User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনার দেশ। বাংলাদেশের সাহিত্যও এই সম্ভাবনার বাইরে নয়। অল্প কয়েকজন লেখক সম্ভাবনার কথা গোচরে আনেন, বারবার স্মরণ করিয়ে দেন। রতনতনু ঘোষ তাদের অন্যতম। তিনি মূলত কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক। সমকালীন বিষয়ে প্রতি সপ্তাহে একাধিক দৈনিক পত্রিকায় বিশ্লেষণমূলক কলাম লেখেন। পরিবর্তনশীল পৃথিবী, অচর্চিত বিষয়ের গবেষণা, বিশ্বায়ন নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণও তার পছন্দের বিষয়। অঙ্কুর প্রকাশন থেকে প্রকাশিত রতনতনু ঘোষের ‘বাংলাদেশের সাহিত্য : প্রবন্ধ, কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক’ অনেকেরই পাঠ্যতালিকায় স্থান পাওয়ার দাবি রাখে। বিশেষ করে সাহিত্যের ছাত্র ও শিকদের জন্য দরকারি রেফারেন্স বই হিসেবে কাজ দেবে। শুরুর দিক থেকে চলতি এ পর্যন্ত বাংলাদেশের সাহিত্যের নানান দিক- প্রবন্ধ, কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস ও নাটক নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন তিনি। আলাদা আলাদা অধ্যায়ে বিষয়গুলোতে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোকপাত করেছেন লেখক। প্রসঙ্গক্রমে তুলে এনেছেন অসংখ্য সাহিত্যিকের নাম ও তাদের সৃষ্টিকর্ম। বাংলা সাহিত্যের গতিপ্রকৃতি শুরু থেকে সম্প্রতি- নির্মোহভাবে বিধৃত করেছেন লেখক। বিশ্বজুড়ে বাংলা ভাষার গৌরবময় অবস্থান তৈরিতে ভূমিকা রেখে বাংলা সাহিত্য। বাংলাদেশেও বিশ্বমানের সাহিত্য রচিত হচ্ছে কিন্তু কেন কী কারণে তা বিশ্ব-পাঠকের গোচরে আসছে না বা আনছে না- পরোভাবে এমন প্রশ্নও ছুড়ে দিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের ছোটগল্পের যেমন বর্ণাঢ্য ইতিহাস সূচিত হয়ে চলেছে তেমনি কবিতারও। বইটিতে প্রবীণ কবি থেকে শুরু করে হালের তরুণতর কবি যশোপ্রার্থীরও সাহিত্য এবং সাহিত্যচর্চা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন। রতনতনু ঘোষের অনুসন্ধানী দৃষ্টি, চকিত আলোয় পরিস্ফুটিত হয়ে উঠেছে অনেক কিছুই, সাহিত্যের পূর্বাপর। এ আলো দৃশ্যমান হয়ে যে আয়না তৈরি করেছে, সেই আয়নার নাম হতে পারে বাংলা সাহিত্য ইতিহাসের আয়না! বাংলাদেশের সাহিত্য : অন্তহীন অভিযাত্রা হাসান সাইফ : ‘দৃশ্যমান বাস্তবতার বাইরেও সাহিত্যিকের চেতনায় একটি ভিন্নরকম ¯^দেশ থাকে। সাহিত্যিকের অস্তিত্ব জুড়ে থাকা ¯^নির্মিত ¯^দেশের বহুমাত্রিক রূপায়ন ঘটে সাহিত্যে। কখনো কবিতায়, কখনো কথাসাহিত্যে, কখনে প্রবন্ধে এবং কখনো নাটকে প্রতিফলিত হয় সাহিত্যিকের স্বকীয় স্বদেশ, সমাজ, সময় ও আকাঙ্ক্ষা।’ এই কথাগুলো দিয়ে ‘বাংলাদেশের সাহিত্য’ গ্রন্থের ভ‚মিকা শুর“ করেছেন রতনতনু ঘোষ। এই গ্রন্থে তাঁর আলোচনার বিষয়বস্তু ‘সমগ্র বাংলা সাহিত্য’ নয়, নির্দিষ্টভাবে ‘বাংলাদেশের বাংলা সাহিত্য’। বাংলা সাহিত্য তো বাংলা সাহিত্যই নয়, তা সে সাহিত্য বাংলাদেশে রচিত হোক আর পশ্চিমবঙ্গে রচিত হোক। তাহলে রতনতনু ঘোষ কেন আলাদাভাবে শুধু বাংলাদেশের সাহিত্যকেই আলোচনায় আনলেন? প্রশ্নটির উত্তর লুকিয়ে আছে শুর“তে উদ্ধৃত কথা কয়টিতে। আসলে আমরা কেউ মানি আর না মানি দীর্ঘদিনের জলবায়ু, ভৌগোলিক অবস্থা, ধর্ম, পেশা ইত্যাদি নানা কিছুর প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মানুষের দৈনন্দিন জীবনধারায় সুস্পষ্ট পার্থক্য ফুটে উঠেছে। আর সাহিত্য যেহেতু মানুষের দৈনন্দিন জীবনধারারই শিল্পয়িত প্রতিচ্ছবি, তাই বাংলা সাহিত্যও এই বা¯—বতার বাইরে নয়। আর তার ফলে পশ্চিমবঙ্গের বাংলা সাহিত্য আর বাংলাদেশের বাংলা সাহিত্যের মধ্যেও সুস্পষ্ট পার্থক্য পরিল¶িত হয় আমাদের চোখের সামনে। রতনতনু ঘোষের ‘বাংলাদেশের সাহিত্য’ গ্রন্থটিতে স্থান পেয়েছে দ্বিতীয়টিরই ইতিহাস, আলোচনা ও সমালোচনা। ‘বাংলাদেশের সাহিত্য’ গ্রন্থটিকে পাঁচটি মূল অংশে বিভক্ত করেছেন রতনতনু ঘোষ। পাঁচটি অংশে আলাদা আলাদাভাবে আলোচনা করা করা হয়েছে সাহিত্যের পাঁচটি আলাদা আলাদা বিভাগ নিয়ে। আর এই বিভাগগুলো হচ্ছেÑ প্রবন্ধ, কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস এবং নাটক। প্রতিটি বিভাগ নিয়ে একেকটি প্রবন্ধই ফেঁদেছেন লেখা বলা যায়। একেকটি প্রবন্ধে আমাদের ভ্রমণ করাবে সাহিত্যের একেকটি প্রদেশে এবং অবশ্যই বাংলাদেশের সাহিত্যের। আর আমাদের মনে হবে যেন একেকটি অš—হীন অভিযাত্রায় নেমেছি আমরা। ‘বাংলাদেশের সাহিত্য’ গ্রন্থটির আলোচনা শুর“ হয়েছে সাহিত্যের একটি অত্যš— শক্তিশালী বিভাগ প্রবন্ধ বিষয়ে আলোচনা দিয়ে। লেখক এই অংশটির নামকরণ করেছেন ‘বাংলাদেশের প্রবন্ধ : সাহিত্য, সংস্কৃতি, ভাষা ও মুক্তিযুদ্ধ’। প্রবন্ধ সাহিত্য বিশেষত বাংলাদেশের প্রবন্ধ সাহিত্য বিষয়ে একটি সুগভীর আলোচনা রয়েছে এ অংশে। রতনতনু ঘোষের মতে, ‘প্রবন্ধ হলো চিš—া ও মনন প্রকাশের নির্ভরযোগ্য সাহিত্যমাধ্যম।’ আর লেখকের এই মত যে কতটা বা¯—ব তা বাংলা সাহিত্যের পাঠককুল বিশেষ করে বাংলা প্রবন্ধের একনিষ্ঠ পাঠককুল মানেই জানেন। নিঃসন্দেহে প্রবন্ধ পৃথিবীর সকল ভাষার সাহিত্যের একটি শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য সাহিত্যমাধ্যম। এখানে বাংলাদেশের প্রবন্ধ সাহিত্যের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন লেখক। আলোচনার শুর“তে রতনতনু ঘোষ প্রবন্ধের মৌলিকতা আর যৌগিকতা বিষয়ে ধারণা দিয়েছেন। তারপর তিনি ক্রমাš^য়ে আলোচনা করেছেন বাংলাদেশের প্রবন্ধ সাহিত্যের ঐতিহাসিক পটভ‚মি, বাংলাদেশের প্রাবন্ধিকগণ, বাংলাদেশের প্রবন্ধের শ্রেণিকরণ ইত্যাদি বিষয়ে। রতনতনু ঘোষ বাংলাদেশের প্রবন্ধের শ্রেণিকরণ করেছেন প্রবন্ধের বিষয়বস্তু ও উদ্দেশ্য এই দুটি দিক থেকে। তাঁর মতে, ‘তাতে প্রাবন্ধিকের দৃষ্টিভঙ্গি, মেধাবী তৎপরতা ও বিষয়বস্তুর বিন্যাস হতে পারে।’ এ¶েত্রে রতনতনু ঘোষ বাংলাদেশের প্রবন্ধের যে শ্রেণিগুলোর উলেখ করেছেন সেগুলো হচ্ছেÑ ১. সাহিত্যবিষয়ক প্রবন্ধ : যার অš—র্গত কবিতা, উপন্যাস, গল্প, নাট, প্রাচীন ও মধ্যযুগ, আধুনিক সাহিত্য, শিশুসাহিত্য, লোকসংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয়ক প্রবন্ধ। ২. সাহিত্য সমালোচনা : যার অš—র্গত রভীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজর“ল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, জসীম উদ্দীন প্রমুখ কবি-সাহিত্যিকগণের সাহিত্য সমালোচনা বিষয়ক প্রবন্ধ। এছাড়াও লেখক প্রবন্ধের অন্যান্য যে সব শ্রেণির নামোলেখ কেেছন সেগুলো হচ্ছেÑ অনুবাদ ও বিদেশি সাহিত্য, তুলনামূলক সাহিত্য, শিল্পকলা ও নন্দনতত্ত¡, ভাষা ও কাব্যতত্ত¡, সংস্কৃতি, ভাষা-আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও ¯^াধীনতা, উপজাতীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি, সাময়িকপত্র ইত্যাদি বিষয়ক প্রবন্ধ। অবশেষে রতনতনু ঘোষ তাঁর ‘বাংলাদেশের প্রবন্ধ’ বিষয়ক আলোচনার ইতি টেনেছেন এই বলে, ‘বাংলাদেশের প্রবন্ধ অনেক ব্যাপক ও গভীর। চার দশক জুড়ে বাংলা প্রবন্ধের চিš—াগত প্রবণতা ও দৃষ্টিভঙ্গি সরলরেখায় সনাক্ত করা সম্ভবপর নয়।... কালের বিচারে প্রাবন্ধিকদের মূল্যায়ন ও চিš—াধারা তাদেরকে সাহিত্য পরিসরে টেকসই করে। প্রবন্ধ ধারণ করে আর্থ-রাজনৈতিক সংকট, সমাজপ্রবণতা, সমাজবা¯—বতা ও সমাজদর্শন। ...প্রাবন্ধিকদের চিš—াধারা গ্রহণ করে আমরা প্রগতিপূর্ণ সমাজ, ভবিষ্যতের পথরেখা এবং সংকট উত্তরণের উন্নয়নসূত্র পেতে পরি। বাংলাদেশকে অগ্রসর করতে হলে এসব চিš—াধারার নির্যাস বা¯—ব জীবনে প্রয়োগযোগ্য। তাহলেই বাংলাদেশের মননঋদ্ধ ও উন্নত সাংস্কৃতিক ভবিষ্যৎ গঠন করা যাবে। ‘বাংলাদেশের সাহিত্য’ গ্রন্থের দ্বিতীয় আলোচনার বিষয়বস্তু হচ্ছে ‘বাংলাদেশের কবি ও কবিতা’। রতনতনু ঘোষ ‘দশক’ ধরে ধরে আলোচনা করেছেন কবি ও কবিতা বিষয়ে। কেননা ‘কবিদের চলমান চিš—া প্রত্যেক দশকের প্রবণতাকে সুস্পষ্ট করেছে। সমকালীন চিš—াধারা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও যুগমানস কবিদের কবিকৃতিকে বিশেষত্ব দান করেছে।’ যদিও ‘কোন কবি কালের গÊি পেরিয়ে, দেশ ও সমাজের পরিসর পেরিয়ে বৈশ্বিক চেতনার আলো বি¯—ার করেছেন।’ গত শতকের চার দশক থেকে এই শতকের শূন্য দশক পর্যš— মোট আটটি দশক নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা করেছেন রতনতনু ঘোষ। তুলে ধরেছেন প্রতিটি দশকের পটভ‚মি, কবিবৃন্দের পরিচয় এবং প্রবণতা। আলোচনা সং¶িপ্তকরণের ¯^ার্থে আমরা এখানে প্রতিটি দশকের উলেখযোগ্য কবিবৃন্দের নাম এবং প্রবণতা সং¶েপে তুলে ধরলাম। চার দশকের কবিবৃন্দ : আহসান হাবীব, ফরর“খ আহমদ, আবুল হোসেন, সৈয়দ আলী আহসান প্রমুখ। প্রবণতা : এ দশকে বাংলাদেশের কবিতা চেতনাগত দিক থেকে দুটি প্রধান ধারায় সুবিন্য¯—Ñ ১. পাকি¯—ানপন্থি সাম্প্রদায়িক ধারা ও ২. অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদী ধারা। পাঁচ দশকের কবিবৃন্দ : শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, আল মাহমুদ, ফজল শাহাবুদ্দিন, শহীদ কাদরী প্রমুখ। প্রবণতা : বাংলাদেশের কাব্যচর্চার পরিসরে এ দশক সবচেয়ে ‘উজ্জ্বলতম’ দশক। এ দশকের কবিরা বাংলাদেশের কবিতাকে বিশ্বমানের মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। এ দশকের কবিদের কবিতায় বিশেষভাবে দিল রোমান্টিকতা, আধুনিকতা এবং প্রণতী। সর্বোপরি এ দশক ভাষা-আন্দোলনের দশক। তাই ভাষা-আন্দোলন এ দশকের কবিদের বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল। ছয় দশকের কবিবৃন্দ : নির্মলেন্দু গুণ, হায়াৎ মামুদ, মহাদেব সাহা, আসাদ চৌধুরী, হুমায়ুন কবির, হুমায়ুন আজাদ, রফিক আজাদ, হেলাল হাফিজ প্রমুখ। প্রবণতা : এ দশকের কবরিা ‘বিট’ এবং ‘হাংরি’ জেনারেশনের আদলে আন্দোলন গড়ে তোলেন। তাঁদের এ আন্দোলন চলে ছোটকাগজ ‘¯^া¶র’, ‘স্যাড জেনারেশন’ এবং ‘শ্র“তি’ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। ছয় দশকের কবিতার অবয়ব ও অ¯ি—ত্ব তাই বিপন্নতাবোধ আক্রাš—। এই দশক যেমন বাংলাদেশের রাজনীতিরক জন্য ক্রাšি—কাল, তেমনি বাংলাদেশের কবিতার জন্য ক্রাšি—কাল। সাত দশকের কবিবৃন্দ : দাউদ হায়দার, হাসান হাফিজ, ত্রিদিব দ¯ি—দার, র“দ্র মুহম্মদ শহীদুলাহ, তসলিমা নাসরিন, আসলাম সানী প্রমুখ। প্রবণতা : এ দশকের কবিবৃন্দ কবিতাকে নতুন বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং বাংলা কবিতাকে পৌঁছে দিয়েছেন নতুন মাত্রায়। এ দশকের কবিতা ফিরিয়ে এনেছিল বাংলায় মাটিতে। বা¯—ববাদে পা রেখেই এ দশকের কবিদের নান্দনিকতার দিকে যাত্রা। আট দশকের কবিবৃন্দ : খোন্দকার আশরাফ হোসেন, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ, রেজাউদ্দিন স্টালিন, আবদুল হাই শিকদার প্রমুখ। প্রবণতা : এ দশকের কবিতার প্রবণতাগুলো হচ্ছেÑ ছন্দ নিয়ে পরী¶া-নিরী¶া, পরিপার্শ্বের ঘটনাবলির অভিঘাতে মনোজগেত যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হয় তার প্রকাশ, ইউরোপীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রভাব, নাগরিক চেতনা ইত্যাদি। নয় দশকের কবিবৃন্দ : কামর“জ্জামান কামু, শাহনাজ মুন্নী, টোকন ঠাকুর, ব্রাত্য, মজনু শাহ, আলফ্রেড খোকন প্রমুখ। প্রবণতা : এ দশকের কবিরা কবিতাকে মানবহৃদয়ের নিগূঢ় রসায়ন হিসেবে ভাষারূপ দিতে চেষ্টা করেছেন। এ দশকের কবিতা বাংলা কবিতার আঙ্গিকরীতির মোড় ঘোরানো কবিতা। শূন্য দশকের কবিবৃন্দ : নওশাদ জামিল, সাকিরা পারভিন, জুন্নু রাইন, র“দ্র শায়ক, জাহানারা পারভীন, বিপাশা মন্ডল, শফিক হাসান প্রমুখ। প্রবণতা : এ দশকের কবিতায় প্রযুক্তিনির্ভরতার ছাপ স্পষ্ট। কেবল কবিতায়ই নয়, কবিতায় নামকরণেরও প্রচুর ইংরেজির ব্যবহার চোখে পড়ে যা এ দশকের একটি প্রবণতা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। ‘বাংলাদেশের কবি ও কবিতা’র পরে গ্রন্থটির আলোচ্য বিষয় ‘বাংলাদেশের ছোটগল্পে সমাজ ও রাজনীতি। এ বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে লেখক যে অধ্যায়গুলোর অবতারণা করেছেন সেগুলো হচ্ছেÑ ‘পটভ‚মি’, ‘শীর্ষস্থানীয় গল্পকারগণ’, ‘প্রবণতা’, ‘¯^াধীনতা পূর্বকাল’, ‘¯^াধীনতা পরবর্তীকাল’, ‘উলেখযোগ্য পত্রিকাসমূহের প্রকাশিত গল্প’, ‘ভাষা-আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্প’ ইত্যাদি। ‘বাংলাদেশের কবি ও কবিতা’র মতো রতনতনু ঘোষ বাংলাদেশের গল্পকারদেরও দশকওয়ারি বিভাজন করেছেন এই আলোচনায়। আলোচনা করেছেন গত শতকের পাঁচ-এর দশক থেকে নয়-এর দশক পর্যš— গল্পকারবৃন্দ এবং তাঁদের গল্পসমূহ নিয়ে। আলোচনার শেষ পর্যায়ে রতনতনু ঘোষ বাংলাদেশে নির্মিত ছোটগল্পভিত্তিক চলচ্চিত্রসমূহের একটি তালিকা তুলে ধরেছেন। পরিশেষে লেখক বলেছেন, ‘গল্পেও থাকে গল্প, ইতিহাসেরও থাকে ইতিহাস। বিদ্যমান সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি আর পরিবার ও ব্যক্তিগত জীবনের পরিসরে থাকবে গল্প। ...বাংলাদেশের প্রে¶াপটে সমকালীন রাজনীতি ও পরিবর্তনশীল সমাজের চেতনাতর“ণদের বিশেষত নতুন গল্পকারদের মধ্যে অধিক সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন। নইলে তারা রাজনীতিসচেতন ও সমাজচেতনাসমৃদ্ধ গল্প লিখতে পারবে না। ‘বাংলাদেশের সাহিত্য’ গ্রন্থের এর পরের আলোচ্য প্রসঙ্গ বাংলাদেশের উপন্যাস সাহিত্য। বাংলাদেশের অধিকাংশ উপন্যাস রচিত হয়েছে সমাজবা¯—বতার আলোকে। সঙ্গত কারণেই রতনতনু ঘোষ বাংলাদেশের উপন্যাস বিষয়ক এই আলোচনার নামকরণ করেছেন ‘বাংলাদেশের উপন্যাসে সমাজরূপাš—র ও বা¯—বতা’। এই আলোচনায় লেখক বাংলাদেশের উপন্যাস সাহিত্যকে সময়ের প্রে¶াপটে তিনটি কালপর্বে বিভক্ত কেেছন। এগুলি হচ্ছেÑ প্রাক সাতচলিশ পর্ব, বাংলাদেশ পর্ব এবং ¯^াধীনতা উত্তরকাল। প্রাক-সাতচলিশ পর্বে বাংলাদেশের ঔপন্যাসিকগণ তাঁদের ¯^কীয় নিষ্ঠার পরিচয় রেখেছেন গ্রামমুখী জীবনযাত্রা রূপায়ণে। আলোচনার মধ্যে লেখক প্রাক-সাতচলিশ পর্বের বাংলাদেশের কোনো ঔপন্যাসিককের নামোলেখ না করলেও আমরা ঐ সময়ের শক্তিমান ঔপন্যাসিক হিসেবে মীর মশাররফ হোসেন এবং কাজী ইমদাদুল হক-এর নামের সাথে বিশেষভাবে পরিচিত। বিশেষভাবে অবগত তাঁদের সৃষ্ট উপন্যাস ‘গাজী মিয়ার ব¯—ানী’, ‘উদাসীন পথিকের মনের কথা’ অথবা ‘আব্দুলাহ’র সম্পর্কে। এরপরে এলো বাংলাদেশ পর্ব। মূলত এই পর্বকে ২৪ বছরের ¯^ল্পস্থায়ী পাকি¯—ান পর্বও বলা যেতে পারে। ¯^াধীনতার পূর্বে বাংলাদেশ ছিল সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্য¯—। এই সংকটের অনিবার্য ছায়াপাত ঘটেছে বাংলাদেশের উপন্যাসে। এই সময়ের বাংলাদেশের উপন্যাস সাহিত্য নিয়ে মূল্যায়ন করতে গিয়ে রতনতনু ঘোষ এই আলোচনায় লিখেছেনÑ ‘¯^াধীনতা-পূর্ব সমাজজীবনের বৈচিত্র্যময় জিজ্ঞাসার রূপায়ণে পূর্ববাংলার ঔপন্যাসিকগণ যে অঙ্গীকার ও অনুশীলনের ¯^া¶র রেখেছেন আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রে¶িতে তা নিঃসন্দেহে ঐতিহ্য সৃষ্টিকারী, ¯^তন্ত্র ও সম্ভাবনাময়।’ ¯^াধীনতা-ফ‚র্ব বাংলাদেশের উপন্যাস সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতে গেলে সবার আগে আসে সৈয়দ ওয়ালীউলাহর ‘লালসালু’ উপন্যাসের নাম। কেননা এই উপন্যাসেই প্রথম সামগ্রিকভাবে অভিব্যক্ত হয় পূর্ববাংলার সমাজ গঠন ও পরিবারের অ¯ি——ব¯^রূপ। এছাড়া এসময়ের অন্যান্য উলেখযোগ্য ঔপন্যাসিক এবং উপন্যাসগুলো হচ্ছেÑ আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর ‘চন্দ্র দ্বীপের উপাখ্যান’ (১৯৫২), আবু জাফর শামসুদ্দীনের ‘ভাওয়াল গড়ের উপাখ্যান’ (১৯৬৮), শামসুদ্দীন আবুল কালামের ‘আলমনগরের উপকথা (দুই মহল)’ (১৯৬২), সৈয়দ শামসুল হকের ‘এক মহিলার ছবি’ (১৯৫৯), রশীদ করিমের ‘উত্তম পুর“ষ’ (১৯৬১), শওকত ওসমানের ‘জননী (১৯৫৮), রাজিয়া খানের ‘অনুকল্প’ (১৯৫৯) ইত্যাদি। ¯^াধীনতা-উত্তরকালে বাংলাদেশের উপন্যাসের একটি প্রধান অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করেছে মুক্তিযুদ্ধ। এসময় বাংলাদেশের ঔপন্যাসিকদের চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ প্রধান হয়ে উঠেছিল। বাংলাদেশের উলেখযোগ্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাসগুলো হচ্ছেÑ শওকত ওসমানের ‘জাহান্নাম হইতে বিদায়’ (১৯৭১), রশীদ করিমের ‘আমার যত গানি’ (১৯৭৩), আহমদ ছফার ‘ওঙ্কার’ (১৯৭৫), শওকত আলীর ‘যাত্রা’ (১৯৭৬), মাহমুদুল হকের ‘খেলাঘর’ (১৯৭৬), সেলিনা হোসেনের ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ (১৯৭৬), সৈয়দ শামসুল হকের ‘নিষিদ্ধ লোবান’ (১৯৮১) ইত্যাদি। মুক্তিযুদ্ধ ছাড়াও ¯^াধীনতা পরবর্তী পর্যায় থেকে বর্তমান সময় পর্যš— বাংলাদেশের উপন্যাস সাহিত্যে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, পারিবারিক, মন¯—াত্তি¡ক ও রাজনৈতিক অবস্থার প্রতিফলন ঘটেছে। বাংলাদেশের উপন্যাস নিয়ে আলোচনার শেষ পর্যায়ের রতনতনু ঘোষ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রায়িত উপন্যাসসমূহ নিয়ে সং¶েপে আলোচনা করেছেন। ১৯৫৯ সালে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাস অবলম্বনে কে. জি. কারদার পরিচালিত ‘জাগো হুয়া সাভেরা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে শুর“ হয় বাংলা উপন্যাসের চলচ্চিত্রায়ন। তারপর থেকে বাংলাদশে অসংখ্য চলচ্চিত্র নির্মিথ হয়েছে উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে। বাংলাদেশের উপন্যাসসমূহ চলচ্চিত্রায়িত হয়ে দেশের সাংস্কৃতিক পরিসরকে নানাভাবে প্রসারিত করেছে। রতনতনু ঘোষ তাঁর বাংলাদেশের উপন্যাসবিষয়ক আলোচনা শেষ করেছেন এই বলেÑ ‘¯^াধীনতা উত্তরকালে জনগণের কাক্সি¶ত মুক্তি ও পরিপূর্ণতা ঘটেনি। আইন-শৃক্সখলার বিপর্যয়, সামাজিক বিশৃক্সখলা ও অনাচার, যুব বেকারত্ব ও হতাশা প্রবল রূপ ধারণ করে। ...এসব ঘটনা উপন্যাসরে বিভিন্ন কাহিনীর আশ্রয়ে উপস্থিত হয়েছে। ...প্রায় পাঁচ দশক ধরে ¯^াধীন বাংলাদেেশ সামাজিক দ্ব›দ্ব, বি¶োভ, পারিবারিক ভাঙন, বিচ্ছিন্নতা, ব্যক্তি জীবনের আত্মিক সংকট ও অব¶য়, আর্থসামাজিক অনাকাক্সি¶ত অবস্থা, শৈল্পিক ভাষ্য ও সংলাপাশ্রিত সময়চেতনা ধারণ করেছেন ঔপন্যাসিকগণ ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের বি¯—ীর্ণ পরিসরে বাংলাদেশের উপন্যাস।’ রতনতনু ঘোষের ‘বাংলাদেশের সাহিত্য’ গ্রন্থের পঞ্চম ও সর্বশেষ আলোচনার বিষয় বাংলাদেশের নাটক। এই অধ্যায়ের নাম ‘বাংলাদেশের নাট্যচর্চা : সামাজিক পরিবর্তনের প্রক্রিয়া’। নাটক নিঃসন্দেহে কেবল বাংলাদেশের সাহিত্যেরই নয়, বিশ্বের প্রায় সকল ভাষায় সকল সাহিত্যের একটি উলেখযোগ্য সাহিত্যমাধ্যম। আলোচনার সূচনায় রতনতনু ঘোষ নাটক সম্বন্ধে বলেছেন, ‘সমাজজীবনের শৈল্পিক প্রতিচ্ছবি ও প্রতিবেদন’। প্রকৃত নাট্যকার একজন জীবনাভিজ্ঞ ও সামদার্শনিক। সামাজিক মানুষের আশা আকাক্স¶া, বা¯—ব-সম্ভবনা, চাহিদা-প্রয়োজন নাটকে উঠে আসে অনিবার্যভাবে। বিশ্বজনীন প্রে¶াপটে সমাজজীবনের চিত্র ফুটে উঠেছে মলিয়ের, ইবসেন, শেক্সপিয়র, রবীন্দ্রনাথ প্রমুখের নাটকে। আর বাংলাদেশের প্রে¶াপটে মুনীর চৌধুরী, আবদুলাহ আল মামুন, মামুনুর রশীদ, মমতাজউদ্দীন আহমদ, সেলিম আল দীন প্রমুখের নাটকে সমাজরূপাš—র প্রচেষ্টা ল¶ণীয় বিষয়। সমগ্র বাংলা নাট্যসাহিত্যে গিরিশ ঘোষ, দীনবন্ধু মিত্র, মধুসূদন দত্ত প্রমুখের নাম স্মরণীয়। এ অধ্যায়ের শুর“র দিকে রতনতনু ঘোষ সং¶েপে আলোচনা করেছেন পাঠ্যধারার নাটক থেকে টেলিভিশনের নাটক নিয়ে। এরপর তিনি আলোচনা এগিয়ে নিয়েছেন বাংলাদেশের নাট্যচর্চার চলিশ বছর বিষয়ে। বাংলাদেশের নাট্যচর্চার চলিশ বছরের ইতিহাস আলোচনা প্রসঙ্গে উঠে এসেছে বাংলাদেশের ¯^াধীনতা-পূর্ব পর্যায়ের নাটকের কথা, অনুবাদ ও রূপাš—রিত নাটক এবং বাংলাদেশ পর্যায়ের নাটক সম্পর্কে ধারণা। বাংলাদেশ পর্যায়ের নাট্যসাহিত্যের প্রবণতাগুলোর মধ্যে লেখক এখানে উলেখ করেছেনÑ মুক্তিযুদ্ধের নাটক, প্রতিবাদের নাটক, প্রতিরোধের নাটক, ইতিহাস-ঐতিহ্য-পুরাণ পুনর্মূল্যায়নধর্মী নাটক, সামাজিক নাটক এবং অনুবাদ বা র“পাš—রিত নাটক। এই আলোচনায় শেষ পর্যায়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক বিষয়ে একটি বি¯—ৃত বর্ণনা রেখেছেন রতনতনু ঘোষ। বাংলাদেশের উলেখযোগ্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটকগুলো হচ্ছেÑ মমতাজউদ্দীন আহমদের ‘¯^াধীনতা’ (১৯৭১), সৈয়দ শামসুল হকের ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ (১৯৭৬), আলাউদ্দিন আল আজাদের ‘নিঃশব্দ যাত্রা’ (১৯৭২), নীলিমা ইব্রাহীমের ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ (১৯৮৮), আবদুলাহ আল মামুনের ‘সেনাপতি’ (১৯৮০), মামুনুর রশীদের ‘ইবলিশ’ (১৯৮২), সাঈদ আহমদের ‘প্রতিদিন একদিন’ (১৯৭৮) ইত্যাদি। রতনতনু ঘোষ আলোচনার ইতি টেনেছেন বাংলাদেশের নাটকের উদ্ভব ও বিকাশের প্রসঙ্গ তুলে। বাংলাদেশের নাট্যসাহিত্যের উদ্ভব সম্পর্কে বলতে গিয়ে রতনতনু ঘোষ বলেছেনÑ ‘বাংলা নাটকের উদ্ভব পাশ্চাত্য নাটক থেকে নয়; বরং হাজার বছরের জারি, সারি, পালা, মঙ্গলকাব্য, পাঁচালি, লীলা, গম্ভীরাÑ এসব দেশজ ঐতিহ্য থেকে কালক্রমে বাংলা নাটকের জন্মÑ এ বিশ্বাস নাট্যকারদের নতুন রূপকল্প নিরী¶ায় উদ্বুদ্ধ করেছে।’ বাংলাদেশের নাটকের বর্তমান সময় পর্যš— যে সকল ¶েত্রে বিকাশ সাধিত হওয়ার কথা রতনতনু ঘোষ উলেখ করেছেন এখানে সেগুলো হচ্ছেÑ সংলাপ নির্মিতি, আঞ্চলিক শব্দের কুশলী প্রয়োগ, বিশেষ নাট্যমুহূর্ত নির্মাণ ইত্যাদি। রতনতনু ঘোষ নিজেও বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান সুসাহিত্যিক এবং সাহিত্যগবেষক। সেই সাথে তিনি একজন প্রাবন্ধিক এবং সমাজচিš—কও। এযাবৎকালে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা পঞ্চাশটি। এছাড়াও দেশের শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন পত্রপত্রিকা এবং সাময়িকীসমূহে নিয়মিত তাঁর নানা ধরনের লেখা প্রকাশিত হয়। একজন সাহিত্যিক হিসেবে তাই বাংলাদেশের সাহিত্যের ওপর তাঁর চিš—াভাবনা, গবেষণা ও মূল্যায়ন বিশেষ গুর“ত্বের দাবি রাখে। ‘বাংলাদেশের সাহিত্য’ গ্রন্থটি রতনতনু ঘোষের এমনি এক সুগভীর চিš—াভাবনা ও গবেষণার ফসল। ফলে গ্রন্থটি যেমন বাংলাদেশের সাহিত্যানুরাগীদের সাহিত্যপিপাসা মেটাবে, তেমনি সাহিত্য গবেষকদের জন্য একটি মূল্যবান দলিল হিসেবে কাজ করবে তাঁদের বাংলাদেশের সাহিত্যবিষয়ক গবেষণাসমূহের ¶েত্রে। আমরা আশা করি ‘বাংলাদেশের সাহিত্য’ গ্রন্থটি সাহিত্যসমাজে সমাদৃত হবে এবং রতনতনু ঘোষ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন একজন মননশীল ও ঋদ্ধিমান সাহিত্যগবেষক হিসেবে।