User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
তারেক নূরুল হাসান ------------------- কলিকালে এক ডাক্তার জন্মিয়াছিলেন বাঙালাদেশে। তাঁহার পসার ছিলো, সেই সাথে প্রাণের ভিতরে সাহিত্য করিবার প্রেসারও ছিলো। নিজের দাওয়ায় বসিয়া তিনি প্রেসক্রিপশানে রুগীদের কষ্টের হিস্টরী লিখিতেন। আর তাহাদের সহিত আলাপের অবসরে, মনের ভিতরের কোন এক খাতায় নানা প্রকারের নোট লইতেন, সংস্পর্শে আসা নানাবিধ জীবন আর তাঁহাদের কাছ হইতে পাওয়া এই সব অলৌকিক গল্প তিনি কোন দিন লিখিয়া উঠিবেন এই আশায়। সেই সব প্লটগুলান তিনি একখানা খাতায় লিপিবদ্ধও করিয়া ফালাইলেন, ভবিষ্যতে সেগুলা পূর্ণতা পাইবে, ইহাই ছিলো কামনা। কিন্তু তিনি ব্যস্ত মানষ। মোটের ওপরে, তেমন করিয়া আর সময় করিয়া উঠিতে পারিলেন না। তখন ভাবিলেন, প্লটগুলান এই রূপেই গল্প হিসেবে ছাড়িয়া দিলে কিরূপ হয়? তো তিনি তাহাই করিলেন। এবং, নিজের অজান্তেই তিনি সৃষ্টি করিলেন গল্পের এক নতুন ধারা। গল্পিকা, গল্প-কণিকা বা আদিরূপ ছোটগল্প ঘুরিয়া অদ্যকার কলিযুগে সকলে যাহাকে অণুগল্প হিসাবে চেনে। * একটু হাসফাঁস লাগলো এইটুকু লিখতেই। তবে ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং। চলিত ভাষায় লিখতে গেলে সম্ভবত একটু বর্ণনার প্রয়োজন পড়ে বেশি, সাধুতে সেটা অল্প কথায় সেরে ফেলা যায়! বলে রাখা ভাল, উপরের চিত্রটি পুরোপুরিই আমার কল্পনা। বাস্তবে এমনটাই ঘটেছিলো কিনা জানা নাই। যাকগে, কথা সেটা না। ডাক্তার মশায়ের লেখা গল্পগুলো পড়ছিলাম কদিন ধরে, সেই নিয়েই কিছুক্ষণ আলাপ পাড়বো বলে বসলাম আজ। ডাক্তার মশায়ের নাম ছিলো বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়। কিন্তু ভদ্রলোক তাঁর গল্পের মতই নামেরও অণু-করণ করে ফেলেছিলেন। বাংলা সাহিত্যের পাঠকমাত্রই তাঁকে বনফুল নামে চেনে। অল্প-বিস্তর কিছু গল্প আগেই পড়া ছিলো, এইবারে হাতে পেলাম পুরো গল্পসমগ্র! এবং গত কদিন ধরে বেশ চেটে-পুটে পড়লাম সেটা। সবচেয়ে যেটা মজা লেগেছে, বইটার নাম "বনফুলের গল্প সমগ্র"। সোজা সাপ্টা "গল্প"ই, আগে পিছে কোন ছোট বা অণু নেই। এমনকি বইয়ের শেষের যুক্ত নানাজনের আলোচনায় বনফুলের গল্পের আকার অনুযায়ী এদের গল্পিকা বা গল্প-কণিকা বলে যে মত আছে, নামকরণে সেটা পেলাম না। অবশ্য, একটা কারণ হতে পারে, এই সংকলনে বনফুলের বেশ কিছু দীর্ঘ্য, মানে কেবল বনফুলের অনুপাতেই নয়, সত্যি সত্যিই লম্বায় বেশ কিছু দীর্ঘ্য গল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শুধুই গল্প সমগ্র বলার সেটাও একটা কারণ হতে পারে। তবে কথা সত্য, বনফুলের বড় গল্প আছে জানতে পারাটা আমার জন্যে একটা আবিষ্কারই বটে। বরাবরের মতই সবার আগে আমার নজর কাড়লো এর ভূমিকাটুকু। এবং মজা হলো টেনেটুনে তিন প্যারার এই ছোট্ট ভূমিকাটুকুতেই বনফুলের রসিক মনের বেশ সুন্দর পরিচয় পাওয়া যায়। আমি শুধু প্রথম প্যারাটুকু তুলে দিচ্ছি এখানে- " আমার গল্প যাঁহারা ভালবাসেন তাঁহাদের কাছে আমার লেখা সম্বন্ধে ভূমিকা নিষ্প্রয়োজন। যাঁহারা ভালবাসেন না তাঁহাদের কাছে আরও নিষ্প্রয়োজন। যাঁহারা আমার লেখার সহিত পরিচিত নহেন তাঁহারা গল্পগুলি পড়িলেই আমার স্বরূপ জানিতে পারিবেন। তাঁহাদের উদ্দেশ্যেও আমার বিশেষ কোন নিবেদন নাই। " এই না হলে বনফুল! তা সত্যিই, তাঁর স্বরূপ জানা গেছে বেশ। এই সাইজের গল্পয় যেটা হয়, গল্পের শেষ হতে হবে অবশ্যই একটা চমকের সাথে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেটা হয় গল্পের শেষ লাইনটুকু। প্রথম বেশ কিছু গল্প পড়ার পরে মনের ভেতর এমন একটা অনুভূতি হলো আমার, যে, পরবর্তীতে যে গল্পটাই শুরু করতে যাই, আপনাতেই তার শেষ লাইনটুকুর জন্যে অপেক্ষা করি। কারণ, জানি যে ঐ লাইনটাতে এতক্ষণের সব ছবি উল্টে-পাল্টে যাবে। বনফুলের গল্পগুলো পড়তে গিয়ে টের পেলাম, অণুগল্পের বর্তমান ধারা বা ধারণা থেকে সেসব একেবারেই আলাদা। এই আকৃতির গল্পের ক্ষেত্রে পুরো কোন ছবি তুলে আনা যাবে না, বরং একটা জীবনের ছোট একটা অংশের উপর তাৎক্ষণিক আলো ফেলার মত করে গল্প বর্ণিত হবে। তো এই বইটা পড়ে মনে হলো, অণুগল্পের গুরুমশায় এসবের ধার ধারেন নি। মাঝে মাঝে দু থেকে তিন লাইনের ভেতরই একটা জীবনকাল তিনি বর্ণনা করে ফেলেছেন! অবশ্য বড় গল্পগুলোয় তিনি অনেক বর্ণনা টেনে এনেছেন, তবে তার মধ্যেও কোথায় যেন অল্প কথায় সেরে ফেলার মত একটা সুর সারাক্ষণই বাজছিলো। গল্পগুলো ভাবায় বেশ। এরকম নয় যে পড়লাম, আকারে ছোট, তাই চট করে ভুলে গেলাম। উহুঁ, তার উপায় নেই। বেশ খানিকক্ষণ মনের ভেতরে টুংটাং করে বাজে এসব গল্প। আরেকটা ব্যাপার খেয়াল করলাম, চমক আনতে গিয়ে প্রায়শই এমনভাবে গল্পগুলোর সমাপ্তি ঘটছে, যেটা হয়তো পুরোপুরি স্বাভাবিক নয়। চট করে ভুলে যেতে না পারার এটাও একটা কারণ হতে পারে। বনফুলের এই সমগ্রতে বেশ কিছু স্যাটায়ারও খুঁজে পাওয়া গেলো। এবং, বলতেই হয়, স্যাটায়ারে তাঁর দক্ষতা রীতিমতন ঈর্ষনীয় ছিলো। তবে, বিশেষ করে একদম ছোটগল্পগুলো পড়ে আমার সত্যিই মনে হচ্ছিলো, যেন এগুলো তাঁর খেরোখাতায় টুকে রাখা কোন গল্পের প্লট। মানে অনেকেই যেমনটা করেন, গল্পের আইডিয়া মাথায় এলে নোটবুকে লিখে রাখেন দুএকটা শব্দ বা লাইন, বা গল্পের একটা মানচিত্র, অনেকটা যেন সেরকমই বনফুলের গল্পেরা। তবে, এ কথা অবশ্য স্বীকার্য, খেরোখাতায় টুকে রাখা প্লটের মত অসম্পূর্ণ নয় মোটেই তাঁর গল্পেরা। বরং একদম শতভাগ পরিপূর্ণ। গল্পের আকৃতিগুলো এতই লোভনীয় যে আমার বেশ কবার ইচ্ছে হচ্ছিলো বেশ কিছু গল্প এখানে কম্পোজ করে তুলে দিই। কিন্তু এই মুহুর্তে তা সম্ভব নয়। আপাতত একটা গল্পের কিয়দংশ আপনাদের সাথে শেয়ার করা যাক । গল্পের নাম- বিধাতা। ------ বাঘের বড় উপদ্রব। মানুষ অস্থির হইয়া উঠিল। গরু বাছুর, শেষে মানুষ পর্যন্ত বাঘের কবলে মারা পড়িতে লাগিলো। সকলে তখন লাঠি সড়কি বর্শা বাহির করিয়া বাঘটাকে মারিল। একটা বাঘ গেল- কিন্তু আরেকটা আসিল। শেষে মানুষ বিধাতার নিকট আবেদন করিল- "ভগবান, বাঘের হাত হইতে আমাদের বাঁচাও।" বিধাতা কহিলেন- আচ্ছা। কিছু পরেই বাঘরা আসিয়া বিধাতার দরবারে নালিশ জানাইলো- " আমরা মানুষের জ্বালায় অস্থির হইয়াছি। বন হইতে বনান্তরে পলাইয়া ফিরিতেছি। কিন্তু শিকারী কিছুতেই আমাদের শান্তিতে থাকিতে দেয় না। ইহার একটা ব্যবস্থা করুন। " বিধাতা কহিলেন, - " আচ্ছা।" (.....) সুশীল পরীক্ষা দিবে। সে রোজ বিধাতাকে বলে, "ঠাকুর, পাশ করিয়ে দাও।" আজ সে বলিল, "ঠাকুর, যদি স্কলারশিপ পাইয়ে দিতে পার, পাঁচ টাকা খরচ করে হরির লুট দেব--" বিধাতা কহিলেন, - "আচ্ছা" হরেন পুরকায়স্থ ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান হইতে চায়। কালী পুরোহিতের মারফত সে বিধাতাকে ধরিয়া বসিল- এগারোটা ভোট আমার চাই। কালী পুরোহিত মোটা রকম দক্ষিণা খাইয়া ভুল সংস্কৃত মন্ত্রের চোটে বিধাতাকে অস্থির করিয়া তুলিল। ভোটং দেহি-- ভোটং দেহি-- বিধাতা কহিলেন, আচ্ছা, আচ্ছা--।( ....) কৃষক দুই হাত তুলিয়া কহিল, "দেবতা, জল দাও --" বিধাতা কহিলেন, আচ্ছা। (......) দার্শনিক কহিলেন- "হে বিধাতা, তোমাকে বুঝিতে চাই-" বিধাতা কহিলেন, - "আচ্ছা" চীন দেশ হইতে চীৎকার আসিল, "জাপানীদের হাত হইতে বাঁচাও প্রভূ"। বিধাতা কহিলেন, - "আচ্ছা" একটু ফাঁক পড়িতেই বিধাতা পার্শ্বোপবিষ্ট ব্রহ্মাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, " আপনার বাসায় খাঁটি সর্ষের তেল আছে?" ব্রহ্মা কহিলেন, "আছে, কেন বলুনতো?" বিধাতা- আমার একটু দরকার। দেবেন কি? ব্রহ্মা (পঞ্চমুখে) " অবশ্য, অবশ্য।" ব্রহ্মার বাসা হইতে ভাল সরিষার তৈল আসিল। বিধাতা তৎক্ষণাৎ তাহা নাকে দিয়া গাঢ় নিদ্রায় অভিভূত হইয়া পড়িলেন। আজও ঘুম ভাঙে নাই।