Our User Product Reviews

“ হ্যাঁ, এমন বেহুঁশ সময়েই আমরা আড়াল করি পিতার ধর্ষণের দলিল। আমরা চেপে যাই স্বামীর পরকীয়াও। আমরা গোরস্থানে ঘুমাই সাংবিধানিক নিয়ম মেনেই।” কবিতা পাঠকের মনের সাথে যে কবিতার সহজ স্বাভাবিক সংযোগ আমরা কবিতায় প্রত্যাশা করি তা গোলাপসন্ত্রাস পূরণ করেছে। আনন্দ-বেদনা ও জীবনের কোমল অনুভূতিকে ঘিরে থাকে গোলাপসন্ত্রাস। ঠিক পুরোটা ব্যখ্যায় ধরা যায় না এমন এক আবেশ ঘিরে থাকে কবিতা পাঠক কে। আধুনিকতার ভোগবাদি জীবনের বিরুদ্ধে শিল্পিত উচ্চারণ কবির কবিতাকে অন্যমাত্রা দিয়েছে। একদিকে প্রেমের যেমন এক অলৌকিক উদ্ভাসন ঘটেছে। অন্য দিকে বর্তমান সময়ের নিখুত চিত্র ধরা পরেছে এই কাব্য গ্রন্থে।

আদর্শ প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে রেজাউল করিম রনি র গোলাপসন্ত্রাস কাব্যগ্রন্থটি। এতো দিন আমরা কবিতা নিয়ে যে আপসোস করেছি তা নানা দিক থেকে পূরণ করেছে এই বই। অনাবশ্যক কোন কাঠিন্যতা এতে নাই। অযাচিত কোন শব্দের ঝনঝনানি নেই । আধুনিক কবিতার যে জনবিচ্ছিন্নতা তা দূর করতে সচেষ্ট হয়েছেন এই কবি। এখনকার সময়ের নানা বিষয়- আশয় কাব্যিক মাত্র নিয়ে উপস্থিত হয়েছে গোলাপসন্ত্রাসে। বইটির কবিতা এতো সরল, পড়তে এতো আরাম মনে হয় এখনকার আর কোন কবির কবিতায় পাওয়া যায় না। কবিতা পাঠকের মনের সাথে যে কবিতার সহজ স্বাভাবিক সংযোগ আমরা কবিতায় প্রত্যাশা করি তা গোলাপসন্ত্রাস পূরণ করেছে। বারবার এই কবিতার কাছে ফিরে যারা আনন্দ কবি ও কবিতা কে পাঠকের মনকে এতাই আন্দোলিত করে যে এক ঘোর লাগা অবস্থার সৃষ্টি হয়। আনন্দ-ব্যাদনা ও জীবনের কোমল অনূভুতিকে ঘিরে থাকে গোলাপসন্ত্রাস। এই কবিতা পড়তে পড়তে কবি ও কবিতাকে পাঠকের নিজস্ব সম্পদ বলে মনে হয়। ঠিক পুরোটা ব্যাখ্যায় ধরা যায় না এমন এক আবেশ ঘিরে থাকে কবিতা পাঠক কে। এমন কবিতার কাছেই বারবার ফিরে যেতে ইচ্ছে করে। আমাদের চলতি কবিতার যে দৈন্য দশা তা এই কবিতা গ্রন্থে এসে হোচট খেলো। সত্যিই এই সময় খুব প্রয়োজন ছিল গোলাপসন্ত্রাসের। এই সামষ্টিক প্রয়োজনই গোলপাসন্ত্রাস কে সময়ের কাব্যকন্ঠ করে তুলেছে। এতো বিভিন্ন মাত্রার কবিতার সমাহার এক গ্রন্থে পেয়ে যাবার বিস্ময় পাঠক কে বিমোহিত না করে পারে না। প্রকৃত কবির উচ্চারণ জগৎ আত্নার সৎ অনূভুতির ভেতর থেকেই বেরিয়ে আসে। জন্ম মূলে থাকে বেদনা ও বিদ্রোহ। বড় কবির বেদনার ভিতর থাকে সুনির্দিষ্টি ইতিহাস চেতনা। যা গোলাপসন্ত্রাসের কাব্যিক অনন্যতাকে সম্ভব করে তুলেছে। এ সবই যেন এই কবির খুব সহজাত প্রবণতা। ধন্য হোক কবি জিবন। জয় হোক গোলাপসন্ত্রাসের। কবিতা থেকে উদাহরণ দিলে অনেক উদাহরণ দেয়া যায়। অসংখ্যা লাইন আছে আমার বারবার মনে আসে। ফিরে ফিরে পড়তে ইচ্ছে করে। তাই উদাহরণ দিয়ে অতৃপ্তি বাড়াতে চাই না। পাড়কের জন্যই রাখলাম সেই ঐশ্বর্যময় রচণগুলি। পড়ামাত্রই যা আপনাকে আধরা মাধুরীর অনূভুতি দিবে। দুটি পর্ব আছে বইয়ে। ১ম পর্ব : নরম রিদয়ের আগুন নামে। দ্বিতীয়টির নাম: বাঁকা চরণগুলা। কবির ভাষা ব্যাবহারে যে স্বাতন্ত্রতা তা এর আগে বাংলা কবিতায় দেখা যায় নি। কবিতাগুলো পাঠকের প্রতিদিনের পাঠের অনুষঙ্গে স্থান করে নিতে পারবে বলেই মনে হয়। লেখকের চিন্তাশীল প্রবন্ধের সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত। কিন্তু তাঁর কবিতা যে এতো বিপুল ঐশ্বর্য নিয়ে বাংলা কবিতায় হাজির হবে তা সত্যিই বিস্ময়কর। প্রেমের কবিতাই বেশি লিখেছেন তিনি। কিন্তু এই প্রেমের কবিতার সাথে বাংলভাষার অন্য প্রেমের কবিতার বিরাট ফারাকও আছে। আধুনিকতার ভোগবাদি জীবনের বিরুদ্ধে শিল্পিত উচ্চারণ তাঁর কবিতাকে অন্যমাত্র দিয়েছে। আমি কবিতার ব্যাখ্যা করতে যাব না। কবিতা ব্যাখ্যা করার কাজটি সত্যিই কঠিন। আমি শুধু পাঠক কে আহবান জানব গোলাপসন্ত্রাস হাতে নিয়ে যে কোন জায়গা থেকে পড়া শুরু করুন। আপনি নিজেই এই কবিতার জরুরত বুঝতে পারবেন। এই কবির জন্যই যেন বাংলা কবিতা অপেক্ষা করছিল। কবিতা পড়তে পড়তে আমার তাই মনে হয়েছে। একদিকে প্রেমের যেমন এক অলৌকিক উদ্ভাসন ঘটেছে। অন্য দিকে এখনকার জাহেলি জুলুমবাজী সময়ের নিখুত চিত্র ধরা পরেছে এই কাব্য গ্রন্থে। এই বই আমাদের কবিতার দিকে আবার মুখ ফেরাতে সাহায্য করল। বাংলা কবিতার ইতিহাসে গোলাপসন্ত্রাস নিজের অবস্থান পাকা করে নিবে এতে কোন সন্দেহ নাই।