User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
ভাগীরথির কোল ঘেষে হিজলের বিল।আক্ষরিক অর্থেই সেটি শ্বাপদসংকুল, সেখানে জলে কুমীর, ডাঙায় বাঘ। কিন্তু সেখানে বাঘ-কুমিরও এক ঘাটে জল খায় আরেকটি জিনিসের ভয়ে-সাপ। কালকেউটে, গোখরা, শঙ্খচূড় থেকে শুরু করে হেন কোনো সাপ নেই সেখানে পাওয়া যায় না। এই সাপের অভয়ারণ্যেই বুক চিতিয়ে চলে একদল লোক। তারা জাতে বেদে- আরেকটু নির্দিষ্ট করে বললে বিষবৈদ্য। সাপের বিষ বিক্রি করাটাই তাদের পেশা, সেই বিষ থেকে তৈরি হয় অমৃতসঞ্জীবনী সূচিকাভরণ। কিন্তু এই পান্ডববর্জিত বনে এই বৈদ্যরা এলো কোত্থেকে? লখিন্দরের বাবা চাঁদ সওদাগরের অভিশাপেই তাদের এই নির্বাসন, সেও আরেক চমক লাগানো কাহিনি। তারাশঙ্করের নাগিনী কন্যার কাহিনি সেই বিষবৈদ্যদের নিয়েই লেখা। হাঁসুলি বাঁকের উপকথায় যেমন কাহারদের এঁকেছেন পরম মমতায়, তেমনি এই উপন্যাসে বিষবৈদ্যরা যেন হিজলের বিল থেকে উঠে এসেছে রক্তমাংসের মানুষ হয়ে। তাদের জীবন এই রঙিন চশমা চোখে পরাবাস্তব কোনো কাহিনি বলে ভ্রম হয়। সবকিছু মিলিয়েই উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যের ধ্রুপদী উপন্যাসগুলোর একদম শুরুতে ঠাঁই করে নেওয়া উচিত ছিল। যেমন রহু চণ্ডালের হাড়ে অভিজিৎ সেন লিখেছেন বাজিকরদের নিয়ে। অতদূর যেতে হচ্ছে কেন, হাঁসুলি বাঁকের উপকথায় যে অপার মমতা, সেটা বোধহয় এখানে একটু কম। লেখক পারিপার্শ্বিকতা চিত্রায়নে যতটা সফল, চরিত্রগুলোকে যেন একটু অবহেলাই করেছেন। ইতিহাস বা পুরান যেভাবে এসেছে, বেদেদের আনন্দ-বেদনা যেন ঠিক ততটা বিমূর্ত হয়নি।
Was this review helpful to you?
or
বেদেদের জীবন নিয়ে গল্প, একথা বললে ভুল হবে। তাদের জীবনের একটা অংশ। বেদেদের পুরাণ, তাদের বহুকালের প্রচলিত বিশ্বাসের গ্রন্থিগুলো একে একে তুলে ধরেছেন তারাশঙ্কর। এখানে আমরা জানতে পারি বেদেরা কীভাবে চাঁদ সওদাগরের রোষে নিজ বাসভূমি ছেড়ে চলে যায় অন্য জায়গায়। কেন কিছু বেদে নদীতে থাকে, আর কেউ স্থলে। এরই মাঝে আছে মূল কথা, নাগিনী কন্যা। বেদেনীর মাঝে একজন, যে আসলে নাগিনী। কেমন তার জীবন? তারাশঙ্কর কি করে এভাবে গল্প বলতে পারেন, আমি জানি না। একেবারে বেদে জীবনের সাথে মিশে গিয়েছিলাম। মনসা, চাঁদ সওদাগরের প্রচলিত উপকথা, সাপেদের গন্ধ আর ঘাসের মাঝে মাঝে লুকিয়ে থাকা একেকটা গল্প রোমে রোমে ঢুকে গিয়েছিল। উপকথা আর জীবন মিলে অসাধারণ একটা উপন্যাস।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগীতা #অক্টোবর : ১২ বই : নাগিনী কন্যার কাহিনী লেখক : তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় মূল্য : ২২০ টাকা মনসা ছিল শিবের কন্যা। কিন্তু জন্ম সংক্রান্ত কিছু জটিলতায় সে দেবী হতে পারেনি। সে ছিল নিম্ন জাতের কাছে পূজনীয়া। কিন্তু স্বর্গের দেবীত্ব পেতে হলে উঁচু জাতের কাছে থেকে পুজো পাওয়া আবশ্যক। মনসা স্থির করলেন, চাঁদ সওদাগরের কাছে থেকে পুজো নিবেন। কিন্তু চাঁদ বেনে মহাদেবের ভক্ত, সে কিছুতেই কানি চ্যাংমুড়ি মনসা কে পুজো করবে না। মনসা ক্ষেপে গিয়ে এক এক করে তার সাত পুত্রকে সর্প দংশনে হত্যা করল। কিন্তু তাতেও টলানো গেল না চাঁদ কে। এর মধ্যেই সনকা তার অষ্টম পুত্রের জন্ম দিল। অষ্টম পুত্র লখিন্দরের সাথে বিয়ে হলো বেহুলার। মনসা ঠিক করল সে রাতেই সে লখিন্দর কে দংশন করবে। কিন্তু চাঁদ পুত্রের জন্য তৈরি করেছে, লোহার বাসরঘর। তার চারিদিক ভরিয়ে দিয়েছে সর্প নিরোধ সব গাছ-গাছড়ায়। সেসব ডিঙিয়ে লখিন্দরের কাছে যাওয়া অসম্ভব। মনসা কাল নাগিনী তখন ছলনা শুরু করল। বাসর ঘরের পাহারারত বিষবেদের বৈদ্যর সামনে রূপ নিল তার মৃত কন্যার। বিষবেদের কন্যাও মারা গিয়েছিল বিষের প্রভাবে। এতদিন পর কন্যাকে পেয়ে সব ভুলে গেল সে। কন্যাকে ধরে বলল, কথা দে..আমাকে ফেলে কখনো যাবি না? কাল নাগিনী কথা দিল। তারপর বিষবেদে কে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে নিজ রুপে ফিরে এল। দংশন করল লখিন্দর কে। সকালে ঘুম ভেঙে বিষবেদে দেখল তার মেয়ে কোথাও নেই। বরং তাকে ছলনা করে ঘুম পাড়িয়ে মনসা মেরে ফেলেছে লখিন্দর কে। ওদিকে চাঁদ সওদাগর ক্ষেপে গিয়ে বেদেদের উচ্ছেদ করল। সেদিন রাতে আবার কাল নাগিনী এল বিষবেদের কাছে। কানে কানে বলল, কথা দিয়েছিলাম তোকে ছেড়ে যাব না, সে কথা আমি রাখলাম। আমি বার বার তোদের ঘরেই জন্ম নিব নাগিনী কন্যা হয়ে। নাগিনী কন্যা চেনার উপায় বলে দিল সে। কন্যা জন্মের তিন বছরের মধ্যেই তার বিয়ে দিতে হবে। পাঁচ বছরের মধ্যে সে কন্যার স্বামী যদি সর্পাঘাতে মারা যায়, তবে সেই বিধবা কন্যা কে চোখে চোখে রাখতে হবে। সে যদি নাগিনী কন্যা হয় তবে ষোল বছরের মধ্যেই তার মধ্যে ফুটে উঠবে নাগিনীর লক্ষণ। কপালে দেখা দিবে নাগ চক্র। বিষবেদে চাঁদ সওদাগরের ভূমি থেকে উপেক্ষিত হয়ে মনসার কথা মত নৌকা ভাসাল নিরুদ্দেশের পথে। বহুদিন বহুরাত চলার পর অবশেষে তারা পৌছাল ভাগীরথীর তীরে হিজল বনে। সে এক ভয়ঙ্কর বন। ভয়ঙ্কর সব জন্তুর বাস। কিন্তু এখানেই আছে মা বিষহরীর আটন। এ হলো সাপের রাজ্য। বিষবেদে এখানেই স্থাপন করল তাদের বসতি। আর মনসা তার কথা রেখে বার বার জন্ম নিতে থাকল নাগিনী কন্যা হয়ে বিষবেদেদের ঘরে। সে সব কন্যাদেরই একজন শবলা। তার পরে আসে পিঙ্গলা। উপরের কাহিনীর সবটাই বেদেদের পূর্ব ইতিহাস। কিন্তু আসলেই কি মানুষ কখনো নাগিনী হয়? নাকি শবলা, পিঙ্গলা রা কেবল হয়ে ওঠে লোক ঠকানোর বস্তু, আর হয় এক শ্রেণীর লোকের ভোগের পন্য? পাঠ প্রতিক্রিয়া : তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের লেখনি নিয়ে বলার কিছু নেই। যতই পড়েছি, ততই অবাক হয়েছি, হয়েছি মুগ্ধ। বইয়ের শুরুতেই ভাগীরথী নদীর তীরে হিজল বনের যে বর্ণনা রয়েছে, তা পড়ে গা ছমছম করে ওঠে। সেই বনে পা পড়েনি সভ্য মানুষের। বাঘ-সিংহের অভায়ারণ্য সেই বন। কিন্তু সেই বনের সবচেয়ে ভয়ানক প্রাণী সাপ। কোনটি কুচকুচে কালো,তো কোনটি বিচিত্র চিহ্ন আঁকা। কোনটি আবার গাছের উপর থেকে চাবুকের মত মাথার উপরে এসে ছোবল মারে। তবে এইসব সাপদেরও যম নাগিনী কন্যেরা। নাগিনী কন্যাদের উপরেই ভর করে দেবী মনসা। বিষবেদের আদেশ- নির্দেশ দেয় তার মুখ দিয়েই। সেই ভরের দৃশ্য আরো বিচিত্র। উপন্যাসটি পড়ার সময় সমগ্র বর্ণনাটি যেন চোখের সামনে ধরা দিচ্ছিল আমার। যেন কোন আদিম সম্প্রদায়ের অতি আদিম কোন উপলক্ষ্যে আমি তলিয়ে গেছি। এত জীবন্ত অনুভূতি তার অন্য কোন বইতে এত প্রকট ভাবে হয়নি। তাই আমার, তাঁর লেখা অন্যতম প্রিয় বই নাগিনী কন্যার কাহিনী। তবে সবচেয়ে অবাক বিষয় কি জানেন? এই বিষবেদে সম্প্রদায়, এই নাগিনী কন্যার রীতি, এই ঐতিহ্য কোন কিছুরই সামান্য তম অস্তিত্ব নেই পৃথিবী তে। কোন কালে ছিলও না। তবে ভাবুন, কোথা থেকে এল এই বাস্তবরূপী কাহিনী? কোথায় থেকে আবার? তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের মস্তিষ্ক থেকে। কতটা শক্তিশালী লেখক হলে, কল্পনাকে পুরোপুরি বাস্তব করে ফেলা যায়, সয়ং বিচার করুন।