User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
পূর্বকথা - বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে যতজন নারীর আবির্ভাব ঘটেছিল, তাঁদের মধ্যে শীর্ষস্থানের দাবিদাদের তালিকায় আশাপূর্ণা দেবী অগ্রগণ্যতা পাবেন - এমনটা ভাবা বাতুলতা নয়। ইংরেজী জ্ঞানশূণ্য এই আটপৌরে গৃহবধূ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকা স্বত্ত্বেও রচনা করে যান প্রায় আড়াইশো উপন্যাস। সামাজিক প্রতিবন্ধকতার বিরূদ্ধে ও নারী উন্নয়নের পক্ষে কলমধরা এই লেখিকা তার প্রতিভার জোরেই হয়ে ওঠেন 'জ্ঞানপীঠ পুরষ্কার'প্রাপ্ত প্রথম নারী সাহিত্যিক। জিতে নেন 'পদ্মশ্রী' খেতাব। বাংলা সাহিত্যক্ষেত্রে তার পিছু ধরেই পরে হাজির হন মহাশ্বেতা দেবী, প্রতিভা বসু, সুচিত্রা ভট্টাচার্য প্রমুখ লেখিকাগণ। সারসংক্ষেপ - উত্তর কলকাতার মল্লিক লেনের হালদার বাড়ির মানুষগুলির জীবন কাটছিল আর চারটি সাধারণ বাঙালি পরিবারের মতই। রোজ সকালে অফিসের গাড়ি করে অনাবিল হালদার ছুটত অফিসে, যাবার আগে দু প্রস্থ চা পান করা চাই ই স্ত্রী প্রতীতি ও মা সুচরিতার সাথে। প্রতীতি শিক্ষিত স্বামীর যোগ্যশিক্ষিতা স্ত্রী। চাকরিক্ষেত্রে সে ও কম যায় না, শিক্ষিকা বলে কথা! অপরদিকে সুচরিতা হালদারের দিন কাটত পূজোর ঘরে বসেই, জীবনটা যেন তার ঐ তেত্রিশ কোটির সেবায় সদা নিয়োজিত। সেখান থেকে ফুরসত পেলেই গল্প করতে ছুটে আসে আদুরে নাতি-নাতনী। কিন্তু একদিন হঠাৎই যেন জীবনটা থমকে দাঁড়ায় তাদের! মুহুর্তের ভিতরেই ছেদ পড়ে সকল প্রাত্যহিক কর্মে। একটি টেলিগ্রাম! ঘন্টাখানিক পরেই একটি চিঠি! অথচ প্রাপক অভিন্ন! বার্তাদুটি যেন দুটি বজ্রের মতই আহত করে দিয়ে যায় বাড়ির সদস্যদের। হওয়াও উচিত! এ যে বহুবছর পর খবর এনে দেয় বাইশ বছর বয়সে গৃহত্যাগী এক মানুষের আশু আগমনের! হালদার বংশের বিপ্লবী পুত্রের! সুচরিতার কৈশোরে দেখা স্বামী, সন্ন্যাসী নিখিল হালদারের! কিন্তু এই দুটি পৃথক পৃথক বার্তারই বা মর্ম কি? আবার যার আগমন ঘটবে, সে কি আসলেই নিখিল হালদার? তার হঠাৎ আগমনের উদ্দেশ্য কি? আর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, তার আগমন ঘটবেই বা কখন? কিন্তু যতক্ষণে এ সকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর উৎঘাটন হয় ততক্ষণে ঘটে যায় একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা! কেঁপে ওঠে সমগ্র মল্লিক লেন! আর সবের পিছনে দায়ী থাকে কেবল ছোট্ট একটি গলদ - ভুল ট্রেনে ওঠা! পাঠ প্রতিক্রিয়া - 'ভুল ট্রেনে উঠে' এমন একটি উপন্যাস যা মুহুর্তে মুহুর্তে রঙ বদলায় নিজের। প্রথম থেকে ধরে নিয়েছিলাম এটি একটি রহস্য উপন্যাস, কিন্তু মাঝে গিয়ে ধরা খেলাম, মনে হল যেন পারিবারিক উপন্যাস! তিন চতুর্থাংশে পৌছে সন্দেহ উদ্রেক হবে, লেখিকা কোন কৌতুক করছেন নাতো! আর শেষ পর্যন্ত? শেষে গিয়ে একটি বিশাল ধাক্কা! যার জন্য প্রস্তুতও ছিলাম না কখনো! আশাপূর্ণা যেন নিজের লেখায় আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের ছাপ রাখতে চেয়েছিলেন। তাই ক্লাইম্যাক্সকে খন্ড খন্ডে বিভক্ত করে শেষে দিয়েছেন একটি বড় ধাক্কা! ধাক্কাটি এফেক্টিভলি হঠাৎ করেই আসে, তাই অনুভূতিটা আরো প্রকট হয়ে উঠেছে। কাহিনীর প্রধান চরিত্র যদি কাউকে বলতেই হয়, তবে বলব সুচরিতা হালদারকে। স্বামী ফিরে আসার খবরে ভাবাবেগের সবচেয়ে বেশি উত্থান হয় তার, তবে তা আনন্দের বা অভিমানের না - সন্দেহের! ক্রোধের! আবার কখনো সুপ্ত আশার! শান্তমূর্তি সুচরিতার মনস্তত্ত্ব পরিবর্তনই যেন কাহিনীকে এগিয়ে নিয়ে গেছে শেষ পর্যন্ত। আবার পুত্রবধূ প্রতীতির ক্রিড়নক হয়ে থাকা শাশুড়ির এমন পরিবর্তন যেন তার প্রাথমিক মিইয়ে থাকা চরিত্রটিকে আরো দৃশ্যমান করে তুলেছে। আশাপূর্ণা দেবীর ম্যাগনাম ওপাস 'প্রথম প্রতিশ্রুতি' - 'সুবর্ণলতা' - 'বকুল কথা' ত্রয়ীর ক্রমিক প্রধান চরিত্র সত্যবতী, সুবর্ণলতা ও বকুল এর সাথে সুচরিতার পার্থক্য ব্যাপক পার্থক্য হল তার এই ফ্লাকচুয়েটিং মনোভাব। উপন্যাসের প্রথম দিকে যেন সে বকুলের মত, অসাড়তার প্রতীক। আবার শেষাংশে সে যেন দেখা দিয়েছে সুবর্ণলতার স্বরূপে, এক তেজোদৃপ্ত বাঙালি রমণী হিসেবে! অনাবিল ও প্রতীতি হালদার সহায়ক চরিত্র হিসেবে থাকলেও, কাহিনীপ্রবাহে সুচরিতার প্রায় সমান গুরুত্ববহন করেছে। প্রতীতির চরিত্রটি উন্মুক্ত করেছে বর্তমান সমাজের একটি বহুদৃশ্য চিত্র - যেখানে সংসারের হাল নেমে আসে পরবর্তী প্রজন্মের হাতে, আর পূর্ববর্তী প্রজন্ম ক্রমেই হারাতে থাকে তার কর্তৃত্ব। পরিবারের বটবৃক্ষ স্বরূপ মানুষটি যখন অপরদের কাছে 'দায়িত্ব' হিসেবেই থেকে যায়, তখন সেই মানুষগুলির একাকীত্বের মনোভাব যেন মনকে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছে। 'ভুল ট্রেনে উঠে' এর সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ও ভাইটাল পার্ট - তথাকথিত নিখিল হালদারের চিঠি। এর মধ্য দিয়েই পরিচয় হয় আগতপ্রায় এই রহস্যময় ব্যক্তির। চিঠিটি যেমন বিস্তৃত, তেমন সন্দেহজনক। পড়ার পর মস্তিষ্কের একপাশ বিশ্বাস করে নেয় যে ব্যক্তিটি অথেন্টিক, অথচ অপরপাশ যেন সেটি বিশ্বাস করতে কিছুটা নারাজ হয়; সন্দেহ একটিই থেকে যায়। উঠে আসে বিশ্ববিখ্যাত 'ভাওয়াল সন্ন্যাসী কেস' এর রেফারেন্স!শেষের দুই অধ্যায়ে পৌঁছানো না পর্যন্ত অনেকটা অবোধ্যই থেকে যায় এই রহস্য। কাহিনীর ভিত্তিতে, এটি আশাপূর্ণা দেবীর সেরাকর্মের ধারেকাছে না হলেও বলতে হবে এর ভিতরে আলাদাই চমক ছিল! একজন লেখিকাকে তার কম্ফোর্ট জোনের বাইরে এসে নতুন কিছু ট্রাই করতে দেখাও উপভোগ্য। অলস সময় কাটানোর জন্য বেশ ভালো একটি বই, তবে আশাপূর্ণা দেবীকে জানার যথেষ্ট নয়; এটি 'সত্যবতী ট্রিলজি'র পাঠকমাত্রই অনুভব করতে পারবেন, তাই এক্সপেকটেশন থাকা সত্ত্বেও কিছু আশাহত হতে পারেন। তবে মাথা থেকে তার শ্রেষ্ঠ রচনা ঝেড়ে ফেলে এটি পড়লে আশ্চর্য হতে হবে, তা পড়ার পর গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারছি।