User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
1000 0F 1000
Was this review helpful to you?
or
মুগ্ধতা মুগ্ধতায় শেষ করে ফেললাম অনিমেষ সিরিজের ৪ নম্বর ও সর্বশেষ বই মৌষলকাল-ও! (১ ও ২ পড়ি নাই :p ) প্রথম তিনটি উপন্যাস-- উত্তরাধিকার, কালবেলা এবং কালপুরুষ ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৯ সালের মধ্যে প্রকাশিত হলেও মৌষলকাল প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস দীর্ঘদিনের সিপিএমকে সরিয়ে ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষিতে লেখক এই বইটি লেখেন। যদিও তাঁর নাম নেই বইতে কোথাও, 'নেত্রী' বলেই লিখেছেন সবখানে। রাজনীতির আশ্চর্য রূপ দেখলাম বইটাতে। যারা রাজনীতি নিয়ে আগ্রহী, অনাগ্রহী, রাজনীতি করতে চান বা করেন, সবারই মনে হয় বইটা একবার পড়ে নেয়া উচিত। রাজনীতি করে কি সৎ থাকা যায় না? অথবা সৎ রাজনীতি করে কি টিকে থাকা যায় না? বার বার মনে হচ্ছিলো, 'সৎ রাজনীতিবিদ'- এই phrase টা কি একটা oxymoron? পরিশেষে, সমরেশ মজুমদারের লেখাকে নতুন করে আবিষ্কার করছি। আমার কোন প্রিয় লেখক নেই, প্রিয় বই আছে। এই ব্যাপারটাকে কি একটা second thought দিতে হবে? দেখি, লেখকের আরো কয়েকটা বই পড়ে নেই :p
Was this review helpful to you?
or
উত্তরাধিকার, কালবেলা ও কালপুরুষ সিরিজের আরেকটি উপন্যাস মৌষলকাল। 'মৌষলকাল' নামের অর্থ আমার অজানা তবে খুব সম্ভবত 'মৌষল' মহাভারত সম্পৃক্ত। মৌষলকাল মূলত পশ্চিম বঙ্গের উত্তাল সময়ের গল্প। সত্তর দশকে নকশাল রাজনীতিতে জড়িয়ে পরে অনিমেষ। রাজনীতির টানে ঘর ছেড়েছে, পুলিশের অত্যাচারে পঙ্গু হয়েছে। কালক্রমে রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়েও নেয়। সুখ দুঃখে ছায়ার মতো পাশে ছিল মাধবীলতা। অনিমেষ, মাধবীলতার পরের প্রজন্ম অর্ক। কেউ বিপ্লবে বিশ্বাসী। কেউ জীবন অভিজ্ঞতায় বিশ্বাসী। অর্কর বাবা বামফ্রন্টের জন্য আন্দোলন করেছেন। অর্ক আন্দোলন করছে বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে! দুজনের আদর্শ এক সততার পথে হাঁটা। একটি দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে স্বৈরাচারী আচারন করে। ব্যাতিক্রম ঘটেনি বামফ্রন্টের বেলায়ও। সব কিছু দেখে শুনে চুপ করে থাকতে পারেনি অর্ক। সাহস, সততা, আবেক, ভালোবাসা, প্রতিবাদে অর্ক যেন এক অবাধ্য স্বর। তৃণমূলের সাথে মিলে নেমে পড়ে বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে। কিন্তু সবই যেনো এক গোয়ালের গরু। ক্ষমতায় গেলে সবাই নিজের পকেট আগে ভরতে চায়। প্রেম - ভালোবাসা, রাজনীতি, সাহস, প্রতিবাদ, সংসার ধর্ম, স্বপ্ন - স্বপ্নভঙ্গ, সুখ - দুঃখ মিলে সুন্দর একটি বই। জী ধন্যবাদ
Was this review helpful to you?
or
বাংলা সাহিত্যের এক যুগলবন্দী জুটি অনিমেষ -মাধবীলতা।অনিমেষ-মাধবীলতার কথা শোনেনি এমন পাঠক খুঁজে পাওয়া বিরল। সমরেশ মজুমদারের বিখ্যাত সৃষ্টির মধ্যে অন্যতম সৃষ্টি অনিমেষ-মাধবীলতা সিরিজ। চারটি উপন্যাস নিয়ে গঠিত এই সিরিজ পাঠক মহলে ব্যাপক সাড়া জাগায়।উত্তরাধিকার- কালবেলা-কালপুরুষ-মৌষলকাল চারটি উপন্যাস নিয়ে এই সিরিজ।প্রথম তিনটি উপন্যাসে অনিমেষের শৈশব-কৈশোর, যৌবন এই তিন কালের জীবনপ্রবাহমান ফুটে উঠে।অনিমেষ নকশাল রাজনীতিতে জড়িয়ে পরে।এরই মধ্যে মাধবীলতা তার জীবনে আসে।রাজনীতির মত সে মনে করে মাধবীলতাকে আবিষ্কার করাও একটা বিপ্লব।মাধবীলতা অনিমেষকে ভালোবাসে,বিশ্বাস করে।কিন্তু কখনো তাকে আঁচলে বেঁধে রাখতে চায়নি।অনিমেষ যে পথে চলেছে সে পথের সারথি হয়ে থেকেছে।তাকে সবসময় সমর্থন করে গেছে।সারাজীবন পাশে থেকে আগলে রাখার চেষ্টা করেছে।তাদের দুজনের ভালোবাসার ফল সরূপ অর্ক আসে।একসময় বিপথে যেতে যেতেও থেমে যায় অর্ক।যেহেতু অনিমেষ - মাধবীলতার মত বাবা-মা তার আছে,সেহেতু তাদের আদর্শ অর্ককে বিপথে যেতে দেয়নি।অনিমেষ যা করতে পারেনি তা অর্ক করতে চেয়েছিলো।চেয়েছিলো সাধারণ গরীব দুঃখী মানুষের পাশে থাকতে।তাঁদের বেঁচে থাকার ধরণ পালটে দিতে।কিন্তু সেখানেও আসে বাঁধা।ঘৃণ্য রাজনীতির ছোবলে পরে সেও বরাবরই ব্যর্থ হয়।তারই পরিপ্রেক্ষিতে এই সিরিজের শেষ উপন্যাস মৌষলকাল। এখানে অনিমেষ - মাধবীলতা ষাটোর্ধ্ব বয়সে এসে পরে।আর অর্ক চল্লিশ বছরের পৌর যুবক।রাজনীতি থেকে সরে এসে এক পা হারিয়ে অনিমেষ প্রায়ই মুষড়ে গিয়ে স্বাভাবিক ভাবে জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠে।পাশাপাশি মাধবীলতাও ছেলে এবং স্বামীর সাথে জীবনের এতগুলো বছর কাটিয়ে দেয়।অর্ক একটা চাকরি করে।সে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সক্রিয় ভাবে যুক্ত নয়।জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর একেবারে গুটিয়ে নেয় নিজেকে।কিন্তু যেহেতু অনিমেষের রক্ত তার শরীরে বহমান সে কি পুরোপুরি নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারে?এক মাওবাদী অবাঙ্গালী কে সাহায্য করতে গিয়ে পরোক্ষভাবে তৃণমূলের এক রাজনৈতিক দলের সাথে কিছুটা জড়িয়ে পরে।অনিমেষ সেটা মন থেকে পছন্দ না করতে পারলেও তাকে সরাসরি নিষেধ করেনা।কিন্তু মাধবীলতা সেটা মেনে নিতে না পেরে তাকে নিষেধ করে এই রাজনীতি থেকে সরে আসতে বলে।অন্যদিকে অনিমেষ তার ছেলের ওই অবাঙ্গালী মাওবাদীকে বন্ধুকে পছন্দ না করলেও অগত্যা সেও তাকে সাহায্য করে।আর এই সুবাদেই অনিমেষকে ফাঁসিয়ে দেয়া হয়।আর অর্ককেও সেই একই চক্রান্তের স্বীকার হতে হয়।যেটা মাধবীলতা মন থেকে বারবারই অপছন্দ করেছিলো।তাই পঁয়তাল্লিশ বছর ধরে যেই স্বামী সন্তানের পাশে থেকে আগলে রাখতে চেয়েছিলো আদতে সেই মাধবীলতা-ই তাদের বিপদের দিনে নীরব থাকে।অন্যদিকে কুন্তি,এক ধর্মশালায় অর্কের সাথে পরিচয় হয়।সে অর্ককে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে,তার পাশে থাকতে চায়।অর্কেরও কুন্তিকে ভালো লাগে।কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে কি পারবে মাধবীলতা হয়ে উঠতে? পাঠ প্রতিক্রিয়া : মৌষলকাল অনিমেষ সিরিজের শেষ উপন্যাস।এই সিরিজের প্রথম দুটো উপন্যাস, উত্তরাধিকার - কালবেলা এই দুটো বই আমার বেশি ভালো লেগেছে।উত্তরাধিকার পড়েই জানতে পারলাম এই সিরিজের বাকি তিনটা বইয়ের কথা।আর তারপরই পড়ে ফেললাম কালবেলা-কালপুরুষ।প্রথম তিনটা বই আমি গত বছরই পড়েছি।আর এখন মৌষলকাল পড়লাম। প্রথম তিনটা বইয়ের তুলনায় শেষ বইটা আমার কাছে তুলনামূলক ভাবে কম ভালো লেগেছে।মৌষলকাল পড়ে আমি অতটা তৃপ্তি পাইনি।কারণ অনিমেষ - মাধবীলতাকে আমার সেই যৌবন বয়সেই বেশি ভালো লেগেছে।তাই তাদের ষাটোর্ধ্ব বয়স,আর তার পাশাপাশি চল্লিশ বছর বয়সের যুবক অর্ককে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিলো।কেবল মনে হচ্ছিলো তরুণ বয়সের অনিমেষ-মাধবীলতাই মানানসই সেরা জুটি ছিলো।বইটা পড়ে শেষ করার পর শুধুই মনে হচ্ছিলো এটা নিয়ে আমি কিছুই লিখতে পারবোনা।কেননা বইটা ততটা টানেনি আমাকে।তাই বইটা কতটা ধারণ করতে পেরেছি সেটাও বুঝতে পারছিনা।যাই হোক,একথা স্বীকার করতেই হবে যে, সর্বপরি গোটা সিরিজটা সমরেশ মজুমদারের এক অনবদ্য সৃষ্টি। কিছুদিন আগে সমরেশ মজুমদার বাংলাদেশে এসেছিলেন।তিনি ঢাকা এবং সিলেটের বাতিঘরে গিয়েছিলেন।লেখকের অফিসিয়াল ফ্যানপেজ থেকে তার এক একটা পোস্ট পড়ে জানতে পারলাম, সিলেটের বাতিঘরে তিনি এক আলোচনায় পাঠকদের বলেছিলেন এই সিরিজের কিছু কথা।তিনি বলেছিলেন এই সিরিজটা তিনি মন থেকে লেখেননি।জোর করে লিখতে হয়েছে সিরিজটা অনেকটা বাধ্য হয়েই।কথাটা লিখলাম এই কারণেই,কোন লেখক বাধ্য হয়ে এতো চমৎকার বই কিভাবে লিখতে পারে?অন্তত এই সিরিজটা শেষ করার পর ব্যাপারটা সত্যিই আমাকে ভাবিয়েছে অনেকবার।
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামঃমৌষলকাল লেখকঃসমরেশ মজুমদার প্রকাশনীঃআনন্দ পাবলিশার্স মূল্যঃ৫৪০টাকা মৌষলকাল প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস দীর্ঘদিনের সিপিএমকে সরিয়ে ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষিতে লেখক এই বইটি লেখেন। যদিও তাঁর নাম নেই বইতে কোথাও, 'নেত্রী' বলেই লিখেছেন সবখানে।রাজনীতির আশ্চর্য রূপ দেখলাম বইটাতে। যারা রাজনীতি নিয়ে আগ্রহী, অনাগ্রহী, রাজনীতি করতে চান বা করেন, সবারই মনে হয় বইটা একবার পড়ে নেয়া উচিত। রাজনীতি করে কি সৎ থাকা যায় না? অথবা সৎ রাজনীতি করে কি টিকে থাকা যায় না? বার বার মনে হচ্ছিলো, 'সৎ রাজনীতিবিদ'- এই phrase টা কি একটা oxymoron?সমকালিন বলে বিতর্ক আছে। চারিদিকে সিন্ডিকেট থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে চলছে অসম্ভব লুঠতরাজ ও অত্যাচার। সবই একজনের ভাবমূর্তি ভাঙ্গিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন তাঁর দলের নেতা নেত্রীদের কীর্তিকলাপ। তাঁর কি কিছুই করার নেই? উপন্যাসের শেষাংশে আছে,কোটি কোটি মানুষকে স্বপ্ন দেখানো দিদি যেন মহাভারতের মুষলপর্বের শ্রীকৃষ্ণ। সবমিলিয়ে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের অসাধারণ এক বই বলে মনে হয়েছে।
Was this review helpful to you?
or
কাহিনীকেকে পরিনতি দিতে এই গল্পের সৃষ্টি। 'কালবেলা'র অনিমেষ ছিল কনফিউজড, তারপর আবেগি। 'কালপুরুষে' এসে সে ম্রিয়মান। কিন্তু এই ষাট বছরে এসে সে তার নিজের ভাবনায়, মননে অনেকখানি স্থির। এখন তার মত কিংবা পথ কোনটিই ভাষা ভাষা নয়। ধর্মে অবিশ্বাসী অনিমেষ তাই যখন ছোটমার শ্রাদ্ধে মাথা কামিয়ে জানায়, তার বিশ্বাসের চেয়ে অপর এক বিশ্বাসীর সুখ তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ তখন মাধবী বোঝে যে অনিমেষকে সে আজও চেনেনি। আর যখন শেষবার অনিমেষকে পুলিশের গাড়িতে উঠতে হয়, তখন অনিমেষের পঙ্গুত্ব কেবল শরীরে। আদর্শবাদী সেই নকশাল অনিমেষ এখনও তার আদর্শে অটল। অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করায় অটল মাধবী আজও অনিমেষের পাশে।
Was this review helpful to you?
or
মৌষলকাল অনিমেষ উপাখ্যানের চতুর্থ উপন্যাস। এবং এটা আশাও করতে পারি যে এটা এই উপাখ্যানের শেষ লেখা। কালপুরুষ লেখার পঁচিশ বছর পর সমরেশ মজুমদার সমসাময়িক পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক, সামাজিক জীবন নিয়ে লিখেছেন মৌষলকাল। কালপুরুষের আমরা যে অর্ককে দেখেছিলাম প্রায় যৌবনের দ্বারপ্রান্তে আজ এত বছর পর সে মাঝবয়সি। আর আমাদের প্রিয় অনিমেষ আর মাধবীলতা পৌঢ়ত্বের সীমায় পৌছে গেছে। এ যেন এত বছর পরে নতুন করে অনিমেষ-মাধবীলতা-অর্ককে চেনা নতুন খোলসে। কেউই আর আগের মত নেই। চাকুরিজীবী অর্ক, রিটায়ার্ড মাধবীলতা আর নতুন করে রাজনীতির সংস্পর্শে আসা অনিমেষ যেন এক নতুন পথ দেখায়। তবুও কি সব একরকম থাকে। এতবছর পর নতুন করে আবার জলপাইগুড়ি শহরে আসে অনিমেষ। হাল ধরে ছোটমা আর পরিবারের। একসময়ের কাছের বন্ধুর সাথে আবার এক নতুন পথ চলা। কিন্তু শেষ রক্ষা হবে তো??? আমার কথা : পঁচিশ বছর একটা দীর্ঘ সময়। এ সময়ে অনেককিছু বদলে যেতে পারে। পাঠকের মনোভাব, পরিবেশ পরিস্থিতি সবকিছু বদলে যেতে পারে। পারে না শুধু পাঠকের ভালবাসা। আমাদের এই উপমহাদেশে অনিমেষ, মাধবীলতা আর অর্কের জন্য বাঙ্গালী পাঠকের যে ভালবাসা তা বদলে যায়নি। বরং দিনে দিনে আরো বেড়েছে। কিন্তু মৌষলকালের প্রকাশ সেই ভালবাসার মূলে আঘাত করেছে বলে আমি মনে করি। কালপুরুষে যেভাবে কাহিনী শেষ হয়েছিল মৌষলকালের কাহিনীতে তার কোন প্রতিক্রিয়া আমি দেখতে পাইনি। মাঝবয়সি অর্ক এখন তার চাকরি নিয়ে ব্যস্ত। অন্যদিকে সে তার বাড়িতে প্রশ্নবোধক উদ্দেশ্যর একজনকে থাকতে দিয়েছে। অন্যদিকে অনিমেষ মাধবীলতা যেন আবার নতুন করে তাদের জীবন শুরু করে। এই পর্যন্ত ভালোই ছিল। উত্তরাধিকারে পিসিমার বরের নাম ছিল শচীন। আর মৌষলকালে এসে হয়ে গেল দেবেশ। এ যেন আজব দেশের আজব কারখানা। সমরেশ কি করে এ ভুল করলেন আমার ছোট মাথায় এটাই আসে না। মোটের উপর মৌষলকাল লেখা না হলে মনে হয় আমার মত পাঠকের কোন ক্ষতি হত না। একান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত। আপনাদের ভাল লাগতেও পারে। হ্যাপি রিডিং।।।
Was this review helpful to you?
or
‘মৌষলকাল’ পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত লেখক সমরেশ মজুমদার এর লেখা একটি উপন্যাস । লেখক সমরেশ মজুমদার ১৯৪২ সালের ১০ই মার্চ জন্মগ্রহন করেন । শৈশব তিনি কাটিয়েছেন ডুয়ার্সের চা বাগানে । তার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন জলপাইগুড়ি জেলা স্কুল থেকে । এরপর তিনি কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বাংলায় গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন । কর্মজীবনে তিনি আনন্দ বাজার পত্রিকার সাথে সংযুক্ত ছিলেন । সমরেশ মজুমদার এর লেখা মৌষলকাল বইটি প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে । বইটি প্রকাশিত হয় আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড প্রকাশনী থেকে । বইটি কে ২০১৩ সালে প্রকাশ হওয়া অন্যতম সেরা একটি বই হিসেবে গন্য করা যায় । বইটি রাজনৈতিক কাহিনী নির্ভর একটি বই । উপন্যাসটির সূচনা ২০০৮ সাল থেকে , এরপর থেকে শুরু করে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কাহিনী । উপন্যাসের পটভূমি পশ্চিমবঙ্গের ২ সরকারের ২ মেয়াদের ক্ষমতায় থাকা সময়কালীন ঘটনা । বামফ্রন্টের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস সরকার । পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির অনেক কিছু পাওয়া যাবে বইটি তে । ক্ষমতা বদল এ কি কি পরিবর্তন হয়েছে তা লিখা হয়েছে বইটি তে । লেখক এই ব্যাপারটি কে বলেছেন জামা বদল, অর্থাৎ কোনো পরিবর্তন হয় নি । এইসকল কাহিনী নিয়েই চলেছে বইটির কাহিনী । ১৯৭০ এর রাজনীতি তে অনিমেষের জড়িয়ে পড়া এবং পুলিশি অত্যাচারে পঙ্গু হয়ে যাওয়া এইসব সকল ব্যাপার নিয়েই লেখক অত্যান্ত সুন্দরভাবে ধাপে ধাপে বর্ননা করেছেন । রাজনীতি নিয়ে যারা পড়াশোনা করতে ভালোবাসেন তাদের জন্য বইটি অনেক ভালো বই তা নিঃসন্দেহে বলা যায় ।
Was this review helpful to you?
or
সমরেশ মজুমদারের বিখ্যাত উপন্যাসগুলোর মধ্যে উত্তরাধীকার, কালবেলা, কালপুরুষ অন্যতম।একই সুত্রে গাঁথা এই তিনটি উপন্যাস তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ের।অনেকেই মনে করেন উপন্যাসগুলো রাজনৈতিক। এই ধরনের বিজ্ঞাপনে অনেকেরই বিশ্বাস-অবিশ্বাস নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু সত্যটা নির্মম বলেই হয়ত দ্বন্দ ক্লেদের মত লেগেই থাকে সময়ের শরীরে।উত্তরাধীকার, কালবেলা, কালপুরুষ তারপর-হয়ত শেষ হতে পারত। কিন্তু প্রায় পঁচিশ বছর ধরে সমরেশ মজুমদার লিখেছেন অনিমেষ-মাধবীলতা-অর্কের নতুন কাহিনী ‘মৌষলকাল’। যা প্রকাশিত হলো অনেক প্রশ্নের উত্তর নিয়ে। এও কি সম্ভব? উত্তর যেমন আসে প্রশ্নও তো আসে। স্বভাব-প্রতিবাদে, আবেগে, অস্পষ্ট ভালবাসায় অনিমেষ-মাধবীলতার সময়ের ফসল অর্ক যেন এক অবাধ্য স্বর। মৌষল পর্বের পারস্পরিক অবিশ্বাসের দিনকালেও প্রৌঢ় অনিমেষ-মাধবীলতা ঝলসে ওঠে আরও একবার। কেউ বিপ্লব-বিশ্বাস, কেউ-বা জীবন-বিশ্বাসে অটুট। মৌষল হল মহাভারতের একটি অংশবিশেষ।যদিও শব্দটি এখানে রুপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে । এই উপন্যাসের আধার পশ্চিমবঙ্গের এক উত্তাল সময়। মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের পর যে চিত্র উঠে এসেছিল তা রুপক সাদৃশ্য বিবেচনায় উপস্থাপিত হয়েছে এখানে। উপন্যাসের পটভূমি পশ্চিমবঙ্গের দুই মেয়াদের দুই সরকারের সময়কালীন। যখন ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট। আর শেষ হয়েছে বর্তমান সময়ে।তুলে ধরা হয়েছে বামফ্রন্টের পরাজয় ও তৃণমূল কংগ্রেসের উত্থানের আখ্যানও। উঠে এসেছে মানুষের রূপ। মানুষের ভেতরের আর এক মানুষ। দশ বছর একা থেকে অনিমেষের ছোট মা আক্ষেপের সাথেই বলেছিলেন, “কার উপর আস্থা রাখব? মানুষের উপর? মানুষ তো সাপের চেয়েও ভংকর। সাপ ভয়ে ছোবল মারে, আত্নরক্ষার জন্যে। মানুষ ছোবল মারে আনন্দ পেতে, মজা লুটতে।” এক প্রেক্ষিতে মাধবিলতাও বলেছিল-“প্রানীদের সাথে মানুষের তফাত হল, যে খাবার দেয় ওরা তার অনিষ্ট করেনা।” আদর্শ বলে যে একটা শব্দ আছে, অথবা একটা কমিটমেন্ট-কিন্তু বাস্তবের চিত্র তো ভিন্ন। কমিউনিজমের ভাল ভাল কঠিন কথা, যার অর্থ সাধারণ মানুষ বোঝেনা। এখানে দেখানও হয়েছে কিভাবে ধর্মটাকে দলের স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। মন্দিরকে পূঁজি করে হলেও মানুষের সমর্থন পাওয়ার উদ্দ্যেশেই নির্মান হবে বলে জায়গা, অর্থ দাবী করা হয়েছে। আদর্শের নাম নিয়ে পূরো সিস্টেমটাকে নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ক্ষমতাটা রয়ে গেছে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের হাতে। এবং তাদের হাতেই সাধারণ মানুষ জিম্মি। কালচারটা এভাবেই বেড়ে উঠেছে। এক অভিনব সিস্টেমে তারা শোষন করে চলেছেন আর আমাদের অসহায় অন্নদাতাগণ কোন মহাপুরুষের অপেক্ষায় দিন গুনছেন। কাহিনির এক পর্যায়ে নৃপেনদা খেপে গিয়েছিলেন- “আদর্শ? আদর্শ মানে কি? যার নড়ন, চড়ন নেই? যুগ যুগ ধরে যাকে মাথায় নিয়ে থাকতে হবে? পরিবর্তিত পরিস্থিতি, বদলে যাওয়া সমাজব্যবস্থার সঙ্গে যদি আদর্শকে না মিশিয়ে দেয়া হবে তা হলে তার জায়গা হবে ওয়েস্ট পেপার বক্সে।তা ছাড়া কালিমন্দির হলে জনতাকে কাছে পাওয়া যাবে। ক’জন সাধারণ শ্রমজীবি কৃষক, শ্রমিক বুর্জোয়া শব্দটির মানে জানে?” অনিমেষ বলেছিল, “ক্ষমতা দীর্ঘদিন হাতে পেলে লজ্জা ভয় দূর হয়ে যায়।” আচ্ছা লজ্জা না থাকলে তাকে কি মানুষ বলা যায়?আর লজ্জাবোধ, জীবনবোধ তো শিক্ষা থেকেই আসে। প্রকৃত শিক্ষা ভেতরের মানুষটাকে প্রভাবিত করে, মুল্যবোধ সৃষ্টি করে, চেতনার জগৎটাকে প্রসারিত করে। সেইটায় বা দিচ্ছে কে? কাহিনির এক ভাগে মিস্টার রায় নামক একজন এ্যাডভোকেটের দারস্থ হোন অনিমেষ মিত্র। আইনের লোক হওয়া সত্ত্বেও তিনি বলেছিলেন-“ পৃথিবীতে এত রকমের পরিবর্তন হয়েছে দেখেছেন, ঘুষ শব্দটাও যে বাতিল হয়ে গেছে তা জানেন না।” পুরো সমাজব্যবস্থাটাকে দুটো শ্রেণিতে ভাগ করে ফেলা হয়েছে । শোষক আর শোষিত গোষ্টী । সারাটা জীবন কেউ ন্যায়-নীতি, আদর্শ নিয়ে পঁচে মরবে আর স্বপ্ন দেখবে পরিবর্তনের ।আর কেও কেও আছেন, এসবের ধারও ধারবেন না। এই রকম পার্থক্য কেন? স্রষ্টা সৃষ্টি করার সময় কি এই রকম পার্থক্য করে বানিয়েছেন? যদি তাই হয়ে থাকে, তবে উনি নিজেও বৈষম্যের শিকার হবেন। এক দিক থেকে এটাও সত্য যে প্রথা, নিয়ম, নীতি, আইন-কানুন, আদর্শ, ধর্ম মানুষের উপর এক প্রকার শোষন ছাড়া কিছুই নয়। কারনটা হলো, অধিকাংশ সাধারণ মানুষের উপর এইগুলো প্রয়োগ হয় বা ব্যবহৃত হয়। আর সাধারণ মানুষ এইসবের কোন একটা উপেক্ষা করলে তার শাস্তিটাও শোষক গোষ্টী এবং ঐসব নিয়ম-নীতি দ্বারা নির্ধারিত হয়। তাহলে মানুষের মুক্তি কোথায়? আমরা অবাক হইনা। কারন শোষক গোষ্টী এইসব প্রথা, নিয়ম, নীতি, আইন-কানুন, আদর্শ, ধর্মকে পুঁজি করে এবং নিজের নিয়ন্ত্রনে রেখে শোষন করে চলেছেন যুগ যুগ ধরে। আর এটায় মাথা পেতে মেনে এসেছি আমরা, আমাদের পূ্র্বপূরুষগণ। আর এটাই রাজনীতি। এই কলিকালে রাজনীতিটায় হয়ে এসেছে ভোটের ।অধিকার তো অনেক দুরের বিষয়। মানুষের কাছাকাছি আসতে পারাটা বোধ হয় সহজ বিষয় নয় । মৌষলকালে একটা সময়কে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রাপ্তির হিসাবটা তো রাজনীতিবিদ আর ব্যবসায়ীরা ভাল বুঝবেন।আমাদের তো কোন দায় নেই। সত্যি কি তাই? তবু আশার সঞ্চার হয়।কারন অনেকেই ভালবাসতে জানেন, ভাল রাখতে জানেন। -অনিমেষ দিপু
Was this review helpful to you?
or
সমরেশ মজুমদার। প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি ঔপন্যাসিক। পশ্চিমবঙ্গের মতো এ দেশের পাঠকের কাছেও তিনি সমান জনপ্রিয়। উত্তরাধিকার, কালবেলা ও কালপুরুষ এই উপন্যাস-ত্রয়ীর সিরিজের আরও একটি উপন্যাস 'মৌষলকাল'।প্রায় তিন দশক সময় অতিক্রম করে সমরেশ মজুমদার লিখেছেন অনিমেষ-মাধবীলতা-অর্কের নতুন কাহিনী 'মৌষলকাল'। এই উপন্যাসের আধার পশ্চিমবঙ্গের এক উত্তাল সময়। মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের পর যে প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছিল তা তুলে ধরা হয়েছে এখানে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সমস্যা ও রাজনৈতিক বেড়াজাল তুলে ধরা হয়েছে। উপন্যাসের পটভূমি পশ্চিমবঙ্গের দুই মেয়াদের দুই সরকারের সময়কালীন। কাহিনীর শুরু ২০০৮ সাল থেকে। অর্থাৎ যখন ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট। আর শেষ হয়েছে বর্তমান সময়ে। ক্ষমতায় তৃণমূল কংগ্রেস। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির অনেক কিছুই খুঁজে পাওয়া যাবে এই 'মৌষলকালে'। বামফ্রন্টের দুর্গে আঘাত করে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এখানে দিন বদলের কিছুই হয়নি, হয়েছে জামাবদল। অর্থাৎ সেই আগের চিত্র। সেই আগের রাজনীতি। রাজনীতির এসব উত্থান-পতন নিয়েই এ উপন্যাসের পটভূমি। ১৯৭০-এর নকশাল রাজনীতিতে অনিমেষের জড়িয়ে পড়া এবং পুলিশি অত্যাচারে পঙ্গু হয়ে যাওয়ার কাহিনী তুমুল এক ইতিহাসের কথাই বলে। সমরেশ মজুমদার এই চরিত্রটিকে নিয়ে তিনটি বিখ্যাত উপন্যাস রচনা করেছেন, উত্তরাধিকার, কালবেলা ও কালপুরুষ, যা ধারণ করে আছে পশ্চিমবঙ্গের অনতি-অতীতকালে রাজনৈতিক-সামাজিক সময়প্রবাহ। অনিমেষের বান্ধবী হিসেবে সময়ের সঙ্গে যুঝেছে মাধবীলতা। বাংলা কথাসাহিত্যে মাধবীলতা-অনিমেষ জুটি সমরেশ মজুমদারের অনবদ্য সৃষ্টি। সময়ের ফসল হিসেবে এসেছে তাদের সন্তান অর্ক। বড় হয়ে অর্কও দুঃখী মানুষদের নিয়ে সাধ্যমতো স্বপ্নপ্রয়াসে জড়িয়ে পড়েছে এবং ব্যর্থ হয়েছে যথারীতি। সর্বত্রই ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক দল হিংস্র থাবা নিয়ে তৈরি। প্রায় তিন দশক সময় অতিক্রম করে সমরেশ মজুমদার লিখেছেন অনিমেষ-মাধবীলতা-অর্কের নতুন কাহিনী ‘মৌষলকাল’। এই উপন্যাসের আধার পশ্চিমবঙ্গের এক উত্তাল সময়। রাজনৈতিক পালাবদলের সেই ইতিহাসের নানান বাঁকে উপস্থিত মাঝবয়সি অর্ক। স্বভাব-প্রতিবাদে, আবেগে, অস্পষ্ট ভালবাসায় অর্ক যেন এক অবাধ্য স্বর। মৌষল পর্বের পারস্পরিক অবিশ্বাসের দিনকালেও প্রৌঢ় অনিমেষ-মাধবীলতা ঝলসে ওঠে আর একবার। কেউ বিপ্লব-বিশ্বাস, কেউ-বা জীবন-বিশ্বাসে অটুট। কাহিনী নির্মাণের জাদুরক সমরেশ মজুমদারের অনবদ্য সৃষ্টি মৌষলকাল।
Was this review helpful to you?
or
১৯৭০-এর নকশাল রাজনীতিতে অনিমেষের জড়িয়ে পড়া এবং পুলিশি অত্যাচারে পঙ্গু হয়ে যাওয়ার কাহিনী তুমুল এক ইতিহাসের কথাই বলে। সমরেশ মজুমদার এই চরিত্রটিকে নিয়ে তিনটি বিখ্যাত উপন্যাস রচনা করেছেন, উত্তরাধিকার, কালবেলা ও কালপুরুষ, যা ধারণ করে আছে পশ্চিমবঙ্গের অনতি-অতীতকালে রাজনৈতিক-সামাজিক সময়প্রবাহ। অনিমেষের বান্ধবী হিসেবে সময়ের সঙ্গে যুঝেছে মাধবীলতা। বাংলা কথাসাহিত্যে মাধবীলতা-অনিমেষ জুটি সমরেশ মজুমদারের অনবদ্য সৃষ্টি। সময়ের ফসল হিসেবে এসেছে তাদের সন্তান অর্ক। বড় হয়ে অর্কও দুঃখী মানুষদের নিয়ে সাধ্যমতো স্বপ্নপ্রয়াসে জড়িয়ে পড়েছে এবং ব্যর্থ হয়েছে যথারীতি। সর্বত্রই ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক দল হিংস্র থাবা নিয়ে তৈরি। প্রায় তিন দশক সময় অতিক্রম করে সমরেশ মজুমদার লিখেছেন অনিমেষ-মাধবীলতা- অর্কের নতুন কাহিনী ‘মৌষলকাল’। এই উপন্যাসের আধার পশ্চিমবঙ্গের এক উত্তাল সময়। রাজনৈতিক পালাবদলের সেই ইতিহাসের নানান বাঁকে উপস্থিত মাঝবয়সি অর্ক। স্বভাব-প্রতিবাদে, আবেগে, অস্পষ্ট ভালবাসায় অর্ক যেন এক অবাধ্য স্বর। মৌষল পর্বের পারস্পরিক অবিশ্বাসের দিনকালেও প্রৌঢ় অনিমেষ- মাধবীলতা ঝলসে ওঠে আর একবার। কেউ বিপ্লব-বিশ্বাস, কেউ-বা জীবন- বিশ্বাসে অটুট। কাহিনী নির্মাণের জাদুরক সমরেশ মজুমদারের অনবদ্য সৃষ্টি মৌষলকাল।
Was this review helpful to you?
or
পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি ঔপন্যাসিক সমরেশ মজুমদার এর বিখ্যাত উপন্যাস ত্রয়ী উত্তরাধিকার, কালবেলা ও কালপুরুষ।সিরিজের আরও একটি উপন্যাস 'মৌষলকাল'।সমরেশ মজুমদার লিখেছেন অনিমেষ-মাধবীলতা-অর্কের নতুন কাহিনী 'মৌষলকাল'। 'মৌষলকাল' হল মহাভারতের একটি অধ্যায়। এখানে মৌষলকাল নামটি লেখক ব্যবহার করেছেন রুপক অর্থে।এই উপন্যাসের প্টভুমি পশ্চিমবঙ্গের এক উত্তাল সময়। যা ধারণ করে আছে পশ্চিমবঙ্গের অনতি-অতীতকালে রাজনৈতিক-সামাজিক সময়প্রবাহ।উপন্যাসের ব্যাপ্তি পশ্চিমবঙ্গের দুই মেয়াদের দুই সরকারের সময়। কাহিনীর শুরু ২০০৮ সালে। যখন বামফ্রন্ট ক্ষমতায় ছিল। আর বর্তমান সময়ে। ক্ষমতায় যখন তৃণমূল কংগ্রেস। তখন শেষ হয়েছে ।পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির অনেক কিছুই খুঁজে পাওয়া যাবে এই 'মৌষলকালে'। মাধবীলতা-অনিমেষের পরবর্তি প্রজন্ম অর্ক।বাংলা কথাসাহিত্যে মাধবীলতা-অনিমেষ জুটি সমরেশ মজুমদারের অনবদ্য সৃষ্টি। তাদের সন্তান অর্ক।রাজনৈতিক অস্থিরতার সেই ইতিহাসের নানান সময়ে উপস্থিত মাঝবয়সি অর্ক। স্বভাব-প্রতিবাদে, আবেগে, অস্পষ্ট ভালবাসায় অর্ক যেন এক লৌহমানব।১৯৭০-এর নকশাল রাজনীতিতে অনিমেষের জড়িয়ে পড়া এবং পুলিশি অত্যাচারে পঙ্গু হয়ে যাওয়ার কাহিনী তুমুল এক ইতিহাসের কথাই বলে।অনিমেষের বান্ধবী হিসেবে সময়ের সঙ্গে নিরন্তর যুদ্ধ করে চলেছে মাধবীলতা।মাধবীলতা-অনিমেষের পরবর্তি প্রজন্ম অর্ক। অর্কের মধ্যে পূর্ববর্তি উপন্যাসের মূল চরিত্রদের ছায়া বেশ প্রকটভাবে ধরা দিয়েছে।তাকে সাহায্য করতে আরও একবার এগিয়ে আসে অনিমেষ-মাধবীলতা। আরও একবার পাঠক ফিরে পায় তাদের চিরচেনা দুই প্রিয় চরিত্রকে তাদের স্বরূপে।
Was this review helpful to you?
or
২০১৩ সালের অন্যতম সেরা বাংলা বই বোধ হয় 'মৌষলকাল'। আমি বাংলা ভাষায় গতবছর বেরুনো সব বই পড়ি নাই। তাই সবমিলিয়ে মৌষলকালের অবস্থান কোথায় থাকবে তা বলা মুশকিল। তবে আমার পড়া সেরা তিনটি বইয়ের মধ্যে এটি অবশ্যই একটি। 'কালপুরুষ' প্রকাশ হয়েছিল প্রায় তিন দশক আগে। কিন্তু তখন আমার জন্মই হয়নি। তাই 'উত্তরাধিকার', 'কালবেলা' ও 'কালপুরুষ' উপন্যাসত্রয়ী পড়েছি অনেক পরে। এবং সেজন্যই 'কালপুরুষ' পড়ার পর এই কাহিনীর পরবর্তি কিস্তির জন্য আমাকে সুদীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে থাকতে হয়নি। কোন বই দেরিতে পড়ার এই একটা সুবিধা পাওয়া গেছে! তবে সে যাইহোক, প্রসংগ যখন মৌষলকাল, তখন প্রথমেই এই বইয়ের নাম নিয়ে কথা বলা যাক। নিঃসন্দেহে নামকরণে যথেষ্ট সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন কালজয়ী লেখক। এ কথা বলছি এজন্য যে মৌষলকাল শব্দটির অর্থ অনেকেরই অজানা। আর কোন বইয়ের শিরোনামই যদি পাঠকের বোধগম্য না হয়, তবে পাঠক সে বই পড়বে কেন? তারপরও পাঠক মৌষলকাল কিনেছে তার কারণ প্রথমত এটি এক অতি বিখ্যাত লেখকের সমধিক বিখ্যাত তিন উপন্যাসের পরবর্তি অংশ। সুতরাং নাম যতই খটমট হোক না কেন, তাতে পাঠকের কিচ্ছু আসবে যাবে না। তারপরও জানিয়ে দিতে চাই এর অর্থ। মূলত মৌষল হল মহাভারতের একটি অংশবিশেষ। উপন্যাসের নামকরণ হয়েছে রুপক অর্থ। ৭০ এর দশক ও সেই থেকে বর্তমান পর্যন্ত সময়ের সাথে লেখক কুরুক্ষেত্র পরবর্তি অংশের রুপক সাদৃশ্য বিবেচনায় এই উপন্যাসের নাম দিয়েছেন 'মৌষলকাল'। সেদিক থেকে বলতে গেলে উপন্যাসের নামকরণ যথার্থ হয়েছে। এত সুন্দর এবং কাহিনীর সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ত আর কোন নামই হতে পারত না। ২০০৮ সালে শুরু হওয়া কাহিনীতে ৭০ এর দশক এর সাথে তুলনায় সমসাময়িককালের পশ্চিমবঙ্গের সার্বিক অবস্থা তথা সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের কথা সুনিপুনভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে উপন্যাসে। এবং তাকে প্রধান থিম করেই এগিয়ে নেয়া হয়েছে গোটা কাহিনী। তুলে ধরা হয়েছে বামফ্রন্টের পরাজয় ও তৃণমূল কংগ্রেসের উত্থানের আখ্যানও। সুতরাং এটিকে এক অর্থে রাজনৈতিক উপন্যাস হয়ত বলা যেতে পারে। লেখক শুধু সেই সময়কার রাজনৈতিক অবস্থার চিত্র বর্ণনা করেই ক্ষান্ত হননি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান ও সে ব্যাপারে লেখকের নিজস্ব চিন্তাধারারও প্রতিফলন ঘটেছে মৌষলকালে। অনেকে হয়ত ভাবতে পারেন, এটি যদি রাজনৈতিক উপন্যাসই হয়, তাহলে একে 'উত্তরাধিকার', 'কালবেলা' ও 'কালপুরুষ' এর পরবর্তি অংশ বলার কি যুক্তি? যুক্তি অবশ্যই আছে। কেননা পূর্ববর্তি উপন্যাস তিনটি যারা পড়েছেন, তারা জানেন সেই উপন্যাস তিনটির কাহিনী একটি নির্দিষ্ট ধারায় বয়ে চললেও সেই তিন উপন্যাসের প্রধান থিম ছিল ভিন্ন ভিন্ন। এই উপন্যাসেও তার কোন ব্যতিক্রম ঘটেনি। 'কালবেলা' উপন্যাসের মাধবীলতা এখানে আছে সশরীরে। তাকে সংগ দিতে এবং উপন্যাসের মূল কাহিনীকে পরিপূর্নতা প্রদানে যথা সময়ে লেখক 'কালবেলা'র আরও অনেক চরিত্রকেই টেনে এনেছেন। তাদের উপস্থিতি জোরপূর্বক নয়। কাহিনীর প্রয়োজনেই তারা এসেছেন আবার চলেও গেছেন। আগের উপন্যাসের সাথে এখানে তাদের বেশ অমিল। কারণ এখন সকলেই বয়সের ভারে ন্যুব্জ। সময়ের পালাবদলে এই উপন্যাসে এসে মাধবীলতা-অনিমেষের পরবর্তি প্রজন্ম অর্ক। অর্কের মধ্যে পূর্ববর্তি উপন্যাসের মূল চরিত্রদের ছায়া বেশ প্রকটভাবে ধরা দিয়েছে। আবার অর্ক তার নিজ ব্যক্তিত্বেও আলো ছড়িয়েছে এই উপন্যাসে। সে তার নিজের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলে। হোঁচটও খায়। রাজনীতির অনুপ্রবেশে তার জীবনের পালাবদল ঘটে। উত্তাল রাজনীতি ও কাহিনীর ভরা জোয়ারের স্রোতে ভেসে যায় সে। তবে হারিয়ে যায় না অবশ্যই। ঠিকই প্রতিকূলতাকে পিছে ফেলে কূল অভিমুখে সাঁতরাতে থাকে। তাকে সাহায্য করতে আরও একবার এগিয়ে আসে অনিমেষ-মাধবীলতা। আরও একবার পাঠক ফিরে পায় তাদের চিরচেনা দুই প্রিয় চরিত্রকে তাদের স্বরূপে। রাজনীতি, ভালবাসা, স্বপ্ন, স্বপ্নভংগ, প্রতিবাদ, প্রতিশোধ - সবমিলিয়ে কাহিনী ডালপালা মেলতে থাকে। সময়ের প্রবাহে উপন্যাসের পরিণতি হয় শীতের ঝরাপাতার মতই। কিন্তু মাটিতে পড়ে তারা অচিন দেশে হারিয়ে যায় না। এতদিনের এক যাত্রার এটিই মহাযাত্রা হতে পারে না। লেখক যদি চান, তাহলে হয়ত আমরা পাব এই সিরিজের ৫ম পর্বও। তবে তার আগে পড়ে নিন মৌষলকাল, যারা এখনো পড়েননি।