User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
শর্টকাটে বড়লোক হতে চান? চাকরির জন্য ঘুরতে ঘুরতে জুতার সুকতলা ক্ষইয়ে ফেলেছেন? বাসায় বাবা মা কথা শোনাচ্ছে? ছোট ভাইবোন দাম দিচ্ছে না? ব্যবসা করবেন কিন্তু পুঁজি নাই? পুঁজি ছাড়া ব্যবসা করতে চান? তবে আসুন আমার কাছে। না রে ভাই, চাকরিও দিতে পারব না, ব্যবসাও ধরিয়ে দিতে পারব না, তবে একটা গল্প শোনাতে পারব। শুনবেন? আপনার মতই এক বেকার ছেলের গল্প। পড়ালেখায় তেমন একটা ভালো ছিল না রঞ্জন। টেনেটুনে পাশ বলা যায়। চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেও কোথাও চাকরি পাচ্ছিল না। একেবারেই যে পায়নি তা নয়। সহপাঠিরা যেখানে দশ বারো হাজার টাকা মাইনের চাকরি করছে সেখানে ও অফার পেয়েছে বারোশো টাকার। অহমে আঘাত লাগায় করেনি। বাসার অবস্থাও ভালো নয়। বাবা উঠতে বসতে কথা শোনান। ছোটোবোনটা আবার পড়াশোনায় ভালো। পড়া শেষ করার আগেই ২০-৩০ হাজার টাকা বেতনের চাকরির অফার পাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই বাসায় ওর কদরও বেশি হবার কথা। একদিন একটা জায়গায় দেখলো, এক লোক ট্যাক্সি থেকে নেমে ভাড়া দিতে দিতে ড্রাউভারের সাথে ঝগড়া করছে। কাছে গিয়ে ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করলো ও। লোকটা বলল, "আর বলবেন না মশাই, আমি ডেইলি বাসা থেকে অফিসে আসি ট্যাক্সি ভাড়া আসে ২২ টাকা, কখনো ৫০ পয়সা কমবেশি হয়, এর বাইরে কখনোই যায়নি, অথচ এই লোকের মিটারে ভাড়া আসছে ২৮ টাকা। দিনে দুপুরে ডাকাতি করছে মিটার জাল করে। এদের পুলিশে দেয়া উচিৎ।" রঞ্জন ভাবলো, আসলেই ওদের পুলিশে দেয়া উচিৎ। গেলো থানায়, ডিউটি অফিসারের সাথে কথা বলল এটা নিয়ে। অফিসার বলল ধরে থানায় নিয়ে যেতে। পরদিন রঞ্জন এক কাজ করলো। আগের দিনের লোকটা যেখান থেকে ট্যাক্সিতে উঠেছিল সেখান থেকে একটা ট্যাক্সিতে উঠে ঐ জায়গায় নামলো। ভাড়া এসেছে ২৭ টাকা ৫০ পয়সা। তার মানে এর মিটারেও জালিয়াতি। ধরে নিয়ে গেলো থানায়। পুলিশ অনেক হুমকি ধামকি করলো। শেষে তিনশো টাকা মুচলেকা দিয়ে ড্রাইভার ছাড়া পেল। অফিসার ওখান থেকে ৫০ টাকা রঞ্জনকে দিয়ে দিল, আর বলে দিল এরকম কেস পেলেই ধরে থানায় নিয়ে আসতে। ৫০ টাকা দিয়ে শুরু হলো। থানায় থাকাকালীন, দুজন লোকের সাথে পুলিশের কনভার্সেশন শুনেছিল। পুলিশ বলছিল আগামীকাল সকাল আটটায় ঐ বিল্ডিং এর সাইটে বোমা মেরে আসবেন। আমরা আধঘন্টা পর ওখানে হাজির হয়ে মিস্ত্রিগুলোকে ধরে আনব, ব্যস কেল্লাফতে। রঞ্জন ভাবছিল, এই ইনফর্মেশনটা বেচা যায় কিনা। খুঁজে খুঁজে বের করলো ঐ বিল্ডিং, খোঁজ নিয়ে মালিককেও বের করে ফেলল। মালিককে বলল, আপনার উপকার করতে এসেছি। কাল আপনার সাইটে কিছু লোক বোমা মেরে যাবে, তার আধঘন্টা বাদে পুলিশ আসবে। আপনার মিস্ত্রিগুলোকে ধরে নিয়ে যাবে, আপনার আর বাড়ি তোলা হবে না। আমার কথামত চললে, আপনার এই ঝামেলায় পড়া লাগবেনা। পরদিন একটা ভ্যান আসলো, বোমা মেরে পালিয়ে গেল। খানিকবাদে পুলিশ আসলো, মিস্ত্রিগুলোকে ধরে আনতে পাঠালো। কিন্তু হায়, একি! মিস্ত্রি একটাও নেই, তবে কি তারা কাজে আসেনি? ঝামেলা থেকে বেঁচে গেল মালিক। রঞ্জনকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে দিলেন। আর বললেন যোগাযোগ রাখতে। শুরুটা এরকমই ছিল। যেখানে যাই শুনে সেটাই কোনো না কোনো ভাবে কাজে লাগিয়ে ফেলে। কারুর বিদ্যুৎ বিল বেশি এসেছে, কারুর টেলিফোনে বিল বেশি এসব থেকেও টাকা বানিয়ে নিতে শিখে গেছে রঞ্জন। তবে একটা ব্যাপারে আপনাদের ক্লিয়ার করা উচিৎ, রঞ্জন কখবোই অসদুপায়ে টাকা কামায়নি। কাউকে ঠকিয়েও কামায়নি। বরং যারা প্রতিনিয়ত মানুষকে ঠকাচ্ছে তাদের কাছ থেকে ও দুটা পয়সা নিচ্ছে কৌশলে। আস্তে আস্তে টাকার পরিমাণ বাড়তে থাকে, সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে রিস্ক। কিছুদিন পর রঞ্জন খেয়াল করে এই লাইনে প্রচুর কাজ, কাজের অভাবই নেই, কিন্তু রিস্কও আছে মেলা। অবাক হয়ে ভাবে ও, যে কখনো মানুষের সাথে ভালোভাবে কথা বলতেও পারতো না ভয়ে, আজ সে সমাজের উপরমহলের লোকজনের সাথে অবলীলায় অ্যাটিটিউড নিয়ে কথা বলছে। আজ থেকে ষোলো বছর আগে এই বইটা একবার পড়েছিলাম। এত ভালো লেগেছিল, বলার মতন না। মনে মনে এরকমই একটা বই চাচ্ছিলাম। রঞ্জনের প্রতিটা ঘটনা তখনই মানস পর্দায় জীবন্ত দেখেছিলাম আমি। মনে মনে ভেবেছিলাম, আমিও রঞ্জনের মত হবো। ওর মত ভয়ডরহীন, পুলিশ থেকে শুরু করে মন্ত্রীর সাথেও বুক ফুলিয়ে কথা বলব, ওরা আমার সামনে নেতিয়ে থাকবে, কারণ ওদের গোপন কিছু কথা আমার ভল্টে থাকবে। ওগুলো সবই ছিল ছোট একটা বাচ্চার ফ্যান্টাসি। কিন্তু আজ, এই এতকাল পরেও যখন একই ইচ্ছা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, সেটাকে বাচ্চার ফ্যান্টাসি বলে উড়িয়ে দেয়া যায়? বইটি পড়তে শুরু করলে, একদম শেষ না করে আপনি রাখতেই পারবেন না। রঞ্জনের সাথে ঘুরে বেড়াবেন পুরো কলকাতা। কথা বলবেন পুলিশ থেকে শুরু করে উপর মহলের লোকজনের সাথেও। কামিয়ে নেবেন বেশ কিছু টাকা। টাকা, যার উপর তিনটা সিংহ রয়েছে। জলছবির সিংহ।
Was this review helpful to you?
or
বইটা মোটামুটি।