User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
কিছু উদ্যমী তরুণের হাত ধরে ফেসবুকে ‘আমাদের আড্ডাঘর’ নামে একটি গ্রুপের পথচলা শুরু হয়। কিন্তু এই গ্রুপের কাজ শুধু আড্ডা দেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে নি। কিছুদিন পর তারা অনুধাবন করতে পারলো, একটা বিষয়ে তাদের সবার মাঝেই খুব মিল। আর তা হল মানুষের উপকার করা। অন্যের দুঃখে এই তরুণদের মন কাঁদে। তাই দেখা গেল, তারা কখনও কাপড় নিয়ে গিয়ে শীতার্তদের পাশে দাঁড়াচ্ছে, আবার কখনও কর্মজীবী শিশুদের ঈদে নতুন জামা দিচ্ছে। এই তরুণদের মধ্যে আবার কেউ কেউ অসাধারণ গল্প, কবিতাও লেখে। তাদের মধ্যে থেকে সাত জন লেখকের লেখা গল্প, কবিতা আর ভ্রমণকাহিনীর সংকলনই হল ‘শূন্য সুতোর নাটাই’। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন হাসানুর রফসান জনি। ‘শূন্য সুতোর নাটাই’ বইটিতে ইসাকুল কবির অভির লেখা ‘সব ঠিক হয়ে যাবে’ গল্পটি আমার বেশ নজর কেড়েছে। গল্পটি তিনটি দৃশ্যে আবদ্ধ। এই তিনটি দৃশ্যে তিনটি বছরের কথা বলা হয়। প্রথম দৃশ্যে ২০০৫ সালের কথা বলা হয়। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র একটি ছেলে। সে ছেলেটির সেদিন এস.এস.সি. পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। সে A+ পায় নি, তাই তার খুব মন খারাপ। এর মাঝে বড় খালা এসে তাকে বকাবকি করছে। সে তাই ছাদে ওঠে। আর তখন তার কাছে এসে একটা ছেলে আশ্বাস দেয় সব ঠিক হয়ে যাবে। দ্বিতীয় দৃশ্যে ২০০৭ সালের কথা বলা হয়। ছেলেটির মা খুব অসুস্থ। এ সময় সে জগতের আসল বাস্তবতা বুঝতে পারে। তাদের অনেক আত্মীয়-স্বজন এই দুর্দিনে তাদের ছেড়ে চলে যায়। ছেলেটি মন খারাপ করে কলেজের মাঠে বসে থেকে এসব ভাবছে। এমন সময় আবার সেই আগের ছেলেটিই এসে তাকে আশ্বাস দিয়ে যায়, সব ঠিক হয়ে যাবে। তৃতীয় দৃশ্য ২০০৮ সালের। ছেলেটির গার্লফ্রেন্ড তাকে ছেড়ে চলে গেছে। সে মেডিক্যাল কলেজের মাঠের এক কোণায় একা একা মন খারাপ করে বসে আছে। আবারও সেই আগের ছেলেটি এসে তাকে আশ্বাসের বাণী শুনিয়ে যায়। সব ঠিক হয়ে যাবে। এবং গল্পের শেষে উপসংহার শিরোনামে লেখা হয় সেই রহস্যময় ছেলেটি ছিল আসলে তার নিজেরই অবচেতন মন। গল্পটিতে নিজের অবচেতন মনের সাথে কথোপকথনের ব্যাপারটি উঠে এসেছে বলেই আমার কাছে গল্পটা বেশ ভালো লেগেছে। তবে শেষে এসে এই কথা উল্লেখ করে দেয়ার ব্যাপারটা ছেলেমানুষী হয়েছে। এটা না বললেও, যে কোন সচেতন পাঠকই ব্যাপারটা অনুধাবন করতে পারতেন। আর গল্পে কিছু কিছু বাক্যগঠন বেশ দুর্বল মনে হয়েছে। এ ব্যাপারে আরও মনোযোগী হওয়ার জন্যে লেখকের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে। এই বইয়ে মতিউর রহমান ফয়সালের লেখা ‘শূন্য সুতোর নাটাই’ নামে একটি ভ্রমণ কাহিনী সংযুক্ত হয়েছে। এটা আসলে এই তরুণ দলের তাদেরই এক সহচরের বিয়ে খেতে ট্রেনে করে চট্টগ্রাম যাবার গল্প। এই ভ্রমণকাহিনীটি পরে আমার কাছে মনে হয়েছে যাত্রার বর্ণনার চেয়ে তাদের এই দলের কাজ, লক্ষ্য সম্পর্কে জানানোর ব্যাপারেই লেখকের বেশি আগ্রহ ছিল। সেটা তেমন কোন অসুবিধা না। কিন্তু লেখাটায় এমন ভঙ্গিমা ব্যবহার করা হয়েছে যে তা পাঠকের জন্যে বুঝতে বেশ অসুবিধা হয়। অনেকটা ব্যক্তিগত আড্ডার ধাঁচে ভ্রমণকাহিনীটা লেখা হয়েছে। এ ব্যাপারে লেখকের আরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল। ‘শূন্য সুতোর নাটাই’ বইটির একদম শেষে হাসানুর রফসান জনির লেখা ‘আগের মতই’ শীর্ষক কবিতাটা বেশ ভালো লেগেছে। কবিতাটার অন্ত্যমিল নিখুঁত। এবং দৃশ্যকল্পটি বেশ ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সে জন্যে কবিতার শেষে কবির ‘তুমি’কে হারানোর বেদনা পাঠকমনেও সঞ্চারিত হবে। সবমিলিয়ে বলা যায়, একগুচ্ছ তরুণ লেখকের লেখা ‘শূন্য সুতোর নাটাই’ বইটি পড়তে খারাপ লাগবে না।