User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
এই গল্প পুরোনো ছক বাধাঁ জীবন সংসারে থাকার গল্প আবার না থাকারও গল্প। এই গল্পের নায়ক রাজিব হাসান। ৩৫ বছর বয়সী এই মানুষটা সংসারে কারো স্বামী, কারো বাবা আবার কর্মক্ষেত্রে কারো সহকর্মী, বড় ভাই। সংসার জীবনে তিনি খুব সুখী তাও না আবার অসুখীও বলা যায় না তাকে। ৩৫ বছর বয়সী রাজিব হাসানের স্ত্রী মিতু আর দুই মেয়েকে নিয়ে তার সংসার। কর্মজীবনে পেশায় একজন সাংবাদিক। এইভাবেই চলে তার জীবন। ঠিক নিরানন্দও না আবার আনন্দে ভরপুরও না......! নীল দ্যা অপরাজিতা এই বইয়ের এই গল্পের আরেক উল্লেখযোগ্য চরিত্র। বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে। তার জীবন ক্যালকুলেটর দিয়ে হিসাবমাফিক চলে। সম্পূর্ণ জীবন তার একটা ছকে বাধাঁ। ঠিক সেই মতোই চলে। এর একটু ব্যতিক্রমও হয় না। ও হ্যাঁ তার কিন্তু একটা সংসারও আছে। ফার্নিচারের মতো সাজিয়ে রাখা তার স্বামী শুভ। এইভাবে চলতে গিয়েই একদিন নীল দ্যা অপরাজিতা বেদখল হয়ে যায় আমাদের গল্পের রাজিব হাসানের সাথে। তারপর..? শুরু হয় আরেক গল্প। সেই গল্প দুরকম হতে পারে। হয় মিলনাত্মক অথবা বিয়োগাত্মক! কিন্তু আসলে কি হয়? সব উত্তর সব কৌতুহল মিটবে বইয়ের শেষে...!
Was this review helpful to you?
or
Good..
Was this review helpful to you?
or
আমাদের কল্পনা অন্তহীন। আমাদের প্রতিদিনকার ধরাবাঁধা জীবন তার নিয়মিত গণ্ডির বাইরে এসে তৃপ্তি-অতৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার পাশাপাশি পূর্ণতা-অপূর্ণতার হিসেব নিকেশে অনবরত খোঁজাখুজি করতে চায় কল্পলোকের আস্তাবলে। এই অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায়, পারিপার্শ্বিকতার যাঁতাকলে কখনো কখনো আমাদের স্পন্দন হয় অবলার ন্যায় পিষ্ট, আত্ম-সংকুচিত, সীমাবদ্ধ আবার কখনোবা সমস্ত বিধি-নিষেধ অগ্রাহ্য করে ভর দেয় ইকারুসের ডানায়। যুক্তি-প্রথার নিয়ম-নীতিকে তোয়াক্কা না করে, বিস্তারের সীমাবদ্ধতাকে গোঁজামিল দিয়ে ছুটে চলে নিরন্তর, স্বল্পতাকে পুঁজি করে আস্তানা গাড়তে চায় নূতন কোন বাহানায়। কাগজের নৌকৌয় ভর দিয়ে উত্তাল কোন বিশাল জলরাশির মোকাবেলা করা যাবে কি যাবেনা সে প্রশ্নটিকে আপাতত আমাদের মনের একটি ওয়াটারপ্রুফ কম্পার্টমেন্টে তালাবদ্ধ করে রাখি, সুপ্রিয় লেখক আশীফ এন্তাজ রবির আমন্ত্রণে কাগজের নৌকায় সওয়ার হয়ে ভেসে পড়ার পরে না হয় চিন্তা করা যাবে উত্তাল সমুদ্রে, বিশাল বিশাল দানবাকৃতির ঝড় মোকাবেলা করে সেই নৌকা টিকে থাকতে পারবে, নাকি পারবেনা? নাকি চিরটাকাল হালবিহীন হয়ে অজানা পথে ভেসে বেড়াবে? “জলে নৌকা থাকুক সমস্যা নেই, নৌকায় জল থাকলে সমস্যা। তুমি সংসারে থাকো ক্ষতি নেই, কিন্তু তোমার মধ্যে যেন সংসার না থাকে। আমরা কেউ শ্রীরামকৃষ্ণ নই। কাজেই সুনাগরিকের মতো আমাদের সংসারের ভেতর যেমন বাস করতে হয়, তেমনি আমাদের ভেতরেও জোরালোভাবে সংসার আছে, সংসার থাকে। মাস গেলে বাড়িভাড়া, আইপিএসের ব্যাটারি নষ্ট হলে, সেটি বদলে ফেলা, বড় মেয়েটা অন্কের চেয়ে ইংরেজিতে কেন কম নম্বর পেল, সেটি নিয়ে ভাবা, ছোট মেয়েটার জ্বর হলে তার মুখে থার্মোমিটার পুরে দেয়া-কত কাজ। সংসারে না থেকে উপায় আছে” সংসারে আবদ্ধ থাকা বা না থাকার ইচ্ছেটিকে সুপ্ত রেখে গল্পের দুই মূল কুশীলবের একজন রাজীব হাসান এর উপর প্রথমেই দৃষ্টি ফেরানো যাক। বয়স ৩৫, পেশায় সাংবাদিক, লেখকের ভাষায় “সাংবাদিক বলতে যে সাহসী, নিষ্ঠাবান, দুর্ধর্ষ, যুযুধান, জঙি এবং সত্যপ্রকাশে উদগ্রীব একদল মানুষের ছবি ভেসে ওঠে, আমি ঠিক তাদের দলে নই” বাঁইশটি অধ্যায়ে বিভক্ত অনেকটা ডায়ালগের ছলে কাহিনীর ব্রম্মাণ্ডে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি লেখক আমাদের শোনান তার শ্যাওলা পড়া, ছকবাঁধা জীবনের গল্প, যে জীবনে ভরপুর হয়ে আছে কপট মান-অভিমান, হাসি, আনন্দ আর কিছু জমে থাকা,ভারী হওয়া দীর্ঘশ্বাস। সে জীবনে সওয়ারী হয়ে ক্রমে ক্রমে আসে রাজীব হাসানের স্ত্রী মিতু, সিমু ইসলাম, মারুফ, মুসা, জিমিসহ আরো গোটাকয়েক। “আমরা তিন হতভাগা পুরুষ, তিন মতিচ্ছন্ন স্বামী, তিন বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস, তিনটি গ্লাসের দিকে তাকিয়ে থাকি। ক্রমেই তিনটি গ্লাস ঘেমে ওঠে। সিমু চিয়ার্স শব্দটার বাংলা করেছে, মালে বাড়ি। আমরা গ্লাস ঠোকাঠুকি করে একযোগে বলি, মালে বাড়ি। এক চুমুক খেয়েই মারুফের চেহারা থেকে বিষণ্নতার পর্দা সরে যায়। দারুন একটা হাসি দিয়ে বলে, লাইফ ইজ বিউটিফুল” জীবন সুন্দর কিনা সেটিকে মুহুর্তের মধ্যে প্রমাণ করতে চারপাশ আলোকিত করে অবশ্যম্ভাবীভাবে হাজির হয় মূল গল্পের আরেক কুশীলব নীল অপরাজিতা। “আমি নীল, দ্য নীল অপরাজিতা। আমি ফরসা, মারকুটে সুন্দরী। রোজ সকালে আমি আয়নার সামনে দাঁড়াই। অনেকটা সময় নিয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকি। তাকিয়েই থাকি, আমার আশ মেটেনা। নিজেকে খুব করে জরিপ করি। কোথাও কি কোন খুঁত আছে? নাকটা কি একটু বোঁচা? ঝলমলে চুলগুলো আজ কি একটু কম ঝিকিমিকি করছে? আয়নার দিকে তাকিয়ে আমি মুখ ভেংচাই,ট্যারা চোখে তাকাই, ভ্রু কুঁচকাই, দাঁতমুখ খিঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। এটা হচ্ছে আয়নাকে কষ্ট দেওয়া। তারপর চোখমুখ স্বাভাবিক করে আবার আয়নার দিকে তাকিয়ে একটা ভুবনজয়ী হাসি ছুড়ে মারি। এটা হচ্ছে আয়নাকে সুখ দেওয়া। এসব আমার সকলাবেলার ‘আয়না আয়না’ খেলা। খেলা শেষে নিজেকে গুছিয়ে, ছোটখাটো খুঁতগুলোকে মেরামত করে, ক্লিপের নিচে ঝলমলে চুলগুলোকে ধামাচাপা দিয়ে, চোখের নিচের কালি সযত্নে চাপা দিয়ে রাস্তায় বের হই” নীল অপরাজিতার মনের অলিগলিগুলো খুঁজে ফিরে এর উৎসমূলগুলো বের করা হতে পারে নেহায়েত এক ঝক্কির কাজ। শুরু থেকেই প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসীরূপে হাজির হয় গল্পের নীল অপরাজিতা। অবশ্য শেষ দিকে এই আত্মবিশ্বাসে এসে চিড় ধরে, বলা ভালো, রাজিব হাসানের একাগ্রতায় আর হার না মানার মানসিকতা তাকে শেষপর্যন্ত স্থিরপথে আসার রাস্তা দেখাতে বাধ্য করে, মুহূর্তে মুহূর্তে ভেঙ্গেচুড়ে আবারো শীতলীকরনের প্রক্রিয়ায় জমাটবাঁধার চেষ্টা করে নীল। বলে নেয়া ভালো অপরাজিতা আর রাজিব হাসানের মেলবন্ধনের পুরো প্রক্রিয়াটিকে লেখক একসূত্রে দারুনভাবে গেঁথেছেন ‘ফেসবুক’ নামক বর্তমান সময়ের গুরুত্বপূর্ণ টুলসটিকে ব্যবহার করে। “পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য হচ্ছে, ছেলদের ঘোল খাওয়া। রাজিবকে যখন বললাম, আমি বেশিদিন নেই, তখন রাজিব বেশ ভচকে গেল। এরপরতো সুনামির মতো মেসেজ পাঠানো শুরু করছে। চলে যাচ্ছেন মানে? কোথায় যাচ্ছেন? বিদেশে? নাকি অন্য কোনো সমস্যা? আচ্ছা আপনার কোনো অসুখ বিসুখ নেইতো? চলে যাওয়া মানে কি? কোনো ভয়ংকর কিছু? হি হি হি। ছেলেটা ভালোই ঘোল খাচ্ছে। আহা রাজিব, খাও, খাও, আরও ঘোল খাও। আরেক গ্লাস ঘোল বানিয়ে দেব?” বইয়ের প্রথমাংশের বার্তা আদান প্রদানের সময়টুকুতে লেখক রাজিব কিংবা অপরাজিতা দুজনকেই তাদের নিজ নিজ সাম্রাজ্যের বিস্তার অটুট রেখে প্রতিপক্ষকে ঘোল খাওয়ানোতে ব্যস্ত রেখেছেন। এ ঘোল খাওয়ানোর প্রতিযোগীতায় অপরাজিতা তার স্বভাবগুণে জীবনের গল্প খুঁজে বেড়ানো রাজিবের তুলনায় কিছুটা এগিয়ে থাকে। তবে শেষাংশে সেই উত্তেজনা হ্রাস হয়ে দুজনেই পরস্পরের কাছাকাছি আসার সুযোগে ব্যস্ত হয়। লেখক আশ্চর্য দক্ষতায় আমাদের চারপাশের ঘটনাপুঞ্জ থেকে বাস্তবতার নিরিখে আমাদের নিয়ে তার আবেগের নৌকায় ভেসেছেন, কখনো সে আবেগ বাঁধ ভেঙ্গেছে,কখনো ভাঙ্গেনি, শুধুমাত্র গতিপথ বদলিয়েছে, স্তব্ধ করেছে কয়েকটি মুহুর্তের জন্য, ফিরে ফিরে নজর বুলাতে বাধ্য করেছে আমাদের সঙ্গী সারথিদের উপর: “আমি কেঁপে উঠলাম। নিজেকে শক্ত রাখব ভেবেছিলাম। শক্ত থাকা এতো সহজ হলো না। তবু প্রাণপণ নিজের সঙ্গে লড়াই করতে করতে আমি পাঁচটি শব্দ কোনোক্রমে উচ্চারণ করলাম। আমি ভীষন ভাঙ্গা গলায় বললাম, মিতু। আমি আলাদা থাকতে চাই। আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছিল মিতু। সেই হাত আচমকা থেমে গেল। মিতু কোনো কথাই বলল না। আমিই ভেঙ্গে পড়লাম। আমি হু-হু করে কাঁদতে লাগলাম। মিতুর বুকে মাথা রেখে। মিতু পাথর হয়ে সেই কান্না শুনল। একটা কথাও বলল না, একটি শব্দও না” স্বাভাবিকভাবে পাঠকমাত্রই বিমোহিত হয়ে নিজকে মেলাবে ঘটনার ঘণঘটায়, একজন রাজিব কিংবা একজন অপরাজিতার অবয়বে, নানান অনুষঙ্গে, নানারকমের ঘটনাপ্রবাহে কেউ কেউ অপেক্ষায় থাকবে কারো কারো ফেরার প্রতীক্ষায়। গল্পের অবয়বে অপরাজিতার স্বামী একজন শুভ হয়তো অনেক ধীর, স্থির, ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করে শেষ সময় পর্যন্ত অপরাজিতার জাহাজ নোঙরের অপেক্ষায়, ঠিক তেমনিভাবে একজন মিতুও হয়তো অপেক্ষা করে থাকে শেষ সময় পর্যন্ত একজন রাজিব হাসানের মুহূর্তের ভুল ভেঙ্গে ফেরার প্রতীক্ষায়। আশার কথা হলো এই, ভিন্ন পথে চলে যাওয়া দুটি নৌকো আবারো ভেসে চলে তার পুরোনো গন্তব্যের অভিমুখে: “রাজিব জানো, আমি এখন হাওয়ায় ভাসছি। হাওয়ায় আজকাল কত কিছু ভাসে। হাওয়ায় ওড়ে গাছের পাতা। হাওয়ায় ওড়ে পাখি। হাওয়ায় ওড়ে কতিপয় পতঙ্গ। আর কিছু ঠিকমতো হাওয়ায় উড়ুক বা না উড়ুক, প্রার্থণা কোরো, এই প্লেনটা যেন ঠিকমতো ওড়ে, নিরাপদে তার গন্তব্যে পৌছে। ভালো থেকো রাজিব। ভালো থেকো। আমাদের কাগজের নৌকাটিকে তুমিও দেখে রেখো। এটা আমাদের নৌকো। হোকনা কাগজের, তবুও নৌকো তো!” .............................. এক নজরেঃ বইঃ কাগজের নৌকা লেখকঃ আশীফ এন্তাজ রবি ধরনঃ গল্পগ্রন্থ প্রচ্ছদঃ সব্যসাচী হাজরা প্রকাশকঃ প্রকাশক প্রথম প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ মোট পৃষ্ঠাঃ ৯৪ মূল্যঃ ১৮০.০০ টাকা আইএসবিএনঃ ৯৭৮-৯৮4-৩৩-৭৭৭৩-৯ ............................ পুনশ্চ: লেখক গল্পের শুরুতেই কৈফিয়ত দেবার ভঙ্গিতে বলে রেখেছেন “এই গল্পের মূল চরিত্র একজন লেখক। আমি নিজেও টুকটাক লেখালেখি করি। কাজেই কেউ যদি ধরে নেন, এটা আমার গল্প,তাহলে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়া ছাড়া অন্য উপায় থাকবেনা” সুপ্রিয় পাঠক, আসুননা চলে আসুন, কাগজের নৌকোয় ভেসে গিয়ে জেনে, শুনে, বুঝে, সজ্ঞাণে লেখকের নিজের গল্প মনে করে লেখককে কিছুক্ষণের জন্যে হলেও মাথায় হাত দিয়ে বসিয়ে রাখি। ......................... strong ওয়েবসাইট: /strong a href="http://raselasrafulkabir.blogspot.com/" rel="contributor-to nofollow" onclick="" আশরাফুল কবীরের রাজ্যে /a a href="http://asrafulkabir.wordpress.com/" ক্রৌঞ্চমিথুনের কথোপকথন /a ********** আশরাফুল কবীর কবি ও প্রবন্ধকার ২৭ শে আশ্বিন,১৪২০ মতিঝিল, ঢাকা।
Was this review helpful to you?
or
সাদামাটা একটা গল্প, জীবন থেকে সরাসরি তুলে আনা এক সংক্ষিপ্ত সময়ের গল্প। যা আদৌতে একটা গল্প হলেও বাস্তবিক ভাবে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে আমাদের চারিপাশে। আমাদের সমাজে, আমাদের সংসারে, এবং আমাদের নিজেদের ঘরে! হ্যাঁ যা বলছিলাম, বইটা আসলে পরকীয়া নিয়ে লিখা আর। এই ব্যাপারটাই সবচেয়ে বেশি দায়ী কারো সংসার একেবারে ইতি টানার দিকে ধাবিত করাতে। সেটা প্রতিনিয়ত আমাদের মাঝে রোজ রোজ হচ্ছেও। রাজীব বিয়ে করেছে ভার্সিটিতে ভর্তির কয়েকদিনের মধ্যেই! তাও সেটা প্রেম করে বিয়ে। মিতু তার বউ। সহজসরল, সাদামাটা, স্বামী ভক্ত মেয়ে বলতে যা হয়, মিতু যেন ঠিক তাই। রাজীব, মিতুর দুই মেয়ে আর তাদের নিয়েই সুখের সংসার। রাজীব ফেসবুকের নীল দুনিয়াতে নিয়মিত আর তার বেশ নামডাকও আছে এখানে। অন্যদিকে "নীল অপরাজিতা" মানে "নীল" সে নিজেও এই ফেসবুকের নীল দুনিয়ায় বেশ নামডাক ওয়ালা। শুরুতে তাদের মধ্যে কিছুটা কাঁদা ছুড়াছুঁড়ি হলেও একসময় সেটা একজনের প্রতি আরেকজনের প্রচণ্ড রাগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, আর রাগ থেকেই যে নতুন কিছুর সৃষ্টি সেটা কে জানতো? একদিকে রাজীব বিবাহিত আর অন্যদিকে নীল নিজে এমন সুন্দরী যে, যে কোনো পুরুষ আকর্ষণ করতে সে সক্ষম। তবে রাজীবের মত ছেলে তার প্রতি দুর্বল না হওয়ার কারণ কই? যেখানে সে মিতার সাথে সংসার ধর্ম বিচ্ছেদ করতে উদগ্রীব। তবে নীল ও কিন্তু বিবাহিত! অবাক হচ্ছেন? অবাক হওয়ার কিছু নেই, আসলে নীল বিয়ে করলেও তার স্বামী আদৌতে একটা ফার্নিচার! আর ফার্নিচার স্বামীর বউয়েরা কেমন হয় সেটা জানেন'ই তো। ফার্নিচার ব্যাপারটা পুরুষদের গায়ে লাগলেও ব্যাপারটার সত্যতা অনেকাংশেই বইটাতে লক্ষ করা যায়। যা কি-না নীলের কাছে তার স্বামীকে একটা ফার্নিচার এর বাইরে কিছু মনে করায় না। আর নীল নিজেও সেটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে, শত হোক সেটা যে তার নিজের পছন্দে গড়ে তুলা ফার্নিচার। আর ঠিক কি কারণে তার স্বামীকে ফার্নিচার ফার্নিচার বলছি বা নীল বলেছে সেটা নাহয় বইটা পড়েই জেনে নিবেন। এদিকে যে নীল আর রাজীবের প্রেম জমে খিড়! আচ্ছা এই দুই বিবাহিত প্রেমিক যুগল শেষ পরিণতি কি? জানতে ইচ্ছে করছে না? সেটা আপনি নাহয় বইটা পড়ে যেনে নিবেন। তবে এটা বলতে পারি শেষ বেশ ভালো লাগার মত। আপনি হতাশ হবেননা শিউর। বইটা পড়ে খারাপ লাগেনি বলা চলে তবে খুব একটা যে ভালোলাগা কাজ করেছে নিজের মধ্যে তেমনটাও কিন্তু না। মোটামুটি ভালো লেগেছে বিশেষ করে গল্পের প্লটটা, পরকীয়া ব্যাপারটা কতটা সর্বগ্রাসী হতে পারে সাংসারিক জীবনের জন্য সেটা পুরোপুরি ফুটে না উঠলেও লেখক কিছুটা আভাষ দিয়ে দিয়েছেন বইটার মধ্যে। তাছাড়া দিন শেষে আমাদের অনেক চাওয়া পাওয়া যে আমাদের মনের মধ্যেই সুপ্ত থেকে যায়, শত ইচ্ছে থাকলেও যা কখনো পূর্ণতা পায়না সেটার একটা বেশ ভালো বর্ণনা ছিলো বইটাতে। সবমিলিয়ে সুন্দর একটা বই। সবাইকে পড়ার আমন্ত্রণ রইলো। হ্যাপি রিডিং
Was this review helpful to you?
or
গল্পের মূল চরিত্র রাজিব হাসান আর নীল অপরাজিতা। রাজিব হাসান পেশায় সাংবাদিক (ফিচার লেখক), বয়স পঁয়ত্রিশ, বিবাহিত, দুই কন্যার জনক। ফেসবুক সেলিব্রেটি। নীল অপরাজিতা এমফিল করছে অস্ট্রেলিয়ায়, বিবাহিতা, স্বামী লণ্ডনে কোন একটা চাকরি করে। এছাড়া গল্পের পার্শ্বচরিত্রের মধ্যে রাজিবের বন্ধু মুসা ইব্রাহিম, সিমু ইসলাম, মারুফ, রাজিবের বউ মিতুর কথা বলে নেওয়া ভাল। নীলের বন্ধু রফিক, স্বামী শুভর কথাও বলে নেওয়া উচিৎ। গল্প কথন: রাজিব মুসার সঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। একটা মেয়ে এই সাংবাদিক বন্ধুদ্বয়ের কথার মাঝখানে বামহাত ঢুকিয়ে রাজিবকে দেখিয়ে মুসাকে বলে বসল: উনাকে আমি চিনি। নামটা মনে আসছে না। অ্যাই, আপনার নাম কী? রাতে রাজিবের বন্ধু সিমুর পার্টিতে সিমুর বউ স্বর্ণা রাজিবকে বলে, নীল নামের একটা মেয়ে রাজিবকে ফেসবুকে শোয়ায়ে দিছে। রাজিব রাতে বাসায় ফিরে একটা বাজে কমেন্ট করতে গিয়েও নীলের ছবি দেখে প্রশংসাসুচক কমেন্ট করে। এই সুত্রে নীলের সঙ্গে কমেন্ট চালাচালি থেকে ফ্রেন্ড হওয়া। এভাবেই গল্পের শুরু। গল্পটা আসলে দুজন মানব-মানবীর মাইন্ড গেম খেলার গল্প। দুজন দুজনকে নিয়ে খেলতে থাকে। এর মাঝেই রাজিব অবাক হয়ে দেখল সে প্রেম করে বিয়ে করার পরও আবার প্রেমে পড়েছে। আর নীলের ভাষায় তার বুকের ভেতর কোন হৃদয় নেই, আছে একটা ক্যালকুলেটর, যেটা দিয়ে হিসাব কিতাব করে সে বিয়ে করেছে। কিন্তু কী এক বিচিত্র কারণে সেই ক্যালকুলেটর আর কাজ করছে না এবং সে বেদখল হয়ে গেছে। এর মাঝে রাজিব জানতে পারে নীল বিবাহিতা, স্বামী লন্ডনে থাকে, সে অস্ট্রেলিয়ায় থাকে এবং বর্তমানে ছুটিতে ঢাকা ঘুরতে এসেছে। একদিন তারা দেখা করল এবং আবিষ্কার করল তাদের জীবন জটিল হয়ে গেছে। এভাবেই গল্পটা এগিয়ে যায় এবং শেষ পর্যায়ে এসে আমরা একটা চমক খাই। কাগজের নৌকার মত জীবনের চিত্রটুকু লেখক ফেসবুক থেকে বাস্তব জীবন পর্যন্ত এঁকে গেছেন নিখুঁত ভাবে। এই গল্পে আমার সবচে প্রিয় লাইনগুলো, একজন প্রেমে পড়া, অস্হির মানুষের মানসিকতা এরচে ভাল ভাবে আঁকা সম্ভব কিনা আমি জানি না, হল: 'রাতটা ঘুমিয়ে কাটল। রাতটা না ঘুমিয়েও কাটল।' প্রেম, জীবনের জটিলতা, ফেসবুক, মূল্যবোধ, নিয়তি- সব মিলিয়ে গল্পটা চমৎকার।
Was this review helpful to you?
or
খবরটা শুনে আমি প্রথমে বিশ্বাস করিনি। কাগজের নৌকা উপন্যাস তাহলে সত্যি সত্যি আলোর মুখ দেখেছে। আমার কথাকে অনেকে বাড়াবাড়ি মনে করতে পারেন কিন্তু বিশ্বাস করুণ এটাই আমার মনের কথা। হুমায়ুন আহমেদ মারা যাওয়ার পর যতোটা দুঃখ পেয়েছিলাম সেই দুঃখে কিছুটা প্রলেপ দিতে পেরেছে কাগজের নৌকা। আমি নিশ্চিত লেখালেখি চালিয়ে যেতে পারলে অলস এই লোকটা বাংলা সাহিত্যে নতুন এক দিকপাল হয়ে উঠবে। যারা এখনো বুঝতে পারছেন না কার কথা বলছি তাদের জানিয়ে রাখি লোকটার নাম Ashif Entaz Rabi । আমাদের প্রিয় রবি ভাই। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে একসময়ে হাসাহাসি হতো, বলা হতো কোথাকার কোন রবি, সেও নাকি কবি। অমি জানি কেউ কেউ রবি ভাইকে নিয়েও তাচ্ছিল্য করতে পারেন।কিন্তু আমরা যারা তার খুব কাছাকাছি থাকি, তার পাগলামি দেখি, তারা জানি লোকটা কি ভয়াবহ মেধাবী। রবি ভাইয়ের সবচেয়ে বড় গুন এবং দোষ হলো, আশপাশের মানুষকে সে ভয়াবহ প্রভাবিত করতে পারে। যে ছেলেটা কোনদিন সিগারেট খায়নি তার পাল্লায় পড়লে সে সিগারেট টান দিয়ে জীবনের সুখ খুঁজবে। যে কোন অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসবে। এতো ভালো মানুষের জীবনে সফল হওয়ার কোন কারণ নেই। কাজেই রবি ভাইও ব্যার্থ মানুষ। জীবনে এখনো তিনি সেই অর্থে কিছুই করতে পারেননি। কিন্তু আমরা কিছু মানুষ তাকে ভয়াবহরকম পছন্দ করি। রবি ভাই বললে আমি জেলখানার গেটে কারাবন্দি হতে যেতে পারি আবার লাশ হয়ে শুয়ে থাকতে পারি বিজিএমইর সামনে। রবি ভাইরে আমি চিনি সেই ২০০২ সাল থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরপরই আমি তারে দেখতাম টিএসিসিতে। স্বপন মামার চায়ের দোকানের সামনে পা ঝুলাইয়া বইসা লোকটা চা-সিগারেট খাইতো আর একদল ছেলেপেয়ে তার চারপাশে থাকতো। আমরা একটু দূর থেকে তারে দেখতাম। যদিও এখন রবি ভাই আমার খুব ঘনিষ্ঠ। তার সঙ্গে আড্ডা না দিলে জীবনটা অর্থহীন মনে হয়। মধ্যরাতে রবি ভাইয়ের সঙ্গে পাগলামি করাকেই এখন জীবন মনে হয়। কিন্তু এমন মেধাবী একটা লোক জীবনের দীর্ঘ তিন দশক কেবল রম্য ম্যাগাজিনে ছাই পাশ আর ব্লগ-ফেসবুকে লেখালেখি করে কাটাইছেন। অবশেষে ভক্তকুলের অনুরোধে তিনি উপন্যাসটা শেষ করেছেন। রবি ভাই তার বইয়ের নাম দিয়েছেন কাগজের নৌকা। বৃহষ্পতিবার রাতে Sufi ভাই, Paula আপু, এবং স্বয়ং রবি ভাইয়ের সাথে নানা-কাবাব খাইতে গিয়ে সেই উপন্যাসের পাণ্ডুলিপির মুখবন্ধ পড়ে কয়েকমিনিট তবদা মেরে ছিলাম। এইটা রবি ভাই কি লিখছে! কাবাব ঠান্ডা হয়, আমি একটানে বইয়ের অনেকখানি পড়ে ফেলি। আমি নিশ্চিত এই উপন্যাস বাজারে আসার পর পুরো সমাজে ওলটপালট হয়ে যেতে পারে। অনেকের মাথা খারাপ হয়ে যেতে পারে। অনেক তরুণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অনেক মেয়ে পরকীয়ায় জড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু যারা গভীরভাবে বইটি পড়বেন তারা খুঁজে পাবেন এই সমাজেরই এক প্রতিচ্ছবি যেখানে প্রেম আছে, ভালোবাসা আছে, আছে বেঁচে থাকার সংগ্রাম, আছে মধ্যবিত্তের দোটানা, পাওয়া না পাওয়ার বেদনা।
Was this review helpful to you?
or
বেশ কিছুদিন আগেই বই টা কিনেছিলাম। সময় অভাবে পড়তে পারিনি। কিন্তু যখন হাতে নিলাম তখন না শেষ করে বই টা রাখতে পারলাম না। কাহিনী অনেক জম জমাট। সবচেয়ে মজা অন্তিম অংশে গিয়ে পেয়েছি। যা হোক লেখকের প্রতি শুভেচ্ছা রইল। তিনি আমাদের আরও লেখা পাবার আশা বাড়িয়ে দিলেন। আমি নিশ্চিত ওনার কোন বই আর মাত্র তিন কপি বিক্রী হবে না। চার নম্বর কপি আমিই কিনব। লেখকের জন্য শুভেচ্ছা রইল।
Was this review helpful to you?
or
কোনো এক অজানা কারণে আশীফ এন্তাজ রবি ভাই বিশ্বাস করেন, পৃথিবীর সকল মুভি আমার হার্ড ডিস্কে আছে। প্রায়ই তিনি আব্দার করেন, ওই মুভিটা দাও, গত বছর যেই মুভিটা দিছিলা সেইটা আবার দাও, ওই যে একটা মুভি আছে না; যেইটায় নায়ক থাকে অমুক- এইরকম অনেক মুভি তিনি চেয়ে যান একের পর এক। নিজের প্রেস্টিজ বাঁচাতে আমি ও একের পর এক মুভি ডাউনলোড করি, ডাউনলোড হলে পেন-ড্রাইভে করে তার বাসায় দিয়ে আসি। গত ঈদের ছূটির আগে তিনি কিছু মুভি চাইলেন। আমি সেগুলো পেন ড্রাইভে নিয়ে ঘুরি। তাকে ফোন দেই, তিনি ফোন ধরেন না। দিন যায়, সপ্তাহ যায়- তিনি ফোন আর ধরেন না। একদিন তার বাসার সামনে দাড়িয়ে টানা কয়েকবার ফোন দিলাম। চার-পাঁচবার রিং হবার পর তিনি ধরলেন- আমি এখন একটু ব্যস্ত। তোমাকে দশ মিনিট পরে ফোন করি? আমি তার ফোনের অপেক্ষায় থাকলাম। দশ মিনিটের বদলে ফোন এলো দশ দিন পরে। তখন জানলাম ভাই-র ব্যস্ততার কারণ। তিনি আস্ত একটা উপন্যাস লিখে ফেলেছেন। বিশ্বাস করলাম না। এরপর তিনি জানালেন বই-ও নাকি বের হবে। তাও বিশ্বাস করলাম না। এরপর দিলেন মোড়ক উন্মোচনের ফেসবুক লিংক। আমি তাও বিশ্বাস করলাম না। অবিশ্বাস করার গুরুতর কারণ আছে। রবি ভাইকে চিনি এগার বছর। এরমধ্যে তিনি প্রায় ১৫৭ বার বই বের করবেন বলেছেন, কিন্তু করেন নাই। তবে আমি যেটা বিশ্বাস করি, সেটা হচ্ছে রবি ভাই বাস্তবে, ফেসবুকে, পত্রিকায়- সব জায়গায় সমান দক্ষতায় লিখে ফাটিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। আমি যেমন মনে-প্রাণে চাই রবি ভাই-র বই প্রকাশ পাক, তেমনি চায় তার অসংখ্য ভক্ত। বই-র নাম ‘কাগজের নৌকা’।
Was this review helpful to you?
or
এই সম্পর্কে কবি আখতারুজ্জামান আজাদ বাংলা সাহিত্যে রবি মাত্র দুজনই -- এক জন শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আরেক জন শ্রী আশীফ এন্তাজ রবি। ফিদেল ক্যাস্ট্রো বলেছিলেন, 'আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি।' ক্যাস্ট্রোর মতো করেই আজ বলতে হয় -- 'আমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে দেখিনি, কিন্তু আশীফ এন্তাজ রবিকে দেখেছি।' রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বহুগুণে গুণান্বিত; একাধারে তিনি কবি, গীতিকার, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, দার্শনিক, অভিনেতা আরো কত কী! আশীফ এন্তাজ রবিও কম যান না; একাধারে তিনি ব্লগার, রম্যকার, স্ট্যাটাসকার, টিভি উপস্থাপক, রেডিও জকি আরো কত কী! সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি একজন প্রেমিক, কেবল প্রেমিকই নন; তিনি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের একজন বিশ্বপ্রেমিক। তার হার্টে একটু সমস্যা আছে বিধায় তিনি হুটহাট প্রেমে পড়েন। নিজের প্রেমে পড়া নিয়ে সম্রাট রবি যতগুলো স্ট্যাটাস ফেসবুকে প্রসব করেছেন, সম্রাট শাহ্জাহানও তাজমহল তৈরিতে ততগুলো ইট ব্যবহার করেননি! রবি ভাই ভার্চুয়াল ও অ্যাকচুয়াল জীবনে যেমন একজন বিচ্ছু, তেমনি তিনি দৈনিক যুগান্তরের রম্যসাময়িকী বিচ্ছুরও সম্পাদক ছিলেন। এই ক্ষণজন্মা প্রতিভাবানকে সম্মান জানাতে 'একটেল' নামক একটি মুঠোফোন কোম্পানি নাম পালটে তার নামে কোম্পানির নাম দিয়েছে! শোনা যায় যে, একবিংশ শতকে আশীফ এন্তাজ নামে একজন কিংবদন্তির জন্ম হবে বলে স্বপ্নে দেখে জনৈক পিতা তার কন্যাসন্তানের নাম রেখেছিলেন আশীফা আশরাফি পাপিয়া। কিংবদন্তির নামের সাথে নিজের নামের মিলের মুজিজায় আশীফা আশরাফিও বর্তমানে স্বক্ষেত্রে স্বমহিমায় দাপটের সহিত ভাস্বর হয়ে চলছেন! শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্যে নোবেল পদক পেয়েছিলেন ১৯১৩ সালে; এখন ২০১৩ সাল, অর্থাত্ রবিঠাকুরের নোবেলপ্রাপ্তির পর কাঁটায়-কাঁটায় ১০০টি বছর পেরিয়ে গেলেও আর কোনো বাঙালি সাহিত্যে নোবেল পাননি। রবিঠাকুরের নোবেলপ্রাপ্তির শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে নোবেল কমিটি আরেক জন বাঙালিকে এ বছর সাহিত্যে নোবেল দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং অনিবার্যভাবে ঐ কমিটি শ্রী আশীফ এন্তাজ রবিকেই বেছে নিয়েছে। একটি উপন্যাস লেখার জন্য নোবেল কমিটি তাকে বহু বছর আগে অনুরোধ করে ফেসবুকে একটি পেজও খুলেছিল, পেজের নাম 'রবি ভাই, উপন্যাসটা শেষ করেন!' নোবেল কমিটির অনুরোধে রবি ভাই অবশেষে তার উপন্যাসটি লেখা শেষ করেছেন, উপন্যাসের নাম 'কাগজের নৌকা', প্রচ্ছদ এঁকেছেন সব্যসাচী হাজরা
Was this review helpful to you?
or
কাগজের নৌকা। উপন্যাস পড়ার সময় নামটা মনে ছিল না। পড়া যখন প্রায় শেষ, চোখের দুকোনে চিকচিক করছে পানি। উপন্যাসটা বোধহয় শেষ হয়ে যাচ্ছে। মিতু ভাবীর জন্য কষ্ট হচ্ছে, কোথায় গেলেন তিনি! রাজিব হাসানের সঙ্গে যে তার মুখোমুখি হওয়া দরকার। না হলে পাঠক হিসেবে আমার একটা অতৃপ্তি থেকে যাচ্ছে! এত শূন্যতা চারিদিকে কেন? আমিও কি আমার চারপাশের সম্পর্কগুলোর মধ্যে এভাবেই জড়াই না প্রতিনিয়ত? পড়তে পড়তে মনে হল, উপন্যাসটা রাজিব হাসানের শূন্যতা দিয়েই শেষ করা উচিত, পরবর্তীতে নীল অপরাজিতাও সেই শূন্যতা অনুভব করছে, কিন্তু কার জন্য? কোন চরিত্রটিকে আমি ধারণ করবো? নীল অপরাজিতা নাকি রাজিব হাসান নামকধারী লেখক? সর্বনাশ আমিও যে দ্বিধাদ্বন্ধে পড়ে যাচ্ছি। এও হয়? কারওয়ানবাজার মিডিয়াপল্লীর গল্প তো এটা নয়। এটা যে উত্তরাধুনিক তরুণ-তরুণীর গল্প। কতদিন ধরে এই গল্পই পাঠক হিসেবে আমি খুঁজি ফিরি। ধন্যবাদ আশীফ এন্তাজ রবি ভাই। কাগজের নৌকা উপহার দেওয়ার জন্য।
Was this review helpful to you?
or
আমার এক বড় ভাই ঠিক করলেন তিনি উপন্যাস লিখবেন। খুবই ভালো সিদ্ধান্ত। এবং তিনি আমাকে জানালেন, সেই উপন্যাস কেমন হচ্ছে পড়ে পড়ে আমাকে অভিমত জানাতে হবে। খুবই বাজে সিদ্ধান্ত। সেই বড় ভাই আমাকে একটা করে অধ্যায় পাঠায়। আমি সেটার ওপর নানামুখী জ্ঞানগর্ভ বিশ্লেষণ করে তাকে মতামত জানাই। বলাবাহুল্য, না পড়েই। বড় ভাই কিছুই টের পান না। খুব উৎসাহের সঙ্গে তিনি আমার কাছে নানা রকম পরামর্শ নেন। বড় ভাই: আচ্ছা রাজীব, সপ্তম অধ্যায়ে নায়িকাকে যে নায়ক গুলি করে ফেলল, এটা কি বেশি মেলোড্রামা হয়ে গেল? চেঞ্জ করব? আমি: আরে কী বলেন ওই জায়গাটাই তো সবচেয়ে দুর্দান্ত হইছে। আপনি বরং এক কাজ করেন, গুলিটা নায়িকার হার্ট বরাবর করান। এক্কেবারে খেল খতম। বড় ভাই: রাজীব, আমার সঙ্গে এই ফাইজলামোটা না করলেও পারতা। আমি আগেই সন্দেহ করেছিলাম উপন্যাসটা তুমি পড়তেছো না। সেইটাই পরীক্ষা করে দেখলাম। আমার উপন্যাসে নায়ক-নায়িকার কোনো গোলাগুলিই নাই। আমার আরেক বড় ভাই হলেন রবি ভাই। রবি ভাই যখন ঠিক করলেন উপন্যাস লিখে লিখে আমাকে পাঠাবেন, আমিও ঠিক করলাম লিওনেল মেসির মতো ডজ দিয়ে বেরিয়ে যাব। কিন্তু পারলাম না। উপন্যাসটা আমাকে বড়শির মতো গেঁথে ফেলল। আমি গল্পের মধ্যে রীতিমতো ডুবে আছি এমন একটা সময় রবি ভাই-ই উপন্যাসটা লেখা ছেড়ে দিলেন। আমি রবি ভাইকে প্রতিদিন গুঁতাই--রবি ভাই পরের পর্ব করে দিবেন? রবি ভাই মেসির মতো ডজ দিয়ে বেরিয়ে যান। আমি রবি ভাইকে বলি, বস উপন্যাসটা শেষ করতে কী লাগবে আপনার? রবি ভাই বলে, সিগারেট লাগবে। আমি সিগারেট খাওয়াই। রবি ভাই আবার এক-দুই পাতা লিখে লেখা ছেড়ে দেন। আমি রবি ভাইকে আবার বলি, বস কী লাগবে আপনার? রবি ভাই বলে, স্টারে খাওয়ানো লাগবে। আমি খাওয়াই। রবি ভাই আবার এক-দুই পাতা লিখে লেখা ছেড়ে দেন। আমি রবি ভাইকে আবার বলি, বস কী লাগবে আপনার? রবি ভাই বলে, 'ইন্সপিরেশন লাগবে রাজীব, ইন্সপিরেশন।' হায় খোদা, ইন্সপিরেশন আমি কই পাই? নওরোজ ভাই, সিমু ভাইয়ের মতো তার কাছের বন্ধুরা আমাকে গোপনে বলে, বাদ দেন। আপনি যে চেষ্টা করছেন, এটা আমরা বহু বছর আগেই করে হাল ছেড়ে দিয়েছি। রবি জীবনেও এই উপন্যাস শেষ করবে না। শেষ অস্ত্র হিসেবে রবি ভাইয়ের শক ট্রিটমেন্ট হিসেবে খোলা হয় ফেসবুক পেজ: রবি ভাই, উপন্যাসটা শেষ করেন। বিস্ময়কর হলেও সত্যি রবি ভাই সত্যি সত্যি সেই উপন্যাস শেষ করেছেন। কাভার হয়ে গেছে। ছাপাখানা খটাং খটাং করে ছেপে চলেছে কাগজের নৌকা। অবিশ্বাস্য সুন্দর লিখেছেন রবি ভাই। নিজের সেরাটাই লিখেছেন। উপন্যাসের কয়েকটি অধ্যায় পড়ে আমি বিমোহিত হয়ে গেছি। আমি লেখক হিসেবে যত বাজে, পাঠক হিসেবে ততই ভালো। আমাকে মুগ্ধ করা সহজ না। কিন্তু রবি ভাই আমাকে উপন্যাসের প্রতি পরতে মুগ্ধ করেছেন। কেউ ভালো লিখলে আমার খুব ঈর্ষা হয়। গোপন সেই ঈর্ষার কথা আমি কাউকে বলি না। যদি বলতাম, তাহলে আপনার জানতেন, রবি ভাইয়ের ঈর্ষার সেই আগুনে পুড়তে পুড়তে আমার ফর্সা চেহারাটাই এই কদিনে মাখায়া এনটিনির মতো হয়ে গেছে। অনায়াসে আমাকে এখন আফ্রিকায় চালান করে দেওয়া যায়। রবি ভাইয়ের 'তৃতীয় সন্তান' কাগজের নৌকার মোড়ক উন্মোচন ১২ সেপ্টেম্বর, অঁলিয়াস ফ্রঁসেজে। বিকাল তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত আমরা সবাই সেদিন সেখানে আড্ডা দেব। ১৮০ টাকা দামের বইটা সেদিন মাত্র ১০০ টাকায় কিনতে পারবেন। আশা করি আপনার সবাই আসবেন। রবি ভাই যেন আরেকটি উপন্যাস দ্রুত লেখা শুরু করেন, সেই 'ইন্সপিরেশন' আমাদের সবারই তাকে দেওয়া উচিত। আসছেন তো? পুনশ্চ এক. একজন দাবি করেছেন, এই উপন্যাস বিএনপির আমলে লেখা হলে নাকি নাম হতো 'কাগজের ধানের শীষ'! পুনশ্চ দুই. গোপনসূত্র জানাচ্ছে, রবি ভাইয়ের এই উপন্যাসের নায়িকা যিনি, রবি ভাইকে এই উপন্যাসের পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্য সেই নায়িকা আরেকটা উপন্যাস লিখছেন। সেই উপন্যাসের নাম: স্টিলের জাহাজ!
Was this review helpful to you?
or
সংসারে আবদ্ধ থাকা বা না থাকার ইচ্ছেটিকে সুপ্ত রেখে গল্পের দুই মূল কুশীলবের একজন রাজীব হাসান এর উপর প্রথমেই দৃষ্টি ফেরানো যাক। বয়স ৩৫, পেশায় সাংবাদিক, লেখকের ভাষায় “সাংবাদিক বলতে যে সাহসী, নিষ্ঠাবান, দুর্ধর্ষ, যুযুধান, জঙি এবং সত্যপ্রকাশে উদগ্রীব একদল মানুষের ছবি ভেসে ওঠে, আমি ঠিক তাদের দলে নই” বাঁইশটি অধ্যায়ে বিভক্ত অনেকটা ডায়ালগের ছলে কাহিনীর ব্রম্মাণ্ডে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি লেখক আমাদের শোনান তার শ্যাওলা পড়া, ছকবাঁধা জীবনের গল্প, যে জীবনে ভরপুর হয়ে আছে কপট মান-অভিমান, হাসি, আনন্দ আর কিছু জমে থাকা,ভারী হওয়া দীর্ঘশ্বাস। সে জীবনে সওয়ারী হয়ে ক্রমে ক্রমে আসে রাজীব হাসানের স্ত্রী মিতু, সিমু ইসলাম, মারুফ, মুসা, জিমিসহ আরো গোটাকয়েক। “আমরা তিন হতভাগা পুরুষ, তিন মতিচ্ছন্ন স্বামী, তিন বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস, তিনটি গ্লাসের দিকে তাকিয়ে থাকি। ক্রমেই তিনটি গ্লাস ঘেমে ওঠে। সিমু চিয়ার্স শব্দটার বাংলা করেছে, মালে বাড়ি। আমরা গ্লাস ঠোকাঠুকি করে একযোগে বলি, মালে বাড়ি। এক চুমুক খেয়েই মারুফের চেহারা থেকে বিষণ্নতার পর্দা সরে যায়। দারুন একটা হাসি দিয়ে বলে, লাইফ ইজ বিউটিফুল” জীবন সুন্দর কিনা সেটিকে মুহুর্তের মধ্যে প্রমাণ করতে চারপাশ আলোকিত করে অবশ্যম্ভাবীভাবে হাজির হয় মূল গল্পের আরেক কুশীলব নীল অপরাজিতা। “আমি নীল, দ্য নীল অপরাজিতা। আমি ফরসা, মারকুটে সুন্দরী। রোজ সকালে আমি আয়নার সামনে দাঁড়াই। অনেকটা সময় নিয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকি। তাকিয়েই থাকি, আমার আশ মেটেনা। নিজেকে খুব করে জরিপ করি। কোথাও কি কোন খুঁত আছে? নাকটা কি একটু বোঁচা? ঝলমলে চুলগুলো আজ কি একটু কম ঝিকিমিকি করছে? আয়নার দিকে তাকিয়ে আমি মুখ ভেংচাই,ট্যারা চোখে তাকাই, ভ্রু কুঁচকাই, দাঁতমুখ খিঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। এটা হচ্ছে আয়নাকে কষ্ট দেওয়া। তারপর চোখমুখ স্বাভাবিক করে আবার আয়নার দিকে তাকিয়ে একটা ভুবনজয়ী হাসি ছুড়ে মারি। এটা হচ্ছে আয়নাকে সুখ দেওয়া। এসব আমার সকলাবেলার ‘আয়না আয়না’ খেলা। খেলা শেষে নিজেকে গুছিয়ে, ছোটখাটো খুঁতগুলোকে মেরামত করে, ক্লিপের নিচে ঝলমলে চুলগুলোকে ধামাচাপা দিয়ে, চোখের নিচের কালি সযত্নে চাপা দিয়ে রাস্তায় বের হই” নীল অপরাজিতার মনের অলিগলিগুলো খুঁজে ফিরে এর উৎসমূলগুলো বের করা হতে পারে নেহায়েত এক ঝক্কির কাজ। শুরু থেকেই প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসীরূপে হাজির হয় গল্পের নীল অপরাজিতা। অবশ্য শেষ দিকে এই আত্মবিশ্বাসে এসে চিড় ধরে, বলা ভালো, রাজিব হাসানের একাগ্রতায় আর হার না মানার মানসিকতা তাকে শেষপর্যন্ত স্থিরপথে আসার রাস্তা দেখাতে বাধ্য করে, মুহূর্তে মুহূর্তে ভেঙ্গেচুড়ে আবারো শীতলীকরনের প্রক্রিয়ায় জমাটবাঁধার চেষ্টা করে নীল। বলে নেয়া ভালো অপরাজিতা আর রাজিব হাসানের মেলবন্ধনের পুরো প্রক্রিয়াটিকে লেখক একসূত্রে দারুনভাবে গেঁথেছেন ‘ফেসবুক’ নামক বর্তমান সময়ের গুরুত্বপূর্ণ টুলসটিকে ব্যবহার করে। স্বাভাবিকভাবে পাঠকমাত্রই বিমোহিত হয়ে নিজকে মেলাবে ঘটনার ঘণঘটায়, একজন রাজিব কিংবা একজন অপরাজিতার অবয়বে, নানান অনুষঙ্গে, নানারকমের ঘটনাপ্রবাহে কেউ কেউ অপেক্ষায় থাকবে কারো কারো ফেরার প্রতীক্ষায়। গল্পের অবয়বে অপরাজিতার স্বামী একজন শুভ হয়তো অনেক ধীর, স্থির, ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করে শেষ সময় পর্যন্ত অপরাজিতার জাহাজ নোঙরের অপেক্ষায়, ঠিক তেমনিভাবে একজন মিতুও হয়তো অপেক্ষা করে থাকে শেষ সময় পর্যন্ত একজন রাজিব হাসানের মুহূর্তের ভুল ভেঙ্গে ফেরার প্রতীক্ষায়। আশার কথা হলো এই, ভিন্ন পথে চলে যাওয়া দুটি নৌকো আবারো ভেসে চলে তার পুরোনো গন্তব্যের অভিমুখ