User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
প্রথম প্রকাশঃ সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা-নিউ ইয়র্ক, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ “আমার মায়ের হাসি” ও “সুরের তরী” গ্রন্থদ্বয় লেখকের যুগোপযোগী অনন্য সৃষ্টি। পাঠক হিসাবে আমার অভিব্যাক্তি প্রকাশ না করলে লেখকের প্রতি অবিচার হবে। গ্রন্থ দু’টিতে লেখক তার মনের মাধুরী দিয়ে সহজ সরল প্রাঞ্জল ভাষায় নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে তার মুক্ত চিন্তার যে পরিস্ফুটন ঘটিয়েছেন তা অত্যন্ত উঁচু মানের। বই দু’টি পড়ে আমি তার দক্ষতা ও নৈপুন্যতার প্রসংশা না করে পারছি না। তার লেখাগুলি সব মৌলিকধর্মী। আমার এ লেখায় লেখক ও তার লেখার উপর আমার মনের অভিব্যাক্তি প্রকাশ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। “আমার মায়ের হাসি” একটি ছড়া গ্রন্থ। লেখক যে একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক তা বইটির প্রচ্ছদ ও তার নামকরনই প্রমাণ করে। এ বইটি পড়লেই এ ধরনের নামকরনের যথার্ততার পরিচয় মিলবে। আমি নিম্নে এ বইয়ের কিছু লেখার অংশ বিশেষ তুলে ধরলাম মাত্র। এ গ্রন্থে শুরুতেই স্রষ্টার গুনগান করে “প্রভু দয়াময়” ছড়ায় তিনি লিখেছেন- প্রভু দয়াময়/তুমি বিশ্বময়,- আছ তুমি অঙ্গ জুড়ে/সারা প্রাণময়। এতে তার স্রষ্টার প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তির প্রমাণ মিলে। তার পরেই রয়ে-ছে “মা” লেখাটি। মা’র প্রতি ভালবাসা স্বরূপ তিনি লিখেছেন- মা যে আমার সুখের আলো/আঁধার ঘরে বাতি,- মা যে আমার তারায় ভরা/জোনাক জ্বলা রাতি। মা যে আমার চলার পথে/সুখ-দুখের ভাষা,- মা যে আমার জীবন রথে/যুদ্ধ জয়ের আশা। অতঃপর দেশপ্রেম। এ বইতে দেশাত্মবোধক অনেক ছড়া রয়েছে। তন্মধ্যে দিবস ভিত্তিক যেমন-“একুশ মানেই” ভাষা বিষয়ক ছড়ার অন্তে লিখেছেন- একুশ মানে শত্রু হঠাও/ছু মন্তর যা,- একুশ মানেই “বাংলা ভাষা”/বাংলা আমার “মা”। এতে তার মাতৃভাষার প্রতি গভীর শ্রদ্ধার আত্ম প্রকাশ ঘটেছে। অন্যত্র “স্বাধীনতা” শিরোনামের ছড়ায় তিনি স্বাধীনতাকে এভাবে দেখেছেন- স্বাধীনতা মানে হল/জীবন সাধা,- স্বাধীন দেশে সদাই হেসে নেচে গেয়ে ধেয়ে চল/নেইতো বাধা। আবার “বিজয় এলে” শিরোনামীয় বিজয় দিবসের ছড়ায় লিখেছেন- বিজয় এলে তুফান ঠেলে/যুদ্ধে যাবার সাধ যে হয়,- বিজয় এলে সকল ফেলে/দুশমনদেরে করি লয়। বিজয় এলে দামাল ছেলে/খসম খায় যে শতবার,- বিজয় এলে হুকুম পেলে/যুদ্ধে যাবেই আরেক বার। “আমার মায়ের হাসি” এ বইয়ের অন্তর্ভুক্ত একটি দেশাত্মবোধক ছড়া। এর নামেই ছড়া গ্রন্থের নামকরন করা হয়েছে “আমার মায়ের হাসি”। কবি দেশকে ‘মা’ ডেকেছেন। এটি তার দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাই দেশপ্রেমে উদ্ভুদ্ধ হয়ে তিনি লিখেছেন- মহান বিজয় দিবস যে ভাই/মায়ের মুখের হাসি,- সদাই হাসুক মায়ের এ মুখ/বাজুক জয়ের বাঁশী। রূপসী মায়ের মধুর সে রূপ/দেখতে পরাণ চায়,- তাইত এ মন রয় যে নিতুই/সবুজ সোনার গাঁয়। তেমনি “আমার দেশ” শিরোনেমের দেশাত্মবোধক আরেকটি ছড়ায় লিখেছেন- আমার দেশের গাঁগুলো যেন/শিল্পীর আঁকা ছবি,- আমার দেশের এ রূপ দেখে/হলেন কত কবি। “বাংলার নদ-নদী” ছড়াটি থেকে তো ছন্দে-ছন্দে বাংলাদেশের প্রায় ৫০টিরও আধিক নদ-নদীর নাম জানা যেতে পারে- কালনী কুমার কুলীক কচা/কংস খোয়াই ইছামতি,- গড়াই গুনাই গোমতি মনু/কুঙ্গা ঘাঘট মধুমতি। তালমা তিতাস তুরাগ নাফ/চিত্রা বানার বাকখালী,- বরাক বাগদা বাঘাই বালু/ছন্দা বেতনা বিষখালী। এছাড়া “বাঙলা সুখের নীড়”, “বিজয় মাস”, “দেশের পাখী”, “দেশী ফুল”, “স্বাধীনতা যুদ্ধ”, “স্বাধীনতার ছবি”- এরূপ দেশাত্মবোধক প্রায় দেড় ডজন ছড়া এ বইতে স্থান পেয়েছে। আছে বিশ্ব কবি রবিন্দ্রনাথকে নিয়ে লেখা “বিশ্ব কবি”- বিশ্ব কবি দিনের রবি/আঁধার ঘুচান আলো,- বিশ্ব কবি আমার সবি/চাইছি যেমন ভালো। আছে জাতীয় কবি নজরুলকে নিয়েও লেখা “বিদ্রোহী নজরুল”- গানের কবি প্রাণের কবি/বাংলার বুলবুল,- সাম্যের কবি কাম্যের কবি/আমাদের নজরুল। লেখক তার নিজ জেলা শহরকে নিয়ে লিখেছেন “আমার শহর”- ভালবাসি আমার শহর/দিনে-রাতে গাড়ীর বহর,- উড়ছে টাকা ঘুরছে চাকা/রাত জাগা আজব শহর। ১৯পৃষ্ঠায় বর্ষা নিয়ে লিখেছেন “আকাশ উপুর” অত্যন্ত চমৎকার ছড়া- মেঘের পাহাড় রূপের নাহার/গগন পাড়ে হাট,- জাগল আলোক ভূলোক দ্যুলোক/ডুবল সারা মাঠ। আবার “ডাকল দেয়া” ছড়ায় লিখেছেন- ঝরছে বারি ভরছে হাড়ি/ফুলছে পানি বাইরে,- বাঁশের ঝাড়ে কাশের ধারে/লাগছে পানি তাইরে। এছাড়া এ বইয়ে “মিষ্টি মেয়ে” বৃষ্টির আরেকটি রসাত্মক ছড়া রয়েছে। লিখেছেন “কাল বৈশাখী”-কে নিয়েও। আছে গ্রীষ্মের ছড়া “বড্ড গরম”, শীতের ছড়া “শীতের সকাল”। “শীতের পিঠা” ছড়ায়তো বাংলার ঐতিহ্যবাহী একরাশ পিঠা পায়েসের সন্ধান মিলবে। পড়লেই যেন জিভে জল এসে যায়- চিতই ডুলি পাঁপর পুলি/মুড়ি মুড়কি মোয়া,- শীতের পিঠা ভীষণ মিঠা/পেলে মায়ের ছোয়া। সুখ-দুখ নিয়ে “হাসি আর কান্না” ছড়ায় লিখেছেন- হাসি আর কান্না/কে বল চাননা? সব্বাই হাসে গায়/এতটুকু সুখ চায় দুখের সাথে সুখ/সব্বাই পাননা। সুখ দুখ আগে পরে/আসে বল কারনা? দুখের মাঝে সুখ/দুখের পরে সুখ সুখটা পেয়ে গেলে/বলে দুখ আর না। এ বইতে গ্রন্থিত হয়েছে উপদেশ মূলক “ধুমপান” শিরোনামের একটি বিশেষ ছড়া। বুঝাই যাচ্ছে লেখক ধুমপান করেন না। তাই সবাই ধুমপান মুক্ত হতে লিখেছেন- জর্দ্দা তামাক হুঁকো পাইপ/সিগারেট ও বিড়ি,- ধুমপানেরই ভিন্ন রূপ/প্রাণ নাশের সিঁড়ি। তাদের মাঝে আছে যে বিষ/ঘাতক নিকোটিন,- মানব দেহে হাজার ব্যামো/ছড়ায় প্রতিদিন। তেমনি দু’টি মরণ ব্যাধি/জানবে হলে যক্ষা,- কিংবা যদি ক্যান্সার হয়/পাবেনা ভাই রক্ষা। এছাড়াও এ বইতে ঠাঁই পেয়েছে বাবা দিবসের ছড়া-জনক। বাংলাদেশের জাতীয় ফলকে নিয়ে-কাঁঠাল, ঈদের ছড়া-খুশি পরী, টুনাটুনির ঈদ, চাঁদ রাতে প্রভৃতি। গ্রন্থিত হয়েছে-পুতুল বিয়ে, তুষার ঝড়, নিখোঁজ সংবাদ, প্রভাত, ঋতুরাজ, সিয়াম,শাহাদতী কাণ্ড, খুকু ইত্যাদির মত ছোট বড় সব মিলে ৫০টি মিষ্টি ছড়া। ছড়া একটি শিল্প। সেই শিল্পের নিপুণ শৈল্পিকতায় অক্ষরে-অক্ষরে তার প্রমাণ করেছেন ছড়াকার “আজীজ আহমেদ” যিনি “আব্দুল আজিজ” নামেও সাহিত্য জগতে সুপরিচিত। ব্যাকরণের দিক থেকে যা-যা প্রয়োজন তিনি তার সবটাই ব্যবহার করেছেন তার লেখনীতে। তার প্রতিটি লেখায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অর্থ দ্যোতনা অন্ত্যমিল এবং স্বতন্ত্র বৈশিষ্ঠের সমন্বয় ঘটিয়েছেন। কোথাও একটু ছন্দ পতন ঘটেনি। আর এ ছন্ধবদ্ধতার জন্যেই এ বইয়ের সব কটি ছড়াই তবলার সাথে সঙ্গতি রেখে আবৃতি করার মত। বইটি লেখকের প্রথম প্রকাশ। তাই সামান্য মুদ্রাকর প্রমাদ থাকতে পারে। তবুও তার লেখার স্বাত্রৈন্ত্রতা নিরপেক্ষতা, দক্ষতা এবং ছন্দবদ্ধতা সহজেই শিক্ষিত সমাজের যে কোন বয়সের যে কাউকে আকৃষ্ট করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। মূলতঃ ৬৪ পৃষ্ঠার “আমার মায়ের হাসি” ছড়া গ্রন্থটি একটি বিজ্ঞান ভিত্তিক মৌলিক ছড়া গ্রন্থ। সব বয়সের পাঠোপযোগী এ গ্রন্থটি আশা করি পাঠক সমাদৃত হবেই। লেখক “আমার মায়ের হাসি গ্রন্থটি” তার মমতাময়ী মাকে উৎসর্গ করেছেন। মূল্য হাতের নাগালের মধ্যেই। বোর্ড বাঁধাই সুন্দর প্রচ্ছদে মোড়া এ বইটি সংরক্ষণে রাখার মত। এবার আসা যাক “সুরের তরী” গীতিকাব্য গ্রন্থে। এ গ্রন্থটিও বাংলা সাহিত্যে আরেকটি নতুন সংযোজন। লেখক এ বইটি প্রকাশের মাধ্যমে নিজেকে একজন সত্যিকারের সঙ্গীতপ্রেমী হিসাবে তুলে ধরেছেন। প্রমাণ করেছেন সঙ্গীতও যে একটি শিল্প। এটিও তার একটি বিজ্ঞান সম্মত গীতিকাব্য গ্রন্থ। বইটিতে “খোদা আমার প্রাণ” হামদ দিয়ে শুরু করেছেন এভাবে- খোদা আমার প্রাণ/ এ প্রাণই আমার জান,- দমে-দমে করি আমি/তারই জয়গান।। যার দয়ার দান/এ জমিন ও আসমান চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা/নদীর কলতান,-ঐ দেশের গানে লিখেছেন- নির্ঝরিণীর ছন্দ দিয়ে মিষ্টি ফুলের গন্ধ দিয়ে/ডাকছি মাগো আমি,- তুই যে আমার জন্মভূমি/প্রাণের চেয়ে দামী। সাঁঝ-প্রভাতে যখন আমি/দেখি মা তোর মুখ,- সুখ সায়রে ভাসি তখন/গর্বেও নাচে বুক। মনমোহিনী যাদু মা তোর/নদীর কলতানে,- ওমা কি মধু কণ্ঠে তোর ঐ/পাখির কুহুতানে। আর কিছুই চাইনা মাগো/চাইযে তোরে আমি,-ঐ “একুশ আসে” ভাষার গানে লিখেছেন- একুশ গিয়ে একুশ আসে/বাংলা মা’র নীড়ে,- তবু মা’র বুকের মানিক/আসেনি আজো ফিরে।। মা’র মুখের ভাষার দাবী/করতে গিয়ে দাঁড়,- সেই যে খোকা গেল সেদিন/ফিরেনি কভু আর। একুশে ’মা খোঁজেন খোকন/লক্ষ জনের ভিড়ে,-ঐ “বিজয় এলে” বিজয় দিবসের গানে লিখেছেন এরূপ- বিজয় এলে মায়ের খুশি/খোকা আবার ফিরল অই,- যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলতে গিয়ে/খোকা সে আর ফিরল কই?? একাত্তরের মুক্তি যুদ্ধে/জীবন মরণ রেখে পণ,- দেশের টানে গেল সেদিন/ছেড়ে মা-বাপ বধূর মন।। খোকা সেদিন কলেজ ছাত্র/ঘাটত খাতা-কলম-বই,-ঐ এছাড়াও একুশ মানেই, বর্ণমালার গান, কে সে মহান?, স্বাধীনতয়ার গান-এর মত প্রায় এক ডজন দেশাত্মবোধক গীতি কবিতা এ বইতে লিপিবদ্ধ হয়েছে। রয়েছে অর্ধ ডজনেরও বেশি শিশুতোষ ছড়গান। তার শিশুতোষ ছড়াগানগুলির মধ্যে বনভোজন, বর্ষার গান, ঈদের গাড়ী, নতুন সালে, বিজয় দিবস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তিনি বনভোজন-এ লিখেছেন যোজন-যোজন পাড়ি দিয়ে/করব বনভোজন,- মিলব সবে অনুভবে/হব আপন সুজন।। রব সবে বাঁধন হারা/রবেনাকো কোনই তাড়া।। নেচে গেয়ে ফিরব সবে/কেউ হবনা কুজন,-ঐ ঈদের গাড়ী-তে লিখেছেন- ঈদের গাড়ী চলছে বাড়ী/আয়রে সবে আয়,- হাসি-খুশির বোঝাই গাড়ী/যায়রে ছুটে যায়(।।) টিকেট ছাড়া যেতে পার/মনের সুখে গেতে পার নাচতে গেতে নেই বাঁধা/ভুলেও হেথা নেই কাঁদা চলছে গাড়ী খুব বাহারী/চলছে মৃদু বায়,-ঐ লিপিবদ্ধ হয়েছে প্রেম বিচ্ছেদ বিরহের গান। প্রেমে লিখেছেন-আধুনিক গান-১ ও ২, চাঁদ বরনী কন্যা, মনের টানে, পীঠের ’পরে, প্রথম দেখার ক্ষণ ইত্যাদি। আধুনিক গান ২-এ কবি লিখেছেন- বল বল বলনা/ছবি দেখে কবি হলাম তোমায় দেখে হব কি তাই বলনা?? অধরে মায়া আঁকা/দেখে মন যায়না রাখা চোখেতে কাজল রেখা/মনে হয় স্বপ্নে দেখা অপরূপা অনন্যা সেই ললনা,-ঐ আবার তার “চাঁদ বরনী কন্যা” গীতিকাব্যে লিখেছেন- চাঁদ বরনী কন্যা তোমার/মেঘ বরন চুল,- যেন সদ্য ফুটে থাকা এক/লাল গোলাপ ফুল।। তুমি যখন হাস তখন/শুধুই মুক্তা ঝরে,- তোমার মিষ্টি রসের কথা/পরাণ সিক্ত করে। তোমার কথা মধুর চেয়ে/মধুর হয়ে ফোটে,- যখন মুখে পাপড়ি মেলে/ওইনা রাঙা ঠোঁটে। আসতে যেতে তোমায় দেখে/কত যে মশগুল,-ঐ তার বিরহের গানগুলির মধ্যে রয়েছে-এ কেমন ভালবাসা?, একখানা নীল ঢেউ, কেমন আছ তুমি?, ভালবাসা মিছে আশা ইত্যাদি। এ কেমন ভালবাসা? গীতিকাব্যে কবি তার বিরহের কথা এভাবেই লিখেছেন- এ কেমন ভালোবাসা(হায়) ?? শুরুতেই ঝরে পরে মম/হৃদয়ের সব আশা(।।) শুনেছি ভালোবাসায় নাকি/হয় শুধুই নাম,--- তোমাকে ভালোবেসে আমার/হল যে বদনাম । ভাবিনিতো আগে আমি/ভালোবাসা এত দামী (।।) তাই জীবন আমার আজ/অকূল সায়রে ভাসা,-ঐ কেমন আছ তুমি? কবির জানার আকুলতা ব্যাক্ত করতে গিয়ে লিখেছেন- কেমন আছ তুমি? (আমার) জানতে বড় আশা (।।),- তুমি কি সুখের স্বর্গে বসত কর/নাকি দুঃখের সাগরে ভাসা?-ঐ তুমি কি সাথী নিয়ে যাচ্ছ রচে নিশীরাতে/সুখের বাসর?- নাকি সহপাঠীর আড্ডায় পড়ার ফাঁকে/জমাও আসর? নাকি একা একা কাজের শেষে ক্লান্ত মনে/ফিরছ বাসা?-ঐ এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে পপ তারকা মাইকেল জ্যাক্সনকে নিয়ে লেখা “মাইকেল জ্যাক্সন” শিরোনামের ১টি প্যারোডি সঙ্গীত। সুর করা গান করা/এই যাঁর কাম,- মাইকেল জ্যাকসন/ছিল তাঁর নাম(।।) গান নিয়ে ঘাটাঘাটি/দল নিয়ে হাঁটাহাঁটি এই পাড়া সেই পাড়া/ছিল তাঁর কত তাড়া গানে-গানে প্রাণে-প্রাণে/জীবনের আহবানে নর-নারী যত সারা/যাঁর গানে মাতোয়ারা পপ গান গেত জানি/ছিল কত দাম,-ঐ এতে লিপিবদ্ধ হয়েছে “লোকগীতি”, “পল্লি-গীতি”, “মরার কোকিল” শিরোনামের কয়েকটি পল্লি গানও। তার লোকগীতি-তে লিখেছেন- ঐ কলসি কাঁখে হেলেদুলে/আলতা রাঙা পায়,- নদীর ঘাটে জল আনিতে/প্রাণ পরাণি যায়(গো)?? সে পরাণি রূপের সাগর/দিনে দিনে হইছে ডাগর তার ঐ রূপে সাঁতার কেটে/প্রাণ আমার যায়,-ঐ এছাড়াও এ বইতে স্থান পেয়েছে লোকনাথ ব্রহ্মচারীকে নিয়ে লেখা ভক্তিমূলক গান “লোকনাথ”। এতে তার স্বধর্ম ছাড়াও অন্য ধর্মের প্রতি ভালবাসার প্রকাশ পেয়েছে। তব নামে জপি মালা/জেগে নিশি রাত,- কৃপা করো দয়া করো/বাবা লোকনাথ। তুমি বিনে দীনহীনে/আর কেহ নাই,- দয়া করে তব পায়ে/দিও মোরে ঠাঁই। তুমি যে দয়ার সিন্ধু /অনাথের নাথ,-ঐ সুরের তরী গ্রন্থের শেষভাগে রয়েছে অর্ধ ডজন বিয়ের গান। এ গানগুলি কবির এ বইয়ের অন্যতম প্রধান আকর্ষন বলা যেতে পারে। বরযাত্রা, বরাগমন, বধূ সজ্জা, বধূ বরণ গানগুলি বাঙ্গালী জাতির কৃষ্টি-সংস্কৃতির সাথে এক হয়ে মিশে থাকবে যুগ-যুগ ধরে নিশ্চয়। এ গানগুলিতে তিনি বাঙ্গালী বর-কনের বিয়েকে যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তা খুবই প্রশংসনীয়। কবি তার বরাগমন-এ লিখেছেন বাজে তাক ডুমা ডুম ডুম/ভাঙল সবের ঘুম,- হলদি বাট মেহেদী বাট/লাগল বিয়ের ধুম। দেখ সঙ সেজে রঙ মেখে/ঐ কনের দাদী এল,- বুড়ীর নাচন দেখে সবে/হাসির খোরাক পেল। বাদ্য বাজাও কনে সাজাও/চাঁদ মুখে দাও চুম,-ঐ অন্যত্র আরেকটি গানে আবার লিখেছেন- টমটম গাড়ী চইড়া দেখ আইছইন নয়া জামাই আয়রে সবাই ফুল ছিটাইয়া ধীরে ধীরে নামাই। সঙে আইছইন বন্ধু-বান্ধব আছইন মিতবর ওরে যলদি কইরা সাথী তোরা বিয়ার গীত ধর। আরো আছইন পাড়া-পড়শী আছইন জামাইর ভাবি সামনে পাতা বিয়ার তোরণ লইমু তাহার দাবী। পথ আগলাইয়া তোরণ মুখে আয়রে তাদের থামাই,-ঐ বধূ সজ্জায় কবি লিখেছেন- সোনার অঙ্গে নব রঙ্গে সাজে কুমারী বরের সঙ্গে যাবে বঙ্গে স্বশুর বাড়ী।। আজ সাজবে সখি ফুলে ফুলে আন্ ফুলের ডালা সোনার হাতে পরবে সখি কনক চাঁপার বালা। হাত রাঙ্গাও ওষ্ঠ রাঙ্গাও রাঙ্গাও সখির মন সে যে ফুলে ফুলে সাজবে বধূ ফুলেরই মতন। স্কার্ট ছেড়ে পরবে সে আজ ঢাকাই শাড়ি,-ঐ বধূ বরণ গীতিকাব্যে কবি বধূ বরণের কথা এভাবেই ব্যাক্ত করেছেন- ঘুম কেড়েছে চাঁদের আলো করেছে হরণ বরের দেশে চলছে শেষে বধূর বরণ।। পুষ্প উড়ে খুসবু উড়ে নব বধুর গায় লাজুক লাজুক রাঙা বধূ লাজে মরে যায়। হায়! হায়! লাজে মরে যায়। হারানো সেই সুখ পাখিটা এল বুঝি উরে সানাই বাজে নব সাজে মিষ্টি মধুর সুরে হায়! হায়! মিষ্টি মধুর সুরে। দুগ্ধ পাদ্যে।। মিশে বধূর পদ্মের চরণ,-ঐ এটিও তার প্রথম গীতিকাব্য গ্রন্থ। তাই সঙ্গত কারণেই এ বইতেও কিছু মুদ্রাকর প্রমাদ আছে। তবুও সঙ্গীতে স্থায়ী, সঞ্চারী, অন্তরা, আভোগ, অর্থ দ্যোতনা, অন্ত্যমিল, ভাব, তাল ও লয় ইত্যাদির সমন্বয় কবি তার লেখায় অত্যন্ত নিপুণ হস্তে ঘটিয়েছেন। গীতিকাব্য হিসাবে যে যে বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন তার সবটাই এ বইতে লিপিবদ্ধ হয়েছে। এতে রয়েছে সব বয়সের উপযোগী ৪১টি মন মাতানো প্রাণ জুড়ানো গীতি কবিতা। এ ক্ষেত্রে বইটির নামকরনের দিক দিয়ে “সুরের তরী” নামটি যথার্ত হয়েছে বলে আমি মনে করি। আশা করি তার লেখার স্বাত্রৈন্ত্রতা নিরপেক্ষতা এবং ছন্দবদ্ধতার জন্যে সহজেই সুর শিল্পী, গানের শিল্পী ও সঙ্গীত বিশারদসহ সব বয়সী সঙ্গীত প্রেমীদের কাছে “সুরের তরী” গীতিকাব্য গ্রন্থটি সমাদৃত হবে। লেখক এ বইটি তার বাবাকে উৎসর্গ করেছেন। ৪৮ পৃষ্ঠার বোর্ড বাঁধাই সুন্দর প্রচ্ছদে মোড়া এ বইটিও সংরক্ষণে রাখার মত। পরিশেষে আমি উপরোক্ত গ্রন্থদ্বয় প্রণেতার সর্বাঙ্গীন মঙ্গল, শারীরিক সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। নিউ ইয়র্ক সুফিয়ান আহমদ চৌধুরী এডভোকেট, বিশিষ্ট ছড়াকার, সাংবাদিক ও কলামিস্ট