User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
???
Was this review helpful to you?
or
বেশ লম্বা উপন্যাস। তবে বোরিং লাগে নাই। উপভোগ্য। লেখক চাইলে অবশ্য উপন্যাসের সাইজ একটু ছোট করতে পারতেন। কয়েক জায়গাতে বর্ণনা একটু কমিয়ে দিলে কিছু ক্ষতি হতো না।
Was this review helpful to you?
or
Great
Was this review helpful to you?
or
বাস্তবমুখী ছিলো
Was this review helpful to you?
or
উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে কি এক সম্মহনি শক্তিতে বাঁধা পড়ে গিয়েছিলাম যে ২৭২ পৃষ্ঠার উপন্যাস একদিনে শেষ করলাম।সাদাত হোসাইন এর অর্ধবৃত্ত উপন্যাসে মুগ্ধ হয়ে আরশিনগর পড়া। একটি পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস বলতে সাধারণত বহু চরিত্র, ঘটনার বর্ণনা, চরিত্রের বিভিন্ন স্তর ফুটে ওঠার রোমাঞ্চকর অনুভূতিই আমি বুঝি। উপন্যাস তো এমনটা হওয়া উচিত। অসাধারণ লেগেছে।
Was this review helpful to you?
or
Bhalo
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামঃ আরশিনগর। লেখকঃ Sadat Hossain "জগতের সবকিছুর ঋণ চোখের কাছে আর চোখের ঋণ আয়নার কাছে। জীবন ও জগতের সবটা দেখা এই চোখ শুধু আয়নাতেই তার নিজেকে দেখতে পায়। কি অদ্ভুত হিসাব! এই ঋণ তাই এই জগতেরও। আমি এই জগতের নাম দিয়েছি আরশিনগর। আসলে আমরা কিভাবে পৃথিবীতে আসছি? কখনো কি ভেবে দেখছি। আমাদের ভূমিষ্ট সময় কি পরিমাণে যন্ত্রণা বহন করে মায়েরা! তার মাঝে যদি হয়, গ্রামের দাইদের মাধ্যমে জন্ম। আপনিও লক্ষ করে দেখতে পারেন, গ্রামের অশিক্ষিত, অদক্ষ, অকার্যকর, ধাত্রী ধারা সন্তান ভূমিষ্ট করাতে গিয়ে হাজার হাজার মায়েদের মৃত্যু হয়। আমাদের সমাজে, তারই একজন নিলুফা বানুর মৃত্যু হলো। বেঁচে রইলো আরশি। নিলুফা বানুর মৃত্যু সাথে সাথে মজিবর মিয়া ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা, গ্রামে প্রচুর পরিমাণ বন্যার কারণে গরু বিক্রয় করে ও মামার শর্ত মেনে টাকা নিয়ে একখানা ট্রলার ক্রয় করেন। দিন-রাত কাচা টাকা রোজগার করে গ্রামের লতু হাওলাদারের জমি খরিদ করে, একসময় মজিবরের মা আম্বরি বেগম লতু হাওলাদারের বাড়ি কাজ করতেন। হঠাৎ লতু হাওলাদার লোকমানের গ্রুপ নিয়ে মজিবর মিয়াকে মারধর করে, পঙ্গু করে ছেড়ে দেয়। আরশি প্রথম তার দাদির কাছে- পুঁথি পাঠ, কেচ্ছা শুনতেন, হঠাৎ একদিন তিনি মারা জান। আরশি সৎ-মার কাছে ভলো থাকলেও, যখন লাইলি বুঝতে পারেন তার পেটে সন্তান, তখন ভাবেন আরশির নামে-বড়জমি, আড়ত, তার স্ব সন্তান কিছু পাবেনা, পরিকল্পনা আরশিকে শেষ করে দিবে। কিন্তু আকবর সাহেবের মাধ্যমে গ্রাম থেকে পালিয়ে আসেন, আকবর সাহেবের অভাবের সংসারে বেশি-দিন থাকতে পারেন নাই, শহরে রুবিনার সাথে আকবর সাহেব পরিচয় ছিল, তার কাছে রেখে আসে আরশিকে, রুবিনা পেশায় একজন ডাক্তার, তার কাছে চিকিৎসার নিতে আসে। আশিষও মিলি তাদের সন্তানের মৃত্যুপরে মিলি মানসিক সমস্যা দেখা-দেয় রুবিনা সমাধানের জন্য আরশিকে দিয়ে দেয়। আরশিনগর পড়তে পড়তে-নিজেই কখন যে গল্পের মাঝে হারিয়ে গেছি, প্রতিটি পেইজেই চুম্বকের মত ধরে রেখেছে। এখন আমার বারবার মনে হচ্ছে, ক্যান আগে পড়লাম না। হ্যাঁ, চাইলে আপনিও পড়ে দেখতে পারেন, কি পরিমাণে রস আছে বইটায়, "আরশিনগর" প্রথম প্রকাশ, একুশে বইমেলা ২০১৫ সালে। সময় ও সংগ্রহের কারণ পড়া হয়নি তখন।
Was this review helpful to you?
or
অসাধারন একটি বই।ভালো লাগলো পড়ে।
Was this review helpful to you?
or
First of all I would like to thank Sadat Hossain for giving me the opportunity to read such a wonderful story. The story started with the death of Nilufa Banu. She is the mother of Arshi. There are a whole lot of characters. The story progresses with arshi And other characters. Most of them had integral role. I have to say Sadat Hossain is quite adept in choosing the words. He plays with the feeling of the readers. As a debut It was quite good. This novel depicts the life and its predicaments of not having a mother. I also liked the character of Ashish. A responsible and lovable husband. Devoted son indeed. If I want to describe this character, I have to give the spoiler also. Father of Arshi and the doctor had major roles in the story. Definitely worth the time. i hope you will not regret reading it.
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ এক বই...লাইলির মতো মেয়ে আজকাল অনেক বেশী...ধদ্যবাদ সাদাত ভাইকে
Was this review helpful to you?
or
I think this is the best story book..
Was this review helpful to you?
or
one of the best book, I have read❤
Was this review helpful to you?
or
অনেক ভালো লেগেছে।।
Was this review helpful to you?
or
আরশি নামে একটি মেয়ে আর তার জীবনের চলতি পথে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে এই উপন্যাসটা। যযাতিপুর গ্রামের মানুষদের গল্প, তাদের চাওয়া-পাওয়া, রাজনীতি, জমিজমা নিয়ে কলহ সহ আরো অনেক বিষয় উঠে এসেছে এই বইটাতে। বইটার মাঝখানে কিঞ্চিত দীর্ঘ মনে হয়েছে কাহিনীটা, মনে হয়েছিল, অযথাই টানা হচ্ছে। কিন্তু আস্তে আস্তে সে বিরক্তি ভাব কমে আসছে, পড়তে পড়তে। সবমিলিয়ে ভালোই বইটা। © Shahidul Nahid
Was this review helpful to you?
or
বুক রিভিউ: আরশিনগর। ভাল লাগছে বইটা কিন্তু দামটা একটু বেশি হয়ে গেছে। শুরুর দিকে একঘেয়েমি লাগতে পারে কিন্তু শেষ অংশ টা খুব ভালো লাগছে। যারা না খেয়ে, পথ হেঁটে টাকা বাঁচিয়ে বই কেনেন তাদের জন্য এ বইটা কেনা বোধহয় বিলাসীতা হয়ে যাবে।
Was this review helpful to you?
or
আমার পড়া অন্যতম সুন্দর একটা উপন্যাস। অনেক শুভকামনা লেখকের জন্য।
Was this review helpful to you?
or
Osomvob valo laga ekta book
Was this review helpful to you?
or
আরশি মাথা তুলে তাকাল। ভোলানাথের বন্ধ সেলুনের সামনে কাঁঠের খুটি। সেই খুঁটির গায়ে হাতের তালুর সমান ছোট্ট এক চিলতে আয়না। ঝাপসা হয়ে যাওয়া সেই আয়নার দিকে তাকিয়ে খানিক স্থীর দাঁড়িয়ে রইল আরশি। তারপর ধীর পায়ে আয়নাটার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। আয়নার ভেতরে আবছা একটা মানুষ। গতকাল অবধি দেখে আসা সেই একই চোখ, সেই একই নাক, সেই একই মুখ, একই চেহারা। কিন্তু গতকালের সেই আরশি আর এই মানুষটাকে কি সে চেনে? আরশির হঠাৎ মনে হল, এই জগতে কেউ কাউকে চেনে না। এই জগত আয়নার মতন। উল্টোজগত। এই উল্টোজগতের নাম আসলে আরশিনগর।
Was this review helpful to you?
or
অতিপরিচিত এবং সিনেমাটিক গল্প হলেও লেখকের লেখনশৈলী ভালো লেগেছে। কিছু মানুষের কপালে সুখ সহ্য হয় না আরশিও ঠিক তাদেরই দলে।নীলুফা বানুর মৃত্যু এবং আম্বরি বেগমের মৃত্যুতে আরশির জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। এরপরে আরশির জীবনে আরও ভালোবাসার মানুষ আসলেও কপালদোষে সবাই হারিয়ে যায়। তারপরে আছে রাজনীতি, লতু হালদারের মতো পৈশাচিক এবং ধূর্ত গ্রামের মানুষ।
Was this review helpful to you?
or
সাদাত হোসাইন এর লেখা বই গুলোর মধ্যে এই বইটি আমি প্রথম পড়েছি। বইটি পড়ে তার লেখার প্রতি অন্যরকম ভালোবাসার সৃষ্টি হয়েছে। বইটি অসাধারণ ভাবে লেখা যা ভাষায় প্রকাশ করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। বইটি যখন পড়েছি তখন মনে হয়েছে যে বইটির মধ্যে ডুবে গিয়েছি। লেখক খুব ভালো ভাবে বইয়ের মধ্যে আমাকে আটকে রাখতে পেরেছে। অনেক বই না পড়লেও, এই বইটি আমার সাধারন গতির তুলনায় খুবই দ্রুত পড়েছি। বইটি পড়ার সময় প্রতিটা মুহূর্ত অনুভব করেছি।
Was this review helpful to you?
or
সাদাত হোসাইনের তিনটি উপন্যাস পড়ার সৌভাগ্য(!) আমার হয়েছে। আরশিনগরের প্রথম ১০০ পেইজ পড়ার পর মনে হয়েছিলো হুমায়ূন আহমেদের পর বাংলা সাহিত্য আরেকজন অসম্ভব শক্তিশালী ইনফ্লুয়েন্সার পেতে যাচ্ছে। কিন্তু আমার ধারণায় প্রচন্ড ভুল ছিলো। হুমায়ূন আহমেদ যেখানে গল্প শেষ করেন, সাদাত হোসাইনের গল্প শুরুই হয় সেখান থেকে। আরশিনগর প্রথম ১০০ পেইজে শেষ করে দিলে এটা অসম্ভব সুন্দর গল্প হতে পারতো। কিন্তু লেখক এরপর থেকেই ফেসবুকীয় লেখা শুরু করেছেন। সাদাত হোসাইন নিঃসন্দেহে ভালো লিখেন কিন্তু কোথায় থামতে হবে এ বোধটি তার একদম নেই। আরশিনগর পড়া শুরু করলে আমার মনে হয় প্রথম ১০০ পেইজের পর আর না এগুনোই ভালো।
Was this review helpful to you?
or
#আরশিনগর সাদাত হোসাইন পড়বো না পড়বো না করেও পড়ে শেষ করলাম আরশিনগর। খুব একটা ভালো লাগেনি আবার খারাপও লাগেনি। এই বইটি পড়তে গিয়ে আবিষ্কার করলাম কোন লেখকের দুই একটা বই পড়ে তাকে আমি প্রিয় লেখকের তালিকায় ফেলতে পারি না। মানবজনম এবং নিঃসঙ্গ নক্ষত্র পড়ে সাদাতকে প্রিয় লেখকের তালিকায় রেখেছিলাম কিন্তু আরশিনগর পড়ে তাকে কেন যেন প্রিয় লেখকের তালিকায় রাখতে ইচ্ছে করছে না। মনে হচ্ছে ধুর এটা কোন লেখক হলো। অথচ তার এই গল্পটি ভালো ছিল। কিন্তু কোন এক অদ্ভুত কারণে আবার ভালোও লাগেনি। গল্পটা শুরুর পর থেকে ডালপালা গজানোর মতো অনেক গুলো চরিত্র তৈরী করা হয় কিন্তুু গল্পের মাঝামাঝি এসে একে একে অনেক গুলো চরিত্রকে হত্যা করে। প্রায় সব গুলো মৃত্যুর বর্ণনা একই রকম "ইমুকের লাশ পরদিন সকালে নদীতে ভাসতে দেখা গেল" বা "ইমুকের গলা কাটা লাশ পাওয়া গেল।" আরেকটা জিনিস যেটা বেশি বেশি চোখে পড়েছে সেটা হলো "সেদিন সারা রাত সে ঘুমাতে পারলো না।" আরশিনগর পড়তে গিয়ে এ ও আবিষ্কার করলাম সাদাত হোসাইন এই বইটি লিখে ঠিক তৃপ্তি মিটেনি তাই তার হয়তবা তৃপ্তি মেটাতে গিয়েই পরবর্তীতে লিখেছিল মানবজনম নামে বিশাল উপন্যাসটি। আরশিনগর এর সাথে মানবজনম উপন্যাসের অনেক মিল খুজে পাওয়া যায় । যারা পড়ছেন তারা হয়তবা আমার সাথে এক মত হবে। এই বইতে অনেক গুলো চরিত্র ছিল তার মধ্যেই লতু হাওলাদার কে আমার ভালো লাগছে। তার মতো ধুরন্ধর মানুষ কমই দেখা যায়। নিজের সার্থের জন্য নিজের বংশ মর্যাদা ঠিক রাখার জন্য দারুণ খেল দেখিয়েছন। যদি কখনো এই উপন্যাস নিয়ে মুভি করা হয় তবে আমি লতু হাওলাদার হতে চাইব। প্রিয় চরিত্রে মধ্যে আছে''বিধানচন্দ্র''। বিধানচন্দ্রকে আমার অসাধারণ মনে হয়েছে। সালা এমন পুরুষ মনে হয় দুনিয়াতে খুব কমই আছে। তাকে খুব হিংসা হচ্ছে আমার। ইশ যদি বিধানচন্দ্র মতো হতে পারতাম! সাদাত হোসাইন এর উপন্যাসের সবচেয়ে বেশি যেটা ভালো লাগে সেটা হলো প্রতিটি অধ্যায় এর শেষের স্টেইপ গুলো। এই স্টেইপ এর প্রতিটি লাইন বারবার পড়তে ইচ্ছে করে। মন থেকে যাকে বলে অন্তরের অন্তস্থল থেকে অনুভব করতে ইচ্ছে করে। কখনো তা পেরেছি কখনো করতে পারিনি। অনুভব করতে পারা আর না পারার খেলা খেলতে খেলতে বইটা এক সময় শেষ হয়ে গেল। আরেকটু ছোট হলে হয়তো আরো ভালো হতো। বইটি পড়ার সময়টা খুব ভালো কেটেছে। তাদের একজন হয়ে গিয়েছিলাম আমিও।
Was this review helpful to you?
or
বই কাহিনী : প্রতিটা সন্তানের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হলো বাবা মা।যেখানে থেকেই নির্ভয়ে আস্তে আস্তে করে বেড়ে উঠে সদ্য জন্মানো শিশুটি।জানতে শিখে নিজেকে, বুঝতে শিখে পৃথিবীকে। আর এই জানা বুঝার সময়টাতে মাথার উপর ছায়া হয়ে থাকে বাবা-মা! কিন্তু যে শিশুটি জন্মাতে না জন্মাতেই নিজের মা'কে হারিয়ে ফেলে চিরতরে, সে শিশুটির অবস্থা ঠিক কেমন হয়??? তেমনি একটি চরিত্রের নাম হলো আরশি।আহামরি সুন্দরী নই,শ্যামবর্ণ! যা নিয়ে মৃত্যুপথযাত্রী মায়ের এক করুণ আক্ষেপ। সে তো থাকবেনা, কালো বলে যদি মেয়েটিকে অবহেলা পেতে হয়!! আচ্ছা কালো বলে কি মেয়েটির কোনো জায়গা হবেনা এই অদ্ভুত জগত সংসারে??? তবে মেয়েটির চোখ বড় সুন্দর, একেবারে আয়নার মতো স্বচ্ছ। তাই তো মরে যাবার আগে নিলুফা বানু তার শাশুড়ি আম্বরি বেগমকে বলে যায়, মেয়েটির নাম যেনো আরশি রাখা হয়।ব্যস জন্ম আর নাম দিয়েই চলে যায় সব দায়িত্ব আম্বরি বেগমের কাঁধে ফেলে। একদিকে বন্যার পানিতে ঘর ছুঁইছুঁই, অন্যদিকে সদ্য জন্মানো মেয়ে আরশি!মজিবর মিয়া যেনো চোখে অন্ধকার দেখছেন।গোয়ালে গাভীন দুটো গাঁই, চারদিক পানিতে থইথই করছে! কি আছে এরপর??? বছর চারেকের মাথায় মজিবর মিয়াঁ বেশ উন্নত করলেন,বড়সড় এক ট্রলার কিনলেন,ঘড় তুললেন,জমিজিরাত করলেন। ঘরে নতুন বউ ও এলো।বেশ গোছালো হয়ে উঠলো তার সংসার তবুও সবটা সাথে অস্পষ্ট ভাবে মিশে রইলেন নিলুফা বানু, হয়তো আরশি হয়ে! সবটা সুন্দর চলার মাঝে অশান্তি হয়ে এলো মজিবর মিয়াঁর নতুন বউ লাইলি বেগম।প্রথমটায় আরশিকে খুব ভালোবাসলেও গর্ভবতী হবার পর থেকে অনেকটা বদলে গেলেন।বদলে গেলো মজিবর মিয়াঁর অবস্থা,শত্রুতার শিকার হয়ে কাটা গেলো পা,ভেঙে গেলো শরীরের হাড়।বন্ধ হয়ে গেলো মুখের ভাষা।সাথে সাথে বদলে গেলো ছোট আরশির জীবন।শিখে গেলো জীবন যে কত বেশী অসহায়!! এই সময়টাকে আরো বেশী অসহায়ত্ব করতে আরশিকে একা করে চলে গেলেন আম্বরি বেগমও।নিরব,অস্পষ্ট ভাষী মেয়েটা নির্বিকার হয়ে পরে রইলো। আচ্ছা এরপর কি হবে???কি হবে আরশি মেয়েটার ভাগ্য?নতুন কি অপেক্ষা করছে এই আরশিনগরে?? অনেক অনেক প্রশ্ন!! জানতে হলে অবশ্যই পড়তে হবে সাদাত হোসাইনের আরশিনগর। ব্যক্তিগত মতামত : এর আগেও সাদাত হোসাইনের নির্বাসন আর নিঃসঙ্গ নক্ষত্র পড়েছি।দুটো বইই দারুণ লেগেছে,তবেঁ এই বইটার প্রথম দিকটা আমার ভালো লাগেনি ।মনে হয়েছে অযথাই টেনে টেনে বড় করেছে।তাছাড়া একটা শব্দ বারবার আমার কাছে কটু লেগেছে,লেখক প্রায় বাক্যেই"মানবজীবন"শব্দটা ব্যবহার করেছেন। বৃষ্টি বরাবরই আমার খুব পছন্দের,প্রচ্ছদ টাও বৃষ্টির ফোটা দিয়ে সুন্দর করে সাজানো।অনেক বই আছে যেসব বইতে লেখক সুন্দর নাম ব্যবহার করতে পারেন না।কিন্তু আরশিনগর নামটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে।গল্পের প্লটের সাথে নামের এক অদৃঢ় বন্ধন আমি অনুভব করেছি। খুব অদ্ভুত চরিত্র লেগেছে লাইলিকে,সাথে তার উপর রাগও।নিজেকে সুন্দরী ভেবে একটা নারী যেঁ ছোট শিশুর সাথেও তুলনা করতে পারে।বইটি না পড়লে জানাই ছিলোনা। বইয়ের প্রিন্টিং গুলোও সুন্দর।তবেঁ ওতটা সফট নয়, খসখসে ধরণের।এদিকটাই একটু নজর দেওয়া উচিৎ ছিলো। তাছাড়া বাকি সবটা দারুণ ছিলো।অসাধারণ ভাবে একটা শিশুর অসহায় জীবনকে শেষ অব্ধি বর্ণনা করে গেছেন।নিয়ে গেছেন পাঠকের ভাবনাকে রুপকথার আরশিনগরে। বই বিবরণ : নাম:আরশিনগর লেখক:সাদাত হোসাইন প্রকাশক :খন্দকার মনিরুল ইসলাম প্রচ্ছদ :মোস্তাফিজ কারিগর প্রকাশনী :ভাষাচিত্র মুদ্রিত মূল্য:৪৫০টাকা পৃষ্ঠা সংখ্যা:২৭১
Was this review helpful to you?
or
তিনি হুমায়ুন অাহমেদের লেখার অাঙ্গিকে লিখতে চেষ্টা করেন৷ তিনি কিছু গুরু গম্ভীর কথা দ্বারা লেখার মাঝে প্রকাশের চেষ্টা করলেও শেষে কিন্তু লেখাটি খুব সাধারণ এবং কিশোর কাহিনীর মতো হয়ে পড়ে৷ কথাটি একজন অাদর্শবান পাঠক অবশ্যই মানতে বাধ্য৷ তিনি নিজেকে যেভাবে লেখক স্বত্বা দ্বারা প্রকাশ করতে চাচ্ছেন তা পুরোই বৃথা যাচ্ছে ৷ উনার অারো লেখার অাগে দশবার ভাবা উচিত
Was this review helpful to you?
or
আরশিনগর বিস্তৃত হয়েছে ছোট্ট এক মেয়েকে কেন্দ্র করে যে কিনা গল্পের শেষে কিশোরী হয়েছে। শেষ অবদি তার জন্য বয়স্ক মানুষটাকে মেনে নিতে পারি নি।
Was this review helpful to you?
or
বই: আরশিনগর। লেখক:সাদাত হোসাইন। প্রকাশক:ভাষাচিত্র ধরন:উপন্যাস সাদাত হোসাইন,সমকালীন উপন্যাসের জগতে এক অতি পরিচিত নাম।তিনি পাঠকদের তৃপ্ত করতে রচনা করেছেন অনেক সমকালীন উপন্যাস।তন্মধ্যে "আরশিনগর" অন্যতম অসাধারণ একটি সমকালীন উপন্যাস। এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র আরশি।এক ভয়াবহ বন্যায় যযাতি পুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করে সে,কিন্তু মৃত্যুর সময় মারা যায় তার মা।মারা যাওয়ার আগে আরশি র মায়াময় দুটো চোখ দেখে তার নাম আরশি রাখতে অনুরোধ করে যায় তার শাশুড়ি আম্বরি বেগম এর কাছে। সৎ মা আসার পর থেকে আরশি তার বয়স এর চেয়েও বেশি দেখে তার জীবন। সে প্রতিনিয়ত যে জীবন থেকে শিক্ষা নেয়।সে প্রতি বার ধাক্কা খায় আর মনে করে তার দাদী অম্বরি বেগম এর কথা,অম্বতি বেগম তাকে বলেছিল যে,মানুষের জীবনের সব সময় এ সময় এই সময়ের কোনো ভালো মন্দ নেই যখন যে সময় তখন সেই সময় টাই ভালো। আরশির সাথে এই গল্পে জুড়ে আছে আরো অনেক গুলো চরিত্র যেমন আছে তার বাবা মজিবর মিয়া,আছে শুকররঞ্জন ডাক্তার এই ডাক্তার না থাকলে আরশির জীবনের গল্প আর লেখা হতো না,গল্প আছে শুকোররঞ্জন ডাক্তার এর ছেলে আশীষ আর তার বউ মিলি আরো আছে গ্রামের প্রভাবশালী লোক আতাহার তালুকদার। আমাদের গ্রাম অঞ্চলে এখনও প্রভাব আর প্রতিপত্তি নিয়ে প্রতিযোগিতা হয় সেটাও লেখক এই উপন্যাসে খুব সূক্ষ্মভাবে তুলে ধরেছেন। যেমন-গল্পের একধরনের খলনায়ক এ বলা যায় লতু হাওলাদার কে। সে এই প্রতিপত্তি জন্য ওটার বংশ মর্যাদা জন্য হামলা করে আতাহার তালুকদার ও মজিবর মিয়ার উপর,এর কারণে তিনি হাত মিলালেন গ্রামের উগ্র চরমপন্থীদের সাথে। অন্য দিকে আরশির সৎ মা এর কারণে আরশি কে হতে হলো ঘর ছাড়া,তাকে সাহায্য করে গ্রামের ইমাম সাহেব।সেখান থেকে আরশি কে তিনি নিয়ে গেলেন আতাহার তালুকদার এর বউ রুবিনার কাছে,রুবিনার কাছেও আরশি কৃতজ্ঞ কারণ আরশির একবার জ্বর এর সময় এই রুবিনা সারারাত আরশির বাড়িতে ছিল রুবিনার কাছ থেকেই আরশির জীবনের মোড় ঘুরল। আরশি ধীরে ধীরে হয়ে উঠতে লাগলো এক সর্ব সহা নারী। রুবিনার কাছে থেকে। সে গেলো আশীষ এর বাড়িতে এর আগে আসিস এর ছেলে মারা গেল,তারপর থেকেই মিলি পাগল প্রায়।আরশির ছোয়াই ভালো হলে উঠলো মিলি। আরশি তার মাকে কখনো দেখে নি তাই তার কাছে মায়ের মমতা অতটা অনুভূত হই নি,সে তার বাবার কোলে উঠেছে বাবার স্নেহ পেয়েছে।আরশির এই পুরো গল্পে লেখক মানব জীবন এর প্রতিচ্ছবি দেখিয়েছেন যেটা ছিল উল্টো। আর তাই লেখক বলেন এই উল্টো জগৎ এর আসল নাম "আরশি নগর"। নির্দ্বিধায় বলতে পারি,উপন্যাসটি আপনাকে,আপনার মনকে তৃপ্ত করবে।জন্ম দিবে এক অদ্ভূত অনুভূতি যা গভীরভাবে স্পর্শ করবে আপনার আত্মাকে।তো,আজই সংগ্রহ করুন বইটি।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_জানুয়ারি বইয়ের নামঃ আরশিনগর লেখকঃ সাদাত হোসাইন প্রকাশনীঃ ভাষাচিত্র প্রচ্ছদঃ মোস্তাফিজ কারিগর গায়ের মূল্যঃ ৪৫০ টাকা এক সন্ধ্যায় মারা গেলো মজিবর মিয়ার স্ত্রী নিলুফা বেগম, রেখে গেলো তার সদ্যোজাত শিশু কন্যা কে। মৃত্যুর পূর্বেও তার জ্ঞান ছিলো স্পষ্ট। সে দেখলো তার মেয়ের গায়ের রঙ কালো কিন্তু মৃত্যুর পূর্বে সে ছিলো নিশ্চিত কারণ সে দেখলো তার মেয়ের দুই চোখ ভর্তি মায়া, এই মায়াই তাকে জীবনের সব বিপদ থেকে রক্ষা করবে। নিলুফা বেগম দেখলো স্বচ্ছ আয়নার মতো দুটো চোখ, যেখানে তার মুখ স্পষ্ট ভেসে উঠলো এমনকি তার নাক ফুলটা পর্যন্ত। তাই মৃত্যুর আগে শাশুড়ি আম্বরি বেগম কেবলে গেলো,"আম্মা, এর নাম রাইখেন আরশি। এর চোখ আরশির মতোন।" সেই বছর যযাতিপুর গ্রামে নামে ভয়াবহ বন্যা। একদিন রাতে মজিবর মিয়ার বাঁশের বেড়ার চৌচালা ঘর ভেঙ্গে যায়। মা,মেয়ে আর অবলা দুটি গাভী নিয়ে মজিবর পড়ে অকূলপাথারে। শেষ পর্যন্ত কোন উপায় না দেখে গাভী দুটিকে নিয়ে যায় স্টিমারঘাটায় তার মামার বাড়িতে। তার ধুরন্ধর মামা তাকে গাভী দুটি বিক্রি করে সাথে আরো কিছু টাকা দেয় মজিবর মিয়া কে ইঞ্জিনের নৌকা কেনার জন্য। কিন্তু সেখানেও ছিলো এক ভয়ানক শর্ত যা তখনই প্রকাশ করেনা মজিবর মিয়া। সেটা প্রকাশ পায় আরশির যখন ছয় বছর বয়স তখন। সেই শর্তটা ছিল মজিদ ব্যাপারীর দুশ্চরিত্রা মেয়ে লাইলি কে বিয়ে করা।বিয়ের পর লাইলি আরশি কে অনেক আদর করে কিন্তু সেটা ছিলো তার বাহিরের রূপ তার আসল রূপ প্রকাশ পায় যখন তার নিজের সন্তান হয়। পরিশ্রমী আর দূরদর্শী মজিবর মিয়া তার ট্রলার দিয়ে বন্যার সময় অনেক টাকা উপার্জন করে এবং তার নিজের চেষ্টায় উপরে উঠতে থাকে। সাধারণ মজিবর থেকে গ্রামের একজন গন্য মান্য ব্যক্তি হয়ে উঠে। কিন্তু তার এই উন্নতির কারণে সে গ্রামের কিছু মানুষের চক্ষুশূল হয়ে উঠে, তাদের মধ্যে অন্যতম হলো লতু হাওলাদার, যে নিজের বংশপরিচয় আর পূর্ব আভিজাত্যের অহংকারে মজিবর মিয়ার উন্নতি কে বাঁকা চোখে দেখতো এবং তাকে থামানোর চেষ্টায় ছিলো। আরশিনগর যেমন আরশির গল্প তেমনি আরশি কে ঘিরে যে সমাজ রয়েছে সেই সমাজেরও গল্প। এটা সেই সময়ের কথা যখন এক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলো পুরো দেশ। চরমপন্থী দলগুলোর মধ্যে ছিলো বিবেধ। তারা হয়ে উঠছিল নৃশংস যা শহর থেকে বন্দর এবং শান্ত গ্রামগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছিলো। এ উপন্যাসের আরেকদিকে রয়েছে শহরের কাহিনী যেখানে রয়েছে ডাক্তার শুকরঞ্জন বাবুর ছেলে আশিষ ও তার স্ত্রী মিলির জীবন। নিজের একমাত্র সন্তান কে হারিয়ে মিলি পাগল প্রায় অবস্থা। তাদের কাছেই থাকেন ডাক্তার শুকরঞ্জন ও তার স্ত্রী সুজাতা দেবী। লতু হাওলাদার এক চক্রান্ত করে নিজের অবস্থান পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য। চরমপন্থী লোকমান কে প্ররোচনা দেয় জমিদার বংশধর আতাহার তালুকদার কে সপরিবারে হত্যা করার জন্য। মসজিদের ইমাম সাহেবের সহায়তায় মজিবর মিয়া তাদের রাতের আধারে পালাতে সাহায্য করে। এই ঘটনা লোকমান জানতে পেরে মজিবর মিয়াকে অমানষিক অত্যাচার করে। অন্যদিকে মজিবরের স্ত্রী স্বামীর পঙ্গু অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে লোকমানের সাথে গড়ে তোলে এক অবৈধ সম্পর্ক। তাদের একরাতে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে ফেলে আরশি সেজন্য লোকমান তাকে খুন করতে যায়। আরশি ইমাম সাহেবের সাথে উনার বাড়িতে পালিয়ে যায়। সে রাতের পর গ্রামে আর আরশি কে কেউ খুঁজে পায়না। তখন থেকেই শুরু হয় আরশির নতুন জীবন। এই নতুন জীবনে সে কখনো ঠাঁই পায় আশিষ আর মিলির সংসারে, আবার মিলির যখন নিজের সন্তান আসে তখন তার ঠাঁই হয় রুবিনার সংসারে। তারপর আসে আসিফ আর বিধানচন্দ্র যারা আরশির জীবনে আনে অন্য মোড়, আরশি কে ভালোবাসতে শেখায় কিন্তু আরশি কি পেয়েছিলো সত্যিকারের ভালোবাসা? নাকি সেখানেও সে জীবনের বাকি ঘটনার মতোই অধরা থেকে যাবে ভালোবাসা? লতু হাওলাদারের চালে গালকাটা বশিরের হাতে খুন হয় লোকমান। লাইলি হয় তার ছেলে মোস্তফার রক্ষিতা। এরপর গ্রামটাতে শুরু হয় একের পর এক খুন। শুধু একজন মানুষ সবকিছুর মাঝেও আশা বুকে নিয়ে বসে থাকে, সে হচ্ছে আরশির বাবা মজিবর মিয়া। আরেকবার মেয়ের মুখে বাবা ডাক শুনবে এই আশায় বেঁচে থাকে মজিবর মিয়া। তার সেই আশা কি পূরণ হবে কোনদিন? যারা তার এই পরিনতির জন্য দায়ী তারা কি শাস্তি পাবে নাকি এভাবেই চলে যাবে আরশি আর তার বাবার জীবন? পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় লেখক সাদাত হোসাইনের কোন বই এর আগে পড়া হয়নি এটাই প্রথম বই। এই বইটা পড়ার পর শুধু এটাই মনে হয়েছে, দারুণ। অনেকদিন পর একটানা শেষ করেছি কোনো বড় বই। আগে বড় বইগুলো একটানা শেষ না করে রাখতে পারতাম না কিন্তু এখন আর তা পারিনা কিন্তু আরশিনগরের ক্ষেত্রে তা হয়নি। বইটা হাত থেকে রাখতেই পারিনি। লেখকের লেখনশৈলী আমাকে মুগ্ধ করেছে। কিন্তু কিছু শব্দ বার বার পড়তে হয়েছে আবার অনেক ক্ষেত্রে এরকম মনে হয়েছে এই বর্ণনা গুলো না থাকলেও চলতো, আবার আরশির জীবনে আসিফের উপস্থিতি কেমন আকস্মিক ছিলো, আসিফের সম্পর্কে আর কোনো বর্ননা নেই আরশির সাথের ঘটনাগুলো ছাড়া। আবার বিধানচন্দ্রের প্রতি আরশির হঠাৎ আশা আবেগও ভালো লাগেনি। এরকম টুকিটাকি বিষয় ছাড়া পুরো বইটা আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। লেখকের গ্রাম আর গ্রামের মানুষের প্রকৃতি সম্পর্কে যে বনর্না তা যেনো আমার চোখের সামনে ঘটছে এরকম মনে হয়েছে। "আরশিনগর" শেষ করার পর আমি লেখকের "মানবজনম" বইটাও পড়েছি বাকিগুলো পড়ারও ইচ্ছা আছে।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_ডিসেম্বর । বই আলোচনা ১০ . বইয়ের নাম: আরশিনগর লেখক: সাদাত হোসাইন বইয়ের ধরণ: সমকালীন উপন্যাস প্রকাশনা: ভাষাচিত্র প্রকাশনী প্রথম প্রকাশ:অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫ প্রচ্ছদ : মোস্তাফিজ কারিগর আইএসবিএন : 978-984-91335-9-9 পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৭২ মুদ্রিত মূল্য : ৪৫০ টাকা ব্যক্তিগত রেটিং : ৪/৫ অনলাইন পরিবেশক :রকমারি.কম . বড় কলেবরের বই পড়াতে আসার এ্যালার্জি আছে। ভীষণরকম এ্যালার্জী।আমার জীবনে বড় কলেবরের বই পড়ার সূচনা হয়েছে অনেক বছর পর। যে বই দিয়ে বই পড়া শুরু হয়েছে তার নাম "অন্দরমহল"। লেখক সাদাত হোসাইন। অন্দরমহল পড়ে বিমোহিত হয়ে আমি আরশিনগর খোলে বসি চোখের সামনে। আমার দৃঢ় মন কিন্তু অস্থির চোখ প্রথম পৃষ্ঠা থেকেই বইটাতে চরমভাবে লেগেছিল। বইটির পরিপূর্ণ রিভিউ লিখবো বলেই বসেছি। তবে লেখকের সৃষ্টিকর্ম নিয়ে আলোচনা করার আগে স্বয়ং লেখক সম্পর্কে কিছু বলে নেই। . লেখক পরিচিতি ও লেখকের প্রাপ্ত পুরস্কার: বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় তরুণ লেখক সাদাত হোসাইনের জন্ম ১৯৮৪ সালের ২১ মে মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার কয়ারিয়া গ্রামে। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নৃবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন। ভষাচিত্র প্রকাশনী থেকে প্রথম বের হয় তার আলোকচিত্রের গল্পের বই "গল্পছবি"। তারপর প্রকাশিত হয় তার ছোটগল্পের বই "জানালার ওপাশে"। ছোট কলেবরে মাত্র ৭৯ পৃষ্ঠায় আবদ্ধ করেছেন " আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই" ।এরপর একে একে প্রকাশ করেছেন অন্দরমহল, আড়শিনগর, মানবজনম, নিঃসঙ্গ নক্ষত্রের মত বড় কলেবরের সব উপন্যাস। বের হয়েছে উনার কবিতার বইও। শুধু সাহিত্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেখে এগিয়ে গেছেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণেও। চ্যানেল নাইনে প্রচারিত তার "বোধ" শর্টফিল্মটি প্রশংসার ঝড় তুলেছে। আলোকচিত্র, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র,লেখালেখির জন্য কালচারালার এচিভম্যান্ট ক্যাটাগরিতে জিতেছেন "জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ২০১৩। . কাহিনী সংক্ষেপ : বইয়ের শুরু মজিবর মিয়ার প্রথম স্ত্রী নীলুফা বানু'র মৃত্যু দিয়ে। কাজল চোখের এক কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েই সে ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে। মৃত্যুর আগে নিজের মেয়ের নাম ঠিক করে রেখে যায় সে। গ্রামে বেড়ে উঠা পড়াশুনা না করা মজিবর মিয়া খুবই চালাক-চতুর লোক। যযাতিপুর গ্রামের সবাই যখন উৎপাদিত পাট ন্যায্য দামে বিক্রির করতে না পেরে হতাশ, তখন মজিবর মিয়া তার প্রখর বুদ্ধিমত্তার দ্বারা ভিন্ন উপায়ে পাট খুলনাতে নিয়ে বিক্রি করে চওড়া দামে। যযাতিপুর গ্রামের সুবিধাবাদী নোংরা মন-মানসিকতার মানুষ লতু হাওলাদার। হঠাৎ করেই মজিবর মিয়ার ধনাট্য হয়ে যাওয়াটা সে কিছুতেই মানতে পারে না। উপন্যাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র শুকরঞ্জন ডাক্তার। মানুষটা খুবই ভালো। তার স্ত্রীকে নিয়ে একা যযাতিপুরে থাকে। ছেলে মেয়ে কেউ কাছে নেই। ছেলে না জানিয়ে বিয়ে করেছে বলে ডাক্তারের স্ত্রী ছেলের উপর ক্ষ্যাপা। উপরে উপরে রেগে থাকলেও বুকের ভিতর ছেলের জন্য পাহাড়সম মায়া জমে রাখিয়েছে মানুষটা। উপন্যাসের আরেকটি চরিত্র আতাহার তালুকদার। যযাতিপুর গ্রামের মাথা সে। তাকে হটাতে পারলেই লতু হাওলাদার গ্রামের মোড়ল হয়ে উঠবে। তাই লতু হাওলাদার পিছনে লাগে আতাহার তালুকদারেরও। এভাবেই গ্রামীন জীবনধারা অব্যাহত রেখে এগিয়ে চলে বইটি। এক পর্যায়ে এই গ্রামীন জীবনধারা আর কোন্দলের গল্প ছাড়িয়ে উপন্যাসের প্লট চলে যায় শহরে। কারণ উপন্যাসের নামকরণের মূল চরিত্র মা হারা পিচ্চি আরশিকে অনিবার্যকারণবশত ইমাম আকরাম হোসেনের সাথে পালিয়ে যেতে হয়েছে যযাতিপুর থেকে। অভাবী ইমামের পরিবারে সে বেশি দিন থাকতে পারে না। আরশির জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়। এখান থেকে সেখানে আশ্রয় পালটাতে হয় তার। আর তখন থেকেই শুরু হয় আরশির মূল গল্প। রচিত হতে থাকে আরশিনগর। ডালপালা মেলতে থাকে আরশির দিনাতিপাতের গল্পেরা। . প্রিয় উক্তি : ১.সময় আসলে ক্ষত সারানোর মহৌষধ। জগতের সব ক্ষত মুছে দেয় সময়। ২.এই জীবনের হিসাব-নিকাষ পুরোটাই যেন এক বিশাল বিভ্রম। ৩. এই জগৎ আসলে উল্টাজগৎ। এখানে মানুষের ভাবনাগুলো আয়নার প্রতিবিম্বের মতোন। ৪.মানুষ তার ভবিষ্যৎ জানে না। কাইল কী হইব, সেইটা যদি মানুষ আইজ জানত, তাইলে মানুষ বাঁচতে পারত না। ৫.এখন যেই সময়টারে মনে হইতেছে খারাপ, পরে কোনো সময় গিয়া দেখা গেল সেই সময়টার তুলনায় এখনকার এই সময়টাই ভালো ছিল। ৬.জীবন এবং অভিজ্ঞতা এমন এক জিনিস, যা মানুষকে বয়সের অনেক আগেই বড় করে ফেলে। ৭.ঈশ্বর মানুষকে সবকিছু করার ক্ষমতা দেন নাই। কিছু ক্ষমতা নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। যাতে মানুষ তার উপর নির্ভরশীল থাকে৷ ৮.মানুষকে বুঝতে না পারার মতোন অস্বস্তি আর কিছুতেই নেই। ৯.জগতে ভালো সময়, খারাপ সময় বলে কিছু নেই। আসলে যা আছে তা হলো সময়ের আঁচড়। ১০.কখনো কখনো অন্ধকার খুব দরকার হয়। খুব। নিজেকে আড়াল করার জন্য। ১১.শিল্পীর কাজ হচ্ছে শিল্প। আর শিল্পের নিয়ামক হচ্ছে সৌন্দর্য। . প্রচ্ছদ : লেখক সাদাত হোসাইনের সব বই থেকে এই আরশিনগরের প্রচ্ছদ আমার সবথেকে বেশি ভালো লেগেছে। পুরো প্রচ্ছদময় বৃষ্টির ফোঁটা জলকেলির মতো ছড়িয়ে আছে। যেন এই বৃষ্টি কোনো শিল্পীর তুলিতে আঁকা কাগজে ছাপা বৃষ্টি নয়। এই বৃষ্টি যেন সত্যিকারের বৃষ্টি। এই বৃষ্টিকে যেন হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেওয়া যায়। প্রচ্ছদের গায়ে হাত বুলালে যেন সেই বৃষ্টির পানিতে ভিজে যায় হাত। এই পানি আড়শির ভিতরের চোখের পানি। পুরো আরশিনগরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আরশি'র জীবনের যেই ছাপ, এই বৃষ্টির পানি সেই দুঃখভরা জীবনের ছাপের প্রতীক। একটি বইয়ের প্রচ্ছদ পাঠকের মন আকৃষ্ট করতে পারে বইটির প্রতি। আরশিনগর এই দিক থেকে সফল। . ফন্ট বাঁধাই পৃষ্ঠা :অত্যন্ত উনন্নতমানের কাগজে শক্ত মলাটে বাঁধাই করা বইটির বাহ্যিক দিক থেকে কোনো ত্রুটি রাখেনি বইটির প্রকাশনী সংস্থা ভাষাচিত্র। বইয়ের ফন্ট সাইজ অত্যন্ত সুস্পষ্ট এবং যে কোনো বয়সী পাঠকের চোখের জন্য উপযুক্ত। . নামকরণ : বইয়ের শুরু থেকে অনেকগুলো পৃষ্ঠা পর্যন্ত কেবল গ্রামীণ জীবনাবহই ঠাঁই পেয়েছে। মা হারা আরশি'র মাথার উপর তখনও ছায়া হয়ে আছে তার বু আম্বরি বেগম। বাবা মজিবরের ছায়াটাও শক্তপুক্তই ছিল লোকমান গ্রুপের হাতে মার খাওয়ার আগে পর্যন্ত। বাবা ছায়া দিতে অক্ষম হলো আর তারপর বু আম্বরী বেগমও হুট করে চলে গেল ওপারে। সৎ মায়ের সংসারে উচ্ছিস্ট হয়ে যাওয়া আরশিকে বাড়ি ছাড়তে হলো। আর তখন থেকেই রচনা হতে শুরু করলো অন্য এক নগর৷ যে নগরে অন্যান্য চরিত্ররা ধূসর। কেবল আরশি আর তার দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান দুঃখরা স্পষ্ট। খুব ভালোভাবে সুস্পষ্ট। এই নগরের নাম দিয়েছেন লেখক আরশিনগর। নামকরণ স্বার্থক। . প্রিয় অপ্রিয় চরিত্র : বইটি আরশিকে ঘিরে হলেও এই বইয়ে আমার প্রিয় চরিত্র মজিবর মিয়া। গাঁও গ্রামে বাস করা খেটে খাওয়া এই মানুষটার মগজের প্রশংসা করতেই হয়। নিজের বুদ্ধি আর অদম্য স্পৃহার দ্বারা সে বদলে ফেলেছিল নিজের ভাগ্য। হয়ে উঠেছিল যযাতিপুরের অন্যতম পয়সাওয়ালা মানুষ। কিন্তু লতু হাওলাদারের কুুদৃষ্টি আর আতাহার তালুকদারের পরিবারের কল্যণে এগিয়ে আসা মজিবর মিয়া জীবনে অনেক বড় ধাক্কা খায় লোকমান গ্রুপের কাছে। এরপর আমার প্রিয় চরিত্র যশোদা স্যার। সে উপন্যাসের অপ্রধান এক চরিত্র হলেও মজিবর মিয়ার প্রতিশোধে এগিয়ে এসে সে আমার প্রিয় হয়ে গেছে। শুকরঞ্জন ডাক্তার, ইমাম আকরাম হোসেন, আশিষ, রুবিনা এগুলোও ভালো লাগার মতো চরিত্র। লতু হাওলাদার, লাইলী এই দু'টো চরিত্র অস্বস্তিকর ছিল যেন। অপ্রিয়'র তালিকায় শীর্ষে এই দুইজন। এরপর লোকমান-বশির গ্রুপ ছাড়া আর কারো প্রতি ক্ষোভ পুষে রাখা যায় না বইটিতে। আতাহার তালুকদার, সুজাতা রানী, মনাই, এগুলো গতানুগতিক চরিত্র। . পাঠ প্রতিক্রিয়া : গ্রামীণ পটভূমিতে লেখা বইগুলোর প্রতি আমার বরাবরই আকর্ষণ একটু বেশি। এর কারণ হয়তোবা আমি নিজেও গ্রামে বেড়ে উঠেছি তাই। গ্রামের মানুষের জীবনবোধ, চাল-চলন, কথাবার্তার ধরণ সবকিছুই আমাকে মুগ্ধ করে। এই বইটির বেশিটা অংশ জুড়েই সেই গ্রামীন জীবনবোধের গন্ধ লেপ্টে আছে। তাই এটিও ব্যতিক্রম হয়নি তার। মজিবর মিয়া, শুকরঞ্জন ডাক্তার সবার গতিবিধি ভালো লেগেছে। গ্রামের একজন মহিলা কি করে স্বামী মরে গেলেও একমাত্র সন্তান নিয়ে গোটা একটা জীবন পারি দিয়ে দেয় তার উদাহরণ আম্বরী বেগম। গ্রামে ভালো মেয়েদের ভীড়েও কিছু উছৃঙ্খল আর অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ মেয়ে লুকিয়ে থাকে, যারা মান সম্মানের ধার ধারে না। এই ধরণের মেয়ের জন্য বিপদে পড়ে তার বাবারা। এই বইতে সেই মেয়ের প্রতীক লাইলী। বাস্তবভিত্তিক কোনোকিছু যখন বইয়ের পাতায় ফুঁটে উঠে, তখন সেই বইটা কোনো সাধারণ বই না থেকে অসাধারণ হয়ে উঠে। তবে বইটা প্রথম দিকে যেরকম ধারালো ছিল শেষের দিকে এসে সেই ধার কিছুটা কমে গিয়েছে বলে মনে হয়েছে আমার কাছে। গ্রামীণ পটভূমি চলে যাওয়ার পর পড়তে একটু কষ্ট হচ্ছিলো। আর কিছু ব্যাপার সিনেমাটিক মনে হয়েছে৷ এটি লেখকের বড় কলেবরের প্রথম উপন্যাস হিসেবে ভালোই হয়েছে মনে হলো। বানান ভুলও চোখে পড়েনি তেমন। ব্যক্তিগত রেটিং ৪/৫। যারা এখনও পড়েন নি বইটি, তারা পড়ে ফেলুন। আপনার পাঠ শুভ হোক . রিভিউ লেখক : তানজিনা তানিয়া
Was this review helpful to you?
or
আরশি, হলো আয়না। যার বুকে পৃথিবীর হাজার হাজার বিম্ব লুটোপুটি খায়,আর এই আরশির বুকেই যেন রয়ে গেছে কত শত শব্দ.... এই বইয়ের প্রতি টা পাতায় আরশির পরিণতি জানার যে তীব্র কৌতুহল ছিল, সেই কৌতুহলই বইয়ের শেষ পৃষ্ঠা অবধি পাঠককে টেনে আনবে অনায়াসেই। আম্বরি বেগমের মৃত্যুর পর একা হয়ে যাওয়া আরশি, বাবার অথর্ব অবস্থা,সৎ মা লায়লীর পৈশাচিকতা সবটাই খুব ভাবিয়েছে। শেষ অবধি মেয়ের মুখ দেখার সৌভাগ্য নিয়েই মজিবর মিঞা ওপারে ভালই থাকবে। একটা ছোট বাচ্চা পুতুলকে ভাল লাগলেই সবাই কাছে টেনে নিয়েছে,আর ক'দিন পর নিজের কোলে পুতুল এলে আমরা ছুড়ে ফেলি পুরনো পুতুলকে। আরশি তেমনই এক গল্প চরিত্র। এই বইটা পড়ে কেঁদেছি অনেক। এই পৃথিবীতে এমন অনেক আরশির গল্প এই আরশিনগর.... ধন্যবাদ সাদাত ভাইয়া কে। সংগ্রহে রাখলাম বইটা।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_২০১৮ বই আলোচনা: ১০ বইয়ের নাম: আরশিনগর। লেখক: সাদাত হোসাইন। প্রচ্ছদ মোস্তাফিজ কারিগর। প্রকাশন: ভাষাচিত্র। প্রথম প্রকাশ: একুশে বইমেলা ২০১৫ পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৬০ মুদ্রিত মূল্য : ৪৫০/- ব্যক্তিগত রেটিং : ০৪/০৫ আরশি মাথা তুলে তাকাল। ভোলানাথের বন্ধ সেলুনের সামনে কাঠের খুঁটি। সেই খুঁটির গায়ে হাতের তালুর সমান ছোট্ট এক চিলতে আয়না। ঝাপসা হয়ে যাওয়া সেই আয়নার দিকে তাকিয়ে খানিক স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল আরশি। তারপর ধীর পায়ে আয়নাটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আয়নার ভেতর আবছা একটা মানুষ। গতকাল অবধি দেখে আসা সেই একই চোখ , সেই একই নাক, একই মুখ, একই চেহারা। কিন্তুভাব গতকালের সেই আরশি আর এই মানুষটি কি এক? এই মানুষটিকে কি সে চেনে? আরশির হঠাৎ মনে হলো, এই জগতে কেউ কাউকে চেনে না। এই জগৎ আয়নার মতো, উল্টো জগৎ। এখানে সবকিছুই উল্টো। এই উল্টো জগতের নাম আসলে আরশিনগর... পাঠ প্রতিক্রিয়া: পড়তে কিছুটা আলসেমি চলে আসে। তবে লোমহর্ষক কিছু ঘটনা আছে যা জানার জন্য মন আকুপাকু করে। মনের মাধুরী মিশিয়ে লেখা একটি বই। তবে কোথাও যেন অপরিপক্বতার ছাপ রয়েই গিয়েছিল!
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_পাঠক_সমাগম_বুক_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_৪ মাস:আগস্ট সপ্তাহ:০২ পর্ব:০৪ --------- বই - আরশিনগর লেখক :-- সাদাত হোসাইন প্রকাশক -: ভাষাচিত্র প্রথম প্রকাশ -: একুশে বইমেলা 2015 প্রচ্ছদ -:মোস্তাফিজ কারিগর পৃষ্ঠা -: 272 মুদ্রিত মূল্য -: 450 টাকা --------------------------------- 'শোন কাজল চোখের মেয়ে; আমার দিবস কাটে, বিবশ হয়ে, তোমার চোখে চেয়ে'। --------------- #লেখক_এবং_তার_লেখা_সম্পর্কে -: সাদাত হোসাইন , ১৯৮৪ সালের ২১ মে , মাদারীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন । পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে । পাঠক মহলে জনপ্রিয়তার শীর্ষে এসেছেন তিনি তাঁর বৃহৎ কলেবরের উপন্যাস আরশিনগর , অন্দরমহল মানবজনম – ইত্যাদির মাধ্যমে । বানিয়েছেন ‘বোধ’ ও ‘দ্যা শ্যুজ’ বিশ্বসমাদৃত শর্টফিল্ম । সাদাত হোসাইন বিস্তর পরিসরে গল্প বলতে বালোবাসেন।ফলে বাধ্য হয়েই গল্পের শাখা প্রশাখা ডালপালা বাড়াতে হয় , বেড়ে যায় ।চরিত্র পার্শচরিত্র হিসেবে আসে অনেকেই, তার মাঝে থাকে দুশ্চরিত্রও।তবে সুখের কথা , সমস্ত পার্শ্বচরিত্র মূল চরিত্রকে কেন্দ্রবিন্দু করে আবর্তিত হয়, তরতর করে গল্প এগিয়ে যায় , এগুতে থাকে ।পাঠককে টেনে নিয়ে যায়, টানতে থাকে।সাদাত হোসাইনের এই উপন্যাসটাও এর ব্যতিক্রম নয়। চরিত্র প্রভাবক হিসেবে অনেকে এসেছে আবার যথাসময়ে চলেও গিয়েছে। কিন্তু সাদাত হোসাইন কোন চরিত্র অঙ্কনে অবহেলা করেননি। এই ব্যাপারটি আমাকে সত্যিই ভীষণ মুগ্ধ করেছে। যদিও উপন্যাসে তিনি সময়কালের উল্ল্যেখ করেননি; কিন্তু আমার মনে হয়েছে তিনি স্বাধীনতা পরবর্তী এবং ৯০ দশকে বাংলাদেশের রাজনীতির পালাবদলের অস্থির সময়টিকে কাহিনীবন্দী করেছেন। এই উপন্যাসে যেমন আছে আছে মা হারা আরশির পুরো জীবন উপাখ্যান তেমনি আছে সন্তান হারা উন্মাদিনী-প্রায় মিলির আখ্যান ।যেমন আছে ইমাম সাহেব শুকরঞ্জন ডাক্তারের মতো ব্যক্তিদের মানবতার অতুলনীয় দৃষ্টান্ত তেমনি আছে লতু হাওলাদার আর লাইলীর মতো বেহায়া এবং পরশ্রীকাতরতার গল্প। আবার যেমন আছে কমিউনিস্ট পার্টির দল উপদল এবং গ্রুপ উপগ্রুপের মারামারি তেমনি আছে অপলা আশিষ এবং আরো অনেকের মর্মন্তুদ কাহিনী । এরকম বইয়ের রিভিউ লেখা কষ্টকরই বটে।তবে চেষ্টা নিতে দোষ কি ? #কাহিনী_সংক্ষেপে -: আরশিনগর ; আরশিনগরে একজন আরশি আছে। আরশির চোখভর্তি মায়া, এই মায়া নিয়েই সে পৃথিবীতে জন্মছে । এই চোখভর্তি মায়া দেখেই তার জন্মদাত্রী মমতাময়ী মা নিলুফা বেগম পরম নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে গেছে।মারা গেছে।শুরু হলো দুষ্কর পৃথিবীতে আরশির বেদনা বিধুর জীবনযাত্রা । আরশির পিতা মজিবর মিয়াঁর সংসারে আসে তখন কাঁচা পয়সা, আসে নতুন বউ, দুশ্চরিত্রা লাইলি, আরশির সৎ মা।গরীব মজিবরের ঘরে টাকা কোত্থেকে আসে ? কীভাবে আসে ? মজিবর মিয়াঁ জেনে শুনেও কেন দুশ্চরিত্রা লাইলিকে বিয়ে করে ? আরশি 'বু' আম্বরি বেগম ছাড়া আরেকজন মা পায়।আরশি ভর্তি হয় ইস্কুলে ।যশোদা জীবন দে স্যারের কাছে।মজিবর মিয়াঁর সাইকেলে চড়ে ইস্কুলে যায় আরশি।দুঃখী আরশি সুখ পায়, সুখে থাকে।কিন্তু সেই সুখ স্থায়ী হয় না। আরশির একটা সৎ বোন হওয়ার কারণে সৎ মা লাইলি এবার সৎ মা হয়েই আবির্ভূত হয়।আবার দুঃখ আসতে শুরু করে আরশির জীবনে। তাদের সংসারে সব চে বড় ধাক্কাটা দেয় লতু হাওলাদার ।ধনী মজিবরের ধনে পরশ্রীকাতরতায় আক্রান্ত লতু হাওলাদার পা কেটে দেয় মজিবরের ।পঙ্গু হয়ে যায় সে।পা লতু হাওলাদার নিজে কাটেনি, কাটিয়েছে কমিউনিস্ট পার্টির উপদলের নেতা লোকমান ও তার দলবল দিয়ে। অসহায় আরশি আরো অসহায় হয়।মায়ের মমতা হারানো আরশি এবার পিতার মমতা হারায়।ইস্কুল পড়া বন্ধ হয়ে যায় ।আরশির একমাত্র আশ্রয়স্থল 'বু' আম্বরি বেগমও এক রাতে মারা যায় ! আরশির পৃথিবী হয়ে যায় বিষাদ সিন্ধু। সেই বিষাদ সিন্ধুতে আরশি ডুবে যায়, তলিয়ে যায় ।হারিয়ে যায় ।ততোদিনে দুশ্চরিত্রা লাইলির নতুন বিছানা সঙ্গী হয় আরেক পুরুষ, লোকমান ।আরশি এক রাতে সেই নিষিদ্ধ চলমান ছবি দেখে ফেলে।লোকমান পিছু নেয় আরশির । আবার ত্রাণকর্তা হয়ে আবির্ভূত হয় ইমাম সাহেব।কে এই ইমাম সাহেব ? ঝড় বৃষ্টির গভীর রাতে কীভাবে সে আরশির বিপদের কথা ঠের পায় ? কীভাবে সে লোকমানের হাত থেকে আরশিকে রক্ষা করে ? সেই রাতে ফজরের সময় নিহত হয় দুর্ধর্ষ লোকমান ! কিন্তু কার হাতে ? আরশি কিছুদিন সেই ইমামের দুঃখের সংসারে সুখের সময় কাটিয়ে তার সাথে ঢাকায় যায় ।আরশি ঢাকায় থাকে।শৈশব থেকে পার হয়ে কৈশোরে, কৈশোর থেকে আরশি হয়ে ওঠে একজন নারী- তরণী। আরশি লেখা পড়াও করে।কিন্তু কে আরশির লেখা পড়ার খরচ দেয় ? কোথায় কার তত্ত্বাবধানে থেকে বড় হয় আরশি ? এই সময়ে আরশির গ্রামের বাড়ি যযাতিপুরে অনেক ঘটনাবহুল ঘটনা ঘটে।একের পর এক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় ।কে বা কারা করে এই হত্যাকাণ্ড ? কেন করে ? আরশি কি আবার ফিরে যাবে তার গ্রামের বাড়িতে ? যেখানে তার প্রগাঢ় মমতাময়ী পঙ্গু পিতা তার জন্য প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে , গুনেই চলছে।যেখানে বাড়ির উঠানে 'বু'র কবর চালতা গাছের সাদা ফুল বিছিয়ে তাকে ডাকছে, ডেকেই চলছে। আচ্ছা, আরশির জীবনে কি কোন প্রেম আসে ? কারো বুকে মাথা রেখে জনম জনম বয়ে বেড়ানো কষ্টের কান্নাগুলো অশ্রু বানিয়ে ঝরাতে পারে ? উপন্যাসের আরেকটা অন্যতম চরিত্র হলো শুকরঞ্জন ডাক্তার এবং তার স্ত্রী। স্ত্রী সবসময় কলকাতায় চলে যেতে চায়।আর শুকরঞ্জন ভালোবাসে দেশকে , দেশের মাটি ও মানুষকে । তাদের একমাত্র ছেলে সন্তান আশিষ ঢাকায় এক পত্রিকায় চাকরী করে।সে ঢাকায়ই এক মুসলিম মেয়ে মিলি কে বিবাহ করে।শুকরঞ্জন ডাক্তারের স্ত্রী না মেনে নিলেও তিনি সব খোঁজ খবর রাখেন। এক সময় মিলি প্রেগন্যান্ট হয়। অযাচিত ভাবেই কিংবা ভালোবাসার টানেই শুকরঞ্জন ডাক্তারের সাথে তার স্ত্রীও উপস্থিত হন ছেলের কাছে। মিলির ছেলে হয়। নাম রাখা হয় সকাল।কিন্ত সকাল আর মিলি এক সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়। সকাল তার জীবনের সকালবেলাই চলে যায় না ফেরার দেশে।মিলি পাগল হয়ে যায় ।সুখের সংসারে দুঃখ নেমে আসে।মিলি কি সুস্থ হবে ? তাদের সংসার আঁধারে কি সূর্যের আলো নিয়ে আরো কোন 'সকাল' আসবে ? #হৃদয়ে_গেঁথে_নেওয়া_কয়েকটি_উক্তি --: ☆জগতে মানুষের বেঁচে থাকার অজস্র কারণ থাকতে পারে তবে সেই কারণগুলোর ভেতর শ্রেষ্ঠতম কারণ হলো ভালোবাসা। ☆আমরা সবাই আলাদা, অথচ তা জেনেও আমরা সব সময় নিজের মতো কাউকে খুঁজি। এর কারণ মানুষ নিজেকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। কিন্তু সে কখনোই অন্যের মতো হতে চায় না। ☆জীবন রোজ খানিকটা করে আয়নার সামনে দাঁড়ানোর মতোন। আমরা তাতে শুধু শরীরটাই দেখতে পাই, বুকের ভেতরটা নয়। অথচ আমাদের দেখার কথা ছিল চোখ, যে চোখ মানবজীবনের দুটোই দেখে, দেখে শরীর ও মন। #পাঠকের_কাঠগড়ায় -: সাদাত হোসাইনের লিখিত কল্পিত কাহিনী প্রবহমান নদীর মতোই বহমান ।কখনো শান্ত, কখনো ঝড় , কখনো মৃদু ঢেউ। তার গল্প-নদীর স্রোত পাঠককে টেনে সাগরের দিকে নিয়ে যায় ।সেই সাগর দুঃখের ।সেই সাগর কষ্টের ।তিনি যেন চোখের অশ্রুকে কলমের কালিতে রূপান্তর করে কাগজের সাদা পাতায় ঢেলে দেন।আরশিনগর পড়ে আমার তাই মনে হয়েছে ।মুগ্ধ হয়ে পড়েছি।পড়ে পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। অনেকেই সাদাত হোসাইনকে বর্তমানের হুমায়ূন আহমেদ বলতে ভালোবাসে। আমি তা মানতে নারাজ।হুমায়ূন স্যারের লেখায় 'খামখেয়ালিপনা' আছে।( অবশ্য সেটাও স্যারের একপ্রকার বৈশিষ্ট্য ) সাদাত হোসেনের লেখায় তা অনুপস্থিত।আবার হুমায়ূন আহমেদের প্রায় সমস্ত উপন্যাস নগরজীবনের পটভূমিতে রচিত। পক্ষান্তরে সাদাত হোসেনের লেখায় থাকে গ্রাম, বৃষ্টি, নদী-নৌকা এবং পাড়া গায়ের মানুষদের দুঃখগাথা।তবে সাদাত হোসেন হুমায়ূন স্যারের সংলাপ তৈরির ভঙ্গিমা এবং শৈলী আয়ত্ব করলে মন্দ হয় না।কথোপকথনে "সে বলল তারপর অমুক বলল" এসব থেকে সংলাপকে যতো মুক্ত রাখা যায় গদ্য ততো বেশি সাবলীল হবে।পড়তেও আরাম পাওয়া যায় । আরেকটা কাজও তিনি করতে পারেন, তা হলো কিছু গল্পের পরবর্তী কথামালা , এবং ঘটনাপ্রবাহ ও নাটকীয়তা পাঠকের কল্পনার ওপর ছেড়ে দেওয়া ।তাহলে পাঠক গল্পের প্রতি আরো অন্তরঙ্গ হতে পারবে।গল্প আরো মানোত্তীর্ণ এবং হৃদয়স্পর্শী হবে। আরশিনগর সম্পর্কে হয়ত কিছুই বলা হয়নি। লেখক যা বলেছেন -- তাই বলি 'আরশির হঠাৎ মনে হলো, এই জগতে কেউ কাউকে চেনে না। এই জগৎ আয়নার মতোন। উল্টোজগৎ। এখানে সবকিছু উল্টো। এই উল্টোজগতের নাম আরশিনগর'। সেই উল্টো জগতে আপনাকে সাদর আমন্ত্রণ ! অনেকদিন বেঁচে থাকুক সাদাত হোসাইন, বেঁচে থাকুক তার লেখা।তার মাধ্যমে বাঙালি আবার পাঠক হয়ে ওঠুক । ব্যক্তিগত রেটিং 10/8 লিখেছেনঃ বাকি বিল্লাহ
Was this review helpful to you?
or
ভালো লাগছে , লেখক খুব সুন্দর ভাবে ভিলেজ পলিটিক্স এর ব্যাপার টা উপস্থাপন করছে,, আর খারাপ লাগছে,, কোথাও কোথাও হুমায়ুন আহমেদ স্যার এর মতো করে লেখার চেষ্টা করছে,, ব্যাপার টা যথেষ্ট বোরিং লাগছে,, কিছু কিছু ব্যাপার আছে যা সুধু হুমায়ুন স্যার এর বইতেই ভালো লাগে, আর এতো বড় একটা বই লিখছে, তারপরেও তার লেখার ভেতর খুব তাড়াহুড়া প্রকাশ পায়,,,,,, যাই হোক best of luck সাহদাৎ হোসাইন ভাই,, আগামীতে আরও ভালো ভালো বই লিখুন,, শুভ কামনা রইলো,, আমিও আপনার একই জেলার লোক।
Was this review helpful to you?
or
"আরশিনগর" বইটা পড়ার পর লাগছে যে, মনের মধ্যে কি জানো নেই, কিসের জানো অভাব। জানিনা কি সেটা। যাক সে কথা বাদ দেই।আজকেই বইটা পড়ে শেষ করলাম। আজকেই হঠাৎ সাদাত ভাইয়ের "নিঃসঙ্গ নক্ষত্র" বইটার দাম জানার জন্য যখন রকমারির ওয়েবসাইটে ঢুকলাম তখন আরশিনগর বইটার কথা মনে পড়ায় সেটা আগে বের করলাম কেন জানি না, হয়তো বইটা পড়ে অনেক ভালো লাগার কারণ। তারপর কমেন্টের মাধ্যমে রিভিউ দেওয়ার অপশনটা দেখার পর ইচ্ছে হলো যে কমেন্টের মাধ্যমেই নিজের মনের ভাবটা প্রকাশ করেই দেই। আসল কি লিখে প্রকাশ করবো তাও ভাবছি কারণ দুই এক কথায় আমি তা প্রকাশ করতে পারবো না। তাই সাদাত ভাইয়ের বইয়ের কিছু লাইন লিখতে চাই, কারণ যতো জীবন বাঁচবো এই লাইনগুলো মনে থাকবে।নিচে তা লিখছি : (পৃষ্ঠা-৭৮, ৩য় প্যারা, ৬ষ্ঠ লাইন) "কত কত স্মৃতির পাতা যে ভারী হয়! এই দুই গভীর কিংবা অগভীর অস্তিত্বের তা জানা হয়ে ওঠে না। যে জানে, তার নাম সময়। সময় অপেক্ষায় থাকে সময়ের এই ভীষণ আঁচড়ের দাগ নিয়ে। কোনো একদিন তা নিভৃত রাতের কান্না হবে। হাসি হবে। সুখ-দুঃখ হবে। মানবজীবন কি অদ্ভুত খেয়ালে বাঁধা থাকে সময়ের অমিত অাঁচড়ে!" ( পৃষ্ঠা-২২৭, শেষ প্যারা) "জগৎজুড়ে কী অপার ভালোবাসা ছড়ানো-ছিটানো। তার কতটুকুই বা নিতে পারি আমরা! আমরা খুঁজে খুঁজে কেবল ঘৃণা আর দুঃখ নেই। ভালোবাসার পরে থাকে আড়ালে-আবডালে।" জানি না কেন এই লাইনগুলোর মধ্যে নিজের এবং নিজের অতি কিছু কাছের মানুষের মিল খুঁজে পাই। হয়তো এটাই মানুষের স্বাভাবিক স্বভাব। যাই হোক বইটা অনেক ভালো লাগলো।
Was this review helpful to you?
or
ফ্ল্যাপ থেকেঃ আরশি মাথা তুলে তাকাল। ভোলানাথের বন্ধ সেলুনের সামনে কাঠের খুঁটি। সেই খুঁটির গায়ে হাতের তালুর সমান ছোট্ট এক চিলতে আয়না। ঝাপসা হয়ে যাওয়া সেই আয়নার দিকে তাকিয়ে খানিক স্থির দাঁড়িয়ে রইল আরশি। তারপর ধীর পায়ে আয়নাটার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। আয়নার ভেতরে আবছা একটা মানুষ। গতকাল অবধি দেখে আসা সেই একই চোখ, সেই একই নাক, সেই একই মুখ, একই চেহারা। কিন্তু গতকালের সেই আরশি আর এই মানুষটি কি এক? এই মানুষটাকে কি সে চেনে? আরশির হঠাৎ মনে হলো এই জগতে কেউ কাউকে চেনে না। এই জগৎ আয়নার মতোন। উল্টোজগৎ। এখানে সব কিছুই উল্টো। এই উল্টো জগতের নাম আরশিনগর। পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ শুধুমাত্র এই বইটি কেনার জন্যই বইমেলায় গিয়েছিলাম। হাতে পেয়ে আর পড়তে দেরি করিনি। বই এর শুরু হয়েছিল আরশি নামের এক মেয়েকে দিয়ে। যার চোখ জোড়া অসম্ভব সুন্দর। এই শ্যামলা বর্নের মায়াবী চোখের অধিকারী মেয়েটির দুঃখের জীবন শুরু হয়েছিল মা তাকে জন্ম দিয়ে মারা যাবার পর থেকেই। একটা ছোট্ট মেয়ে কীভাবে তার জীবনে এত কষ্ট সহ্য করে টিকে আছে বইএর পাতা যত উল্টাচ্ছিলাম ততই অবাক হচ্ছিলাম। দাদীর আদরে বড় হওয়া মেয়েটির কপালে বেশিদিনের সুখ বুঝি বিধাতারও কাম্য ছিল না। তাই তো একদিন দাদীও তার জীবন থেকে হারিয়ে যায়। সৎ মায়ের সংসারে থেকে সে যেন অকূলে হারিয়ে যাচ্ছিল। আরশির জীবনের গল্প যত পড়েছি তত আরশিকে আরও আপন মনে হয়েছে। আরশির চলার পথে যুক্ত হয়েছিল আরও কিছু চরিত্র। যেমন, শুকরঞ্জন ডাক্তার ও সুজাতা রানী, আশিষ ও মিলি, ইমাম আকরাম হোসেন, রুবিনা। চরিত্রগুলোর যাত্রা শুরু হয়েছে যযাতিপুর গ্রাম থেকে। বাংলার অন্যান্য কয়েকটা অজপাড়াগাঁয়ের মতো এটাও একটা। এই গ্রাম কে ঘিরে রাজনীতি, হিংসা-প্রতিহিংসা, প্রতিপত্তির লোভ সব কিছুই চিত্রায়িত হয়েছে লেখকের লেখনীতে। অনেকদিন পর বেশ বড় একটা উপন্যাস পড়ছিলাম। কিন্তু লেখকের লেখনীতে সব চরিত্রের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ জমে নি। আরশি অবশ্য ভিন্ন। পুরো একটা উপন্যাস আরশি একাই মনে হয়েছে চালিয়ে নিয়েছে। শুরুতেই দাদীর মৃত্যু ভাবিয়ে তুলেছিল এই ভেবে যে আরশির তবে এখন কি হবে? লেখকের লেখার বর্ননার অনেকাংশেই কিছু কথা অতিরঞ্জিত লেগেছে হয়ত আমি সংলাপ বেশি পছন্দ করি বলে। এক গল্প থেকে আরেক গল্পে যাওয়ার বর্ননা গুলো আরও কিছুটা ভিন্ন মাত্রা আনতে পারত। শেষতক আসিফ ছেলেটাকে প্রথমে মেনে নিতে পারছিলাম না ঠিক ভাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চরিত্রটির সমাপ্তি বেশ ভাল ভাবেই হয়েছে। সাদাত হোসেনের প্রথম উপন্যাস এই আরশিনগর। লেখক সম্পুর্ন চেষ্টা করেছেন আরশি চরিত্রের প্রতি মায়া ধরে রাখতে। কিছুটা হয়ত তিনি সার্থক। কিন্তু শুধু আরশির জন্য মায়া বাড়াতে গিয়ে হয়ত কিছু চরিত্রের জৌলুশ কমে গিয়েছে। পাঠক যদি আরশির মায়াভরা চোখের দিকে তাকিয়ে পুরো বই এর শেষতক ঘুরে আসতে পারেন তবেই লেখকের সার্থকতা।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা " কখনো কখনো অন্ধকার খুব দরকার হয়। খুব। নিজেকে আড়াল করার জন্য" "আচ্ছা মানুষের চোখে কি এমন থাকে? যা অন্য মানুষকে এমন মুগ্ধ করে! " " কিন্তু ভালোবাসারা এমন কেন? এমন রহস্যময়। এমন অপাঠ্য। এমন গন্তব্যহীন কিংবা অদম্য? " কাহিনীর কথাঃ জন্মের সময় যেই আরশির মা মরে গিয়েছিল, তার কপালে কি করে সুখ সইবে? যেই সৎ মায়ের আরশির প্রতি মমতা দেখে তার বাবা তাকে পৃথিবীরর সবচে সৌভাগ্যবান ব্যাক্তি ভেবেছিলো, তার আজ এ কি রূপ! কেন তার এই রূপ!! কি ছিলো সেই রূপ!!! কেটে গেল অনেকদিন। তারপর বদলে যায় আরশির জীবন। যেই দাদী তাকে বুকের কোটরে আগলে রাখতেন তিনিও মারা গেলেন। লতু হাওলাদারের রোষে জীবন্মৃত তার বাবা। আরশি দেখে ফেলে এক ভয়াবহ ঘটনা।পেছনে সাক্ষাৎ মৃত্যুকে রেখে সে ছুটতে থাকে। সেই রাতে এমন ঘোর অমনিশায় তার ত্রাণকর্তা হয়ে আসেন ইমাম আকরাম হোসেন। তখন ওই অন্ধকার অসীম মহাশূন্যের উপর বসে কেউ একজন হয়তো লিখে চলেছিলো অন্য এক গল্প। কেমন হয়েছিল তারপর আরশির জীবন? তার সাথে আবার দেখা হয়েছিল তার বাবার?? কি হয়েছিল লতু হাওলাদার আর লাইলীর পরিনতি??? আরশি বুঝতে পারে এই ছোট্ট জীবনে আসিফ ছাড়া আর কেউ তো এমন প্রবল আগ্রহ নিয়ে তার কাছে আসেনি।কেউ না।কিন্তু আসিফের সেই নিখাদতম ভালবাসা ফিকে করে দিয়েও তার বুকে কার জন্য অপেক্ষা? সে এই এতোটা সময় ধরে তার বুকের ভেতরের সবগুলো ভালবাসার দরজা ওই মানুষটার জন্য এমন শক্ত করে বন্ধ করে রেখেছিল! বিধানচন্দ্রের জন্য! সেই এলোমেলো, বোহেমিয়ান, উন্মাদ ভাবনার আপাতদৃষ্টিতে বৃদ্ধ মানুষটার জন্যে! পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ বইটার নাম হতে পারতো কয়েকটি মৃত্যু; যে মৃত্যুরা জীবন এলোমেলো করে দেয়। নাম হতে পারতো কিছু পথ; যেই পথে হেটে আসে এই নশ্বর জগতের তাবৎ অবিনশ্বর ভালোবাসারা। নাম হতে পারতো বৃক্ষগাথাঁ; যেই বৃক্ষ একা একা রোদে পুড়ে যায়, চুপি চুপি বৃষ্টিতে ভিজে যায়, তুমুল হাওয়ায় থর থর করে কাঁপে। কিন্তু সেই জড় বৃক্ষকে ছোঁয়ার মতোন সাধ্য মেকি মানব প্রাণের নেই। নাম হতে পারতো কান্না; কষ্ট এবং কান্না। এদের সম্পর্ক নিশ্চই খুব গভীর। কিন্তু প্রবল কষ্টেও যখন কেউ কাঁদতে পারে না, সেই কষ্টের সম্ভবত কোন সীমা পরিসীমা নেই। নাম হতে পারতো ভালবাসা। জগৎজুড়ে কি অপার ভালবাসা ছড়ানো-ছিটানো। তার কতটুকুই বা নিতে পারি আমরা! আমরা খুজে খুজে কেবল ঘৃণা আর দুঃখ নেই। ভালবাসারা পরে থাকে আড়ালে আবডালে! "তুমুল বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া চরাচরে বাবার কাধের দুপাশে পা ছড়িয়ে বসে আছে নীল ফ্রক পরা ছোট্ট এক মেয়ে। তার হাতে বিশাল ছাতার মতোন এক গাঢ় সবুজ কচুপাতা। সে সেই কচুপাতা ধরে আছে মাথার উপর। মজিবর মিয়া হেটে চলছে মেঠো পথ ধরে বাড়ির দিকে। হঠাৎ হঠাৎ কোথাও বজ্রপাত হচ্ছে, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। মজিবর মিয়া সংগে সংগে মেয়েকে কাধ থেকে নামিয়ে বুকের সংগে চেপে ধরে আড়াল করার চেষ্টা করছে। সময় যাচ্ছে, যাচ্ছে ঘাস জল কাদার পথ, যাচ্ছে মহাকালের আরো কিছু মুহূর্ত। কিন্তু এ জগতে এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য আর কি আছে! এর চেয়ে প্রগাঢ় বন্ধনের আর কি আছে? এর চেয়ে গভীরতম ছুঁয়ে যাওয় আর কি আছে!" ... এমন কিছু স্বর্গীয় চিত্রকল্পের জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রিয় সাদাত হোসাইন 3 আমার রেটিংঃ ৪.৫/৫
Was this review helpful to you?
or
আরশিনগর-বুক রিভিউ---- বাংলার নাটক আর উপন্যাস পড়ে মনে হয়, একসময় আর উপন্যাস পাব না। সব হবে প্যাকেজ। যেই উপন্যাসে না ইছামতীর স্রোত বয়ে যাবে,না থাকবে দুলকি চালে গরুর হেটে যাওয়া, আর শ্বাস নিলে ঘুটে গোবর আর ঘাসের গন্ধ। কয়েকজন নামি লেখক ও তার বাইরে নন। যেন ফেসবুক ইন্টারনেট ই সব। কিন্তু সমকাল ভিত্তিক পাঠক, সাহিত্য পাঠ ও বোধে আনন্দ লাভ করলেও তাতে ভুঁইফোড় পাঠক তৈরি হয়। এর বেশি কিছু নয়। তবে আরও কিছু বাকি ছিল। ছিল পায়ের সামনে সুদূর প্রসারী ধানক্ষেত, তারপরে সারি সারি গাছের সীমানা, সূর্য ডুবু ডুবু লাল নীল আকাশ। দিন চলে যাবার নিয়মেই যেন, উপন্যাসটির পাতার পর পাতা পড়ে গিয়েছি। সময় আটকে ছিল বইয়ের পাতায়। হিমুর মত কেউ আসেনি, আসেনি মাসুদ রানার মত কোন যোদ্ধা। মাঝে মাঝে কেউ দৃঢ় হয়েছে, কেউ নদীর তীরে নৌকায় ভিড়েছে, আবার কেউ বা গোপনে নাতীর জন্য ছোট্ট মোজা বুনেছে। একটানা পড়তে পড়তে চোখের গল গড়িয়ে পড়েছে-সময়টা তখন গভীর রাত। বেছে বেছে জনপ্রিয় লেখকের লেখা পড়ার অভ্যাস। তরুণ লেখক বড়ই ভয়ের কারণ। হুম সাদাত হোসাইন জনপ্রিয় হবেন বটে। শিল্প মানেই কি কঠিন কঠিন কথা। অনেকের উপন্যাস পড়লে মনে হয় বাংলা প্রথম পত্রের উত্তর পড়ছি, যেখানে ছাত্রদের একটা মেসেজ দেয়া থাকে-কঠিন কঠিন ভাষায় বাংলা লেখবে। ভাবোদ্ধার করা দুরূহ। সেটাও উপন্যাস। কিন্তু বৃষ্টির জলে ভিজতে চাইলে কি অলংকারে চলে-জামা কাপড় সহজ হওয়া চাই তো। তাই একান্ত সাবলীল গল্পের ছলে গল্প বলাতে সব ভালোবাসা নিয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। লেখক প্রতিটি ঘটনার পরে-যথারীতি কিছু লাইন ছুড়ে দিয়েছেন। পাঠকের অনুভূতিকে ধরার চেষ্টা করেছেন। তবে ওই যে-একেকজনের কষ্ট একেকরকম। তার ভার লেখক নিলে কি হবে। দুই এক জায়গায় ঠিক আছে-তাই বলে পদে পদে তা বলতে হবে!!। আবার উড়ে এসে জুড়ে ও পাঠকের অনুভূতি পাওয়া যায় না। আসিফ ব্যাপারটা তেমনিও। বরঞ্চ আরশির অভিভাবক হিসেবে পাঠক সচেতন মনে ব্যাপারটা একটু থেকেই গেছে। তবু বলি অসাধারণ ভালো লেগেছে। শ্যামলা চুলের বইদাতা আপুকে তাই ধন্যবাদ দিব। এই উপন্যাস এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য। আরও বড় হোক তার উপন্যাস, আরও কিছুক্ষণ সময়ের স্রোতে ভেসে যাই। তবে হ্যাঁ-সব উপন্যাস যদি একইরকম হয়-অভিমানী মন অভিমান করে বসবে। বই থেকেই বলি-আমরা প্রত্যেকেই ভাবি জগতে আমার মত দুঃখী কেউ নেই, তাইলে পাঠকের দুঃখ কে বুঝবে?
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নাম - আরশিনগর লেখক - সাদাত হোসাইন প্রকাশক - ভাষাচিত্র প্রথম প্রকাশ - বইমেলা ২০১৫ মূল্য - ৪৫০ টাকা পৃষ্ঠা - ২৭২ ফ্ল্যাপ থেকে - আরশি মাথা তুলে তাকাল। ভোলানাথের বন্ধ সেলুনের সামনে কাঠের খুঁটি। সেই খুঁটির গায়ে হাতের তালুর সমান ছোট্ট এক চিলতে আয়না। ঝাপসা হয়ে যাওয়া সেই আয়নার দিকে তাকিয়ে খানিক স্থির দাঁড়িয়ে রইল আরশি। তারপর ধীর পায়ে আয়নাটার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। আয়নার ভেতরে আবছা একটা মানুষ। গতকাল অবধি দেখে আসা সেই একইই চোখ, সেই একই নাক, সেই একই মুখ, একই চেহারা। কিন্তু গতকালের সেই আরশি আর এই মানুষটি কি এক? এই মানুষটাকে কি সে চেনে? আরশির হঠাৎ মনে হলো এই জগতে কেউ কাউকে চেনে না। এই জগৎ আয়নার মতোন। উল্টোজগৎ। এখানে সব কিছুই উল্টো। এই উল্টো জগতের নাম আরশিনগর। পাঠ প্রতিক্রিয়া : বইটি পড়ার ইচ্ছে ছিল অনেকদিনের। তাই হাতে পাওয়ার পর আর বিন্দু মাত্র দেরী করিনি। বইটির পটভূমি বিশাল। অন্তত পক্ষে ১৪-১৫ বছরের কম তো নয়ই। বইয়ের প্রধান চরিত্র আরশি নামক এক মেয়ে। জন্মের কিছু সময় পরই যার মা অন্যভুবনে পাড়ি জমায়। মেয়ের চোখ দেখে মা নিলুফা কিছুটা চমকে ছিলেন। আয়নার মত স্বচ্ছ,মায়া ভরা চোখ দেখে তিনি তাই নাম রাখতে বলেছিলেন আরশি। সেই আরশি বড় হয় তার দাদী আম্বরির ছায়াতলে। জন্মের পর পরই তার পরিবার পড়ে অথই সাগরে। ভয়াবহ বন্যায় তলিয়ে যায়,তার গ্রাম। আর সেই বন্যায় আবার উপায় খুঁজে দেয় তার বাবা মজিবর মিয়া কে মাথা তুলে দাঁড়াবার। একটু একটু করে বড় হয় আরশি। এক সময় বাড়ি তে সৎ মা আসে। আর তারপর পালটে যায় দৃশ্যপট। হুট করে আবার একা হয়ে যায় সে। বিপদ গুলো মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। সময়ের সাথে একটু একটু করে চলতে থাকে সে। দূর্যোগ গুলো কখনো বা স্রোটের মত ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চায় তাকে। আর তখনই খড়-খুটো কে আকড়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা চালিয়েছে আরশি। কিন্তু শেষ অবধি কি হয়েছিল তার জীবনে? এই উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে দুটি উপন্যাসের কথা সবচেয়ে বেশি মনে এসেছে। একটি শহীদুল্লা কায়সারের সংশপ্তক। অন্যটি সমরেশ মজুমদারের সাতকাহন। আরশির জীবনে একের পর এক সংগ্রাম গুলো তাকে দীপাবলির মত সাহসী মেয়ের কাতারেই ফেলে। অন্যদিকে গ্রাম্য রাজনীতি, কূটকৌশল বারবার সংশপ্তকের কথা মনে এনে ফেলেছে। হঠাৎ করে আম্বরি বেগমের মৃত্যু, সকালের মৃত্যু আমাকে কাঁদিয়েছে অনেক। শুকরঞ্জন ডাক্তারের ঢাকায় গিয়ে ঝামেলায় পড়া, মজিবর মিয়ার উপর চরমপন্থিদের বিভৎসতা আমাকে চমকে দিয়েছে। আরশির মনস্তাত্ত্বিক দিকটি চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য লেখক প্রশংসার দাবিদার। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে গ্রাম্য রাজনীতি ও চরমপন্থিদের কার্যকলাপ, কথোপকথনের বিবরণ ধৈর্যচূত্যি ঘটিয়েছে, সৃষ্টি করেছে কিছুটা বিরক্তি। তবে সামগ্রিক জীবন দর্শনে আমি বিমোহিত হয়েছি প্রচন্ড ভাবে। চমৎকার ভাষা শৈলীর ব্যবহার উপন্যাসকে করেছে অনন্য। সব মিলিয়ে আমার কাছে অন্যতম প্রিয় উপন্যাস হয়ে থাকবে বইটি :) রকমারি লিংক
Was this review helpful to you?
or
ইমাম আকরাম হোসেন দাঁড়িয়ে ছিলেন ইলেক্ট্রিসিটির পিলারটার নিচে। আরশিই তাকে প্রথম দেখল। তার আর তখন অত কিছু ভাবার অবস্থা নেই। সে তখন ঘোরগ্রস্ত এক মানুষ। তীব্র আতঙ্কে দিশেহারা। সে ইমাম সাহেবের দিকে অর্ধেকটা পথ দৌড়ে এসে হঠাৎ লুটিয়ে পরল কাদায়। ইমাম সাহেব যখন তাকে তুললেন, তখন আরশির শরীর থরথর করে কাঁপছে। আর সে বিড়বড়ি করে একটা মাত্র কথাই বলছে, আমি কিছু দেখি নাই। আমি কিছু দেখি নাই। আমি কিছু দেখি নাই ইমাম আকরাম হোসেন বুদ্ধিমান মানুষ। তিনি যা বোঝার বুঝে নিলেন। আরশিকে কাঁধে করে নিয়ে তিনি নেমে এলেন যযাতিপুর বাজার পেরিয়ে নদীর ঘাটে। সেখানে সারি সারি নৌকা বাঁধা। তিনি দেখে শুনে একখানা ছইঅলা নৌকায় উঠে পড়লেন। বিপত্তি বাঁধাল তালা। গাছের সাথে লোহার শেকল দিয়ে তালা মেরে বেঁধে রাখা হয়েছে নৌকাগুলো। অবশ্য তালা ভাঙতে খুব একটা বেগ পেতে হল না তার। আরশিকে ছইয়ের ভেতর শুইয়ে রেখে নৌকা ছাড়লেন ইমাম সাহেব। কিন্তু কোথায় যাবেন তিনি? আরশি বা তার, কারও জন্য আর যযাতিপুরে থাকা সম্ভব না। কোনভাবেই সম্ভব না। যযাতিপুর মানেই এখন তাদের জন্য অবধারিত মৃত্যু। সুতরাং যতটা দূরে সরা যায়। ইমাম সাহেব হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি নৌকা বেয়ে নদীর আড়াআড়ি চলে যাবেন। গন্তব্য রাঙারোড। রাঙারোড থেকে কোন একটা ব্যবস্থা করে নিবেন। আরশি রাঙারোড যেতে পারে, লোকমান এটা ধরণাও করতে পারবে না। ইমাম সাহেব রাঙারোড থেকে সোজা চলে যাবেন পিরোজপুর। তার গ্রামের বাড়ি। তারপর বাকিটা ভাবা যাবে। ইমাম আকরাম হোসেন আল্লাহর নাম নিয়ে বৈঠা ডুবালেন পানিতে। তখন শো শো করে বয়ে যাচ্ছে ঝড়ো বাতাস। উত্তাল হয়ে উঠছে নদী। তুমুল বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে চরাচর। নিকষ অন্ধকারে ঢেকে আছে রাতের পৃথিবী। সেই ভয়াবহ দূর্যোগের রাতে ওই অসীম মহাশুন্যের ওপারে বসে কেউ একজন হয়তো লিখে চলেছেন অন্য এক গল্প।
Was this review helpful to you?
or
আরশিনগর পড়তে পড়তে আমি ডুবে গিয়েছিলাম আরশির কাজল চোখে। তার আনন্দে হেসেছিলাম। কষ্টে কেঁদেছিও! মিশে গিয়েছিলাম অন্য সব চরিত্রের মাঝেও। আর তাইতো আরশির প্রতি দাদী আম্বরি বেগমের অসহায় ভালোবাসা আমাকে ছুঁয়ে গেছে! লাইলি আর লতু হাওলাদারদের মতো মানুষদের শুধু ঘৃণাই করা যায়। অবাক হয়ে ভাবতে বাধ্য করে লোভ মানুষকে এতোটা নিচে নামায়!? তবে মজিবর নামের এক বাবার ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়েছি। শত অসহায়ত্বের মাঝেও যে এক পৃথিবী ভালোবাসা নিয়ে অপেক্ষায় থাকে প্রিয় মানুষের ফিরে আসার! যশোদা স্যারদের মতো মানুষগুলো বোধহয় আড়ালেই থেকে যান। তাই খুব কাছে থেকেও তারা থাকেন স্পর্শের অনেক বাইরে। আসিফরা ভালোবাসে বলেই হয়তো আজও ভালোবাসা মানুষকে মুগ্ধ করে! তীব্র ভালোবাসা নিয়ে আসিফরা অপেক্ষায় থাকে বলেই আরশিরা উপেক্ষা করতে পারেনা। ফিরে আসেই! হাজার প্রতিকূলতায়ও মানুষ টিকে থাকে। কারণ তারা কখনো না কখনো শুকরঞ্জন ডাক্তার,রুবিনা,ইমাম সাহেব,আশীষ আর মিলিদের দেখা পায়। শুদ্ধ ভালোবাসারা এভাবেই বেঁচে থাক। শুভ কামনা লেখকের জন্য।
Was this review helpful to you?
or
'আরশিনগর' নিয়ে কিছু অনুভূতি । মৃত্যুপথযাত্রী মা যখন মেয়ের চোখ দেখে তার নাম রেখেছিল 'আরশি' তখন আমি আরশির চোখ দেখতে পেয়েছিলাম। আয়না, যার মধ্যে নিজের ছায়া পরে। দাদী আম্বরি বেগমের বিশাল বটবৃক্ষের মত ছায়ায় আরশির শৈশব। কি মায়া! বাবা মজিবরের মেয়ের প্রতি অসীম মমতা যা ঢাকা পরে থাকে একজন কঠিন, রুক্ষ, দায়িত্ববান পিতার মধ্যে।যে ভালবাসায় আদিখ্যেতা নেই, পর্যাপ্ত প্রকাশ নেই। তবুও মাঝেমাঝেই সেই ভালবাসা জানান দিয়ে যায় আরশিকে, আমি আছি। খুব সুখের সময়গুলোয় ডুবে যেতে যেতে কোত্থেকে জীবনের কষ্ট হাজির। ক্ষমতার লোভে লতু হাওলাদার,লাইলীর মত মানুষগুলোর নিচে নেমে যাওয়া দেখতে দেখতে বিস্ময় লাগে। কি ঘৃণাই না জন্মায় ওদের মত মানুষদের উপর। ভালবাসা নিয়ে কত বিভ্রান্তিতেই না আমরা থাকি। বুকের ভিতর কারও জন্য তীব্র ভালবাসা পুষে রেখেও আরেকজনকে ভালবাসার তীব্র চেষ্টা, তার ভালবাসাকে উপেক্ষা করতে না পারা।আসিফের জন্য কোথায় যেন দুঃখবোধটা রয়ে যায়। জীবনের তীব্র কষ্টের মাঝে ছোট একটুকরো সুখ সেই কষ্টটাকে কি আশ্চর্যভাবেই না স্রোতের মত ভাসিয়ে দেয়। আরশির এবং উপন্যাসের অন্য চরিত্রদের সেই সুখের সময়টাকেই মাথায় গেঁথে নিলাম, দুঃখটা উপেক্ষিত থাক। লেখকের জন্য ভালবাসা আর শুভকামনা রইল।
Was this review helpful to you?
or
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনাশৈলীর প্রভাব আছে বইটিতে
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ শব্দের গাথুনি আর সুন্দর গল্পের স্বমন্যয়ে এই উপন্যাসটি,,,ধন্যবাদ সাদাত হোসাইন।
Was this review helpful to you?
or
আরশিনগর : যে গল্পের সমাজ বাস্তবে ফিরে না আসুক! পৃষ্ঠা উলটে প্রথম লাইনে যে মৃত্যুর সংবাদ, তার উলটোপিঠে কী আছে? আরশি যদি আয়না হয় তবে সেই আয়নার ভেতরে তো আমিই! আর আমার চারপাশের মহাপরাক্রমাশালী সমাজের যে নাগরিক জীবন—তাই তো আরশির ভেতরকার প্রতিচ্ছবি। তা-ই যদি হয়, তবে আরশি কে? উপন্যাসের একটা চরিত্র! শুধু একটা চরিত্র কি কখনো জীবনের গল্প বলে? সমাজ অথবা জাতিসত্ত্বার কথা বলে? আশির দশকের জাতিগত নিয়ন্ত্রণহীনতায় আমাদের চারপাশের যে গল্প মনুষ্যত্বের তাড়নায় বাস করে—সেইসব গল্পকেই আরশিকে কেন্দ্র করে একসাথে গেঁথেছেন তরুণ লেখক সাদাত হোসাইন। সামাজিক বিষয়ে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে লেখা মৌলিক সাহিত্যে আপনি যে-কজন তরুণ লেখকের নাম নেবেন, সেই তালিকায় প্রথম নামটি সাদাত হোসাইন। একজন লেখককে যখন আরশিনগর-এর মত উপন্যাস লিখতে হয়, তখন তাকে যতটা বই পড়তে হয় তার থেকে বেশি সমাজ পড়তে হয়, জীবন পড়তে হয়। সমাজের খুব গভীরে ঢুকে বের করে আনতে হয় ভেতরকার গল্প। লেখক সেই গল্পেরই নাম দিয়েছেন ‘কেরছা’। মাদারীপুরের আঞ্চলিক শব্দ কেরছা হল জীবন্ত গল্প। ছোটবেলায় দাদি/নানির কোলের মধ্যে শুয়ে যে কেরছা শুনেছেন, তা নিছক কল্পগল্প নয়,, বরং জীবন্ত। যেন প্রত্যেক গল্পে আলাদা আলাদা জীবন রয়েছে। আরশিনগরের লেখক সেই জীবন পড়েছেন। ধারণ করেছেন। ভুলতে বসা সেই সব গল্পকে উপন্যাসে রূপ দিতে রীতিমত যে গবেষণা করেছেন—সেটাই ফুটে উঠেছে বইটিতে। স্বাধীনতা যদি হয় স্বাধিকার আন্দোলনের লড়াই, আশির দশকে মানুষ তবে করেছে জীবনযুদ্ধ। সমতায় বেঁচে থাকার যুদ্ধ। সমরেশ মজুমদারের কালবেলা উপন্যাসে উঠে এসেছিল নকশাল কমিউনিজমের যে রাজচিত্র, আরশিনগরে সাদাত হোসাইন দেখিয়েছেন মাদারীপুরের প্রত্যন্ত এলাকা যযাতিপুরের নকশালের ঘৃণ্য চিত্র। পাঠক হিসাবে আমার ভাবনাটা প্রথম এখানেই থমকে যায়। উপন্যাসে কত কি ঘটলেও ঠিক এখানে আমি কেন বিশেষভাবে থেমেছিলাম? কারণ সমরেশ মজুমদারের কালবেলা উপন্যাস। একটা আন্দোলন সত্তর আশির দশকে শুধু একটি দেশ বা অঞ্চলে আটকে থাকেনি, ছড়িয়ে পড়েছিল প্রত্যন্ত অঞ্চলেও। ঠিক ওই সময়ই মনে হয়েছিল, সময়কাল বিবেচনায় আরশিনগর যেন কোনো কিছুকে ছেড়ে বা ফেলে রাখার উপন্যাস নয়।
Was this review helpful to you?
or
লেখকের বড় পরিসরে প্রথম উপন্যাস হিসেবে আরশিনগর নিঃসন্দেহে চমৎকার একটি রচনা। আবহমান গ্রাম বাংলার নোংরা রাজনীতি, চরমপন্থিদের রেষারেষি ও ক্ষমতার কুতসিত লড়াইয়ের মাঝে আরশি নামের মাতৃহারা এক মেয়ের জীবনকাহিনী সফলভাবে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। সমালোচনার দৃষ্টিতে বলতে হলে বলা যায় উপন্যাসের বিধানচন্দ্র দাস চরিত্রটির উদয়ের কোন প্রয়োজন ছিল না। লাইলির এত এত জঘন্য অপরাধের পরেও তার নির্মম পরিণতি নিয়ে সেভাবে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি যেটা পড়ে পাঠকমনের ভেতর লাইলিকে নিয়ে সঞ্চারিত ক্রোধের তৃষ্ণা মিটবে। তাছাড়া মোস্তফা ও আব্দুল মোমেন নামক দুটি নর্দমার কীটকেও লেখক উপন্যাসের শেষে মুক্ত করে দিয়েছেন যেটা মেনে নেওয়া কষ্টকর।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা || রিভিউ || বই : আরশিনগর লেখক : সাদাত হোসাইন প্রকাশক : ভাষাচিত্র প্রকাশকাল : ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ঘরানা : সমকালীন উপন্যাস পৃষ্ঠা : ২৭২ প্রচ্ছদ : সাইফুল হালিম জেলীন মুদ্রিত মূল্য : ৪৫০ টাকা মায়াময় পরিষ্কার দুটো চোখে চোখ পড়লে যেন আয়নার কথা মনে হয়। তাই মৃত্যুর আগে নিজের সদ্যজাত কন্যার নাম আরশি রাখলো তার ভাগ্যহতা মা। বাবা মজিবর মিয়া আর দাদি আম্বরি বেগম তাকে গড়ে তুলতে লাগলো আগলে রাখা সমস্ত স্নেহ ও ভালোবাসার সবটুকু দিয়ে। তারপরো, মাতৃহীন আরশি তার পুরোটা জুড়ে আসন পেতে বসা মায়ের অভাব বারবার অনুভব করলো। আরশির বেড়ে ওঠা শুরু হলো শান্ত-নিস্তব্ধ যযাতিপুর গ্রামে। পরিশ্রমী ও আত্মপ্রত্যয়ী মজিবর মিয়া নিজ চেষ্টায় পৌঁছানোর চেষ্টা করলো উন্নতির শিখরে। কিন্তু তথাকথিত বাঙালি সমাজে সাধারণত যা হয়, তা আর আটকাতে পারলোনা। চক্ষুশূলে পরিণত হলো যযাতিপুর গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি কুচক্রী লতু হাওলাদারের। নিজের ঠুনকো আভিজাত্য ও বংশপরিচয়ের নেশায় বুঁদ এই মানুষটা যেকোন মূল্যে মজিবর মিয়াকে থামানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখলো। এদিকে অস্থির এক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পুরো দেশ। শ্রেণীশত্রু খতমের নামে চরমপন্থিরা নৃশংসতার চরমপন্থার সীমাও যেন অতিক্রম করে চলেছে প্রতিনিয়ত। আলাদা আলাদা গ্রুপে ভাগ হয়ে একে অপরকে ধ্বংস করার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তারা। আর স্বাভাবিক ভাবেই, চরমপন্থিদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। আগুন সবকিছুকেই পোড়ায়। আর এই ভয়াবহ আগুন একটা পর্যায়ে স্পর্শ করলো যযাতিপুরের মাটি। শান্ত গ্রামটা অশান্ত হয়ে উঠলো ক্রমেই। ঢাকায় বসবাসরত আশিষ ও মিলির জীবনটাও কেমন যেন ওলটপালট হয়ে গেলো। সন্তানহারা এক মায়ের হাহাকারে মুহুর্মুহু কম্পিত হতে লাগলো আকাশ বাতাস। পুত্র আর পুত্রবধুর জীবনের সাথে জড়িয়ে গেলেন গ্রাম্য ডাক্তার শুকরঞ্জন বাবু ও তাঁর স্ত্রী সুজাতা রাণী। 'জলে ভাসা পদ্ম' কথাটা যে কতোটা সত্য, তা হয়তো আরশিকে নতুন করে বোঝানোর কিছু নেই। সাজানো গোছানো সংসারও যেকোন সময় তাসের ঘর হয়ে উঠতে পারে, এটাও তাকে বোঝানোর কিছু নেই। ঘাতপ্রতিঘাতে জর্জরিত হতে লাগলো মেয়েটা। যেখানে প্রতি পলে সুখ আর দুঃখের যুগপৎ আসাযাওয়া অব্যাহত রইলো। প্রায় সব হারিয়েও আরশি কিন্তু ভেঙে পড়লোনা। সর্বংসহা হয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো শেষটা দেখার জন্য। আর আরশির এই ঘটনাবহুল জীবনকে নানান অভিজ্ঞতার প্রলেপে অর্থবহ করলো ডা. রুবিনা, ইমাম সাহেব ও তাঁর স্ত্রী, লাইলি সহ আরো অনেকে। সারাটা জীবন ভালোবাসা নামক মরীচিকার পেছনে ছুটে চলা আরশির জীবনেও কি ভালোবাসা এসেছিলো? বুকের ভেতরের আজন্মলালিত দীর্ঘশ্বাস কি একটা বারের জন্যও বের করতে পেরেছিলো সে? আরশিনগরের পথে পথে হাঁটা কি কখনো এক টুকরো স্বস্তির সন্ধান দিয়েছিলো তাকে? অনেক প্রশ্ন। সবগুলোর উত্তরও প্রোথিত আছে আরশিনগর নামের উল্টোজগতের ভেতরে। ব্যক্তিগত মতামত : এই সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক সাদাত হোসাইনের কোন বই এর আগে পড়িনি। 'আরশিনগর'-ই প্রথম। বইটা পড়ে উনার সাবলীল ও আবেগময় লেখিনীর আশ্চর্য এক পরিচয় পেলাম। গ্রাম্য বালিকা আরশির জীবনই শুধু না, এতে তুলে ধরা হয়েছে লতু হাওলাদারের মতো মানুষের মনের অন্ধকার দিক ও সেই সাথে সন্ধান দেয়া হয়েছে কিছু মানুষের বুকের ভেতরে লুক্কায়িত অশেষ ভালোবাসার ঐশ্বর্যের। সহজ-সরল বর্ণনাভঙ্গি অসাধারণ ভাবে বাহুল্যবর্জিত ছিলো। এই কারণে পাঠকমনে দাগ কেটে গেছে 'আরশিনগর'-এর প্রতিটা হরফ। অনেক পাঠক বলেন, সাদাত হোসাইন নাকি শ্রদ্ধেয় হুমায়ূন আহমেদের লেখনীকে অনুসরণ করেন। 'আরশিনগর' পড়ে আমার এমনটা মনে হয়নি। তবে গল্প বলার ঢঙে সামান্য হুমায়ূনীয় প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। তবে অন্ধভাবে যে তিনি গল্পের জাদুকরকে অনুসরণ করেন, তা আমার মনে হয়নি। আজকাল অনেক লেখকই সচেতন ভাবে বা অবচেতন ভাবে এই কাজটা করে থাকেন। তবে সাদাত হোসাইন অত্যন্ত সাফল্যের সাথে নিজের গল্প বলার স্বতন্ত্রতা ধরে রাখতে পেরেছেন বলেই আমার মনে হয়। 'আরশিনগর' পড়ার পর স্বাভাবিক ভাবেই উনার অন্যান্য বই গুলোর প্রতি আগ্রহ বোধ করছি। বইটার প্রচ্ছদ ভালো লেগেছে। মুদ্রিত মূল্যের ব্যাপারে অবজেকশন আছে। ২৭২ পৃষ্ঠার একটা বই, সেটার ফিনিশিং যতোই মানসম্মত হোক, সেটার মুদ্রিত মূল্য ৪৫০ টাকা রাখা অযৌক্তিক মনে হয়েছে। ব্যাপারটা ঠিক পাঠকবান্ধব মনে হয়নি। যাই হোক, আরশিনগরের উল্টোজগত আমাকে অসাধারণ একটা পাঠ-অভিজ্ঞতা দিয়েছে। লেখকের জন্য শুভকামনা। রেটিং : ৪.৫/৫ © শুভাগত দীপ
Was this review helpful to you?
or
আরশি নগর ফ্ল্যাপ থেকে আরশি মাথা তুলে তাকাল। ভোলানাথের বন্ধ সেলুনের সামনে কাঠের খুঁটি। সেই খুঁটির গায়ে হাতের তালুর সমান ছোট্ট এক চিলতে আয়না। ঝাপসা হয়ে যাওয়া সেই আয়নার দিকে তাকিয়ে খানিক স্থির দাঁড়িয়ে রইল আরশি। তারপর ধীর পায়ে আয়নাটার সামনে গিয়ে তাকালো। আয়নার ভিতরে আবছা একটা মানুষ। গতকাল অবধি দেখে আসা সেই একই চোখ, একই নাক, একই চেহারা। কিন্তু গতকালের সেই আরশি আর এই মানুষটা কি এক? এই মানুষটাকে কি সে চেনে? আরশির হঠাৎ মনে হলো এই জগতের কেউ কাওকে চেনে না। এই জগৎ আয়নার মতোন। উল্টোজগৎ। এখানে সবকিছু উল্টো। এই উল্টো জগতের নাম আসলে আরশিনগর। . পাঠ প্রতিক্রিয়া ঠিক করেছিলাম, নবীন লেখিয়েদের মধ্যে তানিয়া সুলতানা ছাড়া আর কোন লেখিয়ের জীবনধর্মী বই পড়বো না। তবুও সাদাত হোসেইনের বই নিয়ে এত মাতামাতি দেখেছি যে এতে আগ্রহ জন্মেছিল। ভাবলাম, বেস্টসেলার বই এড়িয়ে যাওয়া কোন কাজের কাজ হবে না। . অজপাড়াগাঁয়ে আরশি নামের টলটলে চোখের শান্ত এক মেয়ের জন্ম, বেড়ে ওঠা, আর জীবনগাঁথা নিয়ে এই উপন্যাস। যার জীবনের পুরোটা অংশেই ছিল বিভিন্ন রকমের জটিলতা। . গ্রাম্য রাজনীতি, রাজনীতির রাজনীতি, ক্ষমতা, লোভ, চক্রান্ত, কূটকৌশল - বইয়ের প্রধান বিষয় হলেও লেখক এতে ভালোবাসার গভিরতাও বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। . জীবনধর্মী উপন্যাসের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো লেখনি। সাদাত হোসেইনের ফেবুতে কিছু কিছু স্ট্যাটাস পড়ে লেখনি ভালো লাগলেও বইয়ে ভালো লাগলো না। কেমন যেন অতিরঞ্জিত বর্ণনা। আবেগের প্রকাশটা যথাযথভাবে হয়নি। মনে হচ্ছিল একটু বেশি বেশি। . এত আলোচিত বই, নিশ্চয়ই কোন বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। সেটার অপেক্ষাতেই পড়ে গেলাম পাতার পর পাতা। মাঝামাঝিতে এসে কাহিনিটা ভালো লাগতে শুরু করলো। তাই প্রথম অর্ধেক শেষ হয়ে যাওয়ার পর বাকিটুকু পড়ার আগ্রহ পাচ্ছিলাম। পরের অর্ধেক পড়ে তৃপ্তি পেয়েছি। . ফ্ল্যাপের লেখাটুকু পড়ে মনে হয়েছিল এটা যেহেতু আরশি আর তার উল্টাজগতের উপাখ্যান , খানিকটা হলেও অতিপ্রাকৃত কোন ব্যাপার থাকবে। আসলে তা নয়। উল্টা জগতের পুরোটাই জীবনবোধ। প্রায় প্রত্যেক চ্যাপ্টারেই প্রবন্ধের মত করে জীবনবোধ নিয়ে আলোচনা করেছেন। . লেখক গ্রাম্য লোকগাঁথা, তাদের জীবনধারা গ্রাম্য ভঙ্গীতেই লেখার চেষ্টা করেছেন। কিছু কিছু ব্যাপার কাহিনি আমার সাথেও মিলেছে, যেমন - খরগোস বের হলে বাকি গল্প বলা হবে, কিংবা দুধের "হর"এর মাধ্যমে ভগ্নাংশের হর লব চেনার পদ্ধতি। . আরশি চরিত্রটাকে আমার খুব খুব ভালো লেগেছে। তার স্বভাবের সবগুলি অংশ - শান্তভাব, দৃঢ়তা, চিন্তাভাবনা আর নির্বিকারত্ব … সব ভালো লেগেছে। . খুঁতখুঁতে স্বভাবের বলে আরেকটা ব্যাপার না বলে পারছি না। বইয়ে বেশ কয়েকবার বলা হয়েছে, 'চালতার "ধবধবে" সাদা ফুল … ' - চালতা ফুলের পাপড়ি সাদা হলেও পাপড়ির মাঝখানে হলদে পরাগকেশর রয়েছে। . আশ্চর্য বোধক চিহ্নের ব্যবহার খুব বেশি ছিল। যেখানে দাঁড়ি বা প্রশ্নবোধক দরকার, সেখানেও আশ্চর্যবোধক। অল্পকিছু ভুল বানান চোখে পড়েছে। ২৭১ পৃষ্ঠার বইয়ের ক্রয়মূল্য ৩৮৩ টাকা, এটা যেন ভাবাই যায় না। দামটা সত্যিই তুলনামূলক খুব বেশি। দাম কিংবা পপুলারিটি দেখে যে রকম বই আশা করেছিলাম, আরশিনগর আমার সেই প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ। আমি বলছি না, বইটা ভালো নয়। অ্যাভারেজ। বুঝতে পারছি না, এরকমটা কি কেবলমাত্র আমার ক্ষেত্রেই ঘটেছে? . বই পরিচিতিঃ বইঃ আরশি নগর লেখকঃ সাদাত হোসেইন প্রচ্ছদঃ মোস্তাফিজ কারিগর মূল্যঃ ৪৫০ টাকা (মলাট মুল্য। রকমারি থেকে কিনলে ৩৮৩ টাকা) পৃষ্ঠাঃ ২৭১ প্রকাশনীঃ ভাষাচিত্র প্রকাশনী প্রকাশকালঃ বইমেলা-১৫
Was this review helpful to you?
or
আরশিনগর পড়লাম নাকি কোন মুভি দেখলাম বুঝতে পারছি না। লেখক খুবই দক্ষতার সাথে প্রতিটি চরিত্রকে জীবন্ত করে তুলেছেন। যারা যারা এখনও বইটি পড়েন নি শীঘ্রই পড়ে নেন । এবং আমি বাজি রেখে বলতে পারি, বই পড়া শেষে আপনিও এখানে আসবেন 5 * রেটিং দেয়ার জন্য।
Was this review helpful to you?
or
সাদাত হোসেইন..... নামটা খুব বড় একজন লেখকের। শুনলেই ভাললাগাটা কাজ করি।ওনার অসাধারণ লেখাগুলো পড়ে মনে হল ওনার উচ্চতা কোনো মাপকাঠিতে পরিমাপ করা যায় না,আর যাবেও না।"আরশিনগর"-ওহ মা! চরম।। আসলেই পাগলপ্রায় অবস্থা।" আয়না আর চোখের ভেতর এক চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। সম্পর্কটা খানিক অদ্ভুত কিন্তু খুবই গভীর। জগতের দৃশ্যমান প্রায় সবকিছুকেই দেখার ক্ষমতা রয়েছে চোখের,অথচ সে নিজেই নিজেকে দেখতে পায় না।নিজেকে দেখার ক্ষমতা নেই তার।নিজেকে দেখতে গেলে তাকে যেতে হয় আয়নার কাছে। কী অদ্ভুত সমীকরণ! -হুম,আসলেই খুব অদ্ভুত। বইটি যখন পড়ছিলাম তখন তার এক অভাবনীয় দৃশ্যকল্প চোখের সমনে ফুটে উঠছিল। আসলেই...ভাললাগাটা ওইখান থেকেই।কল্পনাশক্তি হার মানছিল বার বার লেখকের কাছে। হুম...... "এক জোড়া ভবঘুরে নদী;বহু পথ ঘুরে এসে দেখি; লুটায় তোমার চোখে,হাহাকার ভেসে যাওয়া শোকে, তুমি তাকে অশ্রু না ডেকে,ভালবাসা ডেকো। খুঁজে দেখো কোন এক পলাতক মন,ডুবেছে তোমার ওই নেশাঘোর চোখে।।" ঠিকই বলেছেন লেখক। উল্টোজগত,যেখানে সবকিছুই উল্টো। সে জগতের আসল নাম "আরশিনগর "..... 'সাদাত হোসেইন'-আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ!!!
Was this review helpful to you?
or
একটা উপন্যাসের সবচাইতে বড় সফলতা হল পাঠককে তার বাস্তবতা থেকে আলাদা করে উপন্যাসের পটভূমিতে নিয়ে যাওয়া। আরশিনগর উপন্যাসটি পড়ার সময় প্রতিটা ক্ষণ আমার মনে হয়েছে আমি নিজে উপন্যাসটির একটি অংশ। উপন্যাসটির অসাধারণ বর্ণনার, প্রতিটি চরিত্রের সাবলীল বিচরণ,সর্বোপরি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি সময়ের, ভিন্ন একটি কাহিনীর এতো শক্তিশালী উপস্থাপনা পাঠককে পুরোটা সময় মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। আমার পড়া সমসাময়িক উপন্যাস এর মধ্যে আরশিনগর শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। সাদাত হোসাইন কে অসংখ্য ধন্যবাদ এতো ভালো একটি উপন্যাস পাঠকদের উপহার দেয়ার জন্য।
Was this review helpful to you?
or
আরশি। কাজল চোখের মেয়ে। জন্মের সময়-ই মা মারা যায়। দাদী আম্বরী বেগমের কোলেই মানুষ। বাবা মজিবর মিয়া ও মেয়েকে আগলেই রাখছিলেন। বাবা - মেয়ের এক অপার্থিব ভালবাসা ফুটে উঠে এই উপন্যাসে। কাহিনী ভালোই চলছিল যতদিন না আরশির সৎ মা লাইলি ঘরে এলেন। আরশির নামে সম্পত্তি থাকায় প্রথম প্রথম আদর যত্ন পেলেও, পরে ঠিক-ই সৎ মা তার আসল রূপ দেখিয়ে দিল। এই উপন্যাসে দেখা যায় তৎকালীন গ্রামের ক্ষমতাসীন মানুষদের দৌরাত্ম। উঠে আসে লতু হাওলাদার, তালুকদার এর মতো ক্ষমতাসীন লোকেরা। গ্রাম্য সন্ত্রাসবাদের ও খুঁটিনাটি ব্যাপার চোখে পড়ে লোকমান পার্টি আর গলা কাটা বশির পার্টির ঔদ্ধত্য দেখে। এক ঝড়ের রাতেই মোড় ঘুরে যায় আরশির জীবনের। যযাতিপুরের মসজিদের ইমামের হাতেই শুরু হয় আরশির নতুন অধ্যায়। ঘুরে যায় গল্পের মোড়। জল পদ্মের মতো ভাসতে থাকে আরশি। সময় যায়, গল্পের মোড় ঘুরে। কামরুন্নাহার, জায়েদ, আশিষ, মিলি, রুবিনা, শুকরঞ্জন ডাক্তারের মতো আরো অনেক চরিত্র আরশি কে বড় করে তোলে। গল্পের নাটকীয়তা কখনো কখনো দু'এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়তে পারে পাঠকের। কাজল চোখের সেই আরশি সময়ের আঁচড়ে হয়ে উঠে বড়। জীবন তাকে এক সময় সেখানেই দাঁড় করায় যেখান থেকে সে শেষ করেছিল এক অধ্যায়। পারতপক্ষে আসলেই কি শেষ ছিল তা!! অদ্ভুত এই মানবজনমটায় আমরা সবাই বাস করি। ছোট্ট এই পাখির মতোন বুকটায় বয়ে বেড়াই কত কিছু। এই জনমটা আসলেই অদ্ভুত। কী অদ্ভুত! এ যেন আয়নার মতোন উল্টো এক জগত। আর এই জগতের নাম আরশিনগর!
Was this review helpful to you?
or
সাদাত হোসাইনের প্রথমদিকের জনপ্রিয় উপন্যাসগুলোর মধ্যে একটি আরশিনগর। মা হারা ছোট্ট একটি মেয়ে আরশি। যখন চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে উঠছে একটু একটু করে তখন সে দেখে পৃথিবীর কুৎসিত তম রূপ। সেই থেকে শুরু। পরিবর্তন এসেছে জীবনে তবে প্রিয় মানুষগুলো হারিয়ে গেছে একে একে। একটা সময় এই উল্টো জগতের উল্টো মানুষগুলোকে সে বোঝে না। বুঝতে চায় না। শুধু চায় একটুখানি নির্ভরতার ভালোবাসা। এমনই অসাধারণ গল্প নিয়ে বইটি...
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ একটি উপন্যাস
Was this review helpful to you?
or
নতুন করে কিছু বলার নেই। বইটা দুইবারের বেশী পড়া হয়ে গেছে। আরো বেশী পড়তে মন চাই। সুযোগ পেলেই আরশিনগরে ডুবে যেতে ইচ্ছে হয়।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বই-আরশিনগর লেখক-সাদাত হোসেন ধরন-উপন্যাস পৃষ্ঠা-২৭২ মূল্য-৪৫০ প্রকাশনী-ভাষাচিত্র সাদাত হোসেনের আরশিনগর। জন্মের সময় মা মারা যাওয়া এক অনাথ মেয়ের বেড়ে উঠার গল্প। আরশি। গায়ের রং শ্যামলা কিন্তু ঝলঝলে আয়নার মতো চোখে, মায়ায় পরিপূর্ণ । তাকালে চোখ ফেরানোর কোন উপায় নেই। মা নিলুফাবানু মারা যাবার আগ মুহূর্তে শ্বাশুড়ি আম্বরি বেগম কে ডেকে বলে গেলেন, তার মায়ের নাম যেন আরশি রাখা হয়। এই এতটুকুন আরশির একটু একটু বড় হওয়ার গল্প হলো আরশিনগর। আরশির গল্পের সাথে, লেখক আরো কতো গুলো গল্পের রেখা টেনে গেছেন। যেমন, শুকরঞ্জন ডাক্তার ও সুজাতা রানীর গল্প, আশিষ ও মিলির গল্প, ইমাম আকরাম হোসেনের গল্প, রুবিনার গল্প। গল্প গুলোর যেখান থেকে শুরু হয়েছে, সে গ্রামের নাম যযাতিপুর। বাংলার আর কয়েকটা অজপাড়াগাঁয়ের মতো এটাও একটা। এই গ্রাম কে ঘিরে রাজনীতি, প্রতিহিংসা, মানুষের ক্ষমতা আর প্রতিপত্তির লোভ সব কিছুই চিত্রায়িত করেছেন। মা হারা আরশি বড় হতে থাকে তার দাদী আম্বরী বেগমের আঁচলে। জন্মের বছর বন্যায় যখন সব ডুবে যাচ্ছিলো তখন দাদী আক্ষেপ করে বলেছিলো, মজিবর তোর মাইয়া সর্বনাশ লইয়া জগতে আইলো, কে জানে! মজিবর উত্তর করে নি। সে বন্যায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠে মজিবর এবং তখন থেকেই একধাপে মজিবর পাল্টে যায় অনেকখানি। তেমনি বড় হতে থাকল আরশি। চোখের সামনে বদলাতে থাকে চিত্রপট। শেষ অব্দি কি হয়েছিলো! বিশাল পটভূমির জীবনবাদী গল্প, সাদাত হোসেনের আরশিনগর। গ্রামের ক্ষমতা লোভী মানুষের চিত্র, চরমপন্থিদের চিত্র, স্বাভাবিক জীবনের কিছু চিত্র সবগুলো একের পর এক চিত্রিত হতে থাকে। শুরুটা যেমন ছিলো শেষটাও বেশ তৃপ্তি দায়ক। কিন্তু লেখক এক মাত্র আরশি চরিত্র ছাড়া আর কোনটাই তেমন ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেন নি কোথাও। গল্প শেষ করার পর কোন চরিত্রের প্রতি আমি কোন টান অনুভব করিনি। আরশি যে ফুটে উঠেছে তাও পুরোটা গল্পের কারনে। আরেকটি ব্যপার হলো, গল্পে মৃতের সংখ্যা অত্যাধিক। এমন যে, লেখক চরিত্র সৃষ্টি করেছেন আর তার মৃত্যু দেখিয়েছেন। পুরোটা গল্প যতোটা টান ছিলো তার থেকে আশংকা ছিলো এবার বোধহয় আরশির পালা। তবুও লতানো গাছের মতো ফাক ফোকর দিয়ে আরশি ঠিকই বেড়িয়ে গেছে। তাকে লেখক সর্বসংহা করে প্রকাশ করেছেন। প্রতিটা গল্প শুরু হয়েছে যতোটা দ্যোতনা দিয়ে, তার পুরো রেশ লেখক গল্পগুলোর শেষ পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারেন নি। এটা একটা দূর্বল দিক। আবার কিছু চিত্র অহেতুক মনে হয়েছে। বইয়ের পৃষ্ঠা বাড়ানোর জন্য এমন মনে হয়। চরিত্রগুলোও প্রথম যেভাবে প্রকাশ করেছেন তাও শেষ পর্যন্ত ততোটা আকর্ষণ রাখতে পারে নি। আরশি ছাড়া। মজিবর কে দেখানো হয়েছে ভালবাসায় মোড়া পিতা হিসেবে কিন্তু এই চরিত্রটাও অনেক জায়গায় নির্লিপ্ত ছিলো। আম্বরি বেগমের হঠাৎ চলে যাওয়াটাও গল্পের ট্র্যাজেডি নিয়ে এসেছে। পড়ার সময় কেন জানি কতো গুলো গল্পের শেষটা ,আগে থেকেই বুঝতে পারছিলাম। এবং সেগুলো টুক করেই কোন ছাপ না রেখেই শেষ হয়ে গেছে। তার জন্য অনেক পাতাই আমি উল্টে গেছি। বর্ণনা ভঙ্গি ভালো ছিলো, অনেক সহজ ভাবেই এগিয়েছে। কিন্তু বর্ণনায় এটা মানা গেলেও এতোটা সহজ হওয়া উচিৎ হয় নি সংলাপে। আর এই সহজ চিত্রটা পাঠক হিসেবে মেনে নেওয়া অসম্ভব ছিলো। এক গল্প থেকে অন্য গল্পে যাওয়ার ধারাটা সঠিক থাকলেও পরিপূর্ণতা পায় নি। এতো কিছুর পরও আম্বরি বেগম, শুকরঞ্জন ডাক্তার, যোশোদা স্যার আর আসিফ এই চারটা চরিত্র তবুও আমাকে কিছুটা আকর্ষণ করেছে। এখানে আসিফ চরিত্রটাও বেশ দূর্বল ছিলো, হুট করে লেখক একে নিয়ে এলেন কোন কিছু জানান না দিয়েই। আবার তেমন কোন পরিচয়ও মেলেনি তার। এজায়গায় সব থেকে বেশি আজব লাগছে, বলা নেই কওয়া নেই বিধানচন্দ্রের প্রতি আরশির আবেগ। আমি এখানেও ঠিকমতো কিছুই ধরতে পারিনি। সব বাদ দিলে গল্পের শুরুটা বেশ ছিলো কি জানি হয়, কি জানি হয় এরকম আশংকায় যখন, পাতা উল্টে যাচ্ছি তখন হুট হাট অনেক জায়গায় এসে বেশ বিরক্ত হয়েছি। তবুও আরশির আকর্ষণে পাতা উল্টে গেছি, দেখার ছিলো আরশির জন্য লেখক কতোদূর আমাকে নিয়ে যেতে পারেন। কিছু জায়গা যে একেবারেই স্পর্শ করেনি তা নয়। আম্বরি বেগম, সকাল আর যশোদা স্যার এই তিনটা চরিত্র কিছু পেরেছিলো । তবুও খারাপ লেগেছে। কিছু জায়গা লেখক খুব তারাতারি নিয়ে গেছেন, যেমন মিলির অবস্থা আবার আতাহার তালুকদারের অবস্থা। এই কাহিনী গুলো হুট করে হয়ে গেছে। আবার আতাহার তালুকদারের ছেলে আফজাল তালুকদার হুট করে যেমন এসেছিলো, তেমনি জানান না দিয়েই হারিয়ে গেছেন। এতকিছুর পর শেষ পর্যন্ত শান্তি পেয়েছিলাম লতু হাওলাদারের পরিণতিতে। এ জায়গায় লেখকের প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই। ভেতরে যাই থাকুক না কেন, ঠিকঠাক একটা পরিসমাপ্তি ঠিকই লেখক দিয়েছেন। সাদাত হোসেনের বড় কলেবরের প্রথম বই আরশিনগর, বেশ বড় পটভূমির কাহিনী হওয়ায় অনেক বেশি চরিত্রের সমাগম। আর সেকারনে কিছু চরিত্রের অবশ্য খুব দৃঢ় হওয়া উচিৎ ছিলো। অথচ সেটা ছিলো না। সব কিছু ছাপিয়ে একটা চরিত্রই ধিকিধিকি করে জ্বলে থাকলো সে হলো আরশি। আর পাঠক যদি বইয়ের সমাপ্ত পর্যন্ত যায় তবে শুধু মাত্র এই চোখ ভরা মায়ার টানে যাবে। এক্ষেত্রে প্রথম বই হিসেবে লেখকের এটাই সার্থকতা। রেটিং ৩.৫/৫ রকমারি লিংক- https://www.rokomari.com/book/95831/আরশিনগর
Was this review helpful to you?
or
"জগতের সবকিছুর ঋণ চোখের কাছে আর চোখের ঋণ আয়নার কাছে।জীবন ও জগতের সবটা দেখা এই চোখ শুধু আয়নাতেই তার নিজেকে দেখতে পায়। কি অদ্ভুত হিসাব! এই ঋণ তাই এই জগতেরও।আমি এই জগতের নাম দিয়েছি আরশিনগর। যে নগরে হেঁটে যাই আমি ও আমার মতোন ঘোরগ্রস্ত তাবৎ নাগরিক" এ লেখাটা পড়ে এতো অসাধারন লাগছে যে বারবার পড়েই যাচ্ছিলাম। উনার আরেকটা কবিতা ছিলো: এক জোড়া ভবঘুরে নদী; বহু পথ ঘুরে এসে যদি; লুটায় তোমার চোখে, হাহাকার ভেসে যাওয়া শোকে, তুমি তাকে অশ্রু না ডেকে, ভালোবাসা ডেকো। খুঁজে দেখ কোনো এক পলাতক মন, ডুবেছে তোমার ওই নেশাঘোর চোখে। নেশায় ডুবে যাক শহর, গলির শিস কাটা লাল চোখ বৃদ্ধ কিংবা যুবক। ডুবে যাক শ্মশান কিংবা গোরস্তান। বুঁদ হয়ে থাক উদ্ভ্রান্ত বুক। নেশায় ডুবে থাকা মানুষ, চুমুকে চুমুকে সব দুঃখ শুষুক। মাতাল মাদকে কাটুক জমে থাকা পুরাতন শোক, আজ চৌদিকে নেশাদের বান ডেকে যাক তোমার অমন মাদক চোখ। 'শোন কাজল চোখের মেয়ে; আমার দিবস কাটে, বিবশ হয়ে, তোমার চোখে চেয়ে'। "আরশিনগর" পড়ে এতটাই উচ্ছসিত আর উল্লসিত যে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।রীতিমত মাথা খারাপ করে দিলো বইটা.. সাদাত হোসাইন,আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এতোটা সৃষ্টিশীল আর অনবদ্য উপন্যাস লিখে আমাদের পড়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্যে...
Was this review helpful to you?
or
গত কয়ের বছর কিছু নাম করা সেলিব্রেটি কিছু বিখ্যাত বাংলাদেশি লেখকের বই বইমেলাতে গিয়ে কিনতাম, পড়া শেষ হবার পর মনটা তিতা হয়ে থাকতো, এইবার বই মেলাতে "সাদাত হোসাইন" নামের এক বাচ্চা ছেলের বই "আরশিনগর" কিনলাম।। গতকাল পড়া শেষ হল।।।বইটা পড়ার সময় মনে হচ্ছিল আমি বেশ কয়েক বছর আগে পড়া মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বা সমরেশ পড়ছি।।।প্রতিটা পরিচ্ছদ পড়া শেষ করছি আর মনে হচ্ছে প্রচন্ড তৃষ্ণা মিটছে।। বইটা পড়ার সময় মন আর বুকের মধ্যে বহুদিন পর পাওয়া সেকি এক অদ্ভুত আলোড়ন।। আমি ভেবে পাচ্ছিনা অতটুকু বাচ্চা ছেলে এমন মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করলো কিভাবে? মজিবরের এমন করুন পরিনতি মেনে নিতে পারিনাই।।।আম্বরিকে নায়িকা মনে হয়েছে।।।একজন বৃদ্ধাকে কি সুন্দর ভাবে আমদের মাঝে তুলে এনেছে।।গল্পের শুরুতে মজিবরকে দিয়ে নিলুফার তুমি ডাক,সকালের মৃত্যু পরবর্তী মিলির আচরন, বাবার বুকের ওপর তার ছোট সেই হাত।সেই হাত ভরতি কি মায়া....নশ্বর জগতের অবিনশ্বর ভালবাসা...এমন অনেক অংশ চোখ ভিজিয়েছে।।।আসিফের সাথে দেখা হবার পর আরশির কিশোরী মনের মনোজাগতিক আলোড়ন ফিরে পেয়েছি কিশোরী নিজেকে।।।।এক কথায় অনেক অনেক ভাল লেগেছে বইটি পড়ে।।।।l
Was this review helpful to you?
or
এই লেখক গগণ ফাটার মত কিছু এখন পর্যন্ত লিখতে পারেননি। তারপরেও এই লেখকের নামে গগণ ফাটে। ফালতু ধরনের লেখা লিখে থাকলেও যেকোন কৌশলেই হোক না কেন তিনি খ্যাতি অর্জন করে নিয়ে বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে ওভাররেটেড লেখকে পরিণত হয়েছেন। কলাগাছ মাত্র একবারই ফলবতী হয় আর মাত্র ৩-৪ মাস বাঁচে। এই লেখকের দৌড় কতদুর তা দেখার অপেক্ষায় থাকলাম।