User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
অসাধারন একটা বই?
Was this review helpful to you?
or
very Very Good,????
Was this review helpful to you?
or
আমার অনেক পছন্দের একটি বই। প্রেমের এক অপূর্ব উপন্যাস। যা আমি চিরকাল পড়ে যাবো।
Was this review helpful to you?
or
অনেক সুন্দর বই।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_নভেম্বর বইঃ রোদনভরা এ বসন্ত লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ প্রকাশনঃ অনন্যা প্রকাশকঃ মনিরুল হক প্রথম প্রকাশঃ ২০০৩ সাল প্রচ্ছদঃ ধ্রুব এষ পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৯২ মুদ্রিত মূল্যঃ ১৫০ টাকা ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৩.৫/৫ডি ◆কাহিনী সংক্ষেপঃ মীরু, মরিয়ম থেকে মীরু। অবশ্য ঐন্দ্রিলা নামটাই তার বেশি পছন্দ। যার একরাত ঘুম না হলেই চোখের নিচে কালি লেপ্টে থাকে, চেহারা অন্যরকম হইয়ে যায়। এজন্য বিয়ের আগের রাতে সে ঘুমানোর চেষ্টা অনেক করে, কিন্তু ঘুমের ওষুধ খেয়েও তার ঘুম আসে না। কারন তাদের বিয়েটা অন্য দশজনের মতো ঘটা করে হচ্ছে না। সে আর তার পছন্দের মানুষ বারসাতের সাথে পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারন সে জানে বারসাতকে মেনে নেওয়ার মতো মানুষ তার বাব না। এছাড়াও তাদের পরিবার অনেকটা ধার্মিক হওয়ায় প্রেম করে বিয়ে তারা মানে না। বিশেষ করে মীরুর ছোট ফুপু সুলতানা এগুলি পছন্দ করেন না। কিন্তু মীরুর সাথে তার সম্পর্কও অতন্ত্য ভালো। অপরদিকে, মীরুর বড় বোন রুনি পছন্দ করে একটা ছেলেকে বিয়ে করেছিল বলে ওই বাড়িতে আর তার জায়গা হয়নি। পরেরদিন সময়মতো কাজি অফিসে বারসাত উপস্থিত থাকে। মীরুও যাওয়ার জন্য রেডি হয়, কিন্তু ওইদিন ফজরের নামাজের পরেই মীরুর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর বাসায় তারা দুইজন এবং ছোট্ট কাজের ছেলে জিতু মিয়া ছাড়া কেউ ছিলো না। এজন্য মীরুকেই তার বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। অপরদিকে বিকেল পর্যন্ত মীরুর জন্য অপেক্ষা করে বারসাত চলে যায় এবং বৃষ্টিতে ভিজে জ্বরে পড়ে যায়। এরপর হাসপাতালে সুলতানা ফুপু মীরুর জন্য তার পছন্দ করা ছেলে নাসেরের সাথে মীরুর পরিচয় করান। যদিও পরিচয়টা অন্যরকম ছিলো। কিন্তু নাসেরকে মীরুর প্রথমে ততোটা ভালো না লাগলেও তার কথাবার্তায় ধীরে ধীরে তাকে ভালো লাগে। এরপর মীরু বারসাতকে তার বাবার অসুস্থতার কথা জানায় এবং সেজন্যই যে সে আসতে পারেনি সেটা বলে। এরপরে তার তখনি বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু কাজী অফিসে গিয়ে প্রধান কাজী গিয়েছিলেন ফরিদপুরে মেয়ের বাড়িতে আর দ্বিতীয় কাজি অন্য কোথাও বিয়ে পড়াতে গেছেন। এরপরে ঠিক করা অন্য একদিনে মীরু কাজি অফিসে গিয়ে বারসাতের জন্য অপেক্ষা করে। কিন্তু বারসাত এলো না। কেনো এলো না বারসাত? মীরুর প্রতি প্রতিশোধ নিতেই কি বারসাত কাজী অফিসে আসে না? কার সাথে বিয়ে হয় মীরুর? কি হয় নাসেরের? সব উত্তর আছে বইটিতে। ◆ব্যক্তিগত মতামতঃ বেশিরভাগ গল্পের মতোই লেখক কাহিনী পুরোপুরি খোলসা করেন নি। তবে হুমায়ূন আহমেদ স্যারের অন্য সব বইয়ের মতো এই বইটা ততোটা আকর্ষণীয় মনে হয় নি। এই গল্পের বেশিরভাগ জুড়েই ছিলো কল্পনা, যেটা তেমন ভালো লাগে নি। আর শেষের দিকে খোলসা না করার দিকটা পুরনো হলেও অন্যান্য বইগুলোতে ইন্টারেস্ট থাকলেও এই বইয়ে সেই ইন্টারেস্টটা পাইনি, তবে অবসর সময় কাটানোর জন্য বইটি ভালোই।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা #বইয়ের নাম: রোদন ভরা এ বসন্ত #লেখক: হুমায়ূন আহমেদ #পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৯১ প্রথমেই বইয়ের পাত্র পাত্রীদের চিনিয়ে দেই। বারাসাত আলী অদ্ভুত নামের এই ছেলেটাই উপন্যাসের একমাত্র নায়ক। হুমায়ূন স্যারের অন্যান্য নায়কের মতো এই নায়কটাও ভ্যাগাবন্ড টাইপের। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়েছে কিন্তু এখনো কোনো চাকরি জোগাড় করতে পারেনি। তিনটা টিউশনি আর একটা কোচিং সেন্টারে সময় দিয়েই কোনোরকমে দিনানিপাত। খুব সুন্দর পোট্রেট আঁকতে পারে এই ছেলেটা। আর হ্যা, অন্যান্য নায়কের মতো ইনিও নায়িকাকে ভীষন রকম ভালোবাসেন। ঐন্দ্রিলা,,, উপন্যাসের নায়িকাটার আরো তিনখানা নাম আছে, মরিয়ম, মীরু, ঐ পুরো উপন্যাসে অবশ্য তাকে মীরু বলেই ডাকা হয়। হুমায়ূন স্যারের নায়িকা সুতরাং ভীষনরকম সুন্দর, পাগলাটে তো হবেই। বারাসাত নামের চালচুলোহীন ছেলেটাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। খুব সম্ভব বারাসাতের চেয়ে বেশিই ভালোবাসে, কম না। বাবাকে ভয় পায় মাকে খুব বেশি পছন্দ করেনা। মায়ের চাইতে ছোটখালার প্রতিই ভালোবাসা বোধটা বেশি! হুমায়ূন আহমেদ,,,, চমকানোর কিচ্ছু নেই, এই উপন্যাসে লেখক নিজেই খানিকটা অভিনয় করেছেন। হুমায়ূন আহমেদ নামের ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিচ্ছু নেই, আমরা সকলেই ওনাকে খুব ভালোভাবেই চিনি। গল্প বলা যাক,,,,, রাত পোহালেই মীরুর বিয়ে অথচ তার দুচোখে একফোঁটা ঘুম নেই। বারাসাতকে তার পরিবার মেনে নিবেনা। যে ছেলের চালচুলো নেই, খুব ভালো অবস্থান নেই সে ছেলেকে কোনো মেয়ের বাবাই মেনে নেয়না। তবুও আগামীকাল ভোরে মীরু আর বারাসাতের বিয়ে। মীরু বাসায় না বলে পালিয়ে বিয়ে করবে বলে ঠিক করেছে। এমনতর ছেলেকে পালিয়ে বিয়ে করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় ও নেই। মীরু ঘুমানোর চেষ্টা না করে বারান্দায় হাটাহাটি শুরু করলো। বারাসাতকে সে কেন পছন্দ করে সেই ব্যাপারটা বুঝতেছে না। যে ছেলে শব্দ করে নাক ঝেড়ে সে হাত শার্টে মুছে ফেলে সে ছেলেকে পছন্দ করার কোনো কারন থাকার কথা না,,,,,,, ঝুম বৃষ্টি। উপন্যাসের নায়কটা নীলুফার নামের এক মহিলার সাথে মগবাজার কাজী অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আজ তার বিয়ে, নীলুফার নামের মহিলাটা বিয়ের স্বাক্ষী। মীরুর আসার কথা এগারোটায় অথচ এগারোটা পেরিয়ে গেছে অনেকক্ষন। বারাসাত প্রায় সাড়ে চারটা অবধি কাকভেজা হয়ে অপেক্ষা করার পর বুঝলো মীরু আসবেনা! আজকালকার মেয়েগুলা বিয়েশাদীর চাপ একদমই নিতে পারেনা। শেষ মুহুর্তে এসে মত পালটিয়ে কাজের মেয়ের সাথে লুডু খেলতে বসে। কেউ কেউ তো প্রেমিকের নাম ও ভুলে যায়! বেচারা নায়ক অগত্যা কালিয়াকৈর যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। সেখানে তার এক দূর সম্পর্কের মামার বাসায় তিনজন বেহালাবাদক ঠিক করে রাখা। বর কনেকে একসাথে দেখলেই তারা বেহালায় বিয়ের গানের সুর তুলবে,,,,,,,,, লীলাবালি, লীলাবালি বড় ও যুবতী কন্যা, কি দিয়া সাজাইতাম তরে,,,,, মীরুদের বাসায় উৎসবের মতো কিছু হচ্ছে। ছোটখালা মীরুর জন্য নাসের নামের এক ছেলেকে ঠিক করেছে। ছেলেটা মস্ত বড় ব্যবসায়ী। সামাজিক অবস্থান খুবই ভালো এই ছেলের, বারাসাতের মতো ভ্যাগাবন্ড না গোছানো ছেলে। মীরুর বাবা ঠিক করেছেন বর যাত্রীকে নেওয়ার জন্য তিনি হাতীর ব্যবস্থা করবেন, পুরো গ্রামকে মেমানি খাওয়ানোর পরিকল্পনাও হচ্ছে। শুধু এটুকুই না, মীরার সম্মতি উপলক্ষ্যে মীরার ত্যাজ্য বোনকেও বাড়িতে ফেরার অনুমতি দেওয়া হয়েছে! বারাসাতের কথা আর না বলি। এজাতীয় হতদরিদ্র প্রেমিকরা বেশিদিন টেকেনা। ফর্সামতো নায়িকাগুলার দেখা এরা কখনোই পায়না, ছ্যাকা এদের একমাত্র প্রধান খাদ্য। এই নায়কগুলা বৃষ্টি জলে ভিজে অসুখ বাধাবে এরপর রোদে শুকিয়ে কড়কড়া হবে। পুরাতন স্মৃতি ভুলে আবার একটা দুইটা টিউশনি জোগাড় করবে। যারা ভালো ছবি আঁকতে পারে তারা ফর্সামতো নায়িকাকে প্রতিবার দেখার পরই একটা করে ছবি আঁকবে। কোনো এক জায়গায় সেই ছবির প্রদর্শনীও রাখবে। প্রদর্শনীর নাম হবে এ এবং ঐ, ছবির সংখ্যা একশো সাত আর আর দর্শক মাত্র দুইজন! সেইসব ছবির প্রদর্শনী হয়না কখনো। কালিয়াকৈর এর সেই তিনজন বেহালাবাদকের বেহালায় কখনোই বিয়ের গানের সুর ওঠেনা। তারা নায়িক ছাড়া হতভম্ব নায়ককে দেখে খানিকটা দ্বিধায় পড়ে। বিয়ের কনে ছাড়া বর যদি একা আসে তাহলে বিয়ের সুর বাজানোর নিয়ম আছে? ঠিক এসময়ে মীরু নামের নায়িকাটা হয়তো মগবাজার কাজী অফিসের সামনে খুব গোছানো একটা ছেলের সাথে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের দুজনের মুখই হাসি হাসি শুধু চোখভরা অপেক্ষা। এই অপেক্ষা কিসের?! গল্পের নটে গাছ মুড়োনোর সময় হয়েছে। গল্পের লেখক খানিকটা বিপদে পড়েছেন। তার সামনে মিষ্টি চেহারার একটা মেয়ে ফ্যাৎ ফ্যাৎ করে কান্না করে একটা অনুরোধ করতেছে বারবার। অনুরোধটাও অদ্ভুত কিসিমের,,,,, : আপনি কি আপনার উপন্যাসের শেষ অংশটুকু পালটে দেবেন, প্লিজ? : কোন উপন্যাস?! : রোদন ভরা এ বসন্ত নামের উপন্যাসটা। : কি পাল্টাতে হবে? : উপন্যাসের শেষটা মিলনাত্মক করে দিন না, প্লিজ! : যে উপন্যাসের নাম "রোদন ভরা এ বসন্ত" সে উপন্যাসের শেষ তো মিলনাত্মক হয়না!! : আচ্ছা উপন্যাস মিলনাত্মক করা লাগবেনা। আগামী শুক্রবার আমাদের বিয়ে, আপনি আমাদের বিয়েতে অতিথি হয়ে অবশ্যই আসবেন। আমি সারাটা জীবনভর কাঁদতে পারবো কিন্তু আমার উপন্যাসের নায়কটাকে হারাতে পারবোনা!! লেখক সাহেব নিষ্পলকভাবে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। একটু আগে কান্না করা মেয়েটার দুচোখ খুশিতে ঝলমল করতিছে। ঠিক যেন "এই মেঘ, রোদ্র ছায়া" #ব্যক্তিগত মতামত: কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে,,,হুমায়ূন স্যারের সেরা তিনটা উপন্যাসের নাম বলো,, আমি চোখ বন্ধ করে বলবো,,,জোছনা ও জননীর গল্প, মধ্যাহ্ন, বাদশাহ নামদার। আর কেউ যদি জিজ্ঞেস করে,,,,হুমায়ূন স্যারের লেখা তোমার প্রিয় তিনটা বইয়ের নাম বলো,,,, আমি আবারো চোখ বন্ধ করে বলবো,,,কবি, তোমাকে, রোদন ভরা এ বসন্ত। আমি জানিনা এই বইটা আমারো এতো পছন্দের কেন। জানিনা বলা ঠিক হয়নি। এই তিনটা বই আমার এতো বেশিরকম কেন পছন্দ তা আমি জানি হয়তো। কার কাছে কেমন লাগবে এই বই সেটা জানিনা। আমি শুধু আমারটা বলতে পারবো। এই বইয়ের প্রতিটা অক্ষর আমার প্রিয়, এই বইয়ের প্রতিটা শব্দ আমার পছন্দের। এই বইয়ের প্রচ্ছদটাও আমার ভীষন রকম পছন্দের!
Was this review helpful to you?
or
আমি তখন গ্রামের স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ি। কোন বিভাগে ভর্তি হব তা নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল পরিবার থেকেই, আমার কিছু বলার ছিল না তাতে। তাছাড়া জীববিজ্ঞান পড়তে ভালোই লাগত। আমাদের স্কুলটা দারুণ সুন্দর ছিল, বেশ বড় মাঠ, মাঠের পাশেই পুকুর, পুকুরের ওপারেই গার্লস স্কুল, তারা পুকুরের ওপাশ থেকে তাকিয়ে থাকত আর আমরা এপাশ থেকে, মাঝখানে সসীম পারাবার; মানে এক কথায় অপূর্ব। এই অপূর্ব সময়ের মাঝেও কিন্তু চাঞ্চল্যকর একটা ঘটনা আমাদের সবাইকে নাড়িয়ে দিল। দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের কৃতি ছাত্র লাবলু ভাই ফেল করে বসল টেস্ট পরীক্ষায়। সারা গ্রামে বলতে গেলে একেবারে বিনা মেঘে সাইক্লোন বয়ে গেল। লাবলু ফেল করেছে??? কীভাবে তা সম্ভব? স্কুল কমিটির লোকেরা হায় হায় করতে লাগলেন, যে ছেলের এ প্লাস পাওয়ার কথা সেই ছেলে করেছে ফেল? গ্রামের মাতব্বরেরা চায়ের দোকানে এই নিয়ে আলাপ করতে লাগলেন কাপের পর কাপ উড়িয়ে। লাবলু ভাই কিন্তু এসব ব্যাপারে একেবারে বুদ্ধ সেজে বসে থাকলেন, নির্বিকার- নির্লিপ্ত; শুধু তিনি দুষলেন আমাদের অঙ্কের শিক্ষক কাশেম স্যারকে। সে সময় আমাদের স্কুলের স্যারদের কাছে কেউ পড়ত না, সবাই যেত পাশের গ্রামের বিখ্যাত আমজাদ স্যারের কাছে অঙ্ক পড়তে (উদ্দেশ্য ম্যাট্রিকের প্র্যাক্টিক্যালে নাম্বার পাওয়া)। সবাই ধারণা করল নিশ্চয় কাশেম স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ে না দেখেই লাবলুকে তিনি ফেল করিয়েছেন। সবাই আমার আর আমার বন্ধুর দিকে কেমন কেমন করে যেন তাকাতে লাগল (কেননা সে সময় আমরা এই দুইজনই মাত্র কাশেম স্যারের কাছে পড়তাম)। লাবলু ভাই আমাদের দিকে তাকিয়েও তাকাতেন না, ভাবখানা দেখে মনে হতো আমরাই যেন স্যারের কাছে বলে তাঁকে ফেল করিয়েছি। স্যারের বাড়িতে তখন মাঝ রাত্তিরে ঢিল পড়ে। লাবলু ভাই মনের দুঃখে পড়াশোনা ছেড়ে দিলেন। তখন শোনা গেল তিনি উপন্যাস লিখবেন। এবং বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তিনি তা লিখেও ফেললেন। উপন্যাসের নাম, “বৈরী বসন্ত”। প্রকাশ হতে না হতেই এই উপন্যাস আমাদের এবং আশপাশের দশ গ্রামে বেস্ট সেলারে পরিণত হল। গ্রামে গ্রামে সাড়া পড়ে গেল, সবার ঘরে ঘরে তখন এই বই, মুখে মুখে তখন এই বই নিয়ে আলোচনা। লাবলু ভাই সেই উপন্যাসে একেবারে আমাদের স্যারের নাম সহকারে নিজের সমগ্র জীবনকাহিনী তুলে ধরলেন, কীভাবে তিনি প্রেমে পড়েছিলেন স্যারের মেয়ের, কীভাবে তাঁকে ফেল করিয়েছে স্যার, এইসব ইতং বিতং নানান কথা। স্যার দুঃখ পেয়ে বললেন- “আমি ওকে পাশ করিয়ে দিলাম, কিন্তু ও যদি ম্যাট্রিক পাশ করতে পারে তখন আমার সাথে দেখা করতে বলিস। আমি নিজের ইচ্ছায় আমার মেয়ের বিয়ে ওর সাথে দিয়ে দেব”। আফসোস, লাবলু ভাই আজ পর্যন্তও ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেন নাই। তিনি এখন কাতার থাকেন। বই বলতে তখন আমার কাছে কেবল ছিল গোটা বিশেক জাফর ইকবালের বই আর নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের টেনিদার সাথে কিছু কমিক্স; আর আমার বন্ধুর কাছে ছিল কে এম ফিরোজের লেখা , “ভালোবেসে কেউ সুখী হয় না” আর “ভালোবেসে ভূল করেছি” টাইপের উপন্যাসগুলো। এমন সময় শোনা গেল বান্ধবীর বাসায় বেশ কতকগুলো বই আছে। সেই বই আনতে যেয়ে কীভাবে নাজেহাল হয়েছিলাম সে গল্প তো আগেই করেছি। তো হুমায়ূন আহমেদের “রোদনভরা এ বসন্ত” বইটা যখন প্রথম দেখি তখন আমি আর আমার বন্ধু একে অপরের দিকে তাকিয়ে বলেছিলাম- “লাবলু ভাইয়ের বই থেকে চুরি করে নাম দিয়েছে হুমায়ূন আহমেদ”। কাহিনী যদিও মনে করেছিলাম এক কিন্তু ভেতরে দেখি “বৈরী বসন্ত”-এর মত ততটা চিত্তাকর্ষক নয়। অর্থাৎ সেসময় পড়ে বেশ হতাশ হয়েছিলাম আর কি। ইফতেখার ভাই খুব সুন্দর একটা পোস্ট দিয়েছিলেন “হুমায়ূন আহমেদের গল্প” নিয়ে। হুমায়ূন আহমেদের লেখা নিয়েও যে এভাবে ভাবা যায় তা হয়তো এ জীবনে ভাবা হত না সেই পোস্ট না পড়লে। অনেকসময় হয় না, কাছের জিনিসকে আমরা দেখি না, চোখের সামনে তবু অদেখা। “দেখা হয় নাই চক্ষু মিলিয়া” টাইপ বলেও তো অনেক কিছু থাকে। অনেকদিন পর আবার পড়লাম, “রোদনভরা এ বসন্ত” উপন্যাসটি। আমি হুমায়ূন আহমেদের কিছু কিছু বইকে “ওল্ড ওয়াইন ইন আ নিউ বটল” বলে চিহ্নিত করি। এই উপন্যাসটিও সেই ক্যাটাগরির মাঝে পড়ে। চরিত্রগুলোর নাম পাল্টে আলাদা উপন্যাস বলে চালানো। সেই একই বেকার- রোগেভোগা- প্রেমিক যুবক, বারসাত; সেই একই বুদ্ধিমতী-চঞ্চল- মায়াবতী প্রেমিকা, মরিয়ম বা ঐন্দ্রিলা বা মীরু। মীরু ভালোবাসে বারসাতকে। বারসাতও ভালোবাসে মীরুকে। কিন্তু সমস্যা হয় নায়ক বেকার হওয়াতে। উপন্যাসটি বেশ রোম্যান্টিক। হুমায়ূন আহমেদের প্রেমের উপন্যাসে প্রেমের বড় অভাব। বাঁধভাঙা প্রেমের উচ্ছ্বাস নেই তাঁর কোন প্রেমের উপন্যাসে। নরনারীর শারীরিক প্রেম তিনি দেখান না। তাঁর চাইতে তিনি দেখান মায়া, মমতা, শ্রদ্ধা, একে অপরের প্রতি টান এই সমস্ত জিনিস। শরীরী চাহিদাকে সবসময় গৌণ করে দেখিয়েছেন তিনি। উল্লেখ করতে হয়, “চৈত্রের দ্বিতীয় দিবস” বইয়ের কথা। সেখানে নায়িকা নায়কের ছোঁয়া পাবার জন্যে এক ধরণের অভিনয় করে, বলে, “আমার কপালে হাত দিয়ে দেখ তো আমার জ্বর আছে কি না?” এই যে শরীরের স্পর্শ নিচ্ছে তাতেও কিন্তু এক ধরণের নাটকীয়তা আছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রেম করতে থাকা নরনারীরা এ ধরণের নাটক করে কি না তা আমার জানা নেই। আবার “কোথাও কেউ নেই”-এর মুনার সাথে তাঁর প্রেমিক যখন জোর করে শরীরী চাহিদা চায় তখন তিনি তা বাঁধা দেন। কেমন যেন এক লজ্জা। এ কি তাঁর মধ্যবিত্ত মানসিকতার প্রকাশ নাকি সময়ের সংস্কার তিনি ধরে রাখতে চেয়েছেন তাঁর লেখায়? উপন্যাসটি কাল্পনিক সংলাপে বড় বেশি মুখর। নায়িকা কল্পনা করছে, নায়ক কল্পনা করছে, সবার কল্পনাই কেমন যেন একটা তরলতায় ভরা, চিন্তাশীলতার ছাপ সেখানে অনুপস্থিত। মানা গেল কল্পনায় আমরা খুব একটা শক্ত জিনিস চিন্তা করি না, তবু সিরিয়াস বিষয় নিয়ে চিন্তা করার সময় অন্তত সিরিয়াসভাবেই তো চিন্তা করি, তাই নয় কি? মীরু কল্পনায় নায়ক বারসাতের সাথে বাবা মায়ের ইন্টার্ভিউয়ের কথাবার্তায় যেমন তরলতার আশ্রয় নেয় ঠিক তেমনইভাবে ফুপুর সাথে তাঁর পালিয়ে বিয়ে করার ব্যাপারে কথা বলার সময়ে সেই একই তরলভাবে চিন্তা করে। হুমায়ূন আহমেদ মানুষজনের বিভিন্ন নাম দিতে পছন্দ করতেন। বৃক্ষমানব, দয়াময়ী এই ধরণের অসংখ্য নাম তিনি তাঁর চারপাশে থাকা মানুষজনকে দিয়েছেন। এই নাম দেয়া ব্যাপারটা এই বইতেও চলে এসেছে, বেশ প্রকটভাবে। উপন্যাসে বিভিন্ন নামের ছড়াছড়ি- “পবিত্র মহিলা”, লাথি সহ্য করে দেখে নাম “লাথি কন্যা”, কথায় কথায় তাল দেয় বলে “তালেবান মা”, ঘুম পায় বলে সোফার নাম “ঘুম সোফা”, প্রতিজ্ঞা করে বলে নাম “প্রতিজ্ঞাবতী”, চোখে জল এসেছে বলে নাম “অশ্রুবতী”, “ডুবন্ত কন্যা”, “ভাসন্ত কন্যা”, “অক্সিজেন সেন্টার” এই ধরণের নামে পুরো উপন্যাস জর্জরিত। Myrphy’s Law এখানেও দারুণ ভাবে কাজে লাগিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ- “ ভেজার উদ্দেশে বৃষ্টিতে নামলেই বৃষ্টি কেন জানি কমে যায়”। “অসুস্থ অবস্থায় কটকটা হলুদ রঙ চোখে লাগে।” “ জ্বর বেশি হলে মানুষের মাথায় উদ্ভট চিন্তা বেশি আসে”। আমার বন্ধু তখন সদ্য কবিতা লেখা আরম্ভ করেছে। প্রতিদিন রাশি রাশি কবিতা লিখে এনে আমাকে দেখায়। আমি বাহবা দেই। কবিতার তখন কিই বা বুঝি? একবার চাচাতো বোনকে দেখালাম তাঁর লেখা বিখ্যাত কবিতা- “বিদায়বেলা”, সেই কবিতার একটা অংশে প্রেমিকা চলে যাচ্ছে প্রেমিককে ছেড়ে। এই অংশ পড়ে আপা হেসেই খুন। আমরা দুজন দুজনার মুখের দিকে তাকাই। কাহিনী কি? তখন আপা দেখায় এই লাইনটি- “সে আমারে ছাড়ি চলে যাবির চায়”। আমরা বুঝতে পারি না, ঠিকই তো আছে, আপা হাসে কেন? আপা তখন বলে, “তোরা বুঝতে পারবি না, এখানে তোর লেখা আঞ্চলিকতায় দুষ্ট। “যাবির চায়” বলে কোন শব্দ হয় না, যাবার চায় বললেও হতো, যেতে চায় বললেও হতো, কিন্তু “যাবির চায়” এটা আঞ্চলিকতায় দুষ্ট। তোর চোখ এড়িয়ে গেছে কারণ তুই এভাবে বলে অভ্যস্ত তাই এভাবেই লিখে দিয়েছিস”। হুমায়ূন আহমেদের লেখাতেও আঞ্চলিকতা বেশ লক্ষণীয়। লেখক লিখেছেন- “বৃষ্টি বাদলার সময় মাছি উড়ে না”। আসলে এখানে “ওড়ে না” শব্দটাই যথোপযুক্ত কারণ “উড়ে” একটি অসমাপিকা ক্রিয়া কিন্তু লেখকের আঞ্চলিকতায় এই শব্দটা “উড়ে না” হয়ে গিয়েছে। নেত্রকোনা ময়মনসিংহের লোকেরা “ও”-কে “উ”-এর মতন বলে অভ্যস্ত। পারসপেক্টিভের ব্যাপারে আরেকটু সতর্ক হলে বোধ হয় ভালো হতো। উপন্যাসের এক জায়গায় দেখা যায় নায়িকা তাঁর ফুপুর ঠিক করে দেয়া পাত্রের সাথে টেলিফোনে কথা বলছে, দৃশ্যটা দেখানো হচ্ছে মরিয়মের পারসপেক্টিভে সেখানে হঠাৎ করে একটা লাইন এমন দেখা যায়। “নাসের জবাব দিচ্ছে না। তাকিয়ে আছে”। ব্যাপারটা একটু অন্যরকম হয়ে গেল। এটা মীরুর বয়ানে জানা সম্ভব না যে নাসের সাহেব তাকিয়ে আছেন নাকি চোখ বন্ধ করে কথা বলছেন। “রোদনভরা এ বসন্ত” ট্রাজেডি হতে হতে বেশ ভালো রকমের এক রোমান্টিকতায় মোড় নেয়া উপন্যাসের নাম। প্রায় সময়ই দেখা যায়, হুমায়ূন আহমেদ তাঁর উপন্যাসের চরিত্রগুলোর ব্যাপারে দয়ামায়হীন। কিন্তু এক্ষেত্রে বেশ দয়াশীলতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। পড়া শেষে সবার ভালো লাগবে এমন আশা করা যায়।