User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
একজন নিচুমনা, ভীতু লোকের কথা এখানে বলা হয়েছে। একপ্রান্তে এসে এই লোকটাই অনুপ্রেরণা হয়ে যায় সবার। বইটা সত্যি অনেক ভালো।
Was this review helpful to you?
or
one of the best novel about 1971
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নাম- তেইল্যা চোরা লেখক- ওবায়েদ হক প্রকাশক- বিদ্যানন্দ প্রকাশনী বলরামপুরের বাসিন্দা ফজর আলী। পৈত্রিক সূত্রে চোর। বাবা কসর আলী ছিল বিখ্যাত চোর । গায়ের রং কালো দেখে তাকে সবাই ডাকত কাইল্যা চোরা। ছেলে বাপের চেয়েও বড় চোর। গায়ে অতিরিক্ত তেল ব্যবহারের কারণে তার নাম তেইল্যা চোরা। ছেলে আর বউকে নিয়ে সংসার। চুরি করেই দিন কাটত। ভালো মন্দ আর মাঝে মাঝে মানুষের মার খেয়েই চলে যাচ্ছিল তেইল্যা চোরার জীবন। একদিন বউয়ের কথায় ছেলের মাথায় হাত রেখে প্রতিজ্ঞা করলেন চুরি করবেন না। অনেক কষ্টে কাজ জোগাড় করলেন। কিন্তু এবার চুরি না করেও চোরের অপবাদ পেলেন। সাড়ে পাঁচ বছরের জেল হল। জেলে পরিচিয় হল বেশ কয়েকজন এর সাথে। কেউ পাকিস্তানি আদর্শের অনুসারী। কেউ বা জেল ছেড়ে বের হয়ে মুক্তি হবার স্বপ্ন দেখছেন। ওদিকে ছেলেকে নিয়ে ফজর এর বউ কোনো মতে দিন গুজরান করছিল। শুরু হল মুক্তিযুদ্ধ। নরক দর্শন করল বাঙ্গালীরা। মুক্তিযুদ্ধ আর একটি পরিবার সাথে আরো বেশ কিছু মানুষের জীবনের কাহিনী নিয়ে এগিয়ে চলল গল্প। পাঠ পতিক্রিয়া- কিছু কিছু গল্পের ক্ষেত্রে কাহিনী থেকে লেখকের লেখনী বেশী আবেশিত করে ফেলে। এই বইটি অনেকটা সে রকম। কাহিনী আর আট-দশটা মুক্তিযুদ্ধের গল্প-উপন্যাসের মতই। কিন্তু লেখকের লেখনী সত্যি অসাধারণ। কিছু রূপক ও উপমা ব্যবহার করা হয়েছে যা আসলেই চিন্তার উদ্রেক ঘটায়। আর কিছু কিছু লাইন তো সোজা বুকে গিয়ে বিদ্ধ হয়। ধাক্কার মত লাগে। ভালো লাগা কিছু বাক্য উল্লেখ করতে ইচ্ছা করছে- পেটে যখন জ্বালা শুরু হয়,তখন আর কবরের আজাবের কথা মনে থাকে না। ছেঁড়া কাপড়ে পর্দা করা যায় না। আবার আরেক জায়গায় লেখা- ভিক্কা করতে অইবো নাইলে গতর বেচতে হইবো। চোরের জোয়ান বউরে কেউ ভিক্কা দিব না, গতর দিলে ঠিকই নিব। মোদ্দা কথা বইটা পরে একই সাথে একটা মন খারাপের ভাব চলে এসেছিল আর শেষে কিছুটা আনন্দের স্পর্শ পাওয়া যাচ্ছিল।
Was this review helpful to you?
or
নাম: তেইল্যাচোরা৷ লেখক:ওবায়েদ হক৷ প্রকাশনী: বিদ্যানন্দ মুদ্রিত মূল্য: ১৬০৳ ব্যাক্তিগত রেটিং: ১০/১০ বই সংক্ষেপ: কসর আলী বছর চল্লিশেক আগে বালিয়াকান্দি থেকে বিতাড়িত হয়ে বলরামপুরে আসে৷ গায়ের রং আর পেশার কারণে “কাইল্যা চোরা” নামটা তাঁর পিছু ছাড়েনি৷ কাইল্যাচোরা মারা গিয়েছে৷ এলাকার মোড়লরা “তেইল্যাচোরার” জন্ম দিয়েছে৷ বাবার মৃত্যুর পর ফজর আলী কাজ করে উপার্জন করতে চেয়েছিলো কিন্তু চোরের ছেলে বলে কেউই তাঁকে কাজ দেয়নি৷ বাধ্য হয়েই চুরি বিদ্যায় হাত পাকা করে৷ সমাজ সম্ভবত খারাপ পরিশুদ্ধ হয়ে ভালো হোক এটা মেনে নিতে পারেনা! কারণ হয়ত তাঁদের কটাক্ষ,গালি ইত্যাদি দেয়ার মত কেউ থাকবে না দেখে! সর্বশেষ কদম হোসেনের বাড়িতে চুরি করে৷ ধরা পড়তে পড়তেও বেঁচে যায়৷ সে-বার কদম বাড়ি এসে বউ,ছেলের সামনে যা তা ভাষায় গালা-গালি করে যায়৷ আমেনার নির্লিপ্ততা,পুত্রের মন মরা হওয়া ফজরকে নাড়া দেয়৷ আমেনাকে ফজর কখনো কাঁদতে দেখেনি৷ নির্লিপ্ত৷ তাঁর দু'চোখ যেন শুকনো সাহারা৷ এমনকি বিয়ের রাতেও আমেনা কাঁদেনি৷ দূর্ভাগা আমেনা তার দূর্ভাগ্য মেনে নিয়ে আশ-পাশ থেকে আসা হাজারটা কটাক্ষের কোন উত্তরই দেয়না৷ গাঁয়েই মাখেনা৷ সেদিন পুত্রের গায়ে হাত দিয়ে স্ত্রীর সামনে কসম করে চুরি না করার৷ মিঞা-ভূঁইয়া সাহেবরা ফিরিয়ে দেয়ার পর জোয়ার্দারসাহেবের কাছে আসে৷ ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়৷ জোয়ার্দার সাহেব কাজ দেন৷ প্রথম দিন কাজ শুরু করে৷ মজুরদের মধ্য কেউই মেনে নিতে পারেনা ফজরকে৷ সেদিন দুপুরে জোয়ার্দার সাহেবের ছোট বিবির বালা হারানোর মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত হয় ফজর৷ জোয়ার্দার সাহেব আসে,পুলিশ ডাকে,মিথ্যার সাথে মিথ্যা মিশিয়ে পাঁচ বছরের জেল হয়৷ আমেনা আর মজিদকে দেখতে অনেক ইচ্ছা করে৷ আমেনা কি তার উপর অভিমান করেছে? সে তো চুরি করেনি৷ আমেনাও কি ভাবছে,সে চুরি করেছে? জেলে প্রথমদিন দেখা হয়,নাদির ভাইয়ের সাথে৷ মানুষটাকে প্রথম দেখাতে ভয় লাগলেও ভিতরটা আসলে তাঁর অনেক নরম৷ নাদির ভাইকে ভালো লেগে যায় ফজরের৷ পরদিন ফজরকে অন্য জেলে নিয়ে যাওয়া হয়৷ তাঁদের সেলে ফজর সহ পাঁচজন৷ সে,ইউসুফ মুন্সি,বাচ্চু,সুজন মাস্টার,পাগলা প্রফেসর৷ প্রফেসর সাহেবকে কেউ দেখতে না পারলেও ফজরের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে যায় তাঁর৷ এদিকে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠে৷ ছাত্ররা মাঠে নামে৷ সুজন নিয়মিত খবরাখবর সংগ্রহ করে৷ মুক্তি বাহিনীতে যোগ দেয়ারা প্রবল ইচ্ছে তাঁর৷ ফজর এসবের কিছুই বুঝেনা৷ সে শুধু শেখ মুজিবের নামই শুনেছে৷ আর কিছুই তাঁর জানা নেই৷ নতুন পাঞ্জাবী অফিসার,সৈনিক এসেছে৷ প্রতিদিন বাহির থেকে মুক্তি বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে এসে নৃশংস ভাবে খুন করে তারা৷ আর এসব লাশ কবর দেয় ফজর আর সুজন৷ এখন ওরা নির্জীব হয়ে গেছে৷ এত লাশ! ওদের দম আটকে আসে৷ মেনে নিতে পারেনা এমন পাশবিকতা৷ মুক্তি বাহিনীর একজনকে পানি খাওয়ানোর অপরাধে সুজনকে পিটিয়ে আধমরা বানিয়ে ফেলা হয়৷ সবাই মিলে সুজনের শুশ্রূষা করে৷ সুজন একটু সুস্থ হলে প্রফেসর সাহেবের সাহায্যে পালিয়ে আসে তারা৷ প্রফেসর সাহেব জেলেই থেকে যান৷ পালানোর দ্বিতীয় দিন সুজন মারা যায়৷ পথে কত লাশ দেখে৷ পঁচা গলা লাশ৷ কত শিশুর লাশ! কত উলঙ্গ নারীর লাশ! কুকুর সেই লাশ খাচ্ছে,হাত ছিড়ছে,পা ছিড়ছে দাঁত দিয়ে টেনে টেনে৷ ইউসুফ মুন্সি বাড়িতে গিয়ে জানতে পারে তাঁর স্ত্রী,মেয়েকে ধরে নিয়ে গেছে পাঞ্জাবীরা৷ পাগল হয়ে যায়৷ দিগ্বিদিক জ্ঞান শূণ্য হয়ে ছুটে যায় হিংস্র,অমানুষ পাকিদের ক্যাম্পে,আটক হয় ইউসুফ মুন্সি৷ মরণের আগেই মেরে ফেলা হয়েছে ইউসুফ মুন্সির মেয়ে আর স্ত্রীকে৷ লুটে নেয়া হয়েছে সব৷ জীবিত নয় তারা,আছে শুধু প্রাণ৷ ফজর আলীও তাঁর স্ত্রী আর সন্তানকে পায়না৷ ক্যাম্পে যায়,আটক হয় ফজর আলী৷ সেখানে পায়না তাঁর স্ত্রী আর পুত্রকে৷ মেনে নেয় নিয়তিকে৷ মেনে নেয় স্ত্রী,পুত্রের মৃত্যুকে৷ ফজর আলী আর ইউসুফ মুন্সী রতনপুর মুক্তি ক্যাম্পে যাচ্ছে৷ দু'জনেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ,মরার আগে একজন হলেও পাঞ্জাবী মেরে যাবে৷ বর্ডার ক্রস করার নৌকার সামনে দাড়িয়ে ফজর আলী৷ নৌকার ভিতর থেকে একজন বলে উঠলো, তেইল্যাচোরা না?? নৌকা ছাড়ছে,আমেনা বলে “তুমি নৌকায় উঠো”৷ ফজর বলে, না আমি যাব না,মুক্তি বাহিনীতে নাম লেখাব,যুদ্ধ করব৷ একটু আগে তাঁকে তেইল্যাচোরা বলা ব্যাক্তিটা লজ্জায় মাথায় নিচু করে ফেলে৷ সে কাপুরুষের মত পালিয়ে যাচ্ছে৷ আর একজন চোর,যুদ্ধে যাচ্ছে৷ জীবনের মায়া ত্যাগ করে,পরিবার ত্যাগ করে৷ যার বেঁচে ফেরার নেই কোন নিশ্চয়তা! পাঠ পতিক্রিয়া: একবার পড়ে তৃপ্ত হতে পারিনি৷ দ্বিতীয়বার আবার পড়েছি৷ আরো একবার পড়তে মন চাচ্ছে৷ অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করে৷ ছোট বই৷ এক বসায় শেষ করে দেয়ার মত৷
Was this review helpful to you?
or
আমি এই গল্পে ফজরের মাঝে সেই কর্তব্যনিষ্ঠা পেয়েছি যা অর্জন করতে কারো জনম জনম লেগে যায়। এমন প্রতিশ্রতি রক্ষা করতে দেখেছি যা শরীরে শীতল শিহরণ এনে দেয়। ১১১ পৃষ্ঠার মত ছোট্ট একটি বইয়ে নেই কোন আবেগের বাহুল্য, কিন্তু আছে সুগভীর মমতা। যেই মমতায় তেইল্যাচোরা ফজর হয়ে উঠে মুক্তি সুজন। পাক বাহিনী ইসলাম রক্ষা করতে বিধর্মী মারতে আসছে- একথায় বিশ্বাসী ইউসুফ মুন্সী যদি জানতো তার ভাবনায় কতবড় ভুল ছিল! সে জানে, একটি মূল্যবান খেসারতের পর। এই গল্প আমাকে সেঁটে দিয়েছিলো বইয়ের সাথে একাত্ম হতে। নসু মাঝির জন্য আফসোস করতে, তেইল্যাচোরা বা মুক্তি সুজনের জন্য প্রার্থনা করতে। তাদের অব্যক্ত এবং অপূর্ণ কিছু ইচ্ছেকে কল্পনা করতে! আমিনার মত নির্বিকার একজনের চোখের অশ্রুর সাক্ষী হতে! এই গল্পের উৎসর্গ আমায় ভাবিয়েছে, মনে মনে কাঁদিয়েছে। যেই দেশটায় আমি মাথা উঁচু করে আজ হেঁটে বেড়াচ্ছি অবিরাম, তা অর্জনের জন্য লক্ষাধিক গল্পের একটি খন্ড এখানে প্রতিফলিত হয়।
Was this review helpful to you?
or
বই: তেইল্যা চোরা ঘরানা: মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস লেখক: ওবায়েদ হক প্রকাশনী: বিদ্যানন্দ প্রকাশ কাল: বিদ্যানন্দ প্রকাশ মে ২০১৭ পৃষ্ঠা: ১১২ প্রচ্ছদ: মেজর এমরান মুদ্রিত মূল্য: ১৬০ কাহিনী সংক্ষেপ: বলরামপুর গ্রামের বাসিন্দা ফজল অালী তথা তেইল্যা চোরার জীবনের কিছু ঘটনা নিয়ে সাজানো কাহিনী "তেইল্যা চোরা"। কসর অালীর নিজ পেশা কিংবা গায়ের রংঙ এর জন্যই হোক অাকিকা দেওয়া নামটা হারায়ে কালের বিবর্তনে নাম হয়ে যায় কাইল্যা চোরা। জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত চুরি করাই ছিল যার পেশা। কিন্তু তার ছেলে ফজর অালী চোর হতে চায় নাই, তার মা কিংবা বৌ কেউই চায় না সে চুরি করুক। কিন্তু তাদের পাপের জীবন, মানুষ তাদের পাপ মনে করিয়ে দিতে কার্পণ্য করে না। চোরের ছেলেকে কেউ কাজ দেবার মতো নির্বুদ্ধিতা করে না। পেটের ক্ষুধা তো অার সেকথা মানে না, একমাত্র ছেলের শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে না চাইলেও তাকে চুরি করতে হয়। তবু মানুষ ভালোবাসার কাছে হেরে যায়। হেরে যায় তেইল্যা চোরাও, বউ অামেনার অভিমানী মুখ তার সহ্য হয় না, ছেলের গা ছুঁয়ে তাই কছম কাটে চুরি না করার। তবে ভাগ্য যেন অন্য কথা বলে চুরি না করেও চুরির দায়েই ফজর অালীজে জেলে যেতে হয়। জেলের মোটা দেয়ালের জীবনটা যেন অন্য রকম। যেখানে শেখার অাছে অনেক কিছু। নির্দোষ হয়েও যেমন শেখানে পঁচে মরে কেউ অাবার কেউ অাছে দাগি অাসামি। জেলের ভিতরের নানান অভিজ্ঞতার সাথে পরিচয় হয় ফজর অালীর। সাক্ষাৎ হয় পাকিস্তান প্রেমী বাচ্চু, ইউসুফ মুন্সী, পাগলা প্রফেসর, সুজন মাস্টার অার ক্ষণিকের পরিচয় অাপন হওয়া নাদির গুন্ডার সাথে। জেলের জীবনে প্রায়ই তার স্ত্রী, সন্তানের কথা মনে পড়ে। গরাদের পুরু দেয়াল ভেদ করে বাইরের উত্তল পৃথিবীর অাঁচ লাগে কয়েদিদের মনে। ছোট জেল থেকে পালিয়ে যেখানে বড় বড় জল্লাদের ওঁতপাতা ফাঁদে পা রাখে মানুষ। তেইল্যা চোরাও জেল থেকে পালাতে চায়, তার স্ত্রী, পুত্রকে একনজর দেখার অাসায়। একটু মুক্তির নিঃশ্বাস নিতে গিয়ে সে দেখে বিষাক্ত সে বাতাস মানুষের লাশের গন্ধে। নিজস্ব মতামত: বেশ কিছুদিন পর একটানা বই পড়ে শেষ করলাম। অনিহা বা ক্লান্তি মস্কিকে জেঁকে বসেছিল যেন। বছর খানেক অাগে কেনা হলেও অাগ্রহী প্রার্থীদের হাত ঘুরে বইটা অামার নাগালে অাসতে অাসতে অার পড়ার সময় হয়ে ওঠে নাই। যা হোক সাদামাটা সামাজিকে গল্পে থ্রিল এনে পাঠককে বইয়ের সাথে অাঠার মতো অাটকে রাখার বই এটা তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। চোর হলেও ফজরের দয়ালু মন কিংবা চোরের মেয়ে, বৌ হয়েও সততার কাঠিন্যে ঘেরা অামেনার নির্লিপ্ততা বা চোখ ফেটে জল বেরোনোর চিত্র অঙ্কনে লেখকের দক্ষতা বরাবরের মতোই বিস্ময় জাগিয়েছে মনে। এ যেন সাহসী নসু মাঝি বা সুজনের মতো হাজারো মুক্তিযোদ্ধার গল্প। যুদ্ধের বিভৎষ বর্ণনায় কেঁপে ওঠে মন তেমনি কিছু লাইন, "এক লাশ থেকে ছুটে পালিয়ে সে লাশের মিছিলে এসে পৌঁছেছ। চারদিকে লাশ অার লাশ। তাজা লাশ, গলা লাশ। কোন লাশের চোখ খোলা কোন লাশের চোখই নেই।" অাছে নাদের গুন্ডা, কিংবা তেইল্যা চোরাদের গল্প যারা সমাজের নিগৃহীত পেশার কিন্তু দেশের মান বাঁচাতে বিলিয়ে দিয়েছে নিজের প্রাণ। এতভালোর কিছুর মধ্যেও কিছু যায়গায় মজিদ অার ফজর নামটা ওলট পালট হয়ে যাওয়াতে কিছুটা গোলমালে লাগে, তবে তা দু'এক জায়গায় ছিল। সব মিলিয়ে অসাধারণের পরেও বেশি কিছু বইটা। গল্পের পিছনের কিছু কথা: তেইল্যা চোরা'র ফজর আলির চরিত্রটি ঐতিহাসিক কাহিনী না হলেও একেবারে অবাস্তব নয় যশোরে জেল থেকে '৭১ এ কিছু কয়েদী জেল থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল বলে একটি কথা শোনা যায়। লেখক তা থেকে উদ্বুদ্ধ হয়েই উপন্যাসটির প্লট সাজিয়েছিল। যেখানে উৎসর্গের নাদের গুন্ডা চরিত্রটি বাস্তবেরই একাংশ। বইয়ের প্রিয় কিছু লাইন ★অামরা যার কথা, অাচরণ বুঝতে পারি না, তাকেই পাগল বলি। ★সরল মানুষের চিন্তা হয় সরল এবং বিশুদ্ধ। ★প্রিয়জনের চেহারা বেশিদিন মনে রাখা যায় না, মন ভুলিয়ে দেয়, যাতে চোখ বার বার তাদের দেখে। সেজন্যই তারা প্রিয়জন।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বই-তেইল্যা চোরা লেখক-ওবায়েদ হক ধরন-মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস পৃষ্ঠা-১১১ মূল্য-১৬০ প্রকাশনী-বিদ্যানন্দন উপন্যাসটি মূলত ফজর আলী ওরফে তেইল্যা চোরা নামক এক চোরের গল্প। তেইল্যা চোরা নাম হয় তার কর্মের গুনে। শরীলে তেল দিয়ে চুরি করায় তার এই নাম। ফজর আলীর বাবাও ছিলো বিখ্যাত চোর । সেই সুত্রে , ফজর আলী বংশগত চোর। জন্মের পর বাবাকে চুরি করে সংসার চালাতে দেখেছে। বাপের কাছেই চোর্যবৃত্তি শিখেছে। কিন্তু নিজের ছেলেকে সে আর এ বিদ্যা শেখাতে চায় না। এমন কি চোরের ছেলে বলে আখ্যায়িতও করতে চায় না । সৎ পথে উপার্জন করে ছেলেকে সে মানুষের মতো মানুষ করবে। এই দিব্যি দিয়েই তেইল্যা চোরা তার কর্ম বদল করতে চায়। কিন্তু আমাদের তো ঘুণে ধরা সমাজ। এই সমাজ কখনো কাউকে খারাপ থেকে ভালো হতে দেয় না। ফলশ্রুতিতে তেইল্যা চোরার কপালে শনির আছর লাগলো। চুরি বিদ্যা ছেড়ে সে যেদিন ভালো মানুষ হয়ে সৎ কাজ করে উপার্জনের চেষ্টা করলো, সেদিনেই তাকে কারাবন্ধি হতে হলো মিথ্যা চোরের অপবাদ নিয়ে। তেইল্যা চোরার কাহিনী হয়তো এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারতো। কিন্তু হলো না। দোর গোড়ায় তখন মুক্তিযুদ্ধের গনগনে তাপ! পাকবাহিনীরা বাঙালিদের উপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়ে যাচ্ছে। জেলখানায়ও চলছে সেই তান্ডব। সেখানে তেইল্যা চোরার সাক্ষাত ঘটে ভিন্ন ধরনের কিছু মানুষের সাথে। যাদের মধ্যে অনেকে বিশ্বাস করতে চায় না পাকিস্তানিরা এরকম হত্যাকান্ড চালাতে পারে। তাদের বিশ্বাস, হিন্দুদের এদেশ থেকে বিতারিত করাই মূলত এদের লক্ষ। তাদের চোখে মুক্তিরা হলো ভারতের দালাল। আবার এমনও আছেন যারা এই জেল থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে চায় শুধু মাত্র দেশমাতাকে রক্ষার দায়িত্ব নিয়ে। আর এখানে এসে লেখক, উপন্যাসের দান পাল্টে দিলেন। একটা চোরের কাহিনী শুনতে শুনতে চলে এলাম এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে। আর এটাই হলো উপন্যাসের মূল অংশ। চিত্রপটে ভেসে উঠলো পাকিস্তানিদের বর্বরতা।যদিও মুক্তিযুদ্ধের হিংস্রতা বর্ণনা করা অসম্ভব।তারপরও যা ফুটে উঠল তা আমাদের চমকে দিতে যতেষ্ট।শুধু আমাদের নয় বদলে দিলো ফজর আলীকেও। উপন্যাস এগিয়ে গেলো... এদিকে যুদ্ধের শুরুর দিকেই যারা ছিলো পাকিস্তানি সমর্থক। বিশেষ করে মুন্সি মোল্লারা। তাদের পাকিস্তানকে পাক-ই-স্থান বলে ধ্যান জ্ঞান ছিলো। কিন্তু একসময় তাদের সে ভুল ভেঙে গেলো যখন পাক বাহিনীরা তাদের পরিবারের দিকে হাত বাড়াল এবং তাদের অনক কিছুই ছিনিয়ে নিলো। সে সময় বুঝতে তাদের কষ্ট হলো না যে, পাকবাহিনীরা সত্যিই তাদের শোষণ করার জন্যই এসেছে। তাদের ধংস করার জন্যই এসেছে। আর এই ধংসের মুখে পরতে পরতে তখন তীব্র ঘৃণা আর অভিশাপ নিয়ে গালি বর্ষিত করেছে পাকবাহিনীদের উপর। আর এটাই লেখক অত্যাদিক ভাবে ফোকাস করেছেন এ উপন্যাসে। উপন্যাসে জায়গা পেয়েছে আরো একটা বাস্তব চরিত্র সে হলো নাদির গুন্ডা। যুদ্ধের আগে সে ছিলো এলাকার ত্রাশ। আর যুদ্ধ শুরু হতেই নির্ভয়ে, তার চওড়া বুক দিয়ে আগলে রেখেছিলো তার পুরো গ্রামটাকে। আর সেই মহানায়ক ছিলেন এদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম গেরিল শহীদ। কেন বা কিভাবে? তা শুনলে আরো একদাপ চমকে যেতে হবে আপনাকে। লেখক বইয়ের উৎসর্গে নাদির গুন্ডাকে উল্ল্যেখ করেছেন। আর তারই মতো কাউকে উপন্যাসে তুলে আনার প্রয়াশই বোধহয়, লেখকের ছিলো। এবং তা বেশ সফল হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময়কালের গ্রাম বাংলার পটভূমিতে লেখা এই উপন্যাস। স্বনামধন্য এক চোরের যোগ্য উত্তরসূরির মুক্তিযোদ্ধা হবার গল্প। যার সাহস আর অকুতোভয় মন মানসিকতার জন্য বেঁচে যায় অনেক গুলো প্রাণ। আর এই গল্প সে সকল লোকদের জন্য উৎসর্গিত। বাস্তবিক ভাবে যাদের কর্মকান্ড যুদ্ধের আগে সমাজের চোখে খারাপ ছিলো। মার্তৃভূমির অকালের সময় তার স্বীয় চিত্তে গর্জে উঠেছিলো। সে সময় সমাজের সব থেকে নিরাপদ আশ্রয় ছিলো এক সময়ের ঘৃণিত মানুষ গুলো। তারাই সকলের আগেই বুক পেতে দিয়েছিলো অন্যদের রক্ষার্থে। চরিত্রের দিকে তাকালে , ফজরের যে কিনা চোর, তার মধ্যে দেশকে রক্ষা করার দৃঢ়প্রত্যয় ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। ফজরে স্ত্রী, অন্য যে কোন বাঙালি গ্রাম্য নারী থেকে সহজেই আলাদা হয়ে পাঠকের চোখে ধরা পড়বে। যদি নাদির গুন্ডার কথা বলি, সে তো বাস্তব চরিত্র! বইয়ের প্রতিটি চরিত্র লেখক এমনভাবে তৈরি করেছেন পড়ার সময়ই মনে হবে এরা আমার খুব পরিচিত। তাদের দুঃখ যেমন স্পর্শ করে তেমনি তাদের হাসি আনন্দও মুখ খুশির আমেজে ভরে যায়। সে সাথে সব থেকে কঠিন আতঙ্কের সময় গুলো যখন চোখের সামনে আসে পাঠক হিসেবেও কেমন জানি আত্মা টিপ টিপ করতে থাকে।লেখা সম্পর্কে বলতে গেলে, লেখকের শিল্পিত লেখনশৈলীর সাথে যুক্ত হয়েছে নিখাদ সরল বর্ণনাভঙ্গি। তিনি খুব সহজেই বর্ণনা করলেন তীব্র কষ্ট অথবা সুখ। এসকল বিবরণে মোটেও এলোমেলো হয়ে যায় নি। কিন্তু চরিত্র গুলোর সাথে সহৃদয়তা সৃষ্টি হয়। আর তাই চরিত্রগুলো আপন হয়ে যায়। একটা সহজ সরল গল্প, এভাবে যে যুদ্ধের দোয়ারে পৌছে দিবে সেটা কিন্তু পাঠকের একেবারে অজান্তে। আর যাই হোক, এই কথাটা আমার অনেক দিন মনে থাকবে। "প্রিয়জনের চেহারা বেশিদিন মনে রাখা যায় না, মন ভুলিয়ে দেয়, যাতে চোখ বার বার তাদের দেখে। সেজন্যই তারা প্রিয়জন।" আমি মিলিয়ে দেখেছি , সত্যিই ভয়ংকর এক সত্য কথা। উপন্যাস শুরু হয় সমাজের এক ঘৃণিত চরিত্র দিয়ে। বর্ণিত হয় তার পরিবার, পরিবারের দুঃখ, বাধ্য হয়ে চোরের খাতায় নাম লেখানো, সেখান থেকে পরিত্রানের চেষ্টা, বিধি বাম, মুক্তিযুদ্ধ তখন পায়ে পায়ে এসে হাজির। এবং সে সময় দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষার জন্য, প্রতিরোধ গড়ে উঠতে যতোটা না সাহায্য করেছে রাজনৈতিক চেতনা। তার থেকে বেশি জাগিয়ে দিয়েছে পাকবাহিনীর নির্যাতন । লেখক তার প্রচ্ছদে উপন্যাসের একটা ছাপ রাখতে চেয়েছেন, বিষয়টা এমন - ''একজন চোর যাকে সবাই 'তেইল্যা চোরা' হিসেবে ডাকে। সমাজে যে স্পৃশ্য। তাকে কেউ কদর করে না; সম্মান দেয় না কাজও দেয় না। সেই চোর কঠিন পরিশ্রম করে ছোট ছোট পদক্ষেপে এগিয়ে চলছে জীবন যুদ্ধে; মুক্তিযুদ্ধে। নিজের নতুন গর্বিত পরিচয়ের পথে''। রেটিং-৫/৫ রকমারি লিংক- https://www.rokomari.com/book/92816/তেইল্যা-চোরা
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস । উপন্যাসে চিত্রিত হয়েছে তেইল্যা চোরা ফজরের মুক্তিযোদ্ধায় পরিণত হওয়ার গল্প। গায়ে অত্যধিক তেল মেখে চুরিতে যাওয়ার বদৌলতেই তার নাম তেইল্যা চোরা। বলরামপুরের ফজর আলীর বাপও ছিল চোর। সে হিসেবে ফজর আলী চোরের ছেলে চোর হয়েছে। চোরের ছেলের অন্য পেশায় যাওয়া সহজ ব্যাপার না। সুতরাং, চুরিই তার নিয়তি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার আগের অংশে দেখতে পাওয়া যায় ফজর আলীর চোরে পরিণত হওয়ার দৃশ্য। অতঃপর নিতান্তই সাধারণ ভাবে গল্প এগিয়ে যায়। উপন্যাসের শক্তিশালী অংশ হচ্ছে ফজর আলীর জেলজীবন থেকে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের নৃশংস বর্বরতার বর্ননায়। সত্যি কথা হলো, পাকিস্তানিরা যে পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছিল আমাদের দেশের মানুষদের উপর তা কোন বর্ননাতেই প্রকাশ করা সম্ভব না। কারণ কিছু বেদনা ভাষায় প্রকাশ অযোগ্য। কিন্তু তবুও লেখক নির্যাতনের ভয়াবহ অবস্থা ফুটিয়ে তুলতে সমর্থ হয়েছেন। এখানে তার সার্থকতা আছে। দ্বিতীয় যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তিনি সফল হয়েছেন তা হল ইউসুফ মুন্সি এবং বাচ্চুর মত পাকিস্তানপ্রেমী চরিত্রদের সৃষ্টি এবং তাদের মোহভঙ্গের বেদনার চিত্রায়ণে। দেখা যায় ইউসুফ মুন্সি ইসলামের নামে পাকিস্তানিদের সমর্থন করে। মুক্তিযোদ্ধাদের মনে করে ভারতের দালাল। জেল থেকে পালানোর সময় অসংখ্য লাশ পড়ে রয়েছে দেখে সে ভাবে ভারতের দালাল মুক্তিরা মেরে ফেলে রেখে গেছে। কিন্তু তার ভ্রান্তির অবসান হয় যখন সে নিজগ্রামে গিয়ে বাস্তবতার মুখোমুখি হয়। একইরকম বাচ্চু যে পাঞ্জাবীদের মত হওয়ার বাসনায় বাঙ্গালীদের ফকিন্নির জাত বলে গালি দেয় তারও মোহমুক্তি ঘটে পাকিস্তানিদের নির্যাতনে নিজ প্রাণের বিনিময়ে। তার মৃত্যুর সময়ে পাকিস্তানিদের গালি দিয়ে সে দেশের তৎকালীন অসংখ্য বাচ্চুদের পক্ষ থেকে পাকিস্তানিদের ঘৃণা জানিয়ে গেল। বাচ্চু চরিত্রের শেষ গালির মধ্যদিয়েই তার অন্তর্গত পৃথিবীতে অর্জিত হল জয় বাংলার বিজয়। এই গালিটা না দিলে উপন্যাসে একটা অপ্রাপ্তি থেকে যেত হয়ত।
Was this review helpful to you?
or
লেখকের 'জলেশ্বরী' বইটা পড়ে আমি অনেক মুগ্ধ হয়ে ছিলাম। আজ 'তেইল্যা চোরা' পড়লাম। চোর এবং তার পরিবার কিংবা চোরের আশেপাশের মানুষজনের গতিপ্রকৃতি নিয়ে বইটা। ১৯৭১ এ যখন যুদ্ধ শুরু হয়, তখন কারা যুদ্ধে নেমে পরে, আর কারা ভাল ছেলেটির মুখোশ পরে আত্মরক্ষায় ব্যস্ত ছিল, তার একটি চিত্র বইটিতে উঠে আসে। সহজ, সাবলীল ভাষায় অনেক কঠিন পরিস্থিতির বর্ণনা কি দারুণ ভাবেই না করেছেন লেখক। কখনো হাসি পেয়েছে, কখনওবা দুখে বুকটা ভারী হয়ে এসেছে। এক চোর পরিবারের কাহিনী, দেশ নিয়ে ভাবনা, ভাগ্যবিরম্বনার ফিরিস্তি ছিল বইটাতে। আরো ছিল আমাদের বাঙালীদের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম চরিত্রের বিশ্লেষণ। সবমিলিয়ে অনেক ভাল লেগেছে বইটা।।
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস “তেইল্যা চোরা” পড়া শেষ করলাম। বইয়ের লেখক ওবায়েদ হক। উপন্যাসে চিত্রিত হয়েছে তেইল্যা চোরা ফজরের মুক্তিযোদ্ধায় পরিণত হওয়ার গল্প। গায়ে অত্যধিক তেল মেখে চুরিতে যাওয়ার বদৌলতেই তার নাম তেইল্যা চোরা। বলরামপুরের ফজর আলীর বাপও ছিল চোর। সে হিসেবে ফজর আলী চোরের ছেলে চোর হয়েছে। চোরের ছেলের অন্য পেশায় যাওয়া সহজ ব্যাপার না। সুতরাং, চুরিই তার নিয়তি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার আগের অংশে দেখতে পাওয়া যায় ফজর আলীর চোরে পরিণত হওয়ার দৃশ্য। অতঃপর নিতান্তই সাধারণ ভাবে গল্প এগিয়ে যায়। উপন্যাসের শক্তিশালী অংশ হচ্ছে ফজর আলীর জেলজীবন থেকে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের নৃশংস বর্বরতার বর্ননায়। সত্যি কথা হলো, পাকিস্তানিরা যে পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছিল আমাদের দেশের মানুষদের উপর তা কোন বর্ননাতেই প্রকাশ করা সম্ভব না। কারণ কিছু বেদনা ভাষায় প্রকাশ অযোগ্য। কিন্তু তবুও লেখক নির্যাতনের ভয়াবহ অবস্থা ফুটিয়ে তুলতে সমর্থ হয়েছেন। এখানে তার সার্থকতা আছে। দ্বিতীয় যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তিনি সফল হয়েছেন তা হল ইউসুফ মুন্সি এবং বাচ্চুর মত পাকিস্তানপ্রেমী চরিত্রদের সৃষ্টি এবং তাদের মোহভঙ্গের বেদনার চিত্রায়ণে। দেখা যায় ইউসুফ মুন্সি ইসলামের নামে পাকিস্তানিদের সমর্থন করে। মুক্তিযোদ্ধাদের মনে করে ভারতের দালাল। জেল থেকে পালানোর সময় অসংখ্য লাশ পড়ে রয়েছে দেখে সে ভাবে ভারতের দালাল মুক্তিরা মেরে ফেলে রেখে গেছে। কিন্তু তার ভ্রান্তির অবসান হয় যখন সে নিজগ্রামে গিয়ে বাস্তবতার মুখোমুখি হয়। একইরকম বাচ্চু যে পাঞ্জাবীদের মত হওয়ার বাসনায় বাঙ্গালীদের ফকিন্নির জাত বলে গালি দেয় তারও মোহমুক্তি ঘটে পাকিস্তানিদের নির্যাতনে নিজ প্রাণের বিনিময়ে। তার মৃত্যুর সময়ে পাকিস্তানিদের গালি দিয়ে সে দেশের তৎকালীন অসংখ্য বাচ্চুদের পক্ষ থেকে পাকিস্তানিদের ঘৃণা জানিয়ে গেল। বাচ্চু চরিত্রের শেষ গালির মধ্যদিয়েই তার অন্তর্গত পৃথিবীতে অর্জিত হল জয় বাংলার বিজয়। এই গালিটা না দিলে উপন্যাসে একটা অপ্রাপ্তি থেকে যেত হয়ত। ইউসুফ ও বাচ্চু চরিত্রদের গুরুত্ব অনেক। কারণ আমরা বর্তমানে দেখতে পাই নব্য ইউসুফ মুন্সি ও বাচ্চুদের। ইউসুফ মুন্সি ও বাচ্চুর ভুল ভেঙ্গেছিল। যদিও এজন্য চরম মূল্য দিতে হয়েছে তাদের। কিন্তু বর্তমানকালের পাকি প্রেমী বাচ্চু ও ইউসুফদের ভুল কি ভাঙ্গবে? উপন্যাসে স্বল্পকালের জন্য লেখক এনেছেন নাদির গুন্ডা নামের এক গুন্ডাকে। যে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছিল। নাদের গুন্ডা নামে একজন সত্যি ছিলেন, হয়ত আপনি পড়ে থাকবেন তার কথা। এদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম গেরিলা শহীদ। যিনি এলাকার গুন্ডা ছিলেন কিন্তু ২৫ সে মার্চ পাকিস্তানিরা আক্রমণ করলে তার দলের লোকদের নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। তিনি ছাদ থেকে গুলি করে কিছু পাকিস্তানি আর্মিদের হত্যা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ধরা পড়েন এবং শহীদ হন। লেখক বইয়ের উৎসর্গপত্রে নাদের গুন্ডাকে স্মরণ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসে নাদের গুন্ডার মত শহীদকে তুলে আনার জন্য লেখককে ধন্যবাদ। উপন্যাসের প্রথমে সমাজের নিম্নশ্রেণীর প্রায় অস্পৃশ্য এক চোর পরিবারের দুঃখ, দুদর্শা এবং সমাজের উঁচু শ্রেণীর মাধ্যমে শোষনের সামগ্রিক চিত্র বর্ননায়, বলা যায় লেখক একপেশে অবস্থান নিয়েছেন। এরকম উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে প্রচুর হয়েছে যেখানে সমাজের উঁচুতলার নিষ্পেষন দেখানো হয়েছে। কিন্তু এসব অবস্থায় যদিও নিম্নশ্রেনী শোষিত হয় বা নির্যাতিত হয় তথাপি এখানে বাস্তব চিত্রটা তুলে আনতে দু শ্রেণীর ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া উঠে আসতে হবে সমভাবে বা নিরপেক্ষভাবে। লেখকের অবশ্যই একটা আদর্শ থাকতে পারে কিন্তু সামাজিক শ্রেণী সংঘাতের বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং বাস্তব চিত্রটাই হল সব সমাজের ক্ষেত্রে উঁচুতলার শোষণ- তাই কোন পক্ষ না নিয়েও শোষিতদের চিত্র তুলে ধরা সম্ভব। এই উপন্যাসের লেখকের হয়ত পক্ষপাতিত্ব ছিল ফজর আলীর পরিবারের প্রতি তাই শোষনের প্রেক্ষিতে তাদের কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। যাইহোক, উপন্যাসে ফজর আলীর চোর থেকে মুক্তিযুদ্ধে পরিণত হবার যে অসাধারন আখ্যান রচিত হয়েছে তাতে নিম্নশ্রেণীর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিচয় উদ্ভাসিত হয়। যাকে বলা যায় নমশুদ্রের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। যে চেতনা যতটা না রাজনৈতিক চেতনা থেকে উদ্ভুত, তার চেয়ে বেশি পাকিস্তানিদের শোষন নির্যাতন দেখে প্রতিশোধের স্পৃহা থেকে উৎসারিত। কর্নেল তাহের এদেরই ট্রেনিং দিয়েছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন যার ঘর পুড়েছে, যার স্বজনদের ধরে নেয়া হয়েছে ক্যাম্পে তারাই ভয়কে তুচ্ছ করে জীবনবাজি রেখে লড়তে পারবে। ফজরের কথায় সেইসব মানুষদের অনুভূতিই যেন ব্যক্ত হয়েছে – “আরাম আয়েশের দরকার নাই স্যার, আরাম আয়েশ মাডি দিয়া আইছি। খালি কয়ডা পাঞ্জাবী মারতে পারলেই অহন আরাম হইবো।” এই প্রতিশোধের স্পৃহাতে চোর ফজর আলী বদলে যায়। হয়ে উঠে একজন মুক্তিযুদ্ধা। সে বলে ওঠে, “আমি মুক্তিক্যাম্পে যামু, আমার যুদ্ধ শেষ অয় নাই।” আর পাঠকের চোখ ভিজে ওঠে- শ্রদ্ধায়। সেইসব কৃষক, শ্রমিক, চোর-ডাকাত, অথবা সেই নাদের গুন্ডার মত মানুষদের কথা মনে করে, যারা দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছেন। রিভিউ লিখেছেনঃ মুরাদুল ইসলাম