User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
রক্ষীবাহিনীর অজানা অধ্যায় লেখাটি ১০পর্বে প্রথম প্রকাশিত হয় "বাংলাদেশ প্রতিদিন" এ। বইটিতে রক্ষীবাহিনী সৃষ্টির পটভূমি, নানা কার্যক্রম ৭৫ এ রক্ষীববাহিনীর ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে।বইটি যতটুকু পড়েছি ভালো লেগেছে। লেখক খুব সুন্দরভাবে তার সময়কার নানা কর্মকান্ড তুলে ধরেছেন।লেখক চাটুকার এবং চাটুকারিতার দুটি দিক সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন।বইটি এককথায় অসাধারণ।
Was this review helpful to you?
or
সেদিন ছিল ছুটির দিন। আমি অফিসের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি ব্রিগেডিয়ার নুরুজ্জামানের রুমের সামনে সবুজ বাতি জ্বলছে। চিন্তা করলাম আজ ছুটির দিন নুরুজ্জামান সাহেব অফিসে কী করছেন? ড্রাইভারকে অফিসের মধ্যে গাড়ি ঢুকাতে বললাম। গিয়ে দেখি সেখানে আনোয়ারুল আলম (শহীদ)ও রয়েছে। তারা আমাকে বিস্তারিত খুলে বললো। জিজ্ঞাসা করলাম, আমাদের এখানে আনা হলো কেন? পুলিশ আছে, গোয়েন্দা আছে তাদের ওখানে নিয়ে যাক। বলল, পুলিশের কাছ থেকে সর্বহারার লোকেরা ছিনিয়ে নিয়ে যেতে পারে সেই ভয়ে এখানে রেখেছে। ব্রিগেডিয়ার সাবিহউদ্দিন, শহীদ এবং আমি সেখানে গেলাম। গিয়ে দেখি লোকটাকে হাত বেঁধে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়েছে। পুলিশের সিনিয়র অফিসাররা আছে, আর্মির লোকজনও আছে। ওই অবস্থায় দেখে আমাদের রিঅ্যাকশন হলো - 'এই লোকটার নাম শুনলে অনেক মানুষের আহার নিদ্রা বন্ধ হয়ে যেত। তাকে রক্ষীবাহিনীর অফিসে এনে এভাবে বেঁধে রাখা হয়েছে কেন?' আমরা তার হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করলাম। একটি চেয়ার এনে তাকে বসতে দেওয়া হলো। তাকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো কিন্তু সে কিছুই স্বীকার করছিল না। চেহারা মিলিয়ে সবাই ধরে নিয়েছিল এই লোকটিই সিরাজ শিকদার হবে। অবশেষে গোয়েন্দা বিভাগ তাদের বিশেষ সোর্সের মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিত করে। আমাদের ইচ্ছে ছিল তার কাছ থেকে একটি ঘোষনা আদায় করে গঠনমূলক কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায় কি-না। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কী চান? আমাদের কাছে বলুন। সরকারের সঙ্গে একটা চুক্তিতে আসুন এবং আপনার পার্টির যারা সমর্থক আছে তাদের আত্মসমর্পণ করতে বলুন। আপনি যেহেতু একটি আদর্শে বিশ্বাস করেন, তাই একটি রাজনৈতিক প্লাটফরম তৈরি করুন। গুপ্তহত্যা, খুন, রাহাজানি, ত্রাস কায়েম না করে সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে রাজনৈতিক দল গঠন করুন। আপনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। একটা সুষ্ঠু সমাধানে আসুন, দেশের জন্যও এটা মঙ্গলজনক হবে। বই থেকে নির্বাচিত অংশ ।
Was this review helpful to you?
or
চাটুকার আমলারা ক্ষমতাসীনদের জন্য প্রায়ই বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করে। বঙ্গবন্ধু কী শুনলে খুশি হবেন সেই কথাটি সাজিয়ে-গুছিয়ে তাকে বলার চেষ্টা করা হতো। একবার বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রামে এক জনসমাবেশে যোগদানের জন্য যাবেন। সময়সূচি আগে থেকেই নির্ধারণ করা ছিল। বঙ্গবন্ধু যাতে ওই দিন চট্টগ্রামে যেতে না পারেন সে জন্য জাসদ সমর্থকরা মানিক মিয়া এভিনিউতে অবস্থান নিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেয়। এর সুরাহাকল্পে গণভবনে একটি সভা ডাকা হয়। সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন, আর্মির পক্ষে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ, পুলিশের আইজি আর রক্ষীবাহিনীর পক্ষ থেকে আমি ছিলাম। এক পর্যায়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হলো We can not tolerate this. We must clear the road anyhow. দেশটাকে কি তারা মগের মুল্লুক পেয়েছে।' মোটামুটি সিদ্ধান্ত হলো যে কোনো উপায়ে ওদের হটিয়ে রাস্তা খালি করা হবে। আমি চিন্তা করলাম জাসদের নেতা-কর্মীরা সহজে পথ ছাড়বে না। জোর করলে হয়তো সমস্যা আরও ঘনীভূত হবে। এর ফলে এক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। গণভবনের ওই মিটিংয়ে উপস্থিত সবাই আমার সিনিয়র। তারপরও আমি কিছু বলার জন্য হাত উঠালাম। বঙ্গবন্ধু জিজ্ঞাসা করলেন, কি ব্যাপার? বললাম, বঙ্গবন্ধু আমার একটা আর্জি আছে। আপনি অনুমতি দিলে বলতে পারি। তিনি বললেন, 'বল তোমার কী আর্জি আছে?' বললাম, বঙ্গবন্ধু আপনি জাতির জনক। সেই হিসেবে এ দেশে কারও কাছে আপনার কোনো হার নেই। আপনার চট্টগ্রাম যাওয়া দরকার। কীভাবে যাওয়া যায় সেটাই হলো আলোচ্য বিষয়। ওই রাস্তা দিয়েই যেতে হবে, এমন তো কোনো কথা নেই। তারা রাস্তা অবরোধ করে আছে, তারা তাদের মতো করতে থাকুক। আপনি অনুমতি দিলে এয়ারপোর্টের পাশ দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া কেটে রাস্তা বানাতে পারি, ওখান থেকে আপনি হেলিকপ্টারযোগে চট্টগ্রাম চলে যাবেন। অবরোধকারীরা রাস্তায় তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাক। ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ আমার বক্তব্যকে জোরালোভাবে সমর্থন দিলেন। ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের অনুরোধে বঙ্গবন্ধু রাজি হলেন এবং সেই পরিকল্পনা মোতাবেক বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রামে গেলেন। পরে আমি সিভিল ড্রেসে জাসদের মিটিংয়ে গেলাম। ওখানে আমার বন্ধু যারা ছিল তারা বলল, আমাদের কি ভয় দেখাতে এসেছো? এখান দিয়ে যেতে হলে আমাদের লাশের ওপর দিয়ে যেতে হবে। আমি বললাম, তোমরা এখানে অপেক্ষা করতে থাক চট্টগ্রাম থেকে বঙ্গবন্ধু এই পথ দিয়ে ফিরবেন। তারা ব্যাপারটা বুঝতে পারল না। বললাম, বঙ্গবন্ধু এখন চট্টগ্রামের জনসভায়। ওরা তো রীতিমতো অবাক। তা কী করে সম্ভব? আমি বললাম, বিশ্বাস না হলে গিয়ে রেডিওতে শোন। এরকম গঠনমূলক সিদ্ধান্তের ফলে একটি অবশ্যম্ভাবী দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পাওয়া গেল। কোনো ইস্যুতে কেউ যদি বঙ্গবন্ধুকে বুঝিয়ে বলতে পারতেন, তিনি তা মেনে নিতেন। আর একটি ঘটনা আমার মনে পড়ে, কুষ্টিয়ার একটি দুর্ঘটনাকে উপলক্ষ করে আমাকে গণভবনে ডাকা হয়েছিল। আমি বঙ্গবন্ধুর টেবিলের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। ইতোমধ্যে প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি রুহুল কুদ্দুস সাহেব তিনটি ফাইল নিয়ে বঙ্গবন্ধুর কক্ষে প্রবেশ করেন। আমি তাদের কথাবার্তার মধ্যে না থাকার জন্য প্রস্থানের অনুমতি চাইলে বঙ্গবন্ধু ইশারায় আমাকে বসতে বলেন। রুহুল কুদ্দুস সাহেব দুটি ফাইল স্বাক্ষরের জন্য বঙ্গবন্ধুর কাছে উপস্থাপন করেন। ফাইল দুটি ছিল পূর্ব পাকিস্তানের প্রাক্তন গভর্নর মোনায়েম খানের জামাতা ও প্রাক্তন মন্ত্রী ওয়াহিদুজ্জামানের ছেলের চাকরি থেকে বরখাস্তের প্রস্তাব সংবলিত। বঙ্গবন্ধু ফাইল দুটি দেখার পরে রুহুল কুদ্দুস সাহেবের কাছে ফেরত দেন এবং বলেন, মোনায়েম খান ও ওয়াহিদুজ্জামান দুজনেই আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ছিল, এ কথা ঠিক। কিন্তু তাই বলে আমার হাতে তাদের ছেলেদের কোনো ক্ষতি হবে এটা কোনোমতেই কাম্য হতে পারে না। আপনি ফাইল দুটি নিয়ে যান। আর কখনো আমার কাছে পাঠাবেন না। এরপর তৃতীয় ফাইলটি বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষরের জন্য উপস্থাপন করেন। সেটি ছিল একটি প্রজেক্ট অনুমোদনের ফাইল। বঙ্গবন্ধু তাকে বললেন, 'ফাইলটা রাখেন'। কিছুক্ষণ পর রুহুল কুদ্দুস সাহেব আবারও ফাইলে সই করতে বলেন। উত্তরে বঙ্গবন্ধু বললেন, আপনি ফাইলটি রেখে যান। আমি সই করে পাঠিয়ে দেব। রুহুল কুদ্দুস সাহেব চলে যাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু তার যুগ্ম সচিব মনোয়ার সাহেবকে ডাকলেন এবং বললেন, 'দেখ তো মনোয়ার এই ফাইলে সই করা যায় কিনা?' মনোয়ার সাহেব ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ সরকারি কর্মকর্তা। তিনি ফাইলটি পড়ে বললেন, না স্যার, এই ফাইলে আপনার সই করা উচিত হবে না। বঙ্গবন্ধু বললেন, 'তাহলে কী করা যায় বল তো? তোর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি সাহেবই তো ফাইলটা নিয়ে এসেছেন। তার ফাইলে সই না করে ফেরত দেওয়াটাও ভালো দেখায় না। মনোয়ার সাহেব বললেন, 'স্যার, ফাইলের উপরে লিখে দেন, 'পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য প্রেরণ করা হোক।' বঙ্গবন্ধু আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, 'দেখছিস, সিএসপিদের বুদ্ধি।' মনোয়ার সাহেবের পরামর্শ অনুযায়ী তাই করা হলো। প্রশাসনিক ব্যাপারে এরকম সিদ্ধান্ত তিনি নিতেন কিংবা তাকে বুঝালেও তিনি বুঝতেন। রক্ষীবাহিনী গঠনের কিছুদিন পরের কথা। আমি আর আনোয়ারুল আলম (শহীদ) কী কাজে যেন গিয়েছি। বঙ্গবন্ধু তখন বলছিলেন, 'দেশ তো তাজউদ্দীনরাই চালাবে। আমি দেশ চালানোর দায়িত্ব নিতে চাই না। তোরা স্মৃতিসৌধের পাশে আমার জন্য একটি বাড়ির জায়গা দেখিস, যেখানে বসে আমি স্মৃতিসৌধকে প্রাণভরে দেখতে পারি। প্রথমে তার এরকমই চিন্তা-ভাবনা ছিল। কিন্তু যখন তাকে বুঝানো হলো যে, বঙ্গবন্ধু আপনি ছাড়া দেশ চলবে না। আপনি ছাড়া কেউ কন্ট্রোল করতে পারবে না। আপনি যাদের হাতে দেশের দায়িত্ব তুলে দিতে চাচ্ছেন, এরা মুক্তিযুদ্ধের সময় কী করেছে আপনি তো দেখেননি? এটা-ওটা আরও কত রকম বুঝাতে থাকে। বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায় থাকলে তারা তোষামোদী করে স্বার্থ উদ্ধার করতে পারবে। তাজউদ্দীন সাহেব ক্ষমতায় থাকলে এতটা তোষামোদী করা যাবে না। এই চাটুকারদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে দেওয়া বিভিন্ন তথ্য এবং উপদেশের ফলশ্রুতিতে বঙ্গবন্ধুর আজীবনের রাজনৈতিক সাথী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ সাহেবের সঙ্গে বিরূপ সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। এক সময় জনাব তাজউদ্দীন আহমদকে মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ দেওয়া হয়।