User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
ভালো ছিলো।
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ একটি উপন্যাস। খুব ভাল লেগেছে বইটি পড়ে। বস্তুত জলদাসের সব বইতেই ভাল লাগার আবেশ রয়ে যায়।
Was this review helpful to you?
or
আমি মৃণালিনী নই বইটিতে রবি ঠাকুরের স্ত্রীর বয়ানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং নিজের জীবনের অনেক উত্থান পতন দেখানাে হয়েছে। বিয়ের পিড়ি থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছােটখাট দুক্ষ কষ্টের কাহিনী এতে লিপিবদ্ধ। আছে। সবকিছু ছাপিয়ে উঠেছে রবীন্দ্রনাথের তারপ্রতি। ভালােবাসাহীনতা। কখনাে নিজের নাম বদলানােতে কখনাে কাদম্বরীর সাথের রবি ঠাকুরের সম্পর্কের গল্পে ক্ষত বিক্ষত হয়েছে ভবতারিণীর মন। জানি না, এ গল্পে কতটুকু সত্য আছে না কি মিথ্যার সাথে কিছু সত্য মিশিয়ে এই বইটি রচনা করেছে লেখক? কিন্তু লেখক এক দিক প্রশংসার দাবিদার। এমন চমতকার লেখনী খুব কমই দেখতে মেলে | এক ধরণের আকর্ষনীয় ক্ষমতা আছে লেখায় যা থেকে। চোখ ফেরানাে যায় না।
Was this review helpful to you?
or
মৃণালিনী। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পত্নী তিনি। যশোরের এক দরিদ্র পরিবারে তার জন্ম। তার বাবা ছিলেন ঠাকুর বাড়ির বাজার সরকার। সেই বাজার সরকারের মেয়ে থেকে হঠাৎ সে ঠাকুর বাড়িতে বউ হয়ে ওঠে। হয়ে ওঠে ঠাকুরবাড়ির সবচেয়ে সুদর্শন ছেলেটির সহধর্মিণী। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাইশ বছর বয়সে মাত্র নয় বছর বয়সী ভবতারিণীর সাথে বিয়ে হয়। ভবতারিণীইই বটে। পরে রবিঠাকুর নিজেই মৃণালিনী নামটা দেন। মৃণালিনী নামটা কবিগুরু বেশ ভেবেচিন্তেই দিয়েছিলেন। “ মৃণালিনী মানে পদ্ম। রবি মানে সূর্য। ভোরবেলাকার সূর্যের আলো পদ্মের ওপর পড়লে পদ্ম পূর্ণভাবে বিকশিত হয়। রবি ছাড়া মৃণালিনী যেমন অপ্রস্ফুটিত থাকে , তেমনি মৃণালিনীবিহীন রবিও অপূর্ণ।“ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনেও মৃণালিনী তেমনই একজন ছিলেন। যার সহচার্য রবীন্দ্রনাথ কে করেছে পূর্ণ। কিন্তু শুধু কি মৃণালিনীর একার কথায় এই বইতে এসেছে? না, তা নয়। আরো আছে কাদম্বরী, জ্ঞানদানন্দিনী দেবী, স্বর্ণকুমারী দেবী। আছে ঠাকুরবাড়িরর কাহিনী আর ভবতারিণীর মৃণালিনী হয়ে ওঠার সংগ্রাম। কেমন ছিল রবীন্দ্রনাথ আর মৃণালিনী দেবীর দাম্পত্যজীবন? যে রবীন্দ্রনাথ কে আমরা প্রেমময়, সৌন্দর্যময়তার কবি হিসেবে দেখি, তিনি কি আসলেই মৃণালিনী কে প্রেম দিয়েছিলেন? করেছিলেন আপন? নাকি মৃণালিনী ছিলেন কেমন বাইরের কেউ? রবীন্দ্রনাথের মন জুড়ে কি ছিল অন্য কারো স্থান? সেই সকল প্রশ্নের উত্তরের মলাট বন্দি প্রতিচ্ছবি এই উপন্যাসটি।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারী_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা #রিভিউ ১ কথাসাহিত্যিক হরিশংকর জলদাস তাঁর ' আমি মৃণালিনী নই' উপন্যাসে ভবতারিণী থেকে মৃণালিনী হওয়া রবিঠাকুরের স্ত্রীর অন্তরঙ্গ ও হাহাকারপূর্ণ বয়ানে বিয়ের দিন থেকে নিজের মৃত্যুর আগ অবধি ঘটনার পর ঘটনার প্রায় অনুপুঙ্খ বিবরণসংবলিত আকারে তুলে ধরেছেন যেখানে আছে বাস্তব ও কল্পনার মিশেল। এ উপন্যাসের পরতে পরতে জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুরবাড়ির একটা কালপর্বের ঘটনা যে রকম মাধুর্যপূর্ণ ভাষ্যে তুলে ধরেছেন তিনি, মনে হয়েছে মুখোমুখি বসে শুনছি মৃণালিনীর একান্ত আপন কথা। মৃণালিনী নিজের সাক্ষাৎ পর্যবেক্ষণের কথা যেমন জানাচ্ছেন, তেমনি বউ হয়ে আসার পর নানাজনের মুখে ঠাকুরবাড়ির বহু আগের যেসব ঘটনা শুনেছেন তারও বিবরণ দিচ্ছেন অকপটে। আলোর নিচে আঁধার থাকার মত জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতেও অন্ধকার ছিল। অবরোধপ্রথা ছিল। এ বাড়ির অবরুদ্ধ নারীকুলের দশা মৃণালিনীর বয়ানে লেখক যেভাবে তুলে ধরেছেন, পাশাপাশি পুরুষদের ভূমিকার কথাও তা কথাসাহিত্যের ঘরোয়া ভাষা হয়ে উঠেছে। মৃণালিনী জানাচ্ছেন, " ঠাকুরবাড়ির কড়া নিয়ম- কোনো পরপুরুষের সঙ্গে বাড়ির মেয়ের সাক্ষাৎ চলবে না।" এ উপন্যাসের এক বড় জায়গাজুড়ে আছে কাদম্বরী দেবীর সঙ্গে রবিন্দ্রনাথের সর্ম্পকের চালচিত্র, কাদম্বরী দেবীর মৃত্যু, আর আছে মৃত্যুকে ঘিরে রহস্যময়তা। আছে বাসর রাতে ভবতারিণী থেকে মৃণালিনীতে পরিণত হওয়া স্বয়ং স্বামী রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে তার বঞ্চনার অকপট স্বীকারোক্তি। উপন্যাসের শেষ হয়েছে মৃণালিনীর মৃত্যুর মধ্যদিয়ে। মৃত্যুর আগে তাঁর স্বীকারোক্তি, " সারাটা জীবন রবিবাবুর মনোতুষ্টিতে কাটল আমার। আমার ভালোলাগার দিকে দৃকপাত করেনি কখনো সে। এই মুহূর্তে চোখের জলে বুক ভাসিয়ে আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে, আমি মৃণালিনী নই, আমি ভবতারিণী। রবিবাবুর স্ত্রী ছাড়াও আমার নিজস্ব একটা সত্তা ছিল, সেই সত্তার প্রতি রবিবাবু কোনো দিন সুবিচার করেনি।" নারী যে শুধু নারী নন, তার নিজস্ব একটা ব্যক্তিসত্তা আছে তা মৃণালিনীর বয়ানের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। পুরো উপন্যাসে এসব কথাই ডায়েরী আকারে লেখেন মৃণালিনী তথা ভবতারিণী। হরিশংকর বাবুর প্রসাদগুণসম্পন্ন লেখনীর গুণে সেই ডায়েরী হয়ে উঠেছে এক নারীর দলিত ব্যক্তিসত্তার দুক্ষভারাক্রান্ত দিনলিপি। #বইয়ের_নাম : আমি মৃণালিনী নই লেখক : হরিশংকর জলদাস প্রকাশক : প্রথমা প্রকাশন
Was this review helpful to you?
or
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাস্তবতায় হয়তো বিশ্বাসী ছিলেন না। অমর প্রেমের গান, কবিতা, গল্প, নাটক যার হাতে সৃষ্ট, সেই মানুষটার বিবাহিত জীবন কি রোমান্টিক ছিলো? নাকি কেবল বয়ে নিয়ে চলা ? এর উত্তর এ ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলের গল্প নিবিড়ভাবে প্রকাশ পেয়েছে এ গল্পে। আর মৃণালিণীর মনের আয়না যেনো এ বই! নারী হৃদয় চিরকাল যা ছিলো, আজও তা আছে। এ বই সকল বিবাহিতের টানাপোড়েনের কোনো গল্পের সাথে কোনো না কোনোভাবে জড়িত!
Was this review helpful to you?
or
পড়ে মনে হবে মৃণালিনী দেবীর অর্থাৎ ভবতারিণী দেবীর আত্মজীবনী। খুব সুন্দর একটু উপন্যাস। পড়ে আরাম পেয়েছি।
Was this review helpful to you?
or
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে নতুন করে বলার মতো আসলে কিছু নেই। কারণ বাংলা সাহিত্যের সমস্তটা জুড়েই রবি ঠাকুরের বসবাস। বাংলা সাহিত্যে এমন কোন অংশ নেই যেখানো রবি ঠাকুর নেই। প্রতিটা অংশেই আছে তার অবদান। এসব কথা প্রতিটা বাঙালিরই জানা। যাই হোক, সেই রবীন্দ্রনাথের সংসার জীবন যখন শুরু হয় তখন তিনি বাইশ বছরের যুবক। বাইশ বছর বয়সে যশোরের ফুলতলি গ্রামের নয় বছরের মেয়ে ভবতারিণীকে বিয়ে করেন। সেই ভবতারিণীই আমাদের মৃণালিনী। বিয়ের রাতে রবি ঠাকুর তার স্ত্রী ভবতারিণীর নাম বদলে মৃণালিনী রাখেন। "মৃণালিনী অর্থ পদ্ম আর রবি মানে সূর্য। ভোরবেলাকার সূর্যের আলো পদ্মের উপর পড়লে পদ্ম পূর্ণভাবে বিকশিত হয়। রবি ছাড়া মৃণালিনী যেমন অপ্রস্ফুটিত থাকে তেমনি মৃণালিনীবিহীন রবিও অপূর্ণ"। মাত্র নয় বছরে মৃণালিনী এ বাড়ির বউ হয়ে আসেন। সেই ছোট্ট বালিকাটিকে ভবতারিণী থেকে রবি ঠাকুরের মৃণালিনী করার দায়িত্ব নেন রবীন্দ্রনাথের মেজো বৌদি জ্ঞানদা দেবী। পড়াশোনা শিখানো থেকে শুরু করে শাড়ি পড়া শিখানো- সবকিছু ঘষে মেজে তৈরী করে দেন জ্ঞানদা বৌদি। নয় বছরের বালিকাটির তিনি হয়ে উঠেন একজন অভিভাবক। একটা সময় এই মৃণালিনীই হয়ে যান বাড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। দীর্ঘ এই সংসার জীবনে পাওয়া না পাওয়া, পূর্ণ অপূর্ণ সমস্ত কথা লিখে রেখে গেছেন মৃণালিনী। শুধু তার নিজের কথাই না জ্ঞানদা বৌদিসহ অনেকের কথাই লিখে গেছেন। এমনকি কাদম্বরী দেবীর কথাও তিনি বাদ দেন নি। এই লেখায় যেমন তুলে ধরেছেন তিনি ঠাকুর বাড়ির আধুনিকতা তেমনি কুসংস্কারাচ্ছন্ন দিকটি তুলে ধরতেও দ্বিধা করেন নি। মৃণালিনীর সেই আত্মকথন নিয়েই লেখা "আমি মৃণালিনী নই"।
Was this review helpful to you?
or
আত্মকথা আর সত্য ঘটনার কাহিনী সংক্ষেপ হয় না। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির সবথেকে সুদর্শন যুবক। আর তার পরিচয় নতুন করে বাঙ্গালীদের দেয়া প্রয়োজন নেয় বোধহয়। বাইশ বছর বয়সে ন’ বছর বয়সী ভবতারিণীর সাথে বিয়ে হয়। হ্যা ভবতারিণী । পরে রবিঠাকুর নিজেই মৃণালিনী নামটা দেন। কেন জানেন? “ রবি মানে সূর্য। ভোরবেলাকার সূর্যের আলো পদ্মের ওপর পড়লে পদ্ম পূর্ণভাবে বিকশিত হয়। রবি ছাড়া মৃণালিনী যেমন অপ্রস্ফুটিত থাকে , তেমনি মৃণালিনীবিহীন রবিও অপূর্ণ।“ মৃণালিনী মানে পদ্ম! সেই ন’ বছর বয়েস থেকে দীর্ঘসংসার জীবনের হাসি কান্না, আনন্দ- বেদনা, ক্ষোভ , চাওয়া- পাওা-না পাওয়া কথাগুলো কে লেখক দুই মলাটে আটকে দিয়েছেন। আসলে এই কথা গুলো দুই মলাটে আটকে থাকার মত না। প্রতি শব্দ, বাক্য, অনুভূতি কে ঠিক কিভাবে নাড়া দেবে বুঝবেন না। এত টুকরো স্মৃতি । কি অকপটে সব স্বীকার করে গেলেন মৃণালিনী। কত কথা বলতে আজ আমরা নিজেরা ইতস্ততবোধ করি। আজ থেকে কয়েক যুগ আগের নারী তিনি, কি অবলীলায় বলে গেছেন। পড়বেন আর মনে হবে, আপনার সামনে বসেই কেউ বলে যাচ্ছে গল্প। ঠাকুর বাড়ির রীতিনীতি ।জ্ঞানদা বৌদির ভব কে মৃণালিনী করার চেষ্টা , উনার জীবনের অনেক তথ্য মৃণালিনী দেবী তুলে ধরেছেন। সেই বিয়ের দিন থেকে শুরু করে। এইখানে যশোর এর কথা কয়েকবার এসেছে আর নিজে আমি খুশী, নিজে যে যশোর এলাকার মেয়ে! সরাসরি যশোর না হলেও বৃহত্তর যশোর ! দুঃখিত বাইরের কথা বলে ফেললাম। কতরকমের বিধান, তা মানা না মানা, রবির মা-বাবা , কিংবা তাদের বাবা-মা, তাদের সম্পর্ক- টানাপড়েন মোটামোটি সব খুব গুছিয়ে লেখা বইটাতে। যে বাড়ির অন্দরমহল কখনও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন, আবার আধুনিকতার ছোঁয়ায় আলোকিত। কেবল যে মৃণালিনী দেবী নিজের কথাই বলেছেন তা নয়, ঠাকুরবাড়ির অনেক নারী তথা নারী মহল সম্পর্কে অনেক অনেক তথ্য দিয়ে গেছেন। এমন কি কাদম্বরী দেবী ও বাদ পড়েনি। ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল নামে একটা বই বহুদিন ধরে শুরু করে করে রেখে দিয়েছিলাম এটা পড়ে মনে হচ্ছে সেই বইটা এবার পড়তেই হবে। বাঙ্গালী নারীর প্রিয় শাড়ি পড়ার ধরনধারণে পরিবর্তন আনা মানুষ এই অন্তঃপুরেরই। আমার এই বই পড়ে মনে হচ্ছে , আসলেই কি অদ্ভুত ছিল তাদের দিন গুলো। তাদের কে বাইরে থেকে যতটা জানি, আসলে তার কম জানি আমরা। আজকাল হয়ত অনেক কিছুই জেনে গেছি ,অনেক কথা, তবুও কিছু কথা পড়লে, অদ্ভুত লাগে। প্রশ্ন আসে, আসলেও কি তাই? কিছু কিছু কাজ উদ্ভট ছিল, সে আমলে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগবার আগে , যেমন অন্তঃপুরের নারীদের গঙ্গাস্নানের ব্যবস্থা। বেহারারা ঘেরাটোপে আবৃত নারী সহ পালকী গঙ্গাজলে ডুবিয়ে আনত। খুব বেশি কুসংস্কারাচ্ছন্ন না হলেও কিছু ক্ষেত্রে একটু গোরা টাইপ ছিলেন। সব নিয়ে কথা বলতে গেলে পাতার পর পাতা শেষ হবে। পড়ে ফেলুন না পড়ে থাকলে। ভালো লাগবে, অবাক হবেন খুব বেশি। লেখক অনেক পরিশ্রম করেছেন্ম এটা বইটা পড়লেই বোঝা যায়।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা #অক্টোবর : ২৩ বই : আমি মৃণালিনী নই লেখক : হরিশংকর জলদাস ধরণ : আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস মূল্য : ৩২০টাকা মৃণালিনী। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পত্নী তিনি। যশোরের এক দরিদ্র পরিবারে তার জন্ম। তার বাবা ছিলেন ঠাকুর বাড়ির বাজার সরকার। সেই বাজার সরকারের মেয়ে থেকে হঠাৎ সে ঠাকুর বাড়িতে বউ হয়ে ওঠে। হয়ে ওঠে ঠাকুরবাড়ির সবচেয়ে সুদর্শন ছেলেটির সহধর্মিণী। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাইশ বছর বয়সে মাত্র নয় বছর বয়সী ভবতারিণীর সাথে বিয়ে হয়। ভবতারিণীইই বটে। পরে রবিঠাকুর নিজেই মৃণালিনী নামটা দেন। মৃণালিনী নামটা কবিগুরু বেশ ভেবেচিন্তেই দিয়েছিলেন। “ মৃণালিনী মানে পদ্ম। রবি মানে সূর্য। ভোরবেলাকার সূর্যের আলো পদ্মের ওপর পড়লে পদ্ম পূর্ণভাবে বিকশিত হয়। রবি ছাড়া মৃণালিনী যেমন অপ্রস্ফুটিত থাকে , তেমনি মৃণালিনীবিহীন রবিও অপূর্ণ।“ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনেও মৃণালিনী তেমনই একজন ছিলেন। যার সহচার্য রবীন্দ্রনাথ কে করেছে পূর্ণ। কিন্তু শুধু কি মৃণালিনীর একার কথায় এই বইতে এসেছে? না, তা নয়। আরো আছে কাদম্বরী, জ্ঞানদানন্দিনী দেবী, স্বর্ণকুমারী দেবী। আছে ঠাকুরবাড়িরর কাহিনী আর ভবতারিণীর মৃণালিনী হয়ে ওঠার সংগ্রাম। কেমন ছিল রবীন্দ্রনাথ আর মৃণালিনী দেবীর দাম্পত্যজীবন? যে রবীন্দ্রনাথ কে আমরা প্রেমময়, সৌন্দর্যময়তার কবি হিসেবে দেখি, তিনি কি আসলেই মৃণালিনী কে প্রেম দিয়েছিলেন? করেছিলেন আপন? নাকি মৃণালিনী ছিলেন কেমন বাইরের কেউ? রবীন্দ্রনাথের মন জুড়ে কি ছিল অন্য কারো স্থান? সেই সকল প্রশ্নের উত্তরের মলাট বন্দি প্রতিচ্ছবি এই উপন্যাসটি। পাঠ প্রতিক্রিয়া : মাত্র নয় বছর বয়সে ঠাকুর বাড়ির বউ হয়ে ওঠা মৃণালিনীর দীর্ঘ সংসার জীবনের হাসি কান্না, আনন্দ- বেদনা, কষ্ট, পাওয়া- না পাওয়ার কথাগুলো কে লেখক দুই মলাটে আটকে দিয়েছেন এই বইটিতে। কি অদ্ভুত সাবলীলতায় অকপটে সব স্বীকার করে গেলেন মৃণালিনী! লেখক ভিষণ সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন কবি পত্নীর মন অন্তরালের কাহিনী গুলোকে। অজস্র না বলা কথা, অনুভূতির স্তুপাকৃতির পাহাড় ভেঙে ঝর্ণার মত প্লাবিত করেছেন লেখক মৃণালিনীর ভাষ্যে। আজ কত কথা স্বীকার করতে আমাদেরও অস্বস্তি হয়। অথচ এই অনুভূতি গুলোই হয়ত এইভাবেই চাপা পড়েছিল মৃণালিনীর মনে। ঠাকুর বাড়ির কঠোর রীতিনীতি, জ্ঞানদা বৌদির ভবতারিণী কে মৃণালিনী করে তোলার অদম্য চেষ্টা পরিপূর্ণ সৌন্দর্যে বিকশিত হয়েছে বইটির পাতায় পাতায়। বইটি পড়তে পড়তে কখন যে বইয়ের পাতায় পথ হারিয়েছি তা ভেবেই পাইনা। তবে শুধুই যে মুগ্ধ হয়েছি তা নয়। কখনো কখনো বা ক্ষোভ হয়েছে খুব, কষ্ট পেয়েছি মৃণালিনীর জন্য। আচ্ছা, কবি পত্নী কি সত্যিই কখনো ভবতারিণী থেকে মৃণালিনী হতে চেয়েছিলেন? বাবা মায়ের দেয়া নাম ভুলে থাকতে তার কষ্ট হয়নি? হয়েছে হয়ত। তাই এই বইয়ের প্রতি পাতা জুড়ে ভবতারিণীর নিঃশব্দ আর্তনাদ প্রকট হয়ে উঠেছে। বার বার মনে এসে বিঁধেছে তার একটি কথা, " আমি মৃণালিনী নই" লেখক যে বইটির পেছনে প্রচণ্ড পরিশ্রম করেছে তা বোঝায় যায়। সে সময়ে ঠাকুর বাড়ির অবস্থা এতটাই কঠোর ছিল যে, কারো প্রকাশ্য ঘটনাও চৌকাঠ পেরুনোর সাহস করত না। সে ক্ষেত্রে মৃণালিনীর মনের কথা কারো জানার কথা নয়। কিন্তু লেখক তার অসাধারণ পারমাঙ্গতায় তার নিজস্ব অনুভূতির কিংবা কল্পনার প্রকাশ ঘটিয়েছেন মৃণালিনীর মাধ্যমে। আর তা এতটাই জীবন্ত যে বিশ্বাস করতে সামান্য কষ্টও হয়না। তবে কখনো কখনো এটাও মনে হয়েছে, মৃণালিনীর আবেগের বহিঃ প্রকাশ ঘটাতে গিয়ে কবি গুরু কে বড্ড বেশি নিষ্ঠুর বানিয়ে ফেলেছেন লেখক। মৃণালিনী কে তার কাছে বানিয়েছেন হাতের পুতুল মাত্র। যাকে নিয়ে ইচ্ছে মত খেলা করা যায়। কিন্তু আসলেই কি তিনি তেমনই ছিলেন? আজ শতবছর পরে ঠাকুরবাড়ির অন্দরের বাসিন্দাদের মনকুঠুরীর সেই অনুভূতি কে অবিস্কার করা অসম্ভব। কিন্তু বই জুড়ে ঠাকুরবাড়ির যে বর্ণনা উঠে এসেছে, তা স্বীকার করা ছাড়া উপায় নেই। হরিশংকর জলদাসের অনবদ্য লেখনশৈলীর প্রাচুর্যে সত্য আর কল্পনার মিশেলে " আমি মৃণালিনী নই " হয়ে উঠেছে সত্যিকার অর্থেই সুখ পাঠ্য।