User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগীতা #Book_Review বইয়ের নামঃ কালো হাত লেখকঃ ডাঃ নীহাররঞ্জন গুপ্ত বইয়ের ধরণঃ রহস্য উপন্যাস প্রকাশকালঃ ১৯৬০ প্রকাশনীঃ মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ পৃষ্ঠাঃ ১৪৮ মূল্যঃ ৭০ ভারতীয় টাকা / ১২৬ বাংলাদেশী টাকা (রকমারি) লেখক পরিচিতিঃ ডাঃ নীহাররঞ্জন গুপ্ত (জন্মঃ ৬ই জুন, ১৯১১ - মৃত্যুঃ ২০শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৬) একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক। তৎকালীন যশোরের লোহাগড়া উপজেলার ইটনায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবার ছিল বিখ্যাত কবিরাজ বংশীয়। তাঁর পিতা-মাতার নাম সত্যরঞ্জন গুপ্ত এবং লবঙ্গলতা দেবী। তিনি ছিলেন জনপ্রিয় রহস্য কাহিনীকার এবং চিকিৎসক। তিনি বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র কিরীটি রায়ের স্রষ্টা হিসেবে উপমহাদেশে স্মরণীয় হয়ে আছেন। ১৯৩০ সালে কোন্নগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন অর্জন করেন। কৃষ্ণনগর কলেজ থেকে আই.এসসি ডিগ্রী অর্জনের পর তিনি কলকাতায় কারমাইকেল মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি বিদ্যায় কৃতকার্য হন।এরপর তিনি লন্ডন থেকে চর্মরোগ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। শৈশবকাল থেকেই তিনি সর্বদাই স্বপ্ন দেখতেন লেখক হবার। একসময় তিনি শান্তিনিকেতনে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আশীর্বাদ গ্রহণসহ তাঁর স্বাক্ষর বা অটোগ্রাফ সংগ্রহ করেন।আঠারো বছর বয়সে নীহাররঞ্জন তাঁর প্রথমউপন্যাস রাজকুমার রচনা করেন। ইংল্যান্ডে অবস্থানকালীন সময়ে তিনি গোয়েন্দা গল্প রচনায় আগ্রহান্বিত হয়ে স্বীয় লেখার উত্তোরন ঘটান এবং আগাথা ক্রিস্টির সাথে সাক্ষাৎ করেন। উপমহাদেশীয় প্রেক্ষাপট ও উপযোগী করে রচিত হয়েছে তাঁর রহস্য উপন্যাসগুলো। এ পর্যন্ত প্রায় পঁয়তাল্লিশটি উপন্যাসকে বাংলা ও হিন্দি ভাষায় চলচ্চিত্রায়ণ করা হয়েছে যথাক্রমে টালিউড ও বলিউডের চলচ্চিত্রাঙ্গনে। এছাড়াও তিনি শিশুদের উপযোগী সাহিত্য পত্রিকা সবুজ সাহিত্যের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। কিরীটী-সুব্রত চরিতঃ “কিরীটী রায়। গোয়েন্দা। ভদ্রভাষায় যাকে বলে রহস্যভেদী। কিরীটী রায়ের উচ্চতা প্রায় সাড়ে ছয় ফুট লম্বা, গৌর বর্ণ, বলিষ্ট চেহারা। মাথাভর্তি কোকড়ানো চুল ব্যাকব্রাশ করা। চোখে পুরু লেন্সের কালো সেলুলয়েডের ফ্রেমের চশমা। দাড়িগোফ নিখুঁতভাবে কামানো। মুখে হাসি যেন লেগেই আছে, সদানন্দ, আমুদে!” এই হলো কিরীটী রায়ের পরিচয়। কলেজ জীবনে শখের তাড়নায় যেই নেশার শুরু, ক্রমে তাই তার বৃত্তি বা পেশায় পরিণত হয়! অন্যান্য গোয়েন্দার মত কিরীটি রায়েরও একজন সমকর্মী আছে। নাম সুব্রত। তবে অন্যান্য গোয়েন্দাদের সহকর্মির তুলনায় সুব্রত অনেকটা আলাদা। ফেলুদার ক্ষেত্রে যেমন তোপসে, হোমসের ক্ষেত্রে যেমন ওয়াটসনের জবানীগুলো কিছুটা তোষামোদি মনে হয়, সুব্রত তেমনটা না। সে সরাসরি বন্ধু। কিরীটীকে যেমন সে সাহায্য করে তেমনি সমালোচনা করতেও পিছ পা হয় না! আলোচ্য বইয়ের সার-সংক্ষেপঃ আলোচ্য উপন্যাসের গল্প শুরু হয় একটি চিঠির মাধ্যমে। কোন এক অজ্ঞাত সোর্স থেকে চিঠি আসে স্বনামধন্য রহস্যভেদী কিরীটী রায়ের কাছে। তাতে লেখা থাকে একজন অসুস্থ ব্যক্তি যার নাম সন্তোষ চৌধুরী তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছেন মধুপুর। কিরীটী ও সুব্রত গেলেন। মধুপুরে পা রাখতেই দেখতে পেলেন তাঁদের নিতে কোন গাড়ী আসেনি, যদিও আসার কথা ছিল। ব্যক্তিগতভাবে তারা এসে পৌঁছালেন “মাধবী ভিলা”য়। জানতে পারলেন সন্তোষ চৌধুরী খুন হয়েছেন! পিঠে আমুল একটা ছোরা বিধে আছে! তার পাশে একটা কালোপাঞ্জার ছাপ! তদন্ত শুরু হলো। কিন্তু শুরু হবার আগেই আরো একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি খুন হলো ওই সন্তোষ চৌধুরির বাড়ির আঙ্গিনাতেই। তার পিঠেও ছুরি মারা এবং পাশে কালোপাঞ্জা। ব্যস! শুরু হলো জোর তদন্ত। একে একে চমক আসতে থাকলো। এক পর্যায় কিরীটী জানতে পারলেন তিনি যেই চিঠির উপর ভিত্তি করে মধুপুর এসেছিলেন, সেটি সন্তোষ চৌধুরীর লেখা না। তাহলে কার লেখা? রহস্য আরো বাড়লো। একের পর এক প্যাচ বাঁধতে থাকল গল্পে। সেই সাথে বের হয়ে আসতে থাকলো এক ইতিহাস। জানা গেলো প্রেম, ভালবাসা, বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতিহিংসায় মেশা এক অদ্ভুত উপাখ্যান। এলো বিপ্লব, এলো শান্তি, এলো সন্দেহ, এলো মৃত্যু... আর কিছু মানুষের প্রথম জীবনের ইতিহাস! পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ কিরীটী রায় সম্পর্কে আমি প্রথম শুনি ক্লাস সিক্সে পড়ার সময়। আমার গৃহশিক্ষকের মুখে! পরবর্তিতে অনেক খুঁজেও খুলনার মত মফঃস্বল শহরে এই গোয়েন্দার কোন বইই খুজে পাইনি!অতঃপর ঢাকাতে পড়াশোনার খাতিরে আসার পর আমার “কিরীটী” পড়া হলো। কালো হাত বইটিই আমার পড়া প্রথম কিরীটী উপন্যাস। বইটা পড়ার পর কিছুক্ষণ চুপ করে পড়ে ছিলাম। মনে হচ্ছিল, এটা কি হইলো! কোন জায়গার গল্প কোথায় গিয়ে ঠেকলো! এর আগে ব্যোমকেশ, ফেলুদা, শার্লক আমার পড়া হয়েছে, কিন্তু এতোটা মুগ্ধ আগে কখনো হয়েছি বলে মনে পড়ে না। পুরা উপন্যাস ভরা প্যাচ! বইটি পড়া শেষ করে এটা মানতে বাধ্য হয়েছি যে লেখক পাঠকের মস্তিষ্ক নিয়ে খেলতে বেশ ভালোভাবেই সিদ্ধহস্ত! প্রথমে গল্প শুরু করেন। তারপর আস্তে আস্তে একজন চরিত্রকে সন্দেহাভুক্ত করেন। পাঠককে সেদিকে নিয়ে যেতে যেতে হুট করে আবার ঘুরিয়ে নেন। তারপর আস্তে আস্তে আরেকজনকে সাস্পেক্ট হিসেবে তৈরী করেন। কিছু দূর আবার পাঠককে আশাহত হতে হয়! এভাবেই চলতে থাকে পুরো বইটা! মজার ব্যাপার কি জানেন? ১৪৮ পৃষ্টার এই বইটিতে ১৪৪ পৃষ্ঠা পড়ার সময়ও আপনি বুঝতে পারবেন না আসল আসামী কে!!! তবে বইয়ের গল্পটা কমপক্ষে ৫০ বছর পুরোনো। তাই তৎকালীন সামাজিক প্রেক্ষাপট, সাহিত্যের ভাষা, লেখনী এখনকার সময় থেকে অনেকটা আলাদা। পাঠকদের মধ্যে যারা ফেলুদা পড়তে অভ্যস্ত, তাঁদের কাছে কিছুটা অন্যরকম মনে হতে পারে। তবে তাই বলে গল্পের গতি কমার কোন সম্ভাবনা নেই! কালো হাত বইটি পাঠককে প্রথম থেকে শেষ অব্দী ধরে রাখতে পূর্নমাত্রায় সক্ষম! আমি ব্যোমকেশ পড়িনি, তবে ফেলুদা, শার্লক পড়েছি। তাঁদের তুলনায় কিরীটি যথেষ্ট আলাদা। সে অনেক বেশী ম্যাচুরড, অনেক বেশি বুদ্ধিদীপ্ত তার আচরণ ও কথাবার্তা! বিশেষ করে ফেলুদা মূলত ছোটদের হলেও কিরীটী ছোটদের বই না। কিন্তু গল্পে কিরীটির আত্ম অহংকারটা কিছুটা চোখে বিধেছে আমার। গল্পের অনেক জায়গাতেই রহস্য উন্মোচনের সময় তাঁকে বলতে শুনি, “আপনি যেই হোন না কেন, ভুলে যাবেন না আমি কিরীটী রায়” ব্যাপারটাতে আরেকটু ভদ্রতা থাকলে ভালো হত! তবে সর্বোপরি কিরীটী রায়ের গল্প বেশ চমৎকার লেগেছে আমার। তাই যারা এখনও পড়েননি, দ্রুত পড়ে ফেলুন, নাহলে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম এই বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্রকে আসলেই মিস করবেন! আর হ্যাঁ! কিরীটীর বই কিন্তু নীলক্ষেতে পাওয়া যায় না। এটির শুধুমাত্র অরিজিনাল ইন্ডিয়ান প্রিন্টই সম্ভব। তবে তার দাম যে খুব বেশি, তা না! rokomari.com’এ ২০০ টাকার ভেতর কিরীটীর সিঙ্গেল বইগুলো পেয়ে যাবেন অনায়াসেই! ধন্যবাদ! হ্যাপি রিডিং! :) রেটিংঃ ৪.৫/৫
Was this review helpful to you?
or
সাহিত্যের কচকচানি বা সস্তা প্রেমের আবেগঘন সংলাপে পরিপূর্ণ উপন্যাসে ত্যাক্ত-বিরক্ত হয়ে ওঠা কৌতুহলী পাঠকহৃদয়কে স্বস্তি দিতে গোয়েন্দা ও রহস্যধর্মী সাহিত্য চর্চার শুরু। বইপড়ুয়া বাঙালির মধ্যে ফেলুদা, ব্যোমকেশ বা কাকাবাবু পড়েন নি, অন্তত নাম শোনেন নি- এমন লোক বোধহয় একজনও খুঁজে পাওয়া যাবে না। এদের পাঠকহৃদয় জয় করা তুমুল দাপটে তুখোড় আরেক গোয়েন্দা অনেকের কাছেই অচেনা রয়ে গেছেন। রহস্যপ্রিয় ও গোয়েন্দা কাহিনীর ভক্ত পাঠক-পাঠিকা, আসুন পরিচয় করিয়ে দিই #কিরীটীর সঙ্গে। নীহাররঞ্জন গুপ্তের মননে বাঙালি কিন্তু পোশাকে সাহেবির গোয়েন্দা চরিত্র কিরীটী রায়। "প্রায় সাড়ে ছ'ফুট লম্বা। গৌরবর্ণ। মজবুত হাড়ের ফ্রেমে বলিষ্ঠ এক পুরুষ। মাথাভর্তি ব্যাকব্রাশ করা কোঁকড়ানো চুল। চোখে পুরু লেন্সের কালো সেলুলয়েডের চশমা। নিখুঁতভাবে কামানো দাড়িগোঁফ। ঝকঝকে মুখে হাসি যেন লেগেই আছে। আমুদে, সদানন্দ এবং প্রখর রসবোধ। অসাধারণ বাকচাতুর্য। কিন্তু মিতবাক।" -লেখক এভাবেই পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন সত্যানুসন্ধানী কিরীটী রায়কে। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম গোয়েন্দা চরিত্র নীহাররঞ্জন গুপ্তের এই কিরীটী রায়। কাহিনী সংক্ষেপ: অজ্ঞাত পরিচয়ে বিপন্ন এক ব্যক্তি জীবন সংশয়ে সাহায্য করতে যাবার জন্য সনির্বন্ধ অনুরোধ করে চিঠি পাঠিয়েছেন। সে চিঠির বক্তব্যে ও লেখার অসংগতি চোখ এড়াল না প্রখর দৃষ্টির অধিকারী কিরীটীর। ব্যস! শুরু হয়ে গেল রহস্য আর রহস্যের জট খোলা। বন্ধু ও সহকর্মী সুব্রতকে সাথে করে চেপে বসলেন পাঞ্জাব এক্সপ্রেসে। পত্রদাতার দেয়া ঠিকানা মাধবী ভিলায় পৌছে দুজনেরই চক্ষু চড়ক গাছ। খুন হয়েছেন সাহায্যকামী পত্রদাতা সন্তোষ চৌধুরী। পিঠে আমূল বিঁধে আছে ছোরা আর পাশে কালো পাঞ্জার ছাপ। তদন্ত শুরু করতে না করতে আরেক ধাক্কা। সন্তোষ চৌধুরীরই বাড়ির আঙিনায় পাওয়া গেল আরো একটি মৃতদেহ। বলাবাহুল্য, এর পিঠে একই কালোপাঞ্জার ছাপ। শুরু হল তদন্ত। তদন্তের সূত্র ধরে যেন মাটি খুঁড়ে বেরিয়ে এল দীর্ঘদিনের লুক্কায়িত উপাখ্যান; যেখানে বর্তমানের মূল রোপিত আছে সুদূর অতীতে। এল বিপ্লব, প্রেম, প্রতিহিংসা, সন্দেহ, ঘৃণা এবং মৃত্যুর ইতিহাস। প্রতিক্রিয়া: রহস্যপ্রেমী পাঠক হিসেবে ফেলুদা, ব্যোমকেশ, কাকাবাবু পড়া শেষে খুঁজে ফিরছিলাম আরো আরো রহস্যের সন্ধানদাতাকে। এই বইটির খোঁজ পেয়ে যারপর নাই তৃপ্তি পেয়েছি। লেখক এবং লেখকের অনবদ্য সৃষ্টি কিরীটী দুইই এই বইয়ের মাধ্যীমে প্রথম চেনা। প্রথমবারেই মুগ্ধ। কাহিনী যত এগিয়েছে প্যাঁচের উপর প্যাঁচ কষেছেন কিরীটীর স্রষ্টা। যখন মনে হয়েছে এই বুঝি ধরে ফেলেছি মোটিভ, তখনই বেঁকে গেছে রহস্যের ধারা। শেষ পৃষ্ঠায় না যাওয়া অবধি আসল অপরাধীর খোঁজ পাই নি। ভাষার দিক থেকে কিছুটা সেকেলে গোছের হওয়ায় প্রথমদিকে মনোযোগী হয়ে উঠতে একটু সময় লাগলেও সাসপেন্সে ভরা সাহিত্যরসে ডুবে যাওয়ার পর বই শেষ না করে আর উঠতে পারি নি। এক কথায় বলব, যারা এখনো এ রস হতে বঞ্চিত আছেন শিগগির পান করুন। আশা করি তৃপ্ত না হয়ে পারবেন না।
Was this review helpful to you?
or
কাহিনীর শুরু একটা চিঠি দিয়ে। অজ্ঞাতকুলশীল এক ব্যাক্তি স্বনামধন্য রহস্যভেদী কিরীটী রায়কে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠির বিষয়বস্তু হল সন্তোষ চৌধুরী নামের এক ব্যাক্তি প্রাণ সংশয়ে ভুগছেন। কিরীটীকে অনুরোধ করেছেন পত্রপাঠ মধুপুরে তার বাড়ি মাধবী ভিলায় চলে আসার জন্য। জায়গাটা কলকাতা থেকে অনেকদূর। ট্রেনে যেতে চারঘন্টা লাগে। সন্তোষ চৌধুরী বলেছেন ষ্টেশনে তাদের জন্য গাড়ি থাকবে। যারা ব্যোমকেশ, ফেলুদা পড়েছেন তাদের কাছে এই চিঠিটা পরিচিত। ব্যোমকেশ এবং ফেলুদা দুজনেই অসংখ্যবার এরকম চিঠি পেয়েছেন। পরদিন প্রাণপ্রিয় বন্ধু সুব্রতকে নিয়ে কিরীটী রওনা হয় মধুপুর। যথাসময়ে পৌঁছেও ওখানে তারা কোনও গাড়ি দেখতে পায়না। ভাড়াকরা গাড়ি নিয়ে মাধবী ভিলায় পৌঁছেই যেটা দেখতে পায় তারজন্য ওরা প্রস্তুত ছিলনা। খুন হয়েছেন সন্তোষ চৌধুরী। পিঠে আমুল একটা ছোরা বিধে আছে। তার পাশে একটা কালোপাঞ্জার ছাপ। তদন্ত শুরু করবার আগেই মাধবী ভিলার আঙিনায় আরেকজন অজ্ঞাতকুলশীল ব্যক্তি খুন হল। তার পিঠেও ছুরি মারা হয়েছে এবং কালোপাঞ্জার ছাপ রয়েছে। মূলত কালোপাঞ্জা থেকেই বইয়ের নামকরণ করা হয়েছে কালো হাত। পারতপক্ষে দুটো খুনই সাধারণ প্রতিহিংসার বশবর্তী মনে হলেও এর পেছনে রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। তদন্তের এক পর্যায়ে কিরীটী জানতে পারে তাকে যে চিঠিখানা পাঠানো হয়েছিল সেটা আদতে সন্তোষ চৌধুরীর হাতের লেখা নয়। তাহলে? ক্রমেই রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। এই খুনগুলোর পেছনে জড়িয়ে আছে সন্তোষ চৌধুরীর প্রথমজীবনের গল্প। কিরীটি সিরিজের এবং নীহাররঞ্জন গুপ্তের লেখা এটাই আমার প্রথম পড়া বই। যদিও আমার কাছে কালো ভ্রমর এবং ইস্কাবনের টেক্কা ছিল, কিন্তু সাইজে ছোট বলে কালো হাতই আগে পড়লাম। পড়ে যেটা বুঝলাম কিরীটী অনেক আগেই ধরা উচিৎ ছিল আমার। প্যাঁচ এর উপর প্যাঁচ। যখনই মনে হচ্ছিল এই বুঝি প্যাঁচ খোলা শুরু হল তখনই নতুন আরও কয়েকটা প্যাঁচ খেলিয়েছেন লেখক। সাসপেন্স? ভরপুর। প্রথম দু পাতা পড়লেই এই বই ছেড়ে উঠা সম্ভব না। এই বইয়ের ভাষা যদিও কিছুটা দুর্বোধ্য তবুও আপনি এর আকর্ষণ এড়িয়ে যেতে পারবেন না। আমার কাছে মনে হয়েছে ভাষাটা সাধুভাষা থেকে চলিতভাষায় পরিবর্তিত হওয়ার প্রথম দিকের ভাষা। ভাষাটা চলিত কিন্তু শব্দগুলো যেন সাধু। খুব সহজেই যেটা বর্ণনা করা যায় সেটা একটু জটিল করেই বর্ণনা করেছেন লেখক। তবে এরজন্য এই বইয়ের মজারস আরোহণ থেকে আপনি বিন্দুমাত্রও বঞ্চিত হবেন না। অন্যান্য গোয়েন্দাদের মত কিরীটীরও একজন সহকারী বলুন আর বন্ধুই বলুন আছে। সুব্রত রায়। এবং কাহিনীর প্রথমদিকে সুব্রতর ডায়েরী থেকেই তুলে দেয়া হয়েছে। এর আগে আমি ব্যোমকেশে এটা দেখেছি। এই দিকটায় ব্যোমকেশের সাথে ভালই মিল আছে কিরীটীর। তাছাড়া কোনও রহস্যের কিনারা করা ছাড়া কিরীটী কখনও মুখ খুলেনা। এটাও ব্যোমকেশে পেয়েছি। তবে একটা ব্যাপার ব্যোমকেশ থেকে আলাদা। সেটা হল আত্মবড়াই। কাহিনীর দুজায়গায় কিরীটী বলে, আপনি যেই হোন না কেন, ভুলে যাবেন না আমি কিরীটী রায়। রহস্য উদঘাটন এর ব্যাপারে এই মন্তব্য করেছিল কিরীটী। এখানে আরেকটু বিনয়ী হলে ভালো হত। তবে সবমিলিয়ে কিরীটীকে ভালো লেগেছে আমার। আফসোস, কেন এত দেরিতে কিরীটীর সাথে পরিচয় হল :(