User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা #ডিসেম্বরঃ ২৪ বইঃ সোনার হরিণ নেই লেখকঃ আশুতোষ মুখোপাধ্যায় প্রকাশনীঃ মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ (ভারত) ধরণঃ পশ্চিমবঙ্গের উপন্যাস ও গল্প পৃষ্ঠাঃ ৬৭৫ রকমারি মূল্যঃ ১০৮০টাকা চন্দন কাঠের পাহাড়, টাকার পাহাড়, সোনার পাহাড়, হীরে মণি-মুক্তার পাহাড়ের পর আর কি কোন ঐশ্বর্য নেই নাকি? সেই সোনার হরিণ চাও তো ভিতরে খোঁজো। বাইরে কোথাও নেই। . ছোট্ট একটা জঙ্গল বানারজুলি। সেখানে খুব সামান্য এক কেরানির ছেলে বাপী তরফদার। যার পুরো নাম বিপুলনারায়ণ তরফদার। তার গরীব বাবা মা হয়ত কোন বিপুল আশার খুঁটি ধরে এরকম নাম রেখেছিলেন। হয়ত ভেবেছিলেন যেরকম নাম রাখবেন তাদের সন্তানের ভাগ্যটা সেরকমভাবে খুলে যাবে। কিন্তু ওই পোশাকি নামটা সবসময় তোলা থাকে। সবাই তাকে বাপী বলেই ডাকে। ছোটবেলায় মা মারা যায় বাপীর। সেই থেকে পিসী কোলেপিঠে করে মানুষ করে। বানারজুলি জঙ্গলেই কাটে তার শৈশব ও কৈশোরকাল। আবু রব্বানী নামে এক মুসলিম ছেলের সাথে বেশ সখ্য বাপীর। বয়সে রব্বানী বাপীর বড়। বাপীর ধারণা আবুর সাথে থাকতে থাকতে অনেক দিক থেকে তার জ্ঞান বাড়ছে। যদিও আবু স্কুলে পড়া ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু বাপীর বিবেচনায় আবু রব্বানীর মতো মরদ তামাম বানারজুলিতে আর একটিও নেই। আবুর একনিষ্ঠ ভক্ত সে। স্কুলে যাওয়া, পিসীর কাছে আদর খাওয়া, আর আবুর সাথে বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়ানো, এই নিয়ে দিব্যি চলে যাচ্ছিলো বাপীর দিন। একদিন তার জীবনে এলো নতুন মোড়। বানারজুলির জঙ্গলে অফিসার হয়ে এলো এক নতুন সাহেব ও তার পরিবার। সাহেবের এক ছেলে, এক মেয়ে। মেয়ে ছোট, নাম মালবিকা নন্দী মিষ্টি। মিষ্টি আসার পর থেকে বাপীর জীবনে এলো ছন্দ। মিষ্টি যদিও বাপীকে পছন্দ করেনা, কারণ বাপী প্রায়ই তাকে ভয় দেখাই, দেখলেই বলে মিষ্টি খাবো, খাবো। এই নিয়ে অনেক ক্ষোভ তার। তবে বাপী প্রায়ই বনের ভেতর নানান ফুল, পাখি, গাছ, জন্তু দেখাবে বলে লোভ দেখিয়ে মিষ্টির সাথে খেলার চেষ্টা করে। জঙ্গলের ভেতরে নিয়ে যায়। মাঝেমধ্যে খেপাই মিষ্টি কে। এভাবেই এক ঘোরের মধ্য যেতে থাকে তার জীবন। কিন্তু হঠাৎ বাপীর জীবন আসে এক চরম ছন্দ পতন। একে একে তার জীবন থেকে হারিয়ে যেতে থাকে তার মাতৃ সমতুল্য পিসী, বাবা, মিষ্টি। তার ভিতরে জন্মে প্রতিশোধের নেশা। কিন্তু কেন? কি এমন ছন্দপতন ঘটেছিলো বাপীর জীবনে? এছাড়াও রতন বণিক, তার ২য় স্ত্রী কমলা, গৌরি বৌদিসহ আরো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র নিয়ে দুর্ধান্তভাবে এগিয়েছে এ উপন্যাস। . পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ অনেকদিন আগে বাংলা সাহিত্যে সেরা বইগুলোর তালিকা দেখেছিলাম, যে তালিকায় এই বইটাও ছিলো। সেই থেকে বইটা পড়ার ইচ্ছা ছিলো, কিছুদিন আগে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি তে বইটা পেয়ে নিয়ে আসি। আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের কোন বই বা লেখা আগে কখনওই পড়া হয়নি, এটাই প্রথম। বইটার কাহিনী প্রথমদিকে খানিকটা স্লো, এজন্য একটু বিরক্ত লেগেছিলো। বইটিতে সোনার হরিণ কথাটি লেখক রূপক অর্থে ব্যবহার করেছেন। আমাদের সকলেরই দুটো সত্তা আছে। একটা বাহ্যিক, যেটা সবাই দেখে। অন্যটা অভ্যন্তরীণ। উপরে আমরা যা ভিতরেও কি আমরা তাই? আমাদের অধিকাংশের বাহ্যিক সত্তা আর অভ্যন্তরীণ সত্তার মাঝে বিস্তর ফারাক থাকে। আমরা সেই অভ্যন্তরীণ সত্তার সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করে যায়। বাপী তরফদার পুরো উপন্যাস জুড়েই সে ছিলো মধ্যমণি মানে মূল চরিত্র। পুরো উপন্যাস জুড়ে সে নিজের ভিতরের পশু সত্তাটার সাথে লড়াই করে যায়। সে প্রতিনিয়ত তার নিজ ও পারিপার্শ্বিক জীবনের সাথে লড়াই করে। "রণে প্রণয়ে নীতির বালাই নেই, কিংবা রণে প্রণয়ে নীতির ধার কেউ ধারে না।" লেখক এই কথাটায় উপন্যাসে বারবার বলেছেন। বানরজুলির জঙ্গলে এই উপন্যাসের বিস্তৃতি, কাঠের ব্যবসার সাথে। কিন্তু শেষ অব্ধি সেই উপলব্ধি দেয়ার চেষ্টা করা হয়, অর্থ, সম্মান, প্রতিপত্তি ভালোবাসার কাছে এসব কিছুই না। জীবনের সবচেয়ে মহান বিষয় ভালোবাসা। বইটা শেষ পর্যন্ত আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। রেটিং: ৪.৫/৫
Was this review helpful to you?
or
ছ'শ পাতার মহাকাব্যিক উপাখ্যানের নাম 'সোনার হরিণ নেই'। চেয়ে না পাওয়ার যন্ত্রণা, পাওয়ার সুতীব্র আকাঙ্ক্ষাকে পূরণের জন্য সোনার হরিণের খোঁজেই মূর্ত হয়েছে এই উপন্যাসের কাহিনি। যেখানে নর-নারীরা সবেতে নিজেদের স্বপ্নকে হাতড়িয়ে বেড়ায়। সেই স্বপন কখন ভালোবাসার বেশে, কখনো মাতৃত্বের ছলে কিংবা নিত্যকার জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের ছদ্মবেশে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে। বাপী তরফদার কলকাতায় এসেছে। থাকছে এক অফিসের পিয়ন রতন বনিকের বস্তিঘরে। না, সে এই পর্ণকুটিরবাসী হতে চায় না। বাপী তরফদার চায় শুধু মিষ্টিকে। বানারজুলি জঙ্গলের বড়বাবুর ছোট্ট মেয়ে মিষ্টিকে চায়। এই মিষ্টির জন্যই তো বাপী রক্তাক্ত হয়েছিল। মিষ্টিকে তার পেতেই হবে। বাপী বিশ্বাস করে, 'রণেতে-প্রেমেতে নীতির বালাই নেই'। বালাই না থাকবার দরুন অনেককিছুই পেয়েছে বাপী। কিন্তু তার হারাবার তালিকাও কম বড় নয়। গায়ত্রী রাই, রেশমা কিংবা রতন বণিকের বৌ - এদের বিসর্জন কম কিসে? বনমায়ার ত্যাগের তুলনা কার সাথে দেব? দুই খন্ডের বই। কাহিনি উত্তাপ ছড়িয়েছে ধীরে -ধীরে। তারপর গনগনে হয়ে উঠেছে। আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের কলমের গতি আছে। মানতে হবে। চুম্বকের মতো দু'চোখকে টেনে রাখছিল। না, পুরো বইয়ের সারকথা হয়তো বিশেষ বলবার মতো নয়।শেষের পঞ্চাশ-ষাট পাতা স্রেফ অহেতুক কাহিনি টেনে বাড়িয়েছেন। যেন মেলোড্রামাটিক সিনেমার জন্য চিত্রনাট্য লিখছিলেন ভদ্রলোক। তবুও আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা আরো পড়বার ইচ্ছেটা রইল। যাদু আছে তাঁর হাতে। আদর্শিক কিংবা ভাবগত বিচারে এই বই ততো কল্কে পাবে না। কিন্তু মানুষের ভেতরকার মানুষ কিংবা পশুটিকে টেনে এনেছেন আশু মুখার্জি। দেখিয়েছেন, মনোঃস্তত্ত্বের জগতটা একেবারে রঙিন না। আবার বর্ণহীনও না। সেই পৃথিবীটার সাথে এই পৃথিবীর ফারাকটা অনেকই বেশি।