User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
পঞ্চম মোগল সম্রাট শাহ্জাহানের জ্যেষ্ঠপুত্র মোহাম্মদ দারাশুকো। ইতিহাসবিদদের কারও চোখে সে অকর্মা, খেয়ালী, দুর্বলচিত্ত। ছোটভাই আওরঙ্গজেবের চোখে তিনি কাফের। অথচ পিতার চার পুত্রের মাঝে দারাই তার চোখের মণি। দারাশুকো নামটা এলে এই কথাগুলোই সামনে আসে। কিন্তু এর বাইরে গিয়ে কল্পনার চোখে মানুষ দারাশুকোকে দেখার চেষ্টা করেছেন শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়। লিখেছেন সাড়ে এগারোশ পাতার এক মহাকাব্যিক উপন্যাস। উপন্যাসের শুরু জাহাঙ্গীরের সময় থেকে। জাহাঙ্গীরের শাসনকাল, খুররমের বিদ্রোহ থেকে তার ক্ষমতালাভ, শাহ্জাহান হয়ে ওঠা, সবই এসেছে এই উপন্যাসে। সেই সঙ্গে এসেছে তার পুত্র দারাশুকোর কথা। উপন্যাসটির চমৎকার একটা দিক হলো অন্যান্য অনেক ঐতিহাসিক উপন্যাসের মতো এটি কেবল হারেম কিংবা ক্ষমতা কেন্দ্রিক থাকেনি। লেখক আমাদের নিয়ে যেতে চেয়েছেন সেই সময়ের হিন্দুস্তানের সাধারণ মানুষের কাছে। সেই সঙ্গে ছিল পূর্ব ইতিহাসের সাথে উপন্যাসে চলমান সময়ের তুলনা। উপন্যাস পড়তে পড়তে ভারতের কয়েকশ বছরের সময়কাল ঘুরে দেখা হয়ে যায়। সেই সঙ্গে ছিল মোগল শাসন ব্যবস্থা, এর ভালো দিক এবং ত্রুটি বিচ্যুতির কথাও। ভাষা গত সামান্য কিছু বিষয় মুখে কাঁকর পড়ার মতো অবস্থার সৃষ্টি করে। যেমন জাহানারা-র বারবার দারশুকোকে 'ভাইয়া' বলে সম্বোধন। মিয়াঁ মীরকে 'হুজুর' বলে সম্বোধন, যেটা আসলে মুরশেদ হওয়ার কথা। 'ইনশাল্লা' শব্দের ব্যবহারেও ভুল ছিল কয়েক জায়গায়। দৈর্ঘ্যে বড় হওয়ার কারণে দ্বিতীয় খণ্ডের শেষের দিকে কিছুটা পুনরাবৃত্তির দোষও দেখা যায়। উপন্যাসের সমাপ্তি অনেকটাই অনাকাঙ্ক্ষিত। লেখক উপন্যাস শুরু করেছেন অনেক পূর্ব কাহিনী থেকে, শেষটা মাঝপথে ছেড়ে দিলেন যেন। আওরঙ্গজেব, সুজা, দারাশুকোর চরিত্র থেকে তাদের সুবেদারী পর্যন্ত বিস্তারিত বর্ণনা করেও লেখক দারাশুকোর শেষ দিনগুলোর দিকে যাননি। শেষের দিকে এসে দারার সাধু সন্ন্যাসীতে ভক্তি, তার প্রেম, নিজের সাথে দ্বন্দ্বের কথা অনেক বিস্তারে না লিখে শাহ্জাহানের অসুস্থতা, আওরঙ্গজেবের সিংহাসন জয় থেকে দারাশুকোর মৃত্যুতে উপন্যাস শেষ করলে ভালো হতো। তবে সেটা কেন করেননি, সেটা আন্দাজ করে নিতে পারি। দোষে গুণে মিলিয়েই একটা উপন্যাস হয়। এতো দীর্ঘ, পরিশ্রমসাধ্য উপন্যাসে এটুকু ভুল আসলে কিছুই নয়। ঠিক তেমনই দোষে গুণে মিলিয়েই মানুষ। শাহজাদা দারশুকোও তেমনি একজন মানুষ। ইতিহাস তাঁকে অনেক ভাবে ব্যখ্যা করে থাকতে পারে কিন্তু আসলে তার অনেক কিছুই থেকে গেছে ধোঁয়াশার মাঝে। সেই ধোঁয়াশা কোন উপন্যাসে কাটানো সম্ভব না, কিন্তু তিনি মোগল ইতিহাসে অন্যতম বর্ণময় চরিত্র। দারাশুকোর নামে উপন্যাস হলেও এখানে দারার পাশাপাশি যে চরিত্রটি দাঁড়িয়ে আছে, সে সম্রাট শাহ্জাহান। শাহ্জাহানকে এভাবে আর কোন লেখক, ঐতিহাসিক উপস্থাপন করেছেন কিনা আমার জানা নেই। শাহ্জাহানকে সবাই দেখেছেন প্রেমিক কিংবা যোদ্ধা হিসেবে। তার বাইরেও যে শাহ্জাহান যে একজন পিতা, একজন রাজনৈতিক, সে বিষয় এসেছে এই উপন্যাসে। বাদ যান নি আওরঙ্গজেবও। ভালো লাগার আরেকটা বিষয় হলো, আওরঙ্গজেবকে এই উপন্যাসে দারাশুকোর সরাসরি প্রতিপক্ষ হিসেবে উপস্থাপন না করে একজন দক্ষ এবং যোগ্য মোগল শাহজাদা হিসেবেই দেখানো হয়েছে। উপন্যাস, সব সময়েই কাল্পনিক। সেখানে পাক্কা ইতিহাস থাকে না। থাকে ইতিহাসের সময়কাল মেনে কিছু সত্য চরিত্রের পাশে কিছু কাল্পনিক চরিত্র বসিয়ে এক আখ্যান তৈরি করা। এ উপন্যাসও তা-ই। এবং উপন্যাস হিসেবে 'শাহজাদা দারাশুকো' আমার দৃষ্টিতে সফল।