User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
মরমী কবি লালন ফকির। কেউ তাকে কবি বলে তবে বাউর হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত। মানুষের গভীর জটিল তত্ব নিয়ে গান বেঁধেছেন তিনি। সেই সঙ্গে তার গানে আছে ধর্ম-সমাজের কথা। সেই লালনকে নিয়ে আরেক কবি সুনীল গাঙ্গুলির উপন্যাস মনের মানুষ। উপন্যাসে লালনের ছেলেবেলা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময়ের কথা এসেছে। গুটিবসন্তে আক্রান্ত হিন্দুর ছেলে পালিত হয় মুসলমানের ঘরে। তারপর সিরাজ সাঁইয়ের শিষ্যত্ব এবং লালনের লালন হয়ে ওঠা। সেই সঙ্গে এসেছে প্রেম, কাম, যৌনতা, ধর্মে ধর্মে বিভেদ এবং মনের মানুষ খোঁজার জীবনভর চেষ্টা। নিঃসন্দেহে অসাধারন একটি কাজ
Was this review helpful to you?
or
টপিকঃ আলোচনা এবং সমালোচনা আলোচনাঃ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর মনের মানুষ লালন সাইজীর জীবনাদর্শের উপর ভিত্তি করে রচনা করেন। লালন সাই এর জীবনে একটাই ধর্ম পালন করেছে তা হলো মানব ধর্ম, একটাই উদ্দেশ্য জীবন অতিবাহিত করেছেন তা হলো আত্নউপলব্ধি বা পরম স্রষ্টার খোজ যাকে তিনি "মনের মানুষ" বলে পরিচিতি দিয়েছেন। দেখিয়েছেন মানব সেবার মাধ্যমে স্রষ্টাকে খুশি করা, এখানে বই থেকে একটা লাইন তুলে ধরি, "মানুষের সেবা করাও এক প্রকার নেশা। যাদের এই নেশা থাকে তারা একজন মৃতপ্রাইয় লোককে বাছিয়ে তুলে যে আনন্দ পায় তার সঙ্গে আর কোন আনন্দেরই তুলোনা চলেনা" । শিখিয়েছেন ধৈর্য ধারন করার মাধ্যমে কাম নামক ঋপু কে দমন করা। আবার বইতে " কমলি হি হি করে হেসে বললো এই যে, এই যে তোমার বাসনা আছে ষোল আনা তুমি ভাবের ঘরে ছুরি কর সাই। লালোন বললো শরির জাগে শরিরের নিয়মে মন যদি না জাগ তাইলে কি প্রকৃত মিলন হয়? শরীরে আগুন লাগে কিন্তু বাসনা শিখা হয় একটা প্রদিপের মতন। বস্তুত সত্য মিথ্যা, হিন্দু-মুস্লমান, জাতি-ধর্ম সুখ-দুঃখের বাইরে গিয়ে পরম স্রষ্টার সঙ্গে মিলনের আশায় জীবন অতিবাহিত করা। জানিনা লালনের এই পন্থা কতটূকু যুক্তিযুক্ত তবে আমার কিন্তু খারাপ লাগেনি। সমালোচনাঃ যেহেতু লালন এর জীবন সম্পর্কে তেমন কোনো ইতিহাস খুজে পাওয়া যায়না তাই লালনের জীবনাদর্শ বিচার করা কঠিন। এই বই পড়ে মনে হয়েছে লালনের উদ্দেশ্য আত্নউপলব্ধি বা পরম স্রষ্টার খোজ কিন্তু একটা পর্যায় গিয়ে উদ্দেশ্যহিন হয়ে পরেছে(যদি কেউ পরে থাকেন তাহলেই বুঝবেন)। অনেক যায়গায় কিছু বিষয়ের কোন ব্যাখ্যা নাই... যেমন - "জাত আসলে কি? ধর্ম আসলে কি? মানুষের জন্য ধর্ম নাকি ধর্মের জন্য মানুষ" ইত্যাদি...।। কোন কিছুই সমালোচনার বাইরে নয়, আমার মতে সকলের এই বইটা পড়া উচিৎ। এ সকল কিছুই আমার নিজস্ব মতামত। তর্কের জন্য নয় আপনারা চাইলে এই বইয়ের ব্যপারে বলতে পারেন। বিঃ দ্রঃ - মনের মানুষ মুভি এবং মনের মানুষ বই এর মধ্য বিস্তর ব্যবধান বিদ্যমান তাই সকলের প্রতি বইটা পড়ার অনুরোধ রইলো।
Was this review helpful to you?
or
কুষ্টিয়া অঞ্চলের একটি কায়স্থ (হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি উপবর্ণ বিশেষ) পরিবারে জন্ম নেয় লালু নামের একটি ছেলে। শৈশব কালেই বাবাকে হারিয়ে মায়ের আঁচলে বড় হতে থাকে সে। প্রায় কিশোর বয়সেই করতে হয় বিয়ে। কাজে কর্মে কোন মন নেই। গান_কে সে অনেক ভালোবাসে। একদিন গঙ্গাস্নানের উদ্দেশ্যে একটি দলের সঙ্গে বহরমপুরে যাত্রা করে লালু। পথিমধ্যে বসন্ত রোগের কবলে পরতে হয় তাকে। সঙ্গী-সাথীরা তাকে মৃত ঘোষণা করে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়। তবে ভাগ্যের চরম লীলাখেলায় লালু প্রাণ ফিরে পায় এক মুসলমান মায়ের সেবায়।এমন সময় তার সাথে পরিচয় হয় সিরাজ সাঁই নামক এক সাধকের সাথে। সুস্থ হয়ে যখন লালু তার আপন গৃহে ফিরে যায় তখন তাকে শুনতে হয় ধর্মচ্যুত হওয়ার অপবাদ। নিজের গর্ভধারিণী মাও যখন এই অপবাদ ছিটকে দিয়ে ঘরে ঠাই না দেয় তখন রাগে অভিমানে লালু চিরদিনের জন্যে গৃহত্যাগ করেন। গৃহত্যাগের পরে লালু এক জঙ্গলে নিজের আবাসস্থল তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং নিজের অতিতের সব কিছু মাটি চাঁপা দিয়ে লালু থেকে লালন নামে তার নতুন জীবন শুরু করে। এরকম একটি প্রেক্ষাপট দিয়েই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার ‘মনের মানুষ’ উপন্যাসটি রচনা করেছেন। উপন্যাসটিতে তিনি লালনের জীবনের মূলভাব ও আদর্শ ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। লালন সবসময় প্রচার বিমুখ থাকায় তার সঠিক জন্মইতিহাস কিংবা তার জীবদ্দশার তথ্যাবলি তেমন একটা পাওয়া যায় না। তবে তার বিভিন্ন গান যেমন “সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে? লালন বলে জাতের কি রূপ দেখলাম না এই নজরে।” কিংবা “খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কমনে আসে যায়?” অথবা “মিলন হবে কত দিনে? আমার মনের মানুষের সনে” ইত্যাদি গানগুলোতে তার জীবনদর্শন অনেকটাই উপলব্ধি করা যায়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার গানের বিশেষ ভক্ত ছিলেন। মূলত তিনিই আধুনিক সমাজের সাথে লালনের গানের পরিচয় করিয়ে দেন। তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে লালনের কখনও প্রত্যক্ষ আলাপ-পরিচয় হয়েছে বলে কোন প্রমান গবেষণায় পাওয়া যায়নি। উপন্যাসের শেষে লেখক ‘লেখকের বক্তব্য’ নামক অংশে এই উপন্যাসটির ব্যাপারে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি অকপটেই বলেছেন এটি লালনের কোন জীবনকাহিনী নয়। লোকশ্রুতি অনুযায়ী এবং কিছু লালন গবেষণামূলক বইয়ের উপর নির্ভর করে কাল্পনিক এবং বাস্তবিক কিছু চরিত্র নিয়ে তিনি তার এই উপন্যাসটি রচনা করেছেন। সেখানে তিনি লালন গবেষক আবুল আহসান চৌধুরী এবং সৈয়দ শহীদ নামক জৈনিক ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। পাঠকদের তৃষ্ণা মেটাতে লেখক বইয়ের শেষে লালনের বেশ কিছু গানও সংযোজন করেন। শুধু তাই নয়, লালনের জীবনদর্শন এবং সমসাময়িক কাল সম্পর্কে যারা জানতে আগ্রহী তাদের উদ্দেশ্যে লেখক অতিপ্রয়োজনীয় কিছু বইয়ের নামও উল্লেখ করেন। সবশেষে বলব, উপন্যাসটিতে লেখক খুব সহজভাবে লালনের জীবন-দর্শন ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। একজন লালনভক্ত হিসেবে আমি তাঁর সম্পর্কে অনেক কিছুই এই বইয়ের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। বইটি আমাকে লালন ও তাঁর জীবনদর্শন সম্পর্কে আরও আগ্রহী করে তুলেছে। চাইলে আপনিও পড়ে ফেলতে পারেন এক মহাত্মার জীবনদর্শনের এই দর্পণ।