User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
একুশে ও বাইশে ফেব্রুয়ারির (১৯৫২) দুটো দিন ঝোড়ো উদ্দামতা নিয়ে শেষ হয়। এর রেশ ঠিকই ধরা থাকে ২৩ ফেব্রুয়ারি শনিবারেও। চেহারাটা একই। ঢাকা শহরের রাজপথে ছাত্র-জনতার মিছিলের ঢল। শুধু ছাত্র এলাকা নয়, গোটা ঢাকা শহরই তখন মুক্ত এলাকা। ১৪৪ ধারার নিষেধাজ্ঞা মিছিল ও স্লোগানে কোথায় উড়ে গেছে তার ঠিকানা নেই। ঢাকার বাইরে জেলা বা মহকুমা শহরগুলোতে একুশ তারিখ থেকে চলছে টানা হরতাল, মিছিল, সভা-সমাবেশ। এমনকি গ্রামাঞ্চলে শিক্ষায়তনগুলোতেও ছাত্রসমাজের মিছিল, ধর্মঘটের প্রভাব। একুশে ফেব্রুয়ারি এভাবেই ‘একুশে’ হয়ে ওঠে, ছাত্রজনতার মনে ঠাঁই করে নেয়। ঢাকায় এদিনে (২২ ফেব্রুয়ারি) নতুন স্লোগান: ‘শহীদ স্মৃতি অমর হোক’। আর এই স্লোগানে ভর করে ২৩ ফেব্রুয়ারি (১৯৫২) দিনটি ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে থাকে শহীদ মিনারের দিন হিসেবে। অবশ্য সেই সঙ্গে নিত্যদিনের স্লোগান ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘রাজবন্দীদের মুক্তি চাই’, ‘রক্তের বদলে রক্ত চাই’, ‘খুনি নুরুল আমিনের বিচার চাই’, ‘১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করো’ ইত্যাদি তো আছেই। সেদিনও ঢাকা মিছিলের শহর। চলছে স্বতঃস্ফুর্ত হরতাল। শহরবাসীর মনে তাতে কোনো ক্ষোভ নেই; বরং আছে উত্সাহ। সাপ্তাাহিক ‘ইত্তেফাক’-এর বিবরণে দিনটির ছবি ধরা পড়েছে: ‘শনিবার শহরের সর্ব্বত্র পূর্ণ হরতাল, পূর্ণ বিক্ষোভ চলিতে থাকে। বহু মিলিটারি শহরের রাস্তাগুলি টহল দিতে থাকে। রেল কর্মচারীরা কাজে যোগদান করিতে অস্বীকার করায় সেখানেও গুলি চালানো হয়। হতাহতের সংখ্যাজনা যায় নাই। সেক্রেটারিয়েটসহ সকল অফিস আদালতে ধর্মঘট অব্যাহত থাকে। ব্যাংক, এয়ার অফিসগুলোও বন্ধ থাকে। রাত ৮টা হইতে ভোর ৫টা পর্যন্ত সান্ধ্য আইন প্রচলিত থাকে।’ এসবের পাশাপাশি একটি তাত্পর্যপূর্ণ খবর হলো অবস্থাদৃষ্টে পুলিশ বাহিনীর একাংশ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালাতে অস্বীকার করে। এমন ঘটনা দেখা গেছে একাত্তরে, দীর্ঘ সময় পর। ‘ইত্তেফাক’ রিপোর্ট-মতে, ‘বিভিন্ন মহলের খবরে প্রকাশ, ভাষা আন্দোলনকারীদের প্রতি গুলি চালাইতে অস্বীকার করায় পুলিশের এক অংশের অস্ত্র সিজ করা হইয়াছে। এবং একজন হাবিলদারসহ কয়েকজন পুলিশকে গ্রেফতার করা হইয়াছে’ (২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২)। এ খবর অবশ্য ‘আজাদ’ পত্রিকায়ও ছাপা হয়। আজাদ’-এ লেখা হয় ‘এই দিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা রেল ধর্মঘট’। উল্লেখযোগ্য এ কারণে যে রেলকর্মচারীদের একটি বড় অংশ উর্দুভাষী অবাঙালি হওয়া সত্ত্বেও তারা রেল চালাতে সাহস পায়নি। জনতার প্রতিবাদী চেহারা এর কারণ। ২৪ ফেব্রুয়ারি ‘আজাদ’ স্থানীয় খবর বিস্তারিতভাবে ছাপার পরও পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে। ‘ডন’ পত্রিকা এবার মত পাল্টায়, অর্থাত্ বাংলা রাষ্ট্রভাষার পক্ষে সমর্থন জানায়। অবশ্য উর্দুর পাশে বাংলা। অন্যদিকে পাকিস্তান সমাজতন্ত্রী দলের সাধারণ সম্পাদক ২৩ ফেব্রুয়ারি করাচিতে এক বিবৃতি প্রকাশ করে ঢাকার নিরস্ত্র ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণের তীব্র নিন্দা জানান এবং অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্তের আদেশ দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট আবেদন জানান (আজাদ)। একই দিনের খবরে প্রকাশ, লাহোরে বেশ কিছুসংখ্যক ছাত্র বাংলাকেঅন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবির প্রতি তাদের সমর্থন জ্ঞাপন করে। সেই সঙ্গে গুলিবর্ষণের নিন্দা। সম্ভবত এরা প্রগতিশীল ছাত্রসমাজের অন্তর্ভুক্ত। মওলানা ভাসানী ব্যক্তিগত এক দীর্ঘ বিবৃতিতে (ইত্তেফাক, ২৪ ফেব্রুয়ারি) মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিনকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, চরমপন্থা অবলম্বন করে ইতিহাসকে অস্বীকার করা যাবে না। অত্যাচার মানুষের বিক্ষোভ বাড়িয়ে তোলে, চাপা দিতে পারে না। তিনি পূর্বোক্ত দাবিসমূহ উল্লেখ করে এবং বাঙালি-অবাঙালি বিভেদ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘মাদের সংগ্রাম জুলুমের বিরুদ্ধে, শোষণের বিরুদ্ধে।’ ইতিমধ্যে আইনসভা থেকে পদত্যাগকারী সদস্যদের নিয়ে পরিষদ সদস্য শামসুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে এই প্রথম বিরোধী দলীয় (মুসলমানদের) পার্লামেন্টারি পার্টি গঠিত হয়। সুত্রঃ ইত্তেফাক
Was this review helpful to you?
or
ভাষা আন্দোলন নিয়ে ঘটনার শেষ নেই। ভাষা আন্দোলন নিজেই যেমন অঘটনঘটনপটীয়সী, তেমনি সময় যত গেছে, ভাষা আন্দোলন নিয়ে আমরা নিজেরাই বিতর্কের সৃষ্টি করেছি। আহমদ রফিক ব্যক্তিজীবনে চিকিৎসক হলেও একইসাথে তিনি কবি-প্রাবন্ধিক-গবেষক। একজন ভাষা সংগ্রামী হিসেবে সুপরিচিত। ছাত্র জীবনে তিনি বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। ১৯৫২ সালে মেডিকেল কলেজের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। পুলিশের বেষ্টনী ভেদ করে ঐতিহাসিক আমতলার জনসভায় ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগানে একাত্মতা ঘোষণা করেছিলেন। একুশে ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে অনেকে আহত এবং অনেকে শহীদ হন। তখনও তিনি সমাবেশের সম্মুখসারিতে থেকে প্রতিবাদে সোচ্চার ছিলেন। এই ভাষা সংগ্রামী মানুষটি তিলে তিলে সংরক্ষণ করেছেন ভাষার ইতিহাস। লিখেছেন একুশের উপাখ্যান। কষ্টসাধ্যে গড়ে তুলেছেন একুশের সংগঠন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছিল ভাষা আন্দোলনের সূতিকাগার, সেখানে গড়ে তুলেছিলেন ভাষা আন্দোলনের প্রথম জাদুঘর। এই কর্মচঞ্চল মানুষটি জীবনের নব্বইয়ের কোঠার দ্বারপ্রান্তে এসেও লিখে চলেছেন ভাষা আন্দোলনের নানা দিক নিয়ে। তার কর্মবহুল জীবনে লাভ করেছেন একুশের পদক সহ অনেক স্বীকৃতি ও পুরস্কার। ভাষা আন্দোলনের দুটো মাইলফলক। প্রথমটি ১৪৪ ধারা ভাঙা। ১৪৪ ধারা না ভাঙলে একুশে একুশ হতো না। দ্বিতীয়টা হলো, যদিও এটা অপ্রিয় কথা, ২১ তারিখ দুপুরে পুলিশ গুলিবর্ষণ না আন্দোলন এতটা তীব্রতা-এতটা ব্যাপকতা এবং গোটা প্রদেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়তো না। আমি ইতিহাস লিখতে গিয়ে ঢাকার বাইরে দেখেছি, সুদূর চাঁপাইনবাবগঞ্জ যেখানে কলেজ ছিল না, স্কুলের ছাত্ররা আন্দোলন করেছে। সেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে কক্সবাজার যেখানে কলেজ ছিল না স্কুল ছাত্ররা এবং পূর্ব দিকে গারো এলাকায়-হাজং এলাকায় সেখানেও ব্যাপক আন্দোলন বিস্তৃতি পেয়েছিল। শুধু এই খবর তারা শুনেছিল যে, পুলিশের গুলিতে ঢাকায় ছাত্র মারা গেছে। এই সংবাদ শুনে সাধারণ মানুষও আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ে। আবেগের আরেকটা উদারহরণ হলো, পুরোনো ঢাকার বাসিন্দারা যাদের আমরা ঢাকাইয়া বলি, তারা ৪৮ সালের আন্দোলনে প্রচণ্ড রকম বিরোধিতা করেছিল। কারণ তারা তো দোআশলা উর্দু ভাষায় কথা বলে অর্থাৎ উর্দু বাংলার মিশ্রণ ছিল তাদের ভাষা। তাদের কথা-বার্তায় বেশির ভাগ শব্দ ছিল বাংলা কিন্তু উর্দু মিশেল ছিল। তাদের বোঝানো হয়েছিল নবাব বাড়ি থেকে বিশেষ করে ঢাকার পঞ্চায়েতের সর্দাররা প্রচার করছিলেন যে, এই আন্দোলনের সঙ্গে হিন্দু আর ভারতের লোকেরা জড়িত। কিন্তু যখন পুলিশের গুলিতে ছাত্ররা মারা যায় তখন ঢাকাবাসীর দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয় এবং তারা আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠে। আমার অনেক বন্ধু, পুরোনো ঢাকা থেকে যারা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল, তারাও বলেছে আমাদের মুরুব্বিরা বলেছে, আরে ‘ছাত্র মাইরা হালাইছে’ (ওদের ভাষায় বলেছে)। ছাত্র মেরে ফেলেছে এটা একটা প্রবল আবেগ সৃষ্টি করেছিল। সেজন্য বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন একদিনের মধ্যে ঢাকায় গণআন্দোলনে পরিণত হয়।