User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
একটা কল্পিত সাক্ষাৎকার। যে সাক্ষাৎকারে ফিদেলের কল্পিত জবানীতে উঠে এসেছে তার ছেলেবেলা, ঔপনিবেশিক অত্যাচারের ইতিহাস, আমেরিকান আগ্রাসন এবং তার বিরুদ্ধে ফিদেল ও তার দলের বিপ্লবী লড়াই। এসেছে চে গুয়েভারার প্রসঙ্গও। সাক্ষাৎকারটা কাল্পনিক হলেও এতে উপস্থাপিত তথ্যগুলো বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে সংগ্রহ করেছেন লেখক। তবে ফিদেলকে নিয়ে যেসব সমালোচনা রয়েছে, সেসবের ব্যাখ্যা লেখক হয়তো তার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির নিরিখেই পরিবেশন করেছেন। ফিদেলকে নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হয়তো আরও বিস্তৃত পরিসরে হতে পারে। কিন্তু কিউবার সচ্ছল এক পরিবারের ফিদেল নামের ছেলেটি কীভাবে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের ভিত কাঁপানো বিপ্লবী হয়ে উঠলো, সংক্ষেপে তার গোছানো একটা বিবরণ পাওয়া যাবে এই বইয়ে। ডকুফিকশন ধাঁচে লেখা বলে বইটা পড়তেও ভালো লাগবে।
Was this review helpful to you?
or
excellent
Was this review helpful to you?
or
ফিদেল ক্যাষ্ট্রোকে জানা যাবে এই বই পড়ে
Was this review helpful to you?
or
আধো ঘুম ক্যাস্ট্রোর সাথেঃ ফিদেল ক্যাস্ট্রোর সাথে বাংলাদেশী এক যুবকের সাক্ষাৎকার। বইটা পড়তে পড়তে আমার মনে হচ্ছিলো, শাহাদুজ্জামান নিজেই সরাসরি প্রশ্নকর্তা, কিন্তু না! বইটি আসলে ডকুফিকশনের আদলে লেখা, কাল্পনিক এক যুবক ক্যাস্ট্রোকে প্রশ্ন করছে একের পর এক জানতে চাচ্ছে তাঁর জীবন ও রাজনৈতিক পর্বের কথা যার সাথে জড়িত সমাজতান্ত্রিক কিউবার ইতিহাস। ফিদেল কাস্ত্রো উত্তর দিচ্ছেন যুবকের প্রতিটি প্রশ্নের অত্যন্ত বিনয়ের সহিত, উত্তরে ভেসে আসছে সেই অদম্যের ছেলেবেলার কথা, যৌবনের কথা, প্রেম বিরহের কথা, রাষ্ট্র বিপ্লবের কথা। ক্যাস্ট্রো ব্যাখ্যা করেছেন বিপ্লব পূর্ব কিউবার রাজনৈতিক অবস্থা, নিজের ছাত্র রাজনীতির কথা, কেন কিউবাতে বিপ্লব প্রয়োজন? বিপ্লব সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজন বিপ্লবী দল, সাধারণ জনগণের মধ্যে সেই দলের অবস্থান তৈরি করা, দলের মধ্যে একদল প্রফেশনাল বিপ্লবী তৈরি করা এবং চূড়ান্ত সময়ে সমস্ত শক্তি দিয়ে রাষ্ট্রকে আঘাত করে বিপ্লব সম্পন্ন করা- এ সমস্ত কাজ এত অল্প সময়ের মধ্যে কিভাবে করেছেন, কাদের সাথে নিয়ে করেছেন এবং বিপ্লব সফল হওয়ার পর কিউবাকে সমাজতান্ত্রিক ব্যাবস্থা পরিনত করা, আমেরিকার নাকের ডগায় বসে ছোট্ট কিউবা কিভাবে সেই সমাজতন্ত্র টিকিয়ে রেখেছে- সকল প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন ক্যাস্ট্রো। লেখক শাহাদুজ্জামান কাল্পনিক এই সাক্ষাৎকারটি জীবন্ত করে তুলেছেন। আরও একবার ধন্যবাদ জানাই লেখককে।
Was this review helpful to you?
or
একজন যুবক যে কিনা স্বপ্নের মধ্যে দেখা পেয়েছেন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর। তারপর দুজনের পারস্পরিক আলাপচারিতায় প্রকাশ পেয়েছে কিউবা রাষ্ট্রের জন্মের ইতিহাস। এ সংগ্রামে ফিদেল, চে গুয়েভারা, রাউল ও অন্যান্যরা যেভাবে নেতৃত্ব ও সংগ্রামশীলতার পরিচয় দিয়েছেন তা সত্যিই বিস্ময়কর। আমেরিকার দোরের কাছে দাঁড়িয়ে যেভাবে ফিদেল রক্ষা করেছেন কিউবাকে; কীভাবে মাথা উঁচু করে একটি স্বনির্ভরশীল অর্থনীতির দেশে পরিণত হওয়া যায় তারই বর্ণনা গ্রন্থটিকে দিয়েছে অন্যমাত্রা। গ্রন্থটিতে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ক্যাস্ট্রোর মূল্যায়ন এবং বঙ্গবন্ধুর প্রশংসা তাৎপর্যপূর্ণ। তাছাড়া একটি সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশে দেশি-বিদেশী চক্রান্তের প্রসঙ্গও উপস্থাপিত হয়েছে। ভাষা যে কতটা সাবলীল ও প্রাঞ্জল হতে পারে এবং পাঠকের হৃদয়ে সরাসরি প্রবেশ করতে পারে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হতে পারে ‘আধো ঘুমে ক্যাষ্ট্রোর সঙ্গে’ উপন্যাসটি। গ্রন্থটি পাঠ করলে পাঠকের অনেক প্রশ্নেরই উত্তর মিলবে বলে আশা রাখি।
Was this review helpful to you?
or
বইটি পড়তে শুরু করেছি তারপর একটা সময় মনে হল ফিদেল এর সাথে সামনা সামনি আমার কথোপকথন হচ্ছে সে আমাকে জ্ঞান দিচ্ছে,আদেশ দিচ্ছে,আমার সাথে সে তার পুরোনো স্মৃতি নিয়ে কথা বলছে, সে আমাকে নিজের দেশকে নিয়ে ভাবতে বলছে আসলেই অসাধারণ। ধন্যবাদ লেখক শাহাদুজ্জামানকে এবং ধন্যবাদ রকমারিকে।
Was this review helpful to you?
or
শাহাদুজ্জামান বর্তমান সময়ের একজন শক্তিশালী সাহিত্যিক। তার বিভিন্ন বইয়ের সাথে আমরা পরিচিত, সাধারণত বৃহত কলেবরে লেখা তার বৈশিষ্ট্য হলেও এই বইটি বেশ সংক্ষিপ্ত, তবে সংক্ষিপ্ত হলেও সম্পূর্ন। কিউবার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব এর পটভূমি আলোচনা করার আগে তিনি ফিদেল ক্যাস্ট্রোর ছোটবেলার গল্প বলেছেন খানিক, কিন্তু এটা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর গল্প না, কিউবার সমাজের গল্প, বিপ্লবের পটভূমির গল্প। বইটিতে ক্যাস্ট্রোর সাথে সাক্ষাৎকার এর মত করে সমস্ত গল্পটা এগিয়েছে, খটমটে ইতিহাসের বই হয়নি, আবার কাল্পনিক গল্পও হয়নি। আধুনিক কিউবার ইতিহাস অল্প কথায় গল্পচ্ছলে পড়তে পারবেন পাঠকেরা এখানে।
Was this review helpful to you?
or
শাহাদুজ্জামানের লেখা পড়লে মনে হয় কেউ পাশে বসে গল্প করছে!
Was this review helpful to you?
or
যুগে যুগে পৃথিবীর রূপান্তর এমনি এমনি হয়নি; তার পেছনে রয়েছে কতিপয় দেশনায়কের নাম। যাদের দীর্ঘ সংগ্রাম শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর ইতিহাসকে করেছে গৌরবান্বিত। ইতিহাসের পাতায় তাঁদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। ফিদেল ক্যাস্ট্রো (১৯২৬-২০১৬) তেমনি একটি নাম। ‘আধো ঘুমে ক্যাষ্ট্রোর সঙ্গে’ বাংলা সাহিত্যে সংযোজন করেছে একটি নতুন মাত্রা। সাহিত্যের যে রূপ ও রীতির সঙ্গে আমরা পরিচিত এই উপন্যাসটি সেদিক থেকে ব্যতিক্রম এবং অভিনবত্বের অধিকারী। উপন্যাসটিকে বলা যেতে পারে সাক্ষাৎকারধর্মী উপন্যাস। শাহাদুজ্জামান একজন নিরীক্ষাপ্রিয় ও অনুসন্ধানী লেখক। তাঁর লেখায় বরাবরই নতুনত্বের পরিচয় আমরা পাই, ‘আধো ঘুমে ক্যাষ্ট্রোর সঙ্গে’ তেমনি একটি উপন্যাস। একজন যুবক যে কিনা স্বপ্নের মধ্যে দেখা পেয়েছেন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর। তারপর দুজনের পারস্পরিক আলাপচারিতায় প্রকাশ পেয়েছে কিউবা রাষ্ট্রের জন্মের ইতিহাস। এ সংগ্রামে ফিদেল, চে গুয়েভারা, রাউল ও অন্যান্যরা যেভাবে নেতৃত্ব ও সংগ্রামশীলতার পরিচয় দিয়েছেন তা সত্যিই বিস্ময়কর। আমেরিকার দোরের কাছে দাঁড়িয়ে যেভাবে ফিদেল রক্ষা করেছেন কিউবাকে; কীভাবে মাথা উঁচু করে একটি স্বনির্ভরশীল অর্থনীতির দেশে পরিণত হওয়া যায় তারই বর্ণনা গ্রন্থটিকে দিয়েছে অন্যমাত্রা। গ্রন্থটিতে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ক্যাস্ট্রোর মূল্যায়ন এবং বঙ্গবন্ধুর প্রশংসা তাৎপর্যপূর্ণ। তাছাড়া একটি সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশে দেশি-বিদেশী চক্রান্তের প্রসঙ্গও উপস্থাপিত হয়েছে। ভাষা যে কতটা সাবলীল ও প্রাঞ্জল হতে পারে এবং পাঠকের হৃদয়ে সরাসরি প্রবেশ করতে পারে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হতে পারে ‘আধো ঘুমে ক্যাষ্ট্রোর সঙ্গে’ উপন্যাসটি। গ্রন্থটি পাঠ করলে পাঠকের অনেক প্রশ্নেরই উত্তর মিলবে বলে আশা রাখি।
Was this review helpful to you?
or
আধো ঘুম ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে লেখকঃ শাহাদুজ্জামান প্রকাশকঃ ঐতিহ্য প্রথম প্রকাশঃ ২০১৪ শাহাদুজ্জামানের সাথে আমার প্রথম পরিচয় ঘটে ‘একজন কমলালেবু’-র মাধ্যমে। তারপর থেকেই উনার লেখনী সম্পর্কে আমার আগ্রহ জাগে। খুঁজতে থাকি শাহাদুজ্জামানের লেখা অন্য বই। রকমারিতে শাহাদুজ্জামানের নামে সার্চ করে স্ক্রল করতে করতে এই বইটির উপর আমার চোখ আটকে যায়। সমাজবাদী বিপ্লবের প্রবাদ পুরুষের সাথে এক বাঙালি যুবকের কাল্পনিক কথোপকথন এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই অর্ডার করে ফেলি এই বইটি আর হাতে আসার দিনই এক বসায় পড়ে ফেলি পুরো বই। লেখক এখানে এক সাধারণ বাঙালি ছেলেকে নিয়ে যান ক্যাস্ট্রোর বসার ঘরে, যেখানে এই মহান বিপ্লবী উষ্ণ অভ্যর্থনায় স্বাগত জানান সেই যুবককে। শুরু হয় তাদের আলাপচারিতা, যেখানে ক্যস্ট্রো একে একে নিজের জীবনের সকল রহস্য তার সামনে উন্মোচন করে দেন। বাঙালি যুবক এখানে পাঠকের প্রতিনিধি, যে ক্যস্ট্রোর গুণমুগ্ধ এবং তার জবানিতে শুনতে চায় তার জীবনের গল্প। পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন প্রান্তের দুইটি দেশ হওয়া সত্ত্বেও কিউবার সাথে বাংলাদেশের এক অদৃশ্য সম্পর্ক রয়েছে। উভয় দেশই দীর্ঘকাল উপনিবেশিক শাসনে চলেছে, দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জন করেছে তাদের স্বাধীনতা আর সেই সংগ্রামের কেন্দ্রে রয়েছে এক অবিসংবাদিত নেতা। উপন্যাসের একাধিক জায়গায় দুইজনের মাঝে আলাপের ছলে এই সামঞ্জস্যের কথা বলা হয়েছে। এই উপন্যাসে ক্যস্ট্রোর জবানিতে আমরা জানতে পারি তার ছেলেবেলার অনুপ্রেরণা হোসে মার্তি, সাইমন বলিভারের কথা। কিভাবে এক সামন্ত পরিবারে জন্ম নিয়েও দারিদ্র্যকে খুব কাছ থেকে তিনি দেখছেন। জানতে পারি তার একাধিক ব্যর্থ বিপ্লবের কথা, কিভাবে শত্রুর হাতে ধরা পরার পর নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান পেড্রো সারিয়া নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ ল্যাফটেনেন্ট-এর হস্তক্ষেপে। প্রথম ব্যর্থ বিপ্লবের পর কারাগার থেকে বের হয়ে কিভাবে তার সাথে দেখা হয় চে গুয়েভেরার। প্রায় ২৫ মাসের যুদ্ধের পর স্বৈরশাসক বাতিস্তুতার পতন ঘটিয়ে কিভাবে কিউবাকে সবাধীন করেন ক্যস্ট্রো ও তার বিপ্লবীরা। কিন্তু স্বাধীনতা প্রাপ্তির পরে সেই স্বাধীনতা রক্ষা করা ক্যস্ট্রো ও তার বিপ্লবীদের জন্য আরো বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এত নিকটে থেকেও সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার দুঃসাহস দেখায় কিউবা। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে টিকে থাকা আরো মুশকিল হয়ে পরে কিউবার জন্য। কিন্তু এত প্রতিকূলতার সত্ত্বেও কখনোই ভেঙ্গে পরেন নি ক্যাস্ট্রো। ক্যস্ট্রো আর তার কিউবা সকল প্রতিকূলতার বিপক্ষে লড়াই করে যায়। যুক্তরাষ্ট্র তার সরকারকে সরানোর এমনকি তাকে হত্যা করার চেষ্টা করে একাধিকবার, কিন্তু প্রতিবারই ক্যস্ট্রো বেঁচে যান। ২০১৬ সালের ২৫ নভম্বর ক্যস্ট্রো শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কিন্তু তার সংগ্রামী আদর্শ কিউবা এবং বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সংগ্রামী গোষ্ঠীকে অনুপ্রেরণা জানায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর জন্য। ক্যস্ট্রোর কাল্পনিক জবানিতে লেখক তার পাঠককে একইসাথে ক্যস্ট্রোর বৈচিত্রময় জীবন সম্পর্কে পরিচিত করিয়ে দেন, কিউবার বিপ্লবের নানান ধাপ-প্রতিঘাত সম্পর্কে জানান এবং ক্যস্ট্রোর দর্শনকে আরও স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করেন। গল্পের ছলে এক গবেষণাপত্র লিখে শাহাদুজ্জামান আরো একবার দেখিয়েছেন নিজের লেখনীর মুন্সিয়ানা।
Was this review helpful to you?
or
এক কথায় অসাধারণ।তথ্যবহুল একটি বই।কাস্ত্রোর জীবন সংক্ষেপে সুন্দরভাবে বর্ণিত হয়েছে।যদিও বইটি সমাজতন্ত্র আদর্শিক কিন্তু,শাহাদুজ্জামানের ভক্ত হয়ে গেলাম বইটি পড়ে।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বই- আধো ঘুমে ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে লেখক-শাহাদুজ্জামান ধরণ-ডকুফিকশন পৃষ্ঠা-৭১ মূল্য-১৪০ প্রকাশনী- ঐতিহ্য .... শাহাদুজ্জামান কে চিনি খুব বেশি দিন নয়। তবে এই কয়েকদিনের পরিচয়ে জেনেছি প্রায় অনেক কিছুই। "বিসর্গতে দুঃখ" পড়ে জেনেছিলাম, প্রখ্যাত সাহিত্যিক "শহীদুল জহির" একে "মেটাফিকশন" জনরা বলেছেন। তখনই প্রথম জেনেছিলাম সাহিত্যে "মেটাফিকশন" বলে একটা স্থান আছে। এই "আধো ঘুমে ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে" পড়ার সময় ভূমিকাতে পড়ে নিয়েছিলাম এটার ধারা "ডকুফিকশন"। ডকুফিকশন নিয়ে আমার তেমন ধারণা ছিলো না। ডকুফিকশন মানে এটাই বুঝায়, এখানে এক হয়েছে "ডকুমেন্টারি" ও "ফিকশান"। দুইয়ে মিলে "ডকুফিকশান"। শাহাদুজ্জামানের কলমের আচড় কখনই এক স্থানে বা এক ধারায় আটকে থাকেনা। বিভিন্ন ধারার বিভিন্ন জনরায় কলম চালিয়ে তিনি সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে চলছেন। বাংলাদেশের এক যুবক যে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী। সে দূরের ছোট্ট দ্বীপের দেশ "কিউবা"র দিকে কৌতুহলে তাকিয়ে ভাবে, সে দেশের কিংবদন্তি নেতা "ফিদেল ক্যাস্ট্রোর" কথা। ভাবে মাত্র বত্রিশ বছরের এক তরুণ ক্যাস্ত্রো, কি করে তার সহযোদ্ধাদের নিয়ে পরাক্রমশালী আমেরিকার একেবারে নাকের ডগায় ঘটিয়ে ফেলেছিলেন এক সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব! তারপর আমেরিকার অবিরাম বিরোধিতা আর চোখ রাঙানির ভেতরও টিকিয়ে রেখেছেন সেই বিপ্লবের মন্ত্রকে! একসময় নদীর পাড় ভাঙার মতো পৃথিবীর চারদিকে এক এক করে শোনা গেল সমাজতান্ত্রিক চরাচরের ভাঙনের শব্দ, তবুও কি ক্যাস্ট্রো পিছু হটেছিলেন? না। সে অসময়েও তার নিঃসঙ্গ দ্বীপটিতে জ্বালিয়ে রাখলেন তার পুরনো স্বপ্নের বাতি। যে কোনো পরাশক্তির পরোয়া না করে নতুন অভিযোজনে নতুন সময়কে মোকাবেলা করলেন আর এই ক্ষুদ্র রাষ্ট্রটি আত্মমর্যাদা নিয়ে দাড়িয়ে থাকল পৃথিবীর মানচিত্রে। যুবকের জানতে ইচ্ছা হয়, কী করে পারলেন তিনি ? লেখক তার এই লেখায়, সেই যুবককে আধো ঘুমের এক স্বপ্ন যাত্রায় মুখোমুখি করে দিলেন ক্যাস্ট্রোর। আর সেখানে ক্যাস্ট্রো নিজ মুখে তাকে শোনায়, নাগরদোলায় চড়া তার আশ্চর্য জীবনের গল্প। কিউবার বিপ্লবী ফিদেল ক্যাস্ট্রোর ভাবনায় বিভোর হয়ে, একদিন নিজেকে সে আবিষ্কার করে ক্যাস্ট্রোর পড়ার ঘরে। সে দেখে ঘরের এক কোনে বাতি জ্বালিয়ে বই পড়ছেন তিনি। শুরু হয় তাদের কথোপকথন। ‘আধো ঘুমে ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে’ অগ্রসর হয় তাদের বাক্যলাপে। যেখানে জানা যায় ফিদোল ক্যাস্ট্রোর অনেক কিছু। যুবকের সাথে তার আলাপে উঠে আসে ক্যাস্ট্রোর পরিবারের ইতিহাস, ক্যাস্ট্রোর শৈশব, পড়াশোনা, কিউবার ইতিহাস, বিপ্লব। আরো জানা যায়, কিউবার বিপ্লবের পূর্বের ঔপনিবেশিকতা, শোষণ, বৈষম্য, পুঁজিবাদী ব্যবস্থা সেই সাথে নানা জটিল রাজনৈতিক বিষয়। যুবকের সাথে ক্যাস্ট্রোর কথোপকথনে উঠে এসেছে বিভিন্ন বিষয়। তবে বেশির ভাগ প্রশ্ন ছিলো ক্যাস্ট্রোর কাজ , কিউবা ও বিপ্লব নিয়ে। সে কারনে আলোচনায়ও এগুলো বেশি স্থান পেয়েছে । লেখক ক্যাস্ট্রোর বিপ্লবের গল্পগুলোর সাথেই ক্যাস্ট্রোর পরিবার এবং কিউবার ইতিহাস তুলে দিয়েছেন। এতে করে গল্প শোনার মতো কিউবার বিপ্লবের পূর্ব-কথা এমন কি ভিত্তিগুলো জানা ও বুঝতে পারা সহজ হয়ে যায়। যুবকের কথায় বাংলাদেশের প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। প্রশ্ন করেছে কি করে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আনা যায়। উত্তরে ক্যাস্ট্রো জানিয়েছেন, "সবার ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ভৌগোলিক অবস্থান ভিন্ন; সবাইকে যার যার পথ নিজেকেই খুঁজে নিতে হবে।" সুতারাং নিজের দেশের উন্নয়নের পথ নিজেদেরই খুঁজে নিতে হবে। এখানে অনেকটা সে দেশের সাথে নিজের দেশের মিল বা তুলনা এবং সে দেশের মতো এই দেশ পরিবর্তনের চেষ্টা স্পষ্ট হয়।কিউবার সাথে বাংলাদেশের থেকে পাট বিক্রির চুক্তি হয় ১৯৭৪সালে, আমেরিকা সে সময় বাংলাদেশেকে শাস্তি হিসেবে খাদ্য বোঝাই জাহাজ মাঝপথ থেকে ফিরিয়ে নেয় । যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে তখন এমনিতেই দেশে খাদ্যসংকট বিরাজমান। সে অবস্থায় এটা আরো বেশি করুণ প্রভাব ফেলে। এরকম প্রশ্নের পর প্রশ্ন চলতে থাকলো, আর তাদের কথোপকথনে অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সব কিছুই লেখক তুলে ধরলেন। একেবারে শেষ দিকে যুবক জানতে চাইলেন , ফিদেল যে কিংবদন্তিতে পরিনতি হয়েছেন তাতে তাঁর অনুভূতি কি? এ প্রশ্নে ফিদেল জানালেন, সত্যি বলতে ইতিহাস তাকে কতোটা স্মরণ রাখবে সে আশায় তিনি কিছু করেন নি। তবে যারা এ সব ভাবনায় আচ্ছন্ন থাকে, যেমন মিশরের পিরামিড গুলো ফারাওরা বানিয়েছেন তাদের অস্থিত্ব চিরস্থায়ী করবার জন্য। তা কি সফল হয়েছে? মোটেও না বরং মমিগুলো টেনে হেঁচড়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন মিউজিয়ামে। আর শ্রমিকের শ্রমে ভেজা পিরামিড মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে করুণ নির্মম ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে। ইতিহাসে ব্যক্তিদের ভূমিকা ক্ষণস্থায়ী। ল্যাটিন আমেরিকার প্রখ্যাত নেতা "সাইমন বলিভার" একবার বলেছিলেন, 'পৃথিবীর সব কীর্তি একটা শষ্যদানার ভেতরে ঢুকিয়ে ফেলা যাবে' সুতরাং কীর্তি নিয়ে বড়াই করবার কিছু নেই। পুরো একটা দেশের ইতিহাস লেখক আমাকে ৭১ পৃষ্ঠায় জানিয়ে দিলেন। এতোটা ইতিহাস পাঠে, না লাগলো একগেয়ে, না লাগলো কোন বিরক্ত! একবারো মনে হয় নি আমি ইতিহাস পড়ছি। লেখকের লেখার প্রশংসা করতে বরাবরই বাধ্য আমি। যুবক আর ক্যাস্ট্রোর বিবরণ , গল্প শোনার মতো পড়ে গেলাম সবটুকু। এই বই লিখতে গিয়ে লেখককে ঘাটতে হয়েছে অনেক কিছু। বিশেষ করে ক্যাস্ট্রোর জীবনী সংক্রান্ত সব কিছু। যেসব জায়গা থেকে কালেক্ট করেছেন, লেখক তার সব কিছুর তথ্য দিয়েছেন ভূমিকাতেই। আলাপে আলাপে জেনে গেলাম, পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের বৃহত্তম ও সবচেয়ে পশ্চিমে অবস্থিত দ্বীপ "কিউবা" ও ফিদেল ক্যাস্ট্রোর ইতিহাস। রেটিং৪.৫/৫ রকমারি লিংক- https://www.rokomari.com/book/77560/আধো-ঘুম-ক্যাস্ট্রোর-সঙ্গে
Was this review helpful to you?
or
#রকমারী_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইঃআধো ঘুম ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে লেখকঃ শাহাদুজ্জামান প্রকাশনীঃ ঐতিহ্য প্রথম প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি,২০১৪ প্রচ্ছদঃ শিবু কুমার শীল বইয়ের ধরনঃ ডকুফিকশন মুদ্রিত মূল্যঃ ১৪০ টাকা মাত্র রেটিংঃ ৪.৮/৫ #রিভিউঃ ক্যাস্ট্রো ভাবনায় বিভোর এক বাংলাদেশী যুবক নিজেকে একদিন আবিস্কার করেন ক্যাস্ট্রোর পড়ার ঘরে,সেখানেই তার বহুদিনের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেন ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে তার জন্ম থেকে আজ অব্দি নানামুখী কথোপকথনে... কিভাবে কলম্বাস কিউবায় এসে আদী কিউবান তায়নো আর সিবোনো দের গুলিতে, ম্যালেরিয়ায় বসন্তে মারলো। তাদের কথোপকথনে আরো উঠে আসে ক্যস্ট্রোর জন্ম,শৈশব ,কৈশোর, তারুন্যজ্জ্বল যৌবন আর তার বিপ্লবী জীবনগাথা। কিভাবে আমেরিকার নাকের ডগায় থাকা মাছির মতো অবস্থা থেকে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটিয়ে নানা চোখ রাঙ্গানী এবং আগ্রাসন এর ভেতর দিয়ে তা টিকিয়ে রেখেছেন তার সাবলীল বর্ণনা। কিভাবে গড়েছিলেন নিজের দল "মুভমেন্ট ২৬ জুলাই", কিভাবে ব্যর্থ হয়েছিলো প্রথম মনকাডা ক্যান্টনমেন্ট মিশন,তাদের দলভঙ্গ হওয়া,সাক্ষাৎ মৃত্যু হাত থেকে ফিরে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যাওয়া, মুক্তির পর ম্যক্সিকো গমন এবং কিংবদন্তী চে গুয়েভারের সাথে সাক্ষাত। তারপর আবার চে কে নিয়ে কিউবায় ফিরে এসে সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা সব কিছুর কম্পলিট প্যাকেজ শাহাদুজ্জামানের "আধো ঘুম ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে"। ঘুরে আসুন কলম্বাসের সময় থেকে আজকের কিউবায় কাল্পনিক সেই কিউবাহোলিক যুবকের সাথে। শাহাদুজ্জামান মানেই নতুন কিছু শাহাদুজ্জামান মানেই ইনফর্মেটিভ কিছু শাহাদুজ্জামান মানেই আলাদা কিছু। রকমারি লিংকঃ https://www.rokomari.com/book/77560/%e0%a6%86%e0%a6%a7%e0%a7%8b-%e0%a6%98%e0%a7%81%e0%a6%ae-%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%9f%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%99%e0%a7%8d%e0%a6%97%e0%a7%87
Was this review helpful to you?
or
শাহাদুজ্জামান পাঠক নন্দিত এবং একই সাথে সমালোচক-প্রিয় লেখক। বৈচিত্র্যময় তাঁর লেখার বিষয়বস্তু। শুরু করেছিলেন ছোটগল্প দিয়ে; ধীরে ধীরে সমকালীন গল্পকারদের মধ্যে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সাক্ষাৎকার নিতে ভালোবাসেন; ‘কথা-পরম্পরা’ নামের বই প্রকাশ করে সাক্ষাৎকারকে করে তুলেছেন শিল্প। করেছেন নানা প্রবন্ধের অনুবাদ, লিখেছেন চলচ্চিত্র নিয়ে, সম্পাদনাও করেছেন গোটা দুয়েক বই। চিকিৎসা নৃবিজ্ঞানের গবেষক হিসেবে নিজের পিএইচডি থিসিসকে ভিত্তি করে গবেষণা গ্রন্থও রচনা করেছেন। অধুনা উপন্যাস রচনায় হাত দিয়েছে এবং সফলতা পেয়েছেন। তাঁর ‘ক্রাচের কর্নেল’ একটি বহুল আলোচিত এবং প্রশংসিত উপন্যাস। শাহাদুজ্জামানের এতো পরিচয় দেবার কারণ, তাঁর লেখার সাথে পরিচিত নয়- এমন পাঠককে এটাই জানানো যে নানা বিচিত্র এবং নানা আঙ্গিকের রচনায় তাঁর পারদর্শিতার প্রমাণ আমরা পেয়েছি। উপরের বিষয়গুলোর সঙ্গে আরো একটি বিষয় যোগ করে নিতে পারেন। সেটি হলো- ডকুফিকশন। ফিদেল ক্যাস্ট্রো’র জীবনের তথ্যগুলো নিয়ে এর সাথে খানিকটা ফিকশন মিশিয়ে তিনি সর্বশেষ যে জীবনী ভিত্তিক গ্রন্থটি রচনা করেছেন, তার নাম- ‘আধো ঘুমে ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে’। ‘ডকুফিকশন’সাহিত্যের একটি আধুনিক হাইব্রিড জনরা। ‘ডকুমেন্টরি’ এবং ‘ফিকশন’ মিশে তৈরি হয়েছে ‘ডকুফিকশন’। বাংলা সাহিত্যে ডকুফিকশনের ধারা খুব একটা পরিচিত নয় পাঠকের মাঝে। অল্প কিছু ডকুফিকশন লেখার প্রয়াস লেখকেরা দেখিয়েছেন। শাহাদুজ্জামানের ডকুফিকশন ‘আধো ঘুমে ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে’ইতোমধ্যেই বেশ সাড়া ফেলেছে। যদিও অনেক সমালোচকই তাঁর উপন্যাস ‘ক্রাচের কর্নেল’কে ডকুফিকশন আখ্যায়িত করে থাকেন, আমি একে ঐতিহাসিক উপন্যাস বলতে আগ্রহী। কারণ, এই উপন্যাসের ঘটনাক্রম একেবারে ঐতিহাসিক সত্য; এতে ফিকশনের চেয়ে ইতিহাসের ছায়াই বেশি। কিন্তু ‘আধো ঘুমে ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে’র ফিকশনটুকু একেবারে নিখাদ ফিকশন। সমাজতন্ত্রের আদর্শে বিশ্বাসী এক বাংলাদেশি যুবকের কথা লেখক কল্পনা করেছেন যে পৃথিবীর অপর প্রান্তের ছোট্ট দ্বীপদেশ কিউবার দিকে তাকায় কৌতুহলভরে। কিউবার বিপ্লবী ফিদেল ক্যাস্ট্রোর ভাবনার বিভোর হয়ে একদিন সে যুবক নিজেকে আবিষ্কার করে ক্যাস্ট্রোর পড়ার ঘরে। শুরু ক্যাস্ট্রো ও যুবকের মধ্যকার দীর্ঘ কথোপকথন। এ নিয়েই এগিয়েছে ‘আধো ঘুমে ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে’ গ্রন্থটি। যুবকের সঙ্গে কথোপকথনে ক্যাস্ট্রো যে সব তথ্য,যেমন- নিজের পরিবারের ইতিহাস, ব্যক্তিগত তথ্য, কিউবার ইতিহাস, বিপ্লবের ঘটনাবলী ইত্যাদি; দিয়েছেন- সে সমস্ত তথ্য শাহাদুজ্জামান ইতিহাসম্মত এবং বিভিন্ন প্রামাণ্য সূত্র থেকে নিয়েছে। বিভিন্ন বই, ডকুমেন্টরি,ফিচার ফিল্ম- থেকে সাহায্য নেবার কথা লেখক বইয়ের ভূমিকাতেই লিখেছেন। প্রামাণ্য সূত্র থেকে তথ্য নেয়ায় গ্রন্থটি হয়ে উঠেছে চমৎকার ডকুফিকশন- যার মাঝে তথ্য এবং কল্পনার সঠিক মিশ্রণ রয়েছে। বইটি পড়ার সময় একটা প্রশ্ন আমার মাথায় উঁকি দিয়েছে গেছে। শাহাদুজ্জামান চাইলেই ফিদেল ক্যাস্ট্রোকে নিয়ে বাংলা ভাষায় একটি প্রামাণ্য জীবনী-গ্রন্থ লেখায় হাত দিতে পারতেন। কিন্তু তা না করে কেন তিনি ডকুফিকশনকে বেছে নিলেন? উত্তর শুরুতে পাইনি। তবে যতোই পড়েছি ততোই বুঝতে পেরেছি যে রসকষহীন ইতিহাসগ্রন্থ ক্যাস্ট্রোর জীবনের নানা তথ্য এবং আদর্শ তুলে ধরতে পারলেও তাঁর স্বভাব, যুক্তি প্রদানের পদ্ধতি এবং ব্যক্তিত্ব তুলে ধরতে পারত না। এসব বিষয় উপলব্ধি করা জন্য ব্যক্তিকে সামগ্রিকভাবে উপস্থিত থাকতে হয়, যা এই গ্রন্থের ফিদেল ক্যাস্ট্রো’র মাঝে ছিলো। আন্তরিক ক্যাস্ট্রোর প্রচুর কথা বলার অভ্যাসের সঙ্গে এই গ্রন্থে মাধ্যমে পরিচিত হই। ক্যাস্ট্রোর বাচাল স্বভাব নিয়ে তাঁর প্রিয় বন্ধু গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস বলেছেন, ‘তিনি যখন কথা বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন, তখন বিশ্রাম নেওয়ার জন্য কথা বলেন’। যুবকের সাথে ক্যাস্ট্রোর কথোপকথনে নানা বৈচিত্র্যময় বিষয় উঠে এসেছে। স্বাভাবিকভাবেই বেশি জায়গা দখল করেছে কিউবা এবং তাঁর বিপ্লবের গল্পগুলো। শাহাদুজ্জামান চমৎকার একটি কাজ করেছেন। সেটি হলো- ক্যাস্ট্রোর বিপ্লবের গল্পগুলো বলার আগে তাঁর মুখ দিয়েই তাঁর পরিবার এবং কিউবার ইতিহাসের বাঁকগুলো বলিয়ে নিয়েছেন যাতে পাঠকের কিউবার বিপ্লবের পূর্ব-কথা এবং ভিত্তিগুলো পাঠকের জানা হয়ে যায়। তাই বইটিতে কিউবার বিপ্লব পূর্ববর্তী ঔপনিবেশিকতা, শোষণ, বৈষম্য, পুঁজিবাদী প্রতিষ্ঠানগুলোর আগ্রাসন, আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের নগ্ন প্রদর্শনী ইত্যাদি নানা জটিল রাজনৈতিক বিষয় ঠাই পেয়েছে। কিন্তু পড়তে গিয়ে কখনোই মনে হয়নি এটি রাজনৈতিক কিংবা ইতিহাসের বই, বরং মনে হয়েছে যেন এক প্রৌঢ় তাঁর পূর্ব-জীবনের কথা শোনাচ্ছে তাঁর উত্তরসূরিকে। এখানেই শাহাদুজ্জামান সফল; ভূ-রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক এবং অর্থনৈতিক কন্টেন্টগুলো আলাপের ঢঙ্গে পাঠকের সাথে শেয়ার করতে পেরেছেন। যুবকের পাল্টা প্রশ্নের উত্তরে ফিকশনাল ক্যাস্ট্রো যেভাবে উত্তরগুলো দিয়েছেন, তাতে তাঁর চিন্তার ধরণও পাঠকের কাছে পষ্ট করে তুলে ধরতে পেরেছেন লেখক। বিশ্ব মিডিয়ায় ক্যাস্ট্রোকে নিয়ে এবং কিউবার সমাজতন্ত্রী সরকারকে নিয়ে যেসব অভিযোগ হররোজ উচ্চারিত হয় তার অনেক কয়টির জবাবও বইয়ে আমরা পাবো। তবে পুঁজিবাদ এবং সমাজতন্ত্রের মধ্যকার বিতর্কে যেসব বিষয় বইয়ে উঠে এসেছে সেসবের মাঝে নিরপেক্ষতার স্বাদ খুব কমই পাওয়া যাবে। কারণ স্বাভাবিকভাবেই, একজন সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী বিপ্লবীকে নিয়ে লেখা বইয়ে তাঁর আদর্শের কথাই মূলত অধিকাংশ জায়গা দখল করবে এবং তাঁরই গুণগান গাইবে; এতে অবাক হবার কিছু নেই। আমরা জানি যে, একসময় সমাজতন্ত্রের আদর্শে আস্থা রেখেছিলেন শাহাদুজ্জামান; হয়তোবা এখনো রাখেন। ক্যাস্ট্রোর মুখে যেসব সংলাপ আমরা পড়ি, তার কিছু হয়ত শাহাদুজ্জামানের আদর্শকে প্রতিফলিত করে। এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়; আমরা বরং লেখকের ব্যাখ্যার অপেক্ষায় থাকি। বাংলাদেশী যুবকের সাথে কথোপকথনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গও বারবার উঠে এসেছে। স্বাপ্নিক তরুণ বারবার ক্যাস্ট্রো কাছে জানতে চেয়েছে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি কীভাবে পালটানো যায়। জবাবে ক্যাস্ট্রো বলেছেন যে, সবার ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ভৌগোলিক অবস্থান ভিন্ন; সবাইকে যার যার পথ নিজেকেই খুঁজে নিতে হবে। দেশের হতাশ যুব-সমাজ ক্যাস্ট্রোর প্রজ্ঞা এবং জ্ঞান থেকে দিশা পেতে পারে; পেতে পারে রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন করে দেশের কপাল পাল্টে দেয়ার পথ। ভবিষ্যতের পথ খুঁজে পেতে আমাদের বরাবরই পেছনের দিকে ফিরে তাকাতে হয়, তাকানো উচিত। ‘আধো ঘুমে ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে’ আমাদেরকে সেই পথই দেখাতে চাইবে। বইয়ের প্রোডাকশন খুবই ভালো। ছাপার মান সন্তোষজনক। ভুল বানান এবং মুদ্রণপ্রমাদ প্রায় নেই বললেই চলে। শিবু কুমার শীলের তৈরি নান্দনিক প্রচ্ছদ দারুণ মানিয়েছে বইয়ের বিষয়বস্তুর সাথে, বাড়িয়ে দিয়েছে বাহ্যিক সৌন্দর্য। সব মিলিয়ে সংগ্রহে রাখার এবং পড়ার মতোই বই- ‘আধো ঘুমে ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে'।
Was this review helpful to you?
or
শাহাদুজ্জামানের লেখার সাথে পরিচয় ছিল না। কয়দিন আগে বাংলাওয়েবপোর্টালে তার একটি স্বাক্ষাতকার দেখলাম। তিনি তার বইমেলায় প্রকাশিত বই এবং অন্যান্য কিছু বিষয় সম্পর্কে কথা বলেছেন। ঐটা দেখেই 'আধো ঘুমে ক্যাষ্ট্রোর সঙ্গে' নামের ডকুফিকশন টা পড়ার ইচ্ছা হল। ডকুফিকশন নামটাও সেদিন নতুন শোনা। রকমারীতে অর্ডার দেয়ার পর বই এল। আমার ক্যাষ্ট্রোর জীবন নিয়ে আগ্রহ ছিল। তারো চেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল ডকুফিকশন জিনিসটা কি তা দেখার জন্য। বই খোললাম, পড়লাম এবং মুগ্ধ হলাম বলা যায়। মুগ্ধ হওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। কারণ এক- বইটি অনেক সহজ এবং সুন্দর ভাষায় লেখা। কারণ দুই- সাধারণ জীবনী যেরকম হয়, পড়তে পড়তে মাঝে মাঝে একঘেয়ে লাগে(সবার ক্ষেত্রে না অবশ্য) এরকম কিছু নয়। কারণ তিন – প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে ক্যাস্ট্রোর জীবন সম্পর্কে অনেক অনেক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তাই ভালো লেগেছে পড়তে। আমার পড়া প্রথম ডকু ফিকশন। এখানে লেখক তুলে ধরেছেন কিউবার বিপ্লবী ফিদেল ক্যাস্ট্রোর জীবনের নানা কথা। কিউবার বিপ্লব, বিপ্লব পূর্ব এবং পরের কিউবার রাজনৈতিক পরিস্থিতি, কিউবার মানুষের দেশপ্রেম ইত্যাদি বইয়ের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ভাবে ফুটে উঠেছে। এখানে আমার মনে হয়েছে লেখক বাংলাদেশের সাথে বিপ্লব পূর্ব কিউবার পরিস্থিতির মিল দেখিয়ে দিতে চেয়েছেন। তাই যুবকের কন্ঠে এক সময় শোনা যায়, “প্রিয় ফিদেল, আমার দেশ ও এমন সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত, এমনি স্বৈরশাসনের কবলের ভেতর দিয়ে দিন অতিবাহিত করেছে। আমি শুনতে চাই কীভাবে মোকাবেলা করলেন আপনি সেইসব বাস্তবতা......” “আর বিপ্লব পূর্ব কিউবার পরিস্থিতির সঙ্গে তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশেরই তো প্রচুর মিল আছে।আমি আপনার কথা শুনতে শুনতে আমার নিজের দেশের ইতিহাসের সঙ্গে মেলাচ্ছি। জানতে চাই তারপর কী ঘটল?” ক্যাস্ট্রোর ভাবনায় ডুবে থাকা এক যুবক হঠাৎ করে নিজেকে আবিস্কার করে ফিদেল ক্যাস্ট্রোর পড়ার ঘরে। তারপর তাদের মধ্যে চলতে থাকে কথোপকথন। এর মাধ্যমেই ডকুফিকশন এগিয়ে যায় ফিদেল ক্যাস্ট্রোর শৈশব, স্কুল জীবন, রাজনীতি, স্বশস্ত্র বিপ্লব, বাতিস্তাকে হটানো এবং নতুন কিউবার জন্ম দেয়া পর্যন্ত। বইয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কিত ব্যাপার ও আছে। যেমন- ১৯৭৪ সালে কিউবা বাংলাদেশ থেকে পাট কেনার চুক্তি করে। সেই জন্য শাস্তি হিসেবে খাদ্য বোঝাই জাহাজ মাঝপথ থেকে ফিরিয়ে নেয় আমেরিকা। বাংলাদেশে তখন এমনিতেই খাদ্যসংকট ছিল, এই খাদ্য বোঝাই জাহাজ ফিরিয়ে নেয়ায় তা আরো তীব্র হয়। মারা যায় অনেক মানুষ খাদ্যাভাবে। বইটি ছোট। পৃষ্ঠা সংখ্যা মাত্র ৭১। প্রকাশ করেছে ঐতিহ্য। ইত্তেফাক সাময়িকী এর একটা অংশ তুলে দিয়েছিল। দেখতে পারেন - http://tinyurl.com/kakbumb