User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_ফারহানা_ইবুক_রিভিউ_প্রতিযোগিতা ফারহানা আহমেদ এর লেখা "ঝড়ে বক মরে" এক অনবদ্য সমকালীন উপন্যাস, যেখানে কুসংস্কার, ক্ষমতার লোভ ও সমাজের দ্বন্দ্ব এক সুতোয় গেঁথে পাঠকের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। উপন্যাসটির পটভূমি হুরমতিগঞ্জ— গ্রামে যেখানে বিজ্ঞান এখনো জায়গা করে নিতে পারেনি। কুসংস্কারের শেকড় এত গভীর যে চিকিৎসার পরিবর্তে মসজিদের পানিপড়া, তেলপড়া কিংবা ধর্মীয় কুসংস্কারকেই মানুষ বেশি বিশ্বাস করে। এই বাস্তবতাকে বদলে দিতে হাজির হয় প্রশিক্ষিত ডাক্তার ফাহমিদা। গ্রামে মহামারী ছড়িয়ে পড়লে সে নিজ উদ্যোগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা শুরু করে, যার সহযোগী হয় ওয়াহিদ। তবে গ্রামের মাতব্বর ইলিয়াস খাঁ ও ধর্মীয় নেতা হুজুর বিষয়টি ভালোভাবে নেয় না। তারা কৌশলে মানুষকে হাসপাতাল বিমুখ করতে চায়, ধর্মকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। ওয়াহিদ তার বাবার বাধার তোয়াক্কা না করলেও পুরো পরিস্থিতি এক ভয়ংকর সংঘর্ষের দিকে এগিয়ে যায়। উপন্যাসে সম্পর্কের জটিলতা ও ক্ষমতার রাজনীতি দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। লেখক দেখিয়েছেন, কুসংস্কার কীভাবে মানুষকে শেকলে আবদ্ধ করে রাখে, কীভাবে ক্ষমতার লোভ সমাজের শিকড় নাড়িয়ে দেয়। এই প্রসঙ্গে তাহিরার চরিত্র বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সে একদিকে লাঞ্ছিত, অন্যদিকে নিজেকে প্রমাণের সুযোগ পেয়েছে মাতব্বরের মাধ্যমে। ক্ষমতা বা টাকার প্রতি লোভ না থাকলেও সে সম্মান চায়, আর সেটি অর্জন করতে গিয়েই সরল তাহিরা হয়ে ওঠে কুটিল। চরিত্রটির দ্বৈততা ও বিকাশ উপন্যাসকে আরও বাস্তবসম্মত করে তুলেছে। উপন্যাসের আরেকটি রহস্যময় চরিত্র হলো হুজুর। পুরো গল্প জুড়েই তার পরিচয় ও উদ্দেশ্য রহস্যে মোড়া থাকে। তার ট্রাংকের ভেতর কী আছে, কেন সে এমন করছে—এসব প্রশ্ন পাঠককে ভাবতে বাধ্য করে। যখন তার পরিচয় প্রকাশিত হয়, তখন সত্যিই এক বিস্ময়কর মোড় নেয় কাহিনি। ওয়াহিদ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র হলেও তার ব্যক্তিত্ব বিশেষভাবে আকর্ষণীয় নয়। তবে ফাহমিদার প্রতি তার ভালোবাসায় কোনো খাদ নেই। অন্যদিকে, ফাহমিদা এক সাহসী ও আদর্শবাদী নারী, যে প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে নিজের দায়িত্ব পালন করে গেছে। হুজুর ও মাতব্বরের ভয়ে সে কখনো পিছপা হয়নি, বরং নিজের অবস্থান দৃঢ় রেখেছে। লেখক ওয়াহিদ-ফাহমিদার সম্পর্কের টানাপোড়েনকে খুব দক্ষতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন, যা উপন্যাসকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে। মাতব্বর ইলিয়াস খাঁর চরিত্র একজন নিখুঁত ক্ষমতালোভী ও স্বার্থপর ব্যক্তির প্রতিচিত্র। তার মধ্যে নারী-লোভ প্রবল, এবং সেই লোভের ফল কী হয়, তা পাঠক শেষ পর্যন্ত গিয়ে বুঝতে পারে। উপন্যাসটির অন্যতম শক্তিশালী দিক হলো এর বাস্তবতা ও গভীর সমাজচিত্র। লেখক অত্যন্ত নিখুঁতভাবে দেখিয়েছেন, কুসংস্কার কীভাবে একটি সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে পারে, কীভাবে ক্ষমতা ও ধর্মের অপব্যবহার সাধারণ মানুষকে বিপথে ঠেলে দেয়। একই সঙ্গে প্রেম, অনুশোচনা ও আত্মপরিচয়ের সন্ধানও গল্পের মোড়কে জড়িয়ে আছে। ঝড়ে বক মরে কেবল কুসংস্কারের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ নয়, এটি এক সামাজিক দর্পণ, যা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় সমাজের গভীর অসংগতি। বইটি পড়ার পর পাঠকের মনে দীর্ঘসময় ধরে একধরনের চিন্তার ঢেউ খেলে যাবে। এটি নিঃসন্দেহে আমাদের সময়ের জন্য এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস। বই: ঝড়ে বক মরে লেখক: ফারহানা আহমেদ © শাহরিয়ার নাবিল
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_ফারহানা_ইবুক_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বই: ঝড়ে বক মরে লেখিকা: ফারহানা হোসেন জনরা: সামাজিক উপন্যাস রিভিউ: রুনা কথায় আছে, 'ঝড়ে বক মরে, ফকিরের কেরামতি বাড়ে'। তবে এখানে কার কেরামতি বাড়ছে? ফকিরের নাকি সুশীলের রূপী বহুরূপীর! ◼️ কাহিনী সংক্ষেপ - আধুনিকতা ও শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত একটি গ্রাম 'হুরমতিগঞ্জ'। গ্রামটির জন্ম কীভাবে হলো জানা নেই কারো। তবে কুসংস্কার ঠিকই জন্ম নিয়ে নিয়ে ডাল পালা ছড়িয়েছে পুরো গ্রামে। গ্রামে হঠাৎ আগমন ঘটে হুজুরের। কি তার পরিচয়, কোথা থেকে এসেছে কেউ জানে না। একসময় হুজুর আর মাতব্বর হয়ে ওঠে বন্ধু। যাদের কথা গ্রামের মানুষের কাছে বেদ বাক্য। অন্ধত্ব ও গোঁড়ামির যাতাকলে গ্রামের মানুষ কোনো অসুখ বিসুখে ডাক্তারের কিছু যায় না। হুজুরের ঝাঁড় ফুঁক, পানি পড়া এসবই তারা সবকিছু মনে করে। এসকল কিছুই বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় মাতব্বর পুত্র ওয়াহিদ এবং শহর থেকে আসা ডাক্তার ফাহমিদা। ডাক্তারের কাছে গেলে গুনাহ হবে, প্রয়োজনে মৃত্যু হোক তবুও ডাক্তারের কাছে যাওয়া যাবে না এমন বিভিন্ন কুসংস্কার যখন ডাল পালা ছড়িয়ে চরম রূপে বিস্তার লাভ করে ফাহমিদা তখন মুখ খোলে। সোচ্চার হয় হুজুর এবং মাতব্বরের বিরুদ্ধে। তবে যুগ যুগ ধরে কুসংস্কারের অন্ধকারে গ্রাস করে ফেলা গ্রামের মানুষকে বোঝানো কি এতোই সহজ? সবসময় রহস্য নিয়ে চলা হুজুরের আসল রহস্য কী? শেষ পর্যন্ত হুজুরের পরিণতিই বা কি হয়? জানতে হলে পড়তে হবে ই-বুকটি। ◼️ পাঠ প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা - শাসকের নামে শোষণ করার প্রবৃত্তি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। আর সেটা যদি গ্রামের অশিক্ষিত লোক তাহলে তো কথাই নেই। সভ্যতার বিকাশ হলেও সংস্কার এখনও পরিপূর্ণভাবে হয়নি তাই এখনও গ্রামের নিরীহ মানুষদের ইচ্ছেমতো নাচানো যায়। পুরোটা বইয়ে লেখিকা তুলে ধরেছেন গ্রামীণ বাস্তব দৃশ্যপট। ক্ষমতার অপব্যবহার করে অন্যায় বিচার, ডাক্তারের চিকিৎসা না নেওয়া সবকিছুই তুলে ধরেছেন। এসবের পরিণতি এতোটাই ভয়াবহ মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে।তবে গল্পটা পড়তে পড়তে আমার 'লালসালু' উপন্যাসের কথা মনে পড়ছিল। তবে এই বই পড়তে গিয়ে উপভোগ করেছি। 'ধর্ম' মানুষের স্পর্শকাতর বিষয়। তাই ধর্মীয় গোঁড়ামির দিকটাও প্রচলিত হয়ে আছে যুগের পর যুগ। সভ্যতা এখন উন্নত হয়েছে, একটু সচেতনতাই পারে এ সমস্যা থেকে মানুষকে উত্তরণ করতে। তবে শিক্ষার আলোর থেকে বঞ্চিত জাতি কতোটা পিছিয়ে পড়ে সেটা এই বই থেকে বোঝা যায়। পুরো বইয়ে ফাহমিদা আমার পছন্দের চরিত্র হিসেবে ছিল। ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও যেভাবে হাল না ছেড়ে মনোবল ধরে রেখে লড়াই করেছে সেটা সবাই পারে না। ভালোবাসা মানুষকে নিয়ে যায় ধ্বংসের শেষ প্রান্তে। তবুও মানুষ ভালোবাসে, ভালোবাসা চায় এটাই বোধহয় জাগতিক নিয়ম। কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, বন্ধুত্ব, পারিবারিক অশান্তি, স্বামী স্ত্রীর অমিমাংসিত সম্পর্ক সবকিছু মিলিয়েই গল্প আগাতে থাকে। ◼️ পাঠক সমালোচনা - কোনোকিছু এক নাগাড়ে পড়তে গিয়ে বানান ভুল দেখলে হোঁচট খেতে হয়, পড়ার মধ্যে বাঁধার সৃষ্টি হয়। কিছু বানান ভুল পরিলক্ষিত হয়েছে পড়তে গিয়ে আবার টাইপিং মিস্টেকও হতে পারে তবে চেক করা প্রয়োজন ছিল। বইয়ের অন্যতম দুটি চরিত্র ওয়াহিদ ও ফাহমিদা। কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে এদের কার্যক্রম নড়বড়ে লেগেছে, আরেকটু স্ট্রং ভাবে উপস্থাপন করলে ভালো হতো। শুরুতে ঘটনা যে ফ্লোতে আগাচ্ছিল মাঝপথে তাল কে'টে গেছে বলে মনে হচ্ছিল। শুরুর ফ্লো ধরে রাখতে পারেনি। বিশেষ করে সমাপ্তির অংশে বেশ তাড়াহুড়ো করা হয়েছে। আরেকটু গুছিয়ে সমাপ্তি চমৎকার হতো। ◼️ পরিশেষে - ফারহানা আপুর লেখা ঝরঝরে। শব্দচয়নও চমৎকার সেই সাথে সুন্দরভাবে বর্ণনা করে ঘটনা এগিয়ে নিয়ে গেছে। বহুদিন পর অন্য ধারার লেখা পড়লাম, ভালো লেগেছে আমার কাছে। আশা করছি ভবিষ্যতে আরো চমৎকার কিছু পাবো উনার কাছ থেকে।
Was this review helpful to you?
or
মাঝে মাঝে সমাজে কুসংস্কার এমনভাবেই মূল গেঁড়ে বসে যা একসময় সংস্কৃতি হয়ে উঠে। একদল কপট লোক ধর্মীয় বিশ্বাসের বাহানায় সেই কুসংস্কারগুলোকে সমাজের মূলনীতি হিসেবে স্থাপন করে। তবে কেউ কেউ থাকে সেগুলোর প্রতিবাদ করার জন্য, প্রতিহত করার জন্য অক্লান্ত চেষ্টা করে যায়। যদি অবস্থাশালী কেউ হয় তখন বিপরীতে টিকে থাকা দুঃসহনীয় উঠে। এই কুসংস্কারের বলি হয় সমাজের নিচু স্তরের মানুষগুলো। তখন প্রতিহত করার জন্য উঁচু স্তরের মানুষদের সহায়তা প্রয়োজন হয়। আর এক সময় ঠিকই সেই কুসংস্কারের জাল ছিন্ন ভিন্ন হয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় সত্য। এরই মাঝে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির যন্ত্রণা পোহাতে হয় সমাজের সবাইকে। ফ্ল্যাপ থেকে: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বড়ো সমস্যায় ভোগে গ্রামাঞ্চলের মানুষ। একদিকে সরকারি ডাক্তারেরা যেতে চায় না সেখানে, অন্যদিকে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে পানিপড়া, তেলপড়া। এই দুটোর ভিন্ন পথ যদি একে অপরের মুখোমুখি হয়ে যায়, তখন কী হবে? এই উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র ফাহমিদা আর গ্রামের মাতব্বরের ছেলে ওয়াহিদ মোকাবিলা করছে মহামারির। অপরদিকে, মসজিদের হুজুর এটা ভালো চোখে দেখছে না। তার মতে, মানুষ আল্লাহকে ভুলে যাচ্ছে বলেই ডাক্তার ফাহমিদার কাছে যাচ্ছে, হাসপাতালমুখী হচ্ছে। পাঠ প্রতিক্রিয়া: "ঝড়ে বক মরে" বইটিতে গতানুগতিক সমাজের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। লেখিকার সাবলীল বর্ণণা আর উপযুক্ত শব্দচয়নে বইটি সুখপাঠ্য ছিল। বইয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গল্পের প্রবাহ ঠিক রেখে লেখা সামনে এগিয়ে নেয়াটা এক ধরনের শিল্প যা সবাই করতে পারেন না। মাঝে মাঝে খেই হারিয়ে ফেলে, কখনো কখনো বর্ণণা ধীর হয়ে যায়। সমাজের কিছু প্রভাবশালী লোক থাকে যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে সকল অন্যায়ের সর্বোচ্চা চূড়ায় পৌঁছে গেলেও একটা সময় পর্যন্ত তারা ধরা ছোঁয়ার বাহিরে থাকে। আর প্রভাবশালীদের সহযোগী যদি হয় কোনো বকধার্মিক তাহলে পুরো সমাজটাই তাদের হাতের মুঠোয়। বক্ষ্যমান বইটিতে লেখিকা ক্ষমতাবান আর ভন্ড ধার্মিকের মধ্যে যে সম্পর্ক স্থাপন করেছেন তা বাস্তবিক এবং প্রাসঙ্গিক। বইটি পড়ার সময় "লালসালু" কিছুটা আভাস পেলেও লেখিকা সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপে সমাপ্তি টেনেছেন যা বইটির মৌলিকত্ব বজা রাখতে সহায়ক হয়েছে। ভৌগোলিক ভাবেই আমরা ধর্মীয় দিকগুলোতে খুবই ভীরুতা প্রকাশ করি। অন্ধ ভক্তি করি ধর্মীয় লোকদের। কিন্তু কেউ কেউ ধর্মকে মুখোশ করে এর পেছনে ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধার করে, আর তার সহায়ক হিসেবে থাকে সমাজের প্রভাবশালীরা। যাতে দুয়ে মিলে সমাজের সবাইকে একটা বলয়ে আবদ্ধ রাখতে পারে। কিন্তু সত্য আপন গুনে প্রকাশিত হয়। পাপের বোঝা বেড়ে গেলে তখন প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়। যা বইয়ের শেষভাগে লেখিকা দারুণ লিখনশৈলীতে বর্ণণা করেছেন। চরিত্র বিশ্লেষণ: একটা উপন্যাসের পূর্ণতা আনতে চরিত্র বিল্ড আপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লেখিকা মাতুব্বর ও হুজুর চরিত্র দুটোকে বেশ ভালোভাবেই উপস্থাপন করেছেন। বিপরীতে জয়তুন, জুলেখা, ফাহমিদা, ওয়াহিদ আর হরকতদের বিশাল লিস্ট রেখেছেন তাদের প্রতিরোধ করতে। ওয়াহিদ, মাতুব্বরের ছেলে হওয়ায় বিরোধী দল হিসেবে তাদের দলটা বেশ শক্ত ছিল। যেকোনো পরিস্থিতিতে নির্যাতনের শিকার হওয়ার সুযোগ কম ছিল। ফাহমিদা পড়ালেখা করা, ডাক্তার। গ্রামে এসেই মানুষের মন জয় করে নিলে তখন সেও ধরা ছোঁয়ার বাহিরে চলে যায়। জয়তুন মাতুব্বরের স্ত্রী হলেও পৈতৃক সূত্রে প্রভাবশালী ছিল আর হরকত, হুজুরের খাদেম হয়ে হুজুরের সকল কুন্ডলী খোলার মোক্ষম দাবিদার ছিল। যার পূর্ণতা লেখিকার বইয়ের শেষভাগে দিয়েছেন। জুলেখা, আলতা, দুটো চরিত্র নিপীড়নের শিকার হলেও চরিত্র দুটোকে লেখিকা দারুণ সময়ে ব্যবহার করেছেন। একই ভাবে তাহিরাকেও দৃশ্যপট থেকে সরানোর কাজটা ছিল যথাযথ। জসিম চরিত্রটাকে আদর্শ স্বামীর রূপ দেয়ার চেষ্টা করেছেন, তবে তার দায়িত্ব জ্ঞানহীনতার বিষয়টিও লেখিকা স্পষ্ট ভাবেই লিখেছেন সমগ্র বইয়ে।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_ফারহানা_ইবুক_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বই: ঝড়ে বক মরে লেখায়: ফারহানা হোসেন ধরণ: সমকালীন উপন্যাস রিভিউতে: কেয়া "কুসংস্কার" শব্দটির সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। এটি এক ধরনের অন্ধবিশ্বাস এবং একে সমাজ জীবনের অভিশাপও বলা চলে। ধর্মীয় গোঁড়ামি, অজ্ঞতা ও অশিক্ষা থেকে সৃষ্টি হয় যাবতীয় কুসংস্কারের। প্রতিনিয়ত বিজ্ঞানকে অস্বীকার করে কুসংস্কারকে আঁকড়ে বাঁচতে চাওয়া কিছু মানুষকে কেন্দ্র করে হুরমতিগঞ্জের বুকে বয়ে চলা শত ব্যথা, ভালােবাসার উপাখ্যানের নামই হল "ঝড়ে বক মরে"। হুরমতিগঞ্জ, বিজ্ঞানের আলো থেকে বঞ্চিত এক গ্রাম। মসজিদের পানিপড়া, তেলপড়াই যাদের চিকিৎসার অন্যতম ঔষুধ। কিন্তু এর ব্যতিক্রম ঘটায় গ্রামের নতুন প্রশিক্ষিত ডাক্তার ফাহমিদা। মহামারী থেকে বাঁচাতে সবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা করায় এবং তাকে সাহায্য করে ওয়াহিদ। ব্যাপারটা মেনে নিতে পারে না গ্রামের মাতব্বর এবং হুজুর। আল্লাহর দোহাই দিয়ে মানুষদের হাসপাতাল বিমুখী করার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালায় হুজুর। মাতব্বর ইলিয়াস খাঁ তার ছেলে ওয়াহিদকে বারবার সাবধান করলেও ওয়াহিদ তার কথায় পাত্তা দেয় না। সম্পর্কের সংযোগ থেকেই শুরু হয় নানাবিধ সংকট। যে চার দেয়ালের ঘর বন্ধন তৈরি করেছিল, সেই দেয়ালই আবার হয়ে ওঠে বিভেদের বেড়াজাল। সেই বেড়াজাল ভেদ করে বেরিয়ে আসে কান্নার শব্দ। ক্ষমতা আর অর্থের লোভ, মানুষকে কোন পর্যায়ে নামিয়ে দেয়, পুরো বই জুড়ে আমরা একের পর এক দৃষ্টান্ত দেখি। চোখের সামনে বদলে যেতে থাকে গ্রামের হুজুর এবং মাতব্বর। টাকার জোর মানুষকে কথা বলতে শেখায়, তা সে যেই উৎস থেকেই আসুক না কেন! সেই পরিবর্তন আমাকে বিস্মিত করে। অবক্ষয়ের স্পষ্ট চিত্র দেখে ছটফট করতে করতে ভাবি, এ তো সমাজের চিরন্তন বাস্তব। এক গ্রামীণ ক্ষমতাশীল পরিবার চোখের সামনে একটু একটু করে ধ্বসে যেতে থাকে। সমান্তরাল গতিতে আমরা খুঁজে পাই একটি প্রেমের গল্প, একটি অনুশোচনার গল্প। কুসংস্কারকে আশ্রয় করে এক অদ্ভুত আর আশ্চর্য গল্প নিয়ে লেখা এই উপন্যাস আমাকে স্থবির করে দেয়, উত্তাল বিষণ্ণতায় ভোগায় প্রবলভাবে। চরিত্রগুলো যেন চোখের সামনে হাঁটছে-ফিরছে; সময় আর প্রেক্ষাপটের সাথে মিশে যাচ্ছে পাঠকের নিজের অস্তিত্ব- কী অদ্ভুত! এই বইটি পাঠককে অনেকদিন ভাবাবে, ভাবাবে হুরমতিগঞ্জের মানুষের জীবনকে। আমার কাছে গল্পের সবচেয়ে আকর্ষণীয় চরিত্র ছিল তাহিরা। একদিকে প্রতিনিয়ত হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছে, আবার হুট করেই নিজেকে প্রমাণের বড় সুযোগ তার হাতে এসেছে মাতব্বরের মাধ্যমে। তার ক্ষমতার লোভ নেই, অর্থেরও লোভ নেই। সে যা চায় তা খুবই সাধারণ, সে চায় সম্মান। আর সেই সম্মান আদায় করতে, বা নিজেকে প্রমাণ করতে ধীরে ধীরে সরল তাহিরা হয়ে ওঠে কুটিল। উপন্যাসের পুরোটা জুড়েই হুজুর রহস্যমানব। তার পরিচয় কি, তার ট্রাংকে কি আছে- সহকারী হরকতের সাথে সাথে সেটা আমাকেও ভাবিয়ে তুলেছিল। তবে শেষটায় তার পরিচয় পেয়ে অন্য সবার মতো আমার চক্ষুও চড়কগাছ! ওয়াহিদ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র হলেও তার ব্যক্তিত্ব আমার ভালো লগে নি। তবে ফাহমিদার জন্য তার ভালোবাসায় কোনো কমতি নেই। ফাহমিদা সাহসী নারী, মহামারীতেও সবাইকে যত্নে আগলে রেখেছে। হুজুর কিংবা মাতব্বর কারো ভয়ে পিছপা হয় নি সে। ওয়াহিদ-ফাহমিদার সম্পর্ক নিয়ে সংশয় থাকলেও লেখিকা চমৎকারভাবে তা দূর করেছেন। মাতব্বর ইলিয়াস খাঁ, ধূর্ত মানুষ। তার মধ্যে সকল খারাপ গুণ রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম নারী লোভ। আর এই লোভের পরিণতি একদিকে ভালো, অন্যদিকে খারাপ। এমনটা বলার কারণ পাঠক বইটি শেষ করেই বুঝতে পারবে। "ঝড়ে বক মরে" বর্তমান সময়ের এক ব্যাধি নিয়ে লেখা। এই উপন্যাসটিতে দেখানো হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে বয়ে চলা এক কুসংস্কারের ভেতরকার কুটিলতা, তার রেশ ধরে আসা মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা এবং এর ভয়াবহতা। বইটি এক প্রতিবাদময় ভালোবাসার জগত। যেখানে হিংসা, বিদ্বেষ ছাপিয়ে শুধু থেকে যায় কিছু বিষাদময় সুখস্মৃতি।
Was this review helpful to you?
or
গ্রামীণ পরিবেশ নিয়ে লেখা চমৎকার বই
Was this review helpful to you?
or
#ঝড়ে_বক_মরে #রিভিউ ♦এক নজরেঃ •উপন্যাসের নামঃ ঝড়ে বক মরে •লেখকঃ ফারহানা হোসেন •ধরনঃ সমকালীন •প্রকাশনীঃ চন্দ্রভুক প্রকাশন •প্রচ্ছদঃ আদনান আহমেদ রিজন •মুদ্রিত মূল্যঃ ২২৫ •পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৯৪ •প্রকাশকালঃ অক্টোবর ২০২১ •লেখনীতেঃ রিফায়াত হাসান সাকিব ♦ভূমিকাঃ গ্রাম বাংলার মানুষ বলে কিনা জানি না, গ্রাম নিয়ে থাকতেই আমার ভালো লাগে । ছোটবেলা থেকে গ্রামেই মানুষ বলে গ্রামেই জুড়ে আছি আমি । ঠিক এই কারণেই বোধহয় গ্রামের বাতাসে যে মিষ্টি মিষ্টি ঘ্রাণ, একটা আনকোড়া অজানা সুর ভেসে আসে সেই বিষয়টাই মুগ্ধ করে । গ্রাম নিয়ে থাকা উপন্যাসগুলোও তাই অন্যরকম লাগে । ♦পারিপার্শ্বিক দিকঃ ঝড়ে বক মরে! পৃষ্ঠা সংখ্যা ৯৪ । দেখতে যেমন ছোট্ট বাচ্চা একটি উপন্যাস । পড়তেও তেমন ছোট্ট এবং মিষ্টি মনে হলো । বিভিন্ন কাজের জন্য বইটা পড়তে পড়তেই দেরি হয়ে গেল । তাই আজকে রাতে পড়া হবে এটা কিভাবে যেন আমি জানতামই । মনেই হচ্ছিল আজকে এই উপন্যাসের জন্য আমার সময় বরাদ্দ থাকবেই । যাহোক ঠিক রাত ১২টায় পড়া শুরু করেছিলাম উপন্যাসটি । এবং একনাগাড়ে পড়তে চাওয়া উপন্যাসটি তাই রাত ২টা ১৫ মিনিটে শেষ করে এখন রিভিউ লিখতে বসেছি । ♦নামকরণঃ গ্রাম বাংলায় বিভিন্ন ঘটমান বিষয়ে অনেকগুলো এলোমেলো মতবাদ তুলে ধরা হয়ে থাকে । যেগুলোর কোনো বর্ণনা থাকে না । চুপটি করে ভাবতে বসলে যার কোনো ভিত্তি থাকে না । এই কুসংস্কার এর পথচলা এলোমেলো গ্রাম, হুরমতিগঞ্জে যেন অন্যরকম এক আবহ তৈরি করে দিল । সেজন্যেই উপন্যাসের নামটি “ঝড়ে বক মরে” একেবারে যথার্থ হয়েছে । ♦ ফ্ল্যাপঃ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বড়ো সমস্যায় ভোগে গ্রামাঞ্চলের মানুষ । একদিকে সরকারি ডাক্তারেরা যেতে চায় না সেখানে, অন্যদিকে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে পানিপড়া, তেলপড়া । এই দুটোর ভিন্ন পথ যদি একে অপরের মুখোমুখি হয়ে যায়, তখন কী হবে? এই উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র ফাহমিদা আর গ্রামের মাতব্বরের ছেলে ওয়াহিদ মোকাবিলা করছে মহামারির । অপরদিকে, মসজিদের হুজুর এটা ভালো চোখে দেখছে না । তার মতে, মানুষ আল্লাহকে ভুলে যাচ্ছে বলেই ডাক্তার ফাহমিদার কাছে যাচ্ছে, হাসপাতালমুখী হচ্ছে । কিন্তু এতে করে কী ক্ষতি হুজুরের বা গ্রামের মাতব্বরের? তাদের আসল উদ্দেশ্য কী? গ্রামের সহজ সরল মানুষকে তারা বোকা বানিয়ে রাখছে না তো! সম্পূর্ণ ঘটনা নিয়েই ফারহানা হোসেনের উপন্যাস ‘ঝড়ে বক মরে’ । ♦প্রচ্ছদঃ উপন্যাসের প্রচ্ছদের মধ্যেই যেন কিছুটা বুঝিয়ে ফেলানোর জন্য চেষ্টা করা হয়েছে । যদি প্রচ্ছদটাকে নামলিপির ওপর নিচ হিসেবে দুইটা ভাগ করে দেই, তাহলেই দেখা যায় যে প্রচ্ছদের মধ্যে কি সুন্দর ভাবে উপন্যাসের ভাষাকে ফোটানো হয়েছে । যা উপন্যাসটিকে আরো ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করেছে । এবং তা আরো সুন্দর করে প্রচ্ছদশিল্পী সুন্দর করে সাজিয়েছেন । ♦উৎসর্গঃ এই উপন্যাসে উৎসর্গ যাকে করা হয়েছে তা আসলেই অসাধারণ ছিল । কেননা এরকম উপন্যাসে যারা জীবনের পথে প্রতিবাদী চরিত্র, যারা জীবনে এগিয়ে যাচ্ছে তাদেরকে উৎসর্গ করাটাই যেন দরকার । সেই কারণে উৎসর্গটি ভালো লেগেছে আমার । ♦চরিত্র বিশ্লেষণঃ এই উপন্যাসের চরিত্রগুলো সাজানো এবং তাদের উপস্থিতি আসলেই অসাধারণ ছিল । এই ধরনের উপন্যাসে যে চরিত্রগুলো এইরকম জীবনধারার সাথে খাপ খাইয়ে যায় তাদেরকেই উপন্যাসে আনা হয়েছে । এবং তা যথেষ্ট সুন্দর করে আনা হয়েছে । বিশেষ করে ওয়াহিদ এবং জয়তুন এর চরিত্রের ধাপে ধাপে বর্ণনাটা অসাধারণ ছিল । তাদের চরিত্রগুলোর উপস্থিতি সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । সাথে এমন ধরনের সামাজিক উপন্যাসে যে চরিত্রগুলো যেভাবে উপন্যাসে আসে তাও সুন্দর করে ছিল । ♦প্রিয় চরিত্রঃ যেহেতু সমকালীন সামাজিক উপন্যাস তাই চরিত্রগুলো ভালোই ছিল । কিন্তু প্রিয় চরিত্র যদি বলতে হয় তবে কেনো জানি না আমার জয়তুনকেই মনে হয়েছে । তার উপস্থিতি এবং চরিত্রের ভারসাম্য অসাধারণ ছিল । ♦পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ √প্রথমেই উপন্যাসের যে দিকটি আসে, সেটি হলো উপন্যাসের জীবনধারা । এই উপন্যাসের জীবনধারাই এই উপন্যাসটির সবথেকে সেরা বিষয় । যা উপন্যাসকে বাঁচিয়ে রেখেছে । কারণ গল্পের জীবনধারা এবং কাহিনী ধারণ এত সুন্দর করে সাজানো হয়েছে সাথে যেহেতু গ্রাম বাংলার মানুষদের জীবনের ধারা নিয়ে চলা উপন্যাস সেজন্য উপন্যাসে সেরকম আবহও রাখা হয়েছে । যা উপন্যাসে বাড়তি মাত্রা যোগ করে দিয়েছে । গল্পের মধ্যে বিভিন্ন যে ধাপগুলো ছিল তাও সুন্দর করে ফোটানো হয়েছে । √একটি উপন্যাসে জীবনধারার পরে আসে সেই জীবনধারার ধাপে ধাপে চরিত্রগুলোকে বসিয়ে, চরিত্রগুলোকে দিয়ে উপন্যাসটিকে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া । এই উপন্যাসে প্রতিটি চরিত্রের উপস্থিতিই অসাধারণ ছিল । যখন যে চরিত্রটির দরকার তখন সেই চরিত্রের উপস্থিতিই ছিল । সাথে যেহেতু গ্রাম বাংলার উপন্যাসে দেখা যায় চরিত্রের সংখ্যা সচরাচর অন্যান্য উপন্যাস হিসেবে একটু বেশিই থাকে সেক্ষেত্রে সেখানে একটু ভারসাম্যের অভাব পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে । এখানে সেটি হয়নি । সঠিক স্থানে চরিত্রগুলো বসানো হয়েছে । তবে একটি চরিত্রের অনুভূতি কিংবা মুহূর্ত এর পরে অন্য আরেকটি চরিত্রের মুহূর্তের মধ্যে ফাঁকা জায়গা কখনও কম কম লেগেছে বলে মনে হয়েছে আমার । যা হয়তোবা কখনও বুঝতে একটু সমস্যায় ফেলতে পারে । বাকি চিন্তা করলে পুরো যথার্থই ছিল । ♦উপন্যাসটি কেনো পড়া উচিতঃ যেহেতু এই উপন্যাসের মূল ভিত্তিই হলো গ্রামের বিভিন্ন কুসংস্কার এর আবহ । সেক্ষেত্রে গ্রাম বাংলার আজও বিভিন্ন পরিস্থিতিতে, বিভিন্ন স্থানে এখনও এরকম পরিবেশের সম্মুখীন হতে হয় । এরকম সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যে প্রচেষ্টা এবং পদক্ষেপ সেটাকে বুঝতে চাওয়ার জন্য হলেও এই উপন্যাসটি অবশ্যই পড়া উচিত । এবং এখনও বিভিন্ন গ্রামের আলোর পথ মসৃণ হয়নি । সেসব গ্রামের পথ ভঙ্গুর হোক বা এলোমেলো হোক সেই পরিস্থিতি বাহিরের দুনিয়ায় জানার জন্যেও এই উপন্যাসটি অবশ্যই পড়া উচিত । ♦প্রিয় অংশঃ এই উপন্যাস যেহেতু সামাজিক সমকালীন উপন্যাস তাই বেশ কিছু প্রিয় অংশ আছে । ঠিক প্রথমে যে অংশটি ভালো লেগেছিল তা ছিল ২৬ পৃষ্ঠায় । এই অংশে ফাহমিদার কথা কিংবা জসিমের তারপরে কথা শুনে অনুভূতি দুটিই ভালো লেগেছে । তারপরের প্রিয় অংশটি হলো ৬২-৬৩ পৃষ্ঠায় । এই মুহূর্তটিও উপন্যাসে একটুখানি ভালো লাগা বাড়িয়েছে । ♦অন্যান্য বিষয়ঃ √প্রকাশনীঃ চন্দ্রভুক প্রকাশন এর বই আগে আমার তেমন পড়া হয়নি । এটাই তাদের প্রকাশনীর, আমার পড়া প্রথম উপন্যাস । উপন্যাসের বাইন্ডিং অসাধারণ ছিল । পৃষ্ঠা গোছানো সাথে পৃষ্ঠার মধ্যেকার বিষয়গুলো সুন্দর করে সাজানো হয়েছে । সাথে উপন্যাসে তেমন একটা ত্রুটি চোখে পড়েনি যা পড়তে বিঘ্নিত করতে পারে । বরং আরো সুন্দর ভাবে একনাগাড়ে পড়ে যেতে যা সাহায্য করেছে । এক্ষেত্রে প্রকাশনীর অবশ্যই ধন্যবাদ প্রাপ্য । ♦লেখক প্রসঙ্গেঃ লেখক ফারহানা হোসেন আপুর লেখা আগে আমার পড়া হয়নি । এটাই আমার পড়া তার লেখা প্রথম উপন্যাস । ‘ঝড়ে বক মরে’ পড়ে আমার মনে হয়েছে তার লেখার মধ্যে একটা ঝরঝরে ভাব আছে । যা অবশ্যই উপন্যাস পড়তে সাহায্য করে । এবং যেহেতু গ্রাম বাংলার উপন্যাসে আবহ এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবের খুবই দরকার তা লেখক সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন । এবং এই ধরনের উপন্যাসে জীবনধারার ভাষা চলিত ভাষায় প্রয়োগ করাটা খুবই জরুরি যা লেখক সঠিকভাবে ব্যবহার করেছেন । যে কারণে উপন্যাসটি পড়তে আমার ভালোই লেগেছে । ♦রেটিংঃ আমি যখন ইদানিং রিভিউ লিখতে বসি তখন গুটি গুটি পায়ে যখন রেটিং বিভাগটা চোখের সামনে আসে তখন মাঝে মাঝে খুব দ্বিধায় ভুগতে ভুগতে ভয় পেতে থাকি । মনে হতে থাকে শুধু এই নাম্বারে উপন্যাস কেমন লাগলো তা কি আদৌ বোঝানো সম্ভব! তাও বোঝাতে হয় অদৃশ্য ভাবেই না হয় বোঝাতে হয় । আমার রেটিং হলো, ৪/৫ । ♦উপসংহারঃ গ্রাম বাংলার উপন্যাসে যে মিষ্টি মিষ্টি সোঁদা এক গন্ধযুক্ত আবহ থাকে সেই ঘ্রাণটা আমাকে প্রতিটা সময় মুগ্ধ করে । মাঝে মাঝে সরল সোজা ভাষায় লেখা উপন্যাসটি থেকে কঠিন কিছু সত্য এবং বাস্তব বেরিয়ে আসলেও উপন্যাসের মাধ্যমে যা বোঝানো হয়ে থাকে তা বুঝতে চেষ্টা করি । এখন মানুষের প্রতিটি জিনিসের প্রতি একটু হলেও আগ্রহী হয়ে ওঠা বিষয়টাই মানুষকে আড়চোখে তাকাতে বাধ্য করে । অনুসন্ধিৎসু চোখে তাকাতে বাধ্য করে । মনে করিয়ে দেয়, সবকিছু নিয়েই ভাবতে হয় । তাই তো উপন্যাসের শেষের কথাটা দিয়েই শেষ করি না হয়, এখন আর ঝড়ে বক মরে না । কারণ সবাই ভাবছে । এই ভাবনাচিন্তা চলতেই থাকুক!
Was this review helpful to you?
or
This is really a good book
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ একটা বই। বহুল পাঠ কামনা করি। দেশের ঘরে ঘরে এই বইটি পঠিত হোক!