User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নাম – Things Fall Apart লেখক – Chinua Achebe ঘরনা - Novel, Historical Fiction ভাষা – ইংরেজি বইয়ের পৃষ্ঠা – ২০০ বিনিময় মূল্য – ১,০৪৮ টাকা প্রকাশনী – Penguin group ব্যক্তিগত অনুযোগ (রেটিং) – ৪.২/৫ ইতিহাস সৃষ্টিকারী এই নান্দনিক বইটার কিছু কথা দিয়ে আজকের পর্যালোচনা শুরু করবো, যে কথাগুলো আমার হৃদয়কে ব্যথিত করেছে। আমাকে হতবাক করেছে, আমাকে শক্ত করেছে। কথার প্রসঙ্গে কথা টেনে এনে যখন..... Okonkwo যখন Uchendu কে নিজের করা প্রশ্নগুলো করলো, তখন সবাই নিশ্চুপ হয়ে গেলো। ক্ষাণিক পরে Uchendu বললো, “ঠিক আছে, আমার কথা শোনো,” বলে নিজের গলা পরিষ্কার করলো সে। “এটা সত্য যে, সন্তান সবসময় বাবার অধীনের থাকা, বাবার কর্তৃত্বে-পরিচয়ে বড় হয়। কিন্তু, যখন একজন বাবা তাঁর সন্তানকে শাসন করে, সন্তান তখন সহানুভূতির জন্য মায়ের কোল খুঁজে। যখন একজন মানুষের পারিপার্শ্বিক ও আনুষাঙ্গিক বিষয়গুলো তার নিজের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে, মুহূর্তগুলো রঙিন ও আনন্দদায়ক থাকে, তখন সে তাঁর নিজের পিতৃভূমিকে নিজের অস্তিত্বে মিশিয়ে দেয়। কিন্তু, যখন দুঃখ, তিক্ততা এবং গভীর মনোবেদনা কাউকে আঁকড়ে ধরে, তখন সে নিজেকে মাতৃভূমির দিকে, মায়ের কোলের দিকে ফিরে যেতে চায়। তোমাদের মা এখানে তোমাদের নিরাপত্তার জন্য আছে, এইখানে সে ঘুমিয়ে আছে। আর, এইজন্য, শুধুমাত্র এইজন্য, মাতৃভূমি স্বর্গীয়। তুমি, Okonkwo, কি পারবে তোমার মাতৃভূমি ছেড়ে চলে যেতে, তোমার মা’কে অপদস্থ করতে? সাবধান হয়ে যাও নতুবা তুমি কিন্তু এখানে ঘুমন্ত থাকাদের জাগিয়ে তুলবে! তোমার দায়িত্ব আর কর্তব্য হচ্ছে তোমার স্ত্রীদের এবং তোমার সন্তানদের আরাম-আয়েশের ব্যবস্থা করা আর দীর্ঘ সাত বছর পর তোমার পিতৃভূমিতে তাদের নিয়ে ফিরে যাওয়া। কিন্তু, যদি তুমি নিজের অবস্থান থেকে ফিরে যাও তবে তোমাকে এখানে হত্যা করা হবে, আর তোমার পরিবারের সব সদস্যদের নির্বাসনে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।” সে কিছুক্ষণের জন্য থামলো। “এরা এখন থেকে তোমার জ্ঞাতিগোষ্ঠী,” সে তার ছেলেমেয়েদের দিকে হাত নাড়িয়ে বললো। উফফ!!! কি দুর্দান্ত আর মর্মভেদী বক্তব্য, একই সাথে চিনুয়া অ্যাচেবে’র আরেকটি অনন্য সাহিত্য সৃষ্টি। বইটি শুরু হয়.... বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৫৮ সালে, যে বছর ব্রিটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম তাদের ঔপনিবেশিক সুলভ আচরণের অবসান দেখতে পায় এবং ঘানা আফ্রিকার মহাদেশে সর্বপ্রথম স্বাধীনতা লাভ করে। অন্যায্য অধিকারের অবসান শুরু হয় যা Chinua Achebe তার প্রথম উপন্যাসে তুলে ধরে সেসব ঘটনাগুলোকে, যা তখনকার আফ্রিকা মহাদেশের সর্বস্ব অবস্থার সর্বনাশা ইতিহাস নিয়ে রচিত হয়। ঊনিশ শতকের শেষের দিকে যখন আফ্রিকান সভ্যতা হামাগুড়ি দিয়ে ইউরোপীয় শক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছিলো, তখন Things Fall Apart গল্পের Okonkwo, একজন গর্বিত ও অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি যার বসবাস Umuofia নামের একটি গ্রামে, আর Okonkwo এর বংশের আদিপুরুষ সবাই কৃষক। সমাজ ব্যবস্থা সেখানে পিতৃশাসিত ও গণতান্ত্রিক। Achebe এর মতে, গ্রাম্য জীবন ব্যবস্থা নতুন প্রজন্মের সাথে বদলে গেলে আবহমান সংস্কৃতি ধ্বংসের মুখোমুখী হয়। সে সময়ে, ইংরেজরা ফিরে আসলো নতুন রুপে, নতুন কিছু নিয়ে। ইংরেজরা এবার ফিরে এলো ধর্ম নিয়ে, বাইবেল নিয়ে। “হয় বাইবেলকে গ্রহণ করো, না হয় মৃত্যুকে বরণ করে নেও,” এ ছিলো ইংরেজদের নীতি। গ্রামের মানুষ যখন জীবনকে ভালোবেসে খ্রিস্টধর্মে নিজেদের মিলিয়ে নিলো, বংশপরিক্রমায় চলে আসা গ্রামের সুস্থিতি বন্ধনমুক্ত হলো, নীতিকর্ম ভেঙে যেতে শুরু করলো। Okonkwo এর বন্ধু Obierika বলতে লাগলো, “ঐ সাদা চামড়ার মানুষগুলো ভীষণ চালাক, ওরা খুব নীরবে এবং শান্তিতে এসেছে ওদের ধর্ম নিয়ে। আমরা ওদের ব্যবহারে বোকা হয়ে গিয়েছি এবং ওদেরকে আমাদের সাথে থাকার অনুমতিও দিয়ে দিয়েছি। এখন ওরা আমাদের ভাইদেরেক এবং আমার গোষ্ঠীদের আলাদা করে দিচ্ছে, যাতে আমরা নিজেদের মধ্যকার ভ্রাতৃত্ববোধ নষ্ট করে ফেলি।” অভিযোজিত করার অপচেষ্টায়, Okonkwo নিজেকে আধুনিক গ্রিক ট্র্যাজেডির নায়ক হিসেবে খুঁজে বের করে! নিজের ব্যক্তিগত পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখতে গিয়ে বেশ উৎকন্ঠে ভুগছিলাম। এজন্য, ব্যক্তিগত পাঠ প্রতিক্রিয়া সমুচিত না হলেও ভাবোলপদ্ধি দিয়ে কিছু বলতে পারি। উপন্যাসে উপন্যাসিক সমসাময়িক সামাজিক জাতির আত্মিক বৈশিষ্ট্য,পারিপার্শ্বিক অবস্থা, ব্যক্তিমানসের পারস্পরিক সম্পর্ক, ইংরেজদের শাসন ব্যবস্থা, আফ্রিকার সংস্কৃতি, তাঁদের জীবনমাত্রা... ইত্যদিকে তুলে ধরতে চেয়েছেন। গল্পের টানে অথবা চরিত্রগুলো সৌন্দর্যে বার বার আমার হৃদপিন্ডের প্রকোষ্ঠের আত্নক্ষয়ী আর্তনাদ দ্বিধান্বিত হয়ে গিয়েছিলো, সময়কে গহ্বরে টেনে নিয়েছিলো। কারণ, বিদেশী চিরায়ত উপন্যাসগুলো শব্দে, মননে, শৈলীতে অনন্যসাধারণ হয়ে থাকে। Things Fall Apart উপন্যাসটি তার ব্যতিক্রম নয়। উপন্যাসে মূলত সর্বোপরি নায়কের ট্র্যাজেডির পরিণতি, Okonkwo এবং Igbo সংস্কৃতির পূর্ণরূপ বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। পূর্ব নাইজেরিয়ার Umuofia সম্প্রদায়ের একজন সৈনিকের অপরাজেয় কাহিনী নিয়ে ফুটে উঠেছে Things Fall Apart। সাহিত্য প্রেমীদের ও সব পাঠকদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি এই দৃষ্টিনন্দন আর নান্দনিক শিল্পকর্ম পড়ার জন্য , যার প্রতিটি প্রচ্ছদ দুর্দান্ত এক অবিস্মরণীয় আবেগের স্পর্শ পাবেন....
Was this review helpful to you?
or
নাইজেরিয়ার বিখ্যাত লেখক চিনুয়া আচেবের কালজয়ী ম্যানবুকার পুরষ্কার প্রাপ্ত বই “থিংস ফল এপার্ট”। উত্তর-ঔপনিবেশিক সাহিত্য আন্দোলনের কর্মীদের কাছে চিনুয়া আচেবে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন। একটি জাতির অতীত ইতিহাস-ঐতিহ্য, হারানো সম্পদ, বিরাজমান জীবন, সংস্কৃতি, সম্পদ কীভাবে ঔপনিবেশিক শক্তির আগ্রাসনে আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে যাচ্ছে এবং তার জায়গায় পশ্চিমের সংস্কৃতি, আইন-আদালত, পণ্য, ধর্ম দখল করে নিচ্ছে, এ ব্যাপার গুলোই তিনি তার উপন্যাসের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। নাইজেরিয়ায় উপনিবেশবাদের ভয়ঙ্কর প্রভাবের কথাই চিনুয়া আচেবের ‘থিংস ফল এপার্ট’-এ প্রকাশিত হয়েছে। আফ্রিকার মানুষ অসভ্য, সংস্কৃতি বর্বর, ঐতিহ্য কুসংস্কারাচ্ছন্ন, জীবনাচার নিকৃষ্ট। তাদের গায়ের রঙের মতোই তারা অন্ধকারের বাসিন্দা। আফ্রিকা সম্পর্কে এসব ধারণা শত শত বছর ধরে লালিত-পালিত হয়েছে পশ্চিমাদের মগজে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে স্বাধীনতাপ্রাপ্ত আফ্রিকান দেশগুলোতে উত্তর-ঔপনিবেশিক চিন্তাধারার বিকাশ এবং পশ্চিমে তা প্রচার হওয়ার সুবাদে ধীরে ধীরে সেই ধারণায় ভাঙন ধরে; গলতে শুরু করে পুরনো সংস্কারের বরফ। তবে বরফ সম্পূর্ণ গলেনি এখনও। কারণ এখন নতুনরূপে সাম্রাজ্যবাদী উপনিবেশ স্থাপন করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের তালিকায় প্রথমেই আছে সংস্কৃতি—সাংস্কৃতিক সঙ্কট তৈরি করে স্থানীয় জনগণের মধ্যে হীনমন্যতার বীজ বুনে দেয়া। আবহমান সংস্কৃতির ধ্বংস সাধন করে রাজনৈতিক আগ্রাসন ত্বরান্বিত করা। প্রাচীন সংস্কৃতির সঙ্গে এই দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের কালজয়ী সৃষ্টি চিনুয়া আচেবের থিংস ফল এপার্ট (Things Fall Apart)। প্রাচীন ইবো গোত্রের এক বীর যোদ্ধা ওকোনকোর জীবনের বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ নিয়েই আধুনিক ক্লাসিকধর্মী উপন্যাস থিংস ফল এপার্ট রচিত। নায়কের জীবনের অনুষঙ্গেই এসেছে আফ্রিকার জীবনঘনিষ্ঠ সংস্কৃতি-ঐতিহ্য-ভাঙন। উপন্যাসটি তিনটি অংশে বিভক্ত : প্রথম অংশে তের, দ্বিতীয় অংশে ছয়, তৃতীয় অংশে ছয় অর্থাত্ মোট পঁচিশটি পরিচ্ছেদে সমগ্র আখ্যানের সূচনা, বিকাশ ও পরিণতি। ওকোনকো সংগ্রামী যোদ্ধা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছে; ভাগ্যের ওপর নিজেকে ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকেনি। অলস বাবার কাছ থেকে সে কিছুই পায়নি। মাত্র আঠারো বছর বয়সে ভয়াবহ মল্লযুদ্ধে ‘অপরাজেয় বিড়াল’ খ্যাত আমালিনজোকে পরাজয়ের মাধ্যমে তার খ্যাতি বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। সে দীর্ঘ ও বিরাট দেহের অধিকারী, ভ্রূ ঘন ও নাক চওড়া। পায়ের গোড়ালি মাটি স্পর্শ করে না তার, যেন স্প্রিংয়ের ওপর হাঁটছে। যুবক বয়সে সে একাধিক উপাধি ও স্ত্রী গ্রহণ করেছে; সে সম্পদশালী ও গোত্রসমাজে সে একজন জমিদারের সমপর্যায়ের সর্বশ্রেষ্ঠ যোদ্ধা ও মল্লবিদ। ধর্মবিশ্বাস বিরাট জায়গা জুড়ে রয়েছে আফ্রিকার প্রাচীন সংস্কৃতিতে। তাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রিত করে কল্পিত দেব-দেবী। যেমন—মৃত্তিকা দেবী আনই, উর্বরতার উৎস এই দেবী। নবান্নের উৎসবে বিশেষ রীতিতে এই দেবীকে ও পূর্বপুরুষের আত্মাকে সম্মান প্রদর্শন করা হয়। দৈব বাণী আগবালা, পাহাড়ের গুহায় সে থাকে, কোনো বিষয়ে নির্দেশ পেতে বা বিপদে পড়লে মানুষজন এসে এই দেবতার কাছে বাণী গ্রহণ করে ও সেভাবে কাজ করে। এছাড়া তাদের রয়েছে প্রতিটি ক্ষেত্রে ও বিষয়ে আলাদা আলাদা দেবতা। যেমন—ইয়াম দেবতা, গোত্র দেবতা, ব্যক্তিগত দেবতা এবং সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী দেবতা। এসব দেবতার প্রতিনিধিত্ব করে বিভিন্ন পুরোহিত, যারা সমাজে প্রচণ্ড প্রভাবশালী; যেমন চিয়েলো আগবালার পুরোহিত। ওকোনকোরও ব্যক্তিগত দেবতা রয়েছে, যাকে সে সব সময় সন্তুষ্ট রাখে বিভিন্ন জিনিস উত্সর্গ করে। এই দেবতাদের মাধ্যমেই লোকেরা পূর্বপুরুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। ওকোনকোর গ্রাম উমুওফিয়ার এক ব্যক্তির স্ত্রীকে পাশের গ্রামের লোক হত্যা করে। এ-কারণে ওকোনকো বার্তা নিয়ে যায়: হয় যুদ্ধ, নয় ক্ষতিপূরণ হিসেবে একটি কিশোর বালক ও একটি কুমারী মেয়ে প্রদান করতে হবে। ওকোনকোকে তারা ভয়ে রাজসম্মান দিয়ে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেয়। কুমারী মেয়েটি স্ত্রী হিসেবে নিহতের জায়গায় এবং বালকটি ওকোনকোর তত্ত্বাবধানে থাকে। তার পরিবারের প্রতিটি সদস্যের সঙ্গে বালকটি আত্মীয়ের মতো মিশে যায়। কিন্তু তিন বছর পর নয় গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠের একটা দল অরণ্যের এক প্রান্তে সেই কিশোরকে হত্যা করে। এ ঘটনায় ওকোনকো মানসিকভাবে মারাত্মক আঘাত পায়। কারণ বালকটি তাকে ‘বাবা’ বলে ডাকত। অন্যদিকে একজন মহত্ ব্যক্তিত্বের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জনসমাবেশে হঠাত্ ওকোনকোর বন্দুকের গুলি অনিচ্ছাকৃতভাবে একজনকে বিদ্ধ করলে সে মারা যায়। নারীজাতীয় ও মৃত্তিকা দেবীর বিরুদ্ধে এই ধরনের অপরাধের জন্য ওকোনকোকে পরিবারসহ গ্রাম ছাড়তে এবং গোত্রের বাইরে মায়ের গ্রাম মবান্তায় সাত বছর নির্বাসনে থাকতে হয়। জন্মমৃত্যু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ইবো সম্প্রদায়ের কাছে। কোনো শিশু স্বাভাবিক গঠনে জন্ম নিলে তাকে অভ্যর্থনা জানানো হয়; কিন্তু যমজ শিশু বা অস্বাভাবিক শিশু জন্ম নিলে তাকে অস্ত্র দিয়ে জখম করে ‘দুষ্টুবনে’ ফেলে দেয়া হয়, যেন সে আর ফিরে না আসতে পারে মাতৃগর্ভে। অন্যদিকে জীবিত মানুষজনের সঙ্গে মৃত মানুষের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদের মাঝে যোগাযোগ হয়। বিশেষভাবে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় এই সম্পর্ক আরও গাঢ় হয়। পুরুষতান্ত্রিকতা শুধু আফ্রিকা নয়, প্রায় সব জাতির প্রাচীন সমাজ-সংস্কৃতির মধ্যেই বিরাজমান। নারীর অবস্থান সেখানে একদম নিচে। যে কোনো সামর্থ্যবান পুরুষের একাধিক স্ত্রী থাকে; সমাজ-সংসারের কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নারী বা স্ত্রীদের মতামত দেয়ার কোনো অধিকার নেই; এটাই তাদের রীতি। খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে মল্লযুদ্ধ পর্যন্ত সব ব্যাপারে পুরুষদের আধিপত্যই তাদের ঐতিহ্য। ছড়া, লোককাহিনী ও প্রবাদের প্রাচুর্য প্রাচীন সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। চিনুয়া আচেবে এই উপন্যাসে তাৎপর্যপূর্ণ ও ইঙ্গিতধর্মী বেশ কিছু লোকসাহিত্যের উপাদান কৌশলে ব্যবহার করেছেন, যা অত্যন্ত সুখপাঠ্য হয়েছে। সমগ্র উপন্যাসের পটভূমি, বিন্যাস ও মেজাজের সঙ্গে সেগুলো একাত্ম হয়ে গেছে। ওকোনকো খ্রিস্টান পাদ্রিদের আগমনে ও তাদের সম্পর্কে নানা গল্প তাকে বিচলিত হয়। সবচেয়ে বড় আঘাত পায় যখন নিজের ছেলে নওয়াই পাদ্রি ও মিশনারির লোকদের সঙ্গে যোগ দেয় এবং পরবর্তীকালে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে স্কুলের শিক্ষক হয়। মিশনারির লোকজনের আগমন, কর্মকাণ্ড, ‘দুষ্টুবনে’ গির্জা নির্মাণ, সম্প্রদায়ের অচ্ছুত লোকদের নিয়ে গির্জায় প্রার্থনা, নতুন ধর্ম প্রচার, স্কুল স্থাপন ইত্যাদি মবান্তার সনাতন সমাজ ও সংস্কৃতিতে প্রচণ্ড এক আঘাত হানে। শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা ওকোনকো কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি এসব ঘটনা। অন্য গ্রামে থাকার কারণে সে বারবার ক্ষুব্ধ ও রাগান্বিত হয়েছে; কিছু করতে না পারার নিষ্ফল আক্রোশে ছটফট করেছে। ওকোনকো নিজ গ্রামে প্রত্যাবর্তন করে উপন্যাসের তৃতীয় অংশে। সে ভেবেছিল তার প্রত্যাবর্তন হবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। সে গোত্রের সর্বোচ্চ উপাধি গ্রহণ করবে; বাড়িঘর, সীমানা প্রাচীর, গোলাঘর আরও উন্নত করবে; সুন্দরী দু’টি মেয়ের ধুমধাম সহকারে বিয়ে দেবে; ছেলেদের ওজো সমাজের অন্তর্ভুক্ত করবে; এসব করার মাধ্যমে যেন দেশে উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছু ঘটল না। তার প্রত্যাবর্তন একটা সাধারণ ব্যাপার যেন; কারণ উমুওফিয়া অনেক পাল্টে গেছে। নারকেল তেল ও ছোবড়ার বাজার তৈরি এবং বাইরের পুঁজির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। গির্জা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে; নীচ ও অচ্ছুত ছাড়াও দু-একজন দামি ব্যক্তিত্ব মিশনারির সঙ্গে যোগ দিয়েছে। সেখানে শুধু ধর্ম আসেনি, সঙ্গে তথাকথিত সরকার, আদালত, বিচারক ও পেয়াদাও আমদানি করা হয়েছে। যখন তখন যাকে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচার করা ও শাস্তি দেয়া হয়। ধর্ম প্রচারের বেশ ধরে ধীরে ধীরে প্রশাসনিক কর্তৃত্ব কায়েম করা হয়েছে। অথচ এই কাজগুলো পশ্চিমারা করেছে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা, জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অগ্রগতি, বর্ণের আভিজাত্য, ধর্মের মাহাত্ম্য ঘোষণার মাধ্যমে; কল্যাণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলে। এখনও যেমন করা হয়। এক কথায় উড়ে এসে জুড়ে বসা, বৈধতা বা নীতির তোয়াক্কা না করেই। যে কোনো ছুতায় দুর্ঘটনা ঘটিয়ে সংঘাত সৃষ্টি করা ঔপনিবেশিক শক্তির লক্ষ্য। এক পর্যায়ে মিশনারির সঙ্গে স্থানীয় গোত্রের লোকদের বিরোধ বাধে। ধরণী দেবীর সম্মানে একটি অনুষ্ঠানে উগ্র নব্য খ্রিস্টান এনোক ফের আবির্ভূত পূর্বপুরুষ বা ইগোগোর মুখোশ খুলে ফেলে। গোত্রীয় সমাজে এটা মহাপাপ কাজ। ফলে গোত্রের উত্তেজিত যুবকরা এনোকের ঘরবাড়ি এবং গির্জা ভবনও ধ্বংস করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। এই ঘটনায় ওকোনকো দারুণভাবে উত্ফুল্ল হয়ে ওঠে পুরনো দিন আবার ফিরে আসছে ভেবে। কিন্তু সে বুঝতে পারেনি, অতীত দিন আর ফিরে আসে না। ফলে জেলা কমিশনার কৌশলে গোত্রের ছয় নেতাকে ডেকে পাঠায়; মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে আটক করে রাখে জেলখানায়; লাঞ্ছিত করে; অতঃপর জরিমানা দেয়ায় ছেড়ে দেয়। এই ঘটনায় গোত্রের মাঝে তীব্র ক্ষোভ-উত্তেজনা দেখা দেয়; বিরাট জমায়েত হয়; জমায়েতে বক্তারা প্রতিশোধ নেয়ার কথা বলে; ‘দুষ্ট চক্রের শেকড়’ উপড়ে ফেলতে আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু এরই মধ্যে একদল পেয়াদা কমিশনারের নির্দেশে সভা ভঙ্গ করতে বলায় ওকোনকো চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে: তরবারি কোষমুক্ত করে পেয়াদা সর্দারকে হত্যা করে। আর ওকোনকো নিজের জীবনে ডেকে নিয়ে আসে চরম এক ট্র্যাজেডি। সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পরিবর্তে জনতা ভয়ে যে যেদিকে পারে পালিয়ে যায়। অন্য দিকে ওকোনকো ক্ষোভে, অপমানে, লজ্জায় গোত্রের নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। লেখকের ভাষায় : প্রাচীন সংস্কৃতির ছাত্রের কাছে কঠোর প্রশাসক নতিস্বীকার করল। কিন্তু উপনিবেশ স্থাপনের বাধা দূর হয়ে গেল। কমিশনার আফ্রিকার অন্ধকার জগতে ‘সভ্যতার আলো’ ছড়িয়ে দেয়ার ‘মহৎ’ অভিজ্ঞতা’ এবং ওকোনকোর ঘটনা নিয়ে একটা গ্রন্থ রচনার ইচ্ছার মধ্য দিয়ে উপন্যাস শেষ হয়। গ্রন্থের নাম : ‘নিম্ন নাইজেরিয়ার প্রাচীন গোত্রের নিয়ন্ত্রণসাধন’। আসলে নিয়ন্ত্রণ নয়, ‘নিম্ন’ জাতের দেশে আগ্রাসন-লুণ্ঠন-শোষণ-শাসন-নির্যাতন। ঔপনিবেশিক শক্তি ও কূটকৌশলের কাছে প্রাচীন সংস্কৃতি হার মানে। আচেবের থিংস ফল এপার্ট তাই একদিকে উত্তর-ঔপনিবেশিক সাহিত্যের উজ্জ্বল সৃষ্টি, অন্যদিকে জাতির প্রতি দায়বদ্ধতার পরিচয়, সঙ্গে সঙ্গে উপন্যাস শিল্পের অনন্য নজির।