User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা অক্টোবর রিভিউ-১৭ ১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিলে খাপড়া ওয়ার্ড হত্যাকান্ড ছিল এ দেশের প্রথম জেল হত্যাকান্ড। সেই বর্বর ঘটনার ইতিহাস বিক্ষিপ্তভাবে লেখা হলেও সবিস্তারে লেখা এ বিষয়ক বই এতদিন ছিল না। সেই কাজটি করে ' প্রথম আলো' পত্রিকার এডিটর মতিউর রহমান পথিকৃতের ভূমিকা পালন করলেন প্রথমেই এজন্য তার ধন্যবাদ প্রাপ্য। বইয়ের ভূমিকায় তিনি জানাচ্ছেন, " শেষ পর্যন্ত ৫ দশকের আবেগ আর ভালোবাসা নিয়ে খাপড়া ওয়ার্ডের শহীদ ও আহত দেশপ্রেমিকের জীবনসংগ্রামের কাহিনী একটি প্রকাশনায় রূপ পেল।মূলত ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে আবার এ পান্ডুলিপি নিয়ে উঠে- পড়ে লাগি। সিদ্ধান্ত নিই, যতটুকু হয়েছে সেইটুকু বই আকারে প্রকাশ করার। তারপরও প্রায় দুই বছর চলে গেল। পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও বাংলাদেশের কমরেডদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য, সাক্ষাৎকারে এবং এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইপুস্তক থেকে সংগ্রহ করা তথ্য নিয়েই আজকের এ প্রকাশনা।" মোট ৬ টি অধ্যায়ে বিভক্ত এই বই। বলে রাখা ভালো, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা সহজ কাজ ছিল না। খাপড়া ওয়ার্ডে আহত কমরেডদের অনেকেই '৫০ সালের এই বর্বর ঘটনার পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম রাজ্যের অধিবাসী হয়েছিলেন। আবার এর মধ্যে কেউ কেউ ছিলেন প্রয়াত আবার কেউ কেউ বয়সের ভারে অবনত। তাই লেখককে দেশ এবং দেশের বাইরে অনেক দৌড়াদৌড়ি করে খবর সংগ্রহ করতে হয়েছে। বইটির অধ্যায়গুলোর নাম হল, ' খাপড়া ওয়ার্ডের সাত শহীদ', ' জেলের অবস্থা ও রাজবন্দীদের সংগ্রাম', ' তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির নীতি', 'রাজশাহী জেল এবং ২৪ এপ্রিল পূর্ব ঘটনাবলি ' প্রভৃতি। প্রতিটি অধ্যায়ের বর্ণিত ঘটনা তথ্যনিষ্ঠ ও জীবন্ত। এ বইয়ের সবচেয়ে আগ্রহোদ্দীপক অধ্যায়, ' তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির নীতি'। কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাবে তখন পরিচালিত হচ্ছিল খাপড়া ওয়ার্ডে বন্দী বামপন্থীদের অতিবিপ্লবী কর্মকান্ড। কমিউনিস্ট পার্টির অতিবিপ্লবী হঠকারিতার কারণেই যে শেষ পর্যন্ত রাজশাহী জেলের খাপড়া ওয়ার্ডে কমিউনিস্টদের উপর জেল কর্তৃপক্ষকে গুলি চালাতে প্ররোচিত করেছিল, জেলের বাইরে তাদের চলমান আন্দোলনকে যে এভাবে তারা ভীতসন্ত্রস্ত করতে চেয়েছিল, বিবৃত ঘটনার পূর্বপরতা সেই নজিরই তুলে ধরে। গ্রন্থকারের এ অধ্যায়টি খুবই সুলিখিত। হঠকারিতার শিকার হলেও কমিউনিস্টদের এই আত্মত্যাগ ও আদর্শবাদিতাকে গ্রন্থকার ইতিবাচকভাবে তুলে ধরেছেন। বইটিতে খাপড়া ওয়ার্ডে বন্দী ও ভুক্তভোগী ১৪ জন কমরেডের ছবি সংযোজন করা হয়েছে। পাশাপাশি পরিশুস্টাংশে যেসব নিবন্ধ, স্মৃতিচারণা ও কবিতা সংকলিত করা হয়েছে সেগুলোর পাঠও খাপড়া ওয়ার্ড হত্যাকান্ডকে চোখের সামনে মূর্ত করে তোলে। মতিউর রহমানের এই বই বস্তুতই আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অমূল্য দলিল। #বইয়ের_নাম : খাপড়া ওয়ার্ড হত্যাকান্ড ১৯৫০ লেখক : মতিউর রহমান দাম : ৩০০ টাকা
Was this review helpful to you?
or
এই গ্রন্থটি ১৯৫০ সালে সংঘটিত রাজশাহী জেলের খাপড়া ওয়ার্ড হত্যাকাণ্ড নিয়ে লিখিত। বহুল আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের উপর প্রকাশিত এটিও সর্বশেষ সংযোজন। লেখক মতিউর রহমান দেশের অগ্রণী দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক। ব্যক্তিগতভাবে তিনি একজন কমিউনিস্ট কর্মী ও সাংবাদিক। খাপড়া ওয়ার্ড হত্যাকাণ্ডে সাতজন কমিউনিস্ট কর্মী নিহত হন এবং আহত হয়েছিলেন বহুজন। এদের মধ্যে উচ্চ শিক্ষিত আবদুল হক (প্রেসিডেনিস কলেজের প্রথম শ্রেণিপ্রাপ্ত (অর্থনীতি) স্নাতক যেমন ছিলেন তেমনি মোহিনী মিলের শ্রমিক নেতাও ছিলেন। প্রত্যেক রাজবন্দী ছিলেন সরকারের নির্যাতন ও পুলিশী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ও দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ। স্মরণযোগ্য যে নাচোলে সাঁওতাল বিদ্রোহের নেত্রী ইলা মিত্র যখন পুলিশী নির্যাতনে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে উপনীত হন তখন এ কে ফজলুল হক আমলাতন্ত্রের দীর্ঘসূত্রীতা পরিহার করে ইলা মিত্রকে কলকাতায় পাঠিয়েছিলেন সুচিকিৎসার জন্য। (ঈদ সংখ্যা, ২০১৬, সরদার ফজলুল করিমের ডায়েরি, দৈনিক প্রথম আলো)। কিন্তু এ’ক্ষেত্রে ঘটেছিলো বিপরীত ঘটনা। খাপড়া ওয়ার্ডের হত্যাকাণ্ডকে তাই বিশ শতকের সাম্রাজ্যবাদী চরিত্রের একটি চরম বহিপ্রকাশ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। গ্রন্থটিতে রয়েছে ছয়টি অধ্যায়। এ’সব অধ্যায়ে রয়েছে, ‘খাপড়া ওয়ার্ডের সাত শহীদ, জেলের অবস্থা ও রাজবন্দীদের সংগ্রাম, তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির নীতি, রাজশাহী জেল এবং ২৪ এপ্রিল পূর্ব ঘটনাবলী, খাপড়া ওয়ার্ড হত্যাকাণ্ড ও খাপড়া ওয়ার্ড হত্যাকাণ্ডের প্রভাব। এ’সব বিষয়গুলো অধ্যায়গুলোতে আলোচিত হয়েছে। এ’ছাড়া রয়েছে পাঁচটি পরিশিষ্ট। এ’সব পরিশিষ্টে বেশকিছু স্মৃতিচারণামূলক লেখা রয়েছে। এ’গুলোর অধিকাংশই ছিলেন বিশিষ্ট জন। এদের মধ্যে রনেশ দাশ গুপ্ত, সত্যেন সেন, সৈয়দ মনসুর হাবিবুল্লাহ, নাসির উদ্দীন আহমেদ, মতিউর রহমান, অনিল মুখার্জী প্রমুখ রয়েছেন। আদর্শিক লড়াই যে কুসুমাস্তির্ণ ছিল তা বলা বাহুল্য। রাজনৈতিকভাবে ’খাপড়া’ ওয়ার্ড হত্যাকাণ্ড সারাদেশে তেমন প্রভাব ফেলতে না পারলেও এই হত্যাকান্ড আদর্শিক লড়াইয়ের ক্ষেত্রে একটি ’মাইলফলক’ হিসেবে পরিচিত। অর্থাৎ নিরস্ত্র অবস্থাতে ঐক্যবদ্ধ থেকে প্রতিবাদ করার দূঃসাহস দেখিয়েছিলেন কমিউনিস্ট রাজবন্দীরা। হত্যাকাণ্ডের বেশ কয়েক মাস পূর্ব থেকে রাজশাহী জেলে ’জেল বিপ্লব তত্ত্ব’ প্রয়োগের প্রস্তুতি চলছিল। লেখক মন্তব্য করেছেন- ” রাজবন্দীদের প্যারেড, খালি হাতে লড়াইয়ের অনুশীলন, কর্তৃপক্ষের কাছে নান রকম দাবি তুলে লকআপে যেতে অস্বীকার ইত্যাদি ছিল সে প্রস্তুতির অংশ। এই উদ্যোগের তাত্ত্বিক আবদুল হক একা হলেও তাঁকে সমর্থন করেছিলেন বিমল সেন, সীতাংসু মৈত্র সহ কয়েকজন। (পৃঃ, ৭০) তবে ঘটনার পূর্বাপর যাই হোক না কেন, মস্কো থেকে ১৯৫০ সালের শুরুত কামিনফার্ম মুখপত্রের সম্পাদকীয়তে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতি ও রণকৌশল সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করা হয়। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেসের রাজনৈতিক নীতির প্রভাবে পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টিও দেশের বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে সে নীতি প্রয়োগ করেছিল। একই নীতির ভিত্তিতে জেলের ভেতর পার্টির সদস্য ও অনুসারীগণও জেল বিপ্লবের তত্ত্ব প্রয়োগ করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। এই প্রসঙ্গে লেখক মন্তব্য করেন- ‘‘তৎকালীন পার্টি নেতৃত্বের এই ভুলের জন্য ১৯৪৫-১৯৫০ সালের টংক, তেভাগা ও অন্যান্য হঠকারী আন্দোলন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। (পৃঃ, ৭২) খাপড়া ওয়ার্ডের হত্যাকাণ্ডের বিবরণ যে কাউকে স্পর্শ করবে। নিরস্ত্র হয়েও আদর্শিক কারণে শুধু প্রতিরোধ করতে গিয়ে গুলিতে প্রাণ হারাবেন এই ধারণা তাদের কারোরই ছিল না। পঞ্চম অধ্যায়ে গ্রন্থকার বিভিন্ন উৎস ব্যবহার করে নানা তথ্য উগস্থাপন করেছেন। গুলিতে প্রথম শহীদ হয়েছিলেন কুষ্টিয়ার দিলওয়ার হোসেন। এরপর খুলনার আনোয়ার হোসেন শহীদ হন। যাঁরা শহীদ হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন কম্পরাম সিংহ, সুধীন ধর, বিজন সেন, হানিফ শেখ, সুখেন্দু ভট্টাচার্য, দিলওয়ার হোসেন ও আনোয়ার হোসেন। শহীদদের পরিচিতি গ্রন্থের পরিশিষ্ট-চার-এ দেয়া হয়েছে। কম্পরামের পরিচয় ছিল কৃষক নেতা হিসেবে। সুধীন ধর, বিজন সেন ছিলেন রেল শ্রমিক নেতা। হানিফ শেখ ছিলেন মোহিনী মিল শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা। সুখেন্দু ভট্টাচার্য আনন্দমোহন কলেজের স্নাতক পরিক্ষার্থী ছিলেন। রাজনৈতিক জীবনের প্রথম দিকে তিনি ফরোয়ার্ড ব্লক ও আরএসপি’র সাথে কাজ করেছিলেন। আর দিলওয়ার হোসেন ছিলেন রেলওয়ের লাল ঝান্ডা ইউনিয়নের সক্রিয় কর্মী। আনোয়ার হোসেন দৌলতপুর কলেজের (খুলনা) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি ছাত্র ফেডারেশনের সদস্য ছিলেন। গ্রন্থের পরিশিষ্ট-পাঁচ-এ খাপড়া ওয়ার্ডের আহত রাজবন্দীদের পরিচয় দেয়া হয়েছে। পুলিশের গুলিতে ২৯জন আহত হয়েছিলেন। এরা হলেন- সৈয়দ মনসুর হাবিবুল্লাহ্, আবদুস শহীদ, আশু ভরদ্বাজ, সত্যেন সরকার, নুরুন্নবী চৌধুরী, প্রিয়ব্রত দাস, অনন্ত দেব, গণেন্দ্রনাথ সরকার, নাসিরউদ্দীন আহমেদ, আবদুল হক, আমিনুল ইসলাম বাদশা, শচীন্দ্র চক্রবর্তী, সাইমন মন্ডল, কালীপদ সরকার, অনিমেষ ভট্টাচার্য, বাবর আলী, প্রসাদ রায়, গারিস উল্লাহ সরকার, ভূজেন পালিত, ফটীক রায়, সীতাংশু মৈত্র, সদানান্দ ঘোষ দস্তিদার, ভোলারাম সিংহ, সত্যরঞ্জন ভট্টাচার্য্য, লালু পান্ডে, মাধব দত্ত, কবীর শেখ, আভরণ সিংহ, সুধীর স্যানাল, শ্যামাপদ সেন, পরিতোষ দাশগুপ্ত ও হীরেন সেন। এদের মধ্যে পরবর্তী সময়ে সৈয়দ হাবিবুল্লাহ্ ১৯৭৭- ১৯৮২ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার স্পিকার ও রাজ্য আইনমন্ত্রী ছিলেন। সত্যেন সরকার স্বাধীনতা পত্রিকার সাব- এডিটর ছিলেন। নূরন্নবী চৌধুরী সোভিয়েত বার্তা সংস্থা এপিএন- এ কাজ করেছেন। প্রিয়বত দাস (মনজু) পার্টির পত্রিকা শিলং অবজারভার এর সম্পাদকমণ্ডলীতে কাজ করেছেন। গণেন্দ্রনাথ সরকার মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলেন তবে পড়া শেষ করেননি। তবে ডাক্তার হিসেবে দিনাজপুরের গ্রামে সক্রিয় ছিলেন। নাসিরউদ্দীন আহমেদ শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র ছিলেন। রাজনীতির কারণে পড়া শেষ করেননি। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ছিলেন। আবদুল হক নেতৃস্থানীয় কমিউনিস্ট নেতা ছিলেন। চীনপন্থী কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক ছিলেন। আহতদের সবাই ছিলেন সক্রিয় কমিউনিস্ট কর্মী। এদের কেউই মতাদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। কমিউনিস্ট আন্দোলনের পক্ষে আজীবন কাজ করে গেছেন সবাই। পরিশিষ্ট দুই- এ রয়েছে লেখকের সাথে বিভিন্ন আহত কমিউনিস্ট কর্মীদের চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগের উদাহরণ। খাপড়া ওয়ার্ডে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন পর্যায়, স্মৃতি ও নিজের অবস্থান সম্পর্কে চিঠির মাধ্যমে তথ্য দিয়েছেন সত্যেন সরকার, সুধীর সান্যাল, আশু ভরদ্বাজ, মনজু দাস, ফটিক রায়, সদানন্দ ঘোষ প্রমুখ। বাংলাদেশের রাজনীতি অনুধাবনে গ্রন্থটি প্রাসঙ্গিকতা অনস্বীকার্য। গ্রন্থের প্রচ্ছদে ঘটনার প্রতিফলন রয়েছে। একটি প্রামাণ্য গ্রন্থের জন্য লেখককে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন।