User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
পড়া শেষ হলো আবদুর রাজ্জাক শিপনের গল্পের বই “গল্পপাত”। পড়তে গিয়ে মনে হলো, একজন গল্পকার হাঁটছেন- আমি তার সঙ্গে হাঁটছি এবং তিনি গল্প বলে যাচ্ছেন। মনোযোগী শ্রোতার মতন শুনছি, ভাবছি এবং গল্পের সময়টাকে ধারণ করবার চেষ্টা করছি। তিনি অতিক্রম করছেন , তিনি বলছেন- সাথে আমি - সময় পেরিয়ে যাচ্ছে । তিনি বলছেন, এই দেশের মানুষদের বেঁচে থাকার গল্প, যেন জীবনকে দেখে তিনি লব্ধ অভিজ্ঞতাগুলো বলছেন। সুনিপুণ বিবরণ, শিল্পের কৌশলী চেষ্টা! আবদুর রাজ্জাক শিপনের বর্ণনা সম্পর্কে বলতে হয়- মনে করুণ একটা মাহফিল, একজন বলছেন বাকিসব শ্রোতা। তিনি বলছেন উত্তম পুরুষে। অর্থাৎ তার গল্পের মূল চরিত্রের ভূমিকায় থাকেন একজন গল্পবলিয়ে- যিনি নিজের কথা বলেন এবং নিজের সাথে যুক্ত মানুষদের কথা বলেন। জীবনের কথা, যাপনের উপলব্ধিগুলো তিনি খুব নির্মোহভঙ্গিতে বলতে পারঙ্গম। খুব পরিচিত শব্দে তিনি গল্প নির্মাণ করেন। অলঙ্কারের চাপে পড়ে শব্দাহত হতে হয়না পাঠকের মস্তিষ্ক। ফলে শেষ পর্যন্ত একটা ছিমছাম গল্পের প্যাটার্নে আমরা অনেক কিছু জানতে পারি। “গল্পপাত” এর গল্পগুলো অন্য ধরণের । অনেকখানি নিরীক্ষাপ্রবণতার ইশারা পাওয়া যায়। মোট ১২ টি গল্পে সাজানো বইটি- সম্পর্কে আমাদের মূল্যায়নের জন্য সাম্প্রতিক পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা রাখা আবশ্যক। যেহেতু গল্পের একটা কাল আছে- সময় আছে। কথাসাহিত্যের একটা বিস্তারিত অবয়বকে ধারণ করে নগর, গ্রাম, ফুটপাত কিংবা বস্তি - এককথায় সম্মিলিত জনপদের গভীরতর অনুভব প্রকট হয়ে দেখা দেয়। আবদুর রাজ্জাক শিপন টানা গদ্যে সমাজ জীবনের নানা ঘটনা-অনুঘটনা আঁকতে চান। তবে তিনি নির্দিষ্ট কোনো সাইজ/ আকারে আটকাতে চান না। বিভিন্নভাবে তিনি গল্প সাজান কোনোটার আকৃতি বেশ বড়, কোনোটা মাঝারি। তবে গল্পেরও বৃহত্তর প্রেক্ষাপট আর বিস্তৃত চিন্তা সম্পর্কে আমাদের ভাবতেই হয়। একটুখানি পড়ে আসি : “আমি মারা যাচ্ছি-‘এ অনুভূতিটা বেশ অদ্ভুত’এভাবে বলতে পারলে বেশ হতো! ভদ্রমহোদয়গণ; ক্ষমা করবেন, বিশ্বাস করুন ওভাবে বলতে গেলে তা নেহাৎ মিথ্যে করে বলা হয়। কৈশোরে আমার লালফ্রকের ভিতরে লাল পিঁপড়ের হুল ফুটানো ব্যথার মতো কিঞ্চিত ব্যথা, আর সেটা ততোটা ভয়াবহও নয়, যতোটা ভয়াবহ ছিল কৈশোরে মোড়ল চাচা কর্তৃক আমার প্রথম খুন হবার সময়। আমি মারা যাচ্ছি, বেশ তৃপ্তি সমেত মারা যাচ্ছি যখন আমার ফল কাটার ছুরিটা যথেষ্ট গভীর হয়ে আমার পেটে গেঁথে আছে, নিবিড় যত্নে যেটি আমি গেঁথে দিয়েছিলাম।” এই ধরণের টানা গদ্যীয় বর্ণনায় আবদুর রাজ্জাক শিপন গল্প আঁকেন। তার গল্প আঁকার একটা গোপন তুলি আর বিভিন্ন রঙের কৌটা সম্পর্কে আমরা ধরণা করি। একজন কুশলী শিল্পী হিসেবে তিনি সৎ থাকবার চেষ্টা করেন। বড় সাবলীল তিনি। সবশেষে “গল্পপাত” নামটা সম্পর্কে বিস্মিত হতে হতে আমরা বৃষ্টিপাতের কথা চিন্তা করতে থাকি। আকাশে মেঘ জমতে জমতে একসময় বৃষ্টিপাত হয়- ঠিক “গল্পপাত” এর গল্পগুলো শব্দের আকারে বর্ষিত হয়। আমরা এই বর্ষণে ভিজতে চাই। অবিরাম এই বর্ষণে নিজেদের সামনে একটি আয়না নির্মাণ করতে চাই। এই আয়নায় নিজেদের মুখের বদলে জীবনকে দেখা যাবে। আবদুর রাজ্জাক শিপনের এই যাত্রা শুভ হোক।
Was this review helpful to you?
or
বই রিভিউ- 'গল্পপাত' লেখক- আবদুর রাজ্জাক শিপন প্রকাশক-শুদ্ধস্বর (বইমেলা-২০১৪)। ছোটগল্পের এ বইটির নামকরণ যথেষ্ট আকর্ষণীয়। কণায় কণায় বৃষ্টির ঝরে পড়াকে আমরা বলি বৃষ্টিপাত, আর তেমনই কণায় কণায় গল্প ঝরে পড়েছে গল্পপাত বইটিতে। বৃষ্টির জলে আপনার শরীরে শীতল পরশের মত বইটির গল্পগুলো আপনার মনে ছড়াবে শীতল পরশ, মুগ্ধতা। একই সঙ্গে মনের গভীরতম কোণ পূর্ণ হবে আনন্দময় বিষাদে। একজন লেখকের সবচেয়ে বড় গুণ পর্যবেক্ষণ শক্তি। সাধারণের মাঝে অসাধারণকে খুঁজে পাওয়া লেখকের পক্ষেই সম্ভব। লেখক জীবনের সাধারণ অথচ বৈচিত্র্যপূর্ণ অনুভূতিকে তুলে এনেছেন গতিশীল গদ্যে, চরিত্রগুলো পরিণত হয়েছে আমাদের জীবনের প্রতিভূ হিসেবে। পড়লে মনে হবে, মানুষগুলো আমাদের আশেপাশেই ছিলেন এতদিন, খেয়াল করা হয়নি। দেখা হয়নি অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে। লেখক কোন বোধ বা ভাবনা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেননি, ঘটনার বর্ণনা করেছেন নির্মোহ ভঙ্গিতে। বোধের জায়গাটুকু একদমই ছেড়ে দিয়েছেন পাঠকের ওপর। ভাষাশৈলীর দিকে আসি। সহজ সরল গদ্য, কিন্তু মোটেও নিরাভরণ নয়। গদ্যের গাঁথুনি নিখাদ, উপমাশৈলী চমৎকার। গল্পভেদে ভাষাশৈলীর সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিবর্তনের ব্যাপারটি আমার খুবই ভালো লেগেছে।প্রাণঘাতী বোমাকে লেখক বলেছেন ফসফরাস ফুল,যে ফুল ফুটছে সাম্রাজ্যবাদীদের ক্রোধে, কেড়ে নিচ্ছে নিষ্পাপ লাখো ফুলের (শিশুদের) জীবন। বইটি সাজানো মোট বারোটি গল্পে। হালকা বাণিজ্যিক লেখার বৃত্ত ভাঙার প্রয়াসে লেখক পাঠককে পরিচিত করিয়ে দিচ্ছেন চিরায়ত বাংলা সাহিত্যরসের সাথে। গল্পপিপাসীদের জন্য দারুণ বারোটি গল্প, যা গল্পপিপাসা মেটাবে না, উল্টো বাড়িয়ে দেবে।