User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
আমি জীবনে প্রথমবার রকমারি থেকে বই অর্ডার করলাম কখনো ভাবিনি যে এত তাড়াতাড়ি বইটি হাতে পেয়ে যাব ?☺️
Was this review helpful to you?
or
best
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামঃ অচিনপুর। লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ অনুভব করছি সুখ এবং দুঃখ আসলে একই জিনিস।সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সুখ বদলে দুঃখ হয়ে যায়। দুঃখ হয় সুখ। জীবনের প্রবল দুঃখ ও বেদনার ঘটনাগুলো মনে পড়লে আজ আমার ভাল লাগে। প্রাচীন সুখের স্মৃতিতে বুক বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়।" আমাদের সমাজে দেখা যায়, মা-বাবা হারিয়ে, এতিম শিশুরা নানাবাড়ি বসবাস করার সময় কতটা অবহেলিত হয়। তার কাছের মানুষ গুলোর কাছে। যা কখনো কারো কাছে বলতে পারেন না এতিম শিশুরা। তাদের মাঝে কি পরিমাণে- কষ্ট, যন্ত্রণা, ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে এরা বেচে থাকে। হ্যাঁ এমনটা না, হলেও অহরহ হচ্ছে সমাজে! তারেই কাহিনী তুলে ধরেছেন লেখক অচিনপুরের মাধ্যমে। রঞ্জু ও লিলি ভাই বোন, তাদের বাবা মারা যাওয়ার পরে মা নানাবাড়ি নিয়ে আসেন তাদের, রঞ্জুর যখন তিনমাস তখন তার মাও মারা যায়, এক ধরণের চাপা কষ্ট নিয়ে বড় হতে থাকে। রঞ্জুর কাছের মানুষ হিসাবে থাকে বোন লিলি, কিন্তু লিলিও বিবাহ হয়ে যায়। এদিকে তার সঙ্গী হিসাবে নবুমামা থাকেন। নবুমামা বাদেও, বাদশাহ মামা আসেন তার পড়াশোনা একদম ভালো লাগেনা, তাই যাত্রাদলে যোগ দিয়ে ছিলেন, হঠাৎ একদিন বাদশাহ মামা এলাচি নামের একমেয়েকে বিবাহ করে নিয়ে আসেন। এলাচি সাথে আস্তে আস্তে রঞ্জু ও নবুমাম ভাব জমতে থাকে। হঠাৎ নবুমামার শরীর খারাপ হলে ডাক্তারি পরামর্শে রাজশাহী চলে যেতে হয়, সেখানেই পড়াশোনাও করেন। রঞ্জুর, নবুমামার,ও এলাচি ভাবির কি হলো তাদের মাঝে জানতে চাইলে, পড়ুন অচিনপুর। "অচিনপুর" হুমায়ূন আহমেদের একটি ব্যতিক্রমধর্মী উপন্যাস। উপন্যাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লেখক একটি মায়াজাল সৃষ্টি করেছেন। বইটি পড়ার সময় যে কেউই সেই মায়াজালে আটকে যাবে।
Was this review helpful to you?
or
'অচিনপুর' প্রধান চরিত্র রঞ্জুর কাছে অচেনাই রয়ে যায়।খুব ছোট বয়সে অসহায় মায়ের সাথে বড় বোনকে নিয়ে যে বাড়িতে তার পদার্পণ হয়,,,,সে বাড়ি তার কখনই আপন হয়নি। বিপুল সম্পত্তির মালিক তার নানা ছিলেন কঠর এক ব্যাক্তিত্ব। নানার ধরাবাধাঁ নিয়মেই তাদের জীবন চলতো কিন্তু তার ছেলেবেলার সাথি ছিল তার নবু মামা। সেই অচিনপুরে তার একমাত্র অপন ছিল তার সেই বন লিলি। মাকে হারানোর পর লিলির বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর সে সম্পূর্ণ একা হয়ে জায় অচিনপুরে।ঘটনাক্রমে বড় মামা বাদশার বিয়ে হয় রূপবতী এলাচির সাথে যে পরবর্তীতে কাহিনির কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। রঞ্জু আর নবু মামার দুর্বলতা তৈরি হয় এলাচির প্রতি। ঘটনা ক্রমেই জটিল হয়। বেশ অসাধারণ উপন্যাস।পাঠক পড়ে আনন্দ পাবেন।
Was this review helpful to you?
or
ভালো লেগেছে ছোট্ট গল্প তাই ছোট্ট করে বললাম ... কিন্তু ভালোলাগা টা অসীম।
Was this review helpful to you?
or
সত্যি অচিনপুর হুমায়ূন আহমেদের চমৎকার একটি উপন্যাস। উপন্যাসটিতে লেখক বাস্তবতাকে খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে রঞ্জ তার মামার বাড়িতে বেড়ে উঠছে।তার সাথি হয় তার মামা নবু।তাদের দুজনেরই এলাচির উপর ছিল একটু দুর্বলতা।তাছাড়া বিভিন্ন প্রবাদ বাক্যগুলো ছিল অসাধার। উপন্যাসটি শেষ হওয়ার পরেও মনের মধ্যে পরবর্তীতে কি হয় সেইটা জানার আগ্রহ থেকেই যায়।এই উপন্যাসটি পাঠকরা পড়ে দেখতে পারেন, আশা করি ভাল লাগবে।
Was this review helpful to you?
or
বাস্তবিক জীবনের ঘটনাগুলোকে সুন্দর করে উপস্থাপন করার নামই হুমায়ূন আহমেদ 3 অচিনপুর বইটি আজকে পড়লাম।আমি এমনি আবেগী।বইটি পড়ে কেঁদেছি অনেক।আমার সামনে প্রত্যেকটি চরিত্র ফুটে উঠছিল।মনে হচ্ছিল গ্রামটা আমি দেখতে পাচ্ছি , প্রত্যেকটা চরিত্র আমার খুব পরিচিত।এটা যে শুধু আমার মনে হবে তা নয় এটা আরো অনেকের মনে হয় কারণ হুমায়ূন আহমেদ লিখেন এতো মায়া নিয়ে যে প্রত্যেকটা চরিত্রই আমরা উপলব্ধি করতে পারি।গল্পের মূল বিষয় একটি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা পরিবার কি করে একটা সময় মাথা নুইয়ে পড়ে যায়! সময়ের বিবর্তনে সব কিছুর পরিবর্তন হতে থাকে।একটা সময় নিজের উপলব্ধি করা বিষয়গুলো স্মৃতিকথা হয়ে উঠে তখন এটি শুধু চারণ করেই অনুভব করতে হয়। একটা ছোট বালক রঞ্জু, যে বড় হয়েছে নানার বাসায়।এখানকার প্রত্যেকটি সদস্য নানাজান,বড় নানীজান,ছোট নানীজান,বাদশা মামা,নবু মামা,লিলি,লাল মামী,সফুরা খালা, মহরমের মা, রহমত সবার সাথে রয়েছে তার অসংখ্য স্মৃতি। গভীর মায়া নিয়ে ফেলে আসা পরিবারের সকল সদস্যের সাথে অতিবাহিত হওয়া প্রত্যেকটি মুহূর্তকে সে স্মৃতিচারণ করেছে।পুষে রাখা সুখ দুঃখের কথাগুলো জানার ইচ্ছে হলে পড়ে দেখুন অচিনপুর। খুব ছোট একটি বই কিন্তু অসাধারণ :)
Was this review helpful to you?
or
‘অচিনপুর’ উপন্যাসটি জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের লেখা একটি শক্তিশালী উপন্যাস। এই উপন্যাসে প্রথম পুরুষে বর্ণনার ক্ষেত্রে লেখক এতটাই সাবলীলতা দেখিয়েছেন যে, উপন্যাসের শুরুতে এই বইটিকে তাঁর আত্মজীবনী ভেবে ভুল হয়। গল্পকথক তাঁর শৈশব জীবনের নানা সুখ-দুঃখের ঘটনার দিয়ে কাহিনী শুরু করেছেন। পুরো কাহিনীর মধ্যে দার্শনিক চিন্তাভাবনা ও পরিণত জীবনের ছাপ পাওয়া যায়।‘অচিনপুর’ উপন্যাসে গল্পকথকের নাম রঞ্জু। রঞ্জুর যখন তিন মাস বয়স তখন তার মা, রঞ্জু আর তার বোনকে নিয়ে অসহায়ের মত একদিন বাপের বাড়িতে চলে এসেছিলেন। সেই থেকে রঞ্জু নানার বাড়িতেই বড় হয়েছে। রঞ্জু অল্প বয়সে সে তার মাকেও হারায়। নানার বাড়ির একমাত্র আপনজন তার বোন। সেই বোনেরও একদিন বিয়ে হয়ে গেল। তারপর বোন অনেক দূরে চলে গেল। তার আর কোন খোঁজ-খবর নাই।রঞ্জুর নানা অঢেল সম্পত্তির মালিক ছিলেন। তার কোন কিছুরই অভাব ছিল না। কিন্তু তারপরও সেই যৌথ পরিবারে রঞ্জু অবাঞ্ছিতের মতই বড় হতে লাগলো।আস্তে আস্তে ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়।রঞ্জুর ছেলেবেলার সাথী, তার লাজুক ভীতু নবু মামা আর খেয়ালী বাদশা মামার গল্প এই কাহিনীকে এগিয়ে নিয়ে যায়। সেই বাদশাহ মামার অসাধারণ সুন্দরী, লাল টুকটুকে বউ এলাচি আস্তে আস্তে ঘটনার কেন্দ্রে চলে আসে। না পাঠক, এখনও এখানে ত্রিপাক্ষিক প্রেম কাহিনী শুরু হয়নি। তবে পরেও হবে না তার নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। এলাচিকে রঞ্জু লাল মামী আর নবু মামা লাল ভাবী বলে ডাকতো।নবু মামা একদিন পড়াশোনার জন্যে রাজশাহী চলে গেল।এনট্রান্স পাশ করে যখন ফিরে আসলো তখন সে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক চরিত্র। সে আর কাউকেই পরোয়া করে না। কিন্তু তার সেই ছোটবেলার লাল মামীর প্রতি ভালোবাসা তখনই একই রকম রয়ে গেছে। বরং তাতে আরও মাদকতা, আরও উন্মাদনা যুক্ত হয়েছে। তারপর এক প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টির রাতে দেখা যায়, নবু মামা লাল মামীকে নিয়ে ঘরের দরোজা-জানালা লাগিয়ে দিয়ে গান শুনছে...............!
Was this review helpful to you?
or
অচিনপুর বইটিতে খুব ছোটবেলার বর্ননা অবলীলায় বর্ননা করেছেন গল্প কথক। যখন অনেক ছোট ছিলেন তখন তার সমস্ত ছোটবেলা কাটিয়েছেন নানার বাড়িতে। নানাবাড়ি সব মানুষের ই একটা প্রিয় জগত থাকে। গল্প কথকের ও ব্যাতিক্রম নয়।এর মধ্যে তার ছোট মামার সাথে সবথেকে ভালো সম্পর্ক ছিলো তার। এরই মধ্যে বড় মামার বিয়ে হয়ে যায় এবং আগমন ঘটে নতুন মামির। মামি এতোটাই সুন্দর থাকে যে তাকে লাল মামি বলেই সবাই ডাকে। দিন ভালোভাবেই চলে যাচ্ছিলো কিন্তু এরই মধ্যে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বাড়ির পরিবেশ কে সম্পুর্ন বদলে দেয়। কি ছিলো সে ঘটনা?? আর বাকি সদস্য গুলো কিভাবে নিয়েছিলো ব্যাপার গুলো জানতে পড়ে ফেলুন। হুমায়ুন আহমেদের প্রথম দিকের বইগুলো পড়লে একটা আলাদা ভালো লাগা কাজ করে এটিও ব্যাতিক্রম নয়।
Was this review helpful to you?
or
হুমায়ূন আহমেদ সচরাচর যে ধরনের উপন্যাস লেখেন ‘অচিনপুর’ উপন্যাসটি সে ধাঁচের নয়। এটা গতানুগতিক ধারা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একটি উপন্যাস। ‘অচিনপুর’ উপন্যাসটি গঠনগত বৈশিষ্ট্যে যেমন অনন্য, তেমনি বিষয়গত বৈচিত্র্যেও স্বতন্ত্র। হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের বেশিরভাগ লেখকের মতই সাধারণত তৃতীয় পুরুষে উপন্যাস লিখে থাকেন। কিন্তু ‘অচিনপুর’ উপন্যাসটি লেখা হয়েছে প্রথম পুরুষে। অর্থাৎ, গল্পকথক নিজেই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র। এখানে গল্পকথক মূলত তার শৈশব জীবনের নানা সুখ-দুঃখের ঘটনার কথা খুব সাবলীল এবং নির্লিপ্তভাবে বর্ণনা করে গেছেন। ‘অচিনপুর’ উপন্যাসে প্রথম পুরুষে বর্ণনার ক্ষেত্রে লেখক এতটাই মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন যে, উপন্যাসের শুরুতে কিছুক্ষণ এই বইটিকে হুমায়ূন আহমেদের আত্মজীবনী ভেবে ভুল করাও অস্বাভাবিক না। ‘অচিনপুর’ উপন্যাসে গল্পকথকের নাম রঞ্জু। রঞ্জুর যখন তিন মাস বয়স তখন তার মা, রঞ্জু আর তার বোনকে নিয়ে অসহায়ের মত একদিন বাপের বাড়িতে চলে এসেছিলেন। সেই থেকে রঞ্জু নানার বাড়িতেই বড় হয়েছে। কিন্তু রঞ্জু বরাবরই খুব ভাগ্যহত। তাই খুব অল্প বয়সে সে তার মাকেও হারায়। তখন নানার বাড়িতে রঞ্জুর আপনজন বলতে বোন ছাড়া আর কেউ থাকলো না। সেই বোনেরও একদিন বিয়ে হয়ে গেল। তারপর বোন অনেক দূরে চলে গেল। তার আর কোন খোঁজ-খবর নাই। রঞ্জুর নানা অঢেল সম্পত্তির মালিক ছিলেন। তার কোন কিছুরই অভাব ছিল না। কিন্তু তারপরও সেই যৌথ পরিবারে রঞ্জু বলতে গেলে অবাঞ্ছিতের মতই বড় হতে লাগলো। এরপর পাঠক ধীরে ধীরে বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে দিয়ে রঞ্জুর নানাবাড়ির বিভিন্ন চরিত্রের সাথে পরিচিত হবেন। এখানে রঞ্জুর ছেলেবেলার সাথী, তার লাজুক ভীতু নবু মামার কথা উঠে আসবে। তার খেয়ালী বাদশা মামার কথা উঠে আসবে। সেই বাদশাহ মামার অসাধারণ সুন্দরী, লাল টুকটুকে বউ এলাচির কথা উঠে আসবে। এলাচিকে রঞ্জু লাল মামী আর নবু মামা লাল ভাবী বলে ডাকতো। বাদশাহ মামার বিয়ের পর রঞ্জু আর নবু মামার মধ্যে সারাদিনই এক ধরনের প্রতিযোগিতা চলতো, লাল মামীকে কে বেশি খুশি করতে পারে তা নিয়ে। এরপর নবু মামা একদিন পড়াশোনার জন্যে রাজশাহী চলে গেল। নবু মামা রাজশাহী চলে যাবার পর রঞ্জুর সফুরা খালার চরিত্রটি উপন্যাসে প্রকাশ পেতে শুরু করে। সফুরা খালা রঞ্জুর চেয়ে এক বছরের বড়। খুব লাজুক মেয়ে, সারাদিন একা একা খেলাধুলা করে। কখনও আবার সন্ধ্যার সময় একা একা পুকুর পাড়ে গিয়ে বসে থাকে। রঞ্জুর ছোটবেলা থেকেই খুব শখ সফুরা খালার সাথে ভাব করার। নবু মামা চলে যাবার পর একসময় তার সফুরা খালার সাথে মোটামুটি ভাব হয়ে যায়। এদিকে নবু মামা এনট্রান্স পাশ করে যখন ফিরে আসলো তখন সে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক চরিত্র। সে আর কাউকেই পরোয়া করে না। কিন্তু তার সেই ছোটবেলার লাল মামীর প্রতি ভালোবাসা তখনই একই রকম রয়ে গেছে। বরং তাতে আরও মাদকতা, আরও উন্মাদনা যুক্ত হয়েছে। তারপর এক প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টির রাতে দেখা যায়, নবু মামা লাল মামীকে নিয়ে ঘরের দরোজা-জানালা লাগিয়ে দিয়ে গান শুনছে। কিন্তু একসময় সে গানও থেমে যায়। তাও নবু মামা আর তার ঘরে ফিরে আসে না। এ সময় বাদশাহ মামা বাড়ির বাহিরে ছিল। ঠিক সে সময়, সফুরা খালা নবু মামার খোঁজে রঞ্জুর কাছে আসে। কিন্তু নবু মামা, লাল ভাবীর সাথে শুনে সফুরা খালা বিদ্যুৎপৃষ্ঠের মত সে রাতে চলে গিয়েছিলো। রঞ্জুর বালক-মন তখন অত কিছু বুঝতে পারে নি। কিন্তু এর কিছুদিন পর দেখা গেল নবু মামা লাল মামীকে নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছে। তারপর একদিন, রঞ্জুর বোন লিলি রঞ্জুকে তার কাছে নিয়ে যাবার জন্যে চিঠি লিখলো। রঞ্জু তার ছেলেবেলার সমস্ত বন্ধন, আজন্ম স্মৃতিবিজড়িত নানার বাড়ি ছেড়ে এক অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রার প্রস্তুতি নিতে থাকলো। রঞ্জু অনুধাবন করলো, এতদিন সে যাদের আনন্দে আনন্দিত হয়েছে, যাদের দুঃখে দুঃখী হয়েছে তারা আসলে তার কেউ না। এ সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে, সব টান পিছে ফেলে তাকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ‘অচিনপুর’ উপন্যাসে হুমায়ূন আহমেদের বর্ণনা শক্তির অসাধারণ পরিচয় পাওয়া যায়। হুমায়ূন আহমেদ সাধারণত সংলাপ নির্ভর উপন্যাস লিখেন। কিন্তু এই উপন্যাসটি বর্ণনা নির্ভর। আর সে বর্ণনার ভঙ্গি এতটাই নির্মোহ যে, যখন তিনি গল্পের মধ্যে ফ্রয়েডীয় কামের ব্যাপার তুলে আনলেন তখনও পাঠক বিন্দুমাত্র বিচলিত হবেন না। বরং পাঠকের মনে হবে এটাই তো হওয়ার কথা ছিল। এই উপন্যাসে লেখক খুব সাবধানতার সাথে গ্রাম-বাংলার জীবনের প্রতিটি দিক ছুঁয়ে গিয়েছেন। এখানে গ্রামীণ জীবনে জীন-পরীর ব্যাপারগুলোকে কীভাবে দেখা হয় তা যেমন গল্পের অংশ হয়ে উঠে এসেছে, আবার পীর-ফকির বা বাণ মারার প্রসঙ্গও বাদ যায় নি। আবার গ্রামীণ প্রভাবশালী মানুষের অহংকার বোধ যেভাবে বিনয়ের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পেত তা রঞ্জুর নানার চরিত্রটির মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে। আর প্রতিটি দৃশ্যের বর্ণনা লেখক এত নিখুঁত আর বিস্তৃতভাবে দিয়েছেন যে, পাঠকমাত্রই চোখের সামনে ঘটনাগুলো দেখতে পাবেন। উপন্যাসের একদম শেষে দেখানো হয়, লাল মামী সব হারিয়ে একটি শিশু কন্যাকে নিয়ে আবার সেই বাড়িতেই ফিরে এসেছে। যে বাড়িতে বহু বছর আগে, ঠিক এরকমই নিঃস্ব অবস্থায় দু’সন্তানকে নিয়ে রঞ্জুর মা এসেছিলেন। এর মধ্যে দিয়ে যেন, লেখক একটি চক্র সম্পন্ন করলেন। আমাদের বাংলার আনাচে-কানাচে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, শত-সহস্র পরিবারে যে চক্র নিয়ত চলমান আছে। ‘অচিনপুর’ উপন্যাসটি নিঃসন্দেহে হুমায়ূন আহমেদের একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। এই মাপের একটি সৃষ্টিই একজন সাহিত্যিককে অমর করে রাখার জন্যে যথেষ্ট। এই উপন্যাসটি তার সময়ের সীমাকে অতিক্রম করেছে। এমনকি এই উপন্যাসের কিছু কিছু বিষয় শুধু বাঙালি জাতি বা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেই নয়, বরং যে কোন সমাজের জন্যেই সমানভাবে সত্য। ব্যক্তিগতভাবে আমার প্রথম পুরুষে লেখা উপন্যাস সব সময়ই পছন্দের। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বাংলা সাহিত্যে এই ধরনের উপন্যাস খুব কমই পাওয়া যায়। ‘অচিনপুর’ নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যে এই ঘরানার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। মহৎ সাহিত্যের রসাস্বাদনে আগ্রহী সকল পাঠকের জন্যেই এই উপন্যাসটি অবশ্যপাঠ্য।