User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
ক্যাথরিন ম্যান্সফিল্ড ছোটগল্পের প্রসঙ্গে বলেছিলেন ছোটগল্পের বাগান নাকি বাস্তব কিন্তু ব্যাঙগুলো অবাস্তব। বাস্তবতা বা অবাস্তবতার লেভেল এবং প্রপোরশন নিয়ে তিনি কোনো কথা বলেননি। আর ব্যাখ্যায় না গেলেও বলা যায়, ছোটগল্প কেবল বাস্তবতা নিয়ে ডিল করে না। অবাস্তবতা নিয়েও ডিল করে। অবাস্তবতার মাত্রা অনেক রকম। অনেক ছোটগল্পকার অবাস্তবতাকে বিভিন্নভাবে খেলিয়েছেন। আবার কেউ কেউ অবাস্তবতার ধারেকাছেও যাননি। এখনো অনেকে যান না। যেমন, অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৪-তে প্লাটফর্ম থেকে প্রকাশিত এহসানুল ইয়াসিন-এর গল্পগ্রন্থ 'যৌনগন্ধী শহর'-এ অবাস্তবতার উপস্থিতি নগণ্য পর্যায়ে। গ্রন্থভুক্ত পাঁচটি গল্পের মধ্যে একটিতে কেবল সামান্য পরাবাস্তবতা আছে। বাকিগুলো বাস্তবতা কেন্দ্রিক। বাস্তব অনুসঙ্গগুলোর মাঝে যৌনতাও আছে। অবশ্য গল্পগ্রন্থের নাম থেকে যেমন অনুমিত হয়, যৌনতার উপস্থিতি তার তুলনায় সামান্যই। গ্রন্থের শেষদুটো গল্প 'আবু করিম ও দুটি রহস্যজনক মৃত্যু' এবং 'যৌনগন্ধী শহর'-এ যৌন-বাস্তবতার চিত্র আছে। বাকিগুলোতে নেই বললেই চলে। অবশ্য প্রচলিত অর্থে যৌনতা বলতে আমরা যা বুঝি, এহসানুল ইয়াসিনের এই গ্রন্থ পাঠান্তে বলা যায়, সেই রগরগে যৌনতা নয়, বরং যৌনতার ভেতর থেকে তুলে আনা বেদনার গোলাপ যেন আঁকতে চেয়েছেন শেষ গল্পদুটোয়। 'আবু করিম ও দুটি রহস্যজনক মৃত্যু' গল্পে আমরা এক মফস্বলী বাস্তবতার স্বাদ পাই। যৌবনের দোরগোড়ায় ইকবাল এবং লোকমান নামের দুই তরুণের কাণ্ড রাবেয়া নামের এক পাগলিকে সন্তানসম্ভবা করে দিলে, তাদের মাঝে প্রাথমিক অবস্থায় পাপ এবং অনুশোচনার বাদ্য বাজতে শুরু করে। তারপর পাপ বা অনুশোচনা নয়, দুজনের ভেতর থেকেই হত্যাকারী বেরিয়ে আসতে চায়। বেরিয়েও আসে। কিন্তু হত্যাকারীর মনোজাগতিক কনসিকোয়েন্স বয়ে বেড়ানোর ক্ষমতা ইকবালের নেই। সে বটগাছে দড়ি দেয়। সেই দিনই আবিস্কৃত হয় অন্তঃসত্ত্বা পাগলি রাবেয়ার লাশ। বিষ প্রয়োগে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তারপর থেকে ইকবালের পিতা, যার নাম আবু করিম, যার ভেতরে আমরা গল্পপাঠের সময় লালসালুর মজিদের উপস্থিতি খুঁজে পাই, সে প্রতি পূর্ণিমার রাতে বিলাপ করতে শুরু করে। অনুশোচনার আগুনে জ্বলে। এর তার কাছে ক্ষমা চায়। কেননা তার ধারণা হয়, ইকবালের মৃত্যু আসলে তার নিজের অর্জিত পাপের পরিণাম। লোকমান নিজেও জ্বলতে শুরু করে এবং খুঁজে নিতে চায় প্রস্থানের পথ, জীবনের পথ; আর কল্পনা করে প্রস্থানের পরে তার মাতাও কি আবু করিমের মতো প্রতি পূর্ণিমায় বিলাপে মুখর হয়ে থাকবে কি-না। যারা মফস্বলবাসী, যারা প্রান্তিক বাস্তবতার সাথে পরিচিত, অপ্রান্তিকের সাথেও যাদের টুকটাক পরিচয় আছে, তারা হয়তো জানবেন এমন ঘটনা বিরল নয়। গল্পকারের মেধার পরিচয় পাওয়া যায় কাহিনির পারম্পর্য নির্মাণে। বিন্যাসে। সংলাপে। যৌন রেশ পাওয়া যায়—এমন আরেকটি গল্প হলো গ্রন্থের নাম-গল্পটি যে গল্পে শুধু প্রেমের অনুপস্থিতি বুঝতে পেরে একটি মেয়ে পতিতাবৃত্তির পথে পা বাড়ায়। এটাও আমাদের কর্পোরেট বাস্তবতার একটি স্তর। দুইবার দুই জন পুরুষের প্রতারণার শিকার হয়ে মেয়েটি তৃতীয়বারের মাথায় স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে পতিতাবৃত্তির পথে পা বাড়ায়। জগদীশ গুপ্তের একটি গল্পের সাথে এই গল্পের মূলসুরটি মিলে যায়। 'বিধবার রতিমঞ্জরী'। তবে মূল পার্থক্য রচিত হয়েছে প্লট এবং ট্রিটমেন্টে। কর্পোরেট বাস্তবতানির্ভর আরো দুটি গল্প আছে গ্রন্থে। 'খেলা খেলা দিয়ে শুরু' এবং 'বলধা গার্ডেন কিংবা এক বলদের গল্প'। কিন্তু অন্তত আমার ক্ষেত্রে এই দুটি গল্পকে ছাপিয়ে গ্রন্থের প্রথম গল্পটি, যেটির নাম 'আলোর অধিক অন্ধকার', উঠে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনানির্ভর এই গল্পে আমরা আবদুর রহমান নামে একজন রাজাকারের সন্ধান পাই যে যুদ্ধকালীন সময়ে স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে সে মুক্তিযোদ্ধার সনদ জোগাড় করে চাকরির বর্ধিত সময়সীমা থেকে শুরু করে যাবতীয় সুবিধাদি ভোগ করে। একটি অফিসের প্রধানের দায়িত্ব পালন করে। দুর্ভাগ্যবশত তার অধীনে করম আলী নামে একজন মুক্তিযোদ্ধাও কাজ করে। নিম্নস্তরের চাকরি এবং পুরোনো শত্রুতার জের ধরে অসুস্থ, দরিদ্র, অসহায় করম আলীকে সে খুব দূরের এক জায়গায় বদলি করে। ফলে করম আলী স্ট্রোকের শিকার হয়। হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং মৃত্যুবরণ করে। মরহুম করম আলীর অপ্রতিষ্ঠিত সন্তানেরা যখন হাসপাতালে পিতার মৃত্যুসংবাদ পায় তখন তাদের চূড়ান্ত সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে আসে আবদুর রহমান। তার শেষ সংলাপটির মধ্য দিয়েই গল্পটিও শেষ হয়েছে। সংলাপটি উল্লেখ করা যেতে পারে : 'সাহস হারাও কেন? আমরা আছি না?' এহসানুল ইয়াসিনের গল্পগুলো অনেকটা কোলাজধর্মী। যদিও পরিপূর্ণভাবে কোলাজের চারিত্র্যগুলো অনুপস্থিত। যেন সামান্য কোলাজধর্মিতার ভেতর দিয়ে তিনি জীবনের অসংলগ্নতাকে ধরতে চেয়েছেন। যেন বাস্তবতার ভেতরে যে অতি-বাস্তবতা বিরাজমান, যে অতি-বাস্তবতা আমাদের বিরাট, অদৃশ্য মাকড়সার মতো মিহি জালে আটকে ফেলছে, রাতকে করে ফেলছে দিন, দিনকে রাত, সত্যকে মিথ্যা, মিথ্যাকে সত্য—সেই অতি-বাস্তবতাকে ধরার জন্যই তার এই প্রয়াস। আমি ব্যক্তিগতভাবে আশা রাখি তার প্রয়াস সাফল্য পাবে। অতি-বাস্তবতার নিরেট হূদপিণ্ডে যে আদিম অন্ধকার ও অমানবিকতার স্তূপ জ্বলজ্বল করছে সেই স্তূপকে আমরা অতিক্রম করে যেতে পারব। যৌনগন্ধী শহর এহসানুল ইয়াসিন প্রকাশক :প্লাটফর্ম প্রথম প্রকাশ : বইমেলা ২০১৪ প্রচ্ছদ : অনলাইন অবলম্বনে ফারুক আহমেদ মূল্য :১১৫ টাকা লেখাটি দৈনিক ইত্তেফাকে ১৮ জুলাই ২০১৪ তে প্রকাশিত। লেখক : মানস সান্যাল
Was this review helpful to you?
or
এহসানুল ইয়াসিনের কবিতার সাথে পরিচয় ছিল। সমসাময়িক কবিদের মধ্যে বেশ শক্তিশালী লেখনি উনার। গল্প নিয়ে তাই আগ্রহ টা ছিলো। যৌনগন্ধী শহর আকারে ছোট, কিন্তু গল্পগুলো প্রাণবন্ত। পাঠককে তৃপ্তি দেয়। ভালো লাগলো। এহসানুল ইয়াসিনের জন্য শুভকামনা।