Our User Product Reviews

'উপকারি ভূত' বইয়ের লেখিকা নাজমা আরেফিন। এই বইটি তিনি মূলত লিখেছেন ছোটদের জন্য। অবশ্য সেটা বইয়ের নাম দেখলেই বোঝা যায়। তবে এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, শিরোনামে ভূতের কথা থাকলেও এটা কিন্তু মোটেই তথাকথিত আর দশটা ভূতের গল্পের মত নয়। ভৌতিক এবং নানা অতিপ্রাকৃত ঘটনা বলে শিশুদের ভড়কে দেয়ার মত গা ছমছমে কোন ব্যাপারও নেই। বরং ভূতের কথা এখানে হয়ত বলা হয়েছে স্রেফ শিশুদের মনোযোগ কাড়ার জন্য। এবং শিশুরা যদি সত্যিই এতে আগ্রহী বা মনোযোগী হয় কিংবা তাদের বাবা মায়েরা তাদেরকে এই বইটি কিনে দিতে উদ্যোগি হন, তাহলে কিন্তু শিশুরা সত্যিই লাভবান হবে। কেননা লেখিকা শিশুদের উপযোগী করে বইটি লিখলেও কেবল শিশুদের আনন্দ দেয়ার মাঝেই তার লেখনীর উদ্দেশ্যকে সীমাবদ্ধ রাখেন নি। বরং তিনি চেষ্টা করেছেন ভূত নামক শিশুদের কৌতূহলোদ্দীপক একটি চরিত্রের আত্মকথনের মাধ্যমে শিশুদেরকে নতুন কিছু জানাতে। আসলেই অনেক অজানাকে জানার সুযোগ পাবে শিশুরা এই বইয়ের মাধ্যমে। এক কিশোর ভূতের মুখে তার বিশ্ব ভ্রমণের অভিজ্ঞতার বর্ণনায় লেখিকা প্রকৃতপক্ষে তুলে ধরতে চেয়েছেন তার নিজেরই পৃথিবীর নানা প্রান্ত ভ্রমনলব্ধ জ্ঞানকে। সেইসব অভিজ্ঞতার কথা দিয়ে হয়ত বড়দের জন্যেও একটা উৎকৃষ্ট ভ্রমণকাহিনী লেখা সুলেখিকা নাজমা আরেফিনের জন্য অসম্ভব কিছু ছিল না। কিন্তু ধন্যবাদ তাকে যে তিনি তা না করে, অভিনব কিছু করতে চেয়েছেন। নিজের ভ্রমনলব্ধ জ্ঞানের মাধ্যমে তিনি পৃথিবীকে যতটা জেনেছেন বা চিনেছেন, শিশুদের উপযোগি ভাষা এবং গল্পের আঙ্গিক গঠনের মাধ্যমে তা তুলে ধরার প্রয়াস তার লেখনীতে লক্ষণীয়। এবং তার এই কাজের লক্ষ্য অবশ্যই শিশুদেরকে বহির্বিশ্বের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া, তাদেরকে পৃথিবীর উলেখযোগ্য নানা স্থান সম্পর্কে অবগত করা এবং পৃথিবীর নানা স্থানের সাথে শিশুদের পরিচয় করিয়ে দেবার মাধ্যমে তাদের শিশুতোষ দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত করা যা নিঃসন্দেহে তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে ও তাদের জীবনকে আলোকিত করে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। পরিশেষে লেখিকাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে চাই গল্পের ছলে যাতে শিশুরা নতুন কিছু শিখতে পারে, সেরকম একটি বই লেখার জন্য। শিশুদের অভিভাবকদেরও দৃষ্টি আকর্ষন করে বলতে চাই, আপনার শিশুকে গড়পড়তা মানের স্রেফ 'আনন্দদায়ক' বই কিনে না দিয়ে 'উপকারি ভূত' টাইপের বই কিনে দিন ও তা পড়তে উৎসাহিত করুণ যাতে তাদের আগ্রহী মনে এইধরনের লেখা সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে এবং তারা বই পড়ার শতভাগ নির্মল বিনোদনের পাশাপাশি কিছুটা জ্ঞান আহরন করতেও সমর্থ হয়।