User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_জুন 'হাজার চুরাশির মা' উপন্যাসিকাটির স্থায়িত্বকাল মাত্র একটা দিন।নকশাল আন্দোলনে আড়াই বছর আগে মৃত একজন সন্তানের মায়ের সকাল থেকে সন্ধ্যা অব্দি (পুরো একটা দিন) অনুভূতি,আহাজারি,লুকোনো আর্তনাদ সবকিছু ফুটে উঠেছে বইটাতে। তিঁনি শুধু মা নয়।একাধারে মা,বউ,শাশুড়ী,দাদী এবং সেইসাথে চাকরিজীবীও বটে! তাঁর নাম 'সুজাতা'। শিক্ষিতা,রুচিশীল,সহৃদয়বান এবং বিবেচক নারী। অভিজাত পরিবারে বিয়ে হওয়ার পর থেকেই তাঁর স্বাধীনতা যেন বিক্রি হয়ে যায় শাশুড়ী আর স্বামীর কাছে। ভাগ্যচক্রে ব্যাঙ্কে চাকরির সুবাদে একটু স্বাধীনতা ফিরে আসে বৈকি! শাশুড়ী মারা যাবার পর স্বামী,দুই মেয়ে আর দুই ছেলে নিয়ে সুজাতার সংসার।বড়লোক স্বামী দিব্যনাথ মদ,মেয়ে,ফূর্তি নিয়েই থাকে। বড় মেয়ে নিপা,দুশ্চরিত্রা।বড় ছেলে বউয়ের আঁচল ধরে ঘুরে বেড়ায়। ছোট মেয়ে আত্মকেন্দ্রিক।মেয়ে,ছেলে এমনকি স্বামী কেউ ই সুজাতাকে সময় দেয় না,তাঁর কথা ভাবেও না। আর আছে ছোট ছেলে,ব্রতী। আছে না,ছিল! ব্রতী ছিল মায়ের আদর্শ ছেলে। বড়লোক বাবার সন্তান হওয়া সত্বেও নকশাল আন্দোলনে যোগ দিয়েছে যে। ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে হত্যা হয়েছে। সেই ব্রতী,মৃত্যুর পর যার কোন নামই থাকে না। লাশকাটা ঘরে নকশাল আন্দোলনে মৃত হাজার হাজার জুয়েল ছেলের ভিড়ে 'একহাজার চুরাশি' নং লাশটি ব্রতীর। ব্রতীর মায়ের পরিচয় হয় তখন 'হাজার চুরাশির মা' হিসেবে। সেই ছোট্ট ব্রতী যে মায়ের হাত ধরে রাস্তা পার হতো আজ সে.... এই উপন্যাসে ব্রতীর, হাজার চুরাশি হয়ে ওঠা আর ব্রতীর মায়ের 'হাজার চুরাশির মা' হয়ে ওঠা কী ভীষণ হৃদয়বিদারক! সন্তানের মৃত্যুতে মা চোখের জল ফেলতে পারে না।ব্রতীর লাশটা এতটা ক্ষতবিক্ষত যে একটু ছুঁয়েও দেখতে পারে না মা। মৃত সন্তানের শেষ স্মৃতিগুলো ঘরে রাখতে পারে না,পুলিশ তল্লাশি করে সব নিয়ে যায়। বাবা সন্তানের পরিচয় দিতে চায় না।ভাইবোনরা, ভাইয়ের মৃত্যুতে শোকের স্থলে বিব্রতবোধ করে। ব্রতীর জন্মদিনে ছোটবোনের এনগেজমেন্ট'র অনুষ্ঠান হয়! আর সুজাতা কী করে! কর্তব্য পালন করে। মৃত ছেলের জন্মদিনে সেজেগুজে মেয়ের এনগেজমেন্ট অনুষ্ঠানে হাসিমুখে ঘুরে বেড়ায়। এর থেকে হৃদয়বিদারক কিছু হতে পারে আর! #পাঠ_প্রতিক্রিয়া একটিমাত্র বই লিখে স্মরণীয় হয়ে থাকা যায় না? মহাশ্বেতা দেবী যদি শুধুমাত্র এই বইটি লিখে,লেখালেখি থামিয়ে দিতেন তবুও তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকতেন বলে মনে হয়। বইটা শেষ করেছি দু'দিন আগে। তারপর আর কোন বই পড়তে পারিনি।রিভিউ লেখার ও সাহস হয়নি। এমন শক্তিশালী বই নিয়ে রিভিউ লেখা যায় না আসলে। আর এসব বই পড়ার জন্য রিভিউ এর ধার ধারতেও হয় না।বইয়ের নামটাই তো আগ্রহ জাগানিয়া। "সময় ফিরে পাওয়া যায় না। সময় চলে যায় নির্মম,ঘাতক,নিয়তিসমান সময়।সময় শোকের চেয়ে বলশালী। শোক তীরভূমি, সময় জাহ্নবী। সময় শোকের ওপর পলি ফেলে আর পলি ফেলে। তারপর একদিন প্রকৃতির অমোঘ নিয়ম অনুযায়ী, সময়ের পলিতে চাপা পড়া শোকের ওপর ছোট ছোট অঙ্কুরের আঙুল বেরোয়। আঙুলগুলো আকাশপানে আবার উঠতে চায়। আশার বেদনার,সুখের,আনন্দের অঙ্কুরের আঙুল..." এই প্যারাটা আমি কয়েকবার করে পড়েছি। মানে নির্মম সত্যগুলো বইয়ের পাতায় কী দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছে! বইটা পড়ার সময় মনে হচ্ছিল আমি ব্রতীর মায়ের সাথে ঘুরছি। চাপা কষ্ট, কান্না বুকফেটে বের হতে চাইছে,আটকে রাখছি। জীবন্ত যেন। লেখিকা ছোট ছোট বাক্য,এক কথা দু-তিনবার, কাব্যিক ঢঙে লিখেছেন। হোঁচট খাবেন না। পড়বেন।থামবেন না। এমনভাবে লেখার কারণেই মনে হয়েছে লেখাটা ভীষণ জীবন্ত। উপন্যাস ফুঁড়ে বাস্তবতা বের হয়ে পড়ছে যেন! বই- হাজার চুরাশির মা লেখিকা- মহাশ্বেতা দেবী পৃষ্ঠা সংখ্যা- ৯৫
Was this review helpful to you?
or
সত্তরের দশকে বিপ্লবী চারু মজুমদারের ইশতেহারের ডাকে সারা দিয়ে নকশালবাড়ি আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলো অসংখ্যা তরুণ। সাম্যবাদের আলোর খোঁজে রাতের অন্ধকার গহবরে সেই সময় কয়েক হাজার তরুন ক্ষত-বিক্ষত হয়ে জমা পরে কাঁটা পুকুরের লাশঘরে। সেই খবর ভারতবর্ষের তথাকথিত সচেতন এবং সুশীল সমাজকে ব্যথিত করত না, উন্মক্ত মঞ্চে ঘামসিক্ত ভাষণের খোরাক যোগাত না। শুধু কিছু রক্তস্নাত হৃদয় সেই লাশের ভার বয়ে চলে। আজীবন। আর সেই তরুণ সমাজের একজন সদস্য ব্রতী। আর এই গল্প মা সুজাতার। ছেলের মৃত্যুর পর ব্রতীর অনস্তিত্বকে প্রতি মূহুর্ত দাবিয়ে রাখার নিরলস সংগ্রামের গল্প। বইয়ের নামঃ হাজার চুরাশির মা লেখকের নামঃ মহেশ্বেতা দেবী ঘরানাঃ রাজনৈতিক এবং মনস্তাত্বিক পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৯৫ প্রকাশনীঃ হাওলাদার প্রকাশনী প্রথম প্রকাশঃ আগস্ট, ১৯৭৪ নামকরণের স্বার্থকতাঃ নকশাল আন্দোলনের সময় কলকাতার ষোল থেকে চব্বিশ বছর বয়সের তরুণদের গৃহবন্দীত্ব ছিল অলিখিত নিয়ম। এক পাড়া থেকে অন্য পাড়া অকারণে যাওয়া ছিলো নিষিদ্ধ। আর কমিউনিজমের আদর্শকে বুকে ধারণ করা ছিলো পাপ, সে পাপের কখনো কোন ক্ষমা হয়নি। একটাই শাস্তি দেয়া হয়েছে । মৃত্যু। আর মৃত্যু বুকে জড়িয়ে সেই সাম্যবাদের মাতাল নেশায় সিক্ত লাশগুলোর জায়গা হতো কলকাতার কাঁটা পুকুরের লাশ ঘরে। যেখান তাঁদের নতুন একটা নাম দেয়া হতো। একটা নাম্বার। কাগজে লেখা যে নাম্বার হাতে নিয়ে দাঁড়ালে জীবনের সবথেকে প্রিয় মানুষটার থেতলানো কিংবা রক্তে চুবানো মুখখানি দেখা যেত, হয়তো ছোয়াও যেত। ব্রতীও একটা নাম্বার পেয়েছিলো। হাজার চুরাশি। আর যে মানুষ টার সমগ্র সত্ত্বাজুড়ে শুধু ব্রতী ছিলো সেই মানুষটা ব্রতীর মা সুজাতা পরিচিয়ও সেদিন ঐ লাশ কাঁটা ঘরে বদলে যায়। তিনি হন বিপ্লবী ব্রতীর মা, হাজার চুরাশির মা। বিশ্লেষণঃ যে সমাজে বহুগামিতাকে বলা হয় পুরুষত্ব, অহংকারকে ধরা হয় আভিজাত্য, অশ্লীলতা মানা হয় আধুনিকতা সেই সমাজে ব্রতী খুব বেমানান। কারণ সে উপর তলার মানুষ হয়েও অসহায় বেকারের তৃষ্ণার্ত দৃষ্টিতে, দরিদ্য মায়ের ছেড়া আচলের তালি লাগানো কাপড়ের টুকরোতে, নিগৃহীত নারীর খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করা আত্নায় মুক্তির স্তম্ভ নির্মাণের স্বপ্ন দেখে। ব্রতী ছোটবেলা থেকে খুব ধনী পরিবারের নষ্ট ছেলে। সে বাবার মত একাধিক নারীর দেহ ভোগ করতে শেখে না, ভাইয়ের মত শৃঙ্খলাহীন স্ত্রীর বশ্যতাকে পবিত্র জ্ঞান করার স্বার্থকতা ভেবে খুঁজে পায় না কিংবা বোনদের মত নোংরা মাংসল পরিখায় গা ভাসিয়ে আধুকিতা সংজ্ঞা খুজতে যায় না। সে শুধু তাঁর মাকে জানে। জন্ম থেকে যে নারীকে পরিবারের মানু্ষে মর্যাদা পেতে দেখেনি, যেন ছায়ামাত্র। অন্যের ইচ্ছের পায়ের নিচে এক প্রতিবিম্ব। তবুও সে ব্রতীর কাছে দেবী। কতগুলো অমানুষের ভিড়ে বড় হয়েও মা নামের এই নৈঃব্দর দেবীকে দেখেই সে হয়তো বুকের দাবানলে পুড়ে হয়েছে খাঁটি সোনা। অন্ধকার ঘরের চাবিটা দিয়ে একটু আলো ছড়াতে চেয়েছিলো। কিন্তু ব্রতী পারেনি। গলার তিনটে বুলেট ব্রতীকে সেই অন্ধকারের ঘরেই নিঃশেষ করে দিয়েছে। কিন্তু সেই নিঃশেষে পোড়া ছাই থেকে মা সুজাতার শিরায় শিরায় আগুনের শিখা চিৎকার করে। সুজাতার বুকের ভেতর জ্বলতে থাকা সুজাতার সেই আগুনের খোঁজ পেতে বইটি অবশ্যই পড়তে হবে। জানতে হবে ব্রতী কে?? ব্যক্তিগত মতামতঃ হাজার চুরাশির মা, বইটি পড়ে পাঠক অভিযোগ করতেই পারেন যে বইটিতে বাংলাদেশে স্বাধীনতা সংগ্রামকে হেয় করা হয়েছে। মোট দুটি জায়গার কলকাতার মানুষদের বাংলাদেশে মানুষদের অসহায়ত্ব প্রতি সহমর্মিতাকে বিদ্রুপ করা হয়েছে। কিন্তু পাঠকদের একপেশে দৃষ্টিভঙ্গি থেকে একটু সরে এসে বইটির আর একটু ভেতর প্রবেশ করতে হবে। মাক্সীয় ধারার সাহিত্যিক মহেশ্বেতা দেবী বইটিতে কমুউনিজমের পক্ষে কিছু সত্য তুলে ধরা হয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন আবর্তিত হচ্ছিলো গনতন্ত্রকে কেন্দ্র করে। যা নকশাল বাড়ি আন্দোলন বা কমুউনিজমের উল্টো পিঠ। মধ্যপন্থা বা গনতন্ত্র বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান করবে না, এদেশের মানুষের নিপীড়ন বন্ধ হবে না শুধু শাসক বদলাবে, আদর্শগত কারণে তৎকালীন কলকাতার বিপ্লবী তরুণদের এই চিন্তাধার থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম সমর্থন না করাটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যদি সাম্যবাদের প্রতিশ্রুতি থাকত তখন এই বিপ্লবীরাই হয়তো ঢাকার রাজপথে রক্ত ঢেলে দিতে কুন্ঠা বোধ করতো না। ভুলে গেলে চলবে না মধ্যপন্থা এবং সাম্যবাদ দুই সমান্তরাল রেখায় চলে। এরা পুরোপুরি কখনো এক বিন্দুতে মিলিত হতে পারে না।
Was this review helpful to you?
or
হাজার চুরাশির মা হল র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার বিজয়ী সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী রচিত একটি বাংলা উপন্যাস। এই উপন্যাসটি ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯৭০-এর দশকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নকশাল আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এই উপন্যাসটি রচিত হয়। হাজার চুরাশির মা হল এমন এক মায়ের (সুজাতা) গল্প যাঁর ছেলেকে (ব্রতী) তার আদর্শের জন্য রাষ্ট্র পাশবিকভাবে হত্যা করে। লাশকাটা ঘরে ব্রতীর লাশের নম্বর ছিল ১০৮৪। তা থেকেই উপন্যাসের নামকরণ করা হয়েছে। ব্রতী শ্রেণিশত্রু, রাষ্ট্রের সহকারী ও পার্টির অভ্যন্তরে প্রতি-বিপ্লবীদের ক্রমাগত নির্মমভাবে হত্যা করার পক্ষপাতী ছিল। গল্পটি শুরু হয়েছে ব্রতীর মৃত্যুবার্ষিকীর দিন। সুজাতা ব্রতীর জন্ম থেকে তাঁর ছেলের স্মৃতিচারণা করছেন। তাঁর সঙ্গে ব্রতীর এক ঘনিষ্ঠ সহকর্মীর দেখা হয় এবং তিনি ব্রতীর বিপ্লবী মানসিকতার বিচার করতে চেষ্টা করেন। সমগ্র উপন্যাসে তাঁকে একজন কঠোর মানসিকতার নারী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। তিনি সকল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে গিয়েছেন। তাঁকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তিনি যেন তাঁর ছেলেকে ভুলে যান। কারণ, তাঁর ছেলের মতো লোকেরা “ক্যানসারাস গ্রোথ অন দ্য বডি অফ ডেমোক্রেসি”। বহু বছর পরে সুজাতা এই ভেবে শান্তি পান যে, রাজনৈতিক অশান্তিতে তাঁর ছেলের মৃত্যু প্রায় কোনও ঘরকেই ছাড়েনি। হাজার চুরাশির মা উপন্যাসে মানবিক কাহিনির সেই সব অন্য মুখগুলিকে চিত্রিত করা হয়েছে, যেগুলির উৎস বাংলার যুবসমাজের অশান্ত রাজনৈতিক অ্যাডভেঞ্চার। যতদিন না কমিউনিস্ট পার্টি সরকার গঠন করে, ততদিন এই যুবসমাজকে নির্মমভাবে দমন করেছিল সরকার। তারপর কমিউনিস্ট সরকার তার বিরোধী শক্তিকে নির্মমভাবে দমন করে। - উইকি।