User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
Best ? book for know the real history . Thanks ♥️ daughter of Tazuddin Ahmed ..???????
Was this review helpful to you?
or
nice
Was this review helpful to you?
or
Good
Was this review helpful to you?
or
ডেলিভারি পাইলাম আজকে 7 এপ্রিল। এবার ডুব দেওয়ার পালা??
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ একটা বই।।
Was this review helpful to you?
or
FCJU21
Was this review helpful to you?
or
ইতিহাস জানতে চাইলে পড়তে পারেন!
Was this review helpful to you?
or
বই টা পড়ার অনেক ইচ্ছা বাট প্রবাস বলে ... পি ডি এফ দিয়ে যদি কেউ উপকার করতো ,ভালো হতো।
Was this review helpful to you?
or
অনেক সুন্দর বই...পড়লে ভালো লাগবে।
Was this review helpful to you?
or
Good book
Was this review helpful to you?
or
অনেক ভালো একটি বই।তাজউদ্দীন আহমেদের মতো একজন মহান নেতার জীবন তুলে ধরা হয়েছে।অনেক তথ্যবহুল বই।লেখনীর ব্যাপারে কিছু বলার নেই।শুধু একটি কথাই বলব।বইটি আমাকে সম্মোহিত করে ফেলেছিল।আশা করি সবার ভালো লাগবে।আসলে ভালো না লেগে উপায় নেই।
Was this review helpful to you?
or
বইঃ তাজউদ্দীন আহমেদ নেতা ও পিতা। লেখিকাঃ শারমিন আহমেদ (তাজউদ্দীন কন্যা) প্রকাশনায়ঃ ঐতিহ্য প্রকাশনী প্রকাশকালঃ এপ্রিল ২০১৪ ইং ভুমিকাঃ বইটি বাংলাদেশের গৌরবউজ্জল মুক্তিযুদ্ধের সফল কান্ডারী প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের জীবন কর্ম নিয়ে লিখা হয়েছে। পর্যালোচনাঃ মুক্তিযুদ্ধ শুরু আগে থেকে তাজউদ্দীন আহমেদের রাজনৈতিক দুর্দশীতা, কর্মজীবন, সিদ্ধান্ত নেবার অপার ক্ষমতা,বিচিক্ষনতা স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন সারথী হয়ে শেখ মুজিবের চিন্তাকে আরো প্রসারিত ও দুর্বার করে দেবার যে এক অন্যন্য ব্যক্তিত্ব তিনি ছিলেন তার বাস্তব প্রতিচ্ছবি এই বই। বইটিতে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বিভিন্ন টুকুটাকি বিষয় প্রমান সহ উপস্থাপন করা হয়েছে, এর মাঝে মুক্তিযুদ্ধে কার কতোটুকু ভুমিকা, স্বাধীনতার ঘোষনার মতো বিতর্কিত বিষয়, ২৬ মার্চ কালো রাতের আগে শেখ মুজিবের স্বাধীনতা ঘোষনা পত্রে সাক্ষর না করা, মুক্তিযুদ্ধ চলা কালীন শেখমুজিবের গ্রেপ্তার, সেই সময় ক্ষমতাসীনদের নানা অপকর্ম, সহ মুক্তিযুদ্ধের নানা অজানা বিষয় উল্লেখ রয়েছে। দেশ স্বাধীন হবার পর প্রিয় বাংলাদেশ কেমন ছিল,বিস্তারিত প্রমান সহ আলোচনা লরা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ কে জানার জন্য। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসকে জানার জন্য বইটি পড়া অত্যান্ত জরুরী। মন্তব্যঃ "মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানবার জন্য " মুক্তিযুদ্ধের দলীলপত্র, একাত্তরের দিন গুলি, একাত্তরের ভিতরে বাহিরে" সহ অনেক বই আছে। তাদের মধ্যে "তাজউদ্দীন আহমেদ নেতা ও পিতা " বইটি অন্যতম। পড়ে দেখতে পারেন ভাল লাগবে।
Was this review helpful to you?
or
অসাধারন একটি বই! প্রিয় নেতা সম্পর্কে প্রিয় বই।
Was this review helpful to you?
or
বইটি আসলেই চমৎকার।
Was this review helpful to you?
or
শৈশবে আব্বুকে ঘিরে আমার স্মৃতি উজ্জ্বল নীলাকাশে খণ্ড খণ্ড শারদ মেঘের মতোই ভাসমান। তিনি ছিলেন এক ব্যতিক্রমধর্মী জীবন ও সময়ের অগ্রপথিক। তাঁকে ভালোভাবে জানার আগেই তিনি চলে গেলেন পৃথিবী ছেড়ে। তিনি চলে গেলেন আমার কৈশোর ও যৌবনের সন্ধিক্ষণে। তারপরও তাঁকে আবিষ্কার করার চেষ্টা করি প্রতিনিয়ত ঐ শৈশবের স্মৃতির মেঘমালার সাথি হয়ে। তার মধ্য দিয়েই বিশ্বকে খুঁজে দেখার চেষ্টা করি, কখনো বিশ্বের অসীম রহস্যার মধ্যে খুঁজি তাঁকে। —শারমিন আহমদ আজ থেকে ৩৯ বছর আগে ১৫ বছরের এক কিশোরী তার ডায়েরিতে লিখছেন, ‘আব্বু তো মরেনি ঘুমিয়ে আছে সারা পৃথিবীর নিপীড়িত মানুষের অন্তরে। আব্বুর আদর্শ, আব্বুর কাজ কত মহান লক্ষ্যের দিকে ধাবিত ছিল! দেশের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় মুহূর্তেই যেন আব্বু দূরে চলে গেলেন! কে এখন পথ দেখাবে? আর তো কোনো নেতা নেই!’ কত তীক্ষ্ণধীশক্তি থাকলে সদ্য বাবা হারানো শিশু সন্তান তার পরিবারের কথা চিন্তা না করে, নিজের ভবিষ্যৎ কি হবে সেই কথা চিন্তা না করে লেখেন- ‘কে এখন পথ দেখাবে?’ এই পথ দেখানো শিশুটির নিজের বা পরিবারের জন্য নয়, ‘পথ’ বলতে জাতির পথকে বোঝানো হয়েছে। পরের লাইনটিতে আরও পরিষ্কার- ‘আর তো কোনো নেতা নেই!’ জাতির পথ দেখানোর জন্যই তো নেতার দরকার হয়। তাজউদ্দীন তাই সার্থক পিতা ও নেতা। না, ভুল বললাম- নেতা ও পিতা। সত্যিই তাজউদ্দীন প্রথমে নেতা, দ্বিতীয়ত পিতা। এ জন্যই আজন্ম রাজনীতির ভেতরে বেড়ে ওঠা লেখিকা শারমিন আহমদ তার স্মৃতিচারণমূলক ঐতিহাসিক বইটির নাম রেখেছেন অত্যন্ত সার্থকভাবে-‘তাজউদ্দীন আহমদ : নেতা ও পিতা।’ পঁচিশে মার্চ রাতে অপ্রস্তুতভাবে বের হওয়া তাজউদ্দীন আহমদ তার পরিবারকে তেমন কোনো দিকনির্দেশনা দিতে পারেননি। গোটা জাতির ক্রান্তিলগ্নে একজন নেতা তার পরিবারকে নিয়ে চিন্তা করেন না। চিন্তা থাকে দেশবাসীকে নিয়ে। তাই ঢাকা ত্যাগ করার আগে বাহক মারফত স্ত্রীকে লেখেন, ‘সাড়ে সাত কোটি মানুষের সাথে মিশে যেও। বেঁচে থাকলে দেখা হবে।’ লেখিকার লেখাতেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়, বলছেন, ‘নেতা তাজউদ্দীনের বিশাল ব্যক্তিত্বের মধ্য থেকেই তাই খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করি পিতা তাজউদ্দীনকে।’ স্মৃতিচারণমূলক লেখায় সত্য ও বাস্তবতাই মূল উপজীব্য। সেখানে ব্যক্তি, পারিপার্শ্বিকতা ও সময় অনেক বড় উপাদান। তবে লেখক শারমিন আহমদের বিষয় যখন তাজউদ্দীন আহমদ তখন তাজউদ্দীনের ছায়ায় সব কিছু ঢাকবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ তাজউদ্দীনের ছায়া ইতিহাস অনেক আগেই তৈরি করে রেখেছে। আলাদা বৃক্ষরোপণের কোনো দরকার নেই। তার সুযোগ্য কন্যা সেটি করেনওনি। উপরন্তু অন্যসব ঐতিহাসিক বা স্মৃতিচারণ গ্রন্থে বাংলাদেশের ইতিহাসে এককেন্দ্রিক বন্দনায় তাজউদ্দীনকে উপেক্ষিত দেখতে হয়। আলোচ্য বইয়ে শারমিন আহমদ বরং অনেক ক্ষেত্রে পার্শ্বচরিত্রগুলোকে আন্তরিক গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। যেমন- ব্যারিস্টার আমির-উল-ইসলাম, গোলাম মোরশেদ, নূরুল হক প্রমুখ। শারমিন আহমদ তার লেখনীতে একজন নেতাকে চিত্রিত করেছেন। প্রাসঙ্গিকভাবে এসেছেন পিতা। পিতাও কম গুরুত্বপূর্ণ নন। কারণ পিতা হওয়ার কারণেই তাজউদ্দীনের অপ্রকাশিত অনেক বিষয়ই তাদের কাছ থেকে জানতে পারছে মহাকাল। শারমিন আহমদের লেখা তাজউদ্দীন আহমদ নেতা ও পিতা বইটি ৭টি পর্ব ও পরিশিষ্টসহ ৪৪৮ পাতার। ছোটবেলার ডায়েরিসহ সম্ভাব্য সব জায়গা থেকে খোঁজ করে যে বিশাল তথ্যভাণ্ডার তাজউদ্দীন আহমদ সম্পর্কে সাজিয়েছেন তা নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক দলিল। বিশেষ করে পরিশিষ্ট অংশে তাজউদ্দীন পরিবারের সকল সদস্যের সংক্ষিপ্ত অথচ গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার বইটিকে তাৎপর্যপূর্ণ করেছে। নূরুল হকের স্ত্রী, বঙ্গবন্ধুর পার্সোনাল এইড গোলাম মোর্শেদের পরিবার, ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম, সাংবাদিক জহিরুল ইসলামের সাক্ষাৎকারসহ তাজউদ্দীন আহমদের ডায়েরির কিছু অংশ বইটিকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। বিভিন্ন ঘটনায় আমরা মানুষ তাজদ্দীন তথা ব্যক্তি তাজউদ্দীনের কিছু তুলনাহীন গুণ দেখতে পাই। এ কারণেই হয়ত ব্যক্তি, নেতা ও পিতা হিসেবে তাজউদ্দীন অন্য উচ্চতার মানুষ। ইচ্ছে করলেই দুর্দান্ত মেধাবী তাজউদ্দীন ব্যক্তিগতভাবে স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তার চোখে দেখেছিলেন নিপীড়িত মানুষের মুক্তি। তাজউদ্দীনের ডায়েরি পড়লে বিষয়গুলো আরও পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে। বিশেষ করে এসএসসি পাস (সম্মিলিত মেধা তালিকায় ৪র্থ) করা তাজউদ্দিন এইচএসসি পরীক্ষা দেন কয়েক বছর গ্যাপ দিয়ে। কারণ রাজনৈতিক ব্যস্ততা। ছয়দফা ঘোষণার পর ক্রমেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাজউদ্দীনকেও মানুষ নতুনভাবে চিনতে শুরু করে। তবে নিজের কাছে তাজউদ্দীন একই রকম ছিলেন। কারণ তিনি জানতেন কোথায় তার গন্তব্য। মানবিক তাজউদ্দীন লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে প্রায় একহাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অথচ নিজে কোনো জীবজন্তুর জবাই, রক্ত দেখতে পারতেন না। মুরগি জবাই পর্যন্ত দেখতেন না সেই তিনি আবার বন্দুক পিস্তল রেখেছেন সঙ্গে। কারণ দেশকে স্বাধীন করতে হবে। তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের নানা দিকে দেখতে পাই, জেলখানায় পরিচিত হওয়া খুনি কেরাম আলীকে তিনি তার বাড়িতে কাজ করতে দিচ্ছেন। যেন সে আবার খারাপ পথে চলে না যায়, কুরআনে হাফেজ তাজউদ্দীন আহমদ স্বপ্ন দেখতেন শোষণহীন ধর্মনিরপেক্ষ সমাজের। সংবিধানেও তার প্রতিফলন ঘটিয়েছিলেন। প্রথম তিন সন্তান মেয়ে হওয়াতে অনেকে বেজার হতেন। তাজউদ্দীন আনন্দে মিষ্টি বিতরণ করতেন। অথচ ছেলে (সোহেল তাজ) হওয়ার পর সবাই যখন তাকে মিষ্টি খাওয়ার বায়না ধরল তিনি মিষ্টি না এনে যারা বায়না ধরছে তাদের মিষ্টি এনে মানুষকে খাওয়ানোর কথা বললেন। নিজের মায়ের মৃত্যুতে শোকবিহ্বল তাজউদ্দীনের কর্তব্য পালনের চিত্র আমরা দেখতে পাই। তার সুন্দর হাতের লেখা, জেলে থেকে পরিবার ও রাজনৈতিক নেতাদের খোঁজ রাখা, ভারতে থেকে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করলেও নিজের ঘড়িতে রাখতেন বাংলাদেশি সময়, বিদেশি কোনো অতিথি কিংবা সাংবাদিকের সঙ্গে চেষ্টা করতেন বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চলে সাক্ষাৎ করতে। অল্প সময়ের জন্য কখনও পরিবারের কাছে গেলেও বঙ্গবন্ধুর কথা ভেবে নীরবে কাঁদতেন। নিজে অর্থমন্ত্রী হিসেবে হাত পেতে সাহায্য আনতেন আত্মসম্মানের সঙ্গে। তাজউদ্দীন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বলেছেন, ‘রাষ্ট্র তার সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারে না।’ এমন একজন রাষ্ট্রনায়ককে শারমিন আহমদের বইয়ে আমরা দেখতে পাই, নিজের বাসার টয়লেট নিজে বানাতে, বাগান করতে, পশুপাখিকে পরম যত্নে আদর করতে, অন্যের অধিকারকে নিজের মনে করতে এমন কত গুণ আছে বলে শেষ করা যাবে না। অথচ ওই সময়ের সমসাময়িক বিশ্বের অন্যতম সফল রাষ্ট্রনায়ক তাজউদ্দীনকে বিদেশে যেতে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নেওয়ার নিয়ম করা হয়েছিল, খোন্দকার মোশতাক তাকে বানানো দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার করে বিচারের চেষ্টা করেছিল, পারেনি। কেউ পারেনি তাজউদ্দীনের সঙ্গে। বঙ্গবন্ধুকে মাথার ওপরে রেখে একক নেতৃত্বে স্বাধীন করেছেন বাংলাদেশকে। কিন্তু হেরে গেছেন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে। এ নিয়তি বড় নিষ্ঠুর। (তথ্য ও লিখা সংগ্রহীত)
Was this review helpful to you?
or
#রকমারিরিভিউপ্রতিযোগিতা বই-তাজউদ্দিন আহমেদ:নেতা ও পিতা লেখক-শারমিন আহমেদ পৃষ্ঠা-৪৬০ মূল্য-৮৫০ ঐতিহ্য প্রকাশনী বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পর যাদের নাম উচ্চারিত হয়। তারা হলেন চার নেতা-তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মোঃ মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামান। আবার এই চার নেতার মধ্যে সব থেকে বেশি ধ্বনিত হয় যার নামটি তিনি হলেন তাজউদ্দীন আহমেদ। যিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সাফল্যের সাথে পালন করেন। একজন সৎ ও মেধাবী রাজনীতিবিদ হিসেবে তাঁর পরিচিতি ছিল। মুজিব বিহীন এক দুর্দশাগ্রস্ত দেশের স্বাধীনতার দিক নির্দশনা দিয়েছেন। তিনি একজন মহান নেতা। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীন দেশে ১৯৭২ সালে শেখ মুজিব মুক্ত হয়ে ফিরে এসে শেখ মুজিব প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বায়িত্ব গ্রহন করবার পর তিনি অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করার পর হত্যাকারীদের নির্দেশে তাজউদ্দীন আহমদকে গৃহবন্দী করা হয়। ২৩ আগস্ট সামরিক আইনের অধীনে তাজউদ্দীন আহমদ-সহ ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। ৩রা নভেম্বরে কারাগারের ভিতরে তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মোঃ মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে জেলহত্যা নামে কুখ্যাত হয়ে আছে। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে বিভিন্ন ভাবে এই মহান নেতা সম্পর্কে জানা হলেও ব্যক্তিগত ভাবে ততটা জানার সুযোগ হয়নি। সে সুযোগটা করে দিয়েছেন বলা যায় তার কন্যা শারমিন আহমেদ এর "তাজউদ্দীন আহমেদ :নেতা ও পিতা" বইটিতে। বইটির শুরু হয় মূলত ৬০ দশকের শুরু থেকে শেষ হয় ৭৫ এর তাজউদ্দীন হত্যা পর্যন্ত। সেই পরিসরে কন্যা হিসেবে পিতার স্মৃতিচারণ করেছেন শারমিন আহমেদ। তিনি যে সময় গুলো উল্ল্যেখ করেছেন তখন থেকে পূর্বপাকিস্তানের মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে, লড়ে যাচ্ছিলো পূর্বপাকিস্তানের দেশকর্মীরা। আর সেই সময় শেখ মুজিব তাজউদ্দীন আহমেদকে এক বিশস্ত বন্ধু হিসেবে তার পাশে পান। তাজউদ্দীন আহমেদের রাজনীতিতে অবদান সমূহও তিনি বর্ণনা করেছেন। শারমিন আহমেদের কাছে তাজউদ্দীন মূলত আগে নেতা তারপর পিতা। পিতা হারা এক কন্যার পিতাকে নিয়ে বিভিন্ন স্মৃতির বর্ণনা করেছেন। বইয়ের অনেকটা অংশ জুড়ে বাবাকে নিয়ে তার শৈশব ও কৈশরের বর্ণনা। বাবা বিহীন পরিবারের সময়ের বর্ণনা। অনেক দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণার স্মৃতিপট। যার একটু একটু করে উম্মেচন করেছেন লেখিকা। ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণে উঠে আসে একজন মহান নেতার রাজনৈতিক কর্মকান্ড সমূহ। শেখ মুজিবের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর কাছে বাঙালির অধিকার দাবী আদায়ে তিনিও ছিলেন উচ্চ কন্ঠের অধিকারী। শেখ মুজিবের সাথে রাজনৈতিক কর্মকান্ড। একই সাথে পরিচালিত করেছেন বিভিন্ন সমস্যা সংক্রান্ত আলোচনা। স্বাধীনতার ঘোষক থেকে শুরু করে স্বাধীনতা আদায় পর্যন্ত তার সকল রাজনৈতিক কর্মকান্ডের বিবরণ। যখন মুজিব ছিলেন না মুজিব বিহীন বাংলার হাতল ধরে রেখেছিলেন তিনি। মুজিবের নামে যুদ্ধ শুরু হলেও সে যুদ্ধের দিক কর্তা হিসেবে তিনি নিয়োজিত ছিলেন। একসময় যুদ্ধ শেষ হয়। পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশ নাম করন হয়। স্বাধীনতার নতুন সূর্যের আলো গায়ে মেখে বাংলার মানুষের দেখভালো করার দায়িত্বে নতুন সরকার গঠন এবং তিনি অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। কিন্তু কোন একটা কারনে মুজিবের সাথে তাজউদ্দীন আহমেদের মতের অমিল হচ্ছিলো। তারই জের ধরে ৩০ বছরের বন্ধুকে মুজিব ভুল বুঝলেন। আর সে কারনেই ১৯৭৪ সালে তিনি সংসদ সদস্য হতে পদত্যাগ করেন। এত কিছুর পরও তিনি মুজিবের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করেছেন। ভেতর গত রাজনৈতিক কোন্দলে দুই জন দুই দিকে ছিটকে পড়েন। এই জায়গায় লেখিকার কিছু ক্ষোভ ঝড়ে পরেছে বোধহয়। তবু এটাও সত্যি তিনি বর্ণনা করতে গিয়ে ইতিহাসের কাছাকাছি থাকতে পেরেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলার রাজনীতির ভেতর দিয়ে আরো কিছু কোন্দল রাজনীতি চলতে থাকে মুজিবের আড়ালে। কিছু স্বার্থন্বেষী ব্যক্তি বর্গ পাকিস্তানি মনোভাব নিয়ে দেশের ভেতর আবার স্বাধীনতা বিরোধী কার্যক্রম শুরু করে। যার কিছুই টের পান নি শেখ মুজিব। তারই ফলশ্রুতিতে ১৯৭৫ এর আগস্টে কুচক্রীদের গাতে স্বপরিবারে নিহত হন শেখ মুজিব। তার আগেও তাজউদ্দীন আহমেদ মুজিবকে সাবধান হতে বলেছিলেন। কিন্তু বাঙালির উপর অগাধ বিশ্বাসের বলি হতে হয়েছিলো তাকে। এই বই লিখে শারমিন আহমেদ যথেষ্ট সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। তার মতে তিনি দেখলেন যুদ্ধের অনেক পরেও যখন তাজউদ্দীন আহমেদ এর মতো একজন নেতা দেশের ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তিনিই ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। সেই অনুভূতিটাই তাকে এই বই লিখতএই অনুভূতিটাই তাকে এই বই লিখতে অনুপ্রেরণা জোগাতে চেষ্টা করে। তবে এটা নিয়ে সমালোচনার যথেষ্ট কারন ছিলো। কেননা তিনি এক জায়গায় বলেন, শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষনা দিতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু তার জন্য তাজউদ্দীন তাকে চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। এক সময় যদিও ঘোষনা দেওয়া হয়। কিন্তু ভাষ্য মতে এটা নেগেটিভ পর্যায়ে চলে যায়। তবে এখানে বোঝানোর মতো আরো অপশন আছে যেমন, শেখ মুজিব আলাদা পাকিস্তান না চাইলেও বাঙালির জন্য সার্বভৌম একটি দেশ চেয়েছেন। তিনি কখনও চান নি পাকিস্তানির সাথে বিরোধীতা করে ভারতের অনুকূলে থাকতে। আর সে কারনে পাকিস্তানির সাথে সরাসরি বিরোধীতাও চান নি। যাই হোক দেশ স্বাধীন হলো একসময়। কিন্তু আরো বিভিন্ন ঘটনাবলির কারনে দুজনে দুদিকে ছিটকে গেলেন। যদিও রাজনৈতিক দিক থেকে এই বই সমালোচিত হয়েছে। এবং অনেকের মতে শারমিন আহমেদ অর্ধেক শোনা কথা দিয়ে এই বইয়ের পৃষ্ঠা ছাপিয়েছেন। আমি ঠিক রাজনৈতিক কোন্দলের দিকে যাচ্ছি না। আমার কাছে একজন পিতা হারা কন্যার তার বাবাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ মূলক পুস্তক হয়েই সমাদৃত হয়েছে।আমি যদিও ততোটা সমালোচনার কিছু পাইনি। কেন না ভুল শুদ্ধর উর্ধে নন কোন মানুষ। সে হিসেবে শেখ মুজিবের কোন সমালোচনাই কাজে লাগবে না তবে অবচেতন ভাবেও যদি শেখ মুজিবকে কোখাও খাটো ভাবে দেখানো হয় তবে আমাদের হুমায়ূন আজাদের কথাগুলো মনে রাখা উচিৎ। “একাত্তরজুড়ে যত কিছু ঘটেছে, বিশ্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের যত সংবাদ পৌঁছেছে, যত প্রচার হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধারা যত সেতু উড়িয়ে দিয়েছে, যত পাকিস্তানি জন্তু বধ করেছে, যত বাঙালি নিহত হয়েছে, যত নারী লাঞ্ছিত হয়েছে, আর আমরা স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছি, তার সবটাই মুজিবের নামে। অন্য কোনো নামে এটা ঘটতে পারত না; অন্য কোনো নাম থেকে এ প্রেরণা উৎসারিত হত না। বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধে পৌঁছে দিয়েছিলেন মুজিব, বন্দি থেকেও তিনিই নিয়ন্ত্রণ করছিলেন মুক্তিযুদ্ধ, তিনিই সৃষ্টি করে চলছিলেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। মুজিবকে আমরা প্রচণ্ড সমালোচনা করতে পারি, কয়েক দশক ধরে তো কোটি কোটি বামন প্রাণভরে তাঁর সমালোচনা করছে।” আর তাই শেখ মুজিবের স্থান বাঙালিদের কাছে আলাদা, যা কখনো কারো সমালোচনায় সরে যাবার মতো নয়। এটাও ঠিক তাজউদ্দীন আহমেদ এর স্থানও ঠিক আলাদা। এটাও সত্যি যে স্বপ্ন নিয়ে তাজউদ্দীন আহমেদ বাংলাদেশ স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখছিলেন। তার কোনটাই পূর্ণ হয় নি। তবে একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে যুদ্ধ পরবর্তী অর্থমন্ত্রী হিসেবে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে সফলতা নিয়ে তর্ক থাকলেও তিনি কখনো নিজের একক চিন্তায় কোন দায়িত্ব রদবদল করেন নি। এমনকি তিনি এমন এক ইতিহাস রচনা করতে চেয়েছেন যে ইতিহাসের কোন পাতাতেই তার কোন নাম থাকবে না। আর তাই কোথাও কোন কিছুতে উনার নাম না থাকলেও কোন আপত্তি থাকবার কথা না। কেননা তিনি নিজেই এটা চাননি কখনো। তবুও বাংলাদেশের সবগুলো মুক্তিযুদ্ধ সচেতন নাগরিকের কাছে যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের নাম লেপটে থাকবে ঠিক তেমনি তাজউদ্দীন আহমেদ এর নাম বারবারই উচ্চারিত হবে।
Was this review helpful to you?
or
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অনেক অজানা অধ্যায় শারমিন আহমেদ 'নেতা ও পিতা' বইতে তুলে ধরেছেন। তাজউদ্দীন আহমেদের সরকার গঠন ও স্বাধীনতায় ভূমিকা বর্ননা করেছেন তার মেয়ে লেখক শারমিন আহমেদ। অসাধারন একটি বই, স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি বই।
Was this review helpful to you?
or
সঠিক সময়ে বইগুলো ডেলিভারি করার জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ
Was this review helpful to you?
or
বইটি অনেক ভালো।সকলে পড়ে দেখতে পারেন।
Was this review helpful to you?
or
অসাধারন একটা বই, এই বই পড়ে ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম। যা কেউ কখনো বলে না
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বই :তাজউদ্দীন আহমদ নেতা ও পিতা। লেখক :শারমিন আহমদ। ধরণ :রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। প্রকাশনী :ঐতিহ্য। মূল্য :৮৫০ (৭২৩ রকমারিতে ) আমি রাজনীতি একদম পছন্দ করি না। টুকটাক খোঁজ নেওয়া হয় তাও পত্রিকার মাধ্যমে। তাজউদ্দীন আহমদ তার প্রতি হঠাৎ করেই আমার অন্যরকম ভালোবাসার জন্ম নেয় কয়েক বছর আগে। তাই তাকে আরেকটু জানার জন্য বইটি পড়া এবং হয়তো গ্রুপে অন্যকারো পছন্দ ব্যক্তি হতে পারে তাই রিভিউ লিখার চেষ্টা। বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ, বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের প্রধান মন্ত্রী, মুজিব সরকারের অর্থমন্ত্রী, জেল হত্যাকাণ্ডের একজন শহীদ। সাধারণত একজন মানুষ এইটুকুই জানেন তাজউদ্দীন সম্পর্কে। এর বেশি কিছু জানতাম না আমি, কিন্তুু বইটি পড়ার পর তার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা আরেক ধাপ বেড়ে গেছে। বইটি লেখিকা শারমিন আহমদ তার চোখে পিতা ও নেতা দুইটি অবস্থানে তাজউদ্দীন আহমদ কেমন ছিলেন খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছেন। বড় এই বইটি কখনোই একঘেয়ে লাগেনি পড়তে গিয়ে, লেখিকা খুব সাবলীল ভাষায় তুলে ধরেছেন একজন স্নেহময়ী বাবা তাজউদ্দীন আর আদর্শ বান, সাংগঠনিক, ন্যায়ের নায়ক একজন নেতা তাজউদ্দীন আহমদ কে। বইটিতে লেখিকা ৭ পর্বে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে তার বাবাকে নিয়ে তার স্মৃতি কথা লিখেছেন। যা থেকে অনেক কিছুই জানা যাবে একজন তাজউদ্দীন আহমদ সম্পর্কে।পরিশিষ্টতে রয়েছে কিছু সাক্ষাৎকার, তাজউদ্দীন আহমদের চিঠি, তার ডায়েরি, ও তার নামের মেমোরিয়াল স্ট্রাস্ট ফান্ড গঠন, কিছু আলোকচিত্র ইত্যাদি। নিজেস্ব মতামত :: আমি শুধুই মুগ্ধ হয়ে পড়েছি ও জেনেছি। বইটি একটি গবেষণামুলক গ্রন্থ হিসাবে কাজ করবে। এর ভেতর আরো কিছু বইয়ের উল্লেখ পেরেছি।বইটি খারাপ দিক বা সমলোচনা দিক হয়তো আছে কিন্তু সেইগুলো বের করা আমার ক্ষমতা বাহিরে।
Was this review helpful to you?
or
gooooood
Was this review helpful to you?
or
ইলিয়াস হোসেনের ভিডিওতে এই বইয়ের কিছু কথা শোনার পর বুঝলাম বইটি পড়া উচিত।
Was this review helpful to you?
or
প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই শারমিন আপুকে এই রকম একটি সাহসী উদ্যেগের জন্য, সত্য কথা লেখার জন্য। বইটি আসলেই চমৎকার। অনেক বড় তাই পড়তে একটু সময় লাগছে। আশা করছি এই রকম বই আরো উপহার দিবেন আমাদের শারমিন আপু।
Was this review helpful to you?
or
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘বাঙালির ইতিহাস নাই।’ আর এ কথাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে ইতিহাসচর্চার চেয়ে ইতিহাস দখলেই আমাদের আগ্রহ বেশি। যাঁরা ইতিহাস নির্মাণ করেন, তাঁদের ইতিহাস দখল করার প্রয়োজন হয় না। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসচর্চার সমস্যা হলো, এক পক্ষ অন্য সবাইকে বাদ দিয়ে একজন নেতা ও একটি দলকে পুরো কৃতিত্ব দিতে চায়, অন্যদের ভূমিকা খাটো ও অগ্রাহ্য করে। আরেক পক্ষ সেই নেতার অবদান অস্বীকার করতে নানা কল্পকাহিনির আশ্রয় নেয়। সাম্প্রতিক কালে আরও একটি বিষয় লক্ষ করা যাচ্ছে যে ইতিহাসের ঘটনাপরম্পরা বাদ দিয়ে অনেকে এর দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন নিয়ে অযথা বিতর্ক করছে। মুক্তিযুদ্ধকালীন ‘নতুন রাষ্ট্রপতিত্বও’ সেই কল্পকাহিনির অংশ। দুই একজন মানুষ তখনই নেতা হয়ে ওঠেন, যখন তিনি তাঁর নেতৃত্বগুণে একটি জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেন; একজন মানুষ তখনই নেতা হয়ে ওঠেন, যখন তিনি নীতিতে অটল থাকেন, কোনো অবস্থায় হুমকি বা প্রলোভনের কাছে নতি স্বীকার করেন না; একজন মানুষ তখনই নেতা হয়ে ওঠেন, যখন জাতির চরম দুর্দিনেও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হন না। কথাগুলো মনে পড়ল শারমিন আহমদের তাজউদ্দীন আহমদ: নেতা ও পিতা বইটি পাঠ করে। এ বইয়ে তিনি কেবল একজন স্নেহশীল পিতার প্রতিকৃতিই নয়, একটি জাতির জয়-পরাজয়ের প্রতিচ্ছবি এঁকেছেন; নানা ধাপ ও প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যে জাতি স্বাধীনতাসংগ্রামের দীর্ঘ ও দুরূহ পথ পাড়ি দিয়েছে। তিনি লিখেছেন, শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা হলে তাজউদ্দীন আহমদ তার সার্থক রূপকার। শারমিন আহমদের বইটি লেখার সূচনা ১৯৭৯ সালে, জিয়াউর রহমানের শাসনামলে, যখন স্বাধীনতার সিপাহসালারদের নাম উচ্চারণ করা যেত না। ক্ষমতার ভারী বুটের নিচে চাপা দেওয়া হচ্ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার গৌরব। শারমিন আহমদ বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করেন, বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের নায়কদের নিয়ে অনেক কাজ হলেও বাংলাদেশে কিছুই হয়নি। এমনকি পাঠ্যবইয়েও দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ঠাঁই পাননি। তাঁকে নিয়ে কোনো গবেষণা বা বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা নেই। সব দেশে এ কাজটি করে থাকেন দলীয় বৃত্তের বাইরের লেখক-বুদ্ধিজীবীরা, তথা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। কিন্তু বাংলাদেশে এদলে-ওদলে বিভক্ত হয়ে তাঁদের কেউ ক্ষমতাসীন দলের, কেউবা বিরোধী দলের অনুগ্রহ লাভে ব্যস্ত। তাই, ইতিহাসের নামে ব্যক্তিস্তুতি কিংবা কুৎসা রচনাই প্রাধান্য পাচ্ছে। আলাপচারিতায় শারমিন আহমদ জানান, এই বেদনাবোধই তাঁকে তাজউদ্দীন আহমদ: নেতা ও পিতা লিখতে উদ্বুদ্ধ করে। তাঁর ভাষায়, ‘বইটি সময়ানুক্রমিকভাবে শুরু করেছি ষাটের দশকের শুরুতে আমার জন্মলাভ হতে এবং শেষ করেছি ১৯৭৫ সালে নভেম্বর মাস আব্বুর অনন্তলোক যাত্রায়।’ শারমিন আরও জানান, দেশের বাইরে যখন তিনি নিজের পরিচয় দেন, তখন তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নায়ক তাজউদ্দীন আহমদ সম্পর্কে জানতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। মানুষটির প্রতি শ্রদ্ধাবনত হন। তাঁর দৃঢ়বিশ্বাস, ‘বাংলাদেশ একদিন তার প্রয়োজনেই খুঁজে বের করবে তাজউদ্দীন আহমদকে।’ শারমিন বর্ণিত সময়টি ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ, সবচেয়ে আলোকসঞ্চারী ও ঘটনাবহুল। এই সময়েই শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনে তাজউদ্দীন আহমদকে বিশ্বস্ত সঙ্গী হিসেবে পান; এই সময়েই ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষিত হয়, অাগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্তরা জাতীয় বীরের মর্যাদা লাভ করেন; এই সময়েই উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে আইয়ুবশাহির পতন ঘটে। এরপর সত্তরের নির্বাচন ও একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ দেশের মানুষ স্বাধীনতার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করে। এই আন্দোলন-সংগ্রামের প্রতিটি পর্বে তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছায়াসঙ্গী। কিন্তু স্বাধীনতার পর তাঁদের সেই বন্ধন অটুট থাকেনি। মেয়ে হিসেবে বাবা তাজউদ্দীন আহমদের প্রতি শারমিন ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতি জানাবেন কিংবা স্মৃতিচারণা করবেন, এটাই স্বাভাবিক; বইয়ের বড় অংশজুড়ে আছে লেখকের শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতিচারণা, আছে একটি রাজনৈতিক পরিবারের সুখ-দুঃখ ও আনন্দ-বেদনার ছবি। আছে ময়মনসিংহ কারাগারে বন্দী বাবা তাজউদ্দীন আহমদকে দেখতে যাওয়া, মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায় ফ্ল্যাটে মা-ভাইবোনদের সঙ্গে থাকলেও বাবার সান্নিধ্য থেকে দূরে থাকা—এ রকম টুকরা টুকরা অজস্র স্মৃতি। কিন্তু শারমিন ইতিহাস বিচারে যথাসম্ভব বস্তুনিষ্ঠ থাকতে চেষ্টা করেছেন। বিশেষ করে স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে যে বিতর্ক চলে আসছে ৪৩ বছর ধরে, লেখক তাঁর গবেষণার মাধ্যমে একটি উপসংহারে এসেছেন, যা ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিল হতে পারে। তিনি এক জায়গায় লিখেছেন, ২৫ মার্চ রাতে তাজউদ্দীন আহমদ যখন বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন, তখন তিনি পাকিস্তানিদের হাতে প্রমাণ রাখবেন না বলে এড়িয়ে যান। এমনকি বাসা ছেড়ে কোথাও আত্মগোপনে যেতেও অস্বীকৃতি জানান। শারমিনের আক্ষেপ, বইয়ের এই তথ্যটুকু নিয়ে একশ্রেণির পাঠক তাঁর ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে গালাগাল করেছেন। তাঁর সঙ্গে দেশি-বিদেশি প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির যোগসূত্র বের করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। কিন্তু তাঁরা বইয়ের পরবর্তী অধ্যায়গুলো পাঠ করার প্রয়োজন বোধ করেননি। করলে এমন কিছু তথ্য পেতেন, যা এর আগে কেউ বলেননি, লিখেননি। ইতিহাসের সত্যসন্ধানী হিসেবে শারমিন আহমদ দুজন ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার নিয়ে দেখিয়েছেন যে বঙ্গবন্ধু তাঁর বিশ্বস্ত সহযোগী তাজউদ্দীন আহমদের অনুরোধে স্বাধীনতার লিখিত ঘোষণা পাঠ না করলেও বিকল্প উপায়ে তিনি সেই ঘোষণা দেন। এর সাক্ষী ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহযোগী হাজি গোলাম মোরশেদ। তাঁর সাক্ষাৎকার উদ্ধৃত করে লেখক আমাদের জানাচ্ছেন, ‘...এরপর এগারোটা বেজে গেল, বারোটা বাজে বাজে, এমন সময় একটি টেলিফোন আসল। বলে, “আমি বলধা গার্ডেন থেকে বলছি। মেসেজ পাঠানো হয়ে গিয়েছে, মেশিন নিয়ে কী করব?” অমি মুজিব ভাইয়ের কাছে দৌড়ে গেলাম। বললাম, মেসেজ পাঠানো হয়ে গিয়েছে। উনি (বঙ্গবন্ধু) বললেন, “মেশিনটা ভেঙে ফেলে পালিয়ে যেতে বল।”’ ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে হাজি গোলাম মোরশেদও ৩২ নম্বর থেকে গ্রেপ্তার হন। বার্তাটি যিনি পাঠিয়েছিলেন, তিনি হলেন শহীদ প্রকৌশলী নুরুল হক। ২৯ মার্চ মহাখালীর ওয়্যারলেস কলোনির বাসভবনে ঢুকে পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। ২৫ মার্চ দুপুরে তিনি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ট্রান্সমিটারটি খুলনা থেকে ঢাকায় নিয়ে এসেছিলেন। এই হলো তাজউদ্দীনকন্যা শারমিনের অনুসন্ধান ও উদ্ঘাটন। আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামের প্রধান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানই। তিনি ধাপে ধাপে একটি নিরস্ত্র জাতিকে সশস্ত্র সংগ্রামের দিকে নিয়ে গেছেন। অন্য বাঙালি নেতাদের চেয়ে বেশি জেল–জুলুম সহ্য করেছেন (দেখুন অসমাপ্ত আত্মজীবনী)। এ কথা যেমন সত্য, তেমনি অসত্য নয় যে তাঁর অনুপস্থিতিতে শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তাজউদ্দীন আহমদ মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারটি পরিচালনা করেছিলেন। শারমিন আহমদের ভাষায়, বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন অনন্য সেতুবন্ধ। যত দিন তাঁরা ঐক্যবদ্ধ ছিলেন, অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার পর কুচক্রী মহল তাঁদের মধ্যে বিচ্ছেদ তৈরি করে। আর দেশের সবচেয়ে বেদনাদায়ক ঘটনা হলো মুজিব ও তাজউদ্দীনের বিচ্ছেদ, যা কেবল এ দুই নেতাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়নি, জাতিকেও অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধটি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিচালিত হলেও দলের ভেতরে সবার মত ও পথ এক ছিল না। কেউ বড় পাকিস্তান ভেঙে ছোট পাকিস্তান করতে চেয়েছিলেন। খন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বে একাংশ পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশনের চেষ্টা চালিয়েছিল। দলের যুব নেতাদের দাবি ছিল, বঙ্গবন্ধু তাঁদেরই সবকিছু করার দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। তাঁরা মুজিব বাহিনী নামে আলাদা একটি বাহিনী গঠন করেন মুজিবনগর সরকারের অনুমোদন না নিয়েই। এসব নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরে উপদলীয় কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। অনেকের মতে, এই কোন্দলে ভারত সরকারেরও ভূমিকা ছিল। ‘তারা সব ডিম এক ঝুড়িতে রাখতে চায়নি।’ এসব উপদলীয় কোন্দলের ঊর্ধ্বে থেকে এবং নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে মানুষটি মুক্তিযুদ্ধকে সফল করতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন, যুদ্ধের মধ্যেও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের পরিকল্পনা করেছেন, তিনি তাজউদ্দীন আহমদ। তিনি মুক্তিযুদ্ধকে কেবল আওয়ামী লীগের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চাননি বলে মওলানা ভাসানী, মণি সিংহ প্রমুখকে নিয়ে সর্বদলীয় উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেন, ভিন্ন দলের কর্মীদেরও মুক্তিবাহিনীতে নেন, দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরোধিতা সত্ত্বেও। তিনি চেয়েছিলেন, সবার জন্য মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন একটি দেশ। দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যখন জানতে চাইলেন, আপনাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে সহায়তা করতে হলে তো ‘আইনানুগ একটি সরকার প্রয়োজন, সেই মুহূর্তেই তাজউদ্দীন আহমদ অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, যার রাষ্ট্রপতি হবেন শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থাকবে নিজের হাতে। তিনি একক সিদ্ধান্তে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র তৈরি করলেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় সরকারের শপথ অনুষ্ঠান করলেন। আর নতুন দেশের রাজধানীর নাম দিলেন মুজিবনগর, নেতা শেখ মুজিবের নামে। তাজউদ্দীন আহমদ স্বপ্ন দেখেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গঠিত বাংলাদেশ হবে পৃথিবীর অন্যতম আদর্শ রাষ্ট্র, যেখানে ধর্মের বিভেদ থাকবে না, অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকবে না, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র হবে সেই রাষ্ট্রের মূল নীতি। তিনি সব মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে জাতীয় মিলিশিয়া বাহিনী গঠনে উদ্যোগ নিয়েছিলেন; যদিও পরবর্তীকালে সেই উদ্যোগ পরিত্যক্ত হয়। তিন স্বাধীন বাংলাদেশে তাজউদ্দীন আহমদের অনেক স্বপ্নই অপূর্ণ থেকে গেছে। অর্থমন্ত্রী হিসেবে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি দেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে তিনি কতটা সফল হয়েছেন, তা নিয়ে তর্ক থাকতে পারে, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে কিংবা স্বাধীনতার পর পৌনে তিন বছর অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমন দৃষ্টান্ত কেউ দিতে পারবেন না। এখানেই ছিল তাঁর বিশিষ্টতা ও অনন্যতা। শারমিন এমন এক পিতা ও নেতাকে নিয়ে বই লিখেছেন, যিনি ছিলেন বাংলাদেশের রাজনীতির ব্যতিক্রমী মানুষ, যিনি মঞ্চের সামনে নয়, নেপথ্যে থেকে কাজ করতে ভালোবাসতেন, নিজে নয় মাস মুক্তিযুদ্ধটি পরিচালনা করলেও কখনো তাঁর কৃতিত্ব নিতে চাননি। লেখককে অভিনন্দন। সোহরাব হাসান: কবি, সাংবাদিক। [email protected]