User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বুকের ভেতর বাংলাদেশ "আবার আসিবো ফিরে,ধানসিঁড়িটির তীরে-এই বাংলায়, হয়ত মানুষ নয়-হয়ত শঙ্খচিল শালিকের বেশে হয়ত ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে।" -জীবনানন্দ দাশ এ যেন জন্মভূমির প্রতি গভীর মমত্ববোধের প্রতিচ্ছবি। কবি শুধু এ জন্মে নয়, বারংবার এই ভূমির সন্তান হয়ে জন্মানোর ইচ্ছা পোষণ করেন। জন্মভূমি তেমনি প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে বিস্তর জায়গা দখল করে থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে অবস্থান করেও জন্মভূমির মায়া সহজে ভুলবার নয়। জন্মভূমিকে ছেড়ে সাত-সমুদ্দোর তের নদী পার হলেও জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে এসে সেই অমৃতময় ভূমির প্রতি অকৃত্রিম টান অনুভূত হবেই। তখন অন্তত একবার সেই মাটিকে স্পর্শ করতে, বাতাসকে মর্মে অনুভব করতে আর অপূর্ব সুন্দর ভূমির দর্শনে পুরনো স্মৃতিচারণ করতে চিত্ত আকুলি-বিকুলি করে। সবশেষে সেই আশা পূরণ হলে যে প্রশান্তি আসে তা স্বর্গের চেয়েও মহীয়ান। 'বুকের ভেতর বাংলাদেশ' জন্মভূমির প্রতি গভীর মমত্ববোধেরই এক নৈসর্গিক আখ্যান। ভারত ও বাংলাদেশের পটভূমিতে রচিত উপন্যাসটি দেশভাগের সময় চলে যাওয়া এক সন্তানের জন্মভুমিকে একবার স্বচক্ষে দেখার অদম্য ইচ্ছে যা মানে না বয়সের বাধা বা সীমান্তের কাঁটাতারের গণ্ডি। 'কল্যাণবরেষু, আমাকে আপনার মনে রাখার কথা নয়। শৈশবস্মৃতি যদি এখনও সজীব থাকে তবে অবশ্য আলাদা কথা। আমি ঢাকা জেলার নরসিংদীতে থাকি। আপনার পরলোকগত পিতা আমার বন্ধু ছিলেন। এখনো হাটতে পারি,লিখতে পারি কিন্তু পড়তে কষ্ট হয়।… জন্মভূমি ছেড়ে আসার বহুদিন পর আকষ্মিকভাবে পিতার বন্ধুর থেকে উক্ত চিঠি পড়ে সেই জন্মভূমিতে ফিরতে আর পিতৃবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করার আগ্রহ জন্মায় প্রশান্ত মুখার্জির যে ছোটবেলায় দেশভাগের সময় পূর্ববঙ্গ ছেড়ে যায় । আর সেই ইচ্ছেটাকে পূরণ করতে পাশে দাঁড়ায় নাতি প্রবেশ মুখার্জি অর্থাৎ দাদুর লাঠি হয় সে। আর সেজন্যই প্রশান্ত মুখার্জি(দাদু) সত্তর বয়সের বাধা উপেক্ষা করে পাড়ি জমান জন্মভূমির পথে। ভ্রমণপথে পরিচয় ঘটে নানান রকমের মানুষের সাথে,বিচিত্র যাদের দৃষ্টিকোণ। দিনশেষে দেখা যায় এপার বাংলা-ওপার বাংলার মাঝে কাঁটাতার ছাড়া আর বিশেষ কোনো তফাৎ নেই(যদিও আঞ্চলিক বিভিন্ন দিকের পার্থক্য উপেক্ষা করা যায়)। তবে ছোটবেলায় ফেলে আসা সেই জন্মভূমি আর আজকের জন্মভূমির মাঝে বিস্তর তফাৎ তবে কিছু স্মৃতি আজও চিরসজীব। পুরো গল্প জুড়ে যে বিষয়টি আমার মানসপটে ঘুরপাক খাচ্ছিলো তা হলো 'আমার জন্মভূমি'। লেখনীরূপ জাদুর কাটিতে মোহিত হচ্ছিলাম যেন। কাহিনীর প্লট আর চরিত্র নির্বাচনে লেখকের শৈল্পিকসৃষ্টির প্রমাণ পাওয়া যায়। নবীন-প্রবীণ চরিত্রসমূহের দূর্দান্ত সমাহারে গল্পটি ছিল প্রাঞ্জল আর চরিত্রগুলো যেন জীবন্ত। বাক্যগঠন ছিল নির্ঝঞ্জাট ও শব্দচয়ন মসৃণ। সহজ-সরল উপস্থাপনায় গল্পটি পাঠক মনে অনেকখানি জায়গা দখল করে। গল্পের কিছু কথা যেন অন্তরকে নাড়া দিচ্ছিল আর হৃদয়ে গেঁথে যাচ্ছিল। যেমন শেষের দিকের কথাটিঃ "আর দেখা হয়ত হবে না। শুধু বলবো,মনে রেখো।" গল্পের গুপ্তধন খোঁজার ব্যাপারটি রীতিমতো চাঞ্চল্যকর। গ্রামীণ বিভিন্ন দিকও গল্পে উঠে এসেছে। লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়াও। সেই সাথে নানান দৃষ্টিভঙ্গির সমাজচিত্রও। গল্পের শেষ লাইনটি মনে একটা ঘোর বাঁধায়। প্রচ্ছদ নিতান্তই সাদামাঠা ধরনের কিন্তু মানানসই। কাভার পেজের রঙমিশ্রণও ভালো। মুদ্রণে ত্রুটি লক্ষ্যণীয়। বেশ কয়েক স্থানে বানান ভূল ও ভুল সম্বোধনের প্রয়োগ রয়েছে। সবমিলিয়ে গল্পটি বেশ দারূণ আর পাঠকমহলে জায়গা করে নেয়ার মতো একটি উপন্যাস। লেখকঃ সমরেশ মজুমদার ধরণঃ সামাজিক উপন্যাস প্রকাশিতঃ আবিষ্কার পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৮৭ মুদ্রিত মূল্যঃ ১৫০৳ ব্যাক্তিগত রেটিংঃ ৮.৫/১০
Was this review helpful to you?
or
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর #সাঁকোটা_দুলছে কবিতাটা পড়েছেন? শেষ লাইনটা ছিল। "সাঁকোটা দুলছে, এই আমি তোর কাছে!" ভারত বিভাজন নিয়ে লেখা কবিতাটাতে একটা করুণ আবেগ রস ছিল। ফাঁলা করা বুকের দুটি টুকরো। সেই বুকের ভেতর ভারত বাংলাদেশ না আছে ভালোবাসা, দেশপ্রেম। সমরেশ, হালযুগের প্রখ্যাত কথাশিল্পী এই গল্পে বিভাজনটার সাথে জুরে দিয়েছেন এক অমিয় অনুভব। করুণ রস আর নতুন সময়ের গল্প এটি। এক পুরোনো দলিল আর একটা পরিত্যক্ত ভিটের গল্প এটি। চলুন বিচরণ করি তৎকালীন আর বর্তমানের বিভাজনের রেশ ধরে সংকীর্ণ পথটাতে!! #কাহিনী_অল্পখানি প্রশান্ত তখন ছোট। দাঙ্গা ও দেশভাগের বিষয়টা প্রশান্ত তখন বোঝেও না। অথচ একদিন রাতে বাবা- মা'র সঙ্গে তাকেও পূর্ব পাকিস্তান, মাতৃভূমি ছেড়ে চলে যেতে হয় ইন্ডিয়া। যাবার সময় তাঁকে হাতছানি দিয়ে ডাকে তার ছোট্ট বন্ধুরা। বাগানের আম কাঁঠাল লিচুর পাতা, সবুজ বনের পাখি, পুকুরঘাট সব কিছু ছেড়ে যেতে কিছুতেই তার মন সায় দিচ্ছিল না। তবুও ছেড়ে যেতে হলো সাতপুরুষের ঠিকানা। প্রায় ভুলেই গিয়েছিল পুরোনো দিনের কথা । কিন্তু প্রশান্তের বাবার বন্ধু ইয়াসিন চাচার চিঠি প্রশান্তকে আবার টেনে আনে বাংলাদেশের নরসিংদী। তার গ্রামের বাড়িতে। তাঁর ইচ্ছােও ছিল চিরবিদায়ের আগে একবার যেন জন্মভুমির মাটিতে দাঁড়িয়ে নিঃশ্বাস নিতে পারেন। সত্তর বছরের প্রশান্তের এই ইচ্ছা অমুলক নয়। তাই নাতি প্রবেশকে সাথে নিয়ে এপাড়ে আগমন তাঁর। সাথে এক নতুন রহস্য। পূর্বপুরুষের বাদশাহী আমলের মোহর। "মাথার ওপর মেঘ, বুকের মধ্যে জল, এক জল অন্য জলকে দেখতে নাহি পায়। তাঁহার বাদিকে পাঁচপা, আঁশটে গন্ধ যেথা পা, সেখানের মাটির তিনফুট তলে!" গোলকধাধায় সবাই। ধোঁয়াটে রহস্য আর সংশয়। শেষটা কই? #প্রতিক্রিয়া: দেশ বিভাজন বাংলা সাহিত্য বেশ অনেকটা স্থানে অসীন। তবে ঠিক পুরো দেশ বিভাজনেই কিন্তু সীমাবদ্ধ সমরেশ ছিলেন না। সেটা সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয়। শীর্ষেন্দুর মত ওপাড়ে চলে যাওয়া লেখক সমরেশ নন। পুরোটাই ওপাড়েন তিনি, কিন্তু এখানে যতটা আবেগ নিয়ে তিনি এসেছেন ততটা একজন বাঙালীর দ্বারা দেয়াই সম্ভব। সেদিকে সমরেশের জন্য সাধুবাদ। কিন্তু বইটাতে সমরেশ যখন এপাড়ের বাংলা নিয়ে কথা বলেন তখন তাতে একটু অতিরঞ্জিত আবেগ পাওয়া যায়। যেন একটু ঠুনকো। কিন্তু গল্পের দ্বিতীয়ার্ধে তিনি কিস্তিমাত করে দিয়েছেন রহস্যটা টেনে। কিন্তু এখানেও যেন একটু ভুল করে ফেললেন। আরেকটু বর্ণনা এখানে দরকার ছিল কিন্তু তিনি তার স্বভাবসুলভ হুঁট করে গতি বাড়াতে গিয়ে এখানে এসে কিছুটা হোঁচট খেয়েছেন। গুপ্তধন! জিনিসটা নিয়েও কম মাতম হয়নি সাহিত্যে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো এই ধরনের একটা প্লটে সমরেশ লিখেছেন একটা গোয়েন্দা গল্প। সেটা খুব উঁচুমানের সাহিত্য কর্ম নিঃসন্দেহে। কিন্তু এখানে তিনি তিছুটা গুবলেট করে ফেলেছেন। গোয়েন্দা গল্পটা আগে পড়া ছিল বলে অনেকটাই আন্দাজ করা গেছিল শেষটা। কিন্তু না! শেষটা অন্যরকম হয়েছে। দুপাড় বাংলায় ভাষাগত একটা পার্থক্য আছে। গল্পটা সেই ভাষার টানাপোড়নে পড়েছে। উনি ক্রমাগত ভাষাটা গুলিয়ে ফেলেছেন। তাছাড়া বেশ কিছু বানান ভুল ছিল। এবং অনেক জায়গাতে নামে যথেষ্ট তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন। বইটার প্রথম অর্ধাংশে কাস্টম সংক্রান্ত বিষয়টাকে অযথা টানা হয়েছে। তা অনেকাংশে কমানো সম্ভব ছিল। সারকথা, সমরেশের মাস্টারপিস বইগুলোর তুলনায় এটা অনেকটা নস্যি! কিন্তু তারপরেও তার সমসাময়িক বইগুলোর মাঝে এটা বেশ ভালো মানের।
Was this review helpful to you?
or
প্রশান্ত তখন ছোট। দাঙ্গা ও দেশভাগের বিষয়টি প্রশান্ত তখনও বোঝে না। একদিন রাতে বাবা-মা’র সঙ্গে তাকেও মাতৃভূমি পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে চলে যেতে হয় ভারতে। যাবার সময় তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে তার ছোট্ট বন্ধুরা। বাগানের আম-কাঁঠাল, লিচু গাছের সবুজ পাতা, সবুজ বনের পাখি পুকুরঘাট এসব তাকে আকড়ে ধরে রাখতে চায়। তবুও প্রশান্তকে ছেড়ে যেতে হলো সাত পুরুষের ভিটামাটি। প্রশান্ত প্রায় ভুলেই গিয়েছিল পুরনো দিনের কথা। কিন্তু বাবার বন্ধুর চিঠি তাকে আবার টেনে আনে বাংলাদেশের নরসিংদীতে তার গ্রামের বাড়িতে। তার ইচ্ছেও ছিল চিরবিদায়ের আগে একবার যেন মাতৃভূমির মাটিতে দাঁড়িয়ে নিঃশ্বাস নিতে পারেন। পূর্বপুরুষের জমানো মোহরের টানে নয় বরং ফেলে রেখে যাওয়া স্মৃতিগুলোর টানে বাংলাদেশের এসে প্রশান্তর হৃদয়ে যে অনুভব এবং মাতৃভূমির প্রতি তার যে দরদ তা নিয়েই ‘বুকের ভেতর বাংলাদেশ’ গ্রন্থে উপস্থাপন করেছেন ওপার বাংলা জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার। বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে অ্যামেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে ।