User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
গুড বুক
Was this review helpful to you?
or
Very informative..one must know all these as Bangladeshi
Was this review helpful to you?
or
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের কালোদিন ৩রা নভেম্বর, ১৯৭৫। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর বাংলাদেশ থেকে জাতির পিতার আদর্শ চিরতরে মুছে দিয়ে পাকিস্তান আদর্শসম্পন্ন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নির্মমভাবে জেলে বসে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার মুক্তিযুদ্ধের চার মহান সংগঠক - তাজউদ্দীন আহমদ, মনসুর আলী, এএইচএম কামারুজ্জামান ও সৈয়দ নজরুল ইসলাম। এই গ্রন্থে তুলে ধরা হয়েছে সেই চার মুক্তিযুদ্ধের মহান সংগঠকের কথা, তাঁদের আদর্শ ও একজন মেয়ের পিতা হারানোর মর্মস্পর্শী আখ্যান।
Was this review helpful to you?
or
বই: ৩ নভেম্বর: জেল হত্যার পূর্বাপর লেখক: শারমিন অাহমদ প্রকাশক: ঐতিহ্য প্রকাশ কাল: নভেম্বর ২০১৪ প্রচ্ছদ: এ অার নাইম পৃষ্ঠা: ১৫২ মুদ্রিত মূল্য: ৩০০ টাকা কাহিনী পর্যালোচনা: " মধ্য গগনের সূর্যের রং অস্তগামী সূর্যের মতো লাল রঙের হয় কী করে?" অদৃশ্য থেকে কে যেন গভীর কন্ঠে জবাব দিল, "দেশের উপর মহা বিপদ নেমে অাসছে।" ইতিহাসে ১৯৭৫ সাল নানাবিধ ঘটনায় রক্তাক্ত অার কলঙ্কিত অবস্থায় অাছে, ১৫ আগস্ট মুজিব হত্যা অার তার পরপরই ৩ নভেম্বরের জাতীয় চার নেতার কারাগারে মর্মান্তিক হত্যাকান্ড এর মধ্যে অন্যতম। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর শোকাবহ একটি দিন, ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম. মনসুর আলী ও এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামানের নির্মম হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ হারায় তার প্রিয়জন অার জাতি হারায় তার সূর্য সন্তানদের। বঙ্গবন্ধু হত্যার সপ্তাহ পার না হতেই ১৯৭৫ সালের ২২ আগস্ট তাজউদ্দীন আহমদকে যখন তার বাসা থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন তার স্ত্রী জোহরা তাজউদ্দীন প্রশ্ন করেছিলেন, 'কবে তাকে ছাড়বে?' তাজউদ্দীন যেতে যেতে হাত নেড়ে বলেছিলেন, "টেক ইট ফরেভার"। তিনি চিরকালের জন্যই চলে যাচ্ছেন। অর্থাৎ তিনি বুঝে গিয়েছিলেন খুনীরা তাকে ছাড়বে না। এরা স্বাধীনতার প্রতীক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হবে না উপরন্তু এরা অাঘাত হানবে স্বাধীনতার অাদর্শে বিশ্বাসী অাপসহীন নেতৃত্বের ওপর। অার তাই তো জাতির ইতিহাসে ৩ নভেম্বর রচিত হলো এক কালো অধ্যায়। স্বপ্ন যে কখনও কখনও সত্য হয়ে যায় তা যেন তাজউদ্দিনের জন্য একেবারেই হাড়ে হাড়ে সত্য।লেখিকার জবানিতে তিনি এমনই বর্ণনা করেন, "নভেম্বরের ১ তারিখ, শনিবার। আম্মা একটা দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে উঠলেন। স্বপ্নে দেখেন যে বাঁশের চারটি তাঁবু পাশাপাশি রাখা। আম্মা জিজ্ঞেস করলেন, ‘কাদের এই তাঁবু?’ কে যেন উত্তর দিল, ‘এই তাঁবুগুলো তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মনসুর আলী ও কামরুজ্জামান সাহেবদের জন্য।’ স্বপ্নের মধ্যেই আম্মার মনে হলো যে বাঁশের তাঁবু দেখা তো ভালো না। আব্বুর পছন্দের খাবার রেঁধে টিফিন কেরিয়ারে ভরে সেদিনই আইনজীবীদের সাথে নিয়ে আম্মা একাই জেলে গেলেন আব্বুর সঙ্গে দেখা করতে।....... আব্বুকে মুক্ত করার জন্য ৫ নভেম্বর আদালতে রিট পিটিশন ওঠার কথা। আম্মা আব্বুকে সেই খবর জানালেন। কিন্তু আব্বু যেন কেমন চিন্তামগ্ন রইলেন। তিনি আম্মার ডাক নাম ধরে বললেন, ‘লিলি, আজ রাতে ডায়েরির শেষ পাতা লেখা হবে। সেই সঙ্গে শেষ হবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা।’ তারপর বললেন, ‘আর বোধহয় বাঁচব না।’ জেলে আব্বুর সাথে আম্মার সেই শেষ সাক্ষাৎ।" ডায়েরির পাতয় এ কোন গল্প নয় নির্মম বাস্তবতার জেল হত্যার এমন করুণ কাহিনীই লেখা অাছে বইয়ের পাতায়। না চাইলেও যা পড়তে পড়তে চোখের কোনে জল জমে যায়। "আব্বুর কুরআন শরিফটি, যা তিনি জেলে পাঠ করতেন, তা বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল, সেটা আর ফেরত দেওয়ার অবস্থায় ছিল না। আব্বুর মহামূল্যবান সেই কালো চামড়ায় সোনালি বর্ডারওয়ালা ডায়েরিটি, যাতে তিনি লিখছিলেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কীভাবে চলবে তার দিকনির্দেশনা, সেটা রহস্যজনকভাবে জেলেই হারিয়ে যায়।" হয়তো চার নেতার মৃত্যুর পরও সেই ডায়েরি পাওয়া গেলে এতটা কান্ডারীহীন নৌকার মতো উত্থাল সাগরে পড়তে হতো না দেশবাসি কে। তাই শত্রুরা নিশ্চহ্ন করে দিয়েছিল সূর্য সন্তানের শেষ স্মৃতিচিহ্নও। এলোমেলো চুলে ঘেরা সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন মৃত্যুর খবরে শোকে মুহ্যমান অবস্থায়ও ভাবছিলেন দেশের কথা, " এই সোনার মানুষটাকে ওরা কীভাবে মারল! দেশ কী হারাল!" হ্যাঁ দেশ হারিয়েছে তার রক্তিম সূর্যের অাভা। মানবতা লংঘনকারী এ নির্মম হত্যাকান্ডগুলো এমন এক সময়ের ইতিহাস যা সকল দল-মতের ঊর্ধ্বে। এ বিষয়ে গবেষণা এবং বিশ্লেষন করে শিক্ষা না নিতে পারলে জাতি অন্ধকারেই থেকে যাবে। শারমিন অাহমদ এর গবেষণা ধর্মী এলেখাটা যতটা না তার ব্যক্তিগত আর্তনাদ বা স্বজন হারানোর হাহাকারে তার থেকে বেশি অামাদের মুক্তিযুদ্ধ ও তার পিছনে কাজ করে যাওয়া মানুষদের ইতিহাস। এ ইতিহাস যতদিন না অামরা জানবো বা তার থেকে শিক্ষা নিতে পারব ততোদিনে আমরা সত্যিকারের সভ্য রাষ্ট্ররূপে পরিনত হতে পারব না। অার কারণেই আজও বাংলাদেশ লাভ করেতে পারে নাই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। স্মৃতিতে অম্লান ১৯৭৫ এর ৩ নভেম্বরের হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে লেখা এ গবেষনাগ্রন্থ। আজকের প্রজন্ম যারা সেই সময়টি সম্বন্ধে জানে না বা সঠিকভাবে জানাতে ব্যর্থ হয়েছে সমাজ বিশেষত তাদের জন্যই সেই ইতিহাসের অতি সংক্ষিপ্ত এই বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে বইয়ের পাতায়। এ এক পিতাহারা কণ্যার স্মৃতিচারণ, জাতির ইতিহাস বা তদন্ত রিপোর্টেরই সারসংক্ষেপ। যা বিভিন্ন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকারের সন্নিবেশে অারও বেশি জীবন্ত হয়ে উঠেছে। অাগ্রহী পাঠক সদানন্দে পাঠ করতে পারেন ইতিহাস নির্ভর একখন্ড বাস্তবতা।
Was this review helpful to you?
or
নভেম্বরের ১ তারিখ, শনিবার। আম্মা একটা দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে উঠলেন। স্বপ্নে দেখেন যে বাঁশের চারটি তাঁবু পাশাপাশি রাখা। আম্মা জিজ্ঞেস করলেন, ‘কাদের এই তাঁবু?’ কে যেন উত্তর দিল, ‘এই তাঁবুগুলো তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মনসুর আলী ও কামরুজ্জামান সাহেবদের জন্য।’ স্বপ্নের মধ্যেই আম্মার মনে হলো যে বাঁশের তাঁবু দেখা তো ভালো না। আব্বুর পছন্দের খাবার রেঁধে টিফিন কেরিয়ারে ভরে সেদিনই আইনজীবীদের সাথে নিয়ে আম্মা একাই জেলে গেলেন আব্বুর সঙ্গে দেখা করতে। তার ১ দিন পরেই ছিল ৩ নভেম্বর। বাংলার ইতিহাসে আরেকটি কালো অধ্যায়।
Was this review helpful to you?
or
৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে আওয়ামী লীগের জাতীয় চার নেতা- সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মনসুর আলী এবং আ হ ম কামারুজ্জামানকে কারাগারে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সামরিক অভ্যূত্থানে শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে নিহত হন। মুজিবের হত্যাকারীরা দেশ থেকে পলায়নের পূর্বে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। ৩ নভেম্বর কতিপয় সেনা কর্মকর্তা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে চার নেতাকে গুলি করে এবং সঙ্গিন দিয়ে বিদ্ধ করে হত্যা করে। এই হত্যাকারীরা পরে বাংলাদেশের দুই রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের নিকট থেকে পরোক্ষ সহযোগিতা লাভ করে। চার নেতার পরিচয়ঃ ★সৈয়দ নজরুল ইসলাম- বাংলাদেশের প্রথম সরকার, মুজিবনগর সরকারের উপ-রাষ্ট্রপতি এবং ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি বাকশালের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। ★তাজউদ্দীন আহমদ- একজন আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যও ছিলেন। ★আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান- একজন সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে গঠিত অস্থায়ী সরকারের স্বরাষ্ট্র,কৃষি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন। ★মুহাম্মদ মনসুর আলী- মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বিচার পর্বঃ- জেলহত্যার প্রায় ২৯ বছর পর এর বিচারকার্য শুরু হয়। ২০০৪ সালের ২০শে অক্টোবর বিচারের রায়ে তিনজন পলাতক সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড, ১২ জন সেনা কর্মকর্তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকা জেলহত্যার ঘটনাটিকে "দুঃখজনক এবং অত্যন্ত লজ্জ্বাজনক" বলে আখ্যায়িত করে। ইতিহাসের জঘন্যহত্যাকান্ডের পর পেড়িয়ে যায় কত গুলল বছর। চর্চা ও প্রচারেরে বিমুখিতার কারণে ইতিহাসের সেই নৃশংস ঘটনা অনেকেই আজ ভুলেও গেছে। তবে সেই অনেকের ভীড়ে ভুলতে পারেননি শহীদ পরিবারের আত্নীয় স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনেরা। তেমনই একজন হলেন তাজউদ্দিন তনয়া শারমিন আহমদ। ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে এসে তিনি লক্ষ্য করেন যে জেল হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হওয়ার প্রায় বারো বছর পেড়িয়ে গেলেও এর সম্পর্কে কোন তথ্য, উপাত্ত এবং প্রমাণ যোগাড় করা হয়নি। জেল হত্যাকান্ডের স্বাক্ষী ব্যক্তিবর্গ এবং এই হত্যাকান্ডের তদন্তের সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গের সাক্ষাৎকার, ইতিহাসের উপাদান হিসেবে যার মূল্য অনেক তাও সংগ্রহ করে জাতিকে জানাবার জন্য কোন উদ্যোগ নেন তিনি। ইতিহাসে নিষ্ঠুরতম জেলহত্যাকান্ডের ওপর এটিই প্রথম গবেষণাধর্মী গ্রন্থ। এই গ্রন্থ সম্পর্কে লেখিকার অভিমত এটাই যে, "মনবতা লংঘনকারী ওই নির্মম হত্যাকান্ড নিয়ে দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে বস্তুনিষ্ট ভাবে গবেষণা এবং বিশ্লেষণ না করা ও তার থেকে শিক্ষা না নেবার কারনে আমরা আজও সত্যিকারের এক সভ্য রাষ্ট্ররূপে পরিগনিত হতে পারিনি। যে কারনে আজও বাংলাদেশ লাভ করেনি মানসিক স্বস্তি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।" এই বইয়ে যে যে বিষয়গুলো আলোকপাত করা হয়েছে তা হলো, ৩ নভেম্বর তাজউদ্দীন আহমদ এর মৃত্যু সংবাদ এবং পরিবারের অবস্থা। তাজউদ্দীন তনয়া শারমিন আহমদ এরর কিছু হাতে লেখা ডায়েরিতে রক্ত ঝড়া ২৮ নভেম্বর। পিতাকে মনে করে কিছু কথা কিছু স্মৃতিচারণ মুহুর্ত। এরপর বিশিষ্ট কয়েকজনের সাক্ষাতকার। তারা হলেন, আব্দুস সামাদ আজাদ, বিচারপতি কে এম. সোবহান, এ. এস. এম মহসীন। দুঃস্বপ্নের রাতের বিবরণ। ভোর হলেই আলো ফোটবে এরকম একটা সুন্দর দিনের অপেক্ষায়। জেলহত্যায় অভিযুক্ত ব্যক্তিবর্গের বিচার আকুতি। বিচারকার্য চলাকালীন সময় এবং বিচারের রায় হবার পর একটি ব্যক্তিগত অনুভূতি। সবশেষে পরিশিষ্ট। কতিপয় ব্যক্তির জেলহত্যা নিয়ে প্রতক্ষা অভিজ্ঞতা প্রকাশ। বাংলাদেশ রাজনৈতিক গবেষণা পরিষদের আহ্বায়ক এডভোকেট এম. এ বারীর জেল হত্যার তদন্ত দাবী করপ আই.জি পুলিশের কাছে লিখিত চিঠি। এই দাবী নিয়ে হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের কাছে চিঠি। জেলহত্যার দাবী করে তাজউদ্দীন আহমদের জন্মস্থান দরদরিয়া গ্রাম সহ গাজীপুর এলাকাবাসীদের স্বাক্ষর। ২০০৬ সালে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্যালিফোর্নিয়ার আমন্ত্রণ। আমন্ত্রিত অথিতি আবুল কাশেম তোহার ঠিক এবং লেখকের উত্তর। ২০০৭ সালে ক্যানাডার মন্ট্রিয়াল শহরে জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে বাংলা রিপোর্টার পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি। সম্পুর্ন নিজ উদ্যোগে অভ্যন্তরীণ সকল তথ্য সংগ্রহ করে ২০১৪ সালে শারমিন আহমদ প্রকাশ করেন তার বই "৩ নভেম্বর : জেল হত্যার পূর্বাপর "।
Was this review helpful to you?
or
marvelous, extra ordinary
Was this review helpful to you?
or
নানাবিধ কারণে এদেশে ১৯৭৫ সাল কলংকিত হয়ে আছে, ১৫ ই আগস্ট মুজিব হত্যা এবং ৩ নভেম্বরের জাতীয় চার নেতার কারাগারে মর্মান্তিক হত্যকান্ড এর অন্যতম প্রধান কারণ। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মোশতাক আহমেদ এর নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, এম. মনসুর আলী এবং এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এরপর পেড়িয়ে গেছে কত বছর। চর্চা ও প্রচারেরে বিমুখিতার কারণে ইতিহাসের সেই নৃশংস ঘটনা অনেকেই আজ ভুলেও গেছে। তবে সেই অনেকের ভীড়ে ভুলতে পারেননি শহীদ পরিবারের আত্নীয় স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনেরা। তেমনই একজন হলেন তাজউদ্দিন তনয়া শারমিন আহমদ। ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে এসে তিনি লক্ষ্য করেন যে জেল হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হওয়ার প্রায় বারো বছর পেড়িয়ে গেলেও এর সম্পর্কে কোন তথ্য, উপাত্ত এবং প্রমাণ যোগাড় করা হয়নি। জেল হত্যাকান্ডের স্বাক্ষী ব্যক্তিবর্গ এবং এই হত্যাকান্ডের তদন্তের সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গের সাক্ষাৎকার, ইতিহাসের উপাদান হিসেবে যার মূল্য অনেক তাও সংগ্রহ করে জাতিকে জানাবার জন্য কোন উদ্যোগ নেয় হয়নি। সেই সময় থেকেই সম্পুর্ন নিজ উদ্যোগে তা সংগ্রহ করে ২০১৪ সালে শারমিন আহমদ প্রকাশ করেন তার বই “ ৩ নভেম্বর : জেল হত্যার পূর্বাপর “।
Was this review helpful to you?
or
বই সংখ্যা- ৩ বাংলাদেশ কত নরম-কোমল সবুজে ভরা একটি ছোট্ট দেশ। কিন্তু সে দেশের মাটির মাঝেই ঘটে যায় কত শত নিষ্ঠুর রক্তাক্ত ঘটনা ও ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু হত্যার সপ্তাহ পার না হতেই ১৯৭৫ সালের ২২ আগস্ট তাজউদ্দীন আহমদকে যখন তার বাসা থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন তার স্ত্রী জোহরা তাজউদ্দীন প্রশ্ন করেছিলেন, 'কবে তাকে ছাড়বে'? তাজউদ্দীন যেতে যেতে হাত নেড়ে বলেছিলেন, "টেক ইট ফরেভার"। তিনি চিরকালের জন্যই চলে যাচ্ছেন। অর্থাৎ তিনি বুঝে গিয়েছিলেন খুনীরা তাকে ছাড়বে না। তাজউদ্দীন জেলে কুরআন পাঠ করতেন, ৩ নভেম্বর রাতে তার নিয়ামুল কুরআনটি বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল। মৃত্যুর আগে বন্দীবস্থায় তাজউদ্দীন তার ছাত্রজীবনের গল্প করেছেন রায়েরবাজার আওয়ামী লীগের প্রক্তন সেক্রেটারি মহসীন বুলবুলের কাছে- পয়সা তো নেই। চাঁদা দেয় না কেউ। দেখলেও মানুষ হেয় করে। সেইখানে উনার স্টাইপেন্ডের টাকা দিয়ে উনি আওয়ামী লীগ করেছেন। তাজউদ্দিন বলতেন, " আমি স্কলারশিপের টাকা পেতাম। আমার স্কালারশিপের টাকা দিয়ে কাগজ কিনে রিসিট বই ছাপিয়েছি (আওয়ামী লীগের)"। পার্টি কীভাবে সুন্দর হবে সেকথা তাজউদ্দীন বলতেন। তিনি বলতেন, "এটা তো একটা রাজনৈতিক দল, লাঠিয়াল বাহিনী নয়"। শিক্ষানীতি নিয়ে বঙ্গতাজের চিন্তা ছিল, ক্লাশ টেন পর্যন্ত বিনাবেতনে শিক্ষা চালু করা। ১৫ আগস্টের নির্মম ঘটনার বেশ আগে থেকেই তাজউদ্দীন তার ঘনিষ্ঠজনদের বলতেন, "বঙ্গবন্ধু নিজেও বাঁচবেন না। আমাদেরকেও বাঁচতে দেবেন না।" নতুন কেবিনেট গঠন করা হবে বলে যারা চেয়ার টেবিল সাজানোর কাজে মেতে উঠেছিল। তারাই আবার পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধু হত্যার জন্য বাকশাল গঠনকে দায়ী করেছেন! ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য খন্দকার মোশতাক অনুরোধ জানিয়েছিলেন। বাকি তিন নেতাকেও মন্ত্রী সভায় নেয়ার গুঞ্জন ছিল। কিন্তু চার নেতার কেউই সে প্রলোভন গ্রহণ করেননি। বিনিময়ে জীবন দিয়ে, শরীরের সব রক্তবিন্দু নিঃশেষ করে মৃত্যকে আলিঙ্গন করেছিলেন। বই- ৩ নভেম্বর জেল হত্যার পূর্বাপর লেখক- শারমিন আহমদ //রিভিউদাতা- এম.এস.আই খান, ১৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।//
Was this review helpful to you?
or
আমরা জাতিগত ভাবে কিছুটা দুর্ভাগা কারণ আমরা আমাদের বর্ণিল ইতিহাস সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই। আমাদের প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানেনা এর একটাই কারণ সঠিক ইতিহাসটুকু কেউ তুলে ধরে না বই গুলোতে ঠিক তথ্য উপাত্ত থাকে না থাকে শুধু দলীয় প্রশংসা। বই পরে চমৎকার লেগেছে এক কোথায় বলা যায় অসাধারণ। আমাদের অর্জিত স্বাধীনতা যে হাজারো মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত তা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস পড়লে বোঝাযায়। আমাদের জাতীয় চার নেতা অনেকটাই আড়ালে চলে গেছে তাদের গোরবউজ্জল ইতিহাস আমাদের প্রজন্ম অনেকটাই জানা নেই। এই বইয়ের মাধ্যমে নতুন করে জানা হলো অনেক অজানা তথ্য। বইটি সবার পড়া উচিত আমি মনে করি।
Was this review helpful to you?
or
নভেম্বরের ১ তারিখ, শনিবার। আম্মা একটা দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে উঠলেন। স্বপ্নে দেখেন যে বাঁশের চারটি তাঁবু পাশাপাশি রাখা। আম্মা জিজ্ঞেস করলেন, ‘কাদের এই তাঁবু?’ কে যেন উত্তর দিল, ‘এই তাঁবুগুলো তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মনসুর আলী ও কামরুজ্জামান সাহেবদের জন্য।’ স্বপ্নের মধ্যেই আম্মার মনে হলো যে বাঁশের তাঁবু দেখা তো ভালো না। আব্বুর পছন্দের খাবার রেঁধে টিফিন কেরিয়ারে ভরে সেদিনই আইনজীবীদের সাথে নিয়ে আম্মা একাই জেলে গেলেন আব্বুর সঙ্গে দেখা করতে। আম্মা আইনজীবীদের সহায়তায় হাইকোর্টের মাধ্যমে আব্বুর আটকাদেশকে অবৈধ চ্যালেঞ্জ করে আব্বুকে মুক্ত করার জন্য নথিপত্র জোগাড় করেছিলেন। হত্যাকারী সেই আর্মি–মোশতাক সরকার আব্বুকে দুর্নীতিতে জড়ানোর নিরন্তর চেষ্টা করেও দুর্নীতি তো দূরের কথা, একটা সাধারণ নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগও দাঁড় করাতে পারেনি। আব্বুকে মুক্ত করার জন্য ৫ নভেম্বর আদালতে রিট পিটিশন ওঠার কথা। আম্মা আব্বুকে সেই খবর জানালেন। কিন্তু আব্বু যেন কেমন চিন্তামগ্ন রইলেন। তিনি আম্মার ডাক নাম ধরে বললেন, ‘লিলি, আজ রাতে ডায়েরির শেষ পাতা লেখা হবে। সেই সঙ্গে শেষ হবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা।’ তারপর বললেন, ‘আর বোধহয় বাঁচব না।’ জেলে আব্বুর সাথে আম্মার সেই শেষ সাক্ষাৎ।.... হ্যা, ইতিহাসের ন্যাক্কারজনক ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম এই ঘটনা এভাবেই বর্ণনা করেছেন লেখিকা। সবচেয়ে বড় বেদনা তখনই, যখন প্রকাশের সব ভাষা হারিয়ে যায় নিমেষেই। কেমন যেন যন্ত্রচালিতের মতোই রিমিকে নিয়ে ফিরে এলাম আমাদের বাসায়। মনে হলো সারা দিন পাওয়া খবরগুলো কোনো অদ্ভুত দুঃস্বপ্ন। জেলে পাগলাঘণ্টি, গোলাগুলি, আব্বু নিহত!!! এবার হয়তো বাসায় কেউ ভালো খবর নিয়ে আসবেন—এমনি নিভু নিভু আশায় বুক বেঁধে আম্মার পাশে এসে আমরা দাঁড়ালাম। এক এক করে আম্মাকে ঘিরে মানুষের ভিড় জমে উঠতে থাকল। আম্মা বারান্দার চেয়ারে হেলান দিয়ে বসা। বাকরুদ্ধ। বেদনাক্লিষ্ট। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ময়েজউদ্দীন আহমেদসহ আব্বুর বেশ কজন সহকর্মী ও বন্ধু নিয়ে এলেন পাকা খবর। জেলখানায় আব্বু ও তাঁর তিন সহকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। সংবাদদাতাদের দিকে আম্মা তাকিয়ে রইলেন কেমন নিস্পন্দ দৃষ্টিতে। আমি সেই মুহূর্তে ছুটে আব্বু ও আম্মার ঘরে ঢুকে ওনাদের খাটে বসে কান্নায় ভেঙে পড়লাম। কতক্ষণ ওভাবে অশ্রুপ্লাবনে সিক্ত হয়েছিলাম জানি না। পানির ঝাপটায় দুঃখ ধুয়ে যায় না, তার পরও বৃথা আশায় বেসিন খুলে সমানে চোখেমুখে পানির ঝাপটা দিতে থাকলাম। ঘরের বাইরে বেরিয়ে দেখি আম্মাকে ড্রইংরুমের সোফায় বসানো হয়েছে। এলোমেলো চুলে ঘেরা আম্মার চোখেমুখে কী নিদারুণ হাহাকার! একপর্যায়ে আম্মা ডুকরে কেঁদে বললেন, ‘এই সোনার মানুষটাকে ওরা কীভাবে মারল! দেশ কী হারাল!’ গভীর রাতে বড় ফুফুর ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শাহিদ ভাইয়ের কাছে জেল কর্তৃপক্ষ আব্বুর মরদেহ হস্তান্তর করে। ৪ নভেম্বর দিবাগত রাত ১২-২৫ মিনিটে পুলিশের ট্রাকে করে জেলখানা থেকে চিরনিদ্রায় শায়িত আব্বু ঘরে ফিরলেন। সঙ্গে ফিরল আব্বুর রক্তমাখা ঘড়ি, জামা, স্যান্ডেল ও বুলেটে ছিদ্র হওয়া টিফিন ক্যারিয়ার, যাতে করে ১ নভেম্বর আম্মা শেষ খাবার নিয়ে গিয়েছিলেন। আব্বুর কুরআন শরিফটি, যা তিনি জেলে পাঠ করতেন, তা বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল, সেটা আর ফেরত দেওয়ার অবস্থায় ছিল না। আব্বুর মহামূল্যবান সেই কালো চামড়ায় সোনালি বর্ডারওয়ালা ডায়েরিটি, যাতে তিনি লিখছিলেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কীভাবে চলবে তার দিকনির্দেশনা, সেটা রহস্যজনকভাবে জেলেই হারিয়ে যায়।.... হ্যা পড়তে পড়তে যে কখন আপনার চোখে জল চলে আসবে বুঝতেই পারবেন না...। ভাবতে বসবেন এতো কলঙ্কময় অধ্যায় আমরা পার করে এসেছি....!!! ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম জেলহত্যাকাণ্ডের ওপর প্রথম একটি গবেষণাধর্মী গ্রন্থ বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের কন্যা শারমিন আহমদের লেখা।‘১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানের নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটে। মানবতা লংঘনকারী ওই নির্মম হত্যাকাণ্ড নিয়ে দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে বস্তুনিষ্ঠভাবে গবেষণা এবং বিশ্লেষণ না করা ও তার থেকে শিক্ষা না নেবার কারণে আমরা আজও সত্যিকারের এক সভ্য রাষ্ট্ররূপে পরিগণিত হতে পারিনি। যে কারণে বাংলাদেশ আজও লাভ করেনি মানসিক স্বস্তি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এই বিষয়গুলো নিয়ে নির্মোহভাবে ও যুক্তি তথ্যের আলোকে মৌলিক গবেষণা আমাদের দেশে খুব কমই হয়েছে । আজকের প্রজন্ম যারা সেই সময়টি সম্বন্ধে জানে না বা তাদেরকে সঠিকভাবে জানাতে ব্যর্থ হয়েছি, বিশেষত: তাদের জন্যই সেই ইতিহাসের অতি সংক্ষিপ্ত এই বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে এই বইয়ে। জেলহত্যা তদন্ত কমিশনের সদস্য বিচারপতি কে এম সোবহান এবং ওই সময়ে কারাগারে থাকা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ, রায়ের বাজার আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী মহসিন বুলবুল এবং সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার (অব:) আমিনুল হক বীরউত্তম প্রমুখের সাথে ১৯৮৭ সালে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে ও কেন্দ্রীয় কারাগারের সার্বিক পরিস্থিতির আলোকে গবেষণামূলক এ গ্রন্থ রচিত হয়েছে। সাক্ষাৎকারগুলোর মাধ্যমে রচিত প্রবন্ধ ছিল জেল হত্যা বিষয়ে বাংলাদেশের প্রথম গবেষণাভিত্তিক লেখা। (তথ্য ও কথা সংগ্রহীত)
Was this review helpful to you?
or
ম্যাডাম, সালাম নিবেন। তাজউদ্দিন পিতা ও নেতা বইটি পড়েছি। অসাধারণ বই। পড়ে অনেক ভাল লাগলো। এতদিন জানতাম আপনার বাবা শুধু একজন একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং যুদ্ধ কালীন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আজ জানতে পারলাম তিনি একজন মহা নায়ক এবং মুক্তিযুদ্ধের অতন্দ্র প্রহরী। বঙ্গবন্ধুর চেয়ে ত্যাগী নেতা। তাই তাজ উদ্দিন সাহেবের কৃতিত্ব তার সন্তান হিসেবে জনগণের কাছে পৌছে দেওয়ার দায়িত্ব আপনাদের। কারও গোলামী করার জন্য নয় সঠিক ইতিহাস জানার জন্য।কারন কারও একক নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়নি।
Was this review helpful to you?
or
বই হতে নির্বাচিত- নভেম্বরের ১ তারিখ, শনিবার। আম্মা একটা দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে উঠলেন। স্বপ্নে দেখেন যে বাঁশের চারটি তাঁবু পাশাপাশি রাখা। আম্মা জিজ্ঞেস করলেন, ‘কাদের এই তাঁবু?’ কে যেন উত্তর দিল, ‘এই তাঁবুগুলো তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মনসুর আলী ও কামরুজ্জামান সাহেবদের জন্য।’ স্বপ্নের মধ্যেই আম্মার মনে হলো যে বাঁশের তাঁবু দেখা তো ভালো না। আব্বুর পছন্দের খাবার রেঁধে টিফিন কেরিয়ারে ভরে সেদিনই আইনজীবীদের সাথে নিয়ে আম্মা একাই জেলে গেলেন আব্বুর সঙ্গে দেখা করতে। আম্মা আইনজীবীদের সহায়তায় হাইকোর্টের মাধ্যমে আব্বুর আটকাদেশকে অবৈধ চ্যালেঞ্জ করে আব্বুকে মুক্ত করার জন্য নথিপত্র জোগাড় করেছিলেন। হত্যাকারী সেই আর্মি–মোশতাক সরকার আব্বুকে দুর্নীতিতে জড়ানোর নিরন্তর চেষ্টা করেও দুর্নীতি তো দূরের কথা, একটা সাধারণ নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগও দাঁড় করাতে পারেনি। আব্বুকে মুক্ত করার জন্য ৫ নভেম্বর আদালতে রিট পিটিশন ওঠার কথা। আম্মা আব্বুকে সেই খবর জানালেন। কিন্তু আব্বু যেন কেমন চিন্তামগ্ন রইলেন। তিনি আম্মার ডাক নাম ধরে বললেন, ‘লিলি, আজ রাতে ডায়েরির শেষ পাতা লেখা হবে। সেই সঙ্গে শেষ হবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা।’ তারপর বললেন, ‘আর বোধহয় বাঁচব না।’ জেলে আব্বুর সাথে আম্মার সেই শেষ সাক্ষাৎ। ৩ নভেম্বর, মাত্র ভোর হওয়া শুরু হয়েছে। আব্বু ও তাঁর সহকর্মীদের রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে রয়েছে কারাগৃহের মাটিতে। সেই ভয়াল সংবাদটি আমরা জানতে পারব আরও এক দিন পরে। আম্মা সেই একই ভোরে স্বপ্নে দেখলেন যে বিস্তীর্ণ মহাকাশে বিচরণকারী মধ্য গগনের সূর্যটি যেন আচমকাই অস্তগামী সূর্যের মতো রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। সিংহাসনের মতো এক আসনে বসা আব্বুর সারা শরীরের ওপর ছড়িয়ে পড়ছে রক্ত লাল আলো। আব্বুর পরনের সাদা গেঞ্জিটি ক্রমশই লাল হয়ে উঠছে। যেন সূর্য থেকে বের হচ্ছে রক্তের ধারা। আম্মা স্বপ্নের মধ্যেই ব্যাকুলভাবে জিজ্ঞেস করলেন, ‘মধ্য গগনের সূর্যের রং অস্তগামী সূর্যর মতো লাল রঙের হয় কী করে?’ অদৃশ্য থেকে কে যেন গম্ভীর কণ্ঠে জবাব দিল, ‘দেশের ওপর মহাবিপদ নেমে আসছে।’ আম্মা এক অজানা আশঙ্কা নিয়ে দুঃস্বপ্ন থেকে জেগে উঠলেন। সাত সকালে জঙ্গি বিমানের প্রচণ্ড শব্দে আমাদেরও ঘুম ভেঙে গেল। আমাদের বাসার খুব নিচ দিয়ে জঙ্গি বিমান ও হেলিকপ্টার ঘন ঘন উড়ে যেতে দেখলাম। ঘর থেকে বেরিয়ে আমার নানা আম্মাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘লিলি, এত প্লেন কেন উড়ছে?’ আম্মা বললেন, ‘অবস্থা ভালো মনে হচ্ছে না। মনে হয় আমাদের বাসা ছাড়তে হবে।’ ইতিমধ্যে সকাল সাতটায় রেডিওর অনুষ্ঠান হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লিভার সিরোসিস রোগাক্রান্ত আমাদের মেজকাকু (আব্বুর পরবর্তী ভাই প্রয়াত মফিজউদ্দীন আহমদ) চিন্তিত হয়ে ছোট ফুফুর ছেলে ঢাকা কলেজের ছাত্র বাবুলকে (নজরুল ইসলাম খান) আমাদের বাসায় পাঠালেন কোনো খবর আছে কি না, জানতে। বাবুল সকাল আটটার দিকে আমাদের বাসায় পৌঁছে দেখে আম্মা চিন্তিতভাবে ডাইনিং টেবিলের কাছে বসা। বাবুলকে তিনি ভোররাতে দেখা স্বপ্নটি বললেন। তারপর অবস্থা ভালো না ঠেকায় আমরা কাছেই ধানমন্ডির ১৯ নম্বর রোডে মফিজ কাকুর বাসায় আশ্রয় নিলাম। সেদিন ঢাকার রাস্তাঘাটজুড়ে নানা রকম গুজব চলছিল। অনেকেই আম্মাকে বিভিন্ন খবর দিলেন। কেউ বললেন যে আব্বু ও তাঁর সহকর্মীদের জেল থেকে বের করে বঙ্গভবনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সরকার গঠনের জন্য। কেউ বললেন, ওনাদের কোনো গোপন জায়গায় নিয়ে সেখানে তাঁদের চাপ দেওয়া হচ্ছে মোশতাকের (অবৈধ) সরকারে যোগ দিতে ইত্যাদি। আম্মা নিজেও মালেকা খালাকে (নারীনেত্রী) নিয়ে ছুটলেন বিভিন্ন জায়গায় সঠিক খবরের আশায়। তখন তো আর সেলফোনের যুগ নয়, ফোনও সবার বাড়িতে নেই। নিজেদেরই বিভিন্ন জায়গায় যেতে হচ্ছিল সঠিক সংবাদের আশায়। শারমিন আহমেদপরদিন, ৪ নভেম্বর মঙ্গলবার, সকাল সাড়ে সাতটার দিকে খবর এল আব্বুর বন্ধু ডাক্তার এম এ করিম আম্মার জন্য অপেক্ষা করছেন মফিজ কাকুর বাসার কাছেই, অ্যাডভোকেট মেহেরুননেসা রহমানের বাসার সামনে। ওনার কাছে জরুরি খবর আছে। সংবাদ পাওয়ামাত্রই আম্মা আমাকে নিয়ে রিকশায় চেপে বসলেন। রিকশা থামল বাড়ির সামনে। আম্মার সামনে দাঁড়ালেন করিম কাকু। ছোটবেলায় অসুখ-বিসুখ হলে আব্বুর এই রাজনীতিবিদ, সমাজকর্মী ও নিঃস্বার্থ সেবক বন্ধু ডা. করিম ছিলেন আমাদের ভরসাস্থল। ওনার সদাহাস্য চেহারা ও মজার মজার আলাপ শুনে অসুখ অর্ধেক ভালো হয়ে যেত। আজ ওনাকে এমন বিমর্ষ-বেদনাসিক্ত কেন লাগছে? উনি হাউমাউ করে কেঁদে বললেন, ‘ভাবি, তাজউদ্দীন ও তাঁর সহকর্মীদের আর্মিরা মেরে ফেলেছে।’ খবরটি শুনে আম্মা যেন পাথর হয়ে গেলেন। আম্মার হাত আঁকড়ে ধরে আমি বলে উঠলাম, ‘এ নিশ্চয়ই ভুল খবর!’ করিম কাকুর পরিচিত ডাক্তার সেকান্দারের চেম্বার ছিল জেলের কাছেই বকশীবাজারে। তিনি ভোরবেলায় ওনাকে ফোন করে এই মর্মান্তিক খবরটি জানান। তার পরও বিশ্বাস হতে চায় না। যেহেতু সরকারি তরফ থেকে কিছু বলা হয়নি এবং মিডিয়াও নীরব ভূমিকা পালন করছে, সেহেতু আমাদের পক্ষে ওই হৃদয়বিদারক খবরটি বিশ্বাস করা কঠিন ছিল। একটা গভীর আতঙ্ক নিয়ে আমরা সারা দিন ছোটাছুটি করলাম সংবাদের আশায়। ততক্ষণে একটা কথা সবার মুখেই শোনা যাচ্ছিল। গতকাল ভোররাতে জেলে পাগলাঘণ্টি ও গোলাগুলির শব্দ শোনা গিয়েছে। বিকেল চারটার দিকে মফিজ কাকুর বাসায় কয়েকজন মহিলা প্রবেশ করলেন। তাঁদের একজন পরিচয় দিলেন যে তিনি মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফের মা। আম্মা তখনো ফেরেননি। তিনি ফুফাতো ভাই বাবুলকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তাজউদ্দীন সাহেব তোমার কে হয়?’ বাবুল জবাব দিল, ‘মামা হয়।’ উনি এবং বাকি মহিলারা বাবুলকে আমাদের থেকে আলাদা করে পাশের ঘরে নিয়ে কী যেন বলেই সঙ্গে সঙ্গে চলে গেলেন। তাঁরা যেতে না যেতেই ঘরের ভেতর থেকে ভেসে এল বাবুলের হাহাকারভরা আর্তনাদ। ছোট বোন রিমি ও মিমিসহ ঘরে ঢুকে দেখি বাবুল একবার বিছানায়, একবার মাটিতে ‘মামা’ ‘মামা’ বলে চিৎকার করে লুটোপুটি খাচ্ছে। খালেদ মোশাররফের মা বাবুলকে দুঃসংবাদটি দিয়ে চলে যাওয়ার পর জানাতে বলেছিলেন। বঙ্গভবন থেকে খন্দকার মোশতাক ও মেজর আবদুর রশীদের নির্দেশে রাতের অন্ধকারে এই বর্বর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। এই দুজন হত্যাকারীদের জন্য জেলগেট খুলে দিতে কারাগারের আইজিকে হুকুম দেয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় এসে জেলহত্যাকাণ্ডের ওপর তথ্য সংগ্রহের সময় ব্রিগেডিয়ার আমিনুল হক, যাঁকে খালেদ মোশাররফ জেল হত্যার তদন্তে নিয়োগ করেছিলেন, তিনি এই তথ্য আমাকে ১৬ জুন, ১৯৮৭ সালে সাক্ষাতে দিয়েছিলেন। পরে তো ৭ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ নিহত হওয়ার পর এবং জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণ করে জেল হত্যার তদন্ত বন্ধ করে দেয়। বঙ্গবন্ধু ও জেলহত্যাকারীরা বরং বিদেশের দূতাবাসে পদমর্যাদাযুক্ত চাকরির মাধ্যমে পুরস্কৃত হয়। মোশতাককে দুর্নীতির দায়ে জেল খাটতে হয়, বঙ্গবন্ধু ও জেলহত্যার মতো জঘন্য অপরাধের শাস্তিকে পাশ কাটিয়ে। সবচেয়ে বড় বেদনা তখনই, যখন প্রকাশের সব ভাষা হারিয়ে যায় নিমেষেই। কেমন যেন যন্ত্রচালিতের মতোই রিমিকে নিয়ে ফিরে এলাম আমাদের বাসায়। মনে হলো সারা দিন পাওয়া খবরগুলো কোনো অদ্ভুত দুঃস্বপ্ন। জেলে পাগলাঘণ্টি, গোলাগুলি, আব্বু নিহত!!! এবার হয়তো বাসায় কেউ ভালো খবর নিয়ে আসবেন—এমনি নিভু নিভু আশায় বুক বেঁধে আম্মার পাশে এসে আমরা দাঁড়ালাম। এক এক করে আম্মাকে ঘিরে মানুষের ভিড় জমে উঠতে থাকল। আম্মা বারান্দার চেয়ারে হেলান দিয়ে বসা। বাকরুদ্ধ। বেদনাক্লিষ্ট। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ময়েজউদ্দীন আহমেদসহ আব্বুর বেশ কজন সহকর্মী ও বন্ধু নিয়ে এলেন পাকা খবর। জেলখানায় আব্বু ও তাঁর তিন সহকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। সংবাদদাতাদের দিকে আম্মা তাকিয়ে রইলেন কেমন নিস্পন্দ দৃষ্টিতে। আমি সেই মুহূর্তে ছুটে আব্বু ও আম্মার ঘরে ঢুকে ওনাদের খাটে বসে কান্নায় ভেঙে পড়লাম। কতক্ষণ ওভাবে অশ্রুপ্লাবনে সিক্ত হয়েছিলাম জানি না। পানির ঝাপটায় দুঃখ ধুয়ে যায় না, তার পরও বৃথা আশায় বেসিন খুলে সমানে চোখেমুখে পানির ঝাপটা দিতে থাকলাম। ঘরের বাইরে বেরিয়ে দেখি আম্মাকে ড্রইংরুমের সোফায় বসানো হয়েছে। এলোমেলো চুলে ঘেরা আম্মার চোখেমুখে কী নিদারুণ হাহাকার! একপর্যায়ে আম্মা ডুকরে কেঁদে বললেন, ‘এই সোনার মানুষটাকে ওরা কীভাবে মারল! দেশ কী হারাল!’ গভীর রাতে বড় ফুফুর ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শাহিদ ভাইয়ের কাছে জেল কর্তৃপক্ষ আব্বুর মরদেহ হস্তান্তর করে। ৪ নভেম্বর দিবাগত রাত ১২-২৫ মিনিটে পুলিশের ট্রাকে করে জেলখানা থেকে চিরনিদ্রায় শায়িত আব্বু ঘরে ফিরলেন। সঙ্গে ফিরল আব্বুর রক্তমাখা ঘড়ি, জামা, স্যান্ডেল ও বুলেটে ছিদ্র হওয়া টিফিন ক্যারিয়ার, যাতে করে ১ নভেম্বর আম্মা শেষ খাবার নিয়ে গিয়েছিলেন। আব্বুর কুরআন শরিফটি, যা তিনি জেলে পাঠ করতেন, তা বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল, সেটা আর ফেরত দেওয়ার অবস্থায় ছিল না। আব্বুর মহামূল্যবান সেই কালো চামড়ায় সোনালি বর্ডারওয়ালা ডায়েরিটি, যাতে তিনি লিখছিলেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কীভাবে চলবে তার দিকনির্দেশনা, সেটা রহস্যজনকভাবে জেলেই হারিয়ে যায়।