User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
#রকমারী_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা #রিভিউ_২ ( আগস্ট রিভিউ ১১) অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে পাঠকের সামনে নতুন করে পরিচয় করে দেওয়ার কিছু নেই। যিনি নিজেই বটবৃক্ষের মত, তাঁর শান্ত, সুশীতল, সুনির্ভর ছায়াতেই তো আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বেড়ে উঠছি। আবু সায়ীদ স্যার তাঁর শিক্ষক আর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতার পরিচয়ের অবগুণ্ঠন খুলে তিনি সর্বস্তরের মানুষের কাছে পরিচিত ও জনপ্রিয় হয়েছেন টিভিতে সুউপস্থাপক হিসেবে পরিচিতির কারণে। তিনি দীর্ঘদিন বিটিভি সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিভিশনগুলোর সাথে কাজ করেছেন। অনেকগুলো অনুষ্ঠানকে তিনি তাঁর মননদীপ্র সুললিত উপস্থাপনার দ্বারা জনপ্রিয় করেছেন। এই উপস্থাপকের কাজ করতে গিয়ে তিনি অনেক ভালো-মন্দ পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছেন। 'আমার উপস্থাপক জীবন' বইটি স্যারের সেই টিভিতে উপস্থাপনারই আখ্যান। এই বইটিতে অবশ্য একই সাথে বিটিভির শুরুর দিকের দিনগুলোর ইতিহাস সম্পর্কেও বহুমুখী বর্ণিল ধারণা পাওয়া যাবে। বইটি লেখক শুরু করেছেন তাঁর ছেলেবেলার গল্প দিয়ে। মূলত ছেলেবেলা থেকেই যে তাঁর মঞ্চের প্রতি আসমুদ্রহিমাচল আগ্রহ সেই প্রসঙ্গে আলোকপাত করার জন্যে তিনি তাঁর স্কুলজীবনের কথা এনেছেন। তারপর তিনি ছাত্রাবস্থায় রেডিওতে একবার অডিশন দিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন সেই বর্ণনাও দিয়েছেন বইয়ের প্রথম ভাগে। রেডিওর কাছ থেকে স্যার যে খ্যাতি চেয়েছিলেন পরবতীতে টেলিভিশন এ এসে তা তাঁকে বহুগুণে দিয়েছে। ১৯৬৫ সালে স্যারের টেলিভিশনে যাত্রা শুরু হয় কবি জসীমউদ্দীনের সাক্ষাৎকার নেওয়ার মাধ্যমে। স্যার তারপর তাঁর উপস্থাপক জীবন শুরু করেন 'হারজিত' নামক ধাঁধার অনুষ্ঠান করার মাধ্যমে। সেই অনুষ্ঠান স্যারকে এত জনপ্রিয় করে তোলে যে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর জীবন বাঁচানোর নিয়ামক হয়ে যায়। স্বাধীনতার পর নতুন দেশ, নতুন জাতি। স্যারও নতুন উদ্যমে টেলিভিশনের কাজে মধুমত্ত হয়ে গেলেন। এবার স্যার শুরু করলেন ছোট ছোট পর্বের নাচ, গান, ছোট নাটিকা সহযোগে 'সপ্তবর্ণা' নামের অনুষ্ঠান। এই 'সপ্তবর্ণা' ই হল আমরা বর্তমানে টিভিতে যে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান দেখি তার আদি পিতা। এই অনুষ্ঠানটিও ব্যাপক জনচিত্তবিমোহিত করে। স্যার লিখেছেন 'সপ্তবর্ণা' করার সময়ে তিনি অনুষ্ঠানটির সাথে এতই একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন যে সে সময় মনে হত এই অনুষ্ঠান করতে করতে যদি মঞ্চের উপর তাঁর মৃত্যুও হয় তাহলে সেটাই হবে তাঁর মহত্তম মৃত্যু। 'সপ্তবর্ণা' শেষ হওয়ার পর 'আনন্দমেলা' নামের আরেকটা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান তিনি শুরু করেন। এটার পর তিনি নতুন চ্যালেঞ্জ হাতে নিলেন। টিভিতে প্রথমবারের মত 'মানচিত্র ' নামে একটা শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান তিনি শুরু করলেন। কিন্তু এই অনুষ্ঠান করতে গিয়ে তিনি পেতে লাগলেন প্রতি পদে বাঁধা এই অনুষ্ঠানের কোন আর্থিক মূল্য নাই বলে। আর তাছাড়া স্যারের হ্রদয় তখন আরো মহৎ স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে। স্যার তখন গোটা জাতির জীবন আলোকিত করতে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কাজে ভালোমতই জড়িয়ে গেছেন। টিভিতে উপস্থাপনা করার ভিতরের অনুপ্রেরণাটা স্যারের ভিতরে আস্তে আস্তে কমে আসাতে তিনি টিভি উপস্থাপনার ঝলমলে জগত থেকে অবসর নেন। ' আমার উপস্থাপক জীবন' বইটি স্যারের দীর্ঘ উপস্থাপক জীবনের ইন্দ্রজালমদির আখ্যান। এ এমনই এক হ্রদয়অতলস্পর্শী বই যা পড়ার সময় পাঠক স্যারের অসাধারণ কথক ও বাগ্মীর বিস্তার করা সম্মোহনী জালে আটকা পরবেন আবার স্যারের বেদনার্ত হ্রদয়ের গোপন রক্তক্ষরণের আস্ফালনে ব্যাথিত হবেন। বিটিভির শুরুর ইতিহাস আর স্যারের ব্যাক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী যে কোন পাঠকের জন্য বইটি অবশ্যই সুপাঠ্য। # বইয়ের_নাম : আমার উপস্থাপক জীবন লেখক : আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ প্রকাশক : সময় প্রকাশন প্রকাশকাল : ২০০৫ গায়ের দাম : ২০০ টাকা
Was this review helpful to you?
or
অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের অসংখ্য পরিচয়ের মধ্যে তিনি সর্বস্তরের মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি পরিচিত এবং জনপ্রিয় তাঁর টিভিতে উপস্থাপক হিসেবে পরিচিতির কারণে। তিনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশের টেলিভিশনের সাথে কাজ করেছেন। অনেকগুলো অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করেছেন। কাজ করতে গিয়ে অনেক ভালো-মন্দ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। ‘আমার উপস্থাপক জীবন’ বইটি স্যারের সেই টিভিতে উপস্থাপনার দিনগুলোরই গল্প। এই বইটিতে অবশ্য একই সাথে বিটিভির শুরুর দিকের দিনগুলোর ইতিহাস সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যাবে। বইটি লেখক শুরু করেছেন তাঁর ছেলেবেলার গল্প দিয়ে। মূলত ছোটবেলা থেকেই যে তাঁর মঞ্চের প্রতি অপরিসীম আগ্রহ সেই প্রসঙ্গে আলোকপাত করার জন্যেই তিনি তাঁর স্কুলজীবনের কথা এনেছেন। ছোটবেলায় একবার মঞ্চে উঠার সুযোগ হারিয়ে ফেলার কারণে তিনি যে অত্যন্ত কষ্ট পেয়েছিলেন সেই ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তারপর তিনি ছাত্র অবস্থায় রেডিওতে একবার অডিশন দিতে গিয়েছিলেন। তখনও তিনি ব্যর্থ হন। আর বুকভরা কষ্ট নিয়ে রেডিওর অফিস থেকে ফিরে আসেন। সেই গল্পও এই বইয়ের শুরুর দিকেই আছে। রেডিওর কাছে থেকে স্যার যেই খ্যাতি চেয়েছিলেন পরবর্তীতে টেলিভিশন এসে তা তাঁকে বহুগুণে দিয়েছে। ঢাকা শহরে যখন প্রথম টেলিভিশন আসে তখন তা সবার কাছে এক আশ্চর্য বস্তু। স্যার এক প্রদর্শনীতে গিয়ে প্রথমবার টেলিভিশন দেখেছিলেন। তাও বন্ধ অবস্থায়। আর স্যারের কী ভাগ্য, এই ঘটনার অল্প কিছুদিন পরেই তিনি নিজেই টিভিতে একটি অনুষ্ঠান করার সুযোগ পেয়ে যান। স্যারের উপস্থাপনায় সেই অনুষ্ঠানটি সে সময়ে বেশ জনপ্রিয়ও হয়। তারপর থেকে স্যার টেলিভিশনের মোটামুটি নিয়মিত মানুষ হয়ে যান। তখন স্যার একটা ধাঁধাঁর অনুষ্ঠান করতেন। সেই সময়ে স্যার এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন যে মানুষ সারা সপ্তাহ স্যারের অনুষ্ঠানটি দেখার জন্যে অপেক্ষা করে থাকতো। এই সবই হল যুদ্ধের আগেকার কথা। তারপর যুদ্ধ শুরু হল। সেই যুদ্ধের সময় এমন একটা ঘটনা ঘটে যে কারণে স্যার নিজেই তাঁর উপস্থাপক সত্ত্বার কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ। সে সময় একবার পাকিস্তানী আর্মিরা ভুলে স্যারকে ধরেন। তারপর তাঁকে আরও অনেক মানুষের সাথে একটা ঘরে বন্দী করে রাখা হয়। স্যার অনেকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিলো না। শেষে রাত্রেবেলা ঊর্ধ্বতন আর্মি অফিসার আসে। এখন তার হাতেই অন্য অনেকের সাথে স্যারের জীবনও বন্দী। সে যাকে যাকে ছাড়ার আদেশ দিবে তারা মুক্ত আর যাকে যাকে মেরে ফেলার নির্দেশ দিবে তাদের খুন করা হবে। স্যার তখন বেঁচে থাকার আশা পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর ভাগ্য লেখা ছিল অন্যভাবে। সেই আর্মি কর্মকর্তা স্যারকে দেখেই চিনে ফেললো। কারণ সে স্যারের অনুষ্ঠান আগেই টিভিতে দেখেছে। এবং সে বলতে গেলে রীতিমত স্যারের অনুষ্ঠানের ভক্ত। তারপর যা হবার তাই হল। স্যারকে সসম্মানে গাড়িতে করে যেখানে যাচ্ছিলেন সেখানে রেখে আসা হল। এই পুরো ঘটনাটা আরও অনেক বিস্তৃত বিবরণ এবং হাস্যরস সহকারে স্যার এই বইয়ে বিধৃত করেছেন। স্বাধীনতার পরে নতুন দেশ, নতুন জাতি। স্যারও নতুন উদ্যমে টেলিভিশনের কাজে নেমে পড়লেন। এবার আর ধাঁধাঁর অনুষ্ঠান নয়। এবার স্যার বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট পর্বের পাঁচ-মিশালি বানিয়ে ‘সপ্তবর্ণা’ নামে একটা অনুষ্ঠান শুরু করেন। এই ‘সপ্তবর্ণা’ই হল আমরা বর্তমানে টিভিতে যে সব ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান দেখি তাদের আদি পিতা এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান। স্যার এই বইয়ে লিখেছেন, ‘সপ্তবর্ণা’ করার সময়ে তিনি এই অনুষ্ঠানটির সাথে এতটাই একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন যে সে সময় তাঁর মনে হত এই অনুষ্ঠান করতে করতে মঞ্চের উপরও যদি তাঁর মৃত্যু হয় তাহলে সেটাই হবে তাঁর মহত্তম মৃত্যু। আমরা এখন ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে যে সব ছোট ছোট নাটিকা দেখি সেটা সর্বপ্রথম ‘সপ্তবর্ণা’র মাধ্যমেই শুরু হয়েছিলো। আর সেটার ভাবনা ছিল পুরোপুরি স্যারের মৌলিক। কারণ তখন প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতার কারণে বাহিরের দেশে কী হচ্ছে তা দেশে বসে জানা সম্ভব ছিল না। পরে যখন স্যার টেলিভিশনের অনুষ্ঠানের ব্যাপারে প্রশিক্ষণ নিতে অস্ট্রেলিয়া যান তখন দেখেন ওরাও এ ধরনের অনুষ্ঠান বানানোর চেষ্টা করছে। তবে সে সময় ওদের একজন টিভি উপস্থাপকের যে পারিশ্রমিক ছিল তার তুলনায় স্যারের পারিশ্রমিক ছিল একেবারেই হাস্যকর। এছাড়া আমাদের দেশে বর্তমানে যে ব্যান্ড সংগীত এত জনপ্রিয় তার পেছনেও মূল অবদান স্যারের। সপ্তবর্ণা অনুষ্ঠানেই আমাদের দেশে প্রথমবারের মত ব্যান্ড সংগীত জনগণের সামনে আসে। এই সাহসটি স্যার দেখিয়েছিলেন এবং বলাই বাহুল্য তুমুলভাবে প্রশংসিত হয়েছিলেন। এভাবে অনেক প্রথমের জন্ম দিয়ে সপ্তবর্ণা একসময় শেষ হল। স্যার তখন নতুন চ্যালেঞ্জ হাতে নিলেন। টিভিতে প্রথমবারের মত ‘মানচিত্র’ নামে একটা শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান শুরু করলেন। এই অনুষ্ঠানও যথারীতি ব্যাপক জনপ্রিয় পেলো। কিন্ত ‘সপ্তবর্ণা’র যে তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তা তা আর পাওয়া সম্ভব হল না। কারণ ‘সপ্তবর্ণা’য় বাসার কাজের লোক থেকে শুরু করে রুচিশীল দর্শক পর্যন্ত সবার জন্যেই বিনোদনের খোরাক ছিল। কিন্তু ‘মানচিত্র’তে তা সম্ভব ছিল না। এদিকে স্যারের শরীরও তখন অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। টেলিভিশন অনুষ্ঠানের জন্যে সপ্তাহে সপ্তাহে যে অস্বাভাবিক ঝক্কি তা আর স্যার নিতে পারছিলেন না। তবে সবচেয়ে বড় কথা স্যারের হৃদয় তখন আরও মহৎ স্বপ্নে বিভোর হয়ে গেছে। স্যার তখন গোটা জাতির জীবন আলোকিত করতে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কাজে বেশ ভালমতই জড়িয়ে পড়েছেন। তাই টেলিভিশনের রঙিন জগত তাঁকে আর সেভাবে টানছিলো না। এসব কারণেই তিনি উপস্থাপক জীবন থেকে অবসর নেন। ‘আমার উপস্থাপক জীবন’ বইটি স্যারের দীর্ঘ উপস্থাপক জীবনের অনন্যসাধারণ আখ্যান। এ এমনই এক হৃদয়স্পর্শী বই যা পড়ার সময় পাঠক স্যারের স্বপ্নে উজ্জীবিত, স্যারের দুঃখে ব্যথিত হবেন। বিটিভির শুরুর ইতিহাস আর স্যারের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে আগ্রহী যে কোন পাঠকের জন্যেই এই বইটি অবশ্যপাঠ্য।