User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ভ্রমণ নিয়ে বাংলা সাহিত্যে লেখা কম। ইউরোপ আমেরিকা নিয়েই বেশি। 'মেমসাহেব' খ্যাত নিমাই ভট্টাচার্যের 'এক চক্কর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া' তাই বেশ আগ্রহ করেই কিনেছিলাম। ঠকিনি। নিমাই ভট্টাচার্য এমনিতেই ট্রাভেলার মানুষ। সাংবাদিকতার সূত্রে প্রচুর বিদেশ ঘুরেছেন। তবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ভ্রমণ এবারই প্রথম। কিছুটা ব্যক্তিগত উদ্যোগে, কিছুটা সরকারি উৎসাহে। শুরুতেই লক্ষ্য সিঙ্গাপুর। যে সিঙ্গাপুরেই গড়ে উঠেছিলো নেতাজীর আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রধান কার্যালয়। ৪২ বাই ২৩ কিলোমিটারের প্রাকৃতিক সম্পদহীন ছোট দ্বীপটা কিভাবে সারা পৃথিবীর আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হলো তাই নিয়েই ভেবেছেন নিমাই ভট্টাচার্য। সিঙ্গাপুরের নানা দ্রষ্টব্য স্থান যেমন নেতাজীর স্মৃতিবিজড়িত দি গ্রেট সিটি হল (এখানেই আবার জাপানের আত্মসমর্পণ হয়েছিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে), চাঙ্গি বন্দীশালা, ক্রানজি ওয়ার সিমেট্রি, বোটানিক্যাল গার্ডেন, জাপানিজ গার্ডেন, জুরং বার্ড পার্ক, ক্রোকোডিলারিয়াম, ক্রোকোডাইল ফার্ম, দক্ষিণ ভারতের আদলে তৈরী সেরাঙ্গুন রোড, ভিরাম্মা কালী মন্দির, সিঙ্গাপুরের স্রষ্টা স্যার স্টাফোর্ড রেফেলস এর ভাস্কর্য ইত্যাদি নিয়েও কিছু কিছু লিখেছেন তিনি। সিঙ্গাপুর সংলগ্ন সেনটোসা দ্বীপে গিয়ে সেখানের ফোর্ট সিলোসো ও ওয়াক্স মিউজিয়ামও ঘুরে এসেছেন। সবমিলিয়ে সিঙ্গাপুর দেখে বিষ্মিত লেখক। নিমাই ভট্টাচার্যের বিষ্মিত হওয়া যে আরো বাকি ছিলো তা বুঝতে পারেন সবুজে ঘেরা কুয়ালালামপুরে এসে। মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর। লেখক দেখেছেন কত দ্রুত উন্নতি করছে মালয়েশিয়া। ধর্মীয় গোঁড়ামিকে দূরে ঠেলে দ্রুতই বহির্বিশ্বের নিজেকে উন্মুক্ত করে দিচ্ছে মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়ায় লেখক ঘুরে ঘুরে দেখেন জাতীয় মসজিদ মসজিদ নেগারার, শ্রীমারিয়াম্মান মন্দির, সুলতান আবদুস সামাদ বিল্ডিং, লেক গার্ডেনস, আধুনিক মালয়েশিয়ায় কারিগর আবদুল রাজাকের স্মৃতিভবন, অর্কিড গার্ডেন, সেন্ট্রাল মার্কের ও মারদেকা স্টেডিয়াম (মালয়েশিয়ার প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা এখান থেকেই আসে)। মূল ভূখন্ডের সাথে সাড়ে তেরো কিলোমিটার ব্রীজ দিয়ে যুক্ত পেনাং দ্বীপও সিঙ্গাপুরের মতই ব্রিটিশদের সৃষ্টি। রাফেলসের জায়গায় এখানে ফ্রান্সিস লাইট। মালয়েশিয়ায় দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ পেনাং এ আছে পৃথিবীর দীর্ঘতম শায়িত বুদ্ধ মূর্তি (লোরোং বার্মা বুদ্ধ মন্দির), কোমটার বিল্ডিং, চীনাদের ড্রাগন মাউন্টেন হল ও পেনাং মিউজিয়াম। লেখকের গন্তব্য এবার থাইল্যান্ড। বৌদ্ধধর্ম আচ্ছাদিত এই দেশের রাজনীতি থেকে সমাজনীতি সবকিছুতেই বু্দ্ধের ছাপ। নব্বইয়ের দশক থেকেই সারা পৃথিবীর পর্যটকদের কাছে নিজেদের উন্মুক্ত করে দেয় থাইরা। পর্যটন শিল্পের বিকাশে সহজে ভিসা প্রদান, বিনা ভিসায় ১৫ দিন থাকা, ডিউটি ফ্রি শপ, অজস্র ফ্লাইট, পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য নানা মাধ্যম - সবকিছুই থাইল্যান্ডকে করে তুলেছে ভ্রমণপিয়াসীদের লক্ষ্যবস্তু। লেখক ব্যাংককের ওয়াত ট্রাইমিট মন্দিরের স্বর্ণবুদ্ধ, বিশ্বের উচ্চতম বৌদ্ধ স্তূপ ফারা পাথম ছেদি, গ্র্যান্ড প্যালেস, পাস্তুর ইনস্টিটিউট ও এনসিয়েন্ট সিটি ঘুরে মুগ্ধ হয়েছেন। একইসাথে অবাক হয়েছেন কিভাবে কয়েক দশক আগেও নিছক জেলে পল্লী থাকা পাতায়া আজ বিখ্যাত সমুদ্র সৈকত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া দিয়েছেন উত্তর থাইল্যান্ডের গুরুত্বপূর্ণ শহর চিয়াংমাই ও স্বাধীনতা সংগ্রামের দুই নেত্রীর স্মৃতিবিজড়িত ফুকেত ঘুরে আসার সাজেশনও। নিমাই ভট্টাচার্যের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ঘোরা শেষ হয় হংকং ও গুয়াংঝাও (চীন) দর্শনের মধ্যে দিয়ে। উঁচু ভবন, মার্কেট, শপিংমল, ক্লাব, বারে ঠাসা হংকং-কাউলুন দেখে লেখক যেমন মুগ্ধ, অনেক সাধের চীন সফরে গিয়ে গুয়াংঝাও শহরের দুরবস্থা দেখে তেমনি তিনি হতাশও। দূর্বল টেলিফোন ব্যবস্থা, অবাধ মুদ্রা কালোবাজারি, গরিবি, বেকারত্ব, দ্রব্যের উঁচ্চমূল্য এসব দেখে লেখক ভাবেন আদৌ কি চীন হংকং কিংবা সিঙ্গাপুরের মত উন্নত হতে পারবে? যদিও ২০২০ এ পরলোকগমনের আগে আধুনিক মহাবলশালী চীনকে দেখে নিমাই ভট্টাচার্যের সেই ক্ষোভ চলে গিয়েছিলো বলেই আমার বিশ্বাস। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আরো কয়েকটি কম পরিচিত দেশ যেমন লাওস, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা মিস করেছি। এছাড়া বাকি সব ঠিকঠাক। বইটিতে যেমন ভ্রমণ বর্ণনা আছে, তেমনি ইতিহাসও যথেষ্ট। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় প্রথম আফিম যুদ্ধের মাধ্যমে হংকংয়ের জন্ম ও ১৯৬৬ এর সাংস্কৃতিক বিপ্লবে কম্যুনিস্টদের দ্বারা হংকংয়ে সৃষ্ট অরাজকতার উল্লেখ। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে নিজস্ব মতামতও দিয়েছেন লেখক। সবমিলিয়ে রেটিং ৪/৫।