User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
জানার আগ্রহ থেকে নেওয়া
Was this review helpful to you?
or
অনেক ভালো লেগেছে।
Was this review helpful to you?
or
বইটা আমি পড়েছি। আমরা যারা তরুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করিনি কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে আগ্রহী তাদের জন্য বইটি বিশেষভাবে গুরুত্বুর্ণ। এর কারণ প্রকৃত ইতিহাস জানা খুবই দুরুহ। যে যার সুবিধা মত ইতিহাস রচনা করে। সে দিক থেকে এই বইটিতে লেখক সম্পুর্ণ নিরাপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় একজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে তিনি যেভাবে মুক্তিযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছেন সেভাবেই পাঠকবর্গের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক যেকোনো গবেষণাধর্মী কাজেও বইটি রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
Was this review helpful to you?
or
ইতিহাসের ভেতর বাইরে...।
Was this review helpful to you?
or
The Bangladesh Liberation War in 1971 was for independence from Pakistan. India and Pakistan got independence from the British rule in 1947. Pakistan was formed for the Muslims and India had a majority of Hindus. Pakistan had two parts, East and West, which were separated by about 1,000 miles.
Was this review helpful to you?
or
১৯৭১ : ভেতরে বাইরে হল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের উপ-সর্বাধিনায়ক এ কে খন্দকার রচিত একটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক গ্রন্থ। বইটিতে লেখক স্বাধীনতা যুদ্ধে ডেপুটি চীফ অব স্টাফের দায়িত্ব পালনকালে প্রতক্ষ্যভাবে দেখা মুক্তিযুদ্ধের কিছু স্মৃতি তুলে ধরেছেন। কলকাতায় যুদ্ধদিনের অনেক অজানা কথার বর্ণনা করেছেন তিনি। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে। বইটি প্রকাশের পর বিতর্কিত হয় এমন কি সংসদ থেকে বইটি নিষিদ্ধ করার দাবি উঠে। ৭ মার্চ ভাষণকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। বইটিতে এ কে খন্দকার মুক্তিযুদ্ধকালে বিমান বাহিনী গঠনের কথা বলেছেন।দেশের প্রতি ভালবাসায় নৌবাহিনী অফিসারদের পাকিস্তান নৌবাহিনী থেকে পালানো এবং নৌবাহিনী গঠনের বিস্তারিত বিবরণ উঠে আসে তার লেখায়।। মুক্তিযুদ্ধ সময়কালের অবস্থা জানার জন্য বইটি গুরুত্বপূর্ণ।
Was this review helpful to you?
or
এই বই পড়ে আমার মনে হল এতদিন আমরা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আমরা যা পড়েছি সবই গৎবাঁধা রাজনৈতিক দৃষ্টভঙ্গির প্রকাশ। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আজকাল যারা বলেন বা লেখেন, এদের অনেকেই আদৌ যুদ্ধের ব্যাপারে কিছুই জানেন না, অনেকে দূর থেকে দেখে বলেছেন, অনেকে কিছু খন্ড চিত্র তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু আর আওয়ামীলীগের কৃতিত্বকেই সামনে নিয়ে আসা হয়, অথবা জিয়াউর রহমান একাই এক রেডিও ঘোষনা দিয়ে যুদ্ধ জয় করে ফেলেছিলেন, এই টাইপের কথাবার্তা। কিন্তু ঐতিহাসিক সত্যগুলো প্রায়শই ঢাকা পড়ে যায়। এ কে খন্দকার তাঁর লেখায় সেই সময়কার রাজনীতিবিদদের কঠোর সমালোচনা করেছেন।
Was this review helpful to you?
or
A school magazine is a kind of magazine where a school describes about their school branding.Here many teacher can submit their own thoughts. It can be stories,poems,articles.There are many chapters. Here many student of the school can submit the articles about art and craft,photography,Detective story,horror stories,general knowledge and all about the world also.In the art section,student post their own creations of art.By this,when other people will see this part ,they will be in a kind of strange. This will help in schools branding.Because a school magazine represents a class of professional teacher and the schools quality.In school magazine,it also provides a good matter and presents creativity of students.By a school magazine,everybody on outside of the school will know about many events activities and about the religion activities. They also know about the summer camp and the annual competition in the last of the year.As well as,the school magazine does not represents the branding about the school but also represents the creative activities and the creation of the students.So it is great for any school.The importance of the school magazine is most.
Was this review helpful to you?
or
nice book
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের তরুণ প্রজন্মের জানার আগ্রহ সব সময়ই তীব্র। কেন যেন, কোন এক বিচিত্র কারণে আমরা সেই আগ্রহটা মেটাতে পারেন। যখন বইপত্র নিয়ে বসি, দেখি একই দিনের ইতিহাস একেক বইয়ে একেক ভাবে লেখা। ভৌগলিক বা পরিবেশগত যে কারণেই, গড়পড়তা আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে স্বচ্ছতা ব্যাপারটা স্বাভাবিকের তুলনায় কম থাকে। দলঘেষা লোকজন বেশি। ইতিহাসের বইগুলো, ঐতিহাসিক দলিলগুলোতেও দেখা যায় ক্ষমতা বদেলের সাথে সাথে ইতিহাসও অনেকভাবে পাল্টে যায়, যা খুব দুঃখজনক। সত্যটা তো আমাদেরকে জানতে হবে। সে সময় যারা মুক্তিযুদ্ধের সাথে একদম অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত ছিলেন, নিজ দ্বায়িত্বে তাঁরা যদি একদম নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে আমাদের না জানান, তবে সত্যটা অধরাই থেকে যাবে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম মিথ্যা আঁকড়ে বেড়ে উঠবে এর থেকে দুঃখের আর কি হতে পারে। গ্রুপ ক্যাপ্টেন (পরে এয়ার ভাইস মার্শাল) এ কে খন্দকার বীর উত্তম মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশ বাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এবং প্রধান সেনাপতি কর্নেল এম এ জি ওসমানীর সার্বক্ষণিক সহকারী ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়া চাকরিরত বাঙালি সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন জ্যেষ্ঠ। যুদ্ধের প্রায় সব নীতিনির্ধারণী কর্মকাণ্ডে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। খুব কাছে থেকে যুদ্ধের সফলতা ও ব্যর্থতাগুলো অবলোকন করেন তিনি। যুদ্ধ পরিচালনায় মাঠপর্যায় থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত কী কী সীমাবদ্ধতা ছিল, তা-ও তিনি জানতেন। তিনি যে অবস্থানে থেকে যুদ্ধকে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন, তা অন্য অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়নি। সে অভিজ্ঞতার আলোকেই লিখেছেন ১৯৭১: ভেতরে বাইরে। আমার কাছে এই বইটা রিলায়েবল মনে হয়েছে। এরকম একজন মিথ্যা তথ্য দিতে পারেন না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে এই বইটা অবশ্যই পড়তে হবে , এর মধ্যেই আবার অনেক রেফারেন্স দেয়া আছে।
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধের আসল ইতিহাস জানতে চাইলে এই তথ্য বহুল বইটি পড়া আবশ্যক।আসলে কি বলব এই বই নিয়ে। আমাদের বর্তমান সরকার এই প্রজন্ম কে যে মুক্তিযুদ্ধের ভ্রান্ত ইতিহাস জানাচ্ছে তা এই বই পড়া ছাড়া বোঝা সম্ভব না।
Was this review helpful to you?
or
A MUST READ!!! The writer was the Deputy Cheif of staff, therfore was able to witness a number of important events during our liberation war Especially this book is an eye opener against the exaggeration about the role of India during our liberation war Apart from it the book covers both the political and the military situations and the problems we had to tackle Overall my respect for Tajuddin Ahmed after reading this book had increased after knowing how efficiently he tackled the dire situation which otherwise could had resulted in a different outcome of our liberation war
Was this review helpful to you?
or
বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস খুব বেশী দিনের না হলেও এর প্রকৃত ইতিহাস খুব অল্প কিছু বইয়ে পাওয়া যায়। যার পরিমান খুবই কম, অধিকাংশই অসত্যে ভরপুর। ফলে কোনটি সত্য কোনটি মিথ্যা এ নিয়ে আমাদের রাজনৈতিক মহলে প্রায় সময় বেশ উচ্চারিত হয়। তবে আমি বলছি না যে “১৯৭১: ভেতরে বাইরে” উল্লিখিত তথ্য গুলো ধ্রুব সত্য। তবে ইতিহাস রচনার যে দুটি ভিত্তি তার একটি দলিল দস্তাবেজ আর অন্যটি হল প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষী/ বয়ান। আর এই বইটি হল একজন মুক্তিযুদ্ধের সামরিক নেতা, অনেক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। লেখক যেহেতু একজন সামরিক নেতা, ফলে বইটি সামরিক দৃষ্টিকোন থেকেই লেখা হয়েছে। লেখক স্বাধীনতা যুদ্ধে ডেপুটি চিপ অফ স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ফলে মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে, অস্থায়ী প্রবাসী সরকার গঠন, প্রবাসী সরকারের কর্মকান্ড, প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের দিকনির্দেষনা, ভারত সরকার ও বহিঃ বিশ্বের অন্যান্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ, এবং অস্থায়ী প্রবাসী সরকারের মধ্যে কিছু বিরোধ তুলে ধরেছেন। মুক্তিবাহিনী গঠন, মুজিব বাহিনী গঠন, মেজর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ‘কে’ ফোর্স, মেজর কে এম সফিউল্লাহর নেতৃত্বে ‘এস’ ফোর্স, মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ‘জেড’ ফোর্স, নৌ-কমান্ড, বিমান বাহিনী, যৌথ নেতৃত্ব গঠন, মুক্তিযুদ্ধকালিন রাজনৈতিক নেতাদের সিদ্ধান্তহীনতা, বিজয় অর্জন বিলম্ভিত হবার কারন, বীরত্বসূচক খেতাব, পাকিস্তানি বাহিনীর আত্ম সমর্পন এককটি অধ্যায়ে এর ভেতরকার কথা গুলো তুলে ধরেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধকালিন সময়কার ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে প্রশঙ্গীক আটটি দলিল যোগ করেছেন। যা বইটির গ্রহণ যোগ্যতা আরো একধাপ এগিয়েছে। আমর কাছে সবচেয়ে ভাল লেগেছে নয়জন জন বাঙালি পাকিস্তান নৌ বাহিনীর সাবমেরিনার ছিল। তাদের মধ্যে আটজন সাবমেরিনার ফ্রান্সে একটি সাবমেরিনে কর্মরত ছিল। সেখানে দেশের ভয়াবহ পরিস্থিতি শুনতে পেরে ফ্রান্স থেকে স্পেন হয়ে ভারতীয় দুতাবাসের মাধ্যমে জেনেভা থেকে অবশেষে ভারত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। যা আমার কাছে রীতিমত অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে। এ চৌকস অফিসারদের নিয়ে নৌ বাহিনী গঠিত হয়। এছাড়া নৌ বাহিনীর অপারেশনের যে বর্ণনা লেখক দিয়েছেন, মনে হয়েছে প্রতিটি অপারেশন চোখের সামনে জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। লেখক তাজউদ্দীন আহমদের অবদান উল্লেখ করেন, তাজউদ্দীন আহমদের দূরদর্শিতা ও দৃঢ়তার ফলে স্বাধীনতার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। কিন্তু তাজউদ্দীন আহমদ সাহেব যে ভাবে মূল্যায়ন করা উচিত ছিল, তা করা হয় নি। স্মৃতিচারণ ইতিহাস রচনায় সামান্য তথ্যের যোগান দেন মাত্র। স্মৃতিচারণ কখনই ইতিহাস নয়। স্মৃতিগ্রন্থে লেখক অনেক ক্ষেত্রে আবেগের বশবতী হয়ে, নিজের হতাশা থেকে লেখেন। তাছড়া স্মৃতিচারণ মুলক গ্রন্থ ঘটনার বেশ কয়েক বছর পরে রচিত হয়, সেক্ষেত্রে লেখকের স্মৃতিশক্তি ঘটতি থেকে যেতে পারে, তাছাড়া এই ধরনের গ্রন্থে লেখকের সম্মুখে ঘটে যাওয়ার বিবরন দিয়ে থাকে কিন্তু এর পিছনকার কথা সেভাবে ফুটে ওঠে না। তবুও মুক্তিযুদ্ধের বেতরকার অনেক নাজানা ঘটনা জাতির জানার সুযোগ হয়েছে এই বইয়ের মাধ্যমে।
Was this review helpful to you?
or
স্বাধীনতা যুদ্ধ আমাদের জন্য এক গৌরবের অধ্যায়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য পঞ্চাশ বছর হতে চললেও এই সংগ্রামের ইতিহাস নিয়ে বিভক্তি ও কাঁদা ছোড়াছুঁড়ির কমতি কমেনি। কেউ কেউ তো মুক্তিযুদ্ধের মত মহান ও সার্বজনীন সর্বাত্মক সংগ্রামকে নিজেদের একান্ত পৈত্রিক বলে মনে করে। একে খন্দকার মুক্তিসংগ্রামে ছিলেন একদম নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে। সেইজন্য উনার কাছে অনেক মানুষের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত স্পষ্ট ও পরিষ্কার। সেই স্মৃতি ও অভিজ্ঞতার ডায়েরি হাতড়ে উনি চেষ্টা করেছেন কিছু সত্য উচ্চারণ করার যা অবশ্যই প্রশংসনীয়।
Was this review helpful to you?
or
মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের জানার আগ্রহ বরাবরই তীব্র। কিন্তু এই আগ্রহটা মিটাতে গিয়ে আমাদের পড়তে হয় বিভিন্ন সমস্যা। কারন একক জায়গাতে ইতিহাস সম্পর্কে একক রকম করে লেখা। তাছাড়া অনেক জিনিস আছে যা আমাদের অজানা। এই বইটিতে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অনেক অজানা কিছু লেখা রয়েছে যা আমাদের সকলের অবশ্যই জানা দরকার। রয়েছে অনেক অজানা ইতিহাসের দলিল। তাই একজন বাঙালি হিসেবে এই বইটি অবশ্যই পড়া দরকার।
Was this review helpful to you?
or
বইটা না পড়লে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অজানাই থেকে যেত।পাঠকদের প্রতি অনুরোধ রইলো পড়ার। আমি কিন্তু লেখকের কেউ না,আমি আমজনতা
Was this review helpful to you?
or
শুধু একটা কোথাই বলতে পারি, এক নিঃশ্বাসে অসাধারণ একটি বই পড়লাম। পরিশিষ্টে সংযুক্ত মুক্তিযুদ্ধের দলিল গুলো অনেক না জানা বিষয় কে জানার সুযোগ করে দিল যা হয়ত কোনদিন জানতাম ও না। ধন্যবাদ এমন একটি বই লেখার জন্য।
Was this review helpful to you?
or
super megaforce
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগীতা বই- ১৯৭১ ভেতরে বাইরে। লেখক- এ.কে খন্দকার। ধরন- আত্মজীবনি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক। পৃষ্ঠা- ২৩২। প্রকাশনী- প্রথমা। বইটি সর্ম্পকে বলার আগে প্রথমে লেখক সর্ম্পকে কিছু বলা দরকার যেহেতু তিনি পেশাদার লেখক নন। বইটির লেখক একে খন্দকারের জন্ম ১৯৩০ সালের পহেলা জানুয়ারী রংপুরে। তার পিতা ছিলেন একজন সরকারি চাকুরিজীবি। এরফলে দেশের অনেকগুলো জেলা তার ছোটবেলাতেই ভ্রমন হয়ে যায়। ১৯৪৯সালে এইচএসসি পাশ করে তিনি আহসানউল্লাহ ইন্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট) ভর্তি হন। সেখানে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর অফিসাররা রিক্রুটিংয়ের জন্য আসলে তিনি সেখানে নির্বাচিত হন। এভাবেই বৈমানিক হিসেবে তার যাত্রা শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনী ত্যাগ করেন এবং পরিবার নিয়ে অতিকষ্টে ভারতে চলে আসেন। সেখানে থেকে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন এবং কর্ণেল ওসমানীর সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। এছাড়া বাংলাদেশের বিমান বাহিনী গড়ে তোলার পিছনেও তার রয়েছে উল্লেখ্যযোগ্য অবদান। ধরতে গেলে তিনিই প্রথম যুদ্ধবিদ্ধস্ত বাংলাদেশের বিমান বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তিনি ১৯৬৫সালে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধেও অংশগ্রহন করেন। এ বইটি তিনি লিখেছেন স্বাধীনতার ৪২বছর পর। স্বাভাবিকভাবেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে অনেক বই লিখিত হলেও যুদ্ধসময়কার অনেক কথাই সেখানে আসেনি। যুদ্ধকালীন সময়ে একজন উচ্চ পর্যায়ের অফিসার হওয়ার দরুন তিনি যুদ্ধের অনেক বিষয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অনেক বিষয়ে কূটনৈতিক কাজ সমাধা করেছেন। এছাড়া অনভিজ্ঞ পাইলটদের ট্রেনিংও দিয়েছেন। সে কারনে যুদ্ধকালীন অনেক ভিতরকার ঘটনাই তার জানা যা তিনি বইতে উল্লেখ্য করেছেন। এজন্যই বইটার নাম হয়েছে ভেতরে বাইরে। বইয়ে যুদ্ধকালীন ঘটনার পাশাপাশি এসেছে রাজনৈতিক ব্যাপার স্যাপারও। রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার ফলে কিভাবে পাকিস্তানি আর্মিরা দুই হাজার মাইল পেরিয়ে নির্বিগ্নে হামলা করে গেলো তা তিনি বিশদভাবে তুলে ধরেছেন। রাজনৈতিক কোন্দলের ফলে কি করে যোদ্ধা রিক্রুট ব্যাহত হলো, অফিসারদের মধ্যে মনোমালিন্য, নেতাদের উদাসিনতা, ভারতের ভূমিকা, তাজউদ্দিন আহমদের প্ররিশ্রম, কর্ণেল ওসমানির কিছুক্ষেত্রে অদূরদর্শিতা ইত্যাদি তিনি তুলে ধরেছেন। বইতে আমার প্রীয় অংশটি হচ্ছে আটজন কমান্ডোর ঘটনাটা। এই আটজন কমান্ডো তৎকালীন পাকিস্তান নেভির সাবমেরিনার ছিলেন। ফ্রান্সে একটি সাবমেরিনে কর্মরত থাকার সময় তারা দেশের দুরঅবস্থার কথা জানতে পারেন এবং নিজেদের সমস্তকিছু ফেলে ভারত হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন দেশকে স্বাধীন করতে। তাদের ফিরে আসার ব্যাপারটা রিতীমতো স্পাই থ্রিলারের মতো। অসমসাহসী এই আট সাবমেরিনার ফ্রান্স থেকে অতিকষ্টে পালিয়ে স্পেন হয়ে ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে জেনেভা হয়ে প্রচন্ড বিপদের মুখে ভারতে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে তারাই নৌযুদ্ধে পাকিস্তানকে পর্যুদস্ত করে দেন। এছাড়া বিমান বাহিনীর কিছু দুঃসাহসী যোদ্ধার কথা উল্লেখ্য করেছেন যারা জীবন বিপন্ন করে পাকিস্তান বিমান ঘাটি থেকে পালিয়ে আসেন। পরবর্তীতে একে খন্দকারসহ উনারা সবাই মিলে যুদ্ধের অনুপযোগী দুটো বিমানকে উপযোগী করে তোলেন এবং সেই দুটো বিমান দিয়েই তোলপাড় করে ফেলেন পাকিস্তানি বিমান বাহিনীকে। তৃতিয় একটি বিমান একটি টেকনিক্যাল সমস্যার কারনে ব্যবহার করা সম্ভব হয়না। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে র এর অবস্থান সর্ম্পকে সামান্য বর্ণনা করেছেন। এছাড়া ভারতীয়রা কিভাবে সহায়তা করেছে তারও বর্ণনা এসেছে। এছাড়া বির্তকিত মুজিব বাহিনীর ভূমিকাও তিনি লিখেছেন। এই মুজিব বাহিনীকে নিয়ন্ত্রন করতো ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এদের ওপর বাংলাদেশের তৎকালীন অস্থায়ী সরকার বা সেনাপতির কোনো নিয়ন্ত্রনই ছিলো না। তারমতে এরা যুদ্ধে তেমন কোনো ভূমিকা রাখেনি। এদের গড়া হয়েছিলো স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে যেনো কমিউনিষ্ট মাথাচাড়া দিতে না পারে তার জন্য। গেরিলা যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা সর্ম্পকে তিনি আক্ষেপ করেছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধটি মূলত ছিলো গেরিলা আক্রমনের ভিত্তিতে। অথচ প্রথমদিকে প্রথাগত যুদ্ধে যাওয়ার ফলে কি ক্ষতি হয়েছে তা তিনি তুলে ধরেছেন। তার কথায় যা বোঝা গেলো যুদ্ধকালীন সময়েও আমাদের নেতারা বা অফিসাররা সিদ্ধান্তের ব্যাপারে এক ছিলেন না। এক না থাকার ফলে এবং যুদ্ধকালীন সময়েও রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের ফলে কি ক্ষতিটি হয়েছে তার বর্ণনা তুলে ধরেছেন। এছাড়া যৌথবাহিনী গঠন নিয়েও তিনি লিখেছেন। তার এই বইতেই ভালোমতো ভাবে এসেছে কেনো আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ বলা যায় না যা বর্তমানে ভারতীয়রা তাদের যুদ্ধ বলে মনে করে আসছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক বই লেখা হলেও যুদ্ধের বর্ণনা নিয়ে লেখা বই খুব কম আছে। এই বইটি তার মধ্যে অন্যতম। একজন উচ্চমানের অফিসার হওয়ার ফলে যুদ্ধের অনেক ব্যাপার তিনি নিয়ন্ত্রন করতেন। এরফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারই এ বইতে জানা গেছে। এছাড়া তিনি বিশ্বস্ত সব সূত্র ও রেফারেন্স ব্যবহার করেছেন। বইটা পড়ার পর মনে হলো যুদ্ধটা বোধহয় নয়মাসের আগেও শেষ হতো। যদি যথাযথ ভাবে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হতো। যুদ্ধকালীন সময়েও নেতাদের এমন গাফিলতি সত্যিই হতাশাজনক। তারপরও এমনকিছু দেশপ্রেমিক সৈনিকের কথা এ বইতে এসেছে যারা মূলত স্বাধীনতার ব্যাপারে ছিলেন অগ্রগামী। যদিও আজ ইতিহাস থেকে তাদেরই সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। যাইহোক, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা এ বইটি বেশ ভালোরকম সাড়া পেয়েছে। আশা করছি যারা পড়েননি তারা শীগ্রই পড়ে ফেলবেন। রেটিং- ৫.০০/৫.০০
Was this review helpful to you?
or
মুক্তি যুদ্ধ সম্পর্কে পড়া আমার সেরা বই। অনেক কিছু জানতে পারলাম, অনেক গোপন / অজানা কথাও জানলাম।
Was this review helpful to you?
or
এ কে খন্দকারের “১৯৭১: ভেতরে বাইরে” বইটি মুক্তিযুদ্ধের উপরে লিখিত এযাবৎকালের সর্বাধিক আলোচিত ও সমালোচিত বই। বইটিতে একদিকে যেমন একজন প্রত্যক্ষ্যদর্শীর বর্ননা দেয়া আছে তেমনি আছে উৎসবিহীন নান বিতর্কের অবতারনা। এ কে খন্দকারের “১৯৭১: ভেতরে বাইরে” বইটা পড়ার রিভিউ লেখার লোভ সামলানো সত্যিই দায়। তাই সেই দায় এড়ানোর ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যতগুলো বই এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে এবং আমার দৃষ্টি গোচর হয়েছে, তার মধ্যে এই বইটাকে এক শব্দে ‘ব্যতিক্রম’ বললে বোধহয় অত্যুক্তি হবে না। কারণ- • বইটি মুক্তিযুদ্ধকালিন প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কোন কর্মকর্তা কর্তৃক লিখিত প্রথম বই। • বইটিতে মাঠ পর্যায়ের আলোচনা তুলনামূলকভাবে খুব কমই স্থান পেয়েছে। মূলত এখানে আলোচনা করা হয়েছে প্রশাসনের শীর্ষপর্যায়ের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা, প্রশাসনিক কর্মকান্ডের আলোচনা সমালোচনা, বহির্বিশ্বের সাথে সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়ে। • বইটি লেখা হয়েছে সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে, যেখানে বেশিরভাগ বই রচনা করা হয়েছে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে। • বইটিতে এমন অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যা পূর্বে দৃষ্টির আড়ালেই ছিল। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে লেখা সর্বমোট ২৩২ পৃষ্টার বইটিকে শুরুতে ভূমিকা আর শেষে উপসংহার ব্যতিত যথাক্রমে ১৯৭১ঃ জানুয়ারি থেকে ২৬ মার্চ, স্বাধীনতার ঘোষণা ও অস্থায়ী সরকার গঠন, মুক্তিযুদ্ধে যোগদান, মুক্তিযুদ্ধ, মুজিব বাহিনী, নৌ-কমান্ডো, বিমানবাহিনী, যৌথ নেতৃত্ব গঠন, বীরত্বসূচক খেতাব, পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ শিরোনামে ১০টি অধ্যায়ে বিভক্ত করা হয়েছে। সবশেষে মুক্তিযুদ্ধকালিন বিভিন্ন বিষয়ে ৮টি গুরুত্বপূর্ণ দলীল সংযুক্ত করা হয়েছে। এ পর্যায়ে উল্লেখ করার চেষ্টা করবো বইটার ইতিবাচক দিকগুলো- • অন্যান্য অনেক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ‘গবেষক’ এর ন্যায় লেখক মুক্তিযুদ্ধকে জাতির মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির কোন উপাদান হিসেবে ব্যবহার করেন নি। • যখন একশ্রেণীর ইতিহাস গবেষক মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তথ্য লুকিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে মনের মাধুরি মিশিয়ে জাতির সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন, তখন একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে লেখকের এমন সময়োপযোগি সিদ্ধান্ত অবশ্যই ইতিবাচক। • স্বাধীনতার ঘোষণা সংক্রান্ত চলে আসা বিতর্কের ব্যাপারে বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা করেছেন তিনি। এ ব্যাপারে কোনটি সত্য বা কোনটি মিথ্যা এ ব্যাপারে তিনি যুক্তির কষ্টিপাথরে সত্য উন্মোচনের প্রয়াস পেয়েছেন। • ইয়াহিয়া খানের ঢাকা ত্যাগ, মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব সময়ে রাজনৈতিক নেতাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধা-সংকোচ, মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে দীর্ঘ সময় লাগার কারণ, ভারতীয় প্রশাসনের সাথে বাংলাদেশ প্রশাসনের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা, বিভিন্ন বিষয়ে ভারতীয় প্রশাসনের সহযোগিতা-অসহযোগিতা, মুক্তিযুদ্ধকালিন সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের সমন্বয়হীনতা, মুক্তিযুদ্ধকে দলীয়করণ কিংবা নির্দিষ্ট দলীয় গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ করণের জন্য একটি গোষ্ঠীর হীন প্রচেষ্টা প্রভৃতি বিষয়ে বইটাতে আলোচনা করা হয়েছে, যা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে নতুন মাত্রা যোগ করবে। • লেখক যে সব ঘটনা উল্লেখ করেছেন, তার বেশিরভাগই তার সাথে সংশ্লিষ্ট, যা তার বক্তব্যের গ্রহণযোগ্যতাকে অবশ্যই নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। বইটির যেসব দিক নেতিবাচক বা দুর্বলতা মনে হয়েছে তা হচ্ছে, • লেখক বইয়ের শুরুর দিকে বারংবার উল্লেখ করেছেন যে, রাজনৈতিক নেতাদের সাথে তার সরাসরি কোন যোগাযোগ ছিল না, কিন্তু এরপরেও তিনি তখনকার রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপারে এমনভাবে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন, যা অযাচিত মনে হয়েছে। • মুক্তিযুদ্ধ যতটা সামরিক বিষয়, ঠিক ততটাই রাজনৈতিক। কিন্তু এই বইয়ে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে মুক্তিযুদ্ধকে মূল্যায়ন করা হয় নি বললেই চলে। • মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ভারতীয় জনগণ ও প্রশাসনের সহযোগিতা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। কিন্তু লেখক তার লেখার মাধ্যমে যেভাবে ভারতীয়দের মুখাপেক্ষিতার কথা উল্লেখ করেছেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে রীতিমত ভারতের ‘অনুগ্রহের দান’ এ পরিণত করেছেন (বলে মনে হয়েছে), তার যথার্থতা প্রশ্নাতীত নয়। • বইয়ের ‘নৌ-কমান্ডো’ অধ্যায়ে নৌ কমান্ডোদের তৎপরতা উল্লেখ করতে গিয়ে লেখক বইয়ের লেখার ধারা ঠিক রাখতে পারেন নি। মুক্তিযুদ্ধের ডেপুটি চীফ অব স্টাফ হওয়ার পরেও এই পর্যায়ে তিনি পর্যাপ্ত তথ্য দিতে সক্ষম হন নি। • বইয়ে গণবাহিনী ছাড়া অন্যান্য বাহিনীগুলোর মধ্যে একমাত্র মুজিব বাহিনী ছাড়া অন্য কোন বাহিনী সম্পর্কে তিনি বিবরণ দেন নি। অথচ মুক্তিযুদ্ধকালীন ও মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী লেখকের অবস্থান হিসেব তার কাছ থেকে এ ব্যাপারে আরো বিশদ ও তথ্যবহুল আলোচনা আশা করাই যায়। রিভিউর ইতি টানবো বইয়েরই একটি উদ্বৃতি ও একটি প্রশ্ন দিয়ে, যেই প্রশ্ন দিয়ে লেখক বইটি শেষ করেছেন। লেখক বইয়ের উপসংহারে বলেছেন, “আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে লাখ লাখ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ভিড় করে আছে। যুদ্ধের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিল সাধারণ মানূষের দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ, বেদনা ও ত্যাগ। মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানূষের আশা আকাঙ্ক্ষা, ধৈর্য্য এবং ত্যাগের ফলে দেশ স্বাধীন হয়েছে। এটা কোন ব্যক্তিবিশেষের ত্যাগের বিনিময়ে বা একক কোন দলের জন্য হয় নি। এটি ছিল আমাদের সম্মিলিত প্রয়াস। তাই সম্মিলিতভাবে বিজয় অর্জন করার লক্ষ্যে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত যে আমরা যদি এই দেশকে এগিয়ে নিতে চাই, তাহলে মুক্তিযোদ্ধাদের মতো আমাদেরও একতাবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে”। লেখক যে প্রশ্ন দিয়ে বইটি শেষ করেছেন এবং যে প্রশ্ন রেখেই এই রিভিউ লেখা শেষ করব, তা হল, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অপরিসীম ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে স্বাধীনতার যে নতুন সূর্যের উদয় ঘটেছিল এই মাটিতে, তার কতটুকু আলো মানুষের কাছে পৌছেছে? কতটুকু সুফল পাচ্ছে দেশের মানুষ স্বাধীনতার? বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ বাস্তবিক অর্থে নিজেদেরকে স্বাধীন মনে করতে পারছে তো?
Was this review helpful to you?
or
Once this came to market and came to my knowledge, i ordered to rokomari..I received a copy of 2nd edition today, where there are changes made by the author.. I don’t know why he had to make changes in so short time. So I returned the book as the changes were not mere vocabulary but facts were changed by the author himself. It’s strange....A writer like AVM A K Khondoker, First Deputy Chief of Staff of Bangladesh Forces during 1971 and with so much of portfolio can not stand on what he wrote and published!! If someone read my review.. my question to them is then who can write the history in original and stand against odds!!! To rokomari: I am sorry for returning the book but you may take it as my silent and legitimate right to protest to this edition. Thanks to all
Was this review helpful to you?
or
ইতিহাস রচনার দুটি উৎস: একটি হচ্ছে দলিল-দস্তাবেজ, আর অন্যটি হলো অংশগ্রহণকারী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান বা তাদের স্মৃতিকথা। এগুলো এককভাবে ইতিহাস তৈরি করে না। কিন্তু এই দুইয়ের সার সংগ্রহ ও সংকলন করেই আমরা ইতিহাস রচনা করি। সে কাজ ইতিহাসবিদের। জনাব এ কে খন্দকার বীর উত্তম ইতিহাসবিদ নন—কিন্তু তিনি মুক্তিযুদ্ধের একজন অংশগ্রহণকারী, যুদ্ধের সামরিক নেতা এবং অনেক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তাঁর এই বই ১৯৭১: ভেতরে বাইরে সে কারণেই ইতিহাসের একটি অন্যতম আকরগ্রন্থ। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যাঁরা বুঝতে চান, যাঁরা বাংলাদেশের ইতিহাস লিখতে চান, তাঁদের জন্য এই বই অবশ্যপাঠ্য বলেই আমার মনে হয়েছে। বইটি বেরোল এমন এক সময়ে, যখন মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনা, বিভিন্ন চরিত্রের ভূমিকা, ঘটনাপরম্পরা নিয়ে আলোচনার তাগিদ সৃষ্টি হয়েছে। কেননা, বিভিন্ন ঘটনার বিভিন্নমুখী ব্যাখ্যা আমরা দেখতে পাচ্ছি, ক্ষেত্রবিশেষে জ্ঞাত তথ্যগুলোর বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে। ইতিহাসের একটি পর্বেই যথেষ্ট নয়, কেবল একবার লিখলেই ইতিহাস লেখা শেষ হয় না। গবেষকদের কাজ হচ্ছে জানা তথ্যকে ঝালিয়ে দেখা, নতুন উৎসের অনুসন্ধান করা এবং কোনো কিছু নজর এড়িয়ে গেছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা। কোনো ঘটনার একটা মাত্র ভাষ্য থাকে না; আমাদের কাজ হচ্ছে বিভিন্ন বয়সে শোনা এবং তার সামঞ্জস্য ও অসামঞ্জস্য বিচার করা। সেই বিবেচনায়ও এই বইয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাসঙ্গিকভাবে আরেকটি দিকের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই। সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশের বাইরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নতুন করে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত GARY BASS-এর লেখা BLOOD TELEGRAM এবং SRINATH RAGHANAN-এর 1971/GLOBAL HISTORY OF THE CREATION OF BANGLADESH তার প্রমাণ। কিন্তু এসব বইয়ে লক্ষণীয়ভাবে বাংলাদেশের কণ্ঠ অনুপস্থিত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের যেসব পাঠ আমরা দেখতে পাচ্ছি, সেখানে বাংলাদেশের নিজস্ব কণ্ঠস্বর না থাকাটা দুর্ভাগ্যজনক। আর তা ঘটেছে, কেননা গত ৪৩ বছরে বাংলাদেশের ইতিহাসবিদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দেশের বাইরের পাঠক, বিশেষজ্ঞ ইংরেজিভাষী পাঠকের জন্য না ভালো বিশ্লেষণ, না আকরগ্রন্থ—তা দলিলনির্ভরই হোক, কি অংশগ্রহণকারীর বয়ানেই হোক—উপহার দিতে পারেননি। যা আছে তা স্বল্পসংখ্যক এবং ঘটনার মাত্রা বিবেচনায় অকিঞ্চিৎকর। শ্রদ্ধাভাজন এ কে খন্দকার তাঁর এই বইয়ে কতকগুলো বিষয়ে আলোকপাত করেছেন, যা নিয়ে ইতিপূর্বে আলোচনা হলেও তাতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। তার সংখ্যা অনেক। আমি কয়েকটি বিষয়ে মনোযোগ দেব। স্বাধীনতার ঘোষণা: ‘ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হওয়ার ঠিক আগে শেখ সাহেব ইপিআরের বেতারযন্ত্রের মাধ্যমে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরীর কাছে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠিয়েছিলেন। এই তথ্যটি মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।’ (পৃ. ৫৭) জনাব খন্দকার এ বিষয়ে প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদেরও উদ্ধৃতি দিয়েছেন: ‘একদিন আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম “স্যার, বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হওয়ার আগে আপনি কি তাঁর কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা পেয়েছিলেন?” উত্তরে তিনি বলেছিলেন, “না, আমি কোনো নির্দেশ পাইনি” (পৃ. ৪৩)। লেখকের বক্তব্য অনুযায়ী, বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ব্যক্তি স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে নানা কথা বলেন। সেগুলো সত্য কি অসত্য, তা জানার উপায় নেই। এগুলোর পক্ষে বা বিপক্ষে কেউ কোনো দলিল উপস্থাপন করেননি। আমার মনে হয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা আবেগপ্রসূত।’ (পৃ. ৫৩) এ বিষয়ে আমাদেরকে প্রাথমিকভাবেই নির্ভর করতে হয়েছে বিদেশি সংবাদপত্রের প্রতিবেদক ও বিদেশি রাষ্ট্রের গোপন নথির ওপর। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এবং নিরাপত্তাবিষয়ক দলিল-দস্তাবেজ যদিও এই সাক্ষ্য দেয় যে ২৬ মার্চ শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন—এর কোনো দলিল আমরা এখনো দেখিনি। প্রাসঙ্গিকভাবে, জিয়াউর রহমান কর্তৃক ‘স্বাধীনতার ঘোষণা’ প্রসঙ্গটিও তিনি উত্থাপন করেছেন। তাঁর ভাষায়, ‘মেজর জিয়ার ঘোষণাটিকে কোনোভাবেই স্বাধীনতার ঘোষণা বলা চলে না। মেজর জিয়া রাজনৈতিক নেতাও ছিলেন না বা স্বাধীনতার ঘোষণা দেবার উপযুক্ত ব্যক্তিও ছিলেন না।’ (পৃ. ৬০) বইটিতে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যকার অনৈক্যের বিষয়, তাঁদের ভেতরকার দ্বন্দ্ব বিষয়ে অত্যন্ত সুস্পষ্ট বক্তব্য ও উদাহরণ রয়েছে। এ কালে এগুলো অজ্ঞাত নয়। অতীতে মঈদুল হাসানের মূলধারা ৭১ গ্রন্থে আমরা তার বিস্তারিত জানি। কিন্তু বইয়ের ৮১ ও ৮৫ পৃষ্ঠায় যে বিশৃঙ্খলা, তদুপরি ‘দৃঢ় সংকল্পের অভাব’-এর কথা জানা যায়, তা নিঃসন্দেহে আমাদের মনোযোগ দাবি করে। তবে এখন এ ঘটনাবলির বিভিন্ন বর্ণনা থেকে মাঝে মাঝে মনে হয় যে সৌভাগ্য আওয়ামী লীগের তখনকার ‘জ্যেষ্ঠ’ নেতাদের হাতে এর নেতৃত্ব ছিল না। তাজউদ্দীন আহমদের বদলে অন্য নেতৃত্ব হলে সম্ভবত বাংলাদেশ স্বাধীনই হতো না। সেটি এখনকার রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যাপারেও প্রযোজ্য। এ বইয়ের লেখক ১৯৭১ সালে রাজনীতিবিদ ছিলেন না, তিনি সেনা কর্মকর্তা এবং শীর্ষপর্যায়ের সামরিক নীতিনির্ধারক। সেই বিবেচনায় তিনি সামরিক বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রশাসনের বিষয়ে যে কথাগুলো বলেছেন, সেগুলো নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যকার বিরোধ (পৃ. ১১৬-১১৭), বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধাদের রিক্রুটিং বিষয়ে তাঁর মতামত (পৃ. ৯৩-৯৫) মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের জন্যই নয়, স্বাধীনতা-পরবর্তী ইতিহাসের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। যাঁরা স্বাধীনতা-পরবর্তী ইতিহাস লিখছেন, তাঁদের জন্য বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনার ক্ষেত্র তৈরি করবে—আমি এটাই আশা করি। মুক্তিযুদ্ধের একটি স্বল্পালোচিত বিষয় হলো মুজিববাহিনী। যদিও এ বিষয়টি স্বল্প-উল্লিখিত নয়। মুজিববাহিনীর শীর্ষ নেতাদের কেউ এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেননি। সেখানে এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত অধ্যায় রচনার জন্য এ কে খন্দকার আরও এক দফা প্রশংসার দাবি করেন। এ প্রসঙ্গে আমি পাঠকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই ১৩৮ পৃষ্ঠার দিকে। জনাব খন্দকার লিখেছেন: ‘মুজিববাহিনীর সদস্যদের শেখ মুজিব বা দেশের প্রতি আনুগত্য সন্দেহাতীত ছিল না।’ (এর পরের অংশগুলো আমি ইচ্ছে করেই উদ্ধৃত করছি না। পাঠকেরা নিজেরাই তা জেনে নেবেন আশা করি।) সব শেষে একটা প্রশ্ন করার তাড়না অনুভব করছি। কোনো লেখক কখন, কী লিখবেন—পাঠক হিসেবে আমরা, রাষ্ট্র বা সমাজ তা নির্ধারণ করতে পারে না। একজন লেখক তাঁর প্রাণের তাগিদ বা প্রয়োজনেই লিখবেন। আত্মজীবনীর ক্ষেত্রে তা সব পরিমাণে সত্য। সম্ভবত তার চেয়ে বেশি। কিন্তু যখন তার সঙ্গে একটি জাতির জন্মের ইতিহাস সংশ্লিষ্ট, যখন লেখকের জ্ঞাত অনেক ঘটনাই তাঁর ভাষায় ‘আবেগপ্রসূত’ভাবে সত্য/অসত্যভাবে বলা হচ্ছে, তখন তাঁর এই ভাষ্য শোনার জন্য আমাদের কেন ৪৩ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে—সেই প্রশ্ন আমাকে নিঃসন্দেহে ভাবিত করে। এতটা অপেক্ষাও কি আজকের চলমান বিতর্ককেই সাহায্য করেনি? এ প্রশ্ন তোলার অর্থ এই নয় যে এসব বিষয়ের অবতারণা করা যাবে না, বরং অন্যদের উৎসাহিত করা, যেন তাঁরা আর বিলম্ব না করেন। (ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে গতকাল ১৯৭১: ভেতরে বাইের বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে পঠিত)
Was this review helpful to you?
or
খুব সম্ভবত ২০১০-১১ সালের দিকে ‘মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপরঃকথোপকথন’ বইটা পড়েছিলাম। সেই বইয়ে এস আর মির্জা, মঈদুল হাসান এবং হালের ‘বিতর্কিত’ এ কে খন্দকার এর কথোপকথন এ অনেক অজানা তথ্য উঠে এসেছিল। ঐ সময়ের প্রেক্ষিতে সেই বইয়ের একটা তথ্য আমার চিন্তাভাবনাকে বেশ নাড়া দিয়েছিল। তা হলঃ মার্চ ২৫, ১৯৭১ এর দিকে তাজউদ্দীন বঙ্গবন্ধুকে বার বার তাগাদা দিচ্ছিলেন স্বাধীনতা ঘোষণার একটা খসড়া রেকর্ড করার জন্য।প্রত্যুত্তরে “শেখ মুজিব বলেছিলেনঃ ‘এটা আমার বিরুদ্ধে একটা দলিল হয়ে থাকবে। এর জন্য পাকিস্তানীরা আমাকে দেশদ্রোহের জন্য বিচার করতে পারবে’।এ কথার পিঠে তাজউদ্দীন অত্যন্ত ক্রুব্ধ হয়ে সঙ্গে সঙ্গে রাত সম্ভবত নয়টার পরপরই ৩২ নম্বর ছেড়ে চলে যান”।(পৃষ্ঠা-২৮, মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর) তথ্য টা আমার কাছের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে বলেছিলামঃ এই তথ্য বর্তমান সরকারের কারো নজরে পড়লনা? বই বাজেয়াপ্ত করলনা? ঠিকই আছে, এটা তো মূর্খ জাতি, বই কোত্থেকে পড়বে?? বইয়ের কোন লেখায় কারো যায় আসেনা এই দেশে!!!! উপরোক্ত ঘটনা শেয়ার করলাম কারণ এর সাথে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ঐ বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৯ সালে আর এ কে খন্দকারের নতুন বই ‘১৯৭১ঃভেতরে বাইরে’ প্রকাশিত হল মাত্র ক’দিন আগে আগষ্টের শেষের দিকে। ঐ বইয়ের তথ্য টা প্রচ্ছন্ন ভাবে শেখ মুজিবের ‘জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান’ বলাটা কে যৌক্তিক ধরে নেয়ার কন্টেক্সট তৈরি করে দেয়। ২০০৯ এ সরকার আসলে বুদ্ধিবৃত্তিক-চিন্তা-চেতনা তে নজরদারি করার প্রয়োজন অনুভব করেনি। তখন ব্যস্ত থাকতে হয়েছে রাজপথ নজরদারিতে আনতে, পুরো দেশকে পুলিশি জালে ভরে নিতে। সেই কাজ হাঁটি হাঁটি পা পা করে অনেকটাই সফল হয়েছে। এখন বাকি দখল হবে চেতনায়, স্মৃতিতে, চিন্তায়, বাকপ্রকাশে। তাইতো সরকারের দুই তিন দিনও সময় লাগলনা এ কে খন্দকার কে বিষোদ্গার করতে। আমার এই লেখাটা এ কে খন্দকার এর সাফাই করতে বসেনাই। বরং পক্ষ নিতে বসেছি তাদের জন্যই যাতে সবাই যার যার মত তার মত প্রকাশ করতে পারে। দুই এক পাতা পড়ালেখা বা সাহিত্যের সাথে যাদের যোগাযোগ আছে, তারা উপন্যাস, কবিতা, স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ এবং অন্যান্য ধারার পার্থক্য পাঠক মর্যাদায় নিজেরাই চিহ্নিত করতে পারেন। খন্দকার সাহেব কখনো বলেন নি এটা তার গবেষণা গ্রন্থ, এটা তার আত্মবয়ান।মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার বিশ্লেষণ। স্মৃতিচারণে কত রকমের ফাঁকফোকর থাকে তা বুঝতে খুব জ্ঞানী হওয়া লাগেনা, সাধারণ সেন্স ই যথেষ্ট। আজকে আমি তার লেখা বইটা পড়ে শেষ করলাম। বলে রাখা ভাল, কোন presumption নিয়ে আমি বইটা পড়তে বসিনি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে কোন ধরণের বইই আমার ক্ষুধা ১০০ গুণ বাড়িয়ে দেয় হোক সে গবেষণা, ডায়েরি, স্মৃতিকথা, চিঠি, উপন্যাস, গল্প... বইয়ের বিতর্ক নিয়ে আগে আমার মতামত ব্যক্ত করে ফেলি কারণ সেই মতামত লেখকের পুরো বইয়ের যে মূল সুর বা tone তার সাথে গভীর ভাবে সম্পর্কিত। মূল সুর টা হলঃ ১৯৭১ এর যুদ্ধে সর্বোচ্চ এক পর্যায়ে দায়িত্ব পালনকারী খন্দকার মনে করেন, যুদ্ধকালে রাজনীতিবিদদের সাথে মাঠে যারা যুদ্ধ করছিলেন এবং সকল সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের ভেতর বাইরের লোকজনের এক ধরণের সমন্বয়হীনতা ছিল। জনগণ যে ধরণের আন্তরিক উদ্দীপনা নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেই উদ্দীপনার ১০০ ভাগ ব্যবহার বা সর্বোচ্চ ব্যবহার রাজনীতিবিদরা করতে পারেন নি। তখনকার আওয়ামীলীগ মুক্তিযুদ্ধের জন্য কোনভাবেই প্রস্তুত ছিলনা, বরং বঙ্গবন্ধু সহ অন্যান্য রা আসলে স্বায়ত্বশাসনের দাবিতেই অনড় ছিলেন—এটা প্রমাণ করতে গিয়েই বঙ্গবন্ধু’র ‘জয় পাকিস্তান’ ঘোষণা দিয়ে খন্দকার বুঝাতে চাইছেন স্বাধীনতা আসলে আওয়ামীলীগ চায়নি। ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধ সারা বিশ্বে নানা দিক দিয়ে বিরল একটা ঘটনা। তাই এই গৌরবের যুদ্ধ নিয়ে সরল ভাবে যে কোন আপ্তবাক্য মেনে নেয়া যায়না। কিছু জিনিস খেয়াল রাখা দরকার, যে অঞ্চলের মানুষ এবং স্বয়ং শেখ মুজিব পাকিস্তানের জন্য ১৯৪৭ সালে লড়াই সংগ্রাম করেছে, ঠিক ২৩ বছরের মাথেয় সেই রাষ্ট্র ভেঙে ফেলতে চাইছে—এই জরুরী অবস্থা’র টানাপোড়েন না বুঝলে বাংলাদেশ এর ভবিষ্যতে বাস্তবিক অন্ধকার আছে। ১৯৭০ এর নির্বাচনে ছয় দফার ফলস্বরূপ জনগণ ম্যান্ডেট দিয়েছিল আওয়ামীলীগ কে। কেন? এ পূর্ব বাংলা’র ভাগ্য পরিবর্তন এর জন্য। ক্ষমতা’র পালাবদলে ইয়াহিয়া নামক সেনা শাসক শুরু করল প্রাসাদ ষড়যন্ত্র। শেখ মুজিব কে দুই ধরণের বিষ মোকাবিলা করতে হয়েছেঃ ১। সামরিক শাসনের বিষ এবং ২। পশ্চিম পাকিস্তানি জনগণের বর্ণবাদী মানসিকতা (তাদের সুপিরিয়রিটি বা জাত্যাভিমান বর্ণবাদের চেয়ে ভয়ংকর ছিল। তা না হলে বাঙালি উচ্চ জাতের বা খান্দানি মুসলমান না, তাদের ভাষা হিন্দুয়ানী, এসব পারসেপশন কোথা থেকে আসে???) পূর্ব বাংলা’র কোন নেতার অধীনে পাকিস্তান চলতে পারেনা, ভুট্টো’র এ মানসিকতা পশ্চিম পাকিস্তানের বর্ণবাদী চিন্তার প্রতিফলন। এরকম আরো নজির দেখি প্রশাসনে বাঙালি অফিসার দের একঘর করে রাখা। আমার মাথায় সিলি ভাবনা এসেছিল, তা হলঃ পাকিস্তানীরা যদি আমাদের বাঙালি অফিসার দের বাগে রাখতে পারত, তাহলে দৃশ্যপট হয়তো আজ ভিন্ন রূপ নিত কিন্তু তারা বাগে রাখবে কিভাবে? তারা তো জাতিগত ভাবেই আমাদের ঘৃণা করত!!!!! ৭ মার্চের আগে আগে ইয়াহিয়া-মুজিব এর বৈঠক বার বার পেছাচ্ছিল এবং শেখ মুজিব শেষ পর্যন্ত এটাই বিশ্বাস করতে চাচ্ছিলেন যে আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান হওয়া উচিত তা না হলে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের জন্য বাঙালি কে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হবে-এটা বঙ্গবন্ধু বুঝেছিলেন। ১৯৭১ ভেতরে বাইরেঃ খন্দকার আমাদের জানাচ্ছেন, মার্চের শুরু থেকেই পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানে গোপনে হাজার হাজার সৈন্য প্রেরণ, কামান, অস্ত্র ইত্যাদি প্রেরণ সত্বেও রাজনৈতিক নেতারা আলোচনার স্বর্গে কেন বসবাস করছিলেন, তা তাকে অবাক করে। এই বইয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইংগিত আছে যা ১৯৭৫ বুঝতে সাহায্য করে। ১৯৭১ এর ১২-১৫ জুলাই সেক্টর কমান্ডার দের সভা অনুষ্ঠান কালে মেজর জিয়া সহ অনেকেই ওসমানীর অব্যাহতি দাবি করেছিলেন (যেহেতু তিনি অবসরপ্রাপ্ত, বয়স্ক, গেরিলা যুদ্ধে অনভিজ্ঞ, তাই)। খালেদ মোশাররফ সেই দাবির একমাত্র বিরোধীতাকারী ছিলেন। এই বিদ্রোহের জের ধরে ১৯৭১ এর পর জিয়ার জ্যেষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও কে এম সফিউল্লাহকে সেনাপ্রধান করা হয়, যা পীড়া দেয় উচ্চাভিলাসী (!) জিয়া’কে।খালেদ-জিয়া-ওসমানী বিরোধের জের তখন থেকেই। এই বইয়ে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নানা নীতিমালা, ভারত কমান্ডের সাথে সাহায্য বিনিময়, প্রশিক্ষণ দুর্বলতা বিষয়ক নানা দরকারী তথ্য আছে যা সামনের দিনে ইতিহাস রচনায় দরকারী খোরাক যোগাবে। মুজিব বাহিনী’র গঠন নিয়ে পুরো এক অধ্যায় ব্যয় করেছেন লেখক। মোদ্দা কথায়, তার মতে, মুজিব বাহিনী যত না মুক্তিযুদ্ধের জন্য গঠিত হয়েছিল তার থেকে বেশি গঠিত হয়েছিল স্বাধীন হবার পর যাতে বামপন্থী সহ ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমন করা যায়, সেই কারণে। তখনকার নকশাল আন্দোলন ছড়ানো’কে আতঙ্ক রূপে দেখে ভারতীয় সরকার ই নিজস্ব কৌশলে এই মুজিব বাহিনী গড়ে তুলেছিল বলে মনে করেন খন্দকার। ‘নৌ-কমান্ডো’ চ্যাপ্টার টা মুক্তিযুদ্ধের ত্যাগী নায়কদের বীরত্বের খাঁটি নিদর্শন হয়ে থাকবে। ফ্রান্সে সাবমেরিন প্রশিক্ষণ কালে ৯ জন বাঙালি নেভাল অফিসাররা কত চৌকষ ভাবে পশ্চিম পাকিস্তান এর অফিসার দের চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশের টানে পালিয়ে এসেছিল সেই সত্য কাহিনী দিয়ে Shawshank Redemption বা The Great Escape মাপের মহৎ চলচ্চিত্র নির্মাণ হতে পারে। এই নেভাল অফিসারেরাই কালজয়ী ‘অপোরেশন জ্যাকপটে’ নেতৃত্ব দিয়েছিল। প্রথমদিকের মুক্তিযোদ্ধা নিয়োগে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্টতা মুক্তিযুদ্ধকে অনেক এলোমেলো ও ভুলপথে চালিত করেছিল, এর কিছু নজিরও এই বইতে আছে। শেষে বলতে চাই, স্মৃতিচারণ কখনো প্রকৃত ইতিহাস নয় বরং ইতিহাস রচনার কালে তা কিছু তথ্যের খোরাক হতে পারে মাত্র। এসব গ্রন্থে ব্যক্তি সম্পূর্ণ নিজের হতাশা, আবেগের উপর বশবর্তী হয়ে ঘটনার ঐক্য সাজান। আমাদের নিজেদের দায়িত্বে সেসব লেখাপত্র থেকে ফ্যাক্ট বা বাস্তবতা উদ্ধার করে নিতে হবে। এবং ৪৩ বছর পরে স্বাধীনতা-পরবর্তী কালের কিছু অমীমাংসীত বিষয় কে এড্রেস করতে হলে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে বয়ানকারীর হতাশা গুলোকে।বিএনপি এই বই থেকে সুবিধা নিতে চেয়েছিল পারেনি কারণ খন্দকার এ বইতে জানাচ্ছেন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ২৬-২৭ তারিখে অনেক নাম না জানা যোদ্ধাই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছে, জিয়া প্রথম নয়। বইতে একটা ব্যাপার আবার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা হলঃ মুক্তিযুদ্ধ কোন দলের সম্পত্তি নয়, এটা পুরো জাতির ত্যাগ-তীতীক্ষার অর্জন। বিএনপি'র বর্তমান ইতিহাস চর্চায় বঙ্গবন্ধুকে নানাভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে। বিএনপির ডিরেইল্ড ইতিহাস চর্চা থেকে দূরে রেখে এই বইকে আলাদা ভাবে বিবেচনা করার হাজার উপায় আমাদের আছে। মুজিব বাহিনী, ভারতবিদ্বেষী মনোভাব, যুদ্ধকালীন নানা খুঁটিনাটি বিষয় এর উৎস জানতে এই বই অবশ্য পাঠ্য। ১৯৭১ কে এক দলের সম্পত্তি বানাতে এবং বিতর্কিত করতে মেইন্সট্রিম পার্টি নানা ষড়যন্ত্র করে থাকে। সেই টেন্ডেন্সি থেকে দূরে থেকে জনগণের মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে ইতিহাস পাঠ করাই উচিৎ। বঙ্গবন্ধু 'জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান' বলেছেন কি বলেন নি তা ঐ সময়ের অনেক প্রত্যক্ষদর্শী আছেন তাদের উপর ছেড়ে দেয়াই ভাল। খন্দকার এর বইতে অনেক বিষয় এসেছে যা তার মতামত প্রসূত, সেগুলো ভুল কি সঠিক তা সময় নির্ধারণ করে দিবে। ভিন্ন মতামত পোষণের কারণে কাউকে গালিগালাজ করে, আলঝেইমার্স রোগী বলে, পাগল সম্বোধন করা-ইত্যাদি চিন্তা চেতনার স্বাধীনতাকেই বন্দী করে ফেলে। তাই এ সব অসুস্থ চর্চা থেকে বিরত থাকা ভবিষ্যতের জন্য মঙ্গলজনক হবে।