User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
তারানাথ তান্ত্রিক আমার পড়া সেরা চরিত্রগুলোর মধ্যে একটা ❤
Was this review helpful to you?
or
wonderful
Was this review helpful to you?
or
উনিশ শো পনেরো সাল। ইউরোপে প্রথম মহাসমর সবে শুরু হয়েছে। কিছু বছরের ব্যবধানে যে দুটি বিশ্বযুদ্ধ মানবেতিহাসকে ‘আমূল বদলে সম্পূর্ণ নতুন পথে প্রবাহিত করবে, তার আভাসমাত্রও কেউ তখনো জানে না।’ শুরুটা হয়েছে এভাবেই। ধীরে ধীরে গল্প জমাট বাঁধতে শুরু করে। পড়তে পড়তে গভীর থেকে আরো গভীরে যেতে থাকবেন। বুক ঢিপঢিপ করবে অজানা ভয়ে। কখন কি হয়, কখন কি হয় একটা ভাব আপনার মনে চলে আসবে। ব্যক্তিগত ভাবে আমার পড়া বইয়ের মধ্যে অলাতচক্র অন্যতম সেরা বই। গল্প এগিয়েছে দারুন গতিতে। পুরো গল্পটাকে অামরনাথ নামক সুতো দিয়ে লেখক গেঁথে দিয়েছেন অষ্টেপৃষ্ঠে। গল্প বলার ধরনটা বেশ উপভোগ্য ছিল। এই কারণে আমার কাছে তারানাথ তান্ত্রিকের চেয়ে অলাতচক্র বেশি উপভোগ্য মনে হয়েছে।
Was this review helpful to you?
or
মোড়ের দোকান থেকে পাসিং শো সিগারেট নিয়ে এসেছেন? অথবা তেলে ভাজা? মাসের কেবল শুরু। কিশোরী আর লেখক দুজনের কেউই খালি হাতে আসেন না। তাই আপনারাও খালি হাতে আসবেন না। তারানাথ জ্যোতিষার্ণবের ঘরে শান্ত হয়ে বসে যান। চারি এসেছে শ্বশুরবাড়ি থেকে। জ্যোতিষী না হয়েও আপনি বুঝে নিতে পারেন তারানাথের আজ মন বেশ ভালো। "সিগারেটের দগ্ধাবশেষ ছাইদানি হিসেবে ব্যবহৃত নারকেলের মালায় গুঁজে দিতে দিতে" তারানাথ আপনাদের উদ্দেশ্যে অলৌকিক গল্প শুরু করবে। দুঃখিত গল্প নয়। গল্প বলা একদমই উচিত না। কিশোরী রাই গল্প বলে বলে তারানাথের জীবন অতিষ্ঠ করে ফেলেছে। আপনারা বরং একে অভিজ্ঞতার গল্প বলা উচিত। তারানাথ আসতে আসতে বরং কিছু কথা বলে দিই। তারানাথ পর্বে দুটি বই। তারানাথ তান্ত্রিক এবং অলাতচক্র। কোনটা আগে পড়বেন? তারানাথ তান্ত্রিকই আগে পড়া ভালো। তারানাথ তান্ত্রিকের জীবনের অভিজ্ঞতা ঘিরে দুই বই হলেও অলাতচক্রে আপনি তারানাথের চেয়েও রহস্যময় একজনকে খুঁজে পাবেন। সে লোক স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন দেখার রাতে সে কিছুই খায় না। তার বয়স ত্রিশ চল্লিশ হতে পারে। আবার হতে পারে পঞ্চাশ থেকে ষাট। বড়ই অদ্ভুত সে। পরনে আধময়লা ধুতি আর হাফহাতা শার্ট। তার নাম অমর। অমর জীবন। অমর আছে তারানাথের বাবা আদিনাথের সাথে সারুসে চ্যাটার্জির বাড়ির বৈঠকে। অমর আছে তারানাথের সাথে অন্ধকার এক মন্দিরে। অমর আছেন জয়তলা গ্রামের জমিদার দেবদর্শন মুখোপাধ্যায় এর ঘরেও। যে ঘরে তারানাথের জীবনে আশ্চর্যজনক কিছু ঘটনা ঘটে গিয়েছে। অমর সংখ্যা বলে চায়... অমর জড়িয়ে থাকে তারানাথের শুরু থেকে শেষে। তবে একটা কথা, তারানাথের আসরে ভোজনরসিক মানুষ হলে আপনার বিপদ আছে। ভয়ংকর খাবারের গল্প করতে পারে তারানাথ। এতসব লুচি, তরকারি আর প্রসাদের কথা শুনে আপনার খিদে পেয়ে যেতে পারে। কলকাতার মট লেনের কিছুটা ভিতরের দিকে বাড়িতে আপনিও আমন্ত্রিত। তারানাথ তান্ত্রিকের জীবনের গল্পে। তারানাথের বয়স হয়েছে। তবে গল্প কমেনি। তারানাথ থাকবেন, পৃথিবী থাকবে আর থাকবে অমরজীবন। পাঠ প্রতিক্রিয়া : তারানাথ তান্ত্রিক পড়ার পর যখন জানতে পেরেছি আরো একটি বই আছে তাকে নিয়ে, আমি রীতিমতো অস্থির হয়ে পড়ি বইটির জন্য। বহু খোঁজাখুঁজি করার পর বই হাতে আসার পর সেটা শেষ করতে একরাতও প্রয়োজন হয়নি। দুই বছরের অপেক্ষা যে বইয়ের জন্য সে বই এক রাতে শেষ করা অন্যায় নয় নিশ্চয়। আমি নিজে বইটি পড়ে বারবার চমকে উঠেছি। লেখক তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এর সাবলীল লেখনীর কারণে বইটি অনেক বেশি মুগ্ধতা ছড়িয়েছে। হয়ত সাধারণ রাত্রিযাপন বা খেতে বসার গল্প, হয়ত দুর্গাপূজার কথা হচ্ছে... কিন্তু তাও যে এতটা নিপুণভাবে বলা হচ্ছে, যে লেখাটা একটা তুলি, কাগজটা ক্যানভাস। যেখানে প্রতিটি আঁচড়েই আছে সৌন্দর্য কথা। বইটির জন্য লেখকের সহধর্মিণীর কাছে কৃতজ্ঞ। লেখকের অসুস্থ সময়ে তিনি পাশে ছিলেন। লেখক বলে যাবার পর তিনি সেটি কাগজে লিখেছেন... এক নজরে বই - অলাতচক্র লেখক - তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশক - মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রচ্ছদ - অনুপ রায় মূল্য - ২৭০/- (বাংলাদেশ) রেটিং - ৫/৫
Was this review helpful to you?
or
লোকটাকে দেখে বয়স বোঝার উপায় নেই। ত্রিশ - বত্রিশ হতে পারে, আবার ষাট - পঁয়ষট্টি হলেও অবাক হবার কিছু নেই। পরনে ময়লা খেটো ধুতি আর ফতুয়া, মাঘের শীতেও খদ্দেরের মোটা চাদরটা কাঁধে ফেলে রেখেছে। খোঁচা খোঁচা দাড়ি আর এলোমেলো চুলের লোকটাকে তবু সাধারণ পাগল বলে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। উজ্জ্বল চোখদুটিতে কি যেন আছে! সোজা সামনের দিকে চেয়ে আছে, কিন্তু কিছুই যেন দেখছে না, আবার সবই দেখছে। পাগল, কিন্তু ঠিক পাগলের মতন নয়! বালক আদিনাথ চক্কোত্তির উঠোনে এসে দাঁড়ালো লোকটা মাঘের এক সকালে। বললো, 'আমি পথিক। আজ এখানে ভাত খাবো। এই ভিটেতে আজ রাতে স্বপ্ন দেখতে হবে।' তার মানে কি সে-ই জানে! তবু সে যুগে অতিথিকে নারায়ণ জ্ঞান করা হতো, বাবাও তাকে ফেরালেন না। নাম বললো নিজের, 'অমর, অমরজীবন। পিতা ঈশ্বর সার্বভৌম।' ভারী অদ্ভুত লোক! সারাদিন একটা নিমের কঞ্চি দিয়ে উঠোনের চারিধার মাপলো আর কি যেন বিড়বিড় করলো, 'আটত্রিশ? আর চার কই তবে?' শুকনো পাতা জড়ো করে আলপনা সাজালো দাওয়ায়। দুপুরে খেলো একটুখানি, যেন শিশুর আহার। রাতে তো খেলোই না। সে রাতে আদিনাথ ঘুম ভেঙে দেখেন, অমর নাটমন্দিরের যে বারান্দায় শুয়েছে, ওদিক থেকে নীলাভ একটা আলো ছিটকে আসছে নিকষ অন্ধকার চিরে। পরদিন সকালে অমরজীবন অনেকরকম ভেলকি দেখালো। ভেলকি? নাকি অলৌকিক শক্তি? এ বাড়ির ছোট কর্তা সন্ন্যাস জীবন নিয়েছেন বহু আগে, ঠাকুমাকে সেই হারানো ছেলের সাক্ষাৎ করিয়ে দিল দিব্যদৃষ্টিতে। বাড়ির উত্তর ভিতের ইঁট খসিয়ে বংশের কিংবদন্তি হয়ে যাওয়া বিষ্ণুমূর্তি খুঁজে দিল। জানিয়ে দিল, পনেরোই ফাল্গুন শুক্লপক্ষের দিন ঠাকুমা দেহত্যাগ করবেন। সবশেষে বাবাকে বললো, 'আপনার বংশ সাধকের বংশ। প্রতি এক পুরুষ পর পর, এ পরিবারে এক অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি আসবেন। তার জন্মের সময় আকাশে নীল উল্কাপাত হবে।' চলে গেলো আজব লোকটা। পনেরো ফাল্গুন সকালে পুজোর ঘরে ঠাকুমা সেই যে ঠাকুরের সামনে গড় হলেন, আর উঠলেন না। সন্ধ্যায় দাহ সেরে সকলে ফিরেছেন যখন, শ্মশানবন্ধুদের একজন বাবাকে ডেকে বললেন, 'দেখো তো হে, বাইরে কে তোমাকে ডাকছে। তার নাকি আসার কথা ছিল? নাম বলছে অমরজীবন।' বাবা ছুটে বাইরে এলেন। কোথায় কে? কেউ নেই! শুধু খাঁ খাঁ উঠোনে পাক খেয়ে খেয়ে যাচ্ছে আবছা অন্ধকার। কে এই অমরজীবন? কেউ তার পরিচয় জানে না। তবে অমরের শেষ ভবিষ্যৎবাণীটাও ফললো। আদিনাথ চক্রবর্তীর তৃতীয় পুত্রের জন্মের সময়, আকাশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত ছুটে গেল বিশাল নীল এক উল্কা। সে ছেলের নাম রাখা হলো তারানাথ। ছেলেটির যত বয়স হলো, দেখা গেলো সে চমৎকার মেধাবী। ভালো সংস্কৃত জানে। কিন্তু ঘরে তার মন টেকে না। নিরুদ্দেশ হয়ে যায়, পথে পথে ঘুরে বেড়ায়। একসময় লোকে তাকে চিনলো এক নামেই - তারানাথ তান্ত্রিক! বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর মৃত্যুর পর তার পুত্র তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় তারানাথ তান্ত্রিক এর বিখ্যাত চরিত্রটিকে কালের গর্ভ থেকে তুলে আনেন। তারই লেখনীতে শেষ কিস্তি 'অলাতচক্র' বইটি। উপন্যাসে তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় অবতারণা করেছেন অমরজীবন বলে রহস্যময় এক চরিত্রের। উপন্যাসে বর্ণিত গল্পটা প্রথমদিকে কেবলই তারানাথের জীবনলব্ধ টুকরো অভিজ্ঞতার ডালি মনে হবে। কিন্তু একটু পরেই গল্পগুলো জোড়া লাগতে শুরু করে, আর সবকিছুর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে অমরজীবন। একটা সময় লেখকের নিজের জীবনেও আবির্ভূত হয় অশুভ কিছুর। বিভূতিভূষণ তাঁর গল্পগুলোতে যতটা ডাকিনী, অপদেবতা আর তন্ত্রমন্ত্রের চর্চার আবির্ভাব ঘটিয়েছিলেন, তারাদাসের উপন্যাসটি তার থেকে বেশ স্বতন্ত্র। তারাদাস পিতার সৃষ্ট চরিত্রটিকে ধারণ করেই নিজের স্বকীয়তাও বজায় রেখেছেন। তার গল্পে ভয়ের উপাদান কম ছিল, অলৌকিক ঘটনার পাশাপাশি ঈশ্বর - দর্শন, শুভ - অশুভের ব্যাখা, মানবিক চিন্তা আর গ্রামীণ জীবনের হারানো লোকাচার ছিল অনেকখানি। তারানাথের অতিপ্রাকৃত বিশ্বাসগুলোর পালটা যুক্তি দিতে তিনি ব্যবহার করেছেন গল্পশ্রোতা কিশোরী সেনকে। জয়তলা গ্রামের জমিদার দেবদর্শন মুখার্জির বাড়ির অংশগুলো শুধু গ্রামীণ দুর্গাপূজা আর তার খাদ্যের বর্ণনার জন্যই পড়ে যাওয়া যায়। ঢাক আর শাঁখের শব্দের মধ্যে সুপুরি বলি, একশো আটটা প্রদীপ জ্বেলে সন্ধিপূজা, মেয়েদের আলপনা এঁকে সিঁদুরখেলা, আর সামিয়ানা টাঙিয়ে ছেলে-বুড়ো, জমিদার - প্রজা সকলে কলাপাতায় দুবেলা খাওয়া, রাতে ধুনোর আলোয় যাত্রাপালা - গ্রামেই বা এমন উৎসব আর কই দেখা যায়? আর ভোজন! তুলাইপঞ্জি চালের ধপধপে সাদা ভাত, এক হাত লম্বা চিতলের তেলঝাল, জিরে জিরে কাটা আলুভাজা, শুধু লেখকের বর্ণনার জোরেই পাঠকের রসনাতৃপ্ত হয়ে যাবে! পদ্মচিনি, গয়নাবড়ি ভাজা, তিলজাউ, গড়গড়ির জল, এসব তো আজকাল উঠেই গেছে। যেহেতু পটভুমি পুরনো, তাই বইটিতে লেখক অনেক অপ্রচলিত খাঁটি বাংলা শব্দ ব্যবহার করেছেন। তবে লেখকের বর্ণনা সরল, গ্রামের মিষ্টি বর্ণনা আর তারানাথের দর্শন ধরে রেখেও গল্পের গা ছমছমে ভাব কেটে যায়নি। সেভাবে ভয় না পেলেও, মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা রহস্যের শিহরণের জায়গাটাতে ঠিকই দোলা দিয়ে যাবে এই উপন্যাস। চলুন পাঠক, ঝুপ ঝুপ বৃষ্টির সন্ধ্যায়, তারানাথ তান্ত্রিকের পাসিং শো সিগারেটের ধোঁয়ায় মোড়ানো বৈঠকখানায় তেলেভাজা আর চা নিয়ে, কিশোরী সেন আর লেখকের সাথে আমরাও ডুবে যাই অশরীরী আর অলৌকিকতার বিচিত্র ভুবনে। বই: অলাতচক্র লেখক: তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশনায়: মিত্র এন্ড ঘোষ পাবলিশার্স প্রথম প্রকাশ: ২০০৩ পৃষ্ঠাসংখ্যা: ১৫৪ ভারতীয় মূল্য: ১৭০ টাকা
Was this review helpful to you?
or
One of the best books I have ever read. Excellent writing, superb presentation.
Was this review helpful to you?
or
বইটি বেশ ভালো। ভৌতিক অভিজ্ঞার রোমাঞ্চের পাশাপাশি পুরোনো দিনের মানুষের জীবনযাপন তাদের আত্মীয়তা, আচার-অনুষ্ঠান, রীতি এবং ভূড়িভোজের আয়োজনের ব্যাপার গুলো খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক।
Was this review helpful to you?
or
কেউ লক্ষ্য করেছিলেন কিনা, তারানাথের নাতি অর্থাৎ চারুর সদ্য হওয়া ছেলের কপালেও কিন্তু সন্ন্যাসী ব্যাপারটি আছে। লেখক(তারাদাস) সেটি এই উপন্যাসে সেভাবে উল্লেখ না করলেও একটি ঘটনাই বুঝা যায়। সেই ঘটনাটি কোনটি? আপনারাই খুঁজে বের করুন। ? তাছাড়া এটি তারনাথ তান্ত্রিকের একমাত্র উপন্যাস এবং শেষ গল্প। আপ টু দ্যা মার্কই বটে। না কোন রেট দিচ্ছি না। যদিও লেখক(অশ্বিনী) এর অভিজ্ঞতার গল্পে কিছুটা Algernon Blackwood's 'The Willow' র ছোয়া পেয়েছিলাম। তাছাড়া উপন্যাসে চলা আর বাকি গল্প গুলো তোহ উপভোগ্য ছিলই, সেই সাথে এই ভেবেও আফসোস হচ্ছে যে এটিই তারানাথ এর কাছে শুনা শেষ গল্প।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বই : অলাতচক্র লেখক : তারাদাস বন্দোপাধ্যায় মূল্য : ২৫০ জনরা : ভৌতিক তারানাথ তান্ত্রিক পড়ে ফেলেছেন? রেশ কাটছেই না,তাইনা? গল্প পড়ার তৃষ্ণা যে কি ভয়াবহ টের পাচ্ছেন? আঁতিপাঁতি করে খুঁজে বেড়াচ্ছেন যদি কোথাও আর কয়েকটা তারানাথের গল্প পাওয়া যায়? তবে আপনার জন্য সুখবর। তারানাথ তান্ত্রিকের পরবর্তী পার্ট "অলাতচক্র" রয়েছে :) আসুন তবে অলাতচক্র সম্পর্কে কিছু জেনে নেওয়া যাক। আদিনাথ চক্রবর্তী এক সন্ধ্যায় জমজমাট আড্ডায় বসেছেন। বিষয় অতিপ্রাকৃত ঘটনা, যার বেশিরভাগই বিশ্বাসযোগ্য নয়। তখন আদিনাথ বলতে শুরু করলেন তার জীবনে ঘটে যাওয়া এক অদ্ভুত কাহিনী। তিনি তখন অনেক ছোট। গ্রামের এক বিশাল যৌথ পরিবারে তার জন্ম। বাড়িতে বাবা মা, ভাই-বোন, জ্যাঠা, কাকু, ঠাকুমা নিয়ে এলাহি কারবার। এমনই এক পরিবারে হঠাৎ আগমন ঘটল অমরনাথ নামক অদ্ভুত এক মানুষের। প্রথম প্রথম আদিনাথ চক্রবর্তীর বাবা,কাকা রা তার উপর বিরক্ত হলেও, সেই মানুষটি আবিষ্কার করে ফেলল বহু বহু বছর আগে হারিয়ে যাওয়া তাদের পূর্বপুরুষের বিষ্ণু মূর্তিকে। এটাও বললেন, এই পরিবারেই জন্ম নিবে এক সিদ্ধিপুরুষ। তার জন্মের সময় আকাশে নীলাভ উল্কাপাত ঘটবে। সেই অমরনাথ বলে দিলেন আদিনাথের ঠাকুরমার মৃত্যুদিনও। বাবা-কাকারা বুঝলেন, এই কোন সাধারণ মানুষ নয়। তাকে বারবার অনুরোধ করলেন, কয়েকটা দিন সাথে থাকার। কিন্তু অমর শুনলেন না। তারপর যেভাবে এসেছিলেন, ঠিক সেভাবেই চলে গেলেন। কোথাও তার খোঁজ পাওয়া গেল না। এই ঘটনার ঠিক কয়েকমাস পর যেদিন অমরনাথ আদিনাথের ঠাকুরমার মৃত্যুর কথা বলেছিল, ঠিক সেদিনই ঠাকুমার মৃত্যু ঘটে। ঘটনাটি অনেকেই কাকতালীয় বলে ধরে নেন। আদিনাথের এই বাস্তব অভিজ্ঞতার ঘটনা এই আড্ডার আসরেও সকলে নেহাৎ আশ্চর্যজনক কিছু নয় বলেই উড়িয়ে দেয়। আসর ভেঙে যাচ্ছিল প্রায়। ঠিক তখনই আদিনাথ সকল কে থামতে বলে। এই কথাও বলে তার কথা শেষ হয়নি। সকলে আবার গল্প শোনার আশায় তৈরি হয়। আদিনাথ বলে, তার বহু বছর পর, তখন এই ঘটনা সে ভুলেই গেছে। তার তৃতীয় ছেলের জন্মের ক্ষণ উপস্থিত। হঠাৎ সে সময় দাইয়ের চিৎকারে সবাই উঠানে এসে দাঁড়ালো। দেখল, একটা নীল উল্কা ছুটে যাচ্ছে আকাশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। ঠিক তার পর মুহুর্তের জন্ম হলো আদিনাথের পুত্র তারানাথের। যার নাম তারানাথ চক্রবর্তী। সকলের মাঝে যে তারানাথ তান্ত্রিক নামে পরিচিত। সভাস্থলে সকলে নিস্তব্ধ হয়ে গেল। এই সভার প্রত্যেকেই জানে আদিনাথের তৃতীয় পুত্র তারানাথ আট-দশ বছর আগেই সংসার ছেড়ে নিরুদ্দেশ। সন্ন্যাসী সে। সংসার থেকেও তার টান নেই সংসারের প্রতি। সিদ্ধিপুরুষই বটে! কিন্তু সেই অমরনাথ কে, যে বহুযুগ আগেই তার জন্মের ভবিষ্যৎবাণী করেছিল? কোথা থেকে সে এল,আর কোথায় বা গেল? কি তার পরিচয়? জানতে চান? তবে পড়ে ফেলুন বইটি। পাঠ প্রতিক্রিয়া : তারানাথ তান্ত্রিক পড়ার পর আঁশ মিটছিল না। পড়া।শুরু করলাম অলাতচক্র। জন্মাষ্টমীর ছুটিতে গল্প কথক এবং কিশোরী সেন তারানাথের বাড়িতে এসেছে। তারানাথের মনটা ভাল নেই। কন্যা চারির বিয়ে দিয়েছেন। বাড়ি এখন পুরো ফাঁকা। তাই গল্প শোনানোর মানুষ পেয়ে বেশ খানিকটা প্রফুল্ল হয়ে উঠলেন। তারপর বর্ননা করতে শুরু করলেন তার জন্ম কাহিনী। এই ঘটনা শোনার পর গল্প কথক ও কিশোরী সেন কে অবাক করে দিয়ে তারানাথ বলেছিল, সে নিজেও অমরনাথের দেখা পেয়েছে। কিন্তু এ কিভাবে সম্ভব? তার সে ঘটনা শুনতে শুনতে আমি নিজেও কখন যে গ্রাম বাংলার পথ ঘাট দিয়ে অতন্দ্রীয়কে ছোঁয়ার আশায় ছুটে বেড়িয়েছি, তার টেরই পাইনি। সম্বিৎ ফিরে পেলাম তখন, যখন বইয়ের পাতার সর্বশেষ লাইনটি পড়লাম। এত তৃপ্ত অন্য কোন বই পড়ে হয়েছি কিনা মনে পড়েনা। আমার জীবনে পড়া অন্যতম প্রিয় বই। ( বি. দ্র : অলাতচক্র পড়া শেষ? আঁশ মেটেনি? এইবার নিশ্চয় তৃতীয় পার্ট পড়ার আশায় মন আকুলি বিকুলি করছে? তবে আপনার জন্য দুঃসংবাদ। অলাতচক্রের পর তারানাথ তান্ত্রিকের আর কোন বই নেই)
Was this review helpful to you?
or
ভৌতিক কাহিনি অনেক ভয়ে আছি
Was this review helpful to you?
or
শাস্ত্রে ব্রক্ষ্মাস্ত্রের কথা পড়েছেন তো? কিন্তু ঐ নামে আসলে কোন অস্ত্র ছিল না। ব্রক্ষ্মাস্ত্র আসলে একটা তেজ বা শক্তির নাম। উপযুক্ত লোক প্রয়োজন হলে একটা ঘাস তুলে নিয়ে তাতে ব্রক্ষ্মাস্ত্রের তেজ আনতে পারেন!! কিভাবে তার যুক্তি খুজছেন? আসলে জীবন আর জগৎ অনেক বড়, হিসেব কষে তার কূল খুঁজে পাবেন না। যুক্তি আর তর্ক তো সেই অনন্তকে মাপবার জন্যে মানুষের একটা অসহায় প্রচেষ্টা। সাধারণত দিন আর রাত্রির মাঝখানে যে সন্ধিপ্রহর থাকে, যা দিনকে সযত্নে ভালবাসায় শুইয়ে দেয় রাত্রির শয্যায়, যখন মায়াময় লাগে বিষণ্ণ আলো, তারপর-- আবছা অন্ধকার ক্রমে গাঢ় হওয়ার সাথে সাথে বাতাসে জেগে উঠে অপার্থিব এক ফিসফিসানি। খুব মৃদু কী ভাষা তা বোঝা যায় না। কারন এই বিশাল জগতের তুচ্ছাতিতুচ্ছ তৃণ খন্ড থেকে অনাদ্যন্ত মহাকাশে জ্বলন্ত নক্ষত্রের দল পর্যন্ত একটা অদৃশ্য কিন্তু অত্যন্ত বাস্তব আত্মীয়তার সূত্রে প্রথিত। প্রত্যাহিকতার মায়ায় সত্যের এই অগ্নিময় জ্বলন্ত রূপ আমাদের চোখে পড়ে না। সমস্ত বিশ্বের বিচিত্র বিস্ময়পূর্ণ পরিধিই আমাদের জীবনের পরিধি, জ্বলন্ত নক্ষত্রবেষ্টিত সত্যের অলাতচক্র।।। আর সেই গল্পই বলতে চেয়েছেন তারানাথ তান্ত্রিক। হ্যা, এই গল্প তারানাথ তান্ত্রিকের। যার জন্মের সময় আকাশে নীল রঙের উল্কা দেখা গিয়েছিল, যার তন্ত্রদীক্ষা হয়েছিল পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময়। এটি সম্ভবত তারানাথ তান্ত্রিকের তৃতীয় কিস্তি। বিভূতিভূষণের অসামান্য সৃষ্টি তারানাথ তান্ত্রিকের প্রথম কিস্তি(দুটি গল্প) প্রকাশের পরই আমাদের ছেড়ে তিনি পাড়ি দেন অনন্ত অম্বরে। সেই সৃষ্টিকে আরো আসাধারণরূপে নতুন প্রাণ দেন তার সুযোগ্য পুত্র তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। এটি তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা দুটি কিস্তির সম্ভবত দ্বিতীয়টি। এ খন্ড শুরু করা হয়েছে তারানাথ তান্ত্রিকের জন্মের আগের সময় থেকে, সাথে যুক্ত হয়েছে তারানাথ তান্ত্রিকের নিয়মিত শ্রোতা কিশোরীর ব্যক্তিগত জীবনের অলৌকিক অভিজ্ঞগতাও। মানুষের মধ্যে ঈশ্বর বাস করেন। শুধু কি ঈশ্বর? মানবের মাঝে দানবও বাস করেন। ভাল আর মন্দ, আলো আর অন্ধকার সৃষ্টির মুহূর্ত থেকেই বর্তমান, বৈপরীত্য আছে বলেই সৃষ্টির সার্থকতা আছে। দানবিকতার ওপারে ঐশ্বরিকতার প্রতিষ্ঠাই মানুষের সাধনা। সে সাধনার গল্পই বলেছেন তারানাথ তান্ত্রিক। বীরভূমে গ্রাম্য শ্মশানে হাকিনী মন্ত্রে সিদ্ধ মাতু পাগলীর কাহিনী, বরাকর নদীর বালুকাময় তীরে শালবনের পাশে শুক্লা পঞ্চমীর স্বপ্নিল জ্যোৎস্নায় মধুসুন্দরী দেবীর অবির্ভাব, শ্বেতবগলার পূজো-- আরো কতো কি...!! হয়তো ভাবতে পারেন তারানাথ গল্প বললেই বোধহয় কেবল কাঠ, দুঃখ আর ভয়ের গল্প বলে, কিন্তু সেটা সত্য নয়। তারানাথ জীবনের গল্প বলে। জীবন যেমন বিচিত্র উপলব্ধির মালা দিয়ে গাঁথা, তার গল্পও তাই। আসলে লোকটা গল্প বলে দারুণ সুন্দর। গল্পটা সত্যি না মিথ্যে সে প্রশ্ন মনেই আসে না। একটা সম্মোহনের মতো ব্যাপার। অদ্ভুত গল্পের নেশায় তার কাছে ছুটে যেতে হয়, যতক্ষণ সে গল্প বলে ততক্ষণ মুগ্ধ বিস্ময়ে শুনেও যেতে হয়, কোন বিরুদ্ধ যুক্তি মনে উকি দেয় না, কিন্তু তার সানিধ্যের প্রবলতা থেকে মুক্তি পেয়ে গল্পের শেষে কঠিন রাস্তায় পা দিলেই বিশ্বাস একটু একটু ক্ষইতে শুরু করে। মুগ্ধতা থাকে, বিশ্বাসটা থাকে না। যে গল্প সে আমাদের শোনায় তার সত্যাসত্য বিচার দুঃসাধ্য। যেনো অচেনা ভাষায় অচেনা সুরে অদ্ভুত গান শোনাচ্ছে কেউ। আকাশ আর নক্ষত্রের গল্প, সমুদ্রের ঢেউয়ের গল্প, আগুন-বাতাস-পাহাড়-মাটির গল্প। সৃষ্টির আদিম গল্প- আমাদের প্রত্যেকদিনের জীবনে যার কোন প্রতিচ্ছবি পরেনা... পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ স্কুল লেভেলের পর, ব্যাস্ত জীবন শুরু হবার পর, আমি যে কয়টা বই নাওয়া-খাওয়া ভুলে শেষ করেছি 'অলাতচক্র' সেই লিস্টে উপরের দিকেই থাকবে। অতিপ্রাকৃত গল্প যে কী ভীষণ সুন্দর হতে পারে, একটা বই কিভাবে চুম্বকের মতো ধরে রাখতে পারে-- তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এই অলাতচক্র। বইটা শেষ করতে করতে আমি যেনো সেই সব সময়ে চলে গিয়েছিলাম। আমরজীবনের পাশে বসে তার কথা শুনছিলাম, দেবদর্শন বাবুর সেই ভীষণ মায়াময় পরিবারের আমিও যেনো হয়ে গিয়েছিলাম সদস্য। আমরজীবন গল্পের মাঝে যেভাবে ধূমকেতুর মতো এসেছিলেন, তেমনি এক নীহারিকা আচ্ছন্ন রূপ ছড়িয়ে দিয়ে সেভাবেই হারিয়ে গেলেন! তবে আমারো খুব করে মনে হয়, "মানবসভ্যতার ইতিহাসের সঙ্গে বোধকরি আমরজীবনের গল্পটা মিশে রয়েছে, হঠাৎ কোথাও তো তার শেষ হবার নয়" দেবদর্শন বাবুর স্নেহমাখা পরিবারটার মধ্যে সবসময় নিজের পরিবারের প্রতিচ্ছবি দেখেছি। সে জীবনটা যেনো সবসময় বলছিল জীবনের সৌন্দর্যের কথা। খুব করে অনুভব করেছি মুক্ত জীবন। সব এখনো চোখে ভাসে- রুপোর থালার মতো চাঁদ পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে। মৃদু হিমের ছোঁয়া বাতাসে, কী যেনো কী কত কথা মনে পড়ে যায়। স্বার্থ হিংসা আর হানাহানির মধ্যেও মনে হয় আকাশ সুন্দর, বাতাস সুন্দর। মৃত্যু আর অন্ধকার সত্য, কিন্তু তার চেয়েও বড় সত্য মুক্ত জীবনের আনন্দ। মৃত্যু আসছে, তবে সে আসছে শিউলিঝরা স্নিগ্ধতায়...