User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
" নীল পাহাড় - ওবায়েদ হক " ওবায়েদ হক শব্দ দিয়ে নীল পাহাড়ের ছবি এঁকেছেন। ছবিরা খেলে, হাসে, কাঁদে, কখনো জীবনের কথা বলে। রক্ত দিয়ে অাঁকা পাহাড়ের রং নীল। নীল পাহাড়ে মানুষ থাকে না। সবুজ পাহাড়ে বাঙালি থাকে, পাহাড়িরা থাকে। মানুষে মানুষে মারামারি করে, দেবতার কাছে মানুষ বলি দেয়। কিন্তু কেও কখনো তুষ্ট হয় না। অামরা দেখতে যায়, ঘুরতে যায় ঐ নীল পাহাড়ের দেশে। অামাদের হয়তো ছুটিছাটায় ঘুরে বেড়ানোর খুব সখ। সাজেকের চুড়ায় উঠে নিশ্বাস নিতে ভালো লাগে। কিন্তু সাজেক গড়ে ওঠার রক্তাক্ত ইতিহাস কারো জানেন ইচ্ছে করে না। বুক ভরা নিশ্বাস নিতে ঐ পাহাড়ের দেশে ছুটে যায়। কিন্তু ঐ নীল পাহাড়ের চূড়ায় কি অাছে? ঐ পাহাড়ের রং তো সবুজ হওয়ার কথা ছিল, লাল হলুদ ফুলে রাঙার কথা ছিল। তাহলে ঐ পাহাড়টা এত নীল কেন? অাচ্চা অাপনি কি ঐ নীল পাহাড় দেখে বিমোহিত হন নাকি ওর কষ্টের কথা শুনতে পান? কি এমন কষ্ট অাছে ঐ পাহাড়ের, যে পাহাড়টা নীল হয়ে রয়েছে! ওবায়েদ হক ঐ নীল পাহাড়ের গল্প লিখেছেন। ১৯৮৪ সাল, আশির দশকের মাঝামাঝি সময়৷ এরশাদ সরকার ক্ষমতায়, পাহাড়ে চলছে ঝড়৷ সেই ঝড় কেড়ে নিচ্ছে মানুষের জীবন, যে জীবনের মালিক হয়তো কোনো বাঙালী নতুবা কোনো পাহাড়ি৷ কিন্তু সেই হিসাব রেখে লাভ নেই, কারণ মৃত্যুর পর কেউ বাঙালী বা পাহাড়ি থাকে না৷ বাস্তবে সেই ঝড় থামানোর কেউ ছিল না, উপন্যাসেও কেউ নেই৷ সেই ঝড়ের মাঝে একজন অভিযাত্রিক ডা. মানিক মিত্র৷ অভিযাত্রিকের অভিজ্ঞতাই ঔপন্যাসিক তুলে ধরেছেন পাঠকের সামনে৷ চালচুলো পরিচয়হীন এক যুবক বড় হয়ে উঠেছে অনাথ অাশ্রমে। যুদ্ধে পরিবার হারানো এক বাবুর সুনজরের দরুন পড়াশোনা করে অাজ ডাক্তার হয়েছে। এক উচ্চ পদস্থ ডাক্তারের বিরুদ্ধে শীলতাহানির অভিযোগে পিজি থেকে পোস্টিং হয় পার্বত্য চট্টগ্রামে। যার কেও নেই তার অাবার হারানোর ভয় কি! ব্যাগপ্যাগ গুছিয়ে ঐ দূর পাহাড়ের দেশে যায় মানিক। যেখানে বাঙালী পাহাড়ি মারামারি লেগেই অাছে। পাহাড়ের গভীর অরণ্য ভুলিয়ে দেয় মানিককে। পাহাড়কে, পাহাড়ের মানুষকে অাপন করে নেয় মানিক৷ পাহাড়কে বুঝতে হয় মন দিয়ে তাহলে পাহাড়ও দু'হাতে ভরে দেয়। মানিক বুঝেছিল পাহাড়কে। বিনিময়ে পাহাড় তাকে কি দিয়েছিলো? পাহাড় তাকে কিছু দেওয়ার অাগে পাহাড়িরা তাকে উপহার দিয়েছিলো। জিম্মি হয়ে গভীর অরণ্যে নিয়ে যায় মানিককে। অবশ্য জিম্মি দশায় থাকতে হয়নি, পাহাড়ি নেতাকে সুস্থ করে তুলতে হয়েছে। সেখানে থাকতে থাকতে পাহাড়কে খুব কাছ থেকে দেখেছে মানিক, দেখেছে পাহাড়ি মানুষের জীবনকে। যেখানের পুরুষেরা ঐ নীল পাহাড়ে কাজে যায়। বছরের শেষে পুরুষেরা ঘরে ফিরলে উৎসব হয়। কিন্তু সেখান থেকে পালিয়ে যায় মানিক, একা। অরণ্য সংকুল পথ, একা পথিক জীবনের উদ্দেশ্য কি তাঁর? কি ঘটে তার জীবনে? কি ঘটেছিলো পাহাড়িদের জীবনে? বই জুড়ে উপমার ছড়াছড়ি নেই, পাঠককে বিমোহিত করবে এমন কোন লাইন নেই, গল্পে প্রাণ নেই, গল্পের শেষে অতি নাটকীয়তা এবং অতি সংক্ষিপ্তকরণ কিন্তু বই জুড়ে কি যেন অাছে! কি যেন একটা বলতে চেয়েছেন লেখক। হয়তো জীবনের কথা, হয়তোবা পাহাড়ের কথা। যে কথা কেও শুনতে পায় না, যে কথা পাহাড়েরা বলতে পারে না! এই উপন্যাসকে বিচার করার ভার অামার নেই বস্তুত লেখক অামাকে দেয়নি। এই বইয়ের যথার্থতা বিচার করার ক্ষমতা একজন পাহাড়ির অাছে। যে জানে পাহাড়কে, যে জানে পাহাড়িদের, বস্তুত এই সামাজিক উপন্যাস একটা বাস্তব চিত্রকে চিত্রিত করেছে। চিত্রিত করেছে কেন পাহাড় অাজ ধ্বংসের মুখে অার কেনই বা পাহাড়িদের উন্নয়ন এখনো অধরা! লেখকের সাথে কখনো কথা বলার সুযোগ হলে বলতাম ৮০/৯০ পাতা লেখার পরে অাপনার কিসের এতো তাড়া ছিলো? পাহাড়ের বাকে চলতেছিলেন তো দেখেশুনে ধীরেধীরে তবে হটাৎ ভৌ-দৌড় দিলেন কেন? অার দৌড়াতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন একেদম সাঙ্গু নদীতে! এতো নাটকিয়তা, সংক্ষিপ্তকরণ অামি মানতে পারিনি। লেখক তরুণ কি বৃদ্ধ জানি না, তবে বলবো শেষটা ভালো করা যেত। অন্তত পাঠকদের জন্য। তবে একথা বলতেই হচ্ছে, এই বই ওবায়েদ হক পাঠে অামাকে অাগ্রহী করে তুলেছে এবং পরবর্তী পাঠের অপেক্ষার প্রহর গুনতে বাধ্য করছে।
Was this review helpful to you?
or
১৯৮৪ সাল! পিজি হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ডাক্তার মানিক মিত্র। তিনি সম্পূর্ণ নাম পরিচয়হীন ভাবে অনাথ আশ্রমে বড় হয়েছেন এবং সারাজীবন বাবা মায়ের পরিচয়ের জন্য মুখিয়ে ছিলেন। মানিক মিত্র ডাক্তার সোবহানের আন্ডারে কাজ করেন। ডাক্তার সোবহান মহিলা ডাক্তার-নার্সদের সব সময় উতক্ত করেন কিন্তু ডাক্তার সোহবান ক্ষমতাবান চিকিৎসক হওয়ায় চাকরী হারানোর ভয়ে কেউই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন না। সম্প্রতি এক বাচ্চা মেয়েকে এক্সামিন করার নাম করে রীতিমত ধর্ষণ করেন ডাক্তার সোবহান। ডাক্তার মানিক মিত্রই অবশেষে ডাক্তার সোবহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন কিন্তু শাস্তি যার পাওয়ার কথা সে পাওয়ার বদলে শাস্তি পান ডাক্তার মানিক মিত্র। ডাক্তার সোবহান তার ক্ষমতার প্রয়োগ করে ডাক্তার মানিক মিত্রকে বান্দরবানের থানচিতে ট্রান্সফারের ব্যবস্থা করেন। ডাক্তার বদরুল আলম পিজি হসপিটালের নতুন পরিচালক,তিনি ডাক্তার মানিকের জন্য যে কোনো কারণেই হোক মায়া অনুভব করেন এবং তার এক বাল্য বন্ধু এক সময়ের প্রখ্যাত ব্যবসায়ী শফিক সাহেবের সাহায্যে থানচিতে ডাক্তার মানিকের থাকার ব্যবস্থা করে দেন। মানিক মিত্র তার অনাথ আশ্রম, অনাথ আশ্রমের এক শিক্ষকের দেয়া বাড়ি এবং হসপিটাল সকল জায়গা থেকে বিদায় নিয়ে থানচিতে চলে যান। সেখানে গিয়ে তিনি শফিক সাহেবের সাথে দেখা করেন। শফিক সাহেবের বাড়িতে মানিক অস্বাভাবিক রকমের সুন্দর এক নীল পাহাড়ের ছবি দেখেন যা আরও রহস্যের সঞ্চার করে। শফিক সাহেব ডাক্তার মানিককে পাহাড়ের কূল ঘেষে একটা বাড়িতে বসবাস করতে দেন। ডাক্তার-নার্সদের অনাদরে অবহেলায় পড়ে থাকা বলিপাড়া সাবসেন্টারে কাজ শুরু করেন ডাক্তার মানিক মিত্র। বলিপাড়া এলাকায় মারমা এবং কিছু বাঙালিদের বসবাস। তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক যথেষ্ট খারাপ। বাঙালিরা তাদের পাহাড়ে এসে অধিকার খাটাতে চাচ্ছে এই ব্যাপারটি তারা মানতে পারতো না যেহেতু পাহাড়িরা শহড়ে গিয়ে বাঙালিদের নানা ব্যাঙ্গ বিদ্রুপের সম্মুখীন হতো। এই অপমানবোধ ছাড়াও আরও কিছু কারণে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংগঠন ছিল পাহাড়ি অঞ্চলে। পাহাড় বাহির থেকে যতটাই সুন্দর ভিতরে ততটাই ভয়াবহ! ডাক্তার মানিক মিত্র কিছুদিন থেকেই বুঝতে পারলেন যে মারমা গোষ্ঠী ডাক্তারি বিদ্যায় বিশ্বাসী নয়,বরং তারা কবিরাজ বৈদ্যদের উপর পরিপূর্ণ ভাবে নির্ভরশীল। অন্যদিকে মূর্খ বাংলিরা ডাক্তারের যোগ্যতাকে নিয়ে প্রশ্ন তোলে। যার কারণে সেখানে হসপিটাল অচল। কোনো এক ঘটনায় ডাক্তার মানিক মিত্রের প্রচেষ্টায় এক মারমা ছেলের জীবন রক্ষা হয়,তারপর থেকে হাসপাতাল মুখী হওয়া শুরু করে সবাই। এতে কবিরাজদের কমিশন থেকে বঞ্চিত হওয়া একদল মানুষ আরও কিছু প্রতিহিংসার জের ধরে মারমা পাড়া এবং মানিক মিত্রের ঘরে আগুণ ধরিয়ে পাহাড়ের শান্ত পরিবেশ উত্তপ্ত করে তুলে। সেই সময় ডাক্তার মানিক ক্রাসিমা নামক এক অতিব সুন্দরী মেয়েকে ভয়াবহ অবস্থা থেকে উদ্ধার করেন কিন্তু হঠাত করেই মেয়েটা নিখোঁজ হয়ে যায়! মারমা পরিবার গুলো যখন শোক কাটিয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হতে থাকে তখন ডাক্তার মানিক মিত্রের কাছে ঢাকা থেকে এক চিঠি আসে এই মর্মে যে তার মায়ের পরিচয় সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা গেছে। বহুদিনের প্রতিক্ষায় থাকা ডাক্তার মানিক মিত্র ব্যাকুল হয়ে উঠে মায়ের দেখা পাওয়ার অপেক্ষায়। মানিক মিত্র যেদিন ঢাকা যাওয়ার জন্য বাসের অপেক্ষায় দাড়ান সেখান এক মারমা এসে জানায় এক সিরিয়াস রোগীর ব্যাপারে এবং তাকে কষ্ট করে রোগী দেখে তারপর যাত্রা শুরু করার অনুরোধ জানায়। মানিক মিত্র রাজি হয়ে যান এবং সেখান থেকে তার পাহাড়ি জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়,এমন এক পথে অগ্রসর হন সেখানে পাহাড়ের সবটা সত্যি ঢাকা পড়ে আছে! রোগী দেখতে যাওয়ার পর কি হয়েছিল? ক্রাসিমার কি হয়েছিল? কি লুকিয়েছিল পাহাড়ের আরও গহীনে? মানিক মিত্র কি তার মায়ের দেখা পেয়েছিলেন? সবটা জানতে হলে উপন্যাসটি পড়তে হবে! "নীল পাহাড়" নামের পিছনে এক তীব্র সত্য লুকায়িত আছে যা উপন্যাসটিকে এক নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে।
Was this review helpful to you?
or
এটা ওবায়েদ হক রচিত প্রথম পঠিত বই। লেখক হিসেবে তিনি সুপরিচিত কিনা জানি না। তবে বইটি পড়ে অনেক ভাল লেগেছে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটা নৈতিক বিষয়ে লেখাটা উপস্থাপন করেছে।
Was this review helpful to you?
or
অনাথ আশ্রমে বড় হওয়া মানিক এ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র। পরবর্তী জীবনে ডাক্তার হওয়া মানিক অন্যায়ের প্রতিবাদ করার কারণে বদলী হয়ে যায় বান্দরবানের থানচিতে। আসল গল্প সেখানেই। পাহাড়ে মানুষের অবস্থা আসলে কি তার বাস্তব চিত্র লেখক দেখাতে চেয়েছেন। মুষ্টিমেয় মানুষের স্বার্থের জন্য বাঙালী-পাহাড়ি দ্বন্দ্বের যে স্বরূপ তা দেখিয়েছেন মানিককে কেন্দ্র করে একটি গল্প বানিয়ে। সে সঙ্গে লেখক তলে এনেছেন মুক্তিযুদ্ধ, হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক এমনকি মানিকের পরিচয়। বাস্তব আর আবেগ মিলিয়ে চমৎকার এক উপস্থাপনা। কখনও একটু নাটুকে লাগলেও বিষয়বস্তু আর আবেগের প্রতি লেখকের সততার কারণে বই শেষ করেও রেশ থেকে যায়।
Was this review helpful to you?
or
বই-নীল পাহাড় লেখক-ওবায়েদ হক প্রকাশনী-কাকলী প্রকাশনী মূল্য-১৫০ পৃষ্ঠা-১১২ সময়টা আশির দশকের মাঝামাঝিতে৷ রাজনৈতিক ঝড়ে দেশের তখন ঝিমিয়ে পড়া ভাব। কিন্তু পাহাড়ী এলাকার চিত্র ভিন্ন। সেখানে নিত্যদিন চলছে খুন, গুম, হত্যা ধর্ষণ, হিংসা; পাহাড়ী এলাকার মারমা জাতীর সঙ্গে বাঙালি পাহাড়ীদের সংঘাত, বিদ্বেষ। সেখানে জীবন এক দূর্বোধ্য শব্দ। পদে পদে মৃত্যুর হাতছানি! সে সময় সরকারী কর্মাচারীদের কোন কারণে শাস্তি দেয়া হতো পাহাড়ী এলাকায় পোস্টিং দিয়ে। কেউই টিকে থাকতে পারতো না। কারো কারো ভবলীলা সেখানেই সাঙ্গ হতো। ম্যালেরিয়া কিংবা সাপের ধংশন অথবা বন্য শুকরের হিংস্রতা থেকে বাঁচতে পারলেও উগ্রপন্থী বেয়াড়া সংগঠনগুলোর আঠালো থাবা থেকে বাঁচা সম্ভব ছিলো না! নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেই ঢাকার অনাথ আশ্রমে বড় হওয়া মানিক মিত্রকে নিয়তি পাহাড়ী এলাকায় আছড়ে ফেলে। ঢাকার পিজি হসপিটাল থেকে এখানে ওকে পোস্টিং দেয়া হয়। পাহাড়ীদের মনে একটা ধারণা বদ্ধমূল ছিলো, ডাক্তাররা অশিক্ষিত। তাদের দ্বারা সেবা শুশ্রূষা চলে না। তাদের ঔষধ-পথ্য বরং মানুষের মৃত্যু ডেকে আনে। বৈদ্য-সাধকদের ঝার-ফুঁক, দেবতার চরণে প্রসাধ বিসর্জনই একমাত্র ঔষধ। এখানে কোন ডাক্তার আসলে তাকে তারা খেদিয়ে ছাড়ে, কিংবা খুন করে পাঠা বলি দিয়ে লোকজনের মাঝে তার গোস্ত বিতরণ করে! এমন প্রতিকূল পরিবেশের সাথে মানিক নিজের জীবনকে বেধে নেয়। এখানে এসে মানিক দেখতে পায়, কাঙ্খিত-অনাঙ্খিত বহু ঘটণা। দেখতে পায়, শফিক সাহেবের আঁকা নীল পাহাড়। মানিক এই নীল পাহাড়ের রহস্য উদঘাটন করতে থাকে জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে। ক্রাশিমা, মাংতো, কাজাচাই, খায়াচিং, কাংসাই, থাইনুপ্রু উল্লেখযোগ্য কিছু চরিত্র। কোন মানুষটি কোন চরিত্রে, কে কতটুকু হিংস্র, কে কতটুকু সভ্য তা জানতে হলে পাঠককে বইটি অবশ্যই পড়তে হবে। সবশেষে লেখকের লেখনশৈলীর মুন্সিয়ানায় মুগ্ধ হয়েছি, বিস্মিত হয়েছি তাঁর উপমা বর্ণনায়, তাঁর শব্দজ্ঞানে বিমোহিত হয়েছি। লেখকের জন্য শুভ কামনা। ভিন্নধর্মী, ইন্টারেস্টিং একটি গল্পের জন্য পাঠক বইটি অবশ্যই পড়ুন। সময় বৃথা যাবে না। পৃথিবী বইয়ের হোক ❤
Was this review helpful to you?
or
বই: নীল পাহাড় লেখক: ওবায়েদ হক কিছু কথা: "নীল পাহাড়" দুটো শব্দই মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। নামটা যেমন রোমাঞ্চকর তেমনি লোমহর্ষকর।পাহাড় বরাবরই মানুষের ভালোলাগার জায়গা।পাহড়কে কে না ভালোবাসে? পাহাড়কে ভালোবাসে বলেই মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে পাহাড়ের কাছে ছুটে যায়।পাহাড়ও কাউকে ফেরায় না,তার নিজের উদরে আপন করে নেয়।আমিও পাহাড়ে গিয়েছিলাম।তবে বান্দরবানের পাহাড়ে কখনো যাওয়া হয়নি। লেখক ওবায়েদ হকও যাননি।তবে তার শৈশব কেটেছে চাকমাদের সাথে।অর্থাৎ পাহাড়িদের সম্পর্কে তিনি অনেক কিছুই জানেন।আর সেই সুবাদেই হয়তো তিনি পাহাড়কে নিবিড়ভাবে ভালোবাসতে পেরেছেন।আর তার এই ভালোবাসা অত্যন্ত সুনিপুনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তার প্রথম বই নীল পাহাড় বইটিতে। এবার আসি মূল প্রসঙ্গে, অনাথ আশ্রমে বেড়ে উঠা বালক মানিক মিত্র, বাবা-মা হারা অসহায় নিঃস্ব একা পথচলা এই মানিক মিত্রের জীবন।তার জীবনের শ্রেষ্ঠ না পাওয়ার একটি হচ্ছে তার মা।সে কখনও তার মা'কে দেখেনি।মা মানুষটা কেমন হয় সে জানেনা।তাইতো তার সমস্ত আবেগ-অনুভূতি আর হতাশার জায়গা এই মা শব্দটা।শ্লেট -চকের খোঁচায় উঠে আসে মা।অত্যন্ত মায়া আর যত্ন নিয়ে সে তার মায়ের নাম লেখে।তার সমস্ত আকুলতা তার মা'কে ঘিরে।ছোটবেলার বন্ধু কার্তিকের মা'কে দেখে সে ঈর্ষাকাতর হয়।তাইতো একসময় সে কার্তিককে বলেও ফেলে তার পাতের ডালটুকুর বিনিময়ে যেন তার মা'কে দিয়ে দেয়।ভাবতে পারেন কতটা হাহাকার থাকলে কোন মানুষ এরকম বলতে পারে?মা যেন তার কাছে আরাধ্য বস্তু হয়ে ওঠে। সে পড়াশোনায় যেমন মেধাবী ছিলো,তেমনি তার বোধবুদ্ধি, আত্মসম্মানবোধ।তার একটি-ই পরিচয়, সে একজন ডাক্তার।সৎ নিষ্ঠাবান একজন ডাক্তার মানিক মিত্র।কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস বড়ই কঠিন।মানিক তার এক ঊর্ধতন অসাধু সহকর্মীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় তাকে শাস্তিস্বরূপ পোস্টিং দেয়া হয় পাহাড়ের এক অজপাড়াগায়ে।সময়টা ছিলো আশির দশকের মাঝামাঝি সময়।ভয়,আতঙ্ক,উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে সেখানে।খুন,হত্যা,অপহরণ, ধর্ষণ এসব যেন সেখানকার নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে উঠেছে।সেখানে বাঙালি আর পাহাড়িদের মধ্যে চলছে তুমুল লড়াই।সে কিছু উগ্রপন্থী সংগঠনের রাহাজানির হিংসার মুখোমুখি হয়ে যায়।অপরদিকে সে পাহাড়ের কোল বেয়ে আসা গভীর অরণ্য ও সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে যায়।কিন্তু ওই উঁচু উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড় কেন নীল হয়ে আছে? কি আছে দূরের ওই নীল পাহাড়ের পেছনের রহস্য?নীল পাহাড়ের রহস্য তাকে অভিভুত করে।একইসাথে সে পাহাড়ের ওই সহজ-সরল মানুষগুলোকেও আপন করে নেয়।এবং মানিকের সেবা আর তার নিষ্ঠার গুণে তারাও মানিককে ভালোবেসে ফেলে।পাহাড়ের সাথে তার সখ্যতা হয়ে যায়।সে নিজেকে পাহাড়ের সন্তান ভাবতে শুরু করে। অন্যদিকে পাহাড়ের সবথেকে সুন্দরী আধুনিকা শিক্ষিতা মেয়ে ক্রাসিমা,যাকে সবাই পাহাড়ি মেয়ে বলে ডাকে।সেই ক্রাসিমা একসময় মানিকের মনে জায়গা করে নেয়।দুজন দুজনকে পছন্দ করতে শুরু করে। কিন্তু এই গোপন অনুরাগের ব্যপ্তি কোথায়? পাহাড়েরই এক ধর্ষিতা মেয়ে উম,তার গর্ভের বাচ্চাকে বাঁচানোর জন্য মানিকের সাহায্য চায়।কিন্তু সে কি করবে?কি করার আছে তার? একসময় অনাথ আশ্রমের চন্দন কুমারের একটি চিঠি মানিকের জীবনের সবচেয়ে কঠিন সত্যটা প্রকাশ করে।মানিক যেন তার জীবনের সেরা মানিক খুঁজে পায়।সে প্রস্তুত হয় ঢাকায় ফিরে যাওয়ার জন্য।কিন্তু তাকে অপহরণ করা হয়।তার পথ অবরুদ্ধ করে দেয়া হয়।কিন্তু মানিক এক মুহূর্তের জন্যও হাল ছাড়েনা।সে হারতে পারে না,কারণ এখনো অনেক কিছু দেখার বাকি আছে তার,উমের বাচ্চাটাকে একবার হলেও কোলে নিতে চায় সে,এবং মৃত্যুর আগে একবার হলেও মাথায় মায়ের স্পর্শ চায়। তার এই ইচ্ছে কি সে পূর্ণ করতে পারবে শেষ পর্যন্ত? পাঠ প্রতিক্রিয়া: বোধহয় এই প্রথম একটি বই যে বইটা পড়ে আমি কি রিভিউ লিখবো বা কিভাবে বইটা পড়ার অনুভূতি প্রকাশ করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।আমি যেন বোঝা না বোঝার দোলাচলে দুলছি।কি লেখা যায় এই বই নিয়ে?কিভাবে লিখলে আমার মনের ভাব প্রকাশ করতে পারবো?এই বইয়ের জন্য যা-ই বলবো সবই যেন কম বলা হবে।আমার ভালোলাগা প্রকাশ করার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা। ছোট্ট একটা বই। অথচ কি নেই বইটিতে?সামাজিক, রাজনৈতিক, রহস্য সবরকম স্বাদই পাবেন বইটিতে।তবে বেসিক কোন ঘরনাতে ফেলতে পারবেন না।সবকিছুকে ছাড়িয়ে লেখক তার মত করে এক ভিন্নধর্মী লেখা উপহার দিয়েছেন পাঠককে। "বইয়ের শেষ পৃষ্ঠা উল্টিয়ে লেখকের পরিচয় পাওয়া সম্ভব নয়।লেখক যুবক নাকি বৃদ্ধ,শিক্ষিত নাকি অশিক্ষিত, ধনী নাকি গরীব এগুলো অপ্রাসঙ্গিক। লেখকের পরিচয় পাওয়া যাবে প্রথম এবং শেষ পৃষ্ঠার মাঝের পৃষ্ঠাগুলোতে"। উপরের এই কথাগুলো অক্ষরে অক্ষরে সত্যি।লেখককে জানতে হলে বইয়ের প্রথম এবং শেষ পৃষ্ঠার মাঝামাঝি পৃষ্ঠাগুলোতে কি আছে তা পড়তেই হবে।লেখক সত্যিই জাদু জানে।এখন বুঝতে পারছি কেন সবাই ওবায়েদ হকের কথা বলতেই অজ্ঞান।লেখক তার জাদুকরী লেখার জাদুতে পাঠককে বশ করতে জানে।এতে কোনই সন্দেহ নেই।এরকম বই সবধরনের পাঠকের জন্যই উপদেয় খাদ্য।এই বই যে-ই পড়বে সেই এই লেখকের লেখার প্রেমে পরতে বাধ্য।আমিতো বটেই।আমার কথা আর আলাদা করে বলার কিছু নেই।যাই হোক,যারা এই বই পড়েননি তারা বইটা পড়ে ফেলতে পারেন।আমি শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারি এই বই পড়ে কেউ নিরাশ হবেন না আশাকরি।বরঞ্চ লেখকের প্রেমে পড়তে বাধ্য হবেন।
Was this review helpful to you?
or
"নীল পাহাড়" দুটো শব্দই মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। নামটা যেমন রোমাঞ্চকর তেমনি লোমহর্ষকর।পাহাড় বরাবরই মানুষের ভালোলাগার জায়গা।পাহড়কে কে না ভালোবাসে? পাহাড়কে ভালোবাসে বলেই মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে পাহাড়ের কাছে ছুটে যায়।পাহাড়ও কাউকে ফেরায় না,তার নিজের উদরে আপন করে নেয়।আমিও পাহাড়ে গিয়েছিলাম।তবে বান্দরবানের পাহাড়ে কখনো যাওয়া হয়নি। কিন্তু ওবায়েদ হক গিয়েছিলেন।অবশ্য গিয়েছিলেন বললে ভুল হবে,তার শৈশব কেটেছে পাহাড়ে।তাইতো তিনি পাহাড়কে নিবিড়ভাবে ভালোবেসেছেন।আর তার এই ভালোবাসা অত্যন্ত সুনিপুনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তার প্রথম বই নীল পাহাড় বইটিতে। এবার আসি মূল প্রসঙ্গে, অনাথ আশ্রমে বেড়ে উঠা বালক মানিক মিত্র, বাবা-মা হারা অসহায় নিঃস্ব একা পথচলা এই মানিক মিত্রের জীবন।তার জীবনের শ্রেষ্ঠ না পাওয়ার একটি হচ্ছে তার মা।সে কখনও তার মা'কে দেখেনি।মা মানুষটা কেমন হয় সে জানেনা।তাইতো তার সমস্ত আবেগ-অনুভূতি আর হতাশার জায়গা এই মা শব্দটা।শ্লেট -চকের খোঁচায় উঠে আসে মা।অত্যন্ত মায়া আর যত্ন নিয়ে সে তার মায়ের নাম লেখে।তার সমস্ত আকুলতা তার মা'কে ঘিরে।ছোটবেলার বন্ধু কার্তিকের মা'কে দেখে সে ঈর্ষাকাতর হয়।তাইতো একসময় সে কার্তিককে বলেও ফেলে তার পাতের ডালটুকুর বিনিময়ে যেন তার মা'কে দিয়ে দেয়।ভাবতে পারেন কতটা হাহাকার থাকলে কোন মানুষ এরকম বলতে পারে?মা যেন তার কাছে আরাধ্য বস্তু হয়ে ওঠে। সে পড়াশোনায় যেমন মেধাবী ছিলো,তেমনি তার বোধবুদ্ধি, আত্মসম্মানবোধ।তার একটি-ই পরিচয়, সে একজন ডাক্তার।সৎ নিষ্ঠাবান একজন ডাক্তার মানিক মিত্র।কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস বড়ই কঠিন।মানিক তার এক ঊর্ধতন অসাধু সহকর্মীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় তাকে শাস্তিস্বরূপ পোস্টিং দেয়া হয় পাহাড়ের এক অজপাড়াগায়ে।সময়টা ছিলো আশির দশকের মাঝামাঝি সময়।ভয়,আতঙ্ক,উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে সেখানে।খুন,হত্যা,অপহরণ, ধর্ষণ এসব যেন সেখানকার নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে উঠেছে।সেখানে বাঙালি আর পাহাড়িদের মধ্যে চলছে তুমুল লড়াই।সে কিছু উগ্রপন্থী সংগঠনের রাহাজানির হিংসার মুখোমুখি হয়ে যায়।অপরদিকে সে পাহাড়ের কোল বেয়ে আসা গভীর অরণ্য ও সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে যায়।কিন্তু ওই উঁচু উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড় কেন নীল হয়ে আছে? কি আছে দূরের ওই নীল পাহাড়ের পেছনের রহস্য?নীল পাহাড়ের রহস্য তাকে অভিভুত করে।একইসাথে সে পাহাড়ের ওই সহজ-সরল মানুষগুলোকেও আপন করে নেয়।এবং মানিকের সেবা আর তার নিষ্ঠার গুণে তারাও মানিককে ভালোবেসে ফেলে।পাহাড়ের সাথে তার সখ্যতা হয়ে যায়।সে নিজেকে পাহাড়ের সন্তান ভাবতে শুরু করে। অন্যদিকে পাহাড়ের সবথেকে সুন্দরী আধুনিকা শিক্ষিতা মেয়ে ক্রাসিমা,যাকে সবাই পাহাড়ি মেয়ে বলে ডাকে।সেই ক্রাসিমা একসময় মানিকের মনে জায়গা করে নেয়।দুজন দুজনকে পছন্দ করতে শুরু করে। কিন্তু এই গোপন অনুরাগের ব্যপ্তি কোথায়? পাহাড়েরই এক ধর্ষিতা মেয়ে উম,তার গর্ভের বাচ্চাকে বাঁচানোর জন্য মানিকের সাহায্য চায়।কিন্তু সে কি করবে?কি করার আছে তার? একসময় অনাথ আশ্রমের চন্দন কুমারের একটি চিঠি মানিকের জীবনের সবচেয়ে কঠিন সত্যটা প্রকাশ করে।মানিক যেন তার জীবনের সেরা মানিক খুঁজে পায়।সে প্রস্তুত হয় ঢাকায় ফিরে যাওয়ার জন্য।কিন্তু তাকে অপহরণ করা হয়।তার পথ অবরুদ্ধ করে দেয়া হয়।কিন্তু মানিক এক মুহূর্তের জন্যও হাল ছাড়েনা।সে হারতে পারে না,কারণ এখনো অনেক কিছু দেখার বাকি আছে তার,উমের বাচ্চাটাকে একবার হলেও কোলে নিতে চায় সে,এবং মৃত্যুর আগে একবার হলেও মাথায় মায়ের স্পর্শ চায়। তার এই ইচ্ছে কি সে পূর্ণ করতে পারবে শেষ পর্যন্ত?
Was this review helpful to you?
or
পাহাড়ে গিয়েছেন কখনও? কখনও পাহাড়ি রাস্তা পায়ে হেটে পাড়ি দিয়েছেন? পাহাড়ের উপর দিয়ে বয়ে চলা নদী দেখে নিজের মনে হারিয়ে গিয়েছেন কখনও? আশির দশকের মাঝামাঝি সময়। দেশ রাজনৈতিক উত্তেজনার ঝড় উঠার আগে ঝিমিয়ে পড়েছে, কিন্তু পাহাড়ে অবস্থা বিপরীত। ভয়, আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে সেখানে। খুন, হত্যা, অপহরণ, ধর্ষন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। পাহাড়ী বাঙ্গালিদের দ্বন্দ্ব তখন চরমে। সরকারি কর্মকর্তাদের শাস্তি দেয়া হত পাহাড়ে পোস্টিং দিয়ে। সে শাস্তি মৃত্যুদন্ডের চেয়ে কম ছিলো না। ম্যালেরিয়া কিংবা সাপের দংশন থেকে বেঁচে গেলেও উগ্রপন্থী সংগঠনগুলো থেকে বাঁচার উপায় ছিলো না। অনেকে চাকরিই ছেড়ে দিত। ঠিক সেসময় অনাথ আশ্রমে বড় হওয়া ডাক্তার মানিক মিত্রের পোস্টিং হয় বান্দরবানের দুর্গম এলাকায়। তার জীবনে আবর্তিত হতে থাকে অনেক কাঙ্খিত এবং অনাকাঙ্খিত ঘটনা। সে মুখোমুখি হয় সত্যের, হিংসার, ঘৃনার, ভালোবাসার, মৃত্যুর এবং নীল পাহাড়ের। ➖➖➖ নীল পাহাড় (হার্ডকভার) লেখকঃ ওবায়েদ হক মুদ্রিত মূল্য : ৳ ১৬০
Was this review helpful to you?
or
অনাথ আশ্রমে মানুষ মানিক মিত্র। নিজের বাবা-মায়ের পরিচয় জানেনা সে তাই প্রায়শই দ্বিধা-দ্বন্দে ভোগে। অনাথ মানিক পড়াশোনা করে হয়ে উঠে ডাক্তার মানিক মিত্র। এ মানিক মিত্র অন্যায় আর অসঙ্গতির ঘোরতর বিরোধী। পিজি হাসপাতালে তার সিনিয়র কর্তার অশালীন কর্মের বিরুদ্ধে কথা বলায় সে প্রভাবশালী ডাক্তার তাকে বান্দরবানে ট্রান্সফার করিয়ে দেয়। উল্লেখ্যে,ঘটনার প্রেক্ষাপট স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশের (মুক্তিযুদ্ধের একটি বিশেষ দিককে প্রাসঙ্গিক ভাবে কাহিনীতে এনেছেন যা বেশ আবেগময়)আশির দশক যখন পাহাড় বেশ উত্তপ্ত, পাহাড়ি আর বাঙালি সংঘর্ষ সেখানকার নিত্যকার বিষয়। মানিক ডাক্তার ঢাকায় তার নিজের বাড়ি (দানে করেছেন আরেকজন) , তার একদা ভিক্ষুক বন্ধুর হাতে দিয়ে বান্দরবানে পাড়ি জমান ।সেখানে তার পরিচয় হয় শফিক সাহেব নামক বাঙালি সমাজকর্মীর যদিও শফিক সাহেবের সমাজকর্ম লোকে পছন্দ করে না।এই ধনী শফিক সাহেব আবার বেশ ভালো আঁকেন(যার প্রমাণ চমৎকার একটি পাহাড়ের চিত্র, যার রঙ নীল ও আরো একটি ছবি )। শফিক সাহেবের এক কর্মচারী বরকত বেশ উগ্রবাদী এবং নানা খারাপকর্মে সিদ্ধহস্ত। যাইহোক,মহাউৎসাহী ডাক্তারবাবু পাহাড়িদের ওপর বাঙালিদের নগ্নভাবে কারণহীন আক্রমণ প্রত্যক্ষ করেন যা পাহাড়ি আর বাঙালি সম্প্রীতির অন্তরায়। একনিষ্ঠ ডাক্তার তার কর্মনিপুণতায় পাহাড়িদের বিশ্বাস অর্জন করেন এবং ঘটনাক্রমে পরিচিত হয় সেখানকার সবচে' সুন্দরী এবং শিক্ষিত ক্রাসিমার সাথে। ঘটনাক্রমে ডাক্তার কে অপহরন করে একদল উগ্রবাদী পাহাড়ি তাদের নেতার পায়ের চিকিৎসার জন্য। সেখানে গিয়ে মানিক বাবু দেখেন ক্রাসিমা কে (রোগিকেও দেখেন) । ঘটনাক্রমে দেখা যায় সেই পাহাড়ি নেতা সৎ সাজলেও তিনি অসৎ কিন্তু কীভাবে তা প্রমাণ হয়? (জানতে বইটা পড়তে হবে)। যেহেতু ঘটনাক্রমে ক্রাসিমা এখানে সেহেতু ঘটনাক্রমে একে ওপরের ওপর ক্রাশ খান কিন্তু মিলন হবে তো? মানিক ডাক্তার বাঁচবে তো? সে কী কখনও তার মা-বাবার পরিচয় জানতে পারবে? এসব প্রশ্নের উত্তর ই টুইস্ট আর নামকরণের যথার্থতা রয়েছে বলে মনে হয়েছে। ৩ তারকার বেশি দিতে অপারগ কেননা- ঘটনাক্রমে ঘটনা এ বইতে অনেক বেশি ঘটেছে যা আমার কিঞ্চিত অযৌক্তিক মনে হয়েছে। আবেগের বাড়াবাড়ি ছিলো চোখে পড়ার মতো। সাহিত্য ইতিহাস নয় মানি, লেখকের নিজের লেখার খাতিরে ইতিহাসের গণেশ কে উল্টিয়ে ব্যবহারের স্বাধীনতা আছে তাও মানি। কিন্তু বইতে একপাক্ষিক ইতিহাসের উপস্থাপনা কাম্য নয়। বিশেষত, বাঙালি-অবাঙালি দ্বন্দের বিষয়টির দায়ভার লেখক স্রেফ বাঙালিদের ওপর দিয়ে সটকে পড়েছেন যা অপইতিহাসের দৃষ্টান্ত। ওভারঅল,লেখার স্টাইলে ভালো ই গতি ছিলো। ঔপন্যাসিকের বর্ণনা শক্তির প্রশংসা না করলেই নয়।
Was this review helpful to you?
or
Mind blowing❤❤❤
Was this review helpful to you?
or
বই রিভিউঃ নীল পাহাড়। লেখকঃ ওবায়েদ হক। ধরনঃ উপন্যাস। প্রকাশনীঃ কাকলী। মুদ্রিত মূল্যঃ ১৫০ টাকা। ব্যাক্তিগত রেটিং: ৪.৭/৫ ডাঃ মানিক মিত্র। অনাথ আশ্রমে বেড়ে ওঠা এক সৎ নিষ্ঠাবান ডাক্তার। এই দুনিয়ায় তার কেউ নেই। তাই হয়তো তার আশেপাশের সবাইকেই আপন মনে করে ভালোবাসে। সে জানে না তার বাবা মা কে। নিজের পরিচয় জানার আকুতি নিয়ে সর্বদা ঘুরে বেড়ায়। নীতি আর আদর্শে পরিপূর্ণ এই মানুষটি অন্যায়ের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদী। সিনিয়র এক রাজনৈতিক ক্ষমতাশালী কর্মকর্তার অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তাকে তার সর্বোচ্চ শাস্তি স্বরূপ বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার বলীপুর নামক এক প্রত্যন্ত, নির্জন পাহাড়ি অঞ্চলে বদলী করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আশির দশকের মাঝামাঝি সময় তখন পাহাড়ি আর বাঙালীদের দ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে। প্রায়ই তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। দুদলেরই মানুষ মারা যায় সেই সংঘর্ষ গুলোতে। কখনো বাঙালিরা রাতের অন্ধকারে নিরীহ জুম চাষী পাহাড়িদের ওপর আক্রমণ করে ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে যায়,লুটপাট, ধর্ষণ চালায় তো কখনো পাহাড়িরা সরকারি অফিসার দের অপহরণ করে নিয়ে যায়। আর কিছুদিন পর তাদের মস্তক বিহীন লাশ ভেসে উঠে সাঙ্গু নদীতে।খুন,ধর্ষণ, গুম তখন পাহাড়ের নিত্যদিনের ঘটনা।পাহাড়ি উগ্রপন্থী সংগঠন গুলিও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। বিডিআর দের সাথে প্রায়ই তাদের বন্দুকযুদ্ধ হয়। সেসময় পাহাড়ে বদলী হয়ে এসে এসব প্রতিকুলতার মাঝখানে পরে যায় মানিক। সেখানে সে দেখে বাঙালীদের ওপর অবিশ্বাসী আর হিংস্রাত্বক কিছু পাহাড়িদের। তার সাথে দেখা মেলে বাঙালি উগ্র সাম্প্রদায়িকতা সম্পন্ন নিম্নমানের চিন্তাভাবনা সম্পন্ন মানুষের। এসব প্রতিকুলতার মাঝেও মানিকের মন পাগল হয়ে খুঁজে বেড়ায় তার পরিচয়! তার নিজের মায়ের অস্তিত্ব। এতোকিছুর মাঝেও মানিকের জীবনে প্রেম হয়ে আসে পাহাড়ি কন্যা ক্রাসিমা। ক্রাসিমা হঠাৎ করে যেমন মানিকের জীবনে উদয় হয়েছিল ঠিক তেমনই হঠাৎ করেই হারিয়ে যায়। কিন্তু মানিকের মনের মধ্যে দাগ কেটে দিয়ে যায় সে। এভাবেই নিত্যনতুন প্রতিকুলতার বিরুদ্ধে লড়তে থাকা মানিকের কাছে হঠাৎই ঢাকা থেকে এক চিঠি এসে পৌছায়। চিঠি পড়ার সাথে সাথেই সেখানে ছুটি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে চলে যেতে চায় মানিক। কিন্তু বাসে ওঠার আগ মুহূর্তেই অপহৃত হয়ে যায় ডাঃ মানিক মিত্র। এই অপহরনকারীদের কাছ থেকে কিভাবে উদ্ধার পাবে মানিক? তারা কি চায় মানিকের কাছে? আর সেই চিঠিতেই বা কি ছিলো যা পড়েই মানিক ঢাকা যাবার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছিলো? পাঠ পতিক্রিয়াঃ গ্রুপে অনেকদিন ধরেই ওবায়েদ হককে নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। সেই আলোচনা দেখেই উনার বইগুলো পড়ার ইচ্ছা জাগে। নীল পাহাড় আমার পড়া ওবায়েদ হকের দ্বিতীয় বই। বইটা পড়ে এতোটাই মুগ্ধ হয়েছি যে বলে বোঝানো যাবে না। বইটির প্রথম অধ্যায় পড়েই কুপোকাত হয়ে গেছিলাম। শেষ না করে আর উঠতেই পারিনি। ১১১ পৃষ্ঠার একটা বইয়ে লেখক মুক্তিযুদ্ধের কথা,সেসময়ের পরের অস্থির রাজনৈতিক অবস্থা, পাহাড়ি বাঙালী দাঙ্গা সুনিপুণ ভাবে বর্ণনা করে গেছেন।গল্পটি পড়ার সময় মনে হচ্ছিলো কোনো সত্য ঘটনাই যেনো পড়ছি আমি। নীল পাহাড় ডাঃ মানিক মিত্র চরিত্রকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠলেও এই উপন্যাসের কাহিনী আরো পরিপূর্ণ করেছে ক্রাসিমা, বাচ্চাহারা এক পাগল মা উথাই,খাংচাই এবং আরেক পাহাড়ি সৎ বিপ্লবী মংতো। বইটা পড়তে গিয়ে কোথাও হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে গেছে তো আবার কোথাও নিজের অজান্তেই চোখের কোণে জল এসে ভীড় জমিয়েছে। সবশেষে বলবো অসাধারন একটা বই। যারা এখনো পড়েন নি তারা বইটা সংগ্রহ করে হাতে ২/৩ ঘন্টা সময় নিয়ে বসে পড়ুন। ভালো লাগবে আশাকরি।
Was this review helpful to you?
or
গল্পটা আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ের। যে সময়ে পাহাড়ি এবং বাঙ্গালীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে, প্রতিনিয়ত তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, বাঙ্গালীরা রাতের অন্ধকারে পাহাড়ি জুম চাষিদের উপর হামলা চালায়, তাদের ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়, লুটপাট করে, পাহাড়ী মেয়েদের ধর্ষনের পর হত্যা করে, তাদেরকে তাদের গ্রাম থেকে উচ্ছেদ করে। প্রতিনিয়তই মানুষ প্রান হারায় এসব সংঘর্ষে। কখনও বাঙ্গালী প্রান হারায়, কখনও বা পাহাড়ি। আবার এসবের পর পাহাড়িরাও থেমে থাকে না, তারাও সরকারী অফিসারদের অপহরন করে নিয়ে যায়। এবং এর কিছুদিন পরই মাথা বিহীন লাশ সাঙ্গু নদীতে ভেসে ওঠে। সময়টা এমন যে বাঙ্গালী ও পাহাড়িদের মধ্যে হামলা, খুন, ধর্ষণ, লুটপাট তখন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে৷ এসবের মাঝে পাহাড়ি উগ্রপন্থী সংঘঠনগুলোও মাথা নাড়া দিয়ে উঠেছে। মাঝে মাঝেই তাদের সাথে বিডিআর দের সাথে বন্দুক যুদ্ধ হয়। এই উপন্যাসের গল্পটা গড়ে উঠেছে কেন্দ্রীয় চরিত্র মানিক মিত্রকে ঘিরে৷ মানিক মিত্র ঢাকার একটি অনাথ আশ্রমে বেড়ে ওঠা মেধাবী, সৎ এবং নিষ্ঠাবান ডাক্তার। সে জানে না কে তার বাবা, আর কে ই বা তার মা। কি তার পরিচয় সেটা জানার আকুতি নিয়ে সর্বদা ঘোরে সে। ডাক্তারী পাশ করার পর তিনি ঢাকা পিজি হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন এবং তার উপরস্থ এক ক্ষমতাশীল ডাক্তারের বিরুদ্ধে কথা বলার অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি স্বরুপ তাকে ট্রান্সফার করা হয় বান্দরবানের থানচি উপজেলার বলিপাড়া ইউনিয়নের সাবসেন্টারে। যে যায়গাটা ছিল খুবই বিপদজনক একটা জায়গা। প্রথমত পাহাড়ি অঞ্চল, দ্বিতীয়ত পাহাড়ি বিভিন্ন উগ্রপন্থীদের সাথে বাঙ্গালীদের সংঘর্ষ। আর যদি হয় সরকারী কর্মকর্তা তাহলে তো কিছুদিন বাদেই অপহরন তার কিছুদিন পর সাঙ্গু নদীতে গলাকাটা লাশ ভেসে আসা। ওই সাবসেন্টারে যে সকল চিকিৎসক ই এসেছেন তারা কখনও বেশি দিন টিকতে পারেনি৷ এবং যেখানে মানিক মিত্র চিকিৎসা সেবা দিতে এসেছেন সেখানে চিকিৎসার জন্য কেউ সাবসেন্টারে আরে না। সেখানকার মানুষজন অাধুনিক চিকিৎসাকে মোটেও বিশ্বাস করে না। তারা এখনও ধর্মীয় বিভিন্ন কুসংস্কারে বিশ্বাসী ছিলো। এবং মানিক মিত্র বাঙ্গালী হওয়াতে যেন মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে ওঠেছিল। পাহাড়ি মানুষগুলো মানিক মিত্রের থেকে যাওয়াকে বাঙ্গালীদের একটা ষড়যন্ত্র ভেবে নিয়েছিল৷ কিন্তু মানিক মিত্র একসময় পাহাড়িদের আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল এবং পাহাড়িদের বিশ্বাস অর্জনের সক্ষম হন, হয়ে ওঠেন তাদের নিকট বিশ্বস্ত। এর পরেও বিভিন্ন প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয় তাকে। এতো প্রতিকূলতার মাঝেও মানিকের জীবনে প্রেম আসে। তার জীবনে হঠাৎ করেই আসে ক্রাসিমা নামে এক পাহাড়ি কন্যা। হঠাৎ করে যেমন ক্রাসিমা মানিকের জীবনে এসেছিল ঠিক সেভাবেই হঠাৎ করেই ক্রাসিমা হারিয়ে যায় পাহাড়ের নীল সবুজের মাঝে। কিন্তু ক্রাসিমা মানিকের মনে দাগ কেটে যায় খুব গভীর ভাবে। সবমিলিয়ে মোটামুটিভাবে ভালোই চলছিলো মানিক মিত্রের দিনকাল, এর মাঝে হঠাৎ করেই একদিন মানিকের কাছে একটি চিঠি আসে ঢাকার সেই অনাথ আশ্রম থেকে আর সেই চিঠি পড়ার পর থেকেই মানিক মিত্র ব্যাকুল হয়ে ওঠেন ঢাকায় ফেরার জন্য। এর ঢাকা ফেরার পথেই তিনি অপহরণের স্বিকার হন একদল পাহাড়ি উগ্রপন্থীদের হাতে। সেখান থেকেই উপন্যাসের ঘটনা চিত্র মোর নেয় অন্য দিকে। এবং এই ঘটনার পরই সে মুখোমুখি হয় গভীর অরন্য, মৃত্য, সত্য, হিংসা, ক্রাসিমার ভালোবাসা, ও নীল পাহাড় এবং নীল পাহাড়ের রহস্যের সাথে।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বই-নীল পাহাড় লেখক-ওবায়েদ হক ধরন-উপন্যাস পৃষ্ঠা-১১১ মূল্য-১৫০ প্রকাশনী-বিদ্যানন্দন নীল পাহাড়ের গল্প। আশ্রমে বড় হওয়া এক অনাথ বালক মানিক। প্রতিনিয়ত মমতাময়ী মাকে খুঁজে বেড়ায়। একটা ছায়ার অভাব বোধ করে সব সময়। পৃথিবীতে রক্তের কোন আত্মীয় আছে কিনা জানা নেই তার। এতিম বা অনাথ হয়েও ছোট বেলা থেকেই মেধাবী মানিক শিক্ষার একেকটা ধাপ পেড়িয়ে পৌছে যায় তার স্বপ্ন চূড়ায়। এবং প্রতিষ্ঠিত হয় একজন ডাক্তার হিসেবে। নাম হয় ডাঃ মানিক মিত্র। উপন্যাসের নায়ক চরিত্র ডাঃ মানিক মিত্র নম্র, ভদ্র, সাহায্যকারী এবং সকলের প্রিয় পাত্র। পেশায় ডাক্তার হবার পরও তার মধ্যে কোন প্রকার অহমিকা কাজ করে না। একজন সৎ মানুষ হিসেবে অন্যায়কে সে কখনই প্রশ্রয় দেয় না। সর্বদায় শান্তিপ্রিয় হলেও অন্যায়ের সাথে আপোশ ডাক্তার মিত্র কখনই করেন না। আর এখানেই উপন্যাসে বিপত্তি। ডাঃ মিত্রের সিনিয়র ডাঃ সোবহানের সাহেবের সাথে কিছু ঝামেলা হয়। আর আমাদের সমাজ তো এমনি, যার ক্ষমতার জোর আছে , সে আর কোন কিছুতেই তোয়াক্কা করে না। মানিক তো এতিম, আশ্রমে বড় হয়েছে। তার পিছনে লাঠি নিয়ে দাড়াবার মতো কেউ নেই। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগালেন সোবহান সাহেব। নিজের প্রতিপত্তির জোরে, ঝামেলার কারনে এক চান্সেই মানিক কে টান্সফার করে দেন চট্টগ্রামে থানাচি তে। নীল পাহাড়ের কাছে। ডাঃ মানিকের সাথে লেখকও আ পাঠক হিসেবপ আমাদের নিয়ে যান সেখানে। আশির দশকের কিছু পরের সময়। তখনো যুদ্ধের শ্বাস পুরো মুছে যায়নি দেশ থেকে। চলছে এরশাদের শাসনামল। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সব সময়ই অস্থিতিশীল বিরাজ করে। সে সময়ও এসবের থেকে আলাদা কিছু নয়। তবুও কিছুটা স্থিমিত ভাব এসেছে। কিন্তু সে সময়ের পাহাড়ের অবস্থা পুরোই বিপরীত। খুন, হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় ভয় আর আতংক বিরাজ করছে সেখানে । পাহাড়ী আর বাঙ্গালিদের মধ্যকার দ্বন্দ্বও চলছে পুরোদমে । আর এ প্রতিকূল অবস্থায় বাহির থেকে একটা মানুষ এখানে এসে জীবন যাপন করা আর মৃত্যু সনদ হাতে নিয়ে বসে থাকা একই কথা।পাহাড়ের এই পাদদেশ থেকে কোন ক্রমে ম্যালেরিয়া বা সাপের দংশন থেকে বেঁচে গেলেও সেখান কার উগ্রপন্থী সংগঠনগুলোর থেকে বাঁচার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। এই মৃত্যুপুরীতে মানিক মিত্রের আগমনই উপন্যাসের মূল প্লট। আর এখান থেকে উপন্যাস এবং মানিক মিত্রের জীবনে আবর্তিত হ একের পর এক কাঙ্ক্ষিত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা গুলোর বর্ণনাই হলো নীল পাহাড়ের জমিন। আর সেখানে ডাঃ মিত্রকে একেক সময় হতে হয়েছে মৃত্যুর মুখোমুখি। কখনো বা সত্যের, কখনো বা হিংসার, ঘৃণার, কখনো বা ভালোবাসার। পুরোপুরি ভিন্নধর্মী প্লটের গল্প এই নীল পাহাড়। পাহাড়ের বর্ণনা তো আছেই । সেই সাথে আছে লেখকের শৈল্পিকতা।আমি ভেবেই পাইনা কি বলে প্রশংসা করা উচিৎ।"নীল পাহাড়ে এমন কিছু আছে, পাঠক খুব সহজেই এ স্বাদটা ভুলতে পারবে না। মনের অজান্তে হলেও একটা ভালো লাগা ডুবে থাকবে। উপন্যাসের কাহিনী, চরিত্র চিত্রণ, লেখকের লেখনী এ তিন দিক থেকেই বইটি অসাধারণ। পাতার ভাঁজে এমন কিছু লেখা ছিলো, আমি চোখ ভরা জল নিয়ে তাকিয়েছি, " মা এসেছিল একদিন কালো স্লেটে, ‘ম’ এর সাথে ‘আ’ কার দিয়ে মা হয়েছিল।" বাচ্চা একটা ছেলের মায়ের ভালোবাসার জন্য কি গভীর আকুতি! "আমার কালি সব মায়ের নামেই ঢেলে দিতাম। ক্লাসে লেখার জন্য কালি থাকতো না।" কি বলব আমি! লেখক কত সুন্দর করেই না ফুটিয়ে তুলেছেন! লেখা আমার কাছে সবসময় চিত্রপট। আমি বই পড়ি না, বইয়ে কালো অক্ষরের ছাপে ছবি দেখি। প্রতিটি চরিত্র আর তার নামের সাথে মিলিয়ে এঁকে নিই হাত পা, তার মুখ। যে মুখের অভিব্যক্তি বুঝিয়ে দেয় লেখক যা বলতে চান। এতিম খানায় বড় হওয়া মানিক , এই ম আর আকার (া) দিয়ে একজন মায়া মমতায় পরিপূর্ন একজন মাকে খুজে গেছে নিরন্তন। আমি অবাক হয়ে দেখেছি তার ব্যাথিত মুখ!সত্যিই অসাধারণ। পুরো বইটিতে ছিলো, একজন মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই। জীবনের সব গুলো অনুভূতি সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, পাওয়া-না পাওয়া, হতাশা সব কিছুই ঘিরে থাকে এই বেঁচে থাকার লাড়াই-এ । যার সবটুকুই লেখক তুলে এনেছেন তার শৈল্পিকতায়। “নীল পাহাড়” লেখকের প্রথম উপন্যাস হওয়া সত্বেও তার কাহিনী বুনট, ঘটনা প্রবাহ সাজিয়েছেন চমৎকার ভাবে। যাতে কোন ফাঁক ফোকড় নেই। উপন্যাসের নায়ক মানিক তার অনাথ আশ্রমে বড় হওয়ার সময় তার শৈশবের দিনগুলো খুব বেশি স্পর্শকাতর করে তুলেছে। তাছাড়া উপন্যাসে যেমন আছে মমতাময়ী মায়ের জন্য বাচ্চার অভাব।।তেমনি আছে নিজ সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসার চিত্র। যেহেতু "নীল পাহাড়" মুক্তিযুদ্ধের কিছু দিন পরবর্তী সময়ের লেখা তবুও সেখানে পাকবাহিনী বর্বরতা বা মুক্তিযুদ্ধের কিঞ্চিত ছাপ থেকে গেছে।আনন্দ এবং যন্ত্রণা দুটোর উপস্থিতি ছিলো পুরোপুরি। আবার কোথাও কোথাও আবেগ ধরে রাখা একেবারেই কঠিন হয়ে গেছে। একদিকে যেমন চিত্রিত হয়েছে ভালবাসা, বন্ধুত্ব, মমতা, আর প্রেম।তার অপর দিকে রয়েছে হিংস্র চিত্র ক্ষমতার জোর, নিজের স্বার্থের জন্য মানুষের ক্ষতি,বিশ্বাসঘাতকতা। কিছু নিস্বার্থ মানুষের চরিত্র যেমন আছে, তার বিপরীতে স্বার্থন্বেষী ঘৃণিত কিছু চরিত্রও আছে। নীল পাহাড় বইটির কাকলী প্রকাশনী থেকে প্রথম মুদ্রণ শেষ হয়ে যাওয়ায়। বইটি পিডিএফ এ ফ্রি তে ছেড়ে দেয়া হয়। তারপরও বইটি দ্বিতীয় বারের মতো প্রকাশ হয়েছে 'বিদ্যানন্দ' থেকে। রেটিং- ৪.৫/৫ রকমারি লিংক- https://www.rokomari.com/book/93374/নীল-পাহাড়
Was this review helpful to you?
or
"বইয়ের শেষ পৃষ্ঠা উল্টিয়ে লেখকের পরিচয় পাওয়া সম্ভব নয়।লেখক যুবক নাকি বৃদ্ধ,শিক্ষিত নাকি অশিক্ষিত,ধনী নাকি গরীব এগুলো অপ্রাসঙ্গিক। লেখকের পরিচয় পাওয়া যাবে প্রথম ও শেষ পৃষ্ঠার মাঝের পৃষ্ঠাগুলোতে।কালো কালো হরফের লেখাগুলোকে লেখক সন্তান মনে করেন।সন্তানের পিতা হিসেবেই তিনি পরিচিত হতে চান।" লেখক পরিচিতে লিখা উপরের অংশটুকু অদ্ভুত না?আসলেই অদ্ভুত।যা পড়ে মনের মাঝে এক অজানা প্রশান্তি কাজ করে।জন্ম নেয় অসীম শ্রদ্ধা,গ্রাস করে মুগ্ধতা। কত অমায়িক এই কথাগুলি, তাইনা? হ্যাঁ,ঠিক এই কথাগুলির মতোই অমায়িক আর নম্র এক ছেলের গল্প এটি।আমাদের নীল পাহাড় এর নায়ক সে।সে কি শুধু নীল পাহাড় এর নায়ক?না! সমগ্র সমাজের এক জ্বলন্ত প্রতিচ্ছবি সে।যে কিনা অন্যায় এর বিরুদ্ধে লড়াইরত এক অস্ত্র। নাম তার মানিক।মানিক মিত্র।উঁহু অনাথ আশ্রমে বেড়ে ওঠা পরিচয়হীন ছেলেটি এখন আর মানিক মিত্র নয়।তার হাহাকার ময় অপ্রাপ্তির জীবনের এই পর্যায়ে নামের সাথে যোগ হয়েছে সামাজিক মর্যাদাময় এক পদবী।সে এখন ডাঃমানিক মিত্র। কিন্তু নামের এই পদমর্যাদা তার আচরণে সত্ত্বায় জন্ম দেয়নি কোন অহংকার। চিরকাল একা একা বেড়ে ওঠা নম্র,বিনয়ী,মেধাবী মানিক এখনো দিব্যি তেমনি আছে।মা বাবা হীন,এমনকি পরিচয়হীন অনাথ আশ্রমে বেড়ে ওঠা এই ছেলের মেধার কারণে এবং সুধীর দত্ত নামের এক মহান মানুষ এর পৃষ্ঠপোষকতায় মানিক হতে পেরেছে সবচেয়ে মানবিক এক পেশার অধিকারী ডাক্তার মানিক। মানিক এর চারপাশে এক অভেদ্য প্রাচীর।যে প্রাচীর ভেদের জন্য মরীয়া মানিক নিজেই।কিন্তু ব্যর্থ সে।কোন এক অজ্ঞাত কারণে কোন কিছুকে অতি আপন করতে পারেনা সে।সেই মানিক কি পারবে পাহাড় কে আপন করে নিতে?দুর্নীতিময় সমাজ ব্যবস্থায় এক অন্যায়ের প্রতিবাদের প্রাপ্য স্বরূপ মানিক এর পোস্টিং দেয়া হয় বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায়। নীল পাহাড়-আচ্ছা পাহাড় কি কখনো নীল হয়?তবে উপন্যাস এর নাম নীল পাহাড় কেন?সার্থকতা অবশ্যই আছে।তার জন্য পড়তে হবে শেষ অবধি। কিন্তু মানিক পারে পাহাড়কে আপন করে নিতে।আশির দশকের মাঝামাঝি সেই সময়টাতে পাহাড়ি এলাকা তখন এক ভয়ানক অবস্থায় নিমজ্জিত। পাহাড়ি বাঙালিদের দ্বন্দ্ব তখন চরমে।খুন,হত্যা,অপহরণ,ধর্ষণ নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।ন্যায় অন্যায়ের দোলকে দুলায়িত তখন পাহাড় এর কোল! এই অবস্থায় মানিক এর স্থান হয় সেই পাহাড়ে।নিজের আত্মা দিয়ে আপন করে নেয় মানিক সেই পাহাড়কে।কিন্তু তারপর? চিরকাল বয়ে আসা মানিকের শান্ত জীবনে কি কোন ঢেউ আসে?যদি এসেও থাকে,মানিক কি পারবে তা সামলাতে? পুরো সময় অসাধারণ মুগ্ধতা নিয়ে পড়েছি পুরো বই।কী নেই এতে?পাহাড়ি জীবনের এক প্রতিচ্ছবি এই নীল পাহাড়। দেখা মেলে মানুষ এর বর্বরতার,পরক্ষণেই প্রতীয়মান হয় স্নেহ ভালবাসার নিদর্শন।লেখক এর বর্ণনা ভঙ্গি পাঠককে ব্যক্তিগত মোহে আটকে ফেলবে।কিছু বাক্য পড়ে থমকে যেতে হয়।হিসেবনিকেশ করতে হয় দু'মিনিট জীবনের খাতায় চুপচাপ। কিছু অসঙ্গতির প্রকাশে ব্যবহৃত রম্য টাইপ এর কথাগুলি আনন্দ দিতে বাধ্য। উপন্যাস এর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চরিত্র ডাঃবদরুল আলম,পাহাড়ি কন্যা ক্রাসিমা,মানিক এর আশ্রমের বন্ধু কার্তিক,শফিক সাহেব,বরকত আলী নামের অসভ্য লোক এবং আরো অনেকে।সুন্দর প্রচ্ছদ। সর্বোপরি নীল পাহাড় মনের মাঝে নীল রং এর খেলা খেলতে সক্ষম।ঠিক যেমন সাদা কাপড়ে ব্যবহৃত নীল এর আভা কাপড় এর সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে।আবার যে নীল এর আধিক্য নষ্ট করে দেয় কাপড় এর মৌলিক চেহারাকে! নীল পাহাড় এক জীবনবোধের প্রতিচ্ছবি। লেখক এর জন্য রইলো অসীম শ্রদ্ধা আর শুভকামনা।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_ প্রতিযোগিতা বইয়ের নামঃ নীল পাহাড় লেখকঃ ওবায়েদ হক প্রচ্ছদঃ মেজর এমরান প্রকাশনীঃ কাকলী প্রকাশনী পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১১২ প্রকাশকালঃ ২০১৫ মূল্যঃ ১৫০ টাকা রেটিং:৫/৫ পাঠ প্রতিক্রিয়া- . হলিউডের স্বনামখ্যাত অভিনেতা টম হ্যাংক্স এর একটি মুভি "Forrest gump " এ একটি ডায়ালগ আছে। " "Life is like a box of chocolates. You never know what you're gonna get."নীল পাহাড় বইটি ঠিক তেমন। বই এর পেছনের কভার এর লিখা পড়ে আপনি তখনো বুঝতে পারবেন্না,আপনি কত অসাধারণ একটি বই পড়তে চলেছেন।এটা এমন এক বই যেখানে রয়েছে দুঃখ-কস্ট,রোমাঞ্চ,কান্না,বাস্তবতা,হাহাকার।বইটিকে আমি ঠিক কোন জনরার মধ্যে ফেলব তা আমি ভেবে পাইনা।কখনো কেঁদেছি, কখনো শিহরিত হয়েছি। কখনো মনে হয়েছে বইটির ধরণ সামাজিক, কখনো বা থ্রিলার, কখনো বা জীবনবোধ।সবকিছুর এক অপূর্ব সমন্বয়, যা আমাকে এক বসায় প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে শেষ করতে বাধ্য করেছে। লেখক তাঁর পরিচয় সম্পর্কে লিখেছেন, বইয়ের শুরু এবং শেষ পাতার মাঝের পৃষ্ঠাগুলোতেই লেখকের পরিচয় পাওয়া যাবে।সত্যি ই তো।"নীল পাহাড়"বইটি পড়ার সাথে সাথে লেখকের সাথে আমার জানাশোনা হয়ে গেল। শুনেছি, লেখকের প্রিয় লেখক মানিক বন্দোপাধ্যায়। "নীল পাহাড়ের" গল্পটি একজন ডাক্তারের,যার নাম মানিক মিত্র।যার জীবনে রয়েছে অনেক কস্টের অতীত আর বর্তমান।তবুও সে অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেনা ।অনাথ আশ্রমে বড় হওয়া মানিকের জীবনে রয়েছে মা বাবার জন্য তীব্র হাহাকার আর অনেক মানুষের ভালবাসা।ঘটনাচক্রে ডাক্তার মানিক মিত্র এসে পৌছুলো বান্দরবানে।যেখানে এসে সে মুখোমুখি হল এক অজানা সত্যের আর নীল পাহাড়ের।চমৎকার লেখনশৈলী আর বাস্তবতার মিশেলে সৃষ্ট "নীল পাহাড়" দেশীয় সাহিত্যে এক অতিবিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে বলে আমি মনে করি।আশা করি, বইটি যেকোন ধরণের পাঠকের ভাল লাগবে :)
Was this review helpful to you?
or
বইটা পড়া শেষে কতক্ষণ ঝিম মেরে বসে ছিলাম... কনটেম্পোরারি লেখকদের মধ্যে উনার লেখা 'জলেশ্বরী' , 'তেইল্যা চোর' এই দুইটা বই পড়ে মুগ্ধ হয়ে ছিলাম। আজ উনার লেখা তৃতীয় কোন বই পড়লাম। আমার ব্যাপারটা অনেকটা এমন, যখন যেটা ভাল লাগে, ক্রমাগত করতে থাকি, করতেই থাকি! এই লেখকের বইয়ের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনি হয়েছে। অনাথ আশ্রমে বড় হওয়া এক ডাক্তারের পাহাড়ে যাওয়া, এরপরে বিভিন্ন কাহিনী নিয়ে বইটা। পাহাড়ের মানুষদের সরলতা যেমন ফুটে উঠেছে , ঠিক তেমনি সেই সরলতাকে পুঁজি করে কিছু ক্ষমতা ও অর্থলোভী মানুষের লিপ্সার কাহিনী। কি করে ডাক্তার নিজের আত্মপরিচয় ফিরে পান, কি করে ক্রাসিমার জীবন সংগ্রামে এগিয়ে যাওয়া, থুইনুপ্রুরার ভালো মানুষের পোশাকে অবৈধ ব্যবসা... সুন্দর, সাবলীল বর্ণনা। গল্পের শেষ পাতা পর্যন্ত পাঠকের আগ্রহ ধরে রাখতে পেরেছেন লেখক। সবমিলিয়ে দারুণ একটা বই!
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইয়ের নামঃ নীল পাহাড় লেখকঃ ওবায়েদ হক প্রচ্ছদঃ মেজর এমরান প্রকাশনীঃ কাকলী প্রকাশনী পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১১২ প্রকাশকালঃ ২০১৫ মূল্যঃ ১৫০ টাকা এক বাক্যেঃ সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, পাওয়া-না পাওয়া, বিশ্বাস, ছল, ভালোবাসাগুলোকে নিয়ে মানুষের বেঁচে থাকার লড়াইকে এক ফ্রেমে সুন্দর করেই সাজিয়েছেন লেখক। জীবনের সাথে থ্রিলটাও এই উপন্যাসে স্থান করে নিয়েছে। কাহিনি সংক্ষেপঃ সময়কাল আশি দশকের বাংলাদেশ। মানিক মিত্র নামে অনাথ আশ্রমে বড় হওয়া একজন মানুষের জীবনের একটা অংশের ঘটনা প্রবাহ নিয়ে উপন্যাসের পটভূমি। অনাথ আশ্রমের অনেকের বাবা নেই, মা আছে; কারো আবার মা নেই বাবা আছে। কিন্তু গল্পের নায়ক মানিক মিত্রের আপনজন বলতে ধরাআধমে আদৌ কেউ আছেন কিনা তা সে অজ্ঞাত। পেশায় সে একজন ডাক্তার। কারো সাতে পাঁচে না থাকা নির্ঝঞ্ঝাট মানুষ ড. মানিক মিত্র পেশাগত কারণে তারই হাসপাতালে কর্মরত জেষ্ঠ্য চিকিৎসক ডাঃ সোবাহান সাহেবের সাথে দ্বন্দ্বে জরিয়ে পরেন। এই দ্বন্দ্বের জের ধরে তাকে বদলি হতে হয় বান্দরবানের পাহাড়ি অঞ্চলে। বলে রাখা ভালো আশির দশকে পাহাড় একটা বিভিষিকার নাম; উপন্যাসে এই চিত্রটা পাঠকের চোখে পড়বে। মানিক মিত্রের বদলি পরবর্তী সময়ে তার সাথে এবং তার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নিয়েই উপন্যাসের ঘটনা গড়াতে থাকে। পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ প্রথমে বলে রাখি, লেখক ওবায়েদ হকের লেখনির সাথে প্রথম পরিচয় ঘটে "তেইল্যা চোরা" নামক মুক্তিযুদ্ধের একটি উপন্যাসের মাধ্যমে। আমার মতে “নীল পাহাড়” উপন্যাসের ঘটনা প্রবাহকে উপন্যাসিক ওবায়েদ হক খুব সুন্দর করে সাজিয়েছেন তার লেখনি শক্তির মন্ত্রে। মূল ঘটনা পাহাড়ি আদিবাসিদের নিয়ে হলেও, শুরুটা নায়ক মানিক মিত্রকে নিয়ে। অনাথ আশ্রমে বড় হওয়া মানিক মিত্রের শৈশবের দিনগুলো উপন্যাসিক যথেষ্ট কৌশল এবং পারদর্শীতার সাথে তুলে ধরেছেন। সেই সময়ের বর্ণনা করতে গিয়ে একটা আবেগ ঘণ মুহুর্তের তৈরি হয়েছে। অনাথ আশ্রমে শিশু মানিক মিত্রের মনে মায়ের জন্য যে শূন্যতা, যে আকুতি তা খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন। "মা এসেছিল একদিন কালো শ্লেটে। 'ম'-এর সাথে 'আ'-কার দিয়ে মা হয়েছিল", কিম্বা "খাওয়ার সময় আমার ডাল আমি তোকেই দিব, তুই তোর মা দিস", "আমার কালি সব মায়ের নামেই ঢেলে দিতাম। ক্লাসে লেখার জন্য কালি থাকতো না।" এই উক্তিগুলো উপন্যাসিকের কলমের ধার সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। উপন্যাসের এই ধাপটাকে স্পর্শক করে তুলেছে মায়ের জন্য একজন শিশুর আর্তি। ..... শুধু মায়ের জন্য শিশুর আর্তিই নয়, নিজ সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসার চিত্রও বাদ যায়নি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের আংশিক চিত্রায়ন। মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধে শহীদ এবং স্বজন হারানো মানুষগুলো প্রতি লেখকের হৃদয়ের অভুন্তরে থাকা ভালোবাসা ও আলাদা একটা কৃতজ্ঞতাবোধের স্থানের উপস্থিতি প্রমাণ করে। "তেইল্যা চোরা" উপন্যাসটি সম্পূর্ণ মহান মুক্তিযুদ্ধের প্লটে লেখা হলেও "নীল পাহাড়" মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময় আশির দশক কেন্দ্র করে লেখা। কিন্তু সেখানেও ছোঁয়া আছে মুক্তিযুদ্ধের, যা উপন্যাসের ক্ষেত্রে অসঙ্গতিমূলক বা অবাঞ্ছিত মনে হয় না। বরং এই অংশটুকু যেন ভীতটাকে আরও শক্ত করেছে। যুদ্ধকালীন সময়ে পাক বাহিনীর এদেশীয় দোসরদের ঘৃণ্য কৃতকর্মের যে চিত্রটি এই উপন্যাসে রয়েছে তা ঐসকল পিশাচগুলোর বর্বরোচিত কর্মের একটা খণ্ডচিত্র। মানিক মিত্রকে অনাথ আশ্রম থেকে এনে যে মানুষটি আশ্রয় দিয়েছিলেন, সেই সুধিরবাবুর পরিবারের সাথে ঘটে যাওয়া নিষ্ঠুরতম ঘটনাটি পড়ে মনের কোন আপনাআপনিই ঘৃণার জন্ম নেয় ঘৃণ্য ঐ সকল মানুষরূপী পশুদের প্রতি; ঝাপসা হয়ে আসে চোখ। সুখদুঃখ, হাসিকান্না, ভালোবাসা, বিদ্বেষ প্রতিটি উপদানের ছোট ছোট উপস্থিতি। এই সংমিশ্রণের ক্ষেত্রে প্রতিটি উপদানেরই যেন সুষম বণ্টন নিশ্চিত করেছেন লেখক। বইটি পড়তে গিয়ে যেমন আবেগে আপ্লুত হয়ে চোখে জল ছল ছল করে, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে, তেমনি একটা অংশে বর্ণিত চারপাশের মানুষগুলোর কিছু কর্মকান্ডেডের রসাত্মক বর্ণনা হাসিয়েছেও। ভালবাসা, বন্ধুত্ব, মমতা, সাহায্যের হাত, কামনা আছে, তারই পাশাপাশি আছে ক্ষমতার অপব্যবহার, অন্যকে ঠকানো, বিশ্বাসঘাতকতা, নিজ স্বার্থ হাসিলে জঘন্য কিছু মানুষ। পৃথিবী মানুষের প্রতি মানুষের নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসা, সহায়তা, মমতার নিদর্শন হিসেবে আছেন সুধিরবাবু। তেমনি আছে শফিক সাহেব, বরকত আলি, থুইনুপ্রুর মত স্বার্থান্নেসী কিছু মানুষ যারা নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য বিপদে ফেলছে অপরকে, তৈরি করছে মানুষে মানুষে বিবাদ। উপন্যাসটির সময়কাল ও শুরুটা পড়ে এটিকে রাজনৈতিক উপন্যাস মনে হলেও এটি মূলত রাজনৈতিক উপন্যাস নয়। লেখক নিজেও এটি উল্লেখ করে দিয়েছেন যাতে কোন বিভ্রান্তির জন্ম না হয়।
Was this review helpful to you?
or
কিছু কথা: "নীল পাহাড়" দুটো শব্দই মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। নামটা যেমন রোমাঞ্চকর তেমনি লোমহর্ষকর।পাহাড় বরাবরই মানুষের ভালোলাগার জায়গা।পাহড়কে কে না ভালোবাসে? পাহাড়কে ভালোবাসে বলেই মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে পাহাড়ের কাছে ছুটে যায়।পাহাড়ও কাউকে ফেরায় না,তার নিজের উদরে আপন করে নেয়।আমিও পাহাড়ে গিয়েছিলাম।তবে বান্দরবনের পাহাড়ে কখনো যাওয়া হয়নি। লেখক ওবায়েদ হকও যাননি।তবে তার শৈশব কেটেছে চাকমাদের সাথে।অর্থাৎ পাহাড়িদের সম্পর্কে তিনি অনেক কিছুই জানেন।আর সেই সুবাদেই হয়তো তিনি পাহাড়কে নিবিড়ভাবে ভালোবাসতে পেরেছেন।আর তার এই ভালোবাসা অত্যন্ত সুনিপুনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তার প্রথম বই নীল পাহাড় বইটিতে। এবার আসি মূল প্রসঙ্গে, অনাথ আশ্রমে বেড়ে উঠা বালক মানিক মিত্র, বাবা-মা হারা অসহায় নিঃস্ব একা পথচলা এই মানিক মিত্রের জীবন।তার জীবনের শ্রেষ্ঠ না পাওয়ার একটি হচ্ছে তার মা।সে কখনও তার মা'কে দেখেনি।মা মানুষটা কেমন হয় সে জানেনা।তাইতো তার সমস্ত আবেগ-অনুভূতি আর হতাশার জায়গা এই মা শব্দটা।শ্লেট -চকের খোঁচায় উঠে আসে মা।অত্যন্ত মায়া আর যত্ন নিয়ে সে তার মায়ের নাম লেখে।তার সমস্ত আকুলতা তার মা'কে ঘিরে।ছোটবেলার বন্ধু কার্তিকের মা'কে দেখে সে ঈর্ষাকাতর হয়।তাইতো একসময় সে কার্তিককে বলেও ফেলে তার পাতের ডালটুকুর বিনিময়ে যেন তার মা'কে দিয়ে দেয়।ভাবতে পারেন কতটা হাহাকার থাকলে কোন মানুষ এরকম বলতে পারে?মা যেন তার কাছে আরাধ্য বস্তু হয়ে ওঠে। সে পড়াশোনায় যেমন মেধাবী ছিলো,তেমনি তার বোধবুদ্ধি, আত্মসম্মানবোধ।তার একটি-ই পরিচয়, সে একজন ডাক্তার।সৎ নিষ্ঠাবান একজন ডাক্তার মানিক মিত্র।কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস বড়ই কঠিন।মানিক তার এক ঊর্ধতন অসাধু সহকর্মীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় তাকে শাস্তিস্বরূপ পোস্টিং দেয়া হয় পাহাড়ের এক অজপাড়াগায়ে।সময়টা ছিলো আশির দশকের মাঝামাঝি সময়।ভয়,আতঙ্ক,উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে সেখানে।খুন,হত্যা,অপহরণ, ধর্ষণ এসব যেন সেখানকার নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে উঠেছে।সেখানে বাঙালি আর পাহাড়িদের মধ্যে চলছে তুমুল লড়াই।সে কিছু উগ্রপন্থী সংগঠনের রাহাজানির হিংসার মুখোমুখি হয়ে যায়।অপরদিকে সে পাহাড়ের কোল বেয়ে আসা গভীর অরণ্য ও সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে যায়।কিন্তু ওই উঁচু উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড় কেন নীল হয়ে আছে? কি আছে দূরের ওই নীল পাহাড়ের পেছনের রহস্য?নীল পাহাড়ের রহস্য তাকে অভিভুত করে।একইসাথে সে পাহাড়ের ওই সহজ-সরল মানুষগুলোকেও আপন করে নেয়।এবং মানিকের সেবা আর তার নিষ্ঠার গুণে তারাও মানিককে ভালোবেসে ফেলে।পাহাড়ের সাথে তার সখ্যতা হয়ে যায়।সে নিজেকে পাহাড়ের সন্তান ভাবতে শুরু করে। অন্যদিকে পাহাড়ের সবথেকে সুন্দরী আধুনিকা শিক্ষিতা মেয়ে ক্রাসিমা,যাকে সবাই পাহাড়ি মেয়ে বলে ডাকে।সেই ক্রাসিমা একসময় মানিকের মনে জায়গা করে নেয়।দুজন দুজনকে পছন্দ করতে শুরু করে। কিন্তু এই গোপন অনুরাগের ব্যপ্তি কোথায়? পাহাড়েরই এক ধর্ষিতা মেয়ে উম,তার গর্ভের বাচ্চাকে বাঁচানোর জন্য মানিকের সাহায্য চায়।কিন্তু সে কি করবে?কি করার আছে তার? একসময় অনাথ আশ্রমের চন্দন কুমারের একটি চিঠি মানিকের জীবনের সবচেয়ে কঠিন সত্যটা প্রকাশ করে।মানিক যেন তার জীবনের সেরা মানিক খুঁজে পায়।সে প্রস্তুত হয় ঢাকায় ফিরে যাওয়ার জন্য।কিন্তু তাকে অপহরণ করা হয়।তার পথ অবরুদ্ধ করে দেয়া হয়।কিন্তু মানিক এক মুহূর্তের জন্যও হাল ছাড়েনা।সে হারতে পারে না,কারণ এখনো অনেক কিছু দেখার বাকি আছে তার,উমের বাচ্চাটাকে একবার হলেও কোলে নিতে চায় সে,এবং মৃত্যুর আগে একবার হলেও মাথায় মায়ের স্পর্শ চায়। তার এই ইচ্ছে কি সে পূর্ণ করতে পারবে শেষ পর্যন্ত? পাঠ প্রতিক্রিয়া: বোধহয় এই প্রথম একটি বই যে বইটা পড়ে আমি কি রিভিউ লিখবো বা কিভাবে বইটা পড়ার অনুভূতি প্রকাশ করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।আমি যেন বোঝা না বোঝার দোলাচলে দুলছি।কি লেখা যায় এই বই নিয়ে?কিভাবে লিখলে আমার মনের ভাব প্রকাশ করতে পারবো?এই বইয়ের জন্য যা-ই বলবো সবই যেন কম বলা হবে।আমার ভালোলাগা প্রকাশ করার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা। ছোট্ট একটা বই। অথচ কি নেই বইটিতে?সামাজিক, রাজনৈতিক, রহস্য সবরকম স্বাদই পাবেন বইটিতে।তবে বেসিক কোন ঘরনাতে ফেলতে পারবেন না।সবকিছুকে ছাড়িয়ে লেখক তার মত করে এক ভিন্নধর্মী লেখা উপহার দিয়েছেন পাঠককে। "বইয়ের শেষ পৃষ্ঠা উল্টিয়ে লেখকের পরিচয় পাওয়া সম্ভব নয়।লেখক যুবক নাকি বৃদ্ধ,শিক্ষিত নাকি অশিক্ষিত, ধনী নাকি গরীব এগুলো অপ্রাসঙ্গিক। লেখকের পরিচয় পাওয়া যাবে প্রথম এবং শেষ পৃষ্ঠার মাঝের পৃষ্ঠাগুলোতে"। উপরের এই কথাগুলো অক্ষরে অক্ষরে সত্যি।লেখককে জানতে হলে বইয়ের প্রথম এবং শেষ পৃষ্ঠার মাঝামাঝি পৃষ্ঠাগুলোতে কি আছে তা পড়তেই হবে।লেখক সত্যিই জাদু জানে।এখন বুঝতে পারছি কেন সবাই ওবায়েদ হকের কথা বলতেই অজ্ঞান।লেখক তার জাদুকরী লেখার জাদুতে পাঠককে বশ করতে জানে।এতে কোনই সন্দেহ নেই।এরকম বই সবধরনের পাঠকের জন্যই উপদেয় খাদ্য।এই বই যে-ই পড়বে সেই এই লেখকের লেখার প্রেমে পরতে বাধ্য।আমিতো বটেই।আমার কথা আর আলাদা করে বলার কিছু নেই।যাই হোক,যারা এই বই পড়েননি তারা বইটা পড়ে ফেলতে পারেন।আমি শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারি এই বই পড়ে কেউ নিরাশ হবেন না আশাকরি।বরঞ্চ লেখকের প্রেমে পড়তে বাধ্য হবেন।
Was this review helpful to you?
or
এককথায় অসাধারণ একটা বই।কোনো রকমের বিরক্ত ছাড়াই এক টানা বইটা শেষ করেছি।প্রথম থেকেই লেখক তার লেখায় আকর্ষন করে আমাকে শেষ পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছেন।অনেক দিন পর এমন বই পড়লাম। লেখকের এক বই পড়েই তার লেখার ভক্ত হয়ে গিয়েছি। বইটা পড়ার সময় মনে হচ্ছিলো আমি ঐ নীল পাহাড়েই আছি । প্রথম দিকে কিছুটা হেসেছি।তবে মানিকের কথা ভেবে বারবার মন খারাপ হচ্ছিলো।বইটা শেষ করে মনে হচ্ছিলো এখনই কেনো শেষ হয়ে গেলো বইটা। আরেকটু থাকতো। তবে লেখকের কাছে অনুরোধ লেখক যেনো মানিকের জীবনের সমাপ্তি নিয়ে আরেকটা বই বের করেন।পুরো বইটা জুড়ে মানিকের চরিত্রটা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
Was this review helpful to you?
or
বই: নীল পাহাড় জনরা: সমকালীন উপন্যাস লেখক: ওবায়েদ হক প্রকাশনী: বিদ্যানন্দ প্রকাশ কাল: ২য় প্রকাশ নভেম্বর ২০১৬ পৃষ্ঠা: ১১২ প্রচ্ছদ: রাজিবুর রহমান রোমেল মুদ্রিত মূল্য: ১৫০৳ কাহিনী সংক্ষেপ: গল্পটা মানিকের, অনাথ আশ্রমে বড় হওয়া ডাক্তার মানিক মিত্র অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল বরাবরই। মেডিকেলের এক বড় অফিসারের সাথে কিছু ঝামেলার কারনে তাকে বদলি করা হয় বান্দরবনের এক দুর্গম এলাকায়। আশির দশকের মাঝামাঝি দিকে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক ঝড় থেমে গেলেও পাহাড়ের অবস্থা ছিল বিপরীত মুখী। খুন, ধর্ষণ, অপহরণ আর দখলদারিত্বের লড়াই চলছিল সেখানে। পাহাড়ী আর বাঙালিদের শত্রুতার মধ্যেও মানিক তার সেবা আর ভালোবাসার গুনে পাহাড়ীদের মন জয় করে নিতে বেশি সময় লাগে না। নিজের কাজ আর পাহাড়ের মায়ায় নিজেকে আবদ্ধ করে নেয় মানিক। হঠাৎ একদিন অনাথ আশ্রম থেকে চিঠি আসে। নিজের অস্তিত্বের পরিচয় জানার জন্য, মায়ের ভালোবাসার কাঙাল মানিক তার শিকড়ের সন্ধান পায়। তার মায়ের পরিচয় জানা যায় চিঠিতে। তাই আর মুহূর্তকাল ব্যয় না করে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা করে মায়ের সাথে দেখা করার জন্য। কিন্তু পথিমধ্যে তাকে অপহরণ করা হয়। তারপরের কাহিনী জানতে পড়তে হবে নীল পাহাড়, মানিক কি পারছিল তার মায়ের সাথে দেখা করতে! কী হয় তার জীবনে এরপর? কারাই বা তাকে অপহরণ করে? নিজস্ব মতামত : ওবায়েদ হকের লেখা প্রথম উপন্যাস হলেও নীল পাহাড় এক কালজয়ী উপন্যাস বলা চলে। পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল যেন মানিকের সাথে আমি নিজেও পাহাড়ের সৌন্দর্যে হারিয়ে গেছি। উগ্রপন্থী পাহাড়ীদের বিষাক্ত ছোবলে বেদনায় নীল হয়ে যায় মন কখনো। আবার মানিকের হা হা কারে বুকের ভেতর শূণ্যতার সৃষ্টি হয়। ওবায়েদ হকের লেখায় পাহাড়ী জীবনের এক কালো দিক উঠে এসেছে এ বইয়ে নীল পাহাড় বুঝি বেদনার বিষের বিষাক্ত এক পাহাড় আর মানুষেরই গল্প। বইয়ের কিছু লাইন যা দাগ কাটে মনে, * "মা এসেছিল একদিন কালো শ্লেটে। 'ম'-এর সাথে 'আ'-কার দিয়ে মা হয়েছিল।" * "খাওয়ার সময় আমার ডাল আমি তোকেই দিব, তুই তোর মা দিস।" * "প্রয়োজনে প্রিয়জনের কথাই মানুষ মনে করে।" * "মানুষ হওয়ার জন্য পিতা লাগে না, মন লাগে, মনুষত্ব্য লাগে।"
Was this review helpful to you?
or
পাহাড় নিয়ে আগ্রহ কখনো খুব বেশি ছিলো না। আমি অলস মানুষ। পাহাড় বেয়ে ওঠার কথা ভাবলেই পাহাড়ে যাওয়ার ইচ্ছা মরে যায়। তারপরেও মাঝেমাঝে পাহাড়ে যেতে ইচ্ছা করে। বিশেষ করে যখন দেখি সাদা মেঘের দল পাহাড়ের সাথে কোলাকুলি করে এগিয়ে যাচ্ছে। সময়টা আশির দশক। সত্য বলার অপরাধে বান্দরবনের দুর্গম এলাকায় পোস্টিং হয় অনাথ আশ্রমে বড় হওয়া ডাঃ মানিক মিত্রের। সেখানে গিয়ে মানুষের এক আলাদা রূপ দেখতে পায় মানিক। পাহাড়ি ও বাঙালিদের দ্বন্দ চরমে। সবসময়ই একটা ভীতিকর পরিবেশ। মানিকের মত সরকারী চাকুরিজীবিদের শাস্তি হিসেবে পাহাড়ে পোস্টিং দেওয়া হয়। খুন, ধর্ষন, অপহরণ সেখানের নিয়মিত ঘটনা। উগ্রপন্থী সংগঠনের হাত থেকে বেচে ফেরার কপাল সবার হয় না। যারা রিভিউ পড়ছেন তারা যদি কাহিনীর সারসংক্ষেপ খুজতে আসেন তাহলে হতাশ হবেন। আমি শুধু গল্পের পটভূমিটাই বললাম। ইচ্ছা ছিলো কিছুটা সারসংক্ষেপ লেখার। কিন্তু আমার মনে হলো এটা পাঠকের হাতেই ছেড়ে দেওয়া উচিত। সুতরাং পটভূমির সাথে যেটা লিখছি সেটা নিজের মতামত ও পাঠ প্রতিক্রিয়া। পাঠ প্রতিক্রিয়া ও মতামতঃ একটা লেখাকে সার্থক বলা যায় কখন? আমি জানি না। আমি বোদ্ধা নই। আমি সার্থকতা বিচার করি আমার মনের উপরের প্রভাব দ্বারা। আমার কাছে এই বইটা পুরোপুরি সার্থক। শুরু করার পরেই লেখকের তৈরি জগতে ঢুকে গেছি। দুইবার নামাযের জন্য বাধ্য হয়ে বের হয়েছি। বইয়ের চরিত্রগুলো খুব আপন হয়ে উঠেছিলো। কারন এরা লেখকের কল্পনা হলেও বাস্তবেও এদের অস্তিত্ব আছে। হয়ত অন্য নামে। পাহাড় সম্পর্কে প্রথম জানার ইচ্ছা হয় প্রয়াত সাংবাদিক সাগর সরওয়ারের লেখা "কর্ণেলকে আমি মনে রেখেছি" বইটা পড়ে। পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখে ভেবেছি ওখানের অধিবাসিদের জীবনও মনে হয় এমন সুন্দর। কিন্তু সেই বইটি আমার জন্য বাস্তবতার নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। আমি জানতে পারি আমরা বাঙালিরা কত হিংস্র! কত সার্থপর! "নীল পাহাড়" বইটা পাহাড়ের উপরে লেখা জানার পর থেকে এটা পড়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিলো। এই বইতে লেখক আরও চমৎকারভাবে পাহাড়কে তুলে ধরেছেন। মাত্র ১১১ পৃষ্ঠার বইয়ে এত চমৎকার বর্ণনা খুব কম লেখকই দিতে পারেন। মূল প্লটের পাশাপাশি অসাধারন সব সাব-প্লট গল্পের অলংকার। সত্য, হিংসা, মৃত্যু, ঘৃণা, ভালোবাসার এক মেলবন্ধন "নীল পাহাড়"। লেখক তার গল্পের দিকে যেমন জোর দিয়েছেন, ঠিক তেমন চরিত্রের উপরেও জোর দিয়েছেন। এই বইয়ের সবচেয়ে আকর্ষনীয় বিষয় হলো লেখকের লেখনি। সাধারন কথাগুলোকে লেখক ভাষার অলংকারে সজ্জিত করে এত চমৎকার রূপে স্থাপন করেছেন যে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা হয়। বারবার পড়তে ইচ্ছা। বইটা পড়ার সময় ভেবেছিলাম লেখার কিছু নমুনা দিবো রিভিউয়ের সাথে। পরবর্তীতে সেই ইচ্ছাও বদল করলাম। আমি চাই না যারা বইটা পড়েনি তাদের মুগ্ধতা কেটে যাক আমার রিভিউ পড়ে। সেগুলো বইয়ের জন্য তোলা থাকলো। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পরে অনেকেই বাংলাদেশী সাহিত্যের ভবিষ্যত নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। আমার বিশ্বাস ছিলো এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠবো আমরা। সেই বিশ্বাসের ভিত আরো শক্ত হয় যখন ওবায়েদ হকের মত তরুন লেখকদের বই পড়ি। যতদিন এই নবীন, মেধাবী, তরুন লেখকরা এই দেশে থাকবেন ততদিন এদেশের সাহিত্য পথ হারাবে না।
Was this review helpful to you?
or
বইঃ নীল পাহাড় লেখকঃ ওবায়েদ হক জনরাঃ সামাজিক উপন্যাস প্রকাশনীঃ কাকলী প্রকাশনী প্রথম প্রকাশঃ একুশে বইমেলা ২০১৫ পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১১২ মূল্যঃ ১৫০ টাকা রেটিং- ৪/৫ অনাথ আশ্রমে বড় হওয়া মেধাবী এক ছেলের গল্প "নীল পাহাড়"। পাহাড়ের মানুষের গল্প "নীল পাহাড়"। নীল পাহাড়ের গল্পই "নীল পাহাড়"। কাহিনী সারসংক্ষেপঃ আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে অনাথ আশ্রমে বড় হওয়া ডাক্তার মানিক মিত্র অন্যায়ের প্রতিবাদ করার পুরষ্কার স্বরূপ পাহাড়ে ট্রান্সফার হয়ে আসে। একলা মানুষ বলে এক দিক দিয়ে সে খুশিই হয়। কিন্তু এখানে এসে সে মুখোমুখি হয় হিংসার, মৃত্যুর, নির্মম সত্য আর নীল পাহাড়ের। পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া লেখা একদিক দিয়ে যেমন সহজ, আবার কিছুটা জটিলও। দুইলাইন লিখেও রিভিউ দেয়া যায়, আবার 3০০ শব্দেও দেয়া যায়। মূল কথা ভাব প্রকাশ। আমি কেন জানি অল্প কথায় লিখতে পারি না। কিন্তু লেখা বড় হয়ে গেলেও মনে হয় ভাল লাগাটা হয়তো ঠিক মত ফুটে উঠেনি। তাই ভেবেছিলাম এই বইয়ের রিভিউ লেখার যোগ্যতা আমার নেই। কিন্তু এমন বই নিয়ে না লেখাও অপরাধ। লেখতেই হতো। . প্রথমে ভেবেছিলাম নীল পাহাড় নামটা এমনিই দেয়া, লেখকের কল্পরাজ্যের কোন পাহাড় হয়তো। শেষে এসে বুঝলাম, গল্পটা আসলেই নীল নীল ফুলে ঢেকে যাওয়া নীল পাহাড়ের.... আর না বলি, এইটুকু সাসপেন্স থাকুক পাঠকের জন্য। বইয়ের কয়েকটি লাইন না দিলেই নয়- "মা এসেছিল একদিন কালো শ্লেটে। 'ম'-এর সাথে 'আ'-কার দিয়ে মা হয়েছিল।" "আমার কালি সব মায়ের নামেই ঢেলে দিতাম। ক্লাসে লেখার জন্য কালি থাকতো না। পণ্ডিত বাবু দাঁড় করিয়ে রাখতো" "খাওয়ার সময় আমার ডাল আমি তোকেই দিব, তুই তোর মা দিস।" ছোট্ট একটা বই, অথচ কত কিছু ধারণ করেছে! মুক্তিযুদ্ধের চিত্র, পাহাড়ীদের নিজের জন্মভূমি হারানোর ভয়, অবহেলিত জীবনের চিত্র, বর্তমান সমাজের পক্ষপাত আর দূর্নীতির চিত্র, একটু ভালোবাসার জন্য অনাথের হাহাকারের চিত্র! অল্প অল্প কথায় নিপুণ বুননে লেখা ছোট্ট বইটার প্রত্যেক লাইনে লেখকের নিবিড় যত্নের ছাপ পেয়েছি। বই পড়ে হয়তো চোখ ভিজে, জল গড়ায় না কান্না হয়ে। কিন্তু এই বইটা একটু বেশিই ইমোশনাল করে ফেলেছিল। নোনতা পানি আটকানো যায়নি। মায়ের আঁচলের নিচে বাস করা আমিই কেঁদে ফেলেছি এক অনাথের মার জন্য হাহাকার দেখে। আর কি বলতে হবে লেখনী নিয়ে? হ্যাঁ, বইটা লেখনীর জন্যই এত ভালো লেগেছে। এটা সেই টাইপ বই, যার প্লট নয় বরং লেখনী আপনাকে মুগ্ধতায় ডুবিয়ে রাখবে। বইটা যেন ভালো কোন কবির কাব্যের মত। কয়জন লেখক একটা বই দিয়েই মনে স্থায়ী হতে পারে? এই ক্ষেত্রে ওবায়েদ হক সার্থক। লেখকে কাছে আমার একটাই অভিযোগ, কেন বইটা ছোট হলো! এই বইটা অনায়াসে তিনশো পৃষ্ঠার উপন্যাস হতে পারতো। আরো বেশিক্ষণ ভালো লাগায় ডুবে থাকা যেত। আশা করি, খুব করে চাই, এরপর উনি বড় কোন উপন্যাস উপহার দিবেন।