User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বইটা এখনো পড়া হইনি। তবে বইয়ের পেইজ কোয়ালিটি, বাইন্ডিং অনেক ভালো। নিতে পারেন আপনারা।
Was this review helpful to you?
or
highly recommended
Was this review helpful to you?
or
বেস্ট
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_বুক_রিভিউ_প্রতিযোগিতা ❝দেশ আমাকে কী দিয়েছে? তা ভাবার আগে, আমি দেশকে কী দিয়েছি? তা ভাবাটা জরুরী।❞ ভূমিকা: এই প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা শুনলে নাক ছিটকে দূরে যায়। করে নানা কটাক্ষ। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল সেদিন পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ হারলে, সেটাকে ইস্যু করে এরা ৫২-এর ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে করলো আপত্তিকর মন্তব্য। বর্তমান প্রজন্ম এত বেশি ইতিহাস অসচেতন যে, গর্বের ইতিহাসকেও পদদলিত করে। আমি এই প্রজন্মের প্রতি খুবই হতাশ! দেশ এ শুধু এক বাসস্থান নয়, এ অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এই বাংলাদেশ সৃষ্টির পিছনে রয়েছে অনেক আত্মত্যাগ, বাধভাঙ্গা রক্তের নহর বয়ে গেছে, নারীর সম্ভ্রম হারিয়েছে। কত আন্দোলন, কত পরিশ্রম, কত প্রান, কত যন্ত্রণা। একাত্তরটা শুধু নয়, এই দেশ অর্জনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে বছরের পর বছর। ১৯৪৭- এ ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হলাম। তথাকথিত বন্ধু ভারতীয়দের নির্মম অত্যাচারে আমরা পরাস্ত হলাম। দিক-বেদিক নেই আমাদের। সাহিত্য থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে ছিল ব্রাহ্মণ্যবাদী আগ্রাসন। অনেক কথা, সেটা আর না বলি। হলাম তো ভাগ! তবে আমাদের ভাগ্য কি বদলালো? কপালপোড়া বাংলাদেশিদের ভাগ্যের পরিবর্তন হলো না আর। ভালোই শুরু করলাম বহু ক্রোশ দূরের বিজাতীয় সংস্কৃতি ও ভিন্ন ভাষার লোকদের সাথে আমাদের নতুন দেশ৷ ৫২-তে এসে করলো ওরা ভাষার উপর আঘাত। এরপর সর্বক্ষেত্রে আগ্রাসন। চললো আমাদের সংগ্রাম। পার হলো, অনেক সময় ও আঘাত এবং বৈষম্য। অতঃপর চলে আসলো সেই গণ-আন্দোলন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান। হ্যাঁ এই প্রেক্ষাপট নিয়েই আখতারুজ্জামান ইলিয়াস লিখেছেন 'চিলেকোঠার সেপাই' নামের এই সেরা উপন্যাসটি। আপনি যদি আখতারুজ্জামান ইলিয়াস পাঠ না করে থাকেন, তাহলে বাংলা সাহিত্যই আপনার জন্য পরিস্ফুটিত হয়নি। আপনি বাংলা সাহিত্য থেকে বঞ্চিত আছেন। প্রাসঙ্গিক কথা: এই উপন্যাসকে চিরায়ত উপন্যাস বলা যেতে পারে। রাজনৈতিক জনরার উপন্যাস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এটাকে নিছক উপন্যাস ভাবলে ভুল হবে। এই উপন্যাসে অসম্ভব সুন্দর করে উঠে এসেছে গণঅভ্যুত্থান চলাকালীন পূর্ববাংলা বা তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীদের স্ফূলিঙ্গ। উঠে এসেছে স্বার্থান্বেষী দেশের স্বাধীনতা বিরোধী নিমকহারাম কিছু অমানুষদের কথা। উঠে এসেছে রাজপথের মিছিল। সেখান থেকেই লেখক নিয়ে গিয়েছেন আন্দোলনের ভিতর। এ যেন সেই সময়ের চিত্র। পড়তে গেলে মনে হবে, আমিই আসীন আছি এই মহারণে। আমরাও দরকার স্বাধীনতা। চাই অধিকার। লেখকের লেখার যে এত তেজ, কি আর বলবো। তবে চলুন ঘুরে আসা যাক সেই সময়ের অস্থিরতায়। কাহিনি বিন্যাস ও রূপায়ণ এবং চরিত্রায়ণ: স্পয়লার আছে, তবে ভয় পাবার দরকার নেই। এটা থ্রিলার সাসপেন্স জনরা নয় যে সব নষ্ট হয়ে যাবে। বরঞ্চ মূল উপন্যাসটি পড়তে আরো বেশি ভালো লাগবে। উপন্যাসের শুরুতে আমরা দেখতে পাই, উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ওসমান দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে আচমকা উঠেছে। ঘুম ভাঙতেই সংবাদ পায় তার নিচের ভাড়াটিয়ার বড়ো ছেলে মিছিলে গিয়ে শহিদ হয়েছেন। ছেলেকে হারিয়ে সে এক করুণ আর্তনাদের আভাস ভেসে আসছে। রোদন করে যাচ্ছে পিতাশ্রী। ওসমানের কানে এসে এসব বেজে যাচ্ছে। ভাবছে দেশের এমন অবস্থা কবে ঠিক হবে? সেই শহিদি লাশ নিয়েও চলছে পুলিশ ও স্বাধীনতাকামীদের নানা ধরনের কর্ম। শহিদি লাশের জানাজার স্থান ও পুলিশের উপর হামলা করার পরিকল্পনাও চলছে। উপন্যাসের তিনটি প্রধান শাখা আছে। সেই শাখার আছে আবার উপশাখা সেখান থেকেও বের হয়েছে অনেক শিকড়। আমি এই উপন্যাসের তিনটি প্রধান শাখাকে আগে উপস্থাপন করি। ১. ওসমান, ২. হাড্ডি খিজির ও ৩. আনোয়ার। এই উপন্যাস প্রথমে পড়তে গেলে ধীরগতির লাগবে। প্রথমেই আগ্রহ আসবে না। রাজনৈতিক উপন্যাস। তাই ইতিহাসের ছিন্নপত্রের সাথে মিল রাখতে হবে। তাই এমন করে লেখা। তা না হলে ইতিহাসের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে যাবে। তাই ধীরে এগিয়ে গেছেন লেখক। ধৈর্য নিয়ে শুরু করবেন, বিরক্ত থেকে কিছু সময় পর এমনভাবে মিশে যাবেন এই উপন্যাসের সাথে যে, আর বের হতে পারবেন না। উপন্যাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলো, হাড্ডি খিজির। দিনমজুর রিকশাচালক। যে মহাজনের রিকশা খিজির চালায়। সেই একজন পাকিস্তানপন্থী দালাল। খিজিরের মা ও বউও মহাজনের নিকৃষ্ট আগ্রাসন থেকে রক্ষা পায় না। খিজির একা মানুষ। তাই প্রতিবাদ করতে পারে না সামনে থেকে। সব মুখবন্ধ করে সহ্য করে। হাড্ডি খিজির একদম স্বাস্থ্যহীন। তবুও পাকিস্তানের আগ্রাসন বিরোধী সকল মিছিল মিটিংয়ে সবসময়ই থাকতো। এরজন্যে পাকিস্তানের দালাল মহাজন খিজিরকে অপছন্দ করতো। কোনো একদিন মহাজনের প্রতি ক্ষিপ্ত সকল রিকশাওয়ালারা বিদ্রোহ করে বসে গ্যারেজে। সেখানে একপর্যায়ে মহাজনের এক গুণ্ডার সাথে হাতাহাতি হয় খিজিরের। তাই সে মহাজনের আশ্রয় ছেড়ে উঠে পড়ে ওসমানের চিলেকোঠার চার দেয়ালে। এখান থেকেই খিজির ও ওসমানের বন্ধুত্ব হয়। অতীতে একসাথে ওসমান ও খিজির অনেক মিছিল করেছে। তবে চিলেকোঠায় উঠে মিল আরো গাড়ো হয়। চিলেকোঠার একটা ছোটো ঘর থেকে এভাবে সাম্রাজ্যবাদী স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট শাসক নামের শোষকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়, তা আমরা এই উপন্যাসে দেখতে পাই। ওসমান একজন ব্যাচেলর চাকুরীজীবি। যার ঠিকানা একটি ভবনের চিলেকোঠার চার দেয়ালের মাঝে। তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু আনোয়ার। সে বামপন্থী দলের একজন সক্রিয় নেতা। বাম রাজনীতি করে। আনোয়ারও একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। এই হলো মূল তিনটি শাখা। স্পয়লার হচ্ছে আমার বর্ণনায়, তবে এই রিভিউটা শেষ করে বইটা পড়লে আমি মনে করি উপন্যাস বুঝতে সহজলভ্য হবে। চরিত্রগুলো এত সুন্দর করে লেখক সৃষ্টি করেছেন। তা পড়লে মনে হবে, চোখের সামনে বাস্তব চরিত্র হাঁটাচলা করছে। ১৯৬৯ সালে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করে যাচ্ছে। রাজপথে স্লোগান হচ্ছে, ‘জ্বালো রে জ্বালো আগুন জ্বালো’ 'স্বৈরাচারের গদিতে আগুন জ্বালাও একসাথে' এবং ‘জেলের তালা ভাঙবো শেখ মুজিবকে আনবো’। উপন্যাসের একটা দিক খুব করে আলোকপাত হয়েছে। তা হলো, জনগণের আন্দোলন কীভাবে দখল হয়ে যায় রাজনৈতিক দলের হাতে। জনতার আন্দোলন রাজনৈতিক দলের হয়ে যায়। উপন্যাসের খলচরিত্র খয়বার গাজী। সাধারণ গ্রামবাসীর গরু চুরি আর সম্পদ আত্মসাৎ করাই যেন তার মূল লক্ষ্য। জনতা যখন পাকিস্তানের অপশাসনের হাত থেকে মুক্ত পেতে রাজপথে উত্তাপ ছড়াচ্ছিল। সেই সময়ও রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির আড়ালে নিজের আখের গুছিয়ে যাচ্ছিলো কেউ কেউ। খয়বার গাজী এমনই একটা চরিত্র। স্থানীয় ইউনিয়ন বাের্ডের প্রাক্তন সভাপতি ছিল। এরপর এখন সে ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার। রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাবে সে শত-শত বিঘা জমি নিজের কবজা করে নিয়েছে। যমুনায় চর জাগলে সেটাও থাকে খয়বার গাজীর দখলে। এমন কোনো অন্যায় নেই, যা খয়বার গাজীর দ্দ্বারা সংঘটিত হয়নি। এলাকার প্রায় মানুষেরই সর্বনাশ করেছে। পাণ্ডাদের দিয়ে গরু চুরি করিয়ে নিজের খোয়াড়ে রাখে। সেই গরু মালিক নিতে আসলে উচ্চমূল্যের টাকা দিতে হয়। পুলিশও এবিষয়ে অভিযোগ নেয় না। খয়বার গাজীর রাজনৈতিক প্রভাব অনেক। কেউ খয়বার গাজীর অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে, তার অবস্থা ভয়াবহ হয়। মামলাবাজ জঘন্য লোক একটা। চরিত্রও একদম জঘন্য প্রাণীর মতো। খয়বার গাজী পাকিস্তানের সমর্থক। নিজের হাতে কিছু করে না, লােকজন দিয়ে শক্রকে হত্যা করে। নরপিশাচ চরিত্রের ভাস্কর্য এই খয়বার গাজী। লোকদেখানো ভাঁওতাবাজ নামাজি সে। ধর্মের লেবাস পরে সবধরনের অন্যায় সে করে। মিথ্যা এই লোকের প্রধান বাক্য। মিথ্যা বলেই সকলকে মোহিত করে। শহরে অন্যায়ের ঝাণ্ডা ধরে যখন বিপ্লবী সৈনিক হাড্ডি খিজিররা ঝাঁপিয়ে পড়েছে পাকি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, গ্রামেও সেভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়েছে চেংটু, করমালি, আলীবক্সরা। তাদের কর্মসূচি আরাে অগ্রসর। তারা অনেক দূরের আইয়ুব খান, পাকিস্তান বাহিনীর পিণ্ডির শােষণ যেমন দেখতে পায়, তেমনই চোখের সামনে খয়বার গাজী, আফসার গাজীদের ভূমিকা আরাে স্পষ্টভাবে দেখে তারা। জানতে পারে, খয়বার গাজীরা সেসব মানুষ যারা স্বৈরাচার আইয়ুব খানের দালাল। তারাও স্বৈরাচার আইয়ুব খানদের শ্রেণি উত্তরসূরি। সাধারণ মানুষের নামে অহেতুক মামলা ঠোকে। ভিটে-মাটি কেড়ে নেয়, কেউ প্রতিবাদ করলে তার লাশ পাওয়া যায় মাঠে-নদীতে। এমনকি হাজার হাজার মানুষের চোখের সামনে নিজের অবাধ্য কিষাণকে পর্যন্ত খুঁটির সাথে বেঁধে পুড়িয়ে মারে। পাকিস্তান বিরোধী মনোভাব দেখালেই শাস্তি পেতে হয়। পাকিস্তানী চাকর একটা। আদালতের মামলায় খয়বার গাজীরা শাস্তি পায় না, মামলায় হারে না। কারণ সরকারের আদালত তাে তাদেরই আদালত। বিচারব্যবস্থার কোনো বালাই নেই। তাই তিক্ত ক্ষোভে ফেটে পড়ে আলী বক্স, করম আলীরা গণআদালত বসাতে চায়। সেখানে বিচার করতে চায় খয়বার গাজীদের মতাে মানুষদের। এরপরেই খয়বারের ডাকাত-চরের বাথান লুট হয়। তার প্রধান অনুচর হােসেন আলী মারা যায় বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে। এখন গণআদালতে বিচার হবে তার। গ্রামের সংগঠিত মানুষ প্রত্যয় ঘােষণা করে। আনোয়ার উপস্থিত। বিচার বসে। বিচারে দস্যু খয়বার গাজীর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। নামাজের জন্য একটু সময় চায়। মৃত্যু পথযাত্রীর শেষ ইচ্ছে বলে তাকে যেতে দেওয়া হয়। ওজুখানা থেকে কৌশলে দড়ি খুলে পালিয়ে যায় খয়বার গাজী। সঙ্গে সঙ্গে যোগ দেয় আওয়ামী লীগে। জেল ফেরত এক আওয়ামী লীগের বড়ো নেতার আশ্রয়ে এই দোসর খয়বার ছাড় পেয়ে যায়। পাকিস্তানপন্থী নিমকহারাম। যে কি-না এমন কোনো অন্যায় নেই যে করেনি। সেই দস্যু আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার সাথে সাথে এর সব দোষ মাফ হয়ে যায়। আহারে......রাজনীতি! এখানে আনোয়ারের আরেকটা রূপ প্রকাশ হয়। আনোয়ার ছিল গ্রামবাসীর পক্ষে। তাদের আন্দোলনের পক্ষে। তবে গ্রামবাসীর আন্দোলনের মনোভাব দেখে আনোয়ার পিছিয়ে যায়। তাদের আন্দোলন উঁচু তলার মানুষ ও সাম্রাজ্যবাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে। আনোয়ার ভেবে দেখে, এই আন্দোলন তো আমারই বিপক্ষে। তাই পিছু হটতে থাকে তাদের মধ্যে থেকে। লেখক এখানে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, রাজনৈতিক আন্দোলন ও জনতার আন্দোলনের মধ্যে অনেক পার্থক্য। রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলন করে, নিজেদের ক্ষমতার জন্য, আর জনতা করে দেশ ও মানুষের জন্য। এখানেই লেখক তার সফল ও সেরা দিকটা দেখিয়েছেন। জাগরণ ও সুপ্ত মনস্ক: ঢাকাতে ওসমান প্রেমে পড়ে তার প্রতিবেশির মেয়ে রানুর। রানুকে ঘিরে জেগে ওঠে তার কামনা। কিন্তু কদিন পরেই রানুর বিয়ের কথা ওঠে। তখন ভেঙ্গে যায় ওসমানের মন। কিন্তু তাতেও তার মিছিলে যাওয়া আটকায় না। বরং বাসা থেকে বেরুতে না পাড়লেই যেন দম বন্ধ লাগে ওসমানের। সব শুনে, দেখে, মিটিংয়ে যায়, আবার মিছিলেও শরিক হয়। কিন্তু তবুও যেন সব কিছুতে শরিক নয়। তাকে ঘিরে থাকে চিলে কোঠার চার দেয়াল। ভাবতে থাকে প্রিয়তমাকে নিয়ে। দেশ নিয়ে করতে থাকে নির্লিপ্ত চিন্তা। আন্দোলনের আলোড়িত সময়ে এক মিছিলে পাকিস্তানী হায়েনার বিষাক্ত বুলেটে শহিদ হয় খিজির। সব উপেক্ষা করে খিজির মিছিলে মুখরিত হয়েছিল। দেশের জন্য স্লোগান দিচ্ছিলো। হায়েনা পাকিস্তানের বুলেটেই শেষ হয় খিজিরের স্বপ্ন ও সাধন। খিজিরের মৃত্যুতে আরো ভেঙে পড়ে ওসমান। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। খুন করতে উদ্দত হয় রানুর ভাই রঞ্জুকে। এসব পাগলামীর খবর পেয়ে গ্রাম থেকে ছুটে আসে বন্ধু আনোয়ার। আনোয়ার ওকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইলেও আনোয়ারের পরিবার মানা করে দেয়। কোনো পাগলকে আশ্রয় দিতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়। তাই চিলেকোঠাতেই থাকে ওসমান। আর অবচেতন মনে নিজের মতো বলতে থাকে। দিনে দিনে ওসমানের পাগলামী বাড়তে থাকে। খিজিরের অবয়ব এসে অনেক কিছু বলে। ডাকে তাকে মুক্তির জন্য। চিলেকোঠার চার দেয়ালের বাইরে যাবার জন্য ডাকে। ডাকে আবার মিছিলে যাবার জন্যে। খিজিরের এই আহ্বান ওসমানকে আষ্টেপিষ্টে ধরে। পরিণত হয় বদ্ধ উন্মাদে। এক সময় আর সে কাউকেই এমন কি তার বন্ধু আনোয়ারকেও চিনতে পারে না। বাহিরে যাবার জন্য বায়না ধরে। বন্দী হয়ে সে থাকতে চায় না। ছটফট করে মুক্তির জন্য। বের হবে ঘর থেকে। যাবে বাইরে, ঘুরবে মুক্ত স্বাধীন হয়ে। এমন কিছু রোধ করার জন্য ওসমানকে গায়ে হাত তুলেই শান্ত করতে হয়। হঠাৎ একদিন আনোয়ারের ঘুমন্ত থাকা অবস্থায় বেড়িয়ে যায় ওসমান। মুক্ত সে। স্বাধীন সে। এতকিছু বলার কারণ হলো, লেখক ওসমানকে উপস্থাপন করে দেখিয়েছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আহ্বান করেছে। ওসমানের বুকে যেমন স্বজন হারানোর ব্যথা। তেমনই পূর্বপাকিস্তান তথা বাংলাদেশ। লেখক অসম্ভব সুন্দর করে তা তুলে ধরেছে। আপেক্ষিক তত্ত্ব ব্যবহার করেছে। ওসমানের এই দৃশ্য দিয়ে বুঝিয়েছে পরাধীন ভূখণ্ডের মুক্তিকে। সাহিত্যমান ও গাঁথুনি: উপন্যাসটির অভিনব কাঠামো এবং নতুন ভাষাভঙ্গি, শিল্পমান, রূপ, রস, ছন্দ, সংলাপ, বাক্য গঠন ও বিস্তৃত দারুণ করে ফুটিয়ে তুলেছে লেখক। কোনো কিছুর অভাব রাখেননি লেখক। প্রতিটি চরিত্র সৃষ্টি করাতে লেখক নৈপুণ্য পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। মনের মাধুর্য মিশিয়ে প্রতিটি চরিত্র তিনি সৃষ্টি করেছেন। যা ছিল সর্বসেরা। এত সুন্দর চরিত্র সৃষ্টি করতে পারে কোনো লেখক, তা এই উপন্যাস না পড়লে জানতামই না। সংলাপ ও সাবলীলতা প্রশংসনীয়। ঊনসত্তর সালের গণঅভ্যুত্থানের যারা প্রধান শক্তি ছিল, সেই শ্রমজীবী জনসাধারণ। তারা কীভাবে এই আন্দোলন শুরু করেছিল। তারপর জনগণের আন্দোলন কীভাবে ছিনতাই করে নিলো রাজনৈতিক দল। তা এত সুন্দর করে এর আগে কেউ বলেনি। বামপন্থীদের আহামরি সিধান্ত, ভাঙন, রাজনীতির ময়দান থেকে তাদের পশ্চাদপসরণ ঘটলো, জনগণের আন্দোলন আওয়ামী লীগ বাগিয়ে নিলো। জনগণ বিচ্ছিন্ন হলো। আওয়ামী লীগ প্রধান শক্তি হয়ে উঠলো, উপন্যাসটির উপজীব্য সেই ঐতিহাসিক সময়টুকুই। আন্দোলনের মধ্যে এমন কিছু এনেছে যা অকল্পনীয় ছিল। যা আগে ও পরে তথা এখনও কেউ সেভাবে বলেননি ও বলতে সাহস করেননি। এক উপন্যাসে লেখক কীভাবে পারলো, শহরের আধুনিক উচ্চবিত্ত বুদ্ধিজীবীর পাশাপাশি বস্তি ও গ্রামের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ এবং সকল রাজনৈতিক দল ও দেশের স্বাধীনতা বিরোধী এবং পুঁজিবাদীদের এক গণ্ডিতে আনতে? সব শাখা এক করার দৈব ক্ষমতা লেখকের মধ্যে বিরাজমান। শহরের ঘিঞ্জি বস্তি থেকে শুরু করে যমুনার দুর্গম চর। উচ্চ দালান থেকে শুরু রাজনৈতিক কক্ষ। সব এক মলাটে লেখক আবদ্ধ করেছেন। নিবিড় পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা এবং রাজনৈতিক পারদর্শিতা দারুণ। পরাবাস্তবতা, ঘটনার সাথে চরিত্রের বাস্তবতা, কল্পনা, চেতনা অন্তঃচেতনা ও অবচেতন ও সন্ধির মিশ্রণে প্রতিটি পৃষ্ঠা যেন ভরপুর। উপসংহার: উপন্যাসে দেখা যায় ও বোঝা যায় যে জনগণের আন্দোলনকে আওয়ামী লীগ দখল করে নিয়ে, রাজনৈতিক সমঝোতা খুঁজে যাচ্ছে। আন্দোলন জনগণের। তবে পশ্চিমাদের বোঝাচ্ছে এই আন্দোলন আওয়ামী লীগের। গণআন্দোলন মুহূর্তেই রূপ নিলো রাজনৈতিক কার্যসিদ্ধির আন্দোলনে। সেইভাবে পাকিস্তানী দস্যু খয়বার গাজী আওয়ামী লীগে এসে হয়ে গেল এক দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক। আওয়ামী লীগে ঢুকেই প্রতিবাদী যুবক চেংকুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। যে চেংটু লড়াই করে গেছে বাংলাদেশের পক্ষে। খয়বার গাজীর মতো এক রাক্ষস আওয়ামী লীগের আশ্রয়ে হয়ে গেল স্বর্গের দেবতা। পাকিস্তানের পাণ্ডাটা নিমিষেই হয়ে গেল আওয়ামী লীগের পাণ্ডা। সামনে সুসময় আসছে। কোনো একদিন খয়বার গাজী সাংসদ হবে। এরপর আগের মতোই নিপীড়িত জনগণের উপর জুলুম চালিয়ে যাবে। আগে পাকিস্তানের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে করে গেছে। এখন আওয়ামী লীগের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে একই কাজ করবে। খয়বার গাজীরা ভালোই থাকে। খয়বার গাজীদের শাস্তি হয় না। তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঠিকই হয়। দলবদলে এরা সবসময়ই সুবিধাভোগ করে। শুধু সাধারণ জনগণের কোনো পরিবর্তন হয় না। রক্ত জনগণের, লাভ রাজনৈতিক নেতাদের। তাই খয়বার গাজীরা আজও আমাদের শোষণ করে। খয়বার গাজীরা আজও আছে। এরা আমাদের নেতা ও জনপ্রতিনিধি হয়ে সকল অপকর্ম আমাদের ঘাড়ে বসেই করে। রাজনীতি থাকতে আর চিন্তা কী? যেমন লেগেছে: রাজনীতি ও স্বাধীনতা সংগ্রাম আমার অতন্ত্য পছন্দের বিষয়। সেই সুবাদে অসম্ভব সুন্দর লেগেছে। লেখার মান নিয়ে আগেই বলেছি। সেরা উপন্যাসের তালিকায় এই উপন্যাস আমার ভালো লাগার তালিকায় সবসময়ই থাকবে। যে জন্য পড়বেন উপন্যাসটি: যদি দুঃসময়ের সেই অস্থির মুহূর্তের মধ্যে প্রবেশ করতে চান। যদি নিজেদের গৌরবের ইতিহাস জানতে চান গল্পকারে। যদি মিশে যেতে চান সেই সময়ের সাথে। যদি সামিল হতে চান এক শহিদি ও যোদ্ধা কাফেলার সাথে। যদি উজ্জীবিত হতে চান নব উদ্দামে। দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার যদি একটুও স্বাদ পেতে চান। যদি নিজেদের জন্মতিথির পাণ্ডুলিপি পড়তে চান। যদি জানতে আসলেই দেশ ও স্বাধীনতা কী? পরাধীনতার শিকলে বন্দী জীবন কেমন? মুক্তি কেন দরকার? দেশকে কেন ভালোবাসবো? কেন দরকার সুষ্ঠু নির্বাচন ও সার্বভৌমত্ব? গণতন্ত্রের দরকার কী? অধিকার কাকে বলে? ভালোবাসা ও দেশপ্রেমের নিবিড় পরিচর্যা যদি পেতে চান। তাহলে আপনার জন্য এই উপন্যাস পাঠ করা জরুরী ও আবশ্যিক। এই উপন্যাস যদি আপনার টেবিল, আলমারিতে বা বুকশেলফে না থাকে। তাহলে আপনার সংগ্রহশালা বেমানান ও শূন্য মনে হবে। আত্মা ছাড়া দেহের মতো লাগবে। তাই করজোড়ে অনুরোধ করবো, একবার হলে-ও এই মহাকাব্যিক উপন্যাসটি পাঠ করে দেখবেন। জোর দিয়ে বলবো, হতাশ হবেন না। তৃপ্তি ও শান্তি পাবেন। বই সম্মন্ধে: বাঁধাই দারুণ। কাগজ চমৎকার স্বচ্ছ। তবে লেখাগুলো কিছুটা ছোটো। আরেকটু বড়ো হলে চোখের শান্তি লাগতো। প্রচ্ছদ ব্যাপক লেগেছে। উজ্জ্বল ঝকঝকে লেখা। সবকিছু মিলিয়ে সুন্দর ছিল। হার্ডকাভার ও জ্যাকেট দেওয়া। হার্ডকাভারের নিচে উন্নত এক ক্রিম কালারের কাগজ ব্যবহার করা হয়েছে। এতে বই দীর্ঘস্থায়ী করতে সক্ষম। নাম- চিলেকোঠার সেপাই লেখক- আখতারুজ্জামান ইলিয়াস জনরা- রাজনৈতিক পৃষ্ঠা সংখ্যা- ৩০৪ ধরণ- উপন্যাস প্রচ্ছদ- সমর মজুমদার প্রকাশকাল- ১৯৮৬ গায়ের দাম- ৩৩০ রিভিউয়ার- শামিম হোসাইন
Was this review helpful to you?
or
১৯৬৯ সালের পূর্ব বাঙলা। কী এক জীবনস্পী মন্ত্রের মুখে বিস্ফারিত চারদিক। কেঁপে ওঠে নগর ঢাকা। কাঁপে শহর, বন্দর, গঞ্জ, নিভৃত গ্রাম, এমনকি যমুনার দুর্গম চর এলাকা। কখনো কঠিন বুলেটের আঘাতে, কখনো ঘুম ভেঙ্গে দেওয়া আঁধির ঝাপটায়। মিটিং আর মিছিল আর গুলিবর্ষণ আর কারা ভাঙা আর গণআদালত সব জায়গায় ফেটে পড়ে ক্ষোভ ও বিদ্রোহ। সব মানুষেরই হৃদয়ের অভিষেক ঘটে একটি অবিচল লক্ষ্যে—মুক্তি। মুক্তি? তার আসার পথও যে একরকম নয়। কারো স্লোগান, দিকে দিকে আগুন জ্বালো', কারো 'পদ্মা মেঘনা যমুনা'। কেউ দাঁড়ায় এই সারিতে, কেউ ঐ সারিতে দাঁড়িয়ে খোলা আকাশের দিকে দৃষ্টি রাখে। মুক্তির স্বাদ কি এমনই। উষ্ণ থেকে উষ্ণতর হয় ঢাকা। সেই ঢাকার মিষ্টি গলির মধ্যে একটি বাড়ি। সেই বাড়িতে থাকে একজন, নাম যার ওসমান গনি ওরফে বহু। যে সব শোনে, দ্যাখে, মিটিতে যার মিছিলেও যায়। তবু কিছুতেই সে যেন শরিক নয়। তাকে ঘিরে রাখে তার চিলেকোঠার চার দেওয়াল। ওই দেওয়াল বিচ্ছিন্নতার ও আত্মপ্রেমের। তার প্রতিবেশী তারই সহকামী আরেক বন্ধু এক কিশোর। তার তরুণী বোনের প্রতি ওসমান আসক্ত, মেয়েটির শরীর সে কামনা করে। কিন্তু প্রেম তার কিশোর বস্তুর প্রতি। এই প্রেমের খাঁচা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ওসমানের ডানা তিরতির করে, কিন্তু অত সহজ কি বেরুনো? গণঅভ্যূত্থানে সন্ত্রস্ত শাসকদের নতুন করে আরোপ করা সামরিক শাসনের নির্যাতন শুরু হলে বন্ধুরা যখন বিহ্বল, ওসমানের ডানায় তখন লাগে প্রবল বেগ। সহনামী কিশোরকে সে চুম্বনে রক্তাক্ত করে
Was this review helpful to you?
or
১০০ তম বই হিসেবে শেষ করলাম চিলেকোঠার সেপাই। কোথায় জানি এরকম পড়েছিলাম কেউ যখন ৫০টা বই পড়ে ফেলে তারমধ্যে এরকম ধারণা জন্মে যে সব কিছু জেনে গেছি। আর যে ৫০০ বই পড়ে তার ধারণা হয় যে এখনো কত কিছু জানার বাকি রয়ে গেছে! আমি হয়তো এই ধারণার মাঝামাঝিতে অবস্থান করছি। মাঝে মাঝে মনে হয় কত গুলো বই তো পড়ে ফেললাম কত কিছু জেনে গেছি। কিন্তু এটাও মনে হয় যে মাত্র ১০০ টা বই পড়লাম কেবল, এখনো কত কিছু পড়ার জানার বাকি রয়ে গেছে। “চিলেকোঠার সেপাই” মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা চলাকালীন সময়ের প্রেক্ষাপটে রচিত। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠে সাধারণ জনতা। প্রবল গণ-আন্দোলন তথা উত্তাল ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া হয়। গ্রাম-শহর সব জায়গায় আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পরে, এরই মধ্যে দলবদলের এক আচ পাওয়া যায়। অনেক রক্তচোষা ভালো মানুষের রূপ ধারণ করে। যার খেসারত এই যুগেও আমাদের স্বাধীনতা নামক সত্তাটি খুজে ফিরতে হচ্ছে। "কয়েকটা বই পোড়ালেই আইয়ুব খান মরে না, আইয়ুব খান গেলে আরেক আইয়ুব খান আসবে। ওয়েস্ট পাকিস্তানের সব আইয়ুব খানকে শেষ করলে বাঙালীদের মধ্যে এক নতুন আইয়ুব খান এমার্জ করবে"।
Was this review helpful to you?
or
গুড
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ একটি বই।আর রাজনৈতিক উপন্যাস হিসেবে সার্থক।
Was this review helpful to you?
or
দারুণ
Was this review helpful to you?
or
Valo
Was this review helpful to you?
or
it is good.
Was this review helpful to you?
or
Excellent
Was this review helpful to you?
or
Good
Was this review helpful to you?
or
বইটা খুব সুন্দর। বইটা পড়ে অনেক কিছু জানা যায়।
Was this review helpful to you?
or
Good
Was this review helpful to you?
or
bebebe
Was this review helpful to you?
or
A fantastic novel.
Was this review helpful to you?
or
Very good book. Must Read
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ উপন্যাস
Was this review helpful to you?
or
দারুন একটি বই।
Was this review helpful to you?
or
পন্যের গুনগত মান ভালো এবং যথাসময়ে ডেলিভারি করা হয়েছে
Was this review helpful to you?
or
ভালোই লাগে৷
Was this review helpful to you?
or
অসাধারন লেখা।
Was this review helpful to you?
or
Great book !
Was this review helpful to you?
or
osam book
Was this review helpful to you?
or
বইটা সুন্দর.....কিন্তু বলব শুধু ম্যাচুররাই পইড়েন।
Was this review helpful to you?
or
Ex
Was this review helpful to you?
or
f
Was this review helpful to you?
or
ওসমান ওরফে রঞ্জু আর খিজির চরিত্র দুইটা সেরা।
Was this review helpful to you?
or
উপন্যাসটির প্রেক্ষাপট ’৬৯ এর গণ অভ্যুথ্থান ।মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের বিভিন্ন চরিত্রর প্রাত্যহিক জীবন, শ্রেণী সম্পর্ক, মানবিক দ্বন্দ, আকাংখা,প্রেম, পাওয়া-না পাওয়ার বাস্তবতা এবং তার সাথে অভ্যুত্থানের সম্পর্ক, বিভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শ, আদর্শগত দ্বন্দ অত্যন্ত সুনিপুণ ও সাবলীলভাবে তুলে ধরেছেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ওসমান।চিলেকোঠার সেপাই। চিলেকোঠার চার দেয়ালের মধ্যে তার জীবন।ওসমানের জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত, কাম-ভালোবাসা, অন্যান্য চরিত্রের সাথে সম্পর্ক ও এর সাথে গণআন্দোলনের মিশেলে প্রাণবন্তভাবে এগিয়ে যায় উপন্যাস। মূল প্রেক্ষাপট ঢাকা শহর। তাছাড়া সমান্তরালভাবেএকটি গ্রামীণ প্লটও দেখিয়েছেন যাতে পাওয়া যায় গ্রামীণ সমাজের চিরায়ত স্বরূপ, রাজনীতি, অত্যাচার, প্রহসন ,দ্বন্দ।নিরক্ষর চাষার ছেলের আদর্শিক প্রতিবাদ ।বাম ধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে শ্রেণী শত্রু খতম এবং তার সাথে তৎকালীন গণআন্দোলনের দ্বন্দ।শহুরে রাজনৈতিক নেতা আনোয়ারকে গ্রামে নিয়ে গিয়ে দুই ভিন্ন জীবনধারার ঘাত সংঘাতকে মুখোমুখি করিয়েছেন লেখক। উপন্যাসটির অন্যতম আকর্ষণীয় দিক ঢাকাইয়া ভাষার ব্যবহার।ছাপার অক্ষরে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ঢাকাইয়া ভাষায় আবেগের বহিঃপ্রকাশ উপন্যাসটিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। মনের ভাব প্রকাশক শব্দগুলোকে হুবহু তুলে ধরেছেন লেখক। যেমন উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র রহমতউল্লাহ মাহাজন ।ফজরের নামাজ পড়ে প্রত্যেকদিন তসবিহ হাতে সে চলে আসে বাড়ির পিছনের রিকশার গ্যারেজে।গম্ভীর মুখে কারো দিকে না তাকিয়ে রহমতউল্লাহ গ্যারেজে ঢোকে এবং রিকশাগুলোর অবস্থা দেখে গালিগালাজ করে ,“ খানকির বাচ্চা! ইস! দুইশ আটপঞ্চাশের মাডগাড আমান রাখে নাই।খানকির পুতে মাডগাডের উপরে খাড়াইয়া হোগা মারা দিসিলি তোর কোন বাপেরে? কইলি না?” খিজির : যদিও লেখক ‘ওসমানকে’ কেন্দ্র করে উপন্যাসটিকে আবর্তিত করেছেন কিন্তু উপন্যাসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও কৌতূহলোদ্দীপক চরিত্র হলো খিজির ।হাড্ডিসার হওয়ায় যে সম্বোধিত হয় হাড্ডি খিজির নামে। উপন্যাসটি পড়ার পর খিজিরের প্রতি এক অদ্ভূত মায়া, ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা কাজ করবে। মোহগ্রস্থ করার মতো এক চরিত্র খিজির। যার পরিণতি আপনাকে বিষণ্ন করবে। ’বিত্তের’ শ্রেণীবিভাগের সবচেয়ে নিম্নস্তরে যার জন্ম এবং জগতের কলুষিত রূঢ় বাস্তবতায় যার বেড়ে ওঠা।প্রতিনিয়ত জন্মদাত্রীকে ‘বেশ্যা’ বলে সম্বোধিত হতে শুনে খিজির বেড়ে ওঠে। অবৈধ ভোগের চিহ্ন নিশ্চিহ্ন করতে যেয়ে পৃথিবী ত্যাগ করে তার মা এবং প্রায়শই সেই ক্ষত তাকে দুঃস্বপ্নে নিয়ে যায়। অপরের ত্যাজ্য সন্তানসহ মহিলাকে বিয়ে করে খিজির এবং সেও মাহাজনের ভোগ্য।খিজির কাজ করে মাহাজন রহমতউল্লাহর বাড়িতে। ’৬৯ এর গণ অভ্যুথ্থানের কারণ ,প্রকৃতি, উদ্দেশ্য সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান নেই খিজিরের।কিন্তু সে একটা জিনিসই বোঝে তা হলো মিছিলে যাওয়া তার কর্তব্য এবং আইয়ুব খানের পতন হওয়া উচিত । কচুরীপানার মতো ভাসমান জীবনের অনিশ্চয়তা, মাহাজনের ক্ষমতাকে উপেক্ষা করে মিছিলের অগ্রভাগে থেকে স্লোগানে স্লোগানে মিছিলকে উত্তাল করে তোলে। রাজনৈতিক জ্ঞান না থাকলেও তার ক্ষুদ্র জ্ঞান দিয়ে সে যা বোঝে তা হলো মাহাজন আইয়ুব খানের দালাল।মাহাজনেরও পতন এবং শাস্তি হওয়া উচিত।তাইতো মিছিলে সবাই যখন স্লোগান দেয় “শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দিবো না তখন খিজিরের উচ্চকন্ঠে শোনা যায় “আইয়ুবের দালাল মাহাজন” ।কিন্তু মিছিলে এর কোনো প্রতিউত্তর পাওয়া যায় না।কিন্তু খিজির সউৎসাহে আবারো স্লোগান তোলে “মাহাজনের জুলুম, মাহাজনের জুলুম- চলবে না চলবে না।” খিজির তার সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন।স্কুটারে করে রাতে যাত্রী নিয়ে যাবার সময় অনাকাংখিত দূর্ঘটনার পরভিাড়া চাইলে গেলে যিাত্রী যখন তাকে বলে “তোমরা মানুষ না…” খিজির তার উক্তিকে স্বীকারচিৎকার করে, “না আমরা কুত্তার বাচ্চা, মানুষ হইলেন আপনেরা।” সর্বহারা খিজির জীবনের সব অপূর্ণতাকে দূরে ঠেলে মিছিলেই খুঁজে নেয় পূর্ণতা।মিছিলেই সে সম্পর্ক গড়ে উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ওসমান এবং বাকিদের সাথে। মিছিলই নির্ধরণ করে খিজিরের পরিণতি।খিজিরের পরিণতির প্রভাব যেমন পরে ওসমানের ওপর তেমনি পাঠকের ওপর ।অজান্তেই ধূসর হয় হৃদয়, খিজিরের জন্য।
Was this review helpful to you?
or
Awesome
Was this review helpful to you?
or
good
Was this review helpful to you?
or
Good one
Was this review helpful to you?
or
খুব সুন্দর মনোমুগ্ধকর একটি উপন্যাস ।
Was this review helpful to you?
or
গুড কোয়ালিটি
Was this review helpful to you?
or
এখন এরকম বই খুব কম পাওয়া যায়।আগে মানুষের চিন্তার সাধিনতা ছিল। এই বইতে তা ফুটে উঠেছে।
Was this review helpful to you?
or
❤️❤️❤️
Was this review helpful to you?
or
।
Was this review helpful to you?
or
নতুন করে বলার কিছু নেই।ভালো ছিল।
Was this review helpful to you?
or
Soothing for soul
Was this review helpful to you?
or
Good Book to read
Was this review helpful to you?
or
not so special
Was this review helpful to you?
or
Nice
Was this review helpful to you?
or
Good book
Was this review helpful to you?
or
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা উপন্যাস।
Was this review helpful to you?
or
good
Was this review helpful to you?
or
Good
Was this review helpful to you?
or
এককথায় অসাধসরণ। এইরকম একটা বই না পড়লে মিস করবেন।
Was this review helpful to you?
or
amar onek posonder ekta boi
Was this review helpful to you?
or
আনন্দ পেয়েছি।
Was this review helpful to you?
or
বইটা খুব ভালো একটা বই।
Was this review helpful to you?
or
"চিলেকোঠার সেপাই" ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস লিখিত একটি মহাকাব্যিক উপন্যাস। আপাতদৃষ্টিতে ওসমান এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র, যে একজন ছোটখাট সরকারি চাকুরে। অন্যদিক থেকে চিন্তা করলে এর প্রধান চরিত্র বলা যায় হাডডি খিজির, যে কিনা ওসমানের বাড়িওয়ালার ভাগনের গ্যারেজ দেখাশোনা করে। এই দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রা ও স্তরের চরিত্রই উপন্যাসটিকে টেনে নিয়ে গেছে ঊনসত্তরের উত্তাল সময়ের ভেতর দিয়ে। আরেকটি গুরুত্ববহ চরিত্র আনোয়ার, যে মূলতঃ একজন বামপন্থী কর্মী। ঊনসত্তরের এই টালমাটাল বিক্ষুব্ধ সময়েই সে ঘটনাক্রমে যায় তার গ্রামের বাড়িতে, যেখানে যে চাক্ষুষ করে জনৈক গ্রাম্য জোতদার খয়বার গাজীর শোষণ ও অত্যাচার এবং সেটিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট তীব্র জনরোষ। উপন্যাসের কাহিনীকে পূর্ণতা দিতেই উঠে আসে দরিদ্র যুবক চেংটু কিংবা করমালি, যারা খয়বার গাজীর বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াবার ধৃষ্টতা দেখায়। অন্যদিকে স্বাভাবিক নিয়মেই গতি পায় ওসমানের অবদমিত কামনা, রেস্তোরাঁর আড্ডায় চায়ের কাপে তুমুল ঝড়, হাডডি খিজির ও তার পারিপার্শ্বিক নিম্নবিত্ত চরিত্রগুলোর চিরাচরিত জীবনযাপন; আর এই সবকিছুই ছাপিয়ে উপন্যাসটি হয়ে ওঠে ওই বিক্ষুব্ধ কালের এক মহাকাব্যিক আখ্যান।
Was this review helpful to you?
or
আমার মতে বাংলা সাহিত্যে আখতারুজ্জামান মোহাম্মদ ইলিয়াস স্যারের ভূমিকা সতন্ত্র। কী রবীন্দ্র কী শরৎচন্দ্র আর বঙ্কিমচন্দ্র অাখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সাহিত্যের তুলনায় তা অতি নগণ্য। তার লেখায় মনোযোগের অভাব হলে কচুটাও পাঠোদ্ধার হয় না। তিনি কখনো লেখার সংখ্যাধিক্যতার প্রতি দৃষ্টি দেন নি বরং তার মানের প্রতি দৃষ্টি দিয়েছেন। "চিলোকোঠার সেপাই" তার লেখা উপন্যাস দু'টির মাঝে অন্যতম। এতে উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টানা হয়েছে।
Was this review helpful to you?
or
ইংলিশ সাহিত্য ক্লাস এ একদিন স্যার বললেন বাংলা সাহিত্যকে জানতে হলে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস র বই পড়তে হবে.নাম বললেন" চিলেকোঠার সেপই ". ৬৯ এর গণ অভভুথানের পরবর্তী সময়ের গল্প।
Was this review helpful to you?
or
চিলেকোঠার সেপাই (The Soldier in an Attic) বাংলাদেশের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের লেখা একটি উপন্যাস। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বসময়কার গণজাগরণের প্রেক্ষাপটে এ উপন্যাসের আখ্যানভাগ গড়ে ওঠেছে। উপন্যাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এর মনোবিশ্লেষণ। উনসত্তুর সালের প্রবল গণঅভ্যুত্থানের যারা প্রধান শক্তি ছিল, সেই শ্রমজীবী জনসাধারণ কিভাবে আন্দোলন-পরবর্তী সময়টিতে প্রতারিত এবং বঞ্চিত হলো, বামপন্থীদের দোদুল্যমানতা আর ভাঙনের ফলে, জাতীয় মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে যথাযথভাবে ধারণ করতে না পারার ফলে অজস্র রক্তপাতের পরও রাজনীতির ময়দান থেকে তাদের পশ্চাদপসরণ ঘটলো, আওয়ামী লীগ প্রধান শক্তি হয়ে উঠলো, উপন্যাসটির উপজীব্য সেই ঐতিহাসিক সময়টুকুই। গ্রন্থের প্রধান তিনটি চরিত্র ওসমান, আনোয়ার এবং হাড্ডি খিজির। চিলেকোঠার সেপাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে রোববার নামীয় সাপ্তাহিক পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় এবং ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। এর অভিনব কাঠামো এবং নতুন ভাষাভঙ্গিমা পরবর্তী প্রজন্মের নতুন লেখকদের বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত ও প্রভাবান্বিত করে যার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ শহীদুল জহির। এই উপন্যাসে একদিকে হাড্ডি খিজির যেমন মহাজনের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিয়ে উঠতি আওয়ামী লীগের নেতা আলাউদ্দীন মিয়ার ধমক খায়, গ্রামে গ্রামে গরুচোরদের রক্ষাকর্তা জোতদারদের রক্ষায় রাষ্ট্র, সামরিক বাহিনী, আওয়ামী রাজনীতি একাকার হয়ে যায়। ঢাকা ক্লাব থেকে আইয়ুব-বিরোধী মিছিলে গুলিবর্ষণ করা হলে উত্তেজিত জনতা ক্লাবটিতে আগুন ধরাতে যায়, আর বাঙালি-বাঙালি ভাই ভাই আওয়াজ তুলে তাদেরকে রক্ষা করা হয়। গ্রামে জোতদারদের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত মানুষের গণআদালতেও আইয়ুবের দালালরা রক্ষা পায় জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ছায়ায়। এই দালালদের বুদ্ধিমান অংশ অচিরেই যোগ দিয়ে জাতীয়তাবাদী রাজনীতিকে আরও পুষ্ট করে। ওদিকে ওসমান তার মধ্যবিত্ত দোদুল্যমানতা আর জনগণের সাথে মিলনের আকাঙ্ক্ষায় মাঝে দোল খায়, এ্ই দোলাচল তাকে পরিণত করে সিজোফ্রেনিয়ার রোগীতে। মধ্যবিত্ত বামপন্থী আনোয়ার গ্রামে যায় কৃষিবিপ্লব সাধন করতে, এবং নতুন কোন উপলদ্ধি ছাড়াই এই প্রক্রিয়ার ভেতর তার ভূমিকা পালন করে যায়।
Was this review helpful to you?
or
অপরূপ গদ্যের গাঁথুনি এবং সাবলীল বর্ণনা আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের উপন্যাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। মাত্র দুটি উপন্যাস রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন এই সাহিত্যিক। স্থান, কাল ও পাত্রকে একসুতোয় বেঁধেছেন ঔপন্যাসিক। কাহিনির পটভূমি ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান। এক গুমোট, অস্থির সময়ে এক আত্মকেন্দ্রিক যুবকের পরিবর্তনের গল্প। যেই গল্পে প্রেম আছে, হাড্ডি খিজিরের সব হারানোর দেশপ্রেম আছে, আছে আত্মকেন্দ্রিক ওসমানের বদলে যাওয়ার গল্প। কিন্তু সব ছাপিয়ে পাওয়া যায় এক চিরচেনা বাঙালি আবহের গল্প।
Was this review helpful to you?
or
সময়, রাজনীতি, মানুষ সবকিছুকে এতো সুন্দরভাবে কম বইতেই দেখা যায়। ভালো লাগার মতো একটি বই।
Was this review helpful to you?
or
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিশালী লেখক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস এর ইতিহাস ভিত্তিক সত্য এবং বাংলাদেশের তৎকালীন সময়ের ঘটে যাওয়া ঘটানোগুলোকে জানার জন্য পড়ুন ইতিহাস সমৃদ্ধ ‘চিলেকোঠার সেপাই।
Was this review helpful to you?
or
চিলেকোঠার সেপাই উপন্যাস টিই বলে দেয় কেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বাংলার শক্তিশালী উপন্যাসিক।১৯৭১ সালের পূর্বের আন্দোলন এর আদলে উপন্যাস টি রচিত হয়েছে।৬৯ এর গণ-অভূত্থান এ অংশগ্রহণকারী শ্রমজীবী মানুষ পরবর্তীতে যেরূপ অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে,তা বলা আছে।সম্পূর্ণ উপন্যাসটিতে কাহিনীরকে সঠিক ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।উপন্যাসটি পড়লে আপনার সময় কোনো ভাবেই বৃথা যাবে না।
Was this review helpful to you?
or
চিলেকোঠার সেপাই লেখকঃ আখতারুজ্জামান ইলিয়াস প্রথম প্রকাশঃ ১৯৮৬ প্রকাশকঃ ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড সালটা ১৯৬৯, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারাবন্দী বঙ্গবন্ধু। তাকে মুক্ত করার জন্য উত্তাল পুরো দেশ। এই আন্দোলন ঢাকা থেকে এখন পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের সমাজের সর্বত্র জেগে উঠছে এক পরিবর্তনের জোয়ার। সমাজের উঁচু শ্রেণীর লোকেরা এই নতুন প্রেক্ষাপটে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে ব্যস্ত। শ্রমিক শ্রেণী তখন শোষণহীন সমাজের স্বপ্নে আন্দোলনে সর্বাত্মকভাবে জড়িয়ে পড়েছে। আর সবসময় গা বাঁচিয়ে চলা মধ্যবিত্তরা তখন নিজেদের অবস্থান নিয়ে সন্দিহান। এমনই এক জটিল রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিকে নিপুণভাবে তুলে ধরে বাংলাদেশের সাহিত্য ইতিহাসের সবথেকে সার্থক রাজনৈতিক উপন্যাস, ‘চিলেকোঠার সেপাই’ রচনা করেছেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র হচ্ছে উসমান ওরফে রঞ্জু। সে ঢাকার এক ঘিঞ্জি গলিতে বাস করা অফিসের এক জুনিয়র কর্মচারী। তার দুই বন্ধু বামপন্থী আনোয়ার আর ডানপন্থী আলতাফ। প্রায়ই তারা মেতে উঠে তুমুল রাজনৈতিক তর্কে, যেখানে রঞ্জু থাকে এক নীরব শ্রোতা হয়ে। রঞ্জুর ভাড়া বাসার মালিক আবার একজন আইয়ুবপন্থী মহাজন রহমতউল্লাহ। আর মহাজনের রিকশা গ্যারাজের মিস্ত্রি খিজির উরফে হাড্ডি খিজির। রঞ্জু, খিজির ও আনোয়ারকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে উপন্যাসটির কাহিনী। গল্পের প্রথমে স্পটলাইট থাকে রঞ্জুর উপর। সে হচ্ছে আমাদের সমাজের স্বার্থান্বেষী মধ্যবিত্ত সমাজের প্রতিনিধি। নিজের স্বার্থ সংরক্ষণ করাই তার প্রধান কাজ। কিন্তু তার চারপাশের আন্দোলন তাকে ভাবতে বাধ্য করে। ঢাকার রাস্তার আন্দোলনরত জনগণের মাঝে সে যেন দেখতে পায় হাজার বছর ধরে নিপীড়িত হয়ে আসা মানুষদের। পর্তুগীজ মগদের হাতে, আরব সুলতানদের হাতে, ব্রিটিশ বেণিয়াদের হাতে নিপীড়িত মানুষদের সে দেখতে পায় মিছিলে। শোষকদের হাত থেকে মুক্তির জন্য তারা যেন মৃত থেকে জেগে উঠে শ্লোগান দিয়ে মিছিল করছে ঢাকা শহরের রাস্তায়। তার ছোট্ট ঘরে বদ্ধ অবস্থায় সে শুধু এই আন্দোলন নিয়ে ভাবতে থাকে। তার নিজের ভীরুতা তাকে ভাবায়, ভাবায় চারপাশের মানুষদের সংগ্রাম । কিন্তু প্রত্যক্ষ সংগ্রামে তাকে খুব কমই দেখা যায়। ধীরে ধীরে নিজের মানসিক ভারসাম্য হারাতে থাকে রঞ্জু। আর রঞ্জুই হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে গল্পের চিলেকোঠার সেপাই। মহাজনের আশ্রয়েই বেড়ে ওঠা হাড্ডি খিজির উপন্যাসের অন্যতম প্রণিধানযোগ্য চরিত্র। মহাজনের রিকশা গ্যারাজে কাজ করে সে। তার মা ও স্ত্রী দুইজনই ছিল মহাজনের ভোগ্য। মহাজনের প্রতি তীব্র ঘৃণা থেকেই সে যোগ দিয়েছিল আন্দোলনে। কিন্তু পরবর্তীতে তার নেতৃত্বে অন্য শ্রমজীবীরাও আন্দোলনে যোগ দেয়। আসলে তার মত অন্যরাও সমাজের উঁচু শ্রেণীর শাসনের উপর তীব্র ক্ষোভ থেকেই এই আন্দোলনে যোগ দেয়। উপন্যাসে খিজিরের চরিত্রটি তাই হয়ে উঠেছে সমাজের শ্রমিকশ্রেণীর আন্দোলনের প্রতীক। রঞ্জুর বামপন্থী বন্ধু আনোয়ার ঠিক সেসময় ঢাকা ছেড়ে চলে যায় গ্রামে। গ্রামের আন্দোলনকে সে নিজ চোখে দেখতে চায়। ডানপন্থী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য আনোয়ার নিজে সামন্তবাদ বিরোধী। সমাজের শ্রেণী বৈষম্য ভাঙতে সে বদ্ধপরিকর। কিন্তু গ্রামে সে দেখতে পায় পুঁজিবাদের এক ভিন্ন রূপ। তার বাবার বাল্যকালীন বন্ধু ও তার দূরসম্পর্কের আত্মীয় খয়বার গাজী তাদের গ্রামে এক ত্রাশের রাজত্ব কায়েম করেছেন। কিন্তু পরিবর্তনের বাতাস তখন শহর ছেড়ে গ্রামেও চলে এসেছে। চাষীরা এখন মহাজনের শোষণের বিরুদ্ধে দাড়ানো শুরু করেছে। আনোয়ার তাদের সাথে যোগ দেয়। সে তাদের এই সংগ্রামে সম্পৃক্ত হতে চায়। কিন্তু খয়বার গাজীর সাথে পেরে উঠা এতো সহজ নয়। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ১৯৬৯-এর সময় সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর অবস্থান সুনিপুণভাবে তুলে ধরেছেন তার এই উপন্যাসে। তাঁর নির্মোহ বিবরণীতে সে সময়কার বিভিন্ন গোষ্ঠীর পরিচয়, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাঠকের সামনে চলে এসেছে। তাঁর সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ, বর্ণনাময় লেখার ভঙ্গি পাঠককে সে সময়ে নিয়ে যাবে। যারা ১৯৬৯-এর উত্তাল দিনগুলোর বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে চান, তারা অবশ্যই ‘চিলেকোঠার সেপাই’ পড়ে দেখতে পারেন। ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের এত নির্মোহ ও নাটকীয় বিবরণ আমাদের সাহিত্য জগতে দ্বিতীয় পাওয়া যাবে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক চলবে বহুকাল।
Was this review helpful to you?
or
good
Was this review helpful to you?
or
বইঃচিলেকোঠার সেপাই লেখকঃ আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ধরণঃ চিরায়ত উপন্যাস প্রকাশনীঃ ইউনিভার্সিটি প্রেস মুদ্রিত মূল্যঃ৩৩০ চিলেকোঠার সেপাই' উপন্যাসটি আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের প্রথম উপন্যাস। উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৬ সালে। ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে লেখা এটি একটি রাজনৈতিক উপন্যাস। উপন্যাসের উল্লেখযোগ্য প্রধান চরিত্রগুলো হলো ওসমান, আনোয়ার, হাড্ডি খিজির, আলাউদ্দিন, চেংটু, করমালি, রহমতুল্লাহা, খয়বর গাজী, রানু, রঞ্জু। কাহিনী সংক্ষেপঃ- দেশভাগের পর ওসমান চলে আসে পূর্ব পাকিস্তানে, বাবা থেকে যায় ভারতে। মা মারা গেছে, বাবা বেঁচে আছে কিনা তাও জানে না ওসমান। ছোটখাটো একটা চাকরি করে একা চলে, থাকে রহমতুল্লাহার বাড়ির চিলেকোঠার ঘরে। ১৯৬৯ সাল উত্তাল চারিদিক। এই উত্তালতার ঢেউ লাগছে সর্বত্র, গ্রামে-শহরে। শ্রমজীবী জনসাধারণ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, তারা অধিকার চায়। হাড্ডি খিজির - যার পিতা নিয়েও উপন্যাসে রয়েছে অস্পষ্টতা, যার স্ত্রী যে কোনো সময় অন্যের স্ত্রী হয়ে যেতে পারে, যার ঘরের ঠিক নাই সে কিনা দেশের এই বৃহৎ আন্দোলনে রাস্তায় নেমেছে - হয়ে উঠেছে পাঠকের শ্রদ্ধার পাত্র। ওসমানের বন্ধু আনোয়ার বামপন্থি রাজনীতির সক্রিয় সদস্য, গ্রামে গিয়ে একের পর এক নতুন তথ্য জেনে নিজ শ্রেণী ও জ্ঞাতির উপরে ঘৃণা জন্মাচ্ছে তার। নিজ জ্ঞাতিদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েও সমাজের নিচু স্তরের মানুষগুলোর কাছে বিশ্বস্ত হতে পারছে না। ব্যর্থতার গ্লানিবোধ নিয়েও সে তাঁদের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। চেংটু, করমালি, আলিবক্সের সহযোদ্ধা হয়েও যেনো নেতৃত্ব দিচ্ছে সে। খয়বর গাজী, হোসেন মিয়া সহ আর যারা অন্যায়ভাবে শোষণ করতে ভালোবাসে তাঁদের বিচার হচ্ছে গণ-আদালতে। চেংটুর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, অন্যের বাড়িতে গবাদিপশুর ঘাস কাটার কাজ করে অথচ সে পর্যন্ত জানে 'এই অন্যায়ের একদিন অবসান হবে' একথা আনোয়ারের কাছে বলার সময় তার ঘুম-জড়ানো চোখেও আত্মবিশ্বাসের উজ্জল দ্যোতি ফুটে ওঠে। আলিবক্স ভাই তাকে বলেছে খুব শিগ্রই শয়তান খয়বর গাজীর বিচার হবে, কৃষকদের হালের গরু চুরি করে নিয়ে চরে মুক্তিপণ আদায় আর বেশিদিন করতে পারবে না। গণ-আন্দোলনের সময়ে গুলি খেয়ে মারা যাওয়া দুইতলার তালেবের বোন রানু, ওসমানের কাছে গণিত পড়তে আসে। রানুকে আর রানুর বেগুনী ঠোঁট জোড়া ওসমান খুব পছন্দ করে। রানুও ওসমানকে হয়তো ভালোই বাসে, পরিবারেরও সম্মতি আছে। ইচ্ছে করলেই তাদের সুন্দর একটা সংসার হতে পারতো কিন্তু কি কারণে সব ভেস্তে গেলো? চেংটু, করমালি, খয়বর গাজী, আনোয়ার, হাড্ডি খিজির এদেরই বা কি হলো? --- সব প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে দেরি না করে বইটি পড়ে ফেলুন। পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ছোটগল্প হোক আর উপন্যাসই হোক- পড়ার শুরুতে কাজী নজরুল ইসলামের 'কৈফিয়ত' কবিতার নিম্নোক্ত অংশটুকো মাথায় রেখে পড়তে হবে, "বন্ধু গো, বড় বিষ জ্বালা এই বুকে; দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই যাহা আসে কই মুখে। রক্ত ঝরাতে পারি না ত একা, তাই লিখে যাই এ রক্ত-লেখা..." কারণ, ওনার রচনার অনেক জায়গাতেই আমরা চরম পর্যায়ের অশ্লীলতার সম্মুখীন হবো। একজন নতুন পাঠকের কাছে বাহ্যিকভাবে এগুলো অশ্লীলতা বলে মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু চরিত্র এবং ঘটনার প্রয়োজনে কিংবা মনের ভাব সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করার জন্যই মূলত এই কথিত অশ্লীলতার অবতারণা। প্রত্যেকটা মানুষের দুইটা দিক থাকে একটা বাহ্যিক আরেকটা অভ্যন্তরীক। সহজ কথায় বলতে গেলে বলা যায়, ভালো মন্দ মিলিয়েই মানুষ। আমরা হয়তো প্রত্যেকের বাহ্যিক রূপকেই প্রত্যক্ষ করি কিন্তু এতে করে একজন মানুষকে পুরোপুরিভাবে জানা সম্ভব হয়না। তাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তার রচিত চরিত্রগুলো সূক্ষ্মতরভাবে ফুটিয়ে তুলতে সেই দুইটা দিকই আমাদের সামনে তুলে নিয়ে এসেছেন। আরেকটা বিষয় চোখে পড়ার মত, তা হচ্ছে উনি খুব সুচারুভাবে প্রতিটা চরিত্রের সাথে খাপসই ভাষার প্রয়োগ দেখিয়েছেন। আঞ্চলিক ভাষার উপরে প্রচণ্ড রকমের দখল না থাকলে এরকমটা করা সম্ভব হয় না। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে একইসাথে শহর এবং গ্রামের চিত্র ফুটিয়ে তুলতেও আশ্রয় নিয়েছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন ধাঁচের কিন্তু একই খাতে প্রবাহিত কয়েকটি চরিত্র। হাড্ডি খিজির আর চেংটু যেনো একই কাঁঠির দুই মাথা। দু'জনের মৃত্যুতেই পাঠকের মনে বেদনার সঞ্চার করবে। পরিশেষে একটা কথাই বলবো, অসাধারণ একটা বই। আশাকরি, বইটা পড়ে কিছুটা হলেও লাভবান হবেন।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_পাঠক_সমাগম_বুক_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_৫ মাসঃ আগস্ট সপ্তাহঃ ৪র্থ সপ্তাহ পর্বঃ ৫ বইঃ চিলেকোঠার সেপাই লেখকঃ আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ধরণঃ চিরায়ত উপন্যাস প্রকাশনীঃ ইউনিভার্সিটি প্রেস প্রচ্ছদঃ সমর মজুমদার মুদ্রিত মূল্যঃ ৩৩০ পৃষ্ঠাঃ ৩০৪ ★★★★★★★★★ 'চিলেকোঠার সেপাই' উপন্যাসটি আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের প্রথম উপন্যাস। উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৬ সালে। ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে লেখা এটি একটি রাজনৈতিক উপন্যাস। উপন্যাসের উল্লেখযোগ্য প্রধান চরিত্রগুলো হলো ওসমান, আনোয়ার, হাড্ডি খিজির, আলাউদ্দিন, চেংটু, করমালি, রহমতুল্লাহা, খয়বর গাজী, রানু, রঞ্জু। কাহিনী সংক্ষেপঃ- দেশভাগের পর ওসমান চলে আসে পূর্ব পাকিস্তানে, বাবা থেকে যায় ভারতে। মা মারা গেছে, বাবা বেঁচে আছে কিনা তাও জানে না ওসমান। ছোটখাটো একটা চাকরি করে একা চলে, থাকে রহমতুল্লাহার বাড়ির চিলেকোঠার ঘরে। ১৯৬৯ সাল উত্তাল চারিদিক। এই উত্তালতার ঢেউ লাগছে সর্বত্র, গ্রামে-শহরে। শ্রমজীবী জনসাধারণ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, তারা অধিকার চায়। হাড্ডি খিজির - যার পিতা নিয়েও উপন্যাসে রয়েছে অস্পষ্টতা, যার স্ত্রী যে কোনো সময় অন্যের স্ত্রী হয়ে যেতে পারে, যার ঘরের ঠিক নাই সে কিনা দেশের এই বৃহৎ আন্দোলনে রাস্তায় নেমেছে - হয়ে উঠেছে পাঠকের শ্রদ্ধার পাত্র। ওসমানের বন্ধু আনোয়ার বামপন্থি রাজনীতির সক্রিয় সদস্য, গ্রামে গিয়ে একের পর এক নতুন তথ্য জেনে নিজ শ্রেণী ও জ্ঞাতির উপরে ঘৃণা জন্মাচ্ছে তার। নিজ জ্ঞাতিদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েও সমাজের নিচু স্তরের মানুষগুলোর কাছে বিশ্বস্ত হতে পারছে না। ব্যর্থতার গ্লানিবোধ নিয়েও সে তাঁদের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। চেংটু, করমালি, আলিবক্সের সহযোদ্ধা হয়েও যেনো নেতৃত্ব দিচ্ছে সে। খয়বর গাজী, হোসেন মিয়া সহ আর যারা অন্যায়ভাবে শোষণ করতে ভালোবাসে তাঁদের বিচার হচ্ছে গণ-আদালতে। চেংটুর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, অন্যের বাড়িতে গবাদিপশুর ঘাস কাটার কাজ করে অথচ সে পর্যন্ত জানে 'এই অন্যায়ের একদিন অবসান হবে' একথা আনোয়ারের কাছে বলার সময় তার ঘুম-জড়ানো চোখেও আত্মবিশ্বাসের উজ্জল দ্যোতি ফুটে ওঠে। আলিবক্স ভাই তাকে বলেছে খুব শিগ্রই শয়তান খয়বর গাজীর বিচার হবে, কৃষকদের হালের গরু চুরি করে নিয়ে চরে মুক্তিপণ আদায় আর বেশিদিন করতে পারবে না। গণ-আন্দোলনের সময়ে গুলি খেয়ে মারা যাওয়া দুইতলার তালেবের বোন রানু, ওসমানের কাছে গণিত পড়তে আসে। রানুকে আর রানুর বেগুনী ঠোঁট জোড়া ওসমান খুব পছন্দ করে। রানুও ওসমানকে হয়তো ভালোই বাসে, পরিবারেরও সম্মতি আছে। ইচ্ছে করলেই তাদের সুন্দর একটা সংসার হতে পারতো কিন্তু কি কারণে সব ভেস্তে গেলো? চেংটু, করমালি, খয়বর গাজী, আনোয়ার, হাড্ডি খিজির এদেরই বা কি হলো? --- সব প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে দেরি না করে বইটি পড়ে ফেলুন। পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ছোটগল্প হোক আর উপন্যাসই হোক- পড়ার শুরুতে কাজী নজরুল ইসলামের 'কৈফিয়ত' কবিতার নিম্নোক্ত অংশটুকো মাথায় রেখে পড়তে হবে, "বন্ধু গো, বড় বিষ জ্বালা এই বুকে; দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই যাহা আসে কই মুখে। রক্ত ঝরাতে পারি না ত একা, তাই লিখে যাই এ রক্ত-লেখা..." কারণ, ওনার রচনার অনেক জায়গাতেই আমরা চরম পর্যায়ের অশ্লীলতার সম্মুখীন হবো। একজন নতুন পাঠকের কাছে বাহ্যিকভাবে এগুলো অশ্লীলতা বলে মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু চরিত্র এবং ঘটনার প্রয়োজনে কিংবা মনের ভাব সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করার জন্যই মূলত এই কথিত অশ্লীলতার অবতারণা। প্রত্যেকটা মানুষের দুইটা দিক থাকে একটা বাহ্যিক আরেকটা অভ্যন্তরীক। সহজ কথায় বলতে গেলে বলা যায়, ভালো মন্দ মিলিয়েই মানুষ। আমরা হয়তো প্রত্যেকের বাহ্যিক রূপকেই প্রত্যক্ষ করি কিন্তু এতে করে একজন মানুষকে পুরোপুরিভাবে জানা সম্ভব হয়না। তাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তার রচিত চরিত্রগুলো সূক্ষ্মতরভাবে ফুটিয়ে তুলতে সেই দুইটা দিকই আমাদের সামনে তুলে নিয়ে এসেছেন। আরেকটা বিষয় চোখে পড়ার মত, তা হচ্ছে উনি খুব সুচারুভাবে প্রতিটা চরিত্রের সাথে খাপসই ভাষার প্রয়োগ দেখিয়েছেন। আঞ্চলিক ভাষার উপরে প্রচণ্ড রকমের দখল না থাকলে এরকমটা করা সম্ভব হয় না। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে একইসাথে শহর এবং গ্রামের চিত্র ফুটিয়ে তুলতেও আশ্রয় নিয়েছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন ধাঁচের কিন্তু একই খাতে প্রবাহিত কয়েকটি চরিত্র। হাড্ডি খিজির আর চেংটু যেনো একই কাঁঠির দুই মাথা। দু'জনের মৃত্যুতেই পাঠকের মনে বেদনার সঞ্চার করবে। পরিশেষে একটা কথাই বলবো, অসাধারণ একটা বই। আশাকরি, বইটা পড়ে কিছুটা হলেও লাভবান হবেন। -আহমেদ সবুজ
Was this review helpful to you?
or
"কয়েকটা বই পোড়ালেই আইয়ুব খান মরে না, আইয়ুব খান গেলে আরেক আইয়ুব খান আসবে। ওয়েস্ট পাকিস্তানের সব আইয়ুব খানকে শেষ করলে বাঙালীদের মধ্যে এক নতুন আইয়ুব খান এমার্জ করবে"। ১৯৬৯। স্বাধীনতাপূর্ব পূর্ব বাঙলা। স্বাধীনতার লোভে মাতাল মানুষ। কি এক অত্যুচ্চ স্পর্ধায় জেগে উঠলো বাঙালী জাতি। ঢাকা শহর যেন আগ্নেয়গিরির এক উত্তপ্ত জ্বালামুখ। গোটা শহর জ্বলছে দাবানলে। বুড়িগঙ্গা যেন নিজের গতিপথ বদলে শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে আরো বেশী করে উস্কে দেয় সেই দাবানলের আগুনকে। সর্বত্রই মানুষ। নিজেদের নেতার মুক্তির লক্ষ্যে রাস্তায় নামে আপামরজনসাধারণ। রায়ট-কারফ্যু ভেঙ্গে হেটে যায় স্বাধীনতার লোভে। চারিদিকে থিকথিক করে মানুষ। ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে উঠে আসে পামগাছের সাথে ফাসি দেয়া সেপাইরা, লালবাগের মানুষরা। এত মানুষ কোথা থেকে এলো..? ঢাকা শহরে কি তবে এত মানুষের আবাদ...? একনাগাড়ে সবাই হেটে চলেছে এক অবিচল লক্ষ্যে আর তা হলো - মুক্তি। কোন কিছুই তাদের থামাতে পারে না। শাসক গোষ্ঠীর সৈন্যদের রক্তচক্ষু কিংবা কারফ্যু অথবা বুলেট কিছু আটকে রাখতে পারে না এই মানুষগুলো। মুক্তির লক্ষ্যে আর স্বাধীনতার লোভে এই মানুষগুলো এগিয়ে যায়। "নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে কেবল আপন ভাই বাদ দিয়ে যাবতীয় তরুণের সঙ্গে একজন তরুণীর যৌন-সঙ্গম ছাড়া আর কোনো সম্পর্কের কথা চিন্তা করা হয় না। যৌন-সঙ্গমকে নৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক অনুমোদন দেওয়ার জন্য বিবাহ এবং কোন কোন ক্ষেত্রে প্রাক বিবাহ প্রেমের মহড়া চলে। বিয়ে করলেই যেমন ছেলেমেয়ে পয়দা করাটা অপরিহার্য, তেমনি প্রেম মানেই বিবাহ। আবার ছেলেমেয়েদের মেলামেশা মানেই প্রেম। প্রেম, বিবাহ ও যৌন-সঙ্গম ছাড়া এরা কি আর কিছুই ভাবতে পারে না"...? কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস এর প্রথম উপন্যাস 'চিলেকোঠার সেপাই' যা ১৯৮০ সাল থেকে পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হলেও ১৯৮৬ সালে তা গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। একজন নার্সিসাস ওসমান গণি, একজন এক-নেতায় বিশ্বাসী আলাউদ্দিন মিয়া, একজন রাজনীতি বিশ্লেষক বামপন্থি আনোয়ার, একজন ধর্মের দোহাই দেয়া রক্তচোষা খয়বার গাজী বা রহমতউল্লাহ, একজন ভোটের রাইট প্রার্থী আলতাফ, একজন গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বিশ্বাসী আলীবক্স, একজন গরীব প্রতিবাদি চাষাভুষা চেংটু বা করমালি আর একজন জারজ বিপ্লবী হাড্ডি খিজিরের গল্প নয় বরংচ এদের মধ্যে দিয়ে আমরা খুঁজে পাই স্বাধীনতাপূর্ব উনসত্তর এর গণঅভ্যুত্থান এর অন্যতম প্রধান শক্তি সেই শ্রমজীবী জনসাধারণ যারা পরবর্তীতে প্রতারিত ও বঞ্চিত হয়। বামপন্থীদের দোদুল্যমানতা আর ভাঙনের ফলে জাতীয় মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে যথাযথভাবে ধারণ করতে না পারার ফলে অজস্র রক্তপাতের পরও তারা রাজনীতির ময়দান থেকে ছিটকে পরে। এই উপন্যাসের উপজীব্য সেই সময়টুকুই। "ক্ষমতা সবসময়ই একটা নির্দিষ্ট শ্রেণীর হাতে থাকে আর তলানীতে যারা থাকে তারা আজীবন তলানীতেই পড়ে থাকে। দাবী আদায়ে তাদের জীবন চলে যায় কিন্তু তারা তলানীর উচ্ছিষ্ট অংশ হিসেবেই পরিগণিত হয়। আর ক্ষমতাবানরা শুধুমাত্র দল পরিবর্তন করে কিন্তু তাদের ক্ষমতা, সামাজিক/রাজনৈতিক মর্যাদা আর অর্থনৈতিক প্রভাব একইরকম থাকে"। কাহিনীচিত্র : ১৯৬৯ সালের পূর্ব বাঙলা। মুক্তিকামী জনগণের মুক্তির অবিচল লক্ষ্যে বিস্ফারিত ঢাকা শহর। শুধু ঢাকা নয় সাথে সাথে বিস্ফারিত হয় শহর, বন্দর, গঞ্জ, গ্রাম এমনকি যমুনার দুর্গম চর এলাকা। ক্ষোভ আর বিদ্রোহে ফেটে পড়ে আপামর জনসাধারণ। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত রাজপথ। সেই উত্তপ্ত ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকার মধ্যে শোষক পার্টির লোক রহমতউল্লাহ'র বাসা। ছাদের চিলেকোঠোয় থাকে ওসমান গণি। বাড়ির পাশেই রহমতউল্লাহর রিক্সার গ্যারেজ। যা দেখাশুনা করে হাড্ডি খিজির। চুরির অপবাদে হাড্ডি খিজিরকে রহমতউল্লাহ বের করে দিলে তাকে আশ্রয় দেয় রহমতউল্লাহ'র ভাগ্নে এক নেতায় বিশ্বাসী আলাউদ্দিন মিয়া যে তার বেশীরভাগ সময় কাটায় আইয়ুব খান মোনেম শাহীর বিরুদ্ধে মিটিং মিছিল করে। আলাউদ্দিন মিয়ার রিক্সার গ্যারেজে জায়গা হয় হাড্ডি খিজিরের। হাড্ডি খিজিরের বউ কাজ করে রহমতউল্লাহ মাহাজনের বাড়ি আর হাড্ডি খিজির থাকেও মাহাজনের বস্তিতে। হাড্ডি খিজির একটু আলাদা ধরনের রুক্ষ মানুষ। রাজপথের শয়ে শয়ে মানুষের সাথে মিছিল করে স্লোগান দিতে তার ভালো লাগে। সময় আর সুযোগ পেলেই তাই চলে যায় মিটিং এ মিছিলে। এক ভরা জনসভায় ক্ষমতার অপব্যবহার এর প্রসঙ্গ উঠলে হাড্ডি খিজির নির্ভয়ে মাহাজনের বিরুদ্ধে কথা বলে। মাহাজন হাড্ডি খিজিরকে নিজের শত্রু ভাবা শুরু করে। ওসমান অফিসের ফাকে যে সময়টুকু পায় তা আড্ডাতেই কাটায় কখনো হোটেল আমজাদিয়ায়, কখনো ইসলামীয়ায় বা কখনো নিজের চিলেকোঠায়। আলতাফ, শওকত, আনোয়ার এরা ওসমানের ভালো বন্ধু। এর মধ্যে আনোয়ারের সাথে কিছুটা ঘনিষ্টতা থাকায় আনোয়ার ওসমানকে তার গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু আত্মপ্রেমী ওসমান ভাবে যদি সে গ্রামে চলে যায় তাহলে এই শহরের উত্তপ্ত মিছিলে নিজেকে আর খুঁজে পাবে না হয়তোবা কোনদিন বুলেটের আঘাতে শহীদ হয়ে মিছিলের সমুক্ষভাগে থাকবে। এসব ভাবনায় আনোয়ারের আমন্ত্রণ নাকোচ করে। আনোয়ার একাই যায় তার গ্রামে। কিন্তু বামপন্থী আনোয়ার গ্রামে যেয়ে শাসক গোষ্ঠীর এক অন্যরূপ দেখে। গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি খয়বার গাজী তার নিজের লোকবল দিয়ে গ্রামের চাষাভুষার গরু নিয়ে বাথানে রাখে আর নির্দিষ্ট জরিমানা দিয়ে নিজের গরু ছাড়িয়ে আনতে হয় চাষাভুষাদের। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে বা নিয়মের হেরফের হলে খয়বার গাজীর লোকজন তাকে মেরে ফেলে। সুবিধা নেয় আফসার গাজী আর জালাল উদ্দিন মাস্টাররা। আলীবক্সের বুদ্ধি আর চাতুর্যতায়, চ্যাংটুর সাহসের সাথে করমালির দৃঢ়তা আর গ্রামের সকল চাষাভুষা এক হয়ে হামলা করে খয়বার গাজীর বাথানে পুড়িয়ে মারে তার ডান হাত হোসেন আলীকে। গ্রামে এসে ঘেরাও করে খয়বার গাজীর বাড়ি। জ্বালিয়ে দেয় বৈঠকখানা। গণ আদালতে বিচারে খয়বার গাজীর মৃত্যুদণ্ড হয়। আনোয়ার এসবের সাথে কিভাবে যেন নিজেকে মিলিয়ে ফেলে কিন্তু কোথাউ একটা ফাকা রয়েই যায় যার কারনে করমালি হোক আর নাদু প্রামাণিক বা চেংটু অথবা জালালউদ্দিন কেউ আনোয়ার পুরোপুরি নিজেদের লোক ভাবতে পারে না। ওসমানদের বাসার দোতলায় থাকে মকবুল হোসেন। কিছুদিন আগেই বড় ছেলেটা মিছিলে শহীদ হয়েছে সেই শোকে এখনো কাতর তার পরিবার। মকবুল হোসেনের মেয়ে রানু আর ছেলে রঞ্জু প্রায় প্রায়ই আসে ওসমানের কাছে পড়ালেখার জন্য। ওসমানেরও ডাকনা রঞ্জু তাই রঞ্জুকে দেখে অনেক কিছুই ভাবতে শুরু করে সে। আর উঠতি যুবতী রানু তার মনে প্রেমের বাতাস দেয়। রানুকে ভালো লাগে ওসমানের। মিছিল মিটিং এ ওসমানের উপস্থিতি আগের থেকে বেড়ে যায়। হাড্ডি খিজির মাঝে মাঝে রাতে আসে ওসমানের চিলেকোঠায় রাত কাটাতে। এসেই শুনায় সারাদিনের মিটিং মিছিলের খবর। অনেক ভাবনা জড়ো হতে হতে একদিন ওসমান রঞ্জুকে চুম্বনে রক্তাক্ত করে; না বিকৃত যৌনতার বশে নয়, আত্মপ্রেমে পরাজিত হয়ে। ওসমান একজন নার্সিসাস। ধীরে ধীরে ওসমানের মাইনর সিজোফ্রেনিয়া টা বৃহৎ আকার ধারণ করে। কাছের বন্ধু আনোয়ারকে সে চিনতে পারে না। রঞ্জুকে ছাদ থেকে ফেলে দেয়ার উদ্যোগ নেয় সে। পরিচিত সবার কাছে ওসমান এক বদ্ধ পাগলে পরিণত হয়। আনোয়ার তাকে তার নিজের চিলেকোঠাতেই বন্ধী করে রাখে। কিন্তু ওসমান চায় মুক্তি। একদল ব্যস্ত নিজেকে সবকিছুর ভীড়ে খুঁজে পেতে, একদল ব্যস্ত সুবিধা ভোগ করতে, একদল ব্যস্ত সুযোগের সদ্ব্যবহার করার জন্য, একদল ব্যস্ত আন্দোলন চালিয়ে নিয়ে যেতে, আরেকদল ব্যস্ত আন্দোলনটা যথাযথভাবে হচ্ছে না এই তত্ত্ব বিশ্লেষণ করতে, একদল ব্যস্ত এক নেতায় বিশ্বাস স্থাপনে। এরকম হাজার হাজার দলের ভীড়ে ওসমান নিজেকে হারিয়ে ফেলে। ওসমানের বিভ্রমের সঠিক উত্তর কেউ দিতে পারে না। মিছিলে মৃত ব্যক্তিদের চলাচল ওসমানের চোখে পড়ে, বুড়িগঙ্গার পানিতে আগুনের উৎসাহ বাড়ে তাও ওসমানের চোখে পড়ে। এই বিচ্ছিন্ন অবস্থা থেকে ওসমানকে মুক্তি দিবে কে...? এক নেতায় বিশ্বাসী আলাউদ্দিন..? ভোটের রাইট প্রার্থী আলতাফ..? বামপন্থী আনোয়ার..? না এরা কেউ ওসমানকে মুক্তি দিতে পারে না। ওসমানকে মুক্ত হওয়ার প্ররোচনা দেয় হাড্ডি খিজির যে নিজের বাপের নাম জানে না, যে বড়ো হয়েছে রাস্তায় রাস্তায়, যার মা-বউ দুজনেই মাহাজনের ভোগ্যা। যে মিছিলের অংশ হওয়াতে কোন এক রাতের আধারে কারফ্যু ভাঙ্গার অপরাধে প্রাণদন্ডে দন্ডিত হয় মিলিটারির বুলেটের আঘাতে। তবুও ওসমানের বিভ্রম কাটে না বরং আরো বাড়ে। ওসমানের বিভ্রম বাড়ে গাব গাছের পাশে ধান কাটা জমিতে নামবার ঢালে চ্যাংটুর লাশে। বিভ্রম বাড়ে আনোয়ারদের বামপন্থী ভাঙ্গাগড়ার মধ্যে, বিভ্রম বাড়ে ধর্মের দোহাই দিয়ে টিকে থাকা রহমতউল্লাহ কিংবা খয়বার গাজীর কান্ডকলাপে, বিভ্রম বাড়ে সুবিধাবাদী আফসার গাজী, জালালউদ্দিন মাস্টার বা আলাউদ্দিন মিয়ার তীক্ষ্ণ হাসিতে। ওসমানদের বিভ্রম ঠেকাতে কেউ পারে না। কেউ কেউ ঘুমিয়ে পড়ে আনোয়ারের মতো স্বপ্ন দেখে অজ্ঞাত এক নেতার জ্বালাময়ী ভাষণের। কিন্তু, ওসমানরা তাদের নিজের বিভ্রম ঠেকাতে বাস্তবতাকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে ইলেক্ট্রিক তারে ঝুলতে থাকা হাড্ডি খিজিরদের খুঁজতে যেয়ে শ্যামবাজার হয়ে বুড়িগঙ্গা, ইসলামপুর, পাকুড়তলা, মিটফোর্ড, ইমামগঞ্জ পেড়িয়ে চকবাজার, বড়ো কাটারা পেড়িয়ে সোয়ারী ঘাট আবার ভিক্টোরিয়া পার্ক হয়ে জনসন রোড হয়ে নবাবপুর ধরে গুলিস্তান কিংবা ভিক্টোরিয়া পার্কের উত্তরে পানির ট্যাংকির সামনে দিয়ে কলতাবাজার হয়ে ধোলাইখাল যাওয়ার পথ খুঁজতে খুঁজতে দিশেহারা হয়ে মানচিত্রই হারিয়ে ফেলে ওসমানদের অস্তিত্ব। এতসব বিভ্রমে উত্তাল হয়ে নিহত খিজিরের আহবানে সাড়া দিয়ে ঘুমন্ত আনোয়ারকে রেখে বেড়িয়ে আসে ওসমান কারফ্যুকে অগ্রাহ্য করে। সামনে তার অজস্র রাস্তা যেদিকেই পা বাড়ায় সেদিকেই পূর্ব বাঙলা। লেখকপ্রসঙ্গ : আখতারুজ্জামান মোহাম্মদ ইলিয়াস ডাক নাম মঞ্জু। কর্মজীবনের শুরুটা জগন্নাথ কলেজে প্রভাষক হয়ে। পরবর্তীতে অন্যান্য কলেজ ও ভার্সিটির প্রভাষক ছাড়াও বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। লেখালেখির দিক থেকে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস একজন স্বল্পপ্রজ লেখক। দুটি উপন্যাস, পাঁচটি গল্পগ্রন্থ আর একটি প্রবন্ধসংকলন। বাস্তবতার নিপুণ চিত্র, অন্তর্দৃষ্টি জ্ঞান, রাজনৈতিক ও ইতিহাস বিশ্লেষণ, সূক্ষ্ম বিচারবিশ্লেষণ এইগুলাই মূলত তার লেখার উপজীব্য বিষয়। বাংলা একাডেমী পুরষ্কার আর মরণোত্তর একুশে পদক বাদেও আরো পাঁচটি পুরষ্কার তার স্বল্পপ্রজ লেখালেখির এই ক্যারিয়ারে। পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী আখতারুজ্জামান ইলিয়াস সম্পর্কে বলেছিলেন, "ইলিয়াসের নখের যোগ্য কিছু যদি লিখতে পারতাম তাহলে নিজেকে ধন্য মনে করতাম"। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস এর লেখাতে সবচাইতে বেশী যা বলার মতো তা হলো গভীর অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন লেখা। একেকটি চরিত্রের বাস্তবতা, পরাবাস্তবতা, ঘটনার সাথে চরিত্রের বাস্তবতা, কল্পনা, চেতনা অন্তঃচেতনার মিশ্রণ তিনি খুব ভালোভাবেই ফুটিয়ে তুলতে জানেন। সাহিত্য রচনার মানে যেমন শুধুমাত্র ভদ্র আর শালীন ভাষায় রচিত তা নয় আবার তেমনি অকথ্য আর অশালীন ভাষায় রচিতও না। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তার লেখনীতে একেকটা চরিত্রের ভিতরে এতোটাই মজেছেন যে তার মুখের গালিবুলিও ঠিক একইরকম রেখেছেন। নিম্নশ্রেণীর মানুষজনের চোখ দিয়ে দুনিয়াটাকে দেখলেই হয় না তার গভীরে অন্তর্দৃষ্টি দিতে হয়। বর্ণনায় নিদারুণ করুণ জীবন আর ভাষাব্যবহারে ভদ্র ভাষা তাতে কি আর তার দৃষ্টিভঙ্গিতে দুনিয়াতে অবলোকন করা যায়..? নর্দমার পাশে ঘুমিয়ে থাকা লোকটার গা থেকে সুগন্ধী আসবে না আসবে নর্দমারই গন্ধ। এসবের প্রতি উনার দারুণ আকর্ষণ যার কারনবশত লুকিয়ে থাকা অনেক কঠিন সত্যগুলো তার লেখায় ফুটে উঠে। এতে করে এক বিশেষ শ্রেণীর ভদ্র সমাজ তার লেখা পড়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করেও করতে পারে। তবে বাংলা সাহিত্যের জন্য চিলেকোঠার সেপাই যে এক অনবদ্য সৃষ্টি তা না পড়লে বুঝা যাবে না।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইয়ের নাম- চিলেকোঠার সেপাই জনরা-উপন্যাস ঔপন্যাসিক-আখতারুজ্জামান ইলিয়াস পৃষ্ঠা-৩০২ মূল্য-৩৩০ বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে বিরলপ্রজ ঔপন্যাসিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। তাঁর "চিলেকোঠার সেপাই" বাংলা উপন্যাস জগতে বহুল পঠিত উপন্যাস। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসের ঘটনাপ্রবাহ মূলত দুটি রেখায় বিন্যস্ত হয়েছে। ১.ঊনসত্তরের গনঅভ্যূত্থান কালে উত্তল রাজনৈতিক শহর ঢাকা। ২.শ্রেনী-সংঘাত গ্রামীন জনপদের আশ্রয়ে নির্মিত হয়েছে উপন্যাসের বহির্রাবরন। চরিত্র ওসমানের আত্মসন্ধান, আত্মরক্তক্ষরণ ও আত্ম-উজ্জীবনের চেতনাস্রোত মূলত "চিলেকোটার সেপাই" এর মৌল জীবনার্থ। দুটি ঘটনার সমান্তরালে এবং সংঘর্ষে নির্মিত হয়েছে এই উপন্যাসের জীবনবৃত্ত। ঊনসত্তরের অভ্যূত্থানকালীন সময়ের চিত্র-পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক বৈষম্য অনেক। সোনার দাম পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে কম। কাগজ তৈরি হয় পূর্ব পাকিস্তানে কিন্তু সেই কাগজ কিনবার বেলায় দিগুন দাম দিতে হয় তাদেরেই। পূর্ব পাকিস্তানের কৃষকেরা শরীরের রক্ত পানি করে পাট ফালায়। আর এই পাট বেঁচে ফেঁপে উঠে লাহোর করাচি ইসলামাবাদ। কোন প্রশাসনিক কাজে উপরের দিকে একটাও বাঙালি অফিসার নেই। আইয়ুব শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালির সংঘবদ্ধ আন্দোলন শুরু হয়। মিটিং-মিছিল, শ্লোগান, হরতালে উত্তাল ঢাকা শহর। ইতিহাস থেকে এর চিত্র নিয়ে ঔপন্যাসিক উপন্যাসে প্রতিস্থাপন করেছেন। এই উপন্যাসের পটভূমি ঊনসত্তরের উত্তাল সমাজ রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ। মধ্যবিত্ত শ্রেনীর ব্যক্তি সর্বস্ব, আত্মপ্রেম ও চেতনা প্রবল গণআন্দোলনের টানে কিভাবে চিলেকোঠার বিচ্ছিন্ন জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে এই উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র ওসমান গণি তার দৃষ্টান্ত। কেরানি ওসমান পুরাতন ঢাকার এক চিলেকোঠার ভাড়াটে বাসিন্দা। তার পরিবারের সবাই ভারতে। গণঅভ্যূত্থানের প্রথম দিকে দর্শকের মতো তার গতিবিধি। সে রাজনীতি সচেতন হলেও আত্মমগ্ন। একসময় সংগ্রাম মিছিল, রক্তপাত, পুলিশের গুলিতে মৃত্যুতে শিহরিত হয়ে প্রবল আকর্ষণে মনোজগত থেকে বাস্তবতায় ফিরে আসে। একসময় রাজনীতি তার কাছে মনে হতো বুদ্ধি বিলাস। কিন্তু এক অস্ফুস্ট চেতনাবীজ থেকে তার ভেতরে জন্ম দেয় সংগ্রামী ভাবনা। উপন্যাসের জমিনে রহমত উল্লাহ ও খয়বর গাজী পাকিস্তানি শাসক চক্রের সেবায় অনুগত দাস। তারা বর্গাচাষীদের নির্মমভাবে শোষণ করে। তার নির্দেশে গ্রামাঞ্চলে বর্গাচাষীদের গরু চুরি করে জমা করা হয় চরের এক গোপন আস্তানায়। গ্রামের মানুষ একসময় আলীবক্সের নেতৃত্বে পুঁড়িয়ে দেয় খয়বর গাজীর ট্যান্ডল হোসেন আলীর আস্তানা। বিপ্লবী কর্মী আলী বক্সের শিষ্য হলো চেংটু। গ্রামের মানুষ সবাই একত্র হয়ে খয়বর গাজীকে শাস্তি দেওয়ার জন্য বৈরাগীর ভিটা পরিস্কার করে।খয়বর গাজী নামাজ পড়ার জন্য সময় চায়। একসময় আওয়ামীলীগ এর মিছিল এসে সব এলো মেলো করে দেয়। খয়বর গাজী পালিয়ে এক নেতার আশ্রয়ে চলে যায়। শহুরে রাজনীতির হাওয়া লেগে পাল্টে যায় গ্রামীণ আবহ। ব্যক্তিগত মতামতঃ ঊনসত্তরের প্রবল গণআন্দোলনের টানে জাতীয় মুক্তির সম্ভাবনার পথ উন্মুক্ত হলেও সাধারণ মানুষের জীবনের গুনগত কোন রূপ পরিবর্তন হয় না। ঔপন্যাসিক নিরাসক্ত দৃষ্টিতে রাজনীতির এই অন্তঃস্বরূপকে প্রতক্ষ্য করেন। উপন্যাসের বিষয় মূলত মধ্যবিত্তের আত্মবিশ্লেষণ ও আত্মরূপান্তেরর স্বরূপ অন্বষেণের প্রেরণাই মুখ্য। আশির দশকে সেনাতন্ত্র আর স্বৈরতন্ত্র বিনাশী কার্যক্রম এবং মধ্যবিত্তের দোদুল্যমান প্রতিবাদ বা সংগ্রামের অভিজ্ঞতা ঔপন্যাসিককে এই সত্য অন্বেষনে উদ্বুদ্ধ করেছে। পুরো ঔপন্যাসে একমাত্র অস্তিত্ববাদী চরিত্র ওসমান। যে শেষ পর্যন্ত খুঁজে ফিরে স্বাধীনতা আর মুক্তি। অনুভূতি লোপ পেয়ে যায় তখন। পছন্দের একটি উপন্যাস। ১৯৬৯ কে উপজীব্য করে লেখা ভালো লাগার এই উপন্যাসে ঔপন্যাসিকের শব্দ বিন্যাস এবং চরিত্র গঠন যে কোন পাঠককে বিমোহিত করবে । রাজনীতিকে পটভুমি করে অসম্ভব চমৎকার একটি উপন্যাস। উপন্যাসে অনুভব করা যায় শহর আর গ্রামের মানুষের সংঘাতময় অবস্থা। https://www.rokomari.com/book/80178/চিলেকোঠার-সেপাই(প্রথম-উপন্যাস)
Was this review helpful to you?
or
বইটি হাতে পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ ভালো একটি বই
Was this review helpful to you?
or
Delivered perfectly
Was this review helpful to you?
or
উপন্যাসের প্লটটা চমৎকার। গল্পটাও দারুণ। তবু মনে হয়েছে লেখক শব্দের অনেক অপচয় করেছেন। ৩০৪ পৃষ্ঠার গল্পটি চাইলেই ১০০-১৫০ পৃষ্ঠার মধ্যেই আরো চমৎকার করে ফুটিয়ে তোলা যেত।
Was this review helpful to you?
or
❣️
Was this review helpful to you?
or
বইটি পড়ে আমরা ১৯৬৯ সালের রাজনৈতিক ও সামাজিক চিত্রের কিছু পরিচয় পাই।আমরা জানতে পারি পাকিস্তানিদের কাছ হতে কিভাবে ক্ষমতার পালাবদল হয়ে বাংলাদেশের জন্মের সূচনস হয়েছে কিন্তু এই অঞ্চলের ক্ষমতাহীন সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
Was this review helpful to you?
or
বাংলা সাহিত্যের অমর সৃষ্টি। আমি মনে করি আখতারুজ্জামান স্যারের এ বই “চিলেকোঠার সেপাই” আজীবন পৃথিবীতে তার স্বীয়শক্তি বজায় রাখবে।
Was this review helpful to you?
or
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস এর লেখা চিলেকোঠার সেপাই বইটি ১৯৭১ সালের পুর্ব সময়কার অখ্যানভাগে রচতি। প্রচুর তথ্য বহুল বইটি পাঠকের মনে সেই সময়কার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের বাস্তব চিত্র তুলে ধরবে।
Was this review helpful to you?
or
বইটিতে অনেক সুন্দর সুন্দর কিছু কথা আছে। যা বইটিতে অনেক পূরনো দিনের কথা উল্লেখ করা হয়ছে। বইটি পড়লে আমরা ১৬৯ সালের অনেক কিছু জানতে পারব আমি মনে করি।
Was this review helpful to you?
or
'চিলেকোঠার সেপাই' আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস।ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে এটি রচিত।বাড়ির চিলেকোঠায় বাস করা একজন সাধারণ মানুষের স্বাধীনতার লক্ষ্যে গড়ে ওঠা বৃহত্তর আন্দোলনের জোয়ারে মিলে যাওয়ার কাহিনী এটি।ওসমান,হাড্ডি খিজির,আনোয়ার,খয়বার গাজী,চেংটু,করমালি-ইত্যাদি চরিত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন কাহিনী উপস্থাপন করে লেখক মূলত ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানকে রূপকভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
Was this review helpful to you?
or
ওহ খোদা!!! আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। মাত্র দুটি উপন্যাস আর ২৮টি ছোটগল্প দিয়েই নিজের পোক্ত অবস্থান করে নিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথের মতো বাঙলা সাহিত্যের মহারথীদের পাশে। “চিলেকোঠার সেপাই” এক অসাধারণ সৃষ্টি। এটা থৃলার বই নয়, কিন্তু কোন অংশে কমও নয়। বাংলাদেশের গণজাগরণে অংশ নিয়েছিলো শহর-গ্রামের আপামর জনতা। তাদের মধ্যে ছিল খেটে খাওয়া মানুষ, বর্গাচাষী কৃষক, রিকশাচালক সহ আরও অনেক। কিন্তু যখন লক্ষ্য অর্জিত হল তখন সেই মনেপ্রাণে বাঙালীগুলিই পিছিয়ে পরে। তারা যে এদেশে থাকে তাদেরকে ভুলে যাওয়া হয়। রিকশাচালকও প্রাণ দিয়েছে, কিন্তু নতুন দিনের সাথে নেতারা ভুলে যায়। যারা পাকিস্তানের আইয়ুব খানের দালাল হয়ে শহর থেকে গ্রাম, জ্বালিয়ে মারলো মানুষ। দিনশেষে তারাই এসে আবার ভিড়লো নতুন পালতোলা নৌকায়। প্রতারক আর আওয়ামী রাজনীতি মিশে একাকার হয়ে যায়। বইটা পড়ে অনেক কথা মনে হয়েছে। তবে একটা কথা মনে খুব করে বিঁধেছে, রহমতুল্লাহ, খয়বার গাজীরা এখনো এদেশে দাপিয়ে বেড়ায়। হয়তো আইয়ুব খানের দালালের বেশে নয়, কিন্তু ভোল পালটে তাদের অপকর্ম যুগ যুগ ধরে ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণকে বশ মানানোর অস্ত্র তাদের হাতে একটাই, “ধর্ম”। খয়বার গাজী কিংবা রহমতুল্লারা বারবার পার পেয়ে যায় ধর্মের দোহাই দিয়ে, কিন্তু, খিজির, জুম্মনের মা, চেংটু, করমালি এঁদের নিপীড়নের কোনো বিচার হয়না। হবেও না। বাঙলাকে চেনার জন্য, ইতিহাস জানার জন্য, বাঙলীকে ভালো করে বোঝার জন্যই পড়া উচিৎ এ বই।
Was this review helpful to you?
or
এটা আমি আমার এক বিশেষ বন্ধুকে গিফট করেছি৷ প্রথম পেইজ পড়ে তার বাজে লাগলেও আস্তে আস্তে এটার প্রেমে পড়ে যায়৷ বইটা বেশ ভালো৷ কাহিনিটা ভালো লেগেছে
Was this review helpful to you?
or
প্রথমদিকে বোরিং লাগলেও পরে মজা পেয়েছি। ধৈর্য সহকারে বইটা পড়বেন। ভালো লাগবে। আর বইটাতে একধরনের LSD effort পাবেন।খুবই মজাদার।
Was this review helpful to you?
or
বাংলাদেশের গণমাধ্যম বিষয়ঃ আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘চিলেকোঠার সেপাই’ উপন্যাসের পর্যালোচনা। কোর্সঃ ১০৩ নির্দেশনায়ঃ সুরাইয়া বেগম সহযোগী অধ্যাপক গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। উপস্থাপনায়ঃ মুঃ তানযীম সামদানী প্রত্যয় রোলঃ ১২ সেশনঃ ২০১৯-২০ গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। জমাদানের তারিখঃ ১৭ এপ্রিল,২০২১। কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচিত উপন্যাস চিলেকোঠার সেপাই। এটি তার প্রথম উপন্যাস। আশির দশকের শুরুতে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। ১৯৮৬ সালের অক্টোবর মাসে ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড থেকে এটি প্রকাশিত হয়। বইটি উৎসর্গ করেছিলেন তার পিতা বি. এম. ইলিয়াসকে। ১৯৯৩ সালের আগস্ট মাসে বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ১৯৯৯ সালের মার্চ মাসে মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত হয় আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচনাসমগ্র-২, সেখানে উপন্যাসটি সংকলিত হয়। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে রচিত উপন্যাস “চিলেকোঠার সেপাই” যেন বাংলা সাহিত্যে এক নবদিগন্তের উন্মেষ করেছিলো। অভিনব কাঠামো,সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী প্লট,ঐতিহাসিক উপজীব্যতা এবং নতুন ভাষাভঙ্গি পরবর্তী প্রজন্মের লেখকদের কাছে এক অনুপ্রেরণার নাম হয়ে উঠেছিলো। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দুই বছর আগে বিপুল গণ-অসন্তোষের সৃষ্টি হয় যা আখতারুজ্জামানের কাছে তা আগের যেকোনো আন্দোলনের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। উপন্যাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এর মনোবিশ্লেষণ। ঊনসত্তর সালের প্রবল গণঅভ্যুত্থানের যারা প্রধান শক্তি ছিল, সেই শ্রমজীবী জনসাধারণ কীভাবে আন্দোলন-পরবর্তী সময়টিতে প্রতারিত এবং বঞ্চিত হলো, বামপন্থীদের দোদুল্যমানতা আর ভাঙনের ফলে, জাতীয় মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে যথাযথভাবে ধারণ করতে না পারার ফলে অজস্র রক্তপাতের পরও রাজনীতির ময়দান থেকে তাদের পশ্চাদপসরণ ঘটলো, আওয়ামী লীগ প্রধান শক্তি হয়ে উঠলো, উপন্যাসটির উপজীব্য সেই ঐতিহাসিক সময়টুকুই। চিলেকোঠার সেপাই ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচিত একটি মহাকাব্যিক উপন্যাস। কোনো বাড়ির চিলেকোঠায় বাস করেও স্বাধীনতার লক্ষ্যে গড়ে ওঠা বৃহত্তর আন্দোলনের জোয়ারে একজন সাধারণ মানুষের সামিল হতে চাওয়ার তীব্র আকাঙ্খার গল্প এটি। একটি বিশেষ সময়ে গ্রাম ও শহরের প্রতিটি মানুষকে লেখক এ উপন্যাসে অত্যন্ত সুচারুভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ওসমান যে একজন ছোটখাট সরকারি চাকুরে। অন্যদিক থেকে চিন্তা করলে এর প্রধান চরিত্র হাডডি খিজির, যে কিনা ওসমানের বাড়িওয়ালার ভাগনের গ্যারেজ দেখাশোনা করে। এই দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রা ও স্তরের চরিত্রই উপন্যাসটিকে টেনে নিয়ে গেছে ঊনসত্তরের উত্তাল সময়ের ভেতর দিয়ে। এ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ওসমান গণি ওরফে রঞ্জু দেশবিভাগের কারণে উদ্বাস্তু হয়ে ঢাকায় আসে। ওসমানের বাবা থেকে যান ভারতে, বাবা বেঁচে আছে কি না তা-ও জানে না সে। সবকিছু থেকে সে এতটাই বিচ্ছিন্ন আর ছিন্নমূল যে ঢাকার ঘিঞ্জি গলির মধ্যে এক বাড়ির চিলেকোঠায় সে বাস করতে শুরু করে। পাকিস্তানি শাসকদের শোষণের বিরুদ্ধে ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে তখন শহর, নগর, বন্দর, গঞ্জ, নিভৃত গ্রাম, এমনকি যমুনার দুর্গম চর এলাকা কেঁপে কেঁপে উঠছে। নিত্যদিন মিটিং, মিছিল, গণআদালত, কারফিউ ভাঙা- ক্ষোভ ও বিদ্রোহে সব স্থানের মানুষ তখন মুক্তির লক্ষ্যে উন্মত্ত। ওসমান গণি সবকিছু দেখে, শোনে, মিছিল-মিটিংয়েও যায়। কিন্তু কোনো কিছুতেই সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে না। তার বিচ্ছিন্নতা ও আত্মপ্রেমের চিলেকোঠার চার দেয়ালে আবদ্ধ থেকে তার দিন কাটে। তবু বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তার বিভিন্নভাবে যোগাযোগ হতে থাকে। তারই প্রতিবেশী কিশোর রঞ্জুর প্রতি তার ভালবাসা কাজ করে। কিন্তু রঞ্জুর তরুণী বোন রানুকে আবার ওসমান অবচেতন মনে কামনা করে। এছাড়া এক নেতায় বিশ্বাসী আলাউদ্দিন, আলতাফ, রাজনীতি বিশ্লেষক বামপন্থী আনোয়ার, রিকশাওয়ালা হাড্ডি খিজিরসহ বিভিন্ন ধরনের মানুষ তার চারপাশ ঘিরে রাখে। আরেকটি গুরুত্ববহ চরিত্র আনোয়ার, যে একজন বামপন্থী কর্মী। ঊনসত্তরের এই টালমাটাল বিক্ষুব্ধ সময়েই সে ঘটনাক্রমে যায় তার গ্রামের বাড়িতে, যেখানে সে দেখে গ্রাম্য জোতদার খয়বার গাজীর শোষণ ও অত্যাচার এবং সেটিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট তীব্র জনরোষ। । আরেক চরিত্র হাড্ডি খিজির একটু আলাদা ধরনের রুক্ষ মানুষ। এক নেতায় বিশ্বাসী আলাউদ্দিন মিয়ার রিক্সার গ্যারেজে থেকে রাজপথের মানুষের সাথে মিছিল করে স্লোগান দিতে তার ভালো লাগে। সময় আর সুযোগ পেলেই তাই চলে যায় মিটিং-মিছিলে। এক ভরা জনসভায় ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রসঙ্গ উঠলে হাড্ডি খিজির নির্ভয়ে মহাজনের বিরুদ্ধে কথা বলে। শহরের আধুনিক উচ্চবিত্ত বুদ্ধিজীবীর পাশাপাশি বস্তির খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের চোখে একটি গণআন্দোলনের প্রকৃত রুপটি লেখকের অসামান্য পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ও বর্ণনা-নৈপুণ্যে পাঠকের সামনে উন্মোচিত হয়েছে। উপন্যাসের কাহিনীকে পূর্ণতা দিতেই উঠে আসে দরিদ্র যুবক চেংটু কিংবা করমালি, যারা খয়বার গাজীর বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াবার ধৃষ্টতা দেখায়। শহরের কোণায় কোণায় আন্দোলনের উত্তাপ যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল, তা বিভিন্ন চরিত্রের বর্ণনা ও ঘটনাপ্রবাহে অপূর্ব নিপুণতায় এ উপন্যাসে ফুটে উঠেছে। চিলেকোঠার চার দেয়াল থেকে মুক্তির প্রচেষ্টা অবশেষে ওসমানকে উন্মত্ত করে তোলে। পরিচিতরা বদ্ধ পাগল হিসেবে চিহ্নিত করে তাকে আটকে রাখে তার নিজের ঘরে। অবশেষে সেই বিচ্ছিন্ন ঘর থেকে তাকে বেড়িয়ে পড়তে প্ররোচনা দেয় গণঅভ্যুত্থানের সদস্য হওয়ার অপরাধে মধ্যরাতে কারফিউ দেয়া রাস্তায় মিলিটারির হাতে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত হাড্ডি খিজির। সমাজের তথাকথিত নিম্নস্তরের সামান্য একজন শ্রমিকই ওসমানের মুক্তি আকাঙ্ক্ষী সত্তাকে জাগিয়ে তোলে।ওসমানকে আটকে রাখার জন্য বন্ধুদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। নিহত খিজিরের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সে ঘরের তালা ভেঙে সবার অগোচরে রাস্তায় বেড়িয়ে আসে। চিলেকোঠার বন্ধন থেকে মুক্তি পেয়ে ওসমানের সামনে অজস্র পথ খুলে যায়। নিজের সামনে-পেছনে-ডানে-বায়ে সব পথকেই তখন তার আপন মনে হয়। মূলত, চিলেকোঠার চার দেয়ালের বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার সাথে সাথে তার বিচ্ছিন্নতা ও আত্মপ্রেমের বন্ধন থেকেও তার মুক্তি ঘটে। বৃহত্তর গণআন্দোলনের জোয়ারে অবশেষে ওসমান একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে মিশে যেতে সক্ষম হয়। “হাজার চুরাশির মা” খ্যাত মহাশ্বেতা দেবী বলেছিলেন- “ইলিয়াসের নখের সমান লিখতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে হতো। মহাকবির মতো ছোট ছোট কাহিনীপর্বকে সুন্দর সম্মিলনের মাধ্যমে ওর উপন্যাস যেনো একেকটা মহাকাব্য।“ শহরের বস্তি থেকে শুরু করে যমুনার দুর্গম চর এলাকা পর্যন্ত উপন্যাসটি বিস্তৃত হয়েছে। লেখকের অতি সূক্ষ্ম এবং নিবিড় পর্যবেক্ষণ শক্তিতে উপন্যাসের শব্দে শব্দে একেকটা আলাদা ক্যানভাস ,আলাদা চিত্রপট সৃষ্টি হয়েছে। লেখকের অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন লেখায় একেকটি ঘটনার সাথে চরিত্রের বাস্তবতা, কল্পনা, চেতনা অন্তঃচেতনার মিশ্রণে প্রতিটি পৃষ্ঠায় পাঠক নতুন দৃষ্টিতে জীবনকে আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে। উপন্যাসের কাহিনিবিন্যাসই পাঠককে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায়। ইতিবাচক রাজনীতির উপস্থাপনায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অব্যবহিত পূর্বরূপটি উপস্থাপনে 'চিলেকোঠার সেপাই' একটি অনন্য উপন্যাস যা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অনন্য অবস্থান তৈরি করে রাখবে চিরকাল।
Was this review helpful to you?
or
আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ভাব প্রকাশের একটা নিজস্ব বাংলা ভাষা আছে। "চিলেকোঠার সেপাই" গল্পে দুইটি খন্ড গল্পকে এক সাথে নিঁখুত ভাবে জোড়া লাগানো হয়েছে। ঊনসত্তর সালের প্রেক্ষাপটে শহুরে ঘোলাটে আবহাওয়া এবং গ্রাম পর্যন্ত এর প্রভাব। তিনি দেখিয়েছেন যে গ্রাম কিংবা শহর যেখানেই হোক ক্ষমতার লড়াই সত্যিকার অর্থে ব্যক্তি স্বার্থে।
Was this review helpful to you?
or
সবার প্রথমে যে কথাটা বলা দরকার, তা হলোঃ অসম্ভব শক্তিশালী লেখা। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের লেখায় হাতেখড়ি হলো আমার এই উপন্যাসের মাধ্যমে, এবং সত্যিকার অর্থেই মুগ্ধ হলাম। এরকম কিছু আমি এর আগে কখনো পড়ি নি, পড়বো বলেও মনে হচ্ছে না। তাই শেষ করেও বারবার মনে হচ্ছে, কি অসাধারণ মেধাবী এবং নিপুণ গদ্যশিল্পী হলেই এমনটা লেখা সম্ভব!! উপন্যাস সম্পর্কে চিরাচরিত ধারণা সম্পূর্ণ বদলে দেয়ার মত উপন্যাস চিলেকোঠার সেপাই। প্রতিটা চরিত্রকে লেখক সময় নিয়ে, চিন্তা করে তৈরি করেছেন, কঙ্কাল থেকে রক্তমাংস দিয়ে গড়ে তুলেছেন। গল্প যত এগিয়েছে, চরিত্রগুলোও তত সুগঠিত হয়েছে। সবচেয়ে চমৎকার ব্যাপার হলো, প্রতিটা চরিত্রের চিত্রায়ন ভীষণ নগ্নভাবে উঠে এসেছে। বামপন্থী চেতনার এক যুবকের চিন্তা-ভাবনা, ভাষা, চালচলন যেমনটা হওয়া উচিত; আনোয়ার ঠিক তাই। আবার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ একটা সময়ে দরিদ্র, উদ্বাস্তু, প্রান্তিক চরিত্র হিসেবে খিজিরের পারিপার্শ্বিকতা, ভাষা, পটভূমিরও সুনিপুণ চিত্রায়ন রয়েছে। প্রচুর খিস্তি-খেউড় রয়েছে, Raw বর্ণনা আছে, কিন্তু অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়নি কখনোই। বরং মনে হয়েছে, এমনটাই হওয়ার কথা ছিল। বাংলা উপন্যাসে, গল্পে আমরা বোধহয় নিজেদের কমফোর্ট জোনে থেকে অভ্যস্ত। তাই চিলেকোঠার সেপাই পড়তে গিয়ে হোঁচট খেয়েছি আমি। এক বসায় খুব বেশি একসাথে হজম করতে পারি নি। লেখনীর গভীরতায়, তীব্রতায় আমি সময় নিয়ে গলঃধকরণ করেছি পুরোটা। শেষের দিকে খিজিরের মৃত্যুকালীন বর্ণনা পড়ে হতবাক হয়ে গিয়েছি। স্বগতোক্তির মত, নিজের কথ্য ভাবে প্রথমদিকে শারীরিক কষ্টের চেয়ে মানসিক অস্থিরতা, পরবর্তিতে অগ্নিকুণ্ডের মত সহসাই দৈহিক যন্ত্রণার আবির্ভাব, জীবনের পরিসমাপ্তি। এই বর্ণনা লেখক কিভাবে দিলেন? কোথায় পেলেন? ক্লাসিক সাহিত্যে সন্ধ্যার শুরু হয় পশ্চিম আকাশে, গোধূলীর সঙ্গমে। কিন্তু লেখক চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন, সবসময় এমনটা আদিখ্যেতা। সন্ধ্যা বস্তির পাশের নর্দমা থেকেও উঠে আসে। স্পষ্ট ভাষায় সাম্প্রদায়িকতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন, বলেছেন - নামাজ পড়ার সঙ্গে সত্যনিষ্ঠ হওয়ার সম্পর্ক কি? গণুঅভ্যুত্থানের বিক্ষুব্ধ ঢাকা যেমন দৃশ্যপটে এসেছে, তেমনি শ্রেণীশত্রুদের কবলে শোষিত যমুনা-পাড়ের দরিদ্র, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর গল্পও বলেছেন, হুবহু তাদের স্তরে নেমে এসেছেন। বিপ্লব এবং সংঘাতের শহুরে ও গ্রাম্য - দুটি ভিন্ন ধারাকে এক করেছেন। তবে চিলেকোঠার সেপাই ওসমান গনির মানসিক টানাপোড়েন থেকে শুরু হওয়া ভারসাম্যহীনতার পরিণতি দেখতে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। বিপ্লবী হাড্ডিসার খিজিরের চরিত্রটি ওসমানের সাথে যুক্ত হয়ে লাভ করেছে এক অনন্য মাত্রা। ঘুরেফিরে তাকেই আমার মনে হয়েছে এই উপন্যাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী চরিত্র।। উপন্যাসজুড়ে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য রূপক, প্রহেলিকাময় ইঙ্গিত। মানসিক বৈকল্যের ফলে ওসমানের কণ্ঠে ঢাকার পথে পথে বুড়িগঙ্গার স্রোতে ছড়িয়ে পড়া আগুনের কথার সাথে যেন মিশে আছে আরো অনেক কিছু।। বাংলা সাহিত্যের অন্যরকমের একটা মাস্টারপিস চিলেকোঠার সেপাই। অবশ্য-পাঠ্য উপন্যাস
Was this review helpful to you?
or
ঐ প্রচন্ড একটা অস্থির অস্থিতিশীল সময়। সর্বাত্মকভাবে বোধয় ঐ প্রথমই এই বাংলার মানুষ কোন একটা কিছুর প্রতিবাদ করছিল। আইয়ুবকে তাড়াতে হবে, নেতাকে মুক্ত করতে হবে, অধিকার আদায় করতে হবে, ছয়টা কিংবা এগারটা দফা। সময়টায় বোধয় দিশা হারায়া ফেলে সবাই। বাদ যায় না পুরান ঢাকার ঐ মানুষগুলাও। চাকরিজীবী ওসমান, অশিক্ষিত রিকশাচালক খিজির কিংবা উচ্চশিক্ষিত ওসমান, কেউই ঐ অস্থিরতার বাইরে ছিল না। একটার পর একটা মিছিল যখন আছড়ে পড়ত শহীদ মিনারে, রেসকোর্সে, পল্টনে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে... তখন আমরা দেখেছি ওসমান, আনোয়ার কিংবা খিজিরকে। স্ক্রুড্রাইভার প্লায়ার্স হাতে হাড্ডি খিজির... কয়টা হোটেল, কাচ্চি তেহারীর দোকান, পার্ক, পল্টনের এই অফিস সেই অফিস, অনেক দূরের ধানমন্ডি, মুড়ির টিন, স্টেডিয়াম... আর কেবলই রিকশা... ৬৯ এর ঢাকা, গণঅভ্যুথানের ঢাকা। কেবলই কি ঢাকা? আনোয়ার যখন গ্রামে গেল, সেই সময় গ্রামের নিপীড়িত শ্রেণী মাথা তুলে দাঁড়াবার প্রচেষ্টার কথাও আমরা জেনেছিলাম। কিন্তু যা হবার... ওসমান পাগল হয়ে গেল, সে রঞ্জুরে কিংবা নিজেরেই ভালোবাসত। তারে নার্সিসিস্ট বইলা রায় দিয়ে দিয়েছে কেউ কেউ। আবার সে রানুরেও ভালোবাসত। সে কী খিজিরকেও অনেকটা ভালোবাসত না? খিজিরটাও কি জুম্মনের মায়েরে ভালোবাসত না? জুম্মনরেও কি না? লোকটা শেষে এইভাবে উড়ে উড়ে বেড়াইল! রুদ্ধশ্বাস, ঘোরলাগা একটা মুগ্ধতা নিয়ে পড়ে গেলাম। কী প্রচন্ড অসাধারণ লেখনী। শক্তিশালী একটা রাজনৈতিক উপন্যাস! পাঁচে পাঁচ!
Was this review helpful to you?
or
The Soldier in an attic (চিলেকোঠার সেপাই) কে যদি কোনো মানদন্ডে ফেলা যায়, তবে সেটা অবশ্যই অত্যন্ত উঁচুমানের হবে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। লেখক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস যে কোন লেভেলের রাইটার, তার যেন একটি উজ্জ্বল দর্পণ এই উপন্যাস। উনসত্তরের গণ অভ্যুত্থানকে লেখক এমন ভাবে পোর্ট্রে করেছেন, তা অবশ্যই বাংলা সাহিত্যের এক শক্তিমান নিদর্শন। ৩০০ এরও অধিক পৃষ্ঠার এই উপন্যাস নিয়ে কিছু বলবো না, শুধু বলবো-পড়ুন আর হারিয়ে যান এক অন্য জগতে। Happy Reading.
Was this review helpful to you?
or
An outstanding book if you are interested in novel with local atmosphere
Was this review helpful to you?
or
অনেকেই সমরেশ মজুমদারের গর্ভধারিনী ও এই বইকে একই কাতারে রাখেন ।
Was this review helpful to you?
or
দরজা খুললেই নিচে নামবার খাড়া ঝাপশা সিড়ি।সিড়ির সবচেয়ে ওপরের ধাপে দাড়িয়ে রয়েছে ১৪/১৫ বছরের একটি ছেলে ।ওসমানের ঘরের খোলা জানলা দিয়ে আলো এসে পড়েছে ছেলেটির শরীরের ওপরের ভাগে।গায়ে নীল রঙের হাফ হাতা হাওয়াই শার্ট,ফ্ল্যাপের নিচে দুটো বুকপকেট,ডান পকেটের উপর ঘন খয়েরি সুতার এমব্রয়ডারি করা প্যাগোডার মাথা।
Was this review helpful to you?
or
চিলেকোঠার সেপাই (The Soldier in an Attic) বাংলাদেশের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের লেখা একটি উপন্যাস। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বসময়কার গণজাগরণের প্রেক্ষাপটে এ উপন্যাসের আখ্যানভাগ গড়ে ওঠেছে। উপন্যাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এর মনোবিশ্লেষণ। উনসত্তুর সালের প্রবল গণঅভ্যুত্থানের যারা প্রধান শক্তি ছিল, সেই শ্রমজীবী জনসাধারণ কিভাবে আন্দোলন-পরবর্তী সময়টিতে প্রতারিত এবং বঞ্চিত হলো, বামপন্থীদের দোদুল্যমানতা আর ভাঙনের ফলে, জাতীয় মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে যথাযথভাবে ধারণ করতে না পারার ফলে অজস্র রক্তপাতের পরও রাজনীতির ময়দান থেকে তাদের পশ্চাদপসরণ ঘটলো, আওয়ামী লীগ প্রধান শক্তি হয়ে উঠলো, উপন্যাসটির উপজীব্য সেই ঐতিহাসিক সময়টুকুই। গ্রন্থের প্রধান তিনটি চরিত্র ওসমান, আনোয়ার এবং "হাড্ডি খিজির"। চিলেকোঠার সেপাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে রোববার নামীয় সাপ্তাহিক পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় এবং ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। এর অভিনব কাঠামো এবং নতুন ভাষা-ভাঙ্গী পরবর্তী প্রজন্মের নতুন লেখকদের বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত ও প্রভাবান্বিত করে যার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ শহিদুল জহির। এই উপন্যাসে একদিকে হাড্ডি খিজির যেমন মহাজনের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিয়ে উঠতি আওয়ামী লীগের নেতা আলাউদ্দীন মিয়ার ধমক খায়, গ্রামে গ্রামে গরুচোরদের রক্ষাকর্তা জোতদারদের রক্ষায় রাষ্ট্র-সামরিক বাহিনী-আওয়ামী রাজনীতি একাকার হয়ে যায়। ঢাকা ক্লাব থেকে আইয়ুব বিরোধী মিছিলে গুলি বর্ষণ করা হলে উত্তেজিত জনতা ক্লাবটিতে আগুন ধরাতে যায়, আর বাঙালি-বাঙালি ভাই ভাই আওয়াজ তুলে তাদেরকে রক্ষা করা হয়। গ্রামে জোতদারদের বিরুদ্ধে স্বতস্ফূর্ত মানুষের গণআদালতেও আইয়ুবের দালালরা রক্ষা পায় জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ছায়ায়। এই দালালদের বুদ্ধিমান অংশ অচিরেই যোগ দিয়ে জাতিয়তাবাদী রাজনীতিকে আরও পুষ্ট করে। ওদিকে ওসমান তার মধ্যবিত্ত দোদুল্যমানতা আর জনগণের সাথে মিলনের আকাঙ্ক্ষায় মাঝে দোল খায়, এ্ই দোলাচল তাকে পরিণত করে সিজোফ্রেনিয়ার রোগীতে। মধ্যবিত্ত বামপন্থী আনোয়ার গ্রামে যায় কৃষিবিপ্লব সাধন করতে, এবং নতুন কোন উপলদ্ধি ছাড়াই এই প্রক্রিয়ার ভেতর তার ভূমিকা পালন করে যায়।
Was this review helpful to you?
or
আমার মনে হয় অন্যান্য যে কোন উপন্যাস থেকে রাজনৈতিক উপন্যাস লেখা অনেক কঠিন। রাজনৈতিক গল্প যদি বাস্তবতার সাথে মিল না থাকে তাহলে যেমন সমালোচনার খোরাক যোগায় তেমনি কাল্পনিক হলে তা হারায় পাঠাকের আগ্রহ। আখতারুজ্জামান তার লেখাতে বিপ্লব স্যুট-টাই পড়া রুমে বসে তত্ত্ব দেয়া বুদ্ধিজীবীদের দিয়ে করান নি। বস্তির শ্রমিক আর গ্রামের খেঁটে খাওয়া মানুষেরাই তার বিপ্লবের নায়ক। সমরেশের গর্ভধারিণী বইটা পড়ে রাজনৈতিক উপন্যাসের হাতে খড়ি। হুমায়ূন আহমেদের দেয়াল আর তারপর শুরু করলাম আখতারুজ্জানের চিলেকোঠার সেপাই। আমি তুলনা করছিনা কোনটা ভালো কোনটা মন্দ, তবে হ্যাঁ এটা আমারই দুর্ভাগ্য যে চিলেকোঠার উপন্যাসটা অনেক দেরীতে পড়লাম। ষাট সালের দিকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থান তথা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও আন্দোলন সাক্ষী চিলেকোঠার সেপাই। প্লট মূলত উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান। গল্পের প্রধান চরিত্র রঞ্জু ওরফে ওসমান, ওসমানের বন্ধু আনোয়ার আর আলতাফ। আছে রিকশা শ্রমিক বস্তি বাসিন্দা খিজির। আনোয়ার বামপন্থী আর আলতাফ ডানপন্থী। আনোয়ার আর আলতাফের কথাবার্তার মাধ্যমে লেখক অনেক জটিল রাজনৈতিক জটিলতাকে মুক্তি দিতে চেয়েছেন। গল্পের ফোকাস কখনো ছিল হাড্ডি খিজিরের উপর, কখনো বা আনোয়ারের উপর। তবে পুরো গল্পে অস্তিত্ব ছিল ওসমানের। ঢাকার এক ঘিন্জি গলির মধ্যে বাস ওসমানের। সে এক অফিসের জুনিয়র কর্মকর্তা। তার বন্ধু আলতাফ, আনোয়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে কিন্তু ওসমান কোনকিছুতেই নেই। সে যেন চিলেকোঠাতে বন্দী। লেখক ওসমান চরিত্রটিকে রহস্যময় করে তৈরি করেছেন। ওসমান যে বাসায় ভাড়া থাকে সেটা আবার আইয়ুবপ্রেমী মহাজন রহমতউল্লাহর। খিজির ছোটবেলা থেকে রহমতউল্লাহর খেয়ে দেয়ে মানুষ। শ্রমিক হিসেবে থাকে তার গ্যারাজে। কিন্তু এই খিজিরই একসময় হয়ে ওঠে বিপ্লবী। বিভিন্ন প্রকার রাজনৈতিক কর্মসূচীতে অংশগ্রহণের সাথে সাথে খিজির তার মহাজন রহমতউল্লাহ্র বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে। সৈনিকের গুলিতে মৃত্যু হয় খিজিরের। আনোয়ার কলেজের শিক্ষক। ঢাকার উত্তাল আন্দোলন ছেড়ে সে চলে যায় গ্রামে। শ্রেণী বৈষম্য ভাঙতে সে বদ্ধ পরিকর। আফসার গাজী, খয়বার গাজী, হোসেন আলী নামক শোষক মহাজনদের হাতে জিম্মি খেঁটে খাওয়া যমুনা পাড়ের সাধারণ মানুষদেরকে মুক্তি দেয়া তার প্রধান উদ্দেশ্য। খয়বার গাজী, আফসার গাজী লতায় পাতায় আনোয়ারের আত্মীয় হলেও সে তাদেরকে ক্ষমা করতে রাজি নয়। কিন্তু না, শেষ পর্যন্ত তা আর হয়ে ওঠেনা। শহরের রাজনৈতিক হাওয়া গ্রামে লাগলে উল্টে যায় সবকিছু। যেই মাহজনদেরকে গ্রামের মানুষ শাস্তি দিতে চেয়েছিলো, আলী বক্স আর আনোয়ারদের দাপটে মাহজনের অবস্থা যখন নড়বড় তখন সেই মহাজনেরাই নতুন রাজনৈতিক হাওয়ায় ফিরে আসে আগের অবস্থানে। সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়না। ওসমান কোন আন্দোলনে তেমন নেই কিন্তু সে দিন-রাত্রি স্বাধীনতা আর মুক্তি নিয়ে ভাবে। আন্দোলনে রাস্তায় বের হওয়া মানুষ দেখলে সে যেন ক্ষিপ্র হয়ে ওঠে। যেমন...... ওসমান ভাবতে থাকে...... বাংলা বাজার , তাঁতি বাজারের মানুষ লুপ্ত-খালের হিম হৃদপিণ্ড থেকে উঠে এসেছে?? ঐ তো ইব্রাহীম খাঁর আমলে শাহজাদা খসরুর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত পাগড়ি পড়া সেপাইরা। শায়েস্তা খাঁর টাকায় আট মণ চালের আমলে না খেয়ে মরা মানুষ দেখে ওসমান আঁতকে ওঠে। ৩০০ বছর ধরে তাদের খাওয়া নাই, - কেউ চুলের তরঙ্গ উরিয়ে তারা এগিয়ে চলে পায়ে পায়ে। মোগলের হাতে মার খাওয়া, মগের হাতে মার খাওয়া, কোম্পানির বেনেদের হাতে মার খাওয়া- সব মানুষ না এলে মিছিল কি এত বড় হয়?? উনসত্তর যে স্বাধীনতা আন্দোলনকে চূড়ান্ত রুপ দেয় আর এই উনসত্তরই যে হাজার বছরের বাংলার শোষণ থেকে মুক্তির সুরহা দিয়েছে লেখক ওসমানের চিন্তার মাধ্যমে তা দেখিয়েছেন। ওসমানের বাবার বাড়ি ইন্ডিয়া। কিন্তু ওসমান কোন মতেই এদেশ ছেড়ে যেতে রাজি নয়। সে একা থাকে এখানে। দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকেই সে বলে ফেলে... যতই ইন্ডিয়া নিয়ে যাক, ঐ খাটো-ধুতি খালি গা, খালি পা হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের সাধ্য কি ওদের দুই ভাইবোনকে এই পাড়া থেকে শেকড় শুদ্ধ উপড়ে ফেলে?? ওসমান ঐ তো দেখতে পাচ্ছে, অপরিবর্তিত শাঁখারি পট্টির কলের ধারে ধারে কলসি, বালতি ও হাঁড়ির সারি। একসময় শিজোফ্রেনিয়াতে আক্রান্ত হয় ওসমান। স্বাধীনতার নেশা’ই হয়তো তাকে পাগল করে ফেলে। বিপ্লবীদের নেশা হয় প্রবল।শুনেছিলাম চে গুয়েভারা এলএসডি নামক ড্রাগ খেতেন,এটা নাকি তাকে বিপ্লবের রঙ দেখিয়েছিল।যে রঙ অপার্থিব,অমিশ্রিত।সেভাবেই এক মাদকের মতো আমার রক্তে মিশে গেছে স্বাধীনতার প্রেম,আর তার খোরাক যোগায় এক চিলেকোঠার সেপাই। সুদীপ্ত চক্রবর্তী