User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
Not the best but good traveling book......
Was this review helpful to you?
or
Well described the travelling
Was this review helpful to you?
or
darun boi
Was this review helpful to you?
or
Amazing
Was this review helpful to you?
or
A very informative and enjoyable read. Can be a staple for a long tine.
Was this review helpful to you?
or
ভ্রমণ কাহিনী আমার পছন্দের। এই বইটি আমার অনেক ভালো লেগেছে। সাবলীল ভাষায় চমৎকার উপস্থাপন। একটুও বরিং লাগেনি।
Was this review helpful to you?
or
পঁয়তাল্লিশটি ভ্রমণকাহিনীর এক অনবদ্ধ সংকলন ‘পৃথিবীর পথে পথে’। পুরোটা সময় পাঠককে আঁটকে রাখবে বইয়ের পাতায়। নিয়ে যাবে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। একটা কথা না বললেই নয় অনেকেই ভ্রমণ পিয়াসী। অনেকেই ছবি তুলে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে কিন্তু সে স্থানের বর্ণনা যাতে করে পাঠকদের চোখের সামনে ভেসে উঠে সে স্থানের নিখুঁত ছবি এবং পাঠকেরও সে স্থান ভ্রমণের ইচ্ছা হয় তা কিন্তু সবাই করতে পারেন না। তা নিপুণভাবে করেছেন তারেক অণু। লেখার সাথে সাথে সুন্দর ছবিগুলো এক নিমিষে পৌঁছে দেয় পাঠককে সে স্থানে। ভ্রমণকাহিনী কতটা সুখপাঠ্য হতে পারে তার একটি নমুনা এই বই। সকলকে পড়ার অনুরোধ রইল।
Was this review helpful to you?
or
This is one of those books which deserves a space in everyone's who loves travel and life bookshelf.
Was this review helpful to you?
or
পৃথিবীর পথে পথে তারেক অণু এই পৃথিবী কত বড়। কত বিশাল। কোথাও রয়েছে বিশাল সাগর, কোথাও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে সুউচ্চ পর্বতমালা তার শ্রেষ্ঠত্বের গর্ব জানাতে, কোথাও রয়েছে বিশাল অরণ্য যেথা নিঝুম চারিধার, যেথা মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে আদিম মহাদ্রুম। আমাদের সীমিত জীবনে এইসব স্থান ঘুরে আসা সম্ভব নয়। সম্ভব ভ্রমণ কাহিনীর বই পড়ে। বাংলা ভাষায় ভ্রমণ কাহিনীর বই অত্যন্ত বিরল। যেগুলো রয়েছে সেখানে একটি নির্দিষ্ট জনপথ কিংবা একটি নির্দিষ্ট জায়গার কাহিনী। কিন্তু সেই ঘাঁটতি পূরণ করতে প্রকাশিত হল পরিব্রাজক তারেক অণুর ‘পৃথিবীর পথে পথে’। লেখক ভেতো বাঙ্গালীর সন্তান। পদ্মা পাড়ে কেটেছে তার শৈশব এবং কৈশোর। তাই বলে জীবন থেমে থাকে নি। চষে বেড়িয়েছেন পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে অপ্রান্ত। উত্তর থেকে দক্ষিণ-সর্বত্র পড়েছে তার পদ চাড়না। তারই গল্প তারই কথা ছাপার কালিতে প্রকাশিত হয়েছে ‘পৃথিবীর পথে পথে’ বইটিতে। বইটিকে সর্বমোট সাতটি অধ্যায়। সাত ধরণের ভ্রমণ অভিজ্ঞতার বর্ণনা। ভূগোলের সাথে ইতিহাস সম্পর্কিত। প্রতিটি স্থানেরই রয়েছে না জানা ইতিহাস। কত না জানা কথা। সেই সব জায়গাকে নিয়েই তৃতীয় অধ্যায় ‘পথের বাকে ইতিহাস’। প্রথমেই ইনকাদের শহর পিসাক এবং ওয়্যানটাইটামবোর কথা রয়েছে। ৭৯ সালের ২৪ আগস্ট ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুৎপাতের জন্য যাতে রোমান শহর পম্পেই এবং হারকিউলানিয়াম লাভার নিচে চাপা পড়ে ধ্বংস হয়ে যায় । এ শহরদুটি পরবর্তীতে আর পুনঃর্নিমাণ করা হয়নি । যদিও শহরগুলোর বেঁচে যাওয়া অধিবাসীরা এবং সম্ভবতঃ লুটেরারা ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রচুর জিনিষপত্র সংগ্রহ করেছিল । কালক্রমে শহরদুটির অবস্থান সবাই ভুলে গিয়েছিল; পরবর্তীতে ১৮শ শতকে ঘটনাক্রমে শহরগুলো আবার খুঁজে পাওয়া যায় । সেই হারকিউলানিয়ামে যাবেন লেখকের সাথে দেখে আসবেন দুই হাজার বছর আগের জীবনযাত্রা।
Was this review helpful to you?
or
এই পৃথিবী কত বড়। কত বিশাল। কোথাও রয়েছে বিশাল সাগর, কোথাও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে সুউচ্চ পর্বতমালা তার শ্রেষ্ঠত্বের গর্ব জানাতে, কোথাও রয়েছে বিশাল অরণ্য যেথা নিঝুম চারিধার, যেথা মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে আদিম মহাদ্রুম। আমাদের সীমিত জীবনে এইসব স্থান ঘুরে আসা সম্ভব নয়। সম্ভব ভ্রমণ কাহিনীর বই পড়ে। বাংলা ভাষায় ভ্রমণ কাহিনীর বই অত্যন্ত বিরল। যেগুলো রয়েছে সেখানে একটি নির্দিষ্ট জনপথ কিংবা একটি নির্দিষ্ট জায়গার কাহিনী। কিন্তু সেই ঘাঁটতি পূরণ করতে প্রকাশিত হল পরিব্রাজক তারেক অণুর ‘পৃথিবীর পথে পথে’। লেখক ভেতো বাঙ্গালীর সন্তান। পদ্মা পাড়ে কেটেছে তার শৈশব এবং কৈশোর। তাই বলে জীবন থেমে থাকে নি। চষে বেড়িয়েছেন পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে অপ্রান্ত। উত্তর থেকে দক্ষিণ-সর্বত্র পড়েছে তার পদ চাড়না। তারই গল্প তারই কথা ছাপার কালিতে প্রকাশিত হয়েছে ‘পৃথিবীর পথে পথে’ বইটিতে। বইটিকে সর্বমোট সাতটি অধ্যায়। সাত ধরণের ভ্রমণ অভিজ্ঞতার বর্ণনা। প্রথম অধ্যায় ‘তুষার ও অগ্নির উপাখ্যান’ এ রয়েছে লেখকের উত্তর মেরু অভিযানের গল্প, রয়েছে নিষিদ্ধ দেশ তিব্বতে যাওয়ার গল্প, অন্নপূর্ণা,আল্পস ও ভিসুভিয়াসের শিখরে উঠার গল্প। লেখকের সাথে সাথে আপনিও ঘুরে আসতে পারবেন সেই স্থানগুলো থেকে। দ্বিতীয় অধ্যায় ‘মানুষের গল্প জনপদের গল্প’ শীর্ষক অধ্যায়ে আপনি এক পলল্কে চলে যাবেন ল্যাটিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনায়। ঘুরে আসবেন ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো যেখানে রয়েছে আছে হাত বাড়িয়ে দেওয়া যীশু ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার আর আছে ফাভেলা । মাইকেল জ্যাকসনের অমর গান দে ডোন্ট কেয়ার অ্যাবাউট আস গানটির শুটিং হয়েছিল রিওর এক বস্তিতেই যাকে ব্রাজিলিয়ানরা ডাকে ফাভেলা নামে। যাবেন মধ্যরাতের সূর্যের দেশ নরওয়েতে। যাবেন লিথুয়ানিয়ার সেই পাহাড়ে যেখানে রয়েছে শত শত ক্রুশ। আপনি চলে যাবেন কিউবাতে। জানবেন বছরের পর বছর মার্কিন অর্থনৈতিক অবরোধের পরও কিভাবে বিশ্বের সেরা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তাদের। চলে যাবেন ঘুরে আসবেন ডারউইনের বাড়ি থেকে। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যেখানে চার দেয়ালের ভিতর নেলসন ম্যান্ডেলাকে দেওয়া হয়েছিল নির্বাসন সেই কন্সটিটিউশন হিল কারাগারকে দেখে আসবেন। সর্বশেষে আবার সেই দক্ষিণ আমেরিকার মধ্য পেরুর এক গ্রামে যাবেন। ভূগোলের সাথে ইতিহাস সম্পর্কিত। প্রতিটি স্থানেরই রয়েছে না জানা ইতিহাস। কত না জানা কথা। সেই সব জায়গাকে নিয়েই তৃতীয় অধ্যায় ‘পথের বাকে ইতিহাস’। প্রথমেই ইনকাদের শহর পিসাক এবং ওয়্যানটাইটামবোর কথা রয়েছে। ৭৯ সালের ২৪ আগস্ট ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুৎপাতের জন্য যাতে রোমান শহর পম্পেই এবং হারকিউলানিয়াম লাভার নিচে চাপা পড়ে ধ্বংস হয়ে যায় । এ শহরদুটি পরবর্তীতে আর পুনঃর্নিমাণ করা হয়নি । যদিও শহরগুলোর বেঁচে যাওয়া অধিবাসীরা এবং সম্ভবতঃ লুটেরারা ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রচুর জিনিষপত্র সংগ্রহ করেছিল । কালক্রমে শহরদুটির অবস্থান সবাই ভুলে গিয়েছিল; পরবর্তীতে ১৮শ শতকে ঘটনাক্রমে শহরগুলো আবার খুঁজে পাওয়া যায় । সেই হারকিউলানিয়ামে যাবেন লেখকের সাথে দেখে আসবেন দুই হাজার বছর আগের জীবনযাত্রা। জীবনের শেষ মুহূর্তে লোকগুলোর অবস্থা। অ্যাজটেক শহর তেওতিহুয়াকান এবং নরবলির রোমহর্ষক ইতিহাস জানতে পারবেন। ইনকাদের বিস্ময় মাচু পিচু ঘুরে আসবেন এই অধ্যায়ে। এরপর এক লাফে ইউরোপে চলে যাবেন প্রথমে ইংল্যান্ডে ঘুরে আসবেন স্টোনহেঞ্জ, এরপর ইতালির পিসার হেলানো মিনার, পোপের দেশ ভ্যাটিকান, এবং বেলজিয়ামের ওয়াটার লুর যুদ্ধক্ষেত্রে। ইতিহাসের বাঁক থেকে আমরা চলে যাই চতুর্থ অধ্যায় অরণ্য আড়ালে। মনে পড়ে যায় হীরক রাজার দেশের গান ‘এ যে দৃশ্য, এ যে অন্য /এ কি বন্য, এ অরণ্য/হেথা দিনেতে অন্ধকার/ হেথা নিঝুম চারিধার...............’ মেক্সিকোর রেইন ফরেস্ট এর মাঝে দুর্গ শহর কালাকমুলের কথা দিয়ে শুরু হয়েছে এই অধ্যায়। এরপর রয়েছে এক শ্বাপদের মুখোমুখি হওয়ার গল্প। এরপর আমাদের ঘরের কাছে নেপালের চিতোয়ান বনে চলে যাবেন, প্রেইরির মাঝে নিশাচর পেঁচা আর শেষে জঙ্গলের রাজা বুনো আফ্রিকার গল্প। অরণ্যের পর পঞ্চম অধ্যায়ে নেমে যাবেন জলের ভিতর। ‘জলে কার ছায়া’ অধ্যায়ে টিটিকাকা হ্রদ, কানিবার নদী, মেক্সিকো উপসাগরের স্বাদ পাবেন। সবশেষে লেখকের সাথে নেমে যাবেন ক্যারিবিয়ান সাগরতলে। সাহিত্য সাফারি অধ্যায়ে লেখক চমৎকারভাবে বর্ণনা করেছেন বিশ্বের নানাজায়গার যেগুলো সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। প্রথমে প্যারিসে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত বইয়ের দোকান শেক্সপীয়ার অ্যান্ড কোম্পানিতে চলে যাবেন। অ্যানা ফ্রাঙ্ক নামের পনেরো বছরের মেয়েটির ডায়েরি যে আগুন ধরিয়ে ছিল যুদ্ধের বিরুদ্ধে সেই অ্যানা ফ্রাঙ্ক যে বধ্যভূমিতে মারা যান তার বর্ণনা জানতে পারবেন এখানে। কিউবার যে জেলে পল্লীতে থেকে আর্নেস্ট হেমিংওয়ে রচনা করেছিলেন তার অমর সৃষ্টি ‘দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’ সেখান থেকে ঘুরে আসবেন লেখকের সাথে। চুপি চুপি বলে রাখি হেমিংওয়ের জীবদ্দশায় প্রকাশিত ‘দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’-র প্রধান চরিত্র সহানুভূতিপ্রবণ কিউবার জেলে সান্টিয়ানোর কারণে উপন্যাসটি কিউবায় একটি স্কুলপাঠ্য বই। তিনি তার নোবেল পুরস্কার মেডেল (প্রাপ্ত অর্থ ৩৫০০০ ডলার জয়) কিউবার একটি চার্চকে দিয়ে দিয়েছেন। ফ্রাঙ্কফুটের বিখ্যাত বইমেলা দেখে আসবেন। আর যাবেন কিংবদন্তী বাশিওয়ালার শহর হ্যামিলনে। সপ্তম এবং শেষ অধ্যায়ে কলাকেলিতে ফ্লোরেন্স ঘুরে আসবেন লেখকের সাথে। যাবেন গ্রীসের পার্থেননের মন্দিরে। যাবেন তুরস্কের বিখ্যাত স্থাপনা হাজিয়া সোফিয়া বা সেইন্ট সোফিয়ার মসজিদে। দ্যা ভিঞ্চির গ্রামে ঘুরে আসবেন, দেখে আসবেন তার আঁতুড় ঘর। ভ্যান গগের জাদুঘর দেখে আসবেন। সব শেষে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর স্থানে যাবেন বহুকাল আগে যাকে দেখে রবি ঠাকুর লিখেছিলেন আর অমর কবিতাঃ হে বিদেশী ফুল, যবে তোমারে শুধাই ‘বলো দেখি মোরে ভুলিবে কি’, হাসিয়া দুলাও মাথা; জানি জানি মোরে ক্ষণে ক্ষণে পড়িবে যে মনে। দুই দিন পরে চলে যাব দেশান্তরে, তখন দূরের টানে স্বপ্নে আমি হব তব চেনা— মোরে ভুলিবে না। পঁয়তাল্লিশটি ভ্রমণকাহিনীর এক অনবদ্ধ সংকলন ‘পৃথিবীর পথে পথে’। পুরোটা সময় পাঠককে আঁটকে রাখবে বইয়ের পাতায়। নিয়ে যাবে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। একটা কথা না বললেই নয় অনেকেই ভ্রমণ পিয়াসী। অনেকেই ছবি তুলে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে কিন্তু সে স্থানের বর্ণনা যাতে করে পাঠকদের চোখের সামনে ভেসে উঠে সে স্থানের নিখুঁত ছবি এবং পাঠকেরও সে স্থান ভ্রমণের ইচ্ছা হয় তা কিন্তু সবাই করতে পারেন না। তা নিপুণভাবে করেছেন তারেক অণু। লেখার সাথে সাথে সুন্দর ছবিগুলো এক নিমিষে পৌঁছে দেয় পাঠককে সে স্থানে। ভ্রমণকাহিনী কতটা সুখপাঠ্য হতে পারে তার একটি নমুনা এই বই। সকলকে পড়ার অনুরোধ রইল। আমার জানামতে লেখক আরও অনেক জায়গা ভ্রমণ করেছেন। আশা করি ভবিষ্যতে সেগুলোর সংকলন পাব। সাথে সাথে আরেকটি বই দাবি করছি ‘বাংলাদেশের পথে পথে’ নামে।
Was this review helpful to you?
or
৩৩৬পৃষ্ঠার বইটা পড়তে গিয়ে কখনো চলে গেছি উত্তর মেরুতে, কখনো বা মাচুপিচুতে...কিংবা মেক্সিকো উপসাগরের নীল জলের গভীরে! আবার কখনো পিরামিডের উপর উঠে গিয়েছিলাম ! একটু পর আবার আফ্রিকার গহীন অরণ্যে সাফারী করতে চলে গেলাম! কিংবা Shakespeare and Company Bookshop এ.. সে এক অদ্ভুত অনুভূতি! পাতায় পাতায় অ্যাডভেঞ্চার, রোমাঞ্চ... পাতা উল্টালেই পৃথিবীর এই কোণা থেকে আরেক কোণাতে চলে যাচ্ছি.. স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে পড়তে এখন আমায় যে সব জায়গার প্ল্যান- সেকশন - এলিভেশন শিখতে হচ্ছে, তা দেখি উনি আরো অনেক আগেই ঘুরে এসেছেন এবং নানান না-জানা কথা জানতে পারছি...ওইসব জায়গায় না যাওয়ার অতৃপ্তিটা এই পড়ার মাধ্যমে কিছুটা হলেও মিটতেছে, তাইই বা কম কি? :) মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়লাম... সচলায়তন এ আগেই পড়েছিলাম অনেকগুলা লেখা, গত ২সপ্তাহে এই বইটা পুরোটা পড়ে শেষ করলাম, অন্যরকম একটা ভাল লাগা কাজ করলো
Was this review helpful to you?
or
এই পৃথিবী কত বড়। কত বিশাল। কোথাও রয়েছে বিশাল সাগর, কোথাও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে সুউচ্চ পর্বতমালা তার শ্রেষ্ঠত্বের গর্ব জানাতে, কোথাও রয়েছে বিশাল অরণ্য যেথা নিঝুম চারিধার, যেথা মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে আদিম মহাদ্রুম। আমাদের সীমিত জীবনে এইসব স্থান ঘুরে আসা সম্ভব নয়। সম্ভব ভ্রমণ কাহিনীর বই পড়ে। বাংলা ভাষায় ভ্রমণ কাহিনীর বই অত্যন্ত বিরল। যেগুলো রয়েছে সেখানে একটি নির্দিষ্ট জনপথ কিংবা একটি নির্দিষ্ট জায়গার কাহিনী। কিন্তু সেই ঘাঁটতি পূরণ করতে প্রকাশিত হল পরিব্রাজক তারেক অণুর ‘পৃথিবীর পথে পথে’। লেখক ভেতো বাঙ্গালীর সন্তান। পদ্মা পাড়ে কেটেছে তার শৈশব এবং কৈশোর। তাই বলে জীবন থেমে থাকে নি। চষে বেড়িয়েছেন পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে অপ্রান্ত। উত্তর থেকে দক্ষিণ-সর্বত্র পড়েছে তার পদ চাড়না। তারই গল্প তারই কথা ছাপার কালিতে প্রকাশিত হয়েছে ‘পৃথিবীর পথে পথে’ বইটিতে। বইটিকে সর্বমোট সাতটি অধ্যায়। সাত ধরণের ভ্রমণ অভিজ্ঞতার বর্ণনা। প্রথম অধ্যায় ‘তুষার ও অগ্নির উপাখ্যান’ এ রয়েছে লেখকের উত্তর মেরু অভিযানের গল্প, রয়েছে নিষিদ্ধ দেশ তিব্বতে যাওয়ার গল্প, অন্নপূর্ণা,আল্পস ও ভিসুভিয়াসের শিখরে উঠার গল্প। লেখকের সাথে সাথে আপনিও ঘুরে আসতে পারবেন সেই স্থানগুলো থেকে। দ্বিতীয় অধ্যায় ‘মানুষের গল্প জনপদের গল্প’ শীর্ষক অধ্যায়ে আপনি এক পলল্কে চলে যাবেন ল্যাটিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনায়। ঘুরে আসবেন ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো যেখানে রয়েছে আছে হাত বাড়িয়ে দেওয়া যীশু ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার আর আছে ফাভেলা । মাইকেল জ্যাকসনের অমর গান দে ডোন্ট কেয়ার অ্যাবাউট আস গানটির শুটিং হয়েছিল রিওর এক বস্তিতেই যাকে ব্রাজিলিয়ানরা ডাকে ফাভেলা নামে। যাবেন মধ্যরাতের সূর্যের দেশ নরওয়েতে। যাবেন লিথুয়ানিয়ার সেই পাহাড়ে যেখানে রয়েছে শত শত ক্রুশ। আপনি চলে যাবেন কিউবাতে। জানবেন বছরের পর বছর মার্কিন অর্থনৈতিক অবরোধের পরও কিভাবে বিশ্বের সেরা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তাদের। চলে যাবেন ঘুরে আসবেন ডারউইনের বাড়ি থেকে। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যেখানে চার দেয়ালের ভিতর নেলসন ম্যান্ডেলাকে দেওয়া হয়েছিল নির্বাসন সেই কন্সটিটিউশন হিল কারাগারকে দেখে আসবেন। সর্বশেষে আবার সেই দক্ষিণ আমেরিকার মধ্য পেরুর এক গ্রামে যাবেন। ভূগোলের সাথে ইতিহাস সম্পর্কিত। প্রতিটি স্থানেরই রয়েছে না জানা ইতিহাস। কত না জানা কথা। সেই সব জায়গাকে নিয়েই তৃতীয় অধ্যায় ‘পথের বাকে ইতিহাস’। প্রথমেই ইনকাদের শহর পিসাক এবং ওয়্যানটাইটামবোর কথা রয়েছে। ৭৯ সালের ২৪ আগস্ট ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুৎপাতের জন্য যাতে রোমান শহর পম্পেই এবং হারকিউলানিয়াম লাভার নিচে চাপা পড়ে ধ্বংস হয়ে যায় । এ শহরদুটি পরবর্তীতে আর পুনঃর্নিমাণ করা হয়নি । যদিও শহরগুলোর বেঁচে যাওয়া অধিবাসীরা এবং সম্ভবতঃ লুটেরারা ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রচুর জিনিষপত্র সংগ্রহ করেছিল । কালক্রমে শহরদুটির অবস্থান সবাই ভুলে গিয়েছিল; পরবর্তীতে ১৮শ শতকে ঘটনাক্রমে শহরগুলো আবার খুঁজে পাওয়া যায় । সেই হারকিউলানিয়ামে যাবেন লেখকের সাথে দেখে আসবেন দুই হাজার বছর আগের জীবনযাত্রা। জীবনের শেষ মুহূর্তে লোকগুলোর অবস্থা। অ্যাজটেক শহর তেওতিহুয়াকান এবং নরবলির রোমহর্ষক ইতিহাস জানতে পারবেন। ইনকাদের বিস্ময় মাচু পিচু ঘুরে আসবেন এই অধ্যায়ে। এরপর এক লাফে ইউরোপে চলে যাবেন প্রথমে ইংল্যান্ডে ঘুরে আসবেন স্টোনহেঞ্জ, এরপর ইতালির পিসার হেলানো মিনার, পোপের দেশ ভ্যাটিকান, এবং বেলজিয়ামের ওয়াটার লুর যুদ্ধক্ষেত্রে। ইতিহাসের বাঁক থেকে আমরা চলে যাই চতুর্থ অধ্যায় অরণ্য আড়ালে। মনে পড়ে যায় হীরক রাজার দেশের গান ‘এ যে দৃশ্য, এ যে অন্য /এ কি বন্য, এ অরণ্য/হেথা দিনেতে অন্ধকার/ হেথা নিঝুম চারিধার...............’ মেক্সিকোর রেইন ফরেস্ট এর মাঝে দুর্গ শহর কালাকমুলের কথা দিয়ে শুরু হয়েছে এই অধ্যায়। এরপর রয়েছে এক শ্বাপদের মুখোমুখি হওয়ার গল্প। এরপর আমাদের ঘরের কাছে নেপালের চিতোয়ান বনে চলে যাবেন, প্রেইরির মাঝে নিশাচর পেঁচা আর শেষে জঙ্গলের রাজা বুনো আফ্রিকার গল্প। অরণ্যের পর পঞ্চম অধ্যায়ে নেমে যাবেন জলের ভিতর। ‘জলে কার ছায়া’ অধ্যায়ে টিটিকাকা হ্রদ, কানিবার নদী, মেক্সিকো উপসাগরের স্বাদ পাবেন। সবশেষে লেখকের সাথে নেমে যাবেন ক্যারিবিয়ান সাগরতলে। সাহিত্য সাফারি অধ্যায়ে লেখক চমৎকারভাবে বর্ণনা করেছেন বিশ্বের নানাজায়গার যেগুলো সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। প্রথমে প্যারিসে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত বইয়ের দোকান শেক্সপীয়ার অ্যান্ড কোম্পানিতে চলে যাবেন। অ্যানা ফ্রাঙ্ক নামের পনেরো বছরের মেয়েটির ডায়েরি যে আগুন ধরিয়ে ছিল যুদ্ধের বিরুদ্ধে সেই অ্যানা ফ্রাঙ্ক যে বধ্যভূমিতে মারা যান তার বর্ণনা জানতে পারবেন এখানে। কিউবার যে জেলে পল্লীতে থেকে আর্নেস্ট হেমিংওয়ে রচনা করেছিলেন তার অমর সৃষ্টি ‘দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’ সেখান থেকে ঘুরে আসবেন লেখকের সাথে। চুপি চুপি বলে রাখি হেমিংওয়ের জীবদ্দশায় প্রকাশিত ‘দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’-র প্রধান চরিত্র সহানুভূতিপ্রবণ কিউবার জেলে সান্টিয়ানোর কারণে উপন্যাসটি কিউবায় একটি স্কুলপাঠ্য বই। তিনি তার নোবেল পুরস্কার মেডেল (প্রাপ্ত অর্থ ৩৫০০০ ডলার জয়) কিউবার একটি চার্চকে দিয়ে দিয়েছেন। ফ্রাঙ্কফুটের বিখ্যাত বইমেলা দেখে আসবেন। আর যাবেন কিংবদন্তী বাশিওয়ালার শহর হ্যামিলনে। সপ্তম এবং শেষ অধ্যায়ে কলাকেলিতে ফ্লোরেন্স ঘুরে আসবেন লেখকের সাথে। যাবেন গ্রীসের পার্থেননের মন্দিরে। যাবেন তুরস্কের বিখ্যাত স্থাপনা হাজিয়া সোফিয়া বা সেইন্ট সোফিয়ার মসজিদে। দ্যা ভিঞ্চির গ্রামে ঘুরে আসবেন, দেখে আসবেন তার আঁতুড় ঘর। ভ্যান গগের জাদুঘর দেখে আসবেন। সব শেষে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর স্থানে যাবেন বহুকাল আগে যাকে দেখে রবি ঠাকুর লিখেছিলেন আর অমর কবিতাঃ হে বিদেশী ফুল, যবে তোমারে শুধাই ‘বলো দেখি মোরে ভুলিবে কি’, হাসিয়া দুলাও মাথা; জানি জানি মোরে ক্ষণে ক্ষণে পড়িবে যে মনে। দুই দিন পরে চলে যাব দেশান্তরে, তখন দূরের টানে স্বপ্নে আমি হব তব চেনা— মোরে ভুলিবে না। পঁয়তাল্লিশটি ভ্রমণকাহিনীর এক অনবদ্ধ সংকলন ‘পৃথিবীর পথে পথে’। পুরোটা সময় পাঠককে আঁটকে রাখবে বইয়ের পাতায়। নিয়ে যাবে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। একটা কথা না বললেই নয় অনেকেই ভ্রমণ পিয়াসী। অনেকেই ছবি তুলে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে কিন্তু সে স্থানের বর্ণনা যাতে করে পাঠকদের চোখের সামনে ভেসে উঠে সে স্থানের নিখুঁত ছবি এবং পাঠকেরও সে স্থান ভ্রমণের ইচ্ছা হয় তা কিন্তু সবাই করতে পারেন না। তা নিপুণভাবে করেছেন তারেক অণু। লেখার সাথে সাথে সুন্দর ছবিগুলো এক নিমিষে পৌঁছে দেয় পাঠককে সে স্থানে। ভ্রমণকাহিনী কতটা সুখপাঠ্য হতে পারে তার একটি নমুনা এই বই। সকলকে পড়ার অনুরোধ রইল।
Was this review helpful to you?
or
“এই ছেলেটার নাম কি জানো? -এই ছেলেটা তারেক। একসঙ্গে কাজ করে সে মাত্র গোটা চারেক!” জনপ্রিয় ছড়াকার লুৎফুর রহমান রিটনের লেখা এই ছড়াটি “পৃথিবীর পথে পথে” বইয়ের ফ্লাপে শোভা পাচ্ছে। পুরো ছড়াটি পড়ে পাঠক আলোচ্য বইয়ের লেখক তারেক অণু’র ঠিকুজি জেনে যাবেন। সব্যসাচী তারেক অণু ‘পর্বত শিখর জয় করতে ভালোবাসেন, ডুব দেন সাগরতলে, তার চেয়েও বেশি উপভোগ করেন পাখির পিছনে দৌড়ে সকালকে বিকেল করে দিতে’। পর্যটক ও অভিযাত্রী তারেক অণু তাঁর বিভিন্ন ভ্রমণ এবং অভিযাত্রা নিয়ে লিখেছেন নানা পত্রিকায় এবং অনলাইন ব্লগে। বাংলা সাইবার জগতে বেশ জনপ্রিয় ব্লগার উনি। তাঁর লিখিত সমস্ত ভ্রমণ-গল্প এবং এডভেঞ্চার স্থান করে নিয়েছে “পৃথিবীর পথে পথে” বইতে। আলোচ্য ভ্রমণ-সংকলনের একটি বৈশিষ্ট্য প্রথমেই উল্লেখ করা দরকার। সাধারণত ভ্রমণকাহিনীগুলোর বিস্তৃতি সীমিত কিছু অঞ্চলে আবদ্ধ থাকে এবং লেখকের প্রচেষ্টা থাকে সেসব দেশ কিংবা অঞ্চলের গল্প তুলে ধরা। কিন্তু তারেক অণু তাঁর বইকে অল্পস্বল্প অঞ্চলে আবদ্ধ রাখেন নি। তাঁর ভ্রমণ-গল্পের বিস্তৃতি হিমালয় থেকে ক্যারিবিয়ান সাগর, ভিসুভিয়াস থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা, তিব্বত থেকে প্যারিস, এক্রোপলিস থেকে মাচু পিচু, চিতোয়ানের গহীন বন থেকে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির গ্রাম পর্যন্ত। সর্বমোট ৪৫ টি ভ্রমণকাহিনী নিয়ে সাজানো ‘পৃথিবীর পথে পথে’ গ্রন্থকে লেখক বিষয় ও বৈশিষ্ট্য অনুসারে সাতটি অংশে ভাগ করেছেন। এতে পাঠকদের সুবিধে হলো-একই গোত্রীয় কাহিনীগুলো একসাথে উপভোগ করতে পারে। মোটা দাগে বিভক্তিকরণ সঠিক বলেই মনে হয়, যদিও আমি মনে করি “মানুষের গল্প জনপদের গল্প” অংশে থাকা ‘ডারউইন তীর্থে’ এবং ‘কারাগারের মালি ম্যান্ডেলার পদক্ষেপে’ কাহিনী দু’টো বরং “পথের বাঁকে ইতিহাস” অংশেই মানায়। বইয়ের শুরু “তুষার ও অগ্নির উপাখ্যান” দিয়ে। লেখক একজন অভিজ্ঞ পর্বতারোহী। তাঁর এডভেঞ্চারগুলোর বর্ণনা মিলবে এই অংশে। লেখক তাঁর পর্বতারোহণের অভিজ্ঞতা নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন, বেশ গুছিয়ে। তাঁর লেখা পড়ে পাঠকে ঘুরে আসে বিশ্বের উচ্চতম বেস ক্যাম্প থেকে, লেখকের কষ্টকর অভিজ্ঞতা থেকে ওখানকার জীবনযাত্রার কিছুটা ছোঁয়া পায়। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ইউরোপের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ‘মঁ ব্লাঁ’ জয়ের গল্প পড়ে গর্বিত হয়েছি। আরো একটি প্রথমের সাথে লেখকের যোগ রয়েছে। অভিযাত্রী ইনাম আল হকের সাথে একত্রে উপস্থিত হয়েছেন একেবারে উত্তর মেরুতে,এখানেও বাংলাদেশীদের মধ্যে প্রথম। উত্তর মেরুতে পদার্পণের সেই অসাধারণ গল্প পাঠককে মোহাবিষ্ট করবে, জেগে উঠবে মেরু ভালুকে দেশে ভ্রমণের ইচ্ছা। কোনো ভ্রমণকাহিনীই সার্থক হয়ে ওঠে না যদি না ওতে মানুষের কথা উঠে আসে। মানুষ,সভ্যতা এবং সংস্কৃতি- ভ্রমণ-গল্পের অতি গুরুত্বপূর্ণ ক’টি উপাদান। তারেক অণুর গল্পে প্রায়ই উঠে এসেছে ভ্রমণাঞ্চলের মানুষের কথা,তাদের সংস্কৃতির কথা। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অংশটির নাম “মানুষের গল্প জনপদের গল্প”, যেখানে পৃথিবীর নানান রঙের-বর্ণের এবং প্রান্তের মানুষের চিত্র আঁকা হয়েছে। বিশেষ করে সাবেক কলোনিগুলো ঘুরে ঘুরে লেখক সেখানকার বর্তমান চিত্র বোঝার চেষ্টা করেছেন। শ্বেতাঙ্গ ও ঔপনিবেশিকদের দ্বারা শোষিত, নিগৃহীত এবং বঞ্চিত আদিবাসীদের মুখের হাসির নিচে লেখক খুঁজে পেয়েছেন কান্নার শব্দ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আদিবাসীরা পৃথিবীর সর্বত্রই একই ভাগ্য বরণ করেছে। আলোচ্য অংশটিতে ফুটবলের শহর ব্যোকায় তারেক অণুর চরকির মতো ঘোরার খবর মিলবে; মিলবে নিশীথ সূর্যের দেশ নরওয়েতে কয়েকজন মিলে রোড ট্রিপের ঠিকুজি। ব্রাজিলের বস্তি শহর ফাভেলা,যা মাদক ব্যবসা ও চোরাচালানকারীদের স্বর্গ, সেখানে লেখকের ভ্রমণের ইচ্ছা জ্ঞাপন পাঠককে একটু বিস্মিত করতে পারে যদি না লেখকে বিচিত্র খেয়ালের সাথে আগে থেকেই পরিচয় থাকে। একদিকে লেখক ঘুরে আসেন পবিত্র ক্রুশের পাহাড় থেকে, দর্শন নেন রিও’র যিশু’র; অন্যদিকে ডারউইনের বাড়ি ভ্রমণ নিয়ে থাকেন উচ্ছ্বসিত। আমরা পরিচিত হই এক উদার ও মুক্তমনা মানুষের সাথে। আলোচ্য অংশটুকুর সবচেয়ে সুলিখিত এবং আকর্ষণীয় দু’টি রচনা হলো ‘‘আমার কিউবা দর্শন’’ এবং ‘‘নাম না জানা ইনকা গ্রাম,লুকোচুরি-রত শিশু এবং আমার মুচি বন্ধু’’। কিউবা নিয়ে রচিত লেখাটি একটু বিশ্লেষণের দাবি রাখে। পুঁজিবাদী মিডিয়ার কল্যাণে সমাজতন্ত্রে বসবাসরত কিউবা নিয়ে বিশ্বের নানা প্রান্তেই আছে বিভ্রান্তি; কেউ ভাবে কিউবায় চলছে একনায়কতন্ত্র,আবার কেউবা সমাজতন্ত্রের সাফল্যের উদাহরণ হিসেবে কিউবার নাম নেয়। লেখক দ্বীপ দেশ কিউবায় ১৫ দিনের ভ্রমণে সেখানকার অর্থনীতি, সমাজব্যবস্থা, লৈঙ্গিক সমতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা, দুঃখকষ্ট এবং পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই দেখে নিয়েছেন। লেখকের মতে, পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত কয়েকটি রাষ্ট্র- স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর সাথে তুলনায় না গেলে বলা যায়- কিউবার মানুষ পৃথিবীর অন্যান্য পুঁজিবাদী ও উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় ভালো আছে। তাদের দেশের আছে পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা এবং শতকরা ১০০ ভাগ শিক্ষিত একটি জনগোষ্ঠী। কিউবায় থাকাকালীন অবস্থায় লেখক কোনো পথ-শিশুর সন্ধান পান নি জানিয়ে লেখক উন্নয়নশীল দেশ ভারতের সাথে কিউবার রাষ্ট্র-পরিচালনার তুলনা করেন। সমস্ত রচনায় লেখকের কিউবার প্রতি লেখকের এক ধরনের সহানুভূতির আভাস মেলে; নানা উদাহরণ টেনে এনে কিছুটা সমালোচনার চেষ্টা করলেও লেখকের কিউবার জন্য এক ধরনের পক্ষপাতিত্ব একেবারে সুস্পষ্ট। রাষ্ট্র কর্তৃক সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও উঠে এসেছে লেখায়। আশ্রয়দাতা ডাক্তারের কম বেতন নিয়ে আক্ষেপের কথা পড়ে বুঝা যায় মানুষের জিনে মিশে থাকা উচ্চাকাঙ্ক্ষা, প্রতিযোগিতা এবং অন্যের চেয়ে বেশি পাবার মানসিকতা কোনো তন্ত্রই এতো সহজে মুছে দিতে পারবে না; উর্বর জমি পেলে তা মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসতে চাইবেই। “পৃথিবীর পথে পথে” গ্রন্থের তৃতীয় অধ্যায়- ‘পথের বাঁকে ইতিহাসে’। আক্ষরিক অর্থেই লেখক ইতিহাসের পথে হেঁটেছেন এবং পাঠককে ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে ভ্রমণের স্বাদ দিয়েছেন। যদিও কয়েকটি রচনার পরিসর ছিলো খুবই অল্প; খুব অল্প বাক্যেই এসব ভ্রমণ-বৃত্তান্ত বর্ণনা করেছেন তারেক অণু। এর কারণ হতে পারে- লেখকের ভ্রমণের সময়কালটিই স্বল্প ছিলো, যে কারণে আর বিস্তৃত বর্ণনা উঠে আসে নি। তবে পাঠকের প্রাপ্তি হতে পারে এই যে, একজন বাঙালি পর্যটক নিজ চোখে দেখে এসে এইসব ঐতিহাসিক স্থানের কাহিনী সামনে তুলে ধরছেন যা আগে কেবল দেখার উপায় ছিলো টিভিতে বা বিদেশি লেখকদের লেখা থেকে। ইনকা সভ্যতা নিয়ে লেখকের পর্বতপ্রমাণ আগ্রহ আমরা দেখি যখন তাঁর দক্ষিণ আমেরিকা ভ্রমণে বারবার ইনকা সভ্যতার নানা নিদর্শন ভ্রমণের গল্প আলোচ্য গ্রন্থে উঠে আসে। লেখক ঘুরে আসেন ইনকা সভ্যতার নিদর্শন সূর্যনগরী পিসাক, ইনকাদের সমাধিক্ষেত্র, ইনকাদের প্রাচীন দুর্গনগরী ওয়ানটাইটাইমবো এবং আধুনিক সপ্তাশ্চর্যের অন্যতম মাঁচু পিচুঁ। শুধুমাত্র ইনকা সভ্যতাই নয়, অন্যান্য প্রাচীন সভ্যতা এবং আদিবাসীদের জীবনযাত্রা চর্মচক্ষে দেখার ইচ্ছায় লেখক ঘুরে আসেন অ্যাজটেক শহর তেওতিহুয়াকান-যা পৃথিবীর সর্বপ্রথম মেট্রোপলিটন শহর। প্রমত্ত ভিসুভিয়াসের ক্রোধে ছাই হয়ে যাওয়া ভূমধ্যসাগরের ধ্বংস-নগরী এরকোলানো কিংবা রক্তাক্ত ওয়াটার মু’র যুদ্ধক্ষেত্র লেখকের ভ্রমণ পাঠককে ইতিহাসের মনোযোগী ছাত্র হয়ে উঠতে উৎসাহিত করবে। এসব ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন যুগের প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যগুলো ভ্রমণে লেখকের উৎসাহ প্রচুর; এর প্রমাণ মেলে যখন তিনি স্টোনহেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়ান কিংবা পিসার হেলানো মিনারের হেলে থাকার কারণ অনুসন্ধান করেন। তারেক অণু একজন প্রকৃতি-প্রেমী, বিশেষ করে পাখির প্রতি তাঁর আগ্রহ এবং ভালোবাসার কথা উনি বারবারই বইয়ের বিভিন্ন রচনায় উল্লেখ করেছেন। যেখানেই গেছেন পাখির ছবি তুলেছেন। বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতা এবং উল্লেখযোগ্য স্থান ভ্রমণের পাশাপাশি তিনি অরণ্য ও সাগরে ভ্রমণের সুযোগ নিতে ভুল করেন না। ‘অরণ্য আড়ালে’ এবং ‘জলে কার ছায়া’ অধ্যায় দু’টিতে প্রকৃতিকে গভীরভাবে দেখার যে ইচ্ছা এবং প্রয়াস লেখকের আছে তা চোখে পড়ে। তারেক অণু অরণ্যশহর এবং মায়ান সভ্যতা নিদর্শন কালাকমুল ভ্রমণে গিয়ে অরণ্যের মাঝে হারিয়ে যান। আবার অদ্ভুত বাঁদরের চিৎকার শুনে গহীন বনে প্রবেশ করে শ্বাপদের মুখোমুখি হবার অভিযান পাঠককে নিশ্চিতভাবেই শিহরিত করবে। চিতোয়ানের গহীন বন কিংবা আফ্রিকার বুনো প্রান্তর- যেখানেই ঘুরতে যান না কেন, প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করতে ভুল হয় না লেখকের। তারেক অণু যে কেবলই একজন পর্যটক নন তা তো আমরা তাঁর পর্বতারোহণের গল্প থেকে জানতে পারছিই, আরো নিঃসন্দেহ হই যখন মেক্সিকো উপসাগরে কচ্ছপ,পাখি ও ডলফিনের খোঁজে গিয়ে কিংবা ক্যারিবিয়ান সাগরে গিয়ে ডাইভিং-এ নেমে পড়েন। সাগরতলের ভ্রমণের রচনাগুলো খুবই সুলিখিত, এই গ্রন্থের মুক্তো বলা চলে। পর্যটক, পর্বতারোহী, অভিযাত্রী এবং পাখি-প্রেমী তারেক অণুর আরো একটি বড়ো পরিচয়-তিনি বড়ো একজন বইপ্রেমী। সাহিত্য এবং শিল্পকলার ইতিহাসের মনযোগী পাঠক। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর ভ্রমণ-গল্পে সাহিত্য এবং শিল্পকলা আলাদা জায়গা নিয়ে থাকবে। ‘সাহিত্য সাফারি’ এবং ‘কলাকেলি’ অধ্যায় দু’টি হলো লেখকের সাহিত্য ও শিল্পকলায় পরিভ্রমণের গল্প। বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত বইয়ের দোকান শেক্সপিয়ার এন্ড কোম্পানি এবং ফ্রাঙ্কফুর্টের বইমেলায় গিয়ে বই নিয়ে মেতে ওঠেন অণু। ভূ-গোলকের অন্য প্রান্তে অবস্থিত কিউবায় আর্নেস্ট হেমিংওয়ের প্রিয় সাগর এবং বাসস্থানের চিত্র আমাদের জন্য নিয়ে আসেন তিনি। আনা ফ্রাংকের বধ্যভূমির গল্পে মনা ভারী হয়ে আসে, আবার হ্যামিলনের বাঁশি-ওয়ালার গল্পে পুলকিত হতে হয়। ভাস্কর্য ও চিত্রকলার শহর ফ্লোরেন্সে গিয়ে যখন সামনাসামনি মাইকেলেঞ্জেলোর ‘ডেভিড’ দেখার বর্ণনা লেখক দেন তখন পাঠকের শুধু ঈর্ষান্বিতই হতে হয়। ঈর্ষান্বিত হবার ‘সুযোগ’ আবারো ঘটে যখন পাঠক আক্রোপলিসের চুড়োর খবর পান, বা মধ্যযুগের সপ্তাশ্চর্যের একটি হাজিয়া সোফিয়ার ভ্রমণকাহিনী জানতে পারে। কৌতূহলী লেখক এরপর পাঠককে ঘুরিয়ে নিয়ে আসেন লিওনার্দো দা ভিঞ্চির গ্রাম এবং ভ্যান গগের জাদুঘর থেকে। এই গ্রন্থের শেষ এই দু’টো অধ্যায় পাঠ শেষে পাঠক নিজের মধ্যে সাহিত্য এবং শিল্পকলার ইতিহাস অধ্যয়নের একটি তাগিদ অনুভব করবে। লেখকের ছবি তোলার হাত দারুণ। ভ্রমণ-গল্পের বইয়ে পাঠকের প্রথম যে চাহিদাটি থাকে সেটি হলো ভ্রমণ-স্থানের আলোকচিত্র। “পৃথিবীর পথে পথে” সেই চাহিদাটি খুব চমৎকারভাবেই পূরণ করেছে। অল্প কিছু ছবি রঙিন ছাপা হলেও বেশিরভাগ আলোকচিত্রই সাদাকালোতে ছাপা হয়েছে, যা পাঠককে সেগুলোর পূর্ণ-রস আস্বাদন থেকে বঞ্চিত করবে। কিন্তু সব ছবি রঙিন ছাপাতে চাইলে বইয়ের মূল্য যে আকাশছোঁয়া হতো তাও আমাদের মাথায় রাখতে হয়। তারেক অণু’র ভাষা সরল। যদিও কিছু কিছু লেখায় একটু জটিল শব্দ এবং জটিল বাক্যের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এসব লেখায় বাক্যের ফাঁকে ফাঁকেই কিছু অপ্রচলিত কিংবা কম প্রচলিত শব্দের আগমন ঘটেছে যা হয়ত -সাহিত্যের একনিষ্ঠ পাঠক নয়- এমন পাঠককে অস্বস্তিতে ফেলবে। ধারণা করি- এসব লেখা তাঁর লেখক জীবনের প্রথম দিককার লেখা। পরের দিকে তাঁর ভাষা বেশ প্রাঞ্জল হয়ে উঠেছে যা পাঠকের জন্য যথেষ্ট স্বস্তিদায়ক। যদি আলোচ্য গ্রন্থের সমালোচনা করতে হয় তাহলে একটা বিষয়ই বারবার মাথায় আসছে। আর তা হলো- এই ভ্রমণ-গল্পগুলোর অধিকাংশই খুবই ছোট্ট পরিসরে আবদ্ধ। যেসব জায়গায় তারেক অণু ভ্রমণ করেছেন সেখানকার জীবনযাত্রা এবং সংস্কৃতির গভীর পর্যবেক্ষণ এই গ্রন্থ থেকে আমি পাই নি। হয়তো এর কারণ হলো- ভিন্ন কোনো সমাজের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য সেসব জায়গায় যতটুকু সময় অতিবাহিত করা প্রয়োজন তা লেখক করতে পারেন নি। এসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বলা যায়, এই গ্রন্থটি বাঙ্গালী পাঠকদের জন্য অনেক অসাধারণ স্থানের বর্ণনা একজন বাঙ্গালীর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তুলে ধরেছে- যে কারণে এটি বাংলা ভ্রমণ-সাহিত্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।
Was this review helpful to you?
or
আমি ভ্রমনকাহিনী খুব একটা পড়িনি। এর একটা কারন হচ্ছে, বাংলা ভাষায় লেখা ভ্রমনকাহিনী খুব বেশী নেই। যাই হোক, এবারের বইমেলায় ঘুরতে ঘুরতে একটা বইয়ের উপর নজর পড়লো। মলাটটা দেখেই বইটা পছন্দ হয়ে গেলো। আগ্রহভরে বইটার পৃষ্ঠা উল্টাতে লাগলাম। এই বইয়ের লেখক তারেক অণু, যিনি পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন। সেইসব জায়গার বর্ননাকে আশ্চর্য সাবলীল ভাষায় তুলে এনেছেন বইয়ের পাতায়। ভাষার কাঠিন্য আমি বইয়ের কোথাও পাইনি। তারেক অণু শুধু যে পর্যটক তা নন, তিনি ছবিও তোলেন। এই বইতে বিভিন্ন জায়গার বর্ননার সঙ্গে সঙ্গে রয়েছে অসাধারণ সব ছবি, যা আপনাকে বই পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেবে কোনো স্থানের বাস্তবচিত্র অবলোকনের দারুন সুযোগ। লেখক বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছেন। পেরু, উত্তর মেরু, দক্ষিন মেরু, আফ্রিকা, ব্রাজিল, প্যারিস, ভ্যাটিকান সিটি, মেন্ডেলার কারাগার, মাচু পিচুঁ, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, ফ্রাংকফুর্টের বইমেলা, নেপাল, তিব্বত, আলাস্কা, জার্মানিসহ অসংখ্য জায়গায়। সেসব জায়গার অভিজ্ঞতাই উঠে এসেছে বইটিতে। ঘরে বসে বিশ্বভ্রমনের এই সুযোগ হাতছাড়া করতে না চাইলে পড়ে ফেলুন "পৃথিবীর পথে পথে"। ভালো লাগবেই.....কনফার্ম।