User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বইটি তৈরি করা হয়েছে ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে। বইটিতে চমৎকার ভাবে ধারন করা হয়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। লেখক সম্পূর্ণ নিজের বাস্তবতা ও অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন। লেখকের জন্ম ১৯৫৮ সালে, সিরাজগঞ্জে। পড়াশুনা করেছেন- সরকারি ল্যাবরেটরি হাইস্কুল ঢাকা, সরকারি জুনিয়র হাইস্কুল চট্টগ্রাম, কলিজিয়েট স্কুল চট্টগ্রাম, ফৌজদার হাট ক্যাডেট কলেজ ও ডিফেন্স সার্ভিসেস অফিসারস কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজ। প্রায় ১৮ বছর সরকারি চাকুরি শেষে ১৯৯৪ সালে চাকরি থেকে ইস্তফা নেন। স্কুল ও কলেজ জীবনে তিনি বেশ কিছু কবিতা ও গল্প লিখেছেন। সে সময়ে তার উল্লেখযোগ্য রচনা ছিলও 'নিরো মামা সমাচার'' সবচেয়ে মজার ব্যাপার মাত্র দশ বছর বয়সে তার লিখা পত্রিকায় ছাপা হয়। তখনকার (১৯৬৭-৬৮ সালে) দৈনিক পত্রিকা আজাদীতে 'সোনার হরিণ' নামে তার প্রথম লিখা ছাপা হয়। তিনি মূলত রমান্টিক, চমৎকার, মজার এবং ক্রিয়েটিভ একজন মানুষ। তিনি প্রায়ই বেশ রোমান্টিক কবিতা রচনা করেন। এছাড়া বর্তমানে পরিবারের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্লগে এবং ফেসবুকে সময় দিয়ে থাকেন। সবার সাথে শেয়ার করেন দেশ নিয়ে, মানুষ নিয়ে নানা ধরনের ভাবনা। বইটি সংগ্রহে রাখার মত একটি বই। এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের দলিলও হতে পারে। এখানে অনেক তথ্য দেয়া আছে যা আমরা জানি না। আমরা জানি অনেক কিছু কিন্তু তার অধিকাংশই ভুল তথ্য। এই বইটিতে লেখক নিজের সচক্ষে দেখা অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন। লিখা গুলো একদম জীবন্ত। যা পড়লেই মনে হতে পারে, ঘটনা গুলো আপনার চোখের সামনে ঘটেছে! নিচে কিছু খণ্ড চিত্র তুলে ধরছি- বইটির ১৪৭ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন— ‘পাহাড়তলী আর জাফরাবাদের মাঝে পাকিস্তান বাজার বলে একটা ছোট মহাসড়কের ওপর। ওখানে এক জনপ্রিয় হোটেলে অনেক জন খাওয়াদাওয়া করছিলো। পাকিস্তানি সেনা বাহিনীর একটা জিপ হোটেলটা অতিক্রমকালে হোটেল থেকে চিৎকার ভেসে আসে “ফাকিসতাইন্যা চুদানী ফুয়া”। গালিটি শুনতে পায় জিপের পাকিরা। ১৯৬৯ থেকে এদেশে থাকতে থাকতে চিটাগাংয়ের এসব গালির অর্থ তারা বুঝতো। গাড়ি থেকে নেমে হোটেলে ঢুকে পরে তাদের সবাই। মিনিট দু’য়েকের মধ্যে আহাররত সবাই ও দোকানের কর্মচারীদের হত্যা করে(একটা বয় ছিল ৭/৮ বছরের) অত্যন্ত খোশ মেজামে গাড়িতে উঠে রওয়ানা দেয় (নভেম্বরে ফৌজদারহাটে কর্মরত এক পাকি প্রত্যক্ষদর্শী থেকে শোনা)।’ বইয়ের পৃষ্ঠা ১৭৮ থেকে— ‘ফয়েস লেকে ঢোকার রাস্তা দিয়ে এগিয়ে ডানে ছিলো টিলার মতো একটা জায়গা। পুরো জায়গাটা স্যাণ্ডেল, জুতো, পরিধেয় বস্ত্র, টুপি ইত্যাদি দিয়ে ছড়ানো। রাস্তা থেকে নেমে একটা ঢাল বেয়ে যেতে হয় গুহার মতো একটা জায়গায়। প্রথমেই চোখ পড়লো মাঝারি সাইজের একটা ছুরি গুহার মুখে ডান পাশে পড়ে আছে। ছুরির আগা থেকে বাঁট পর্যন্ত কালচে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। … … গুহাটার ভেতর আলো ছিলো কম। চোখ সয়ে আসতেই চারিদিকে তাকালাম। ছোট্ট একজোড়া স্পঞ্জের স্যান্ডেল। আমার সবচেয়ে ছোট তিন বছরের বোনটির পায়েও লাগবে না। কয়েকটা ওড়না, দু’চারটি বোরকা ইতস্তত ছড়ানো। গুহার এক কোণে চোখ গেল। মানুষের জটলা থেকে দূরে, গোলচে সাদা মতো কী যেন। প্রথমে ভেবেছিলাম পাথর হবে। পরে কী মনে করে যেন কাছে গেলাম। অতি ক্ষুদ্র একটা মাথার খুলি। চামড়া ফেটে হাড্ডির সাথে লেগে আছে। … গুহার বাইরে এসে নরম রোদে চোখ অভ্যস্ত হতেই দেখলাম অদূরে হাজার লোকের ভিড়। মানুষের দেয়াল গলে এগিয়ে গেলাম। একটা ছড়া। স্বচ্ছ পানি বয়ে চলছে। ছড়ার অপর পাড়টি উঁচু। বহমান পানির ধার থেকে দেড় মানুষ সমান উঁচু, ৫০-৬০ জন লোক পাশাপাশি দাঁড়ালে যতটুকু জায়গা লাগবে ততটুকু চওড়া একটি স্থানে থরে থরে সাজানো মানুষের খুলি। … … জবাই করেই ক্ষান্ত হয়নি তারা, ধড় থেকে মুণ্ডুটি আলাদা করেছে, তারপর সাজিয়ে রেখেছে।’ পৃষ্ঠা ১৭৯ থেকে— ‘ফয়েস লেক থেকে আমরা গেলাম শেরশাহ কলোনিতে। কলোনির প্রতিটি ইমারত সারির পেছনে পয়: ট্যাংক লাইন ধরে। লোকে লোকারণ্য। সবাই উত্তেজিত। চোখে মুখে চরম জিঘাংসার অভিব্যক্তি। ভিড় ঠেলে অনেক কষ্টে পৌঁছুলাম ট্যাংকের ধারে। ট্যাংকের ঢাকনি খোলা। উঁকি দিলেই দেখা যাচ্ছে মানুষের হাত, পা, ধড়। কালচে হয়ে আসা একটি অতি ছোট শিশুর শরীর দেখতে পেলাম। হাঁটু ভাঁজ করা তার পায়ের পাতাটি ঠিক আমার দিকে ফেরানো। …শের শাহ কলোনির ঐ পয়ঃ ট্যাংকগুলোতে কতো শত হতভাগ্য নিরীহ মানুষের লাশ যে ছিলো, ধারণার মধ্যে আনতে পারিনি। তবে আন্দাজ করছি, একটা রেলগাড়িতে কতো শত লোক থাকতে পারে। লাশগুলো ছিলো ঝাউতলা থেকে আসা ট্রেনের মানুষদের।’ 'অজানা পথিক'