User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বাংলা সাহিত্যে একজন জিনিয়াস ঔপন্যাসিকের আবির্ভাব হাসান আজিজুল হক কাজী রাফির লেখার মাঝে আমি প্রতিভার স্বাক্ষর পাই। কালি ও কলম পুরস্কারের চূড়ান্ত পবের্র একজন বিচারক হিসেবে, আমি তার প্রথম উপন্যাস ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা পড়ে খুব মুগ্ধ হয়েছিলাম। সেই উপন্যাসটা পড়ার দেড় বছর পর গ্রন্থটার (ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা উপন্যাসের) জন্য আমি কিছু প্রশস্তি বাক্য রচনা করেছিলাম। এটা আমি বুঝতে পারছি যে, লেখককে অনুপ্রাণিত করেছে পুরস্কার, তাকে এটা বুঝিয়েছে যে, তুমি তোমার কাজ নিয়ে এগিয়ে যাও, আমরা তোমার পেছনে আছি। পুরস্কার সব সময় লেখকের মাথায় থাকে না, প্রতিভাবান লেখকের পুরস্কার থাকে পায়ের তলায়। আমরা লেখকদের চার শ্রেণিতে বিভাজন করতে পারি। লেখক হতে হলে লেখায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে অর্থাৎ এই শ্রেণির লেখকদের ‘দক্ষ লেখক’ বলা যায়। দক্ষতার সঙ্গে যাঁরা উত্তরসূরির কাছে বুদ্ধিমত্তা প্রদর্শন করেন তাদের বলা যায় ‘ক্লেভার’ রাইটার। আর যাঁরা তাঁদের লেখায় সময়কে মনুষ্য এবং মানুষের অনুভূতিকে ধারণ করতে পারেন তাদের ‘ইন্টেলিজেন্ট’ বলা যেতে পারে। তার চাইতেও যাঁরা উপরে তাঁদের ‘ট্যালেন্টেড’ রাইটার বলা যায়। কিন্তু যাঁদের মতন আর কেউ হয় না, তাঁদেরকে বলে ‘জিনিয়াস’। আমি আজ প্রথমেই ঘোষণা করে দিই যে, ‘ঔপন্যাসিক হিসেবে বাংলাদেশে এবং বর্তমান বাংলা সাহিত্যে একজন জিনিয়াসের আবির্ভাব ঘটেছে। সেই জিনিয়াসের নাম কাজী রাফি।’ লেখকের মাথা কখনোই নত হবে না। যিনি লেখক তার মাথা কিছুতেই নত হয় না। আর নত না হওয়াই হচ্ছে একজন লেখকের প্রধান গুণ। কাজী রাফি সেই ব্রত মেনে নিয়েছে এবং সে কোথাও নতি স্বীকার করেনি, হার কোথাও স্বীকার করেনি। কোথাও কম্প্রোমাইজও করেনি। কখনো মনে করেনি যে, এটা করলে অমুক খুশি হবে। উচিত কথায় চাচি বেজার। উচিত কথা নিমের পাতা। উচিত কথা যদি নিমের পাতাও হয় তবে তোমাকে তা গিলতে হবে। তা না হলে তোমার জ্বর সারবে না। তো এই ব্রত নিয়ে কাজী রাফি সাহিত্যক্ষেত্রে নেমেছে। আমি মনে করি, কাজী রাফির ত্রিমোহিনী একটি মহৎ উপন্যাসের জায়গায় গিয়েছে। এটাকে একটা মহাকাব্যিক উপন্যাস বলা যায়। এটা সত্যিই এক মহাকাব্যিক উপন্যাস যা মানুষকে উত্তরণ করায়, যা মানুষকে সর্বাগ্রে স্থান দেয় সেটাই মানুষের মহৎ কর্ম এবং আমি যদি বিশ্বাস করি যে, কাল নিরবধি অর্থাৎ কালের শেষ নেই। বিশ্ব বিশাল, নিরবধি, মানুষ আমার স্বজন –তা নির্দিষ্ট করার জন্যই একটা জায়গায় দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে হয়; সেখানেই ইতিহাসের দ্বারস্থ হতে হয়। কাজী রাফির ত্রিমোহিনী ইতিহাসগ্রন্থ নয়। এটা একটা উপন্যাস। কবিতা লিখলেই তা কাব্য হয় না। ইতিহাস আর উপন্যাস এক জিনিস নয়। এই দুয়ের মাঝে এক রসায়ন থাকতে হবে। একটা কেমিস্ট্রি থাকতে হবে। এই সংমিশ্রণকে আলাদা আলাদা করা যাবে না। এই রসায়নকর্মটা যে করতে পারে না, তার লেখক হওয়া চলে না। যে বাস্তবকে অবাস্তবের সাথে মেলাতে পারে না, সে বাস্তবের পেছনে পরাবাস্তব দেখতে পায় না। বাস্তবের পেছনে, গভীরে আরো কত বাস্তব আছে এটা যে দেখতে পায় না, সে বাস্তববাদী লেখক নয়। তার মানে কি এই যে, বাস্তববাদী লেখক হলে আমরা সবাই প্রতিদিন যা দেখছি তা-ই লিখব? তা লিখলেই হয়। কিন্তু তাতে কি ঔপন্যাসিক হওয়া যায়? সবাই ঔপন্যাসিক হয় না কেন? এজন্য যে, সবাই জীবনের গভীরে বাস্তবতা-অবাস্তবতার সংমিশ্রণ দেখতে পায় না। চোখের আকৃতি ছোট-বড় দিয়ে সুন্দর বিবেচনা হতে পারে। কিন্তু সাহিত্য বিবেচনা হয় না। সেজন্যেই আমি বলছি, কাজী রাফি যে অবাস্তব কল্পনার জগতে বাস্তব জগৎ থেকে ইতিহাসের ছায়া এনেছে তা এক মহাকাব্যিকতা পেয়েছে এবং আরো একটি বিষয়, সেটা যদি আমি বলি, এটা একটা ছেলে মানুষের কথকতা হবে তা হয়তো –খুব সম্ভবত যে স্থান নদীবহুল এবং যেখানে বন-জঙ্গল সন্নিবেষ্টিত সুন্দর প্রকৃতি আছে সেখানে কথাসাহিত্য জন্মায় না। কথাসাহিত্যের জন্য বিস্তৃত ভূখণ্ড, বিস্তৃত জনপদ দরকার। এই বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গ সেই এলাকা। সেজন্যে আমাদের প্রধান কথাসাহিত্যিকদের প্রায় সবার জন্ম উত্তরবঙ্গে। সে আমি, শওকত আলী, সৈয়দ শামসুল হক বা মঞ্জু সরকারই বলি আর ভুবনবিখ্যাত আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের কথাই বলি, তাদের সবাই এই ভূমিতেই জন্মেছে। এই যে, বিশাল জনপদ আর ঊষর প্রান্তর, এই ঊষর প্রান্তরই হচ্ছে কথাসাহিত্যের জন্য উর্বর ভূমি এবং এখান থেকে আমরা একটার পর একটা ঔপন্যাসিক পাচ্ছি এই বাংলাদেশে। শওকত আলী, সৈয়দ শামসুল হক, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস আর এরই ধারাবাহিকতায় এখন পেয়েছি তাদের যোগ্য উত্তরসূরি কাজী রাফিকে। কাজী রাফিকে সহস্র অভিনন্দন। সে ত্রিমোহিনীতে ইতিহাস ব্যবহার করেছে, ইতিহাস নিয়েছে; কিন্তু উপন্যাসে ইতিহাস মেশামেশির যে ব্যাপারটা তা সে খুবই সফলতার সাথে ব্যবহার না করলেও সে ইতিহাস উলটে দেয়নি, বিকৃত করেনি। ত্রিমোহিনী উপন্যাসে ইতিহাসের যেটুকু বাঁক তা ঔপন্যাসিকের স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে। সম্রাট অশোক বঙ্গদেশে এসেছে কি না, ভীম তার গদাটা ছুড়ে ফেলেছে কিনা - এসব ইতিহাস আর পুরাণের ব্যাপার। কিন্তু অশোক নামে এক সম্রাটের যে অস্তিত্বই ছিল - এটা কবে প্রথম জানা গেছে? আমাদের ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, আমাদের বঙ্কিমচন্দ্র - এঁরা কেউই কিন্তু অশোকের নাম পর্যন্ত জানেন না। পরে যদিও জানা গেছে সেটাও ১৯২২ সালের পর। সেই অশোক পুণ্ড্রবর্ধনে এসেছিলেন কিনা, আমি যদিও ধরে নিই, তিনি এসেছিলেন - রাজকার্য প্রত্যক্ষ করেছেন, তাহলে অসুবিধা কোথায়? হ্যাঁ, অশোকের এখানে একবার পায়ের ধুলা পড়েছে। গৌতমবুদ্ধের একবার পায়ের ধুলা পড়েছিল। পুণ্ড্রবর্ধন –বলা যায় এই সভ্যতার একেবারে প্রাণকেন্দ্র ছিল। এটা মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, বিশাল বিশাল সভ্যতার উত্থান এবং অবক্ষয় দুই-ই এই মহাস্থানগড়ে হয়েছে। কাজেই এর যে ইতিহাস, এই ইতিহাসকে অবলম্বন করে উপন্যাসসহ আরো অনেক কিছু রচিত হতে পারে। রচিত হয়েছেও অনেক। গ্রামবাংলার লোকের মুখে মুখে তা চালু আছে। যেমন বেহুলার গান, বৈষ্ণব গান। কাজী রাফি ত্রিমোহিনী উপন্যাসে সেরকম ইতিহাসের ছায়া এনেছে, যার সঙ্গে যোগ করেছে রসের মেশাল। সাহিত্যের মেশাল। ফলে সেটা সত্যের চাইতে সত্যতর, ধ্রম্নবের চাইতে ধ্রম্নবতর - এটা মনে রাখতে হবে। আমি এই উপন্যাসটি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। ভালো লেগেছে। এর পথ এবং প্রশস্ত রাজপথ এবং রাজপথ থেকে বেরিয়ে পুনরায় এত অসংখ্য অলিগলি পথ - কাজেই একটু ধন্ধে পড়তে হতে পারে। কারণ নানাদিকে উপন্যাসটির বিস্তৃতি। ত্রিমোহিনী যদি পড়া যায় তাহলে বোঝব এটা শুধু তিন মোহিনী নয়, অথবা এর তিন মাথা এক জায়গায় নয়, এ হলো অজস্র মাথা। কাজী রাফির সৃষ্ট এই জগতে পথ হারিয়ে ফেলতে হয়। আর এতে এমন স্বাদ দেওয়া আছে, এমন ‘বর’ দেওয়া আছে, এর এক মাথা কাটলে সঙ্গে সঙ্গে আর একটা মাথা তৈরি হয়ে যাবে। অর্থাৎ বইটা জীবিত থাকবে। বইটা কোনোদিন মরবে না। এই বইটা মরবে না। আমি এজন্য সাহিত্য জগতে তাকে আমন্ত্রণ জানাই। সে লিখুক। আরো মহৎ সাহিত্য সে সৃষ্টি করুক। পৃথিবীর সাহিত্যে সে জায়গা করে নিক। তাতে আমাদের অহংকার বাড়বে বৈ কমবে না। জায়গা করে নিক সে পৃথিবীর সাহিত্যে। এই বইয়ের অনুবাদ হোক। এই বই সারা পৃথিবীতে জানান দিক যে, খুব বড় করে কল্পনা করার, ইতিহাসকে বড় করে তোলার মতো ঔপন্যাসিক আমাদেরও আছে। যে ইতিহাস বিবরণ তথ্যে নয়, ইতিহাস আর সাহিত্যের মধ্যে যে তফাৎ (তা ধারণ করে)। ইতিহাসের জগৎ তথ্যে পরিপূর্ণ। সাহিত্যের জগৎ মনুষ্য দ্বারা পরিপূর্ণ, সাহিত্য জগতের সর্বত্র শুধু মনুষ্য আর মনুষ্যত্ব। এর চেয়ে অধিকতর বড় কিছু নেই, এটাকে আমরা ধ্রুব বলে মানি, আমরা যাই-ই পড়ি না কেন, তা আধ্যাত্মিকতা অথবা সাহিত্য হোক তা শেষ পর্যন্ত মানুষেরই কাজে লাগে। আজকে বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি তা হয়তো সুখকর নয়। আমরা মনে করছি, দেশটা রসাতলে যাচ্ছে নাকি? দেশটা কি রসাতলে যাচ্ছে? প্রত্যেক দিনের হিসাব করলে সেরকমই মনে হয়। কিন্তু একবার কাজী রাফির মতো লেখক যদি পাওয়া যায় তাহলে মনে হয়, না এখনো আছে (সবকিছু ফুরিয়ে যায়নি) এ... খ... নো আছে। আমরাও মনে করি (ভূশণ্ডির কাক হয়ে) সব ভালো থাকুক। জীবিত ও মৃত; সব হাজির থাকুক। মৃতও জীবিত হোক। জীবন্মৃতও পূর্ণ জীবন লাভ করুক। এই সাহিত্যের কাছেই এটা সম্ভব। আর কোনো কিছুতে, কোথাও সেটা সম্ভব নয়। ত্রিমোহিনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা এটাই যে, তা মনুষ্যত্বকে বুকে ধারণ করে। এই সভ্যতা শুধু অট্টালিকা বা মাটির নিচে চাপা থাকা ভস্ম-ভগ্ন (কোনো ইতিহাস শুধু) নয়, এটা মনুষ্যত্ব জগতে পরিপূর্ণ এবং সেই মানুষ, যে সকলের মধ্যে অমর, A human being, a mortal man। যে মাঝখানে নয়, সকলের সাথে এক, সেই-ই হচ্ছে অসাধারণ ব্যক্তি। অসাধারণ কে? সবচাইতে সাধারণ যে ব্যক্তি। সকলের সাধারণ গুণগুলোকে যে হজম করে বসে আছে, সে-ই হচ্ছে সত্যিকারের অসাধারণ মানুষ –যার মধ্যে ষড়রিপু আছে, যার মধ্যে কাম-ক্রোধ-হিংসা, লোভ-মোহ আছে, আছে যার মৃত্যু। মেঘ বলেছে যাব যাব। চলে যাব সবাই। কিন্তু ‘তোমার কাছে এবার আমি মরণ হতে যেন জানি –গানের সুরে’। ত্রিমোহিনী সেরকম এক উপন্যাস। মহামূল্যবান সম্পদ এই বইটি। এ যখন হাঁকবে, এ যখন ডাকবে, আপনার অত্যন্ত দুর্লভ, সংকটাপন্ন অথবা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক মুহূর্তে, আপনি দেখবেন আপনাকে সান্তনার প্রলেপ দেবে গ্রন্থটি। সাহিত্য মানুষকে কল্পনাময় শান্ততার স্থানে নিয়ে যায় –কাজী রাফির এই গ্রন্থটি আমাদের সেরকম একটি জায়গায় নিয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশের সাহিত্য পুষ্ট হচ্ছে। অনেকেই ভালো লিখছে। মানুষের গল্প অফুরান। মানুষের গল্প কোনোদিন শেষ হবে না। কাজী রাফির সৃষ্টিতে, তার লেখনীতে, তার গল্প-উপন্যাসে মানুষের এই অফুরান গল্প তাদের প্রেম-ভালোবাসা হয়ে, তাদের স্বদেশভূমি হয়ে, তার স্বপ্ন-কল্পনার উপাখ্যান হয়ে একদিন ছড়িয়ে পড়বে পৃথিবীময় - এই প্রত্যাশা। (কালি ও কলম ম্যাগাজিনে কার্তিক, ১৪২২ সংখ্যায় প্রকাশিত হাসান আজিজুল হক কর্তৃক লেখা ‘ত্রিমোহিনী’ উপন্যাসের রিভিউয়ের অংশবিশেষ।)
Was this review helpful to you?
or
এই উপন্যাসে পুন্ড্রসভ্যতার পাশাপাশি আছেন গৌতম বুদ্ধ, সম্রাট অশোক, রাণী ভবানী, অষ্টম শতাব্দীর জয়াপীড় এবং কমলা নাম্নী প্রাচীন এক নর্তকী চরিত্র! সিকরীর মান-বাঈয়ের দাসী মোহিনীর সাথে কমলার যোগসূত্র ছাড়াও গবেষকের মতো অত্যন্ত সংগতভাবে ২৫ কোটি বছর আগে থেকে ভারতবর্ষের জাতিসত্তার উত্থান প্রসংগও তুলে আনা হয়েছে জটিল বুঁনন অথচ গতিময় কাব্যিক ভাষার ‘ত্রিমোহিনী’র বিশাল ক্যানভাসে। অসংখ্য ঐতিহাসিক চরিত্রের সাথে এক ডজন শক্তিশালী প্রধান চরিত্রের কর্ম-সমারোহে কাজী রাফি এমন এক বিস্তৃত এবং মোহাচ্ছন্ন জগত তৈরী করেছেন যা একই সাথে রহস্যময়, আমাদের জাতিসত্তার চিহ্ন বহনকারী গবেষণালব্ধ দলিল, আমাদের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য ধারণকারী এক গতিময় কাব্যব্যঞ্জনা।
Was this review helpful to you?
or
যতবার পড়ব এই উপন্যাস, ততবার বাংগালী হিসেবে গর্বিত হয়ে উঠব।