User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
Nice book on astronomy
Was this review helpful to you?
or
awesome book:)
Was this review helpful to you?
or
শত সহস্র গ্রহ নক্ষত্র এই মহাবিশ্ব জুড়ে, এর মাঝে একটি গ্রহকে বশে নিয়ে বাস করছি আমরা মানবজাতি, জীবজগৎ। একটি প্ল্যানেটের উপর নেমে আসতে পারে এমন প্রতিকূল ঘটনার অভাব নেই! আমাদের সূর্য নিভে যেতে পারে, মহাজাগতিক বস্তুর ধাক্কায় আমরা স্রেফ উড়ে যেতে পারি, নিজেরাই নিজেদের শেষ ডেকে আনতে পারি, অন্যদিকে গোটা মহাবিশ্ব নিজেই তার অস্তিত্বের শেষ ক্ষণে উপনীত হয়ে যেতে পারে! তাহলে উপায় কী? সভ্যতার ভবিষ্যৎ কী? পৃথিবীর ভবিষ্যৎ কী? মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ কী? পড়লাম ড. ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী স্যারের “থাকে শুধু অন্ধকার” বইটি, প্রকাশ করেছে প্রকৃতি-পরিচয়। প্রায় পুরো বইটিই ফিউচার টেন্সে লিখা! অথচ এটি কল্পকাহিনী নয়, স্বাপ্নিকের ভবিষ্যদ্বাণী নয়, নিখাদ বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই বিশ্লেষণ করা হয়েছে আমাদের অস্তিত্বের ভবিষ্যৎ রূপরেখাকে। বইটির অধ্যায় সজ্জা পাঠকের জন্য একই সঙ্গে সহজবোধ্য এবং কৌতূহলোদ্দীপক করে তুলেছে মূল বক্তব্যকে। সভ্যতা এগিয়ে চলেছে, মানুষের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধির সাথে সাথে জীবনের উপর মানুষের নিয়ন্ত্রণও বাড়ছে! আগামীতে আরও উৎকর্ষ লাভ করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জেনেটিক এঞ্জিনিয়ারিং এর কল্যাণে আসবে উঁচুমানের খাদ্যশস্য, বৃদ্ধি পাবে ব্যবহার উপযোগী শক্তির পরিমাণ। কিন্তু যখন গ্রহাণু বা উল্কার আঘাতে ডাইনোসরের মত মানুষের অস্তিত্ব বিলীন হবার আশংকা আসবে, অথবা ধেয়ে আসবে আইস এইজ, তখন একটিমাত্র গ্রহের উপর নির্ভরশীল থাকা অবাস্তব হয়ে দাঁড়াবে; পাড়ি দিতে হবে অন্যত্র— মঙ্গলে এবং পরবর্তীতে পার্শ্ববর্তী স্টার সিস্টেমে। নক্ষত্রযাত্রায় উত্তর মানবের এই অভিযানে বায়োলজি, সংস্কৃতি, প্রকৌশল— সব ক্ষেত্রেই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে, রীতিমত নূহের (আঃ) কিশতির পুনরাবৃত্তি ঘটে যাবে! বইটিতে এই চ্যালেঞ্জগুলোকে উপস্থাপন করা হয়েছে দারুণ আকর্ষণীয়ভাবে, যা একই সঙ্গে পাঠককে নিজ মনে ভাবতেও উদ্বুদ্ধ করে। মঙ্গলের মাধ্যাকর্ষণ কম, তবে কি মঙ্গলের মানুষেরা একটু বেশি লম্বা আর হালকা পাতলা হবে? আমাদের অন্ত্রে বসবাসকারী অনুজীব নতুন পরিবেশে কীভাবে রিঅ্যাক্ট করবে? শিশু জন্মে প্রতিকূলতার জন্য যদি নতুন সভ্যতা সন্তান নিতে নিরুৎসাহিত হয়ে যায় তখন উপায়? সেখানে বদলাবে সময়জ্ঞান, নতুন নক্ষত্রের উদয় অস্ত অনুযায়ী ডিজাইন হবে নতুন ঘড়ি! একটা পর্যায়ে গিয়ে ধীমান সত্তাকে টিকিয়ে রাখতে শক্তির ব্যবস্থাপনা হতে হবে দারুণ তুখোড়, বইটিতে দেখানো হয়েছে কীভাবে এর ফলাফলগুলোও হতে পারে বিচিত্র। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে সাম্প্রতিক গবেষণার রেফারেন্স, উদাহরণ দেয়া গেলে পাঠক সম্ভবত আলোচনার সাথে আরও বেশি একাত্মতা অনুভব করতে পারতেন বলে মনে হয়েছে। মানবজাতির অস্তিত্বের প্রশ্নের পাশাপাশি গোটা মহাবিশ্বের শেষ কোথায়, এবং তার অন্তিম টাইমলাইন কী রকম হতে পারে, তা নিয়ে বিশ্লেষণ এসেছে বইটিতে। দূর জ্যোতিষ্ক থেকে নিঃসৃত বর্ণালি-বিশ্লেষণ ও অন্যান্য উপাত্ত থেকে মহাবিশ্বের প্রসারণ সম্পর্কে ধারণা করা সম্ভব, এর ফলাফল বিশ্লেষণ সম্ভব। একটা পর্যায়ে সব নক্ষত্রের জ্বালানী শেষ হতে বাধ্য, নানা ঘটনার পর গ্যালাক্সিতে শেষ পর্যন্ত ইলেকট্রন পজিট্রন আর ডার্ক ম্যাটারের মেঘ ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। জ্ঞান চিন্তা স্মৃতিও কি তাহলে ইলেকট্রন মেঘে স্থানান্তরিত হবে? অন্যদিকে এনট্রপির এই চূড়ান্তে পৌঁছানো মানেই কিন্তু ধ্বংস-শীতল-সমাপ্তি নয়, বরং বিজ্ঞানের বিশ্লেষণ অনুযায়ী দেখা যায়, সেই চূড়ান্ত মুহূর্তের পরও শুধু হালকা গ্যাসের সমাহার থেকেই ক্ষণিকের জন্য সুজলা সুফলা শস্য শ্যামল গ্রহের দেখা মিলতে পারে! এই অধ্যায়গুলোতে বইটির বৈজ্ঞানিক তথ্যগত ভিত্তি খুব মজবুত, তবে বইটির কলেবর সংক্ষিপ্ত রাখার প্রচেষ্টায় কিছুটা অ্যাডভান্সড হয়ে গিয়েছে আলোচনা, জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা রাখা পাঠকের জন্য বিশ্লেষণগুলো উপভোগ্য হবে। বইটির শেষে সংযোজন করা হয়েছে ড. মল্লিকা ধরের প্রাঞ্জল অনুবাদে আইজ্যাক আজিমভের সায়েন্স ফিকশন, “মানবজাতির শেষ প্রশ্ন”। পুরো বইয়ের থিমের সাথে দারুণভাবে যায় গল্পটি, শত পৃষ্ঠা বিজ্ঞান পাঠের পর কিছুটা বিজ্ঞান-কল্পকাহিনী পাঠকের জন্য চমৎকার উপহারই বটে! বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা জনপ্রিয়করণের অভিপ্রায় বইটির সার্বিক পরিবেশনা থেকেই সুস্পষ্ট। টার্গেট পাঠকের বয়স অনুযায়ী সহজ ভাষা; সকল সামর্থ্যের পাঠককে আকৃষ্ট করার জন্য স্বল্প মূল্য; স্বল্প কলেবরের সীমাবদ্ধতায়ও কনসেপ্ট ডেভেলপমেন্টের প্রচেষ্টা— দিনশেষে এগুলো বইটির সার্থকতাকে অনেক এগিয়ে দিয়েছে। বাংলায় চিত্রের ক্যাপশন এবং সৃজনশীল ইনফোগ্রাফিক্সের মাধ্যমে তরুণতর পাঠক সমাজকে আরও বেশি আকৃষ্ট করা সম্ভব বলে ধারণা করি। বিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহ বৃদ্ধিই শুধু নয়, বরং পাঠককে সাবলীল চিন্তার খোরাক যোগাতেও বইটি ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।