন্ত কোনো মুভি চলছে চোখের সামনে। আমার পড়া বেস্ট একটি বই। ★প্রিয় চরিত্র : শামস : শামস নামটা যেমন ইউনিক তেমনই আমার দ্বিধায় জড়িত সে। সে কি আমাকে মুগ্ধ করল নাকি মুগ্ধতার বিপরীত কর্মকাণ্ডে তারজন্য ঘৃণা তৈরি করল। এই ক্ষণে ক্ষণে বদলে যাওয়া চরিত্র আমাকে পুরোপুরি দ্বিখণ্ডিত করল যেন। মানুষটার একের পর এক করা ভুলগুলো দেখে রাগ আর খারাপ লাগে আবার সে-ই একই মানুষটার কিছু কিছু কষ্ট দেখে মায়াও লাগে শেষে। লেখিকার সৃষ্ট এই অতি আবেগী আবার কাঠিন্যে ঠাট বজায় চলা চরিত্রটিই আমাকে পুরো গল্পে বেশিরভাগ বিভোর করেছিল। সুবহানা জান্নাত : সুবহানা জান্নাত খোদাভীরু ধর্মীয় অনুশাসন মানা ধৈর্য্যশীলা অল্পবয়সী নীলনয়না নারী। যার আত্মমর্যাদা, পর্দার সংযমের বাঁধ অন্য নারীদের থেকে আলাদা করে, এমনই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তার। হৃদয়ে অবগুণ্ঠিত করেও এগিয়ে যায় যা সৃষ্টিকর্তা রেখেছেন তার জন্য, সে তা-ই গ্রহণ করে বিনা দ্বিধাতে। প্রতি পদে পদে তার জন্য নেওয়া পরীক্ষা দেখে আমারই মাথা কাজ করছিল না, সেখানে তার ধীরস্থির লয়ভাব আমাকে বিস্মিত করছিল। লেখিকার অনবদ্য সৃষ্টি যেন এই চরিত্র। মুসলিম মেয়েদের অনেককিছু শেখার আছে এই চরিত্র থেকে, এমনই এক আদর্শ চরিত্র এটি। আরিজ : আরিজ নামক মানুষটা ন্যায়পরায়ণ, দায়িত্বশীল, প্রশংসনীয় ও জাদুকরী মানুষকে সম্মোহনের আলাদা চরিত্রের অধিকারী। সাহায্যের জন্য বিশেষ করে আপনজনদের ক্ষেত্রে বিপক্ষের শত্রুর সাথে লড়তেও দ্বিধা করে না। তবুও মানুষটার দুঃখ-বিষাদের একাকীত্ব নির্বাসনের সাগর রয়েছে। যেখানে দ্বিতীয় সঙ্গ আসার সুযোগই হয়ে ওঠে না কিছু দায়-দেনার কারণে। তার এই বিষাদ ভরা দুঃখগুলো মাঝেমধ্যে মনে হয় যেন নিজেরই প্রতিবিম্ব। মানুষটার অসহায়ত্বে হৃদয় সিক্ততায় ভারাক্রান্ত হয়। তার কথা ভাবলেই মনে আসে, এত ভালো ও সৎ হতে নেই। হামিদা খালা : এই মানুষটা শক্ত মুখের আদলে কিন্তু মায়া-মমতায় ঘেরা অন্দলে, সুবহাকে যেভাবে আপন করে নেয় পরে। এই মানুষটাকে আমার খুবই ভালো লাগে। আরেকটা অতি প্রিয় নিষ্পাপ, শান্ত, মায়াবী মুখের চরিত্র আছে, যারা পড়বে ঠিকই বুঝবে। ★অপ্রিয় চরিত্র : শওকত দেওয়ান : যার ঠান্ডা মাথার প্রতিটি হিসাব হয় নিখুঁত নিজস্ব স্বার্থোদ্বারে তা আপনজনদের ক্ষেত্রেও বাদ পড়ে না। তিনি যেন রাজনৈতিক মারপ্যাঁচ খেলার দাবাড়ু। সাবরিনা আর সারা : অপছন্দের তালিকায় শীর্ষে এরা দু'জন। সামনে পেলে যে কী করতাম তাদের সাথে…! এমন চরিত্র অবশ্য বাস্তবেই অহরহ। যারা সাফল্যও ক্যারিয়ার গঠনের জন্য উপরে ওঠার সিড়ির জন্য নেশাক্তের মতো আগেপিছে ভাবে না কারো জীবন-সংসার ধ্বংস করতে। এরা হয় আস্তিনের সর্প, যা সুযোগ বুঝে দংশন করে। অন্যান্য আরো চরিত্র রয়েছে, জুনায়েদ শেখ নাজনীন ফুপু, নামিরা, নেহাল, লিমন, তূর্ণা, শ্যামল, আজম, সলিমুল্লাহ, সালমা আন্টি, অনুফা, শামা প্রমুখ। ★প্রিয় উক্তি বা লাইন : শুধু কি একটা বাক্য বা উক্তি পুরোটাই পড়ার মতো শিক্ষণীয়, হাসি-আনন্দ বিষাদের খণ্ডিত খণ্ডিত অনুভূতি উপলব্ধিতে সজ্জিত পুরো উপন্যাস। কিছুকিছু বাক্য, কথা বা অংশ থাকে যা অনুভাবিত প্রকাশের মতো না, গভীর অর্থে আমার কাছে সেসব বাক্য তেমন বোধ হয়েছে। তবুও অতি-আবেগিত, হৃদয় সিক্ত করা কিছু উক্তি বা বাক্য উল্লেখ্য- “কাউকে অপেক্ষায় রেখে প্রস্থান কঠিনতম অপরাধই নয় একটা ভয়াবহ কাপুরুষতা।” “পৃথিবীর সবচেয়ে কষ্টকর হলো প্রিয়জনের সামনে মুখোশ পরে থাকা।” “কিছু কিছু মানুষের কাছাকাছি এলে আর কাউকে ভালোবাসার ক্ষমতা চলে যায়।” “নাফস মানুষকে আবেগের রূপ ধরে সর্বদাই প্ররোচিত করে।” “খোলা চোখে অনেক আলো চোখে আঁধার নামায়।” “আমাদের জীবনের সবচেয়ে দামি উপহার হলো স্মৃতি। জীবনে কঠিন সময়ে যেটা আমাদের শক্তি হয়ে কাজ করে। সুন্দর পরিবেশে এটা যতটা সুন্দর করতে পারো এটা ততই অসাধারণ উপহার হবে।” “তাজমহল বানাতে দুটা জিনিস লাগে শামস, অগাধ টাকা আর স্ত্রীর মৃত শরীর। মৃত শরীরে মন থাকে না। ভালোবাসা দেওয়া তো দূরের কথা।” “লড়াইয়ে আঘাত পাবার ভয় সাধারণ মানুষের হয় যোদ্ধার জন্য নয়।” “সময় পার হলো সব মানুষ নিজ নিজ পথই ধরে। অন্য কোনো বন্ধন তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ থাকে না।” “ভেতর থেকে ভেঙে পড়া ইমারতের যেচে পড়া নিজের অসহায়ত্ব দেখাতে নেই, এই সুযোগে ভাঙা ইট খুলে নিয়ে যেতে চায় স্বার্থপর মানুষ।” “কাউকে ঘৃণা করা সহজ নয়, তবে বেশিরভাগ সময়ই জানানো হয় না সে কতটা প্রিয় ছিল।” “ভালোবাসা তো বহমান নদীর মতো, জীবনের প্রয়োজনে গতিপথ বদলে ফেলে। তাই নতুন করে ভালোবাসা হতেই পারে; হওয়াই উচিত। প্রথম ভালোবাসা আর তার পরিপূর্ণতা একসাথে মেলে না, তখন মন খণ্ডিত হয়ে রয় অতীত আর বর্তমানের মাঝে, তাদের জন্য দুইটা সত্য দুটাই সুন্দর।” “ভালোবাসা কখনো ফিরিয়ে নেওয়া যায় না, কখনো মরে যায় না জান্নাত। রাশি রাশি ঘৃণার মাঝেও এক বিন্দু হয়ে ভালোবাসা বেঁচে থাকে।” সবচেয়ে ভালোলেগেছে শামসের পাঠানো ম্যাসেজ সুবহাকে, How Can You “SM_LE” Without “I” (পুরোটা লিখলাম না, বড়োসড়ো তো তাই) সেই চিঠিটি যেটা সুবহা লিখেছিল শামসকে উদ্দেশ্য করে। আর সেই প্রিয় সম্মোধন ❝ব্লু সাফায়ার❞ ★লেখা বিষয় : লেখিকার লিখনশৈলী সাহিত্যিক ভাষার আচ্ছাদনে বেষ্টিত এবং সুখপাঠ্য। বাক্য গঠন, চমৎকার সব নতুন নতুন ( অর্থাৎ যেসব শব্দ জানা নেই) শব্দচয়নের অলংকরণের মাধ্যমে রচনা করেছেন উপন্যাসটি। বাক্য ধারায় কী সুন্দর, গভীর, মর্মার্থ দাঁড় করিয়েছেন যেন বাস্তব জীবন ঢেলে দিয়েছেন বইয়ে; যা পাঠক হৃদয়ান্দোলিত করে। অবশ্য কয়েকটা সাধারণ শব্দে টাইপিং মিস্টেক ছিল যেগুলো এত বড়ো বইয়ে হারিয়ে গেছে গোণায় ধরার মতো নয়। খুবই সুন্দর গোছানো সুনিপুণ দক্ষতায়, ব্যাখ্যায় তৈরি করেছেন উপন্যাসের প্রতিটি স্তর। ★লেখক প্রসঙ্গ : লেখিকা শারমিন আঞ্জুম, জন্ম ঢাকায়। নেশা ছবি আঁকা, বই পড়া ও ঘুরে বেড়ানো। উপন্যাসের ক্ষেত্রে থ্রিলার, রোমান্টিক, হরর, সামাজিক সব ধরনের লেখার চেষ্টা করেন। লেখিকার এপর্যন্ত প্রকাশ পাওয়া একক বই সংখ্যা ৯ টি; নির্বাসন, কিছু না বলা কথা, আমারে দেব না ভুলিতে, প্রিয় চন্দ্রিমা, তুমি কেমন আছ, মোহমেঘ (চলন্তিকা পুরষ্কারপ্রাপ্ত), দ্রোহত্রয়ী, মৌতাত, দ্বিখণ্ডিতা। আরো একটি অনেক লেখক-লেখিকাদের সমন্বয়ে যা লেখিকার সম্পাদনায় প্রকাশিত গোয়েন্দা থ্রিলার বই, ভাঙা কাচের আয়না। লেখিকার লেখা যদিওবা অনলাইন গল্প হতে জানা। তবুও বই বলতে পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস পড়ার মাধ্যমে প্রথম ওনার লেখার সাথে পরিচিত, বলা যায় নতুন পাঠক সেক্ষেত্রে। এই দ্বিখণ্ডিতা পড়ার মাধ্যমে শ্রদ্ধেয় লেখিকা পছন্দের তালিকায় যোগ হলেন, সাথে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ; এত বড়ো ও সুন্দর ইউনিক একটি উপন্যাস আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য। রেটিং : কিছু কিছু উপন্যাস থাকে রেটিং এরও ঊর্ধ্বে। তবুও দিতে হয় ১০/১০। এর বেশি দিতে পারলে…! ★মলাট ও বাইন্ডিং : আমার অনেক নামি-দামি প্রকাশনীর মোটাসোটা বইও পড়া হয়েছে। বেশিরভাগ শুয়ে-বসে পড়ার অভ্যাস তো দেখা যায়, মাঝে এসে চাপ দিয়ে পড়তে গিয়েছিলাম, বাইন্ডিং এর ত্রুটির জন্য দেখা যায়, মাঝে এসে বাইডিং ছুটে গেছে, ভেঙে এসেছে কভার থেকে। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রকাশনা মলাট ও শক্তপোক্ত বাইন্ডিং এ খুব সুন্দর কাজ করা হয়েছে, শুয়ে-বসে পড়া যায়। সবচেয়ে ভালো-লাগার বিষয়টা হলো, বইটি মাশাল্লাহ রয়্যাল সাইজ ও পৃষ্ঠা সারাক্ষণ ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখি এতই আকর্ষণীয়। ★সবশেষে লেখিকার একটি বাক্য দিয়ে শেষ করি, “কিছু অনুভূতি ব্যাখ্যায় দিতে পৃথিবীর সব ভাষা হেরে যায়।” তেমনই অবস্থান থেকে এত বড়ো রিভিউ লেখেও মনে হলো আরো অনেক বলা যেত বইটি নিয়ে, প্রতিটি চরিত্রকে নিয়ে; সেখানে এই হাজার খানেক শব্দের সংখ্যার রিভিউও যেন ব্যাখ্যা-বর্ণনার ঊর্ধ্বে নয়। সমাপ্ত।

      By Sharmin Sarwar

      26 Feb 2023 02:59 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      বুক রিভিউঃ দ্বিখণ্ডিতা লেখকঃ শারমিন আঞ্জুম প্রকাশকঃ বইবাজার প্রকাশনী পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৫৫১ প্রকাশকালঃ বইমেলা ২০২৩ প্রচ্ছদঃ সাদিতউজ্জামান। বিশাল কলেবরের উপন্যাস দ্বিখণ্ডিতা।একজন ধর্মভীরু মেয়ের যৌবন থেকে প্রৌঢ়ত্বে পরিণত হওয়ার গল্প। সাথে জীবনের অমূল্য সম্পদ হারিয়ে বদলে যাওয়া মানুষের গল্প। আপাতদৃষ্টিতে এই নামটা সুবহানা জান্নাতকে উদ্দেশ্য করে দেয়া মনে হলেও পুরো উপন্যাস পড়ার পর মনে হয়েছে তিনটি প্রধান চরিত্রই জীবনের কোন কোন না কোন সময়ে খন্ডিত হয়েছে। সুবহানা জান্নাত একজনের কাছে সুবহা আরেকজনের কাছে জান্নাত।দুজন বিপরীত চরিত্রের মানুষ তাকে নামের দুটো খন্ডে ডাকলেও মনের গহীনে তার প্রতি একই অনুভূতি পোষণ করে। প্রথম প্রেম হারিয়ে নতুন করে কাউকে হৃদয়ে স্থান দেয়া সহজ নয়। যদি সেটা হয় প্রথম প্রেমিকের উপস্থিতিতে তবে তা আরো হৃদয়বিদারক।হৃদয়ের খন্ডিত হবার শুরু সেখানেই।প্রথমে অপূর্ব রূপ পরে চরিত্রমাধুর্যে সে স্বামীর মনে জায়গা করে নেয়।পরম করুণাময়ের একনিষ্ঠ ভক্ত বিধায় সে ধৈর্যশীলা। তাই বিপরীত চরিত্রের স্বামীকেও মনের মণিকোঠায় স্থান দিতে সক্ষম হয় একসময়।কিন্তু প্রচন্ড ঝড়ে যখন তার আত্মসম্মানে আঘাত লাগে তখন তার কঠোর রূপ দেখা যায়।খন্ডিত হৃদয়ের নীরব আর্তনাদ নিয়ে বেদনায় নীল হয়েও সে তার বিশ্বাসে ও মর্যাদায় অটল ছিল।সুবহানা জান্নাত আমাদের দেখায় ইসলামের অনুশাসন মোতাবেক চলা মানুষদের নিয়ে চারপাশের মানুষের কৌতূহল যেমন অপরিসীম তেমনি রয়েছে তাদেরকে হেয়জ্ঞান করার প্রবণতা। পর্দা যেন পর্দাকারিনীকে নয় অন্য সবার মন ও মস্তিষ্ক আচ্ছাদিত করে রেখেছে। মির্জা আরিজ দেওয়ান ওরফে আরজু একটা স্বপ্নের চরিত্র।একসময় নিজের জন্মপরিচয় না জানা আরিজ প্রতিনিয়ত তার পালক পিতার ঢালস্বরূপ ছিল।নিষ্ঠাবান প্রেমিক,পিতাভক্ত পুত্র, স্নেহময় ভাই সব রূপেই সে অতুলনীয়। কর্মক্ষেত্রেও সে চৌকস।বিশাল হৃদয়ের অধিকারী আরিজ আসলেই একজন সুপারম্যান। আমার কাছে উপন্যাসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় চরিত্র মির্জা সাহির দেওয়ান ওরফে শামস্।একই অঙ্গে তার কতো রূপ।তারুণ্যে প্লেবয়,যৌবনে সফল বিজনেসম্যান। সবসময় না চাইতে সব পাওয়ার জগতে বাস করেও মনের দিক থেকে সে ছিল নিঃস্ব, রিক্ত।সবাই তাকে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করেছে। এমনকি স্বয়ং জন্মদাতাও বাদ যায়নি।ভালোবাসা চিনতে ভুল করেছে বরাবরই। কিন্তু যখন সত্যি ভালোবাসার সন্ধান পেয়েছে ততদিনে বড্ড দেরী হয়ে গিয়েছে।সেই ভালোবাসা আর স্নেহকে সবার মাঝে বিলিয়ে দিয়ে হয়েছে শুদ্ধতম পুরুষ।তবু বিবেকের কাছে সে দায়বদ্ধতা এড়াতে পারেনি।চারিত্রিক গুণাবলীর বিচারে তার কোমলতাটুকু এসেছে মায়ের পরিবার থেকে আর নিষ্ঠুরতা বাবার কাছ থেকে। কি এক অদম্য আক্রোশে তার যৌবন কেটেছে।নিজে তাসের ঘরে বাস করছে জানা ছিলো বলেই হয়তোবা সবসময় পৃথিবীর সফলতম মানুষ হতে চেয়েছে।বইটা পড়তে গিয়ে একসময় প্রচন্ড রাগ হয়েছে আবার কখনো শামসকে ভালো লেগেছে।তার জীবনটাও নানা খন্ডে খন্ডিত। সুযোগসন্ধানী সারা ইয়াসমিনের পরিণতি সে নিজ কাজের বিনিময়ে পেয়েছে।এসব নর্দমার কীটরা সুস্থ সমাজের ক্যান্সার। শওকত পাটোয়ারী যেন অনেক চেনা চরিত্র। মুখোশ পরে থাকতে থাকতে একদিন যারা নিজের মুখটাকেই ভুলে যায়।তীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারী ক্ষমতার লোভে নিজের পরবর্তী প্রজন্মকে নিয়েও সে সওদা করেছে।কিন্তু সৃষ্টিকর্তা একদিন সবার হিসেব সমান করে দেন। অসাধারণ একজন পিতা জুনায়েদ শেখ।নিজের ঔরসজাত সন্তান না হলেও সুবহার প্রতি যে মমত্ব তিনি দেখিয়েছেন তা বিরল।জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সবর করা আর সবর শিক্ষা দেয়া পিতা চরম দুঃসময়ে সন্তানের ঢাল হয়ে থেকেছেন। সলিমুল্লাহ সাহেব ও তার স্ত্রী সালমা আন্টির চরিত্র ছোট হলেও মনে দাগ কেটেছে। একজন মানুষের সাফল্য বা ব্যর্থতার পিছনে পরিবারের গুরুত্ব অপরিসীম।বারবার খন্ডিত হয়েও সুবহানা জান্নাত শেষ পর্যন্ত টিকে গিয়েছে একটা স্নেহময় পরিবারের কারণে।যেখানে আছেন জুনায়েদ শেখের মতো পিতা, নামিরার মতো বোন।সব পেয়েও হারিয়ে ফেলা শামস দেখেছে পরিবারের নিকৃষ্ট রূপ যেখানে স্বয়ং জন্মদাতা সন্তানকে স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার করেন। দাম্পত্য সম্পর্কে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস আর সমঝোতার গুরুত্ব অপরিসীম।যখন এর ব্যতয় ঘটে তৃতীয় ব্যক্তির প্রবেশ ঘটে। বলাইবাহুল্য ইনারা সুযোগসন্ধানী হন।আর একটা দৃঢ় মজবুত দাম্পত্য জীবন মানুষকে সাফল্যের শীর্ষে নিয়ে যায়। শামস আরিজের চমৎকার রসায়ন এই উপন্যাসের অন্যতম আকর্ষণ। এই "ব্রোমান্টিক" দৃশ্যগুলো দারুণ উপভোগ্য ও সুখপাঠ্য। তাছাড়া সুবহা নামিরার সম্পর্কও চমৎকার। দুষ্টু নামিরা ধীরে ধীরে স্নেহময়ী দায়িত্বশীলা বোন হয়েছে।যে চরম কষ্টের দিনগুলোতে মায়ের ভালোবাসায় সামলেছে খণ্ডবিখণ্ড সুবহাকে। গোটা বইতে লেখিকা পবিত্র কোরআনের অনেক আয়াত ব্যবহার করেছেন যা গল্পের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এরমানে যে বইটা শুধু নির্দিষ্ট কোন ধর্মের লোকের জন্য লেখা তা নয়।যেকোন বিবেকবান মানুষ এই কথাগুলোর তাৎপর্য অনুভব করতে পারবে।বাংলাদেশের বিগত ও বর্তমান দিনগুলোর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বইটা অনেক সাহসী একটা পদক্ষেপ।কিছু ঘটনার বর্ণনায় আঁতকে উঠেছি।এতো নিখুঁত বর্ননা মুগ্ধ করেছে।তিনটি প্রধান চরিত্র নিয়ে লেখা হলেও এই উপন্যাস কোন ত্রিভুজ প্রেমের উপন্যাস নয়।এখানে সমাজব্যবস্থা,রাজনীতি, ধর্ম,কুটিলতা,জঙ্গিবাদ সব উঠে এসেছে। পুরোটা উপন্যাস ধারাবাহিকভাবে লেখা নয়। চরিত্রগুলোর স্মৃতিচারণের মাধ্যমে অনেকগুলো ঘটনা সামনে আসে।প্রতিটি বাক্যে মনোযোগী না হলে কাহিনির খেই হারিয়ে ফেলতে হবে।আমার দৃষ্টিতে গল্পের সেরা চমক এর সমাপ্তিটুকু।পুরো কাহিনীকে একটা নির্দিষ্ট দিকে ধাবিত করে শেষে এসে এমন টুইস্টের জন্য প্রস্তুত থাকে না পাঠক।এখানেই গল্পটা আরো আকর্ষণীয়। প্রচ্ছদটা আরো আকর্ষণীয় হতে পারতো।নীলনয়না ও নীলহিজাবে আবৃত দ্বিখন্ডিত সুবহার ব্যাকগ্রাউন্ড নীল না হয়ে অন্য রঙের হতে পারতো। কিছু মুদ্রণপ্রমাদ আছে যা পরবর্তীতে ঠিক হবে আশা রাখি। অসাধারণ ও মনে রাখার মতো একটা উপন্যাস উপহার দেয়ার জন্য ধন্যবাদ লেখিকাকে।

    • Was this review helpful to you?

      or

      #বুক_রিভিউ #বই_দ্বিখন্ডিতা #লেখক_শারমিন_আঞ্জুম #বই_বাজার_প্রাকাশনী #মুদ্রিত_মুল‍্য-1000 #পাঠপ্রতিক্রিয়া: অদ্ভুত এক বিবশতায় পেয়ে বসেছে। বড় আশ্চর্য এই ঘোর! একটা মাত্র বইয়ের যে কত ক্ষমতা আমি আজ আবার টের পেলাম। বেশ অনেক দিন পরে। অদ্ভুত এই বইটায় হাজারটা মুহূর্ত আছে যেখানে আপনি ভেঙ্গে চুড়ে চুরমার হয়ে যাবেন। আপনার আস্ত একটা হৃদয় কখন যে খন্ডিত হয়ে যাবে বুঝতেও পারবেন না। সেই হাজার টা মুহূর্তে আমি দাতে দাত চেপে রেখেছি। একফোটা পানি ঝরতে দেইনি চোখ থেকে। কিন্তু শেষ অংশটুকু পড়েতে পড়তে কখন যে চোখের কোল আপনা আপনিই ভিজে উঠেছে টেরই পাইনি। বই শেষ হয়ে গেছে অথচ আমার ঘোর নয়। আমি ঘোর নিয়ে তাকিয়ে থাকি খন্ডিত সেই চোখের দিকে। সময় কতক্ষণ গড়ালো সেই খেয়াল আমার নেই। #কাহিনীর_রিভিউ: গল্পটা সুবহানা জান্নাতের। এক খন্ডিত হৃদয়ের নারীর। এক ধর্মপ্রান আল্লাহ্ ভীরু তরুনীর যার পর্দাই তার আত্মমর্যাদা। আল্লাহর প্রিয় এক বান্দার যাকে তিনি কঠিন থেকে কঠিন পরিক্ষায় ফেলে পরিক্ষা করেছেন। যেটা আল্লাহ্ তার সব প্রিয় বান্দার সাথেই করেন। এই গল্প সুবহানা জান্নাতের দ্বিখন্ডিত হবার গল্প। তরুণী সুবহানা জান্নাত থেকে পৌঢ় হওয়ার এক কঠিন যাত্রা। খন্ডিত সেই হৃদয়ের এক অংশ যদি হয় শামস অন্য অংশ আরিজ। একজনের ভালোবাসা সমুদ্রের মতন,সুন্দর তবে হুটকরে আসা ঝড়ের মতন বিধ্বংসী। যে উথালপাতাল ঢেউয়ে সব ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চায়। আর অন‍্য জনের ভালোবাসা আকাশের মতন নির্মল, পবিত্র যে সবসময় ছায়া হয়েই থাকতে চায়। সম্পর্কের টানাপোড়েন দিয়ে শুরু গল্পটাকে ভুলেও সাধারণ ত্রিকোণ প্রেম কাহিনী ভাববেন না। কারন লেখকটা যে শারমিন আঞ্জুম সেটা ভোলা যাবে না। পারিবারিক দ্বন্দ্ব,কিছু রহস্য, রাজনৈতিক প্রক্ষাপট, সমাজে ফাঙ্গাসের মতন বিস্তার করে থাকা এক ঘৃণ্য সত্য পরকীয়তা, ক্ষমতার লোভ, অহংকার, লালসা এবং পতন। সব মিলিয়ে বিস্তৃত আকারে লেখা বিশাল এই বই যেটা আপনাকে এক মুহূর্তের জন্যেও বিরক্ত হতে দেবে না। শেষে এসে অল্প সময়ের জন্য হয়তো মনে হতে পারে স্লো হয়েছে কিন্তু ঠিক তার পর মুহূর্তেই দারুন উত্তেজনা। এবং শেষ হতে হতে আপনার মনে গেথে যাবে এক অন‍্যরকম অনুভূতি। লেখক তার নিজেস্ব ধারার বাহিরে গিয়ে এই প্রথম এতো ব‍্যাখ‍্যা সহ কোন লেখা লিখলেন কারন আমি যে শারমিন আঞ্জুমকে চিনি তিনি সব বিষয়ে ব‍্যাখ‍্যা দিতে পছন্দ করেন না। তাই তার সব লেখাই কিছু তৃষ্ণা রেখে যায়। কিন্তু এই বইয়ে তিনি সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেছেন যা পরিতৃপ্ত করে মনকে। কিন্তু এক অদৃশ্য ঘোর রেখে যান। যা সহজেই কাটবে না। সর্বপরি যেটা বেশি আকর্ষণ করেছে। লেখকের সৃষ্টি দুটো চরিত্র। শামস এবং আরিজ। একজনকে তিনি সৃষ্টি করেছেন মহৎ গুণের অধিকারী করে অন্য জনকে ভালো কিছু গুণে সাথে মিশ্রণ করে দিয়েছে অহংকার, লোভ, লালসার মতন কিছু কালো ছায়া। এ যেনো একজন মানুষের মধ্যে দুটো স্বত্বার লড়াই। কাকে হারিয়ে কে জিতেছে? এবং সবথেকে ইনট্রেস্টিং বিষয় হলো এই খারাপ মানুষ টাকেই আপনি হাজর চাইলেও ইগনোর করতে পারবেন না। এবং না চাইতেও তার জন্য আদ্রো হবে মন। লেখক চরিত্র নিয়ে ভালো এবং সফল একটা এক্সপেরিমেন্ট করেছেন। এবং একটা রত্ন নিয়ে যে কারো কারো কাছে গিয়ে নিজের দ‍্যূতি হারায়, ফিকে হয়ে যায় তার উজ্জ্বলতা, আবার কারো কারো কাছে সে তার নিজেস্ব দ‍্যূতির থেকেও বেশি উজ্জ্বলতা পায়। লেখক সুক্ষ্মভাবে সম্পর্কের ভিত্তির উপর কিছু আলাদা আলাদা পার্থক্য দেখিয়েছেন। #ম‍্যাসেজ/শিক্ষা: একটা সঠিক বই একটা মানুষের আমূল পরিবর্তন করতে সক্ষম। এই বইটা যে আমাকে কত কিছু শিখিয়ে গেলো। এই বইটা পড়তে পড়তে মন হয়েছে আমি কত বড় হয়ে গেলাম। বইটি আমি অবশ্যই সবাইকে পড়তে বলবো। পর্দায় ঢাকা মুখ এবং পবিত্র কুরআনের বানি সমগ্র বইয়ে প্রাধান্য পেয়েছে ঠিকই কিন্তু এখানে কট্টর কিছু আপনি পাবেন না। আধুনিকতার সংঙ্গা আপনার কাছে কী? আধুনিকতা কি শুধু পোষাকে? সাহিত্য সংস্কৃতি আপনার কাছে কি? নাচ গান মানেই কি সংস্কৃতি? বইমেয়ার যারা যায় তারাই কি শুধু সাহিত্যমন? আধুনিকতা, সাহিত্য, সংস্কৃতি সবকিছুই কি মনের না, অনুধাবনের না? অবগুন্ঠিত একজকে দেখলেই আপনাদের কেন কট্টর মনে করতে হবে। আপনি আপনার মর্জিকে ভালোবেসেছেন সে আল্লাহর মর্জিকে।তাই একান্তই যদি ইসলাম বিদ্বেষী না হন তাহলে আপনাকে স্বাগত জানাই দ্বিখন্ডিতার জার্নিতে। যেখানে ধর্মমনা আধুনিকতার এক দারুণ মিশ্রণ হয়েছে। যেই ভালোবাসা ধমকা ঝড়ের মতন করে আসে তা জীবনকে এলোমেলো করেই দেয়। হুট করে আসা ভালোবাসা আবার হুটকরেই চলে যায়।একটা সম্পর্কে ভালোবাসার থেকেও বোধহয় বেশি জরুরি ভরশা বিশ্বাস সম্মান। টাকা পয়সা নরীর লোভের চেয়েও ভয়াবহ ক্ষমতার লোভ। এই লোভে হয় নিজে শেষ হবে নয়তো সবাইকে নিয়ে শেষ হবে। তবে যা কিছুই অশুভ তার পতন নিশ্চিত। প্রিয় লাইন: # আমি কুট কৌশলে.....প্রাপ‍্য সিংহাসন ছিনিয়ে নিয়েছি,তার বিনিময়ে আল্লাহ্তালা আমার মাথার তাজ.....নিজ হাতে পরিয়ে দিয়েছেন। #ভালোবাসা কখনো ফিরিয়ে নেওয়া যায় না, কখনো মরে যায় না জান্নাত। রাশি রাশি ঘৃণার মাঝেও এক বিন্দু হয়ে ভালোবাসা বেঁচে থাকে। #বুকের মাঝে শব্দহীন প্রলয়। বিবশতার কাছে আত্মসমর্পণ ছাড়া আজ উপায়ও নেই, খন্ডিত হৃদয়ের আর্তনাদ সব সময় নীরবই হয়। #অযত্ন পেলেও একটা ভালো কোল থেকে কখনো ভুল মানুষ জন্ম নেয় না। কিন্তু একজন রুক্ষ স্বভাবের রক্ত থেকে ভালো মানুষ জন্মানো বেশ দুরূহ। #সব কিছু টাকা দিয়ে কেনা যায় না কিছু সম্পদ নিজ যোগ‍্যতায় ধরে রাখতে হয়। #প্রচ্ছদ/সম্পাদনা: এই বইমেলার সম্ভাবত সবথেকে দামী বইয়ের সাথে সাথে সবথেকে আকর্ষণীয় প্রচ্ছদের বই বলাটাও বোধহয় ভুল হবে না। ব্লু সাফায়ার দুই চোখে যে অন‍্যরকম আকর্ষণ। এই চোখ হাজারো যন্ত্রণার কথা বলে যায়। তবে সেই যন্ত্রণাও আদ্রো করতে পারেনি এই কঠিন চোখকে। তার খন্ডিত দুই চোখের তারায় খেয়াল করে দেখুন দুজন কে দেখতে পাবেন! এতো মোটা বই বাইন্ডিং নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকতে পারে। তবে বলছি নিশ্চিত হয়ে যান। পুরো বইটা আমি বিছানাতে শুয়ে বসে পড়েছি। কোন সমস্যা হয়নি,না কোন ক্ষতি। বইমেলার প্রচুর চাপ। তাই হাতে গোনা কয়েকটা টাইপিং মিসটেক দেখা দিয়েছে। তাতে বিশেষ সমস্যা হয় না। বা অতো চোখে পরে না। #রেটিং: কিছু কিছু বইয়ের রেটিং চাইলেও দেওয়া সম্ভব না। সেই সাহস টাই হয় না। কিছু কিছু কাজ মানুষ সারাজীবন মনের মধ্যে ধারন করে রাখতে চায়। দ্বিখন্ডিতা হৃদয়ে ধারন করে রাখর মতনই একটা বই।

      By Mousumi Ahmed

      19 Feb 2023 07:04 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      ★একনজরে: বই: দ্বিখন্ডিতা লেখক: শারমিন আঞ্জুম প্রকাশনী: বইবাজার মুদ্রিত মূল্য: ১০০০ টাকা ★পাঠ অনুভূতি: দ্বিখন্ডিতা নামটাই আকর্ষণ সৃষ্টি করার মতো। অল্পতেই পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম।অনেকদিন পর তুমুল উচ্ছ্বাস নিয়ে কোন উপন্যাস পড়লাম।টানা ২দিনে পড়ে শেষ করেছি।বর্তমান যুগে আমাদের সমাজের চরম নিষ্ঠুর বাস্তবতা কে কেন্দ্র করে লেখা উপন্যাস "দ্বিখন্ডিতা"।গল্পের বর্ণনা এত সুন্দর ছিল যে মনে হচ্ছিল সব চোখের সামনে লাইভ দেখছি। মাঝেমধ্যে অর্থ সহ হাদিস পড়ে ভীষণ মুগ্ধ হয়েছি।নতুন করে অনেক কিছু জানতে পেরেছি।ওরা যখন একের পর এক ভুল করছিল তখন এত রাগ লাগছিল।নিজের অজান্তেই কখন যেনো চোখ দিয়ে পানি পরা শুরু হয়ে গিয়েছিল।গল্পের একটা মোড়ে এসে আমি কিছুতেই আর পড়তে পারছিলাম না।সুবহার কষ্ট, শামসের নিষ্ঠুরতা আমার বাস্তব জীবনে প্রভাব পরেছে।কোন কাজে মন দিতে পারছিলাম না। লেখিকা আপুর লেখা বরাবরের মতো অসাধারণ ছিল। উনার লেখা সত্যি প্রশংসনীয়।লেখিকা আপু তার লেখার মাধ্যমে প্রতিটা চরিত্র ভীষণ সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। গল্পটা একদম মাথায় গেঁথে গেছে। অনেকদিন পর্যন্ত মনে থাকবে। আপুর প্রতিটা বইয়ে শিক্ষনীয় অনেক মেসেজ থাকে৷ এই বইয়েও অসংখ্য শিক্ষনীয় মেসেজ ছিল। জীবনে চলার পথে এই মেসেজ গুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। সব মিলিয়ে চমৎকার কিছু সময় কাটলো। ★প্রিয় চরিত্র: অসম্ভব সুন্দর ব্যক্তিত্বের অধিকারী সুদর্শন পুরুষ মির্জা আরিজ আলী দেওয়ান। যার নামের অর্থ সম্মানিত। এক আকাশ মায়া যার বুকে। সাগরের মতো ধৈর্যশীল। প্রিয়জনের জন্য যে সব কিছু করতে সর্বদা প্রস্তুত। আমার প্রিয় চরিত্রের তালিকায় আরেকটি নাম যুক্ত হলো। ★প্রিয় উক্তি: ?একনারীতে আজীবন আসক্ত পুরুষদের সমগ্র পৃথিবী শ্রেষ্ঠত্বের খেতাব দেয়।কিন্তু কিছু হতভাগ্যরাই জানে এই আসক্তি কতটা যন্ত্রণার। ?ঘৃণা বড় সাবধানে করা উচিত। যার উপস্থিতির কারণে জীবনটা আজ শাস্তির মতো মনে হচ্ছে,কাল হয়তো তাকে হারিয়ে বুঝবেন যে সে আপনার কোন মহান পূণ্যের ফল হয়ে এসেছিল। সৎকর্মে স্রষ্টা উপহার দেন, আমাদের সেই উপহারটা ধরে রাখতে জানতে হয়। ?ভালবাসা ফিরিয়ে নিতে নেই। ফিরিয়ে নেয়া যায় না,হাজারো ঘৃণার মধ্যেও একবিন্দু ভালবাসা থাকলে তা আজীবন বেঁচে থাকে। ?একজন ধর্মভীরু,পর্দাশীলা নারীর সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, সে দূর্বল হতে পারে। কিন্তু একজন মা সব অবস্থায় সাহসিনী, শক্তিময়ী।মাতৃত্বের তাগিদে আজরাইলের সাথে লড়তে তৈরী যে হয়ে যায়,ঘোরের মাঝে আগুনে পুড়ে ছাই হতে থাকলেও বুঝবে না সে কী করছে। ★বাইন্ডিং: বইয়ের বাইন্ডিং ভালো ছিল।এত বড় রয়্যাল সাইজের গুলুমুলু একটা বই কিন্তু পড়তে কোন অসুবিধা হয়নি। প্রচ্ছদ যখন ফেসবুকে দেওয়া হয়েছিল তখন আমার তেমন ভালো লাগেনি কিন্তু সামনাসামনি ভীষণ সুন্দর। কয়েক জায়গায় সামান্য কিছু বানানের ভুল ছাড়া তেমন কিছু চোখে পড়েনি। ★রেটিং: ৯.৫/১০ রিভিউতে- মৌসুমী আহমেদ ভূলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।?

      By Masnuva Zabin

      04 Mar 2023 04:04 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      দ্বিখন্ডিতা' গল্পটা শুধুই কি সুবহা-জান্নাতের খন্ডিত হওয়ার গল্প? না, এটা রাজপুত্র শামস ও এক মুকুটহীন রাজপুত্র সুপারম্যান আরিজেরও খন্ডিত হবার গল্প। এক অহমে ভরা, মিথ্যায় ঠাসা, শঠতায় ভরা দুনিয়ায় স্বাধীনতা (!) খোঁজা এক দুঃখী ও প্রতারক রাজপুত্রের পরিশুদ্ধ হওয়ার গল্প। সুবহা- জান্নাতের ভালোবাসা, প্রণয়, বঞ্চনা, দ্বিধা, প্রতারিত হওয়ার গল্প। সৃষ্টিকর্তার উপর কি দারুণ আস্থার বর্ণনা! শত বাঁধাতেও মূল্যবোধ আগলে রাখার গল্প। আ মাস্ট রিড বুক। না পড়লে মিস করবেন।

    •  

    Recently Viewed


    Great offers, Direct to your inbox and stay one step ahead.
    • You can pay using


    JOIN US

    icon Download App

    Rokomari.com is now one of the leading e-commerce organizations in Bangladesh. It is indeed the biggest online bookshop or bookstore in Bangladesh that helps you save time and money. You can buy books online with a few clicks or a convenient phone call. With breathtaking discounts and offers you can buy anything from Bangla Upannash or English story books to academic, research or competitive exam books. Superfast cash on delivery service brings the products at your doorstep. Our customer support, return and replacement policies will surely add extra confidence in your online shopping experience. Happy Shopping with Rokomari.com!