User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বাংলা সাহিত্যের চমৎকার একটা উপন্যাস। সার্থক উপন্যাস। যতক্ষণ পড়েছি আমি মুগ্ধ হয়েছি। পড়া শেষে আমি হয়েছি স্তব্ধ। এই বইটা অবশ্যই পড়া উচিত প্রতেক্যটা মানুষের।
Was this review helpful to you?
or
বইটা যেমন কাব্যিক ছন্দে লিখিত গদ্যরীতি তেমনি এটার বর্ননা,,,শেষ পর্যন্ত চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি
Was this review helpful to you?
or
সচেতনভাবে প্রথম শওকত ওসমানের 'কৃতদাসের হাসি' পড়ি। রচনার ভূমিকা যেমন কৌশলী, রচনাটাও অনবদ্য। এরপর শওকত ওসমানের উপর বড় একটা নিবন্ধ পড়ি। তার দীর্ঘ জীবন ও কর্ম নিয়া। তার শৈশব পড়াশোনা সাহিত্যে জীবন নিয়া। এমন সময়ে তিনি লিখা শুধু করছেন যে মুসলমান লেখকরা আবার কিছু লিখতে পারে নাকি এমন ধারণা চলছিল। তিনি শক্তপোক্ত 'শওকত ওসমান' নাম নিয়া লেখা শুরু করলেন। ব্রিটিশ ভারত তারপর পাকিস্তান সবশেষে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পর পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ও লক্ষ্য করেছেন। যে কয়জন লেখককে সময়ের অভিভাবক ভাবা হতো, শওকত ওসমান তাদের মধ্যে একজন। জননী উপন্যাসে সময়কাল ব্রিটিশ ভারতের অখন্ড বাংলার ক্ষয়িষ্ণু সমাজের ছবি তুলে এনেছেন। বাংলায় মূলত হিন্দু মুসলিম সহাবস্থান বিরাজ করেছে যতক্ষণ পর্যন্ত বর্বরেরা বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়। এই উপন্যাস নিটোল গ্রাম্য পরিবেশের অলঙ্ঘনীয় কাহিনী দিয়ে শেষ হয়েছে। অবশ্যই সুখপাঠ্য। দরিয়াবিবি নামের গ্রাম্য বধুর জীবনপ্রবাহ এই উপন্যাসের উপজীব্য।
Was this review helpful to you?
or
লেখক এই উপন্যাসে তুলে ধরতে চেয়েছেন, এ সমাজ সংসারে প্রকৃত মায়ের ভূমিকা, বন্ধুত্ব , গ্রামের মুগ্ধ করা প্রকৃতি, ধর্মের নামে অকারণে মানুষের মাঝে ঝগড়া-বিবাদ সমাজ ধ্বংসের কারণ। সব দিক থেকে আমার কাছে “জননী” উপন্যাস অসম্ভব সুন্দর লেগেছে। লেখক “শওকত ওসমান” যেন কোন কিছুর খুঁত রাখেননি উপন্যাসে , নিখুঁত সাবলীল একটা উপন্যাস “জননী”।
Was this review helpful to you?
or
জননী দরিয়াবিবি যেন আবহমান বাংলার সকল মা এর প্রতিনিধিত্ব করেছে। বইয়ের শেষটুকু চমক লাগার মতো! মনে রাখার মতো বই। বাল্য বয়সে এই ধরনের বই পড়লে মা-বাবা সন্তানের জন্য কত সংগ্রাম করে টিকে থাকে তা আন্দাজ করতে পারে। পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ বাড়ে।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা জননী -শওকত ওসমান প্রকাশনী:সময় প্রকাশন ধরন: সামাজিক উপন্যাস পৃষ্ঠা:২০৮ মুল্য:২৫০টাকা রকমারী মুল্য: ২১৩ টাকা আমার জীবনের একটা আক্ষেপ ছিলো যে,শওকত ওসমানের কোন লেখা এদ্দিন পড়া হয়নি।ভেবেছিলাম "কৃতদাসের হাসি" দিয়ে শুরু করবো।কিন্তু,কি হলো জানিনে,"জননী" উপন্যাস দিয়ে শওকত ওসমান শুরু করলাম।লেখকের মুনশিয়ানার পরিচয় দিতে এরচেয়ে ভালো কিছু কি হতে পারে আমি জানিনা।এখনো বিহ্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারছি না। পুর্ব বাংলায় উপন্যাসে ধানের গন্ধ,গরুর হাম্বা,ছনের ঘর আর নদী-নৌকার উপস্থিতি না থাকলে আমি সস্তি পাইনা।দম আটকে আসে। গল্পটা মহেশডাঙা গ্রামের।গল্পটা একজন মায়ের।দরিয়াবিবির।দরিয়াবিবি একজন সংগ্রামী নারী।সংগ্রামী মা।কতটা সংগ্রামী হতে পারে,সেটা বলে দিতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু,উপন্যাসের লাস্ট ১৫-২০ পাতায় প্রকাশ পাওয়া সেই কস্টকর মাতৃত্বের বোঝাপড়া আর যুদ্ধের কাহিনীতে আমি বার বার শিওড়ে উঠেছি।পাঠকদের জন্যেই রেখে দিলাম সেটা। গল্পটা আমজাদ আর মোনাদিরের।মোনাদির দরিয়াবিবির প্রথম ঘরের সন্তান।আমজাদ বর্তমান ঘরের সন্তান।লেখক আমজাদের চোখ দিয়ে শিক্ষিত সমাজের মধ্যবিত্ত মানসিকতাটাকে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন।অভাবের স্বরুপ টাকেও তুলে ধরেছেন।উপন্যাসের অনেকগুলো জায়গায় দেখা যায়,মকতব পড়ুয়া আমজাদ বাপের সাথে মাঠ ঘাটে কাজ করতে চায় না।ধুলো মেখে গরু চড়াতেও ঠাটে বাধে তার।না খেয়ে মরবে তাও শিক্ষার "মধ্যবিত্ত ঠাট" ত্যাগ করবেনা। মোনাদির চরিত্রটা দিয়ে দরিয়াবিবির "মাতৃত্বের" অদৃশ্য বন্ধনটাকে ফুটিয়ে গিয়েছেন শওকত ওসমান।মোনাদির বড়ই স্বার্থপর।দরিয়াবিবির প্রথম ঘরের সন্তান।৫-৭ বছর চাচাদের ঘরে থেকে তারপর হঠাত মায়ের কাছে ফিরে আসে। হুটহাট করে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়-এদিকে জননী দরিয়াবিবির চিন্তা আর হাহুতাশের অন্ত থাকেনা। আবার কয়দিন পর টাকা চেয়ে পাঠায় মায়ের কাছে।মা তাকে ফিরিয়ে দেন না।এখানেই "মা" এর অদৃশ্য বন্ধনের স্বরুপটা খুজে ফেরা স্বার্থক। মাতৃত্ব আর নারীত্বের স্বার্থক বহিপ্রকাশ যেখানে দরিয়াবিবি,সেখানে তার বিপরীতে হাসুবৌ নামক বন্ধ্যা চরিত্রটি যেন "জননীত্ব" এর আকুতিটাকেই ফুটিয়ে তুলে,মাতৃত্বের স্বরুপ দান করার লেখকের প্রানপন প্রচেস্টাটাকেই ষোল আনা স্বার্থক করেছে। গল্পটা কেবল দরিয়াবিবির একার নয়।গল্পটা তার স্বামী আর আমজাদের পিতা আজহারের।গল্পটা এই ধর্মগোড়া মুসলমান লোকটার প্রানপ্রিয় বন্ধু জাত হিন্দু চন্দ্রকোটালের। আজহার আর চন্দ্রের ধর্মের বিস্তর পার্থক্য কখনোই দুজনের প্রানের মিলনে বাধা দেয়নি।কিন্তু,হিন্দু-মুসলিম দুই জমিদারের ব্যাক্তি স্বার্থে ধর্মের ব্যবহার,দাংগা; এর মধ্যে দিয়ে মুখ দেখাদেখি বন্ধ,আবার ভুলবূঝাবুঝির অবসান,উপলব্ধি....কাহিনীর অসম্ভব সুন্দর গাথুনী। উপন্যাসের নারী চরিত্রগুলো একটু বেশী শক্তিশালী।একটু বেশি মানবতাবাদী যেন। চন্দ্রকোটালের স্ত্রীর উক্তি টা এখনো কানে বাজে,"গাঁয়ে হিন্দু-মুসলমানের ঝগড়া তো ভাইয়ের সঙ্গে কী।যতসব অপসিষ্টি,হতচ্ছাড়া লোক।" কিংবা,"জমিদারে জমিদারে ঝগড়া।বড়লোক বড়লোকে দলাদলি তোদের কি?" একটা স্পয়লার দেয়ার লোভ সামলাতে পারছিনে। গল্পের ইয়াকুব চরিত্রটা যেন পদ্মা নদীর মাঝির "হোসেন মিয়া" চরিত্রটার মতই,কিন্তু আরো যেন বেশী শক্তিশালী,একটু বেশি মানবিক-রক্তে মাংসের।আরেকটু কম রহস্যময়, আর গল্পের প্রয়োজনে একটু বেশীই প্রয়োজনীয়। কিন্তু,সবকিছু ছাপিয়ে উপন্যাসটাকে নদীর ধারার মত সামনে প্রবাহিত করে নিয়েছেন দরিয়াবিবি। চন্দ্রকোটালের মত বলতে চাই,"দরিয়াবিবি...সেলাম...সেলাম.....।" নাহ।এখানেই ক্ষ্যান্ত দেই।শওকত ওসমানের লেখার উপর বেবাক অপমান করা হয়ে যাচ্ছে।পাঠকের হাতে বিচারের ভার ছেড়ে দিলাম।আমি নিশ্চিত,বইটা এক নিশ্বাসে পড়ে ফেলে,কেউ আমাকে,মুল্যবান সময় নস্টের অপরাধে গাল দিতে পারবেন না!আর,এটা না পরলে,বাংলা সাহিত্যের একটা বড় কিছুই অধরা থেকে যাবে। :) https://www.rokomari.com/book/6986/জননী
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইয়ের নাম-জননী জনরা-উপন্যাস ঔপন্যাসিক-শওকত ওসমান পৃষ্ঠা-২০৪ মূল্য-২৫০ সময় প্রকাশন আর্ত-সামজিক চেতনানিষ্ঠ শিল্পী শওকত উসমান ১২২০ এর দশকের সময়কালে মহেশডাঙ্গা গ্রামের এক কৃষক পরিবারের জীবন চিত্রায়নের মধ্য দিয়ে গড়ে তুলেছেন "জননী" উপন্যাসের কাহিনী। দরিদ্র কৃষক আজহার ও তার স্ত্রী দরিয়ার পারিবারিক টানাপড়েন উপন্যাসের মূল অংশ। আজহারের পারিবারিক ঐতিহ্যে ওহাবীর বীরত্ব ও সাহসিকতার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস থাকলেও , দরিদ্রের কষাঘাতে সে আজ সর্বস্বান্ত। সকাল সন্ধ্যা সে দরিদ্রের সাথে যুদ্ধ করে চলছে। স্বামী স্ত্রী দুজন মিলেও কাজ করে সংসারের মানুষ গুলোর পেট ভরাতে পারছে না। সংসার বলতে স্বামী-স্ত্রী সহ একছেলে, এক মেয়ে আর আশ্রিত বৃদ্ধ খালা আসেকজান। আবার দরিয়ার আগের পক্ষের এক ছেলে এসে জুটেছে। ব্যয় বাড়ে কিন্তু সংসারে আয় বাড়ে না। এতোটাই জীর্ণ তাদের অবস্থা যেখানে নামাজ পড়বার পাটিটা শতছিন্ন। কিন্তু নতুন একটা পাটি আনবার তাদের সামর্থ নেই। এই যখন অবস্থা তখন একদিন আজহারের এক ধনী ফুফাত ভাই ইয়াকুব আসে। সময়ে অসময়ে সে দরিয়াদের সাহায্য করতে থাকে । এর মধ্যে দরিয়ার আগের পক্ষের ছেলে মোনাদীকে একদিন আজহার প্রচন্ড মারে তার ফলে মোনাদী বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। রাগে ক্ষোভে দরিয়া আজহারের সাথে কথা বলে না। লজ্জায় আজহারও বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। দরিয়া তখন তার এই সন্তানদের নিয়ে অকূল দরিয়ার পতিত হয়। এভাবেই যেতে থাকে উপন্যাসের ধারাবাকিতা। "জননী" উপন্যাসে ঔপন্যাসিক দরিদ্যে আচ্ছন্ন এক পরিবারের চিত্র চিত্রায়িত করেছেন। সামাজিক পরিমন্ডলে একটি পরিবারের এরকম অর্থনৈতিক সমস্যায় পরিবারের মানুষগুলোর জীবনে নানা রকম জটিলতার সৃষ্টি করেছে। এর মাঝে আজহারের শোভাকাঙ্ক্ষী হিন্দু চন্দ্রকোটালের পরিচয় দেন ঔপন্যাসিক। ব্যক্তিগত মতামত:"জননী" উপন্যাস গ্রাম বাংলার আবহে রচিত শওকত উসমানের প্রথম উপন্যাস। ঔপন্যাসিক এই উপন্যাসে জননী নামের সার্থকতা দেখিয়েছেন। পুঁজিবাদী সমাজে গ্রামীন শ্রমজীবীদের দূর্দশা বর্ণনা করেন। ইংরেজ শাসনামলের শেষ ভাগে গ্রামীন জীবনে যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা গিয়েছিলো তা প্রকাশ পায়। পুঁজিবাদী শোষণের যুগে একদল মানুষ দিন দিন টাকার পাহাড় গড়ে তুলতে থাকে। আরেক দল শুধু এই পাহাড়ের পাথরে পদদলিত হতে থাকে। শহরে যে কাঁচামালের মজুত প্রকিয়া গড়ে উঠেছিলো। তাতে ফসলের মৌসুমে কৃষকেরা কম দামে শস্য বিক্রি করে এবং অমৌসুমে সেই ফসল তাদের তিনগুন দাম দিয়ে কিনতে হতো ফলে বাংলার কৃষক দলিত হতে থালে পুঁজিবাদীর চাকায় উপন্যাসের আরেকটি অংশে হিন্দু মুসলমানের দাঙ্গা প্রকাশ পায় দুই জমিদারকে কেন্দ্র করে। দরিয়া চরিত্রটি দিয়ে ঔপন্যাসিক জননী শব্দের সার্থকতা দেখিয়েছেন। এখানে এই চরিত্রটি সার্থক। এবং আজহার চরিত্রটি দরিদ্রের কষাঘাতে জীর্ণ হয়ে বিলিন হয়ে গেছে। সব কিছু মিলে অসমান্য এই উপন্যাস অনেক অর্থ বহন করে, যদিও আমি ততটা আমি বিশ্লেষণ করতে পারি নি। পাঠক পড়া মাত্রই বুঝতে পারবেন। অসম্ভব ভালো লাগার একটা উপন্যাস। এই উপন্যাস শেষে ঠিক কার জন্য মায়া বা কার অনুশোচনা হওয়া বা কার প্রতি অসম্ভব রাগ হওয়া উচিৎ তা নিয়ে আমি সব সময়ই দ্বন্দ্বে পরে যাই। https://www.rokomari.com/book/6986/জননী
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বই-জননী লেখক-শওকত উসমান ধরন-উপন্যাস পৃষ্ঠা-১৯৫ মূল্য-২০০ সময় প্রকাশনী ..... জননী উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র দরিয়া । সে গ্রাম্য কৃষক আজহার এর দ্বিতীয় স্ত্রী। আবার আজহারও দরিয়ার দ্বিতীয় স্বামী। এর আগে একবার তার বিয়ে হয়েছিল সেখানে এক পুত্র সন্তান হবার পর তার স্বামীর মৃত্যু হয়। এর পর ছেলেকে তারা নিয়ে নেয় কিন্তু দরিয়ার ঠাই হয় নি। তাই তাকে আবার বিয়ে দেওয়া হয় মহেশডাঙার দরিদ্র কৃষক আজহার এর কাছে। আজহার নিরীহ মানুষ। আজহার ও দরিয়ার পারিবারিক টানাপড়েন এই উপন্যাসের বিষয়বস্তু।আজহারের পারিবারিক ঐতিহ্যে ওহাবীর বীরত্ব ও সাহসিকতার গৌরবউজ্জল ইতিহাস থাকলেও দরিদ্রের নির্মমতায় সে আজ পিষ্ট। সংসারে আছে সন্তানাদি আমজাদ, নাইমা ও আশ্রিত বৃদ্ধ খালা। স্ত্রী স্বামী দুজন মিলে সংসারের হাল ধরে তবুও কূল পাওয়া হয় না তাদের। তার উপর হঠাৎ করে দরিয়ার আগের পক্ষের সন্তান মোনাদি এসে আশ্রয় নেয়। এতে আরো লোক বাড়ে কিন্তু আয় নয়। তবুও তাদের কোন রকম চলে যাচ্ছিলো খড় কুটো ধরে। মহেশডাঙ্গার চন্দ্রোকোটাল হলো আজহার এর বন্ধু। হটাৎ আবার দরিয়া পোয়াতি হলো। এক সন্ধ্যায় দরিয়া যখন পানি পানি বলে চিৎকার করছিলো তখন তখন বাচ্চা মেয়ে নইমা ছাড়া আর কেউ ছিলো না বাড়িতে। আজহার তখন মাঠ থেকে কষ্ট করে লাঙল নিয়ে ফিরেছে। স্ত্রীকে পানি দেওয়ার সময়ই আমজাদ আর মোনাদি বাড়ি ফিরে। তখন রাগের মাথায় আজহার, আমজাদ আর মোনাদি কে প্রবল ভাবে মারে। উঠানে ছেলেদের রক্তাক্ত দেহ দেখে জননী উত্তেজিত হয়ে জ্ঞান হারায়। মোনাদির মা দরিয়া, কিন্তু আজহার তার বাবা নয় তাই আজহার এর হাতে মার খেয়ে মোনাদি রাগে দুঃখে বাড়ি ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়। দরিয়া আজহার এর সাথে সংসার করলেও মোনাদির প্রতি তার অপরিসীম দরদ। তাই সন্তান এর এভাবে চলে যাওয়ার পর দাম্পত্য জীবনে ফাটল ধরে। এর মধ্যে বাড়ি আসা শুরু করে আজহার এর ফুফাত ভাই ইয়াকুব। এভাবেই চলতে তাকে উপন্যাসের যাত্রা। এর পরিনতি ঠিক শেষের দিকে কি এনে দেয় তা পাঠক ই জানেন। আজহার নিরীহ লোক কিন্তু রাগের মাথায় সে আমজাদ এর সাথে মোনাদীকে মারে। এটা সে নিজেকে তার পিতা জ্ঞান করে এবং মোনাদীকে সন্তান মনেকরেই করে। কিন্তু মোনাদির নিরুদ্দেশ হওয়ায় দরিয়া সংসারে আজহারের সাথে তেমন আর আকর্ষনবোধ করে না। দরিদ্র সংসারে কিছু বাড়তি উপার্জনের জন্য আজহার শহরে যায় কিন্তু ফিরে আসে শুন্য হস্তে। এর মধ্যে উপন্যাসে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চিত্র দেখা যায়। আর এতে বন্ধু চন্দ্রকোঠাল এর সাথে তার দুরত্ব বাড়ে। দরিদ্র এর যাতাকলে পিষ্ট দরিয়ার জীবন তবুও সন্তানের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য সে তার সর্বাত্মক চেষ্টা করে। জননী উপন্যাস কাহিনী নির্ভর নয়, চরিত্র নির্ভর। আর সেই কেন্দ্রীয় চরিত্র হলো দরিয়া। উপন্যাসের শেষ দিকে ট্র্যাজেডি বিদ্যমান। এই উপন্যাসে দারিদ্র্যক্লিষ্ট মানুষের সংকটময় দিনের প্রতিলিপি এবং সহমর্মিতার চিত্র উচ্চকিত হয়েছে। আজহার এর খালা আসেকজান এর একটা করুন চিত্র আছে। দারিদ্র্যের মধ্যে চন্দ্রকোটাল, আমিরন চাচী, সাকের পত্নীর সহমর্মিতার ও মমত্ত্বের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। দরিয়া চরিত্রের গাম্ভীর্যের মাধ্যমে উচ্ছলতা প্রকাশ পড়ে। স্বামীর দারিদ্র্যপূর্ন বৈচিত্র্যহীন সংসারে আনন্দের জীবন্ত প্রতিমা। সহজ সরল দরিয়া জটিল কঠিন কিছু বোঝে না। ভাগ্য বিড়ম্বিত নারী দরিয়া প্রথমে বিধবা হয়ে স্বামীগৃহে ছেলেকে রেখে অন্যত্র বিয়ে করলেও সেখানে তার ভাগ্যে সুখ জোটে নি। তবুও সে তার সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সব, সব সয়ে নিয়েছে।এমনকি স্বামীর অনুপস্থিতে তাকে ধান কাটতেও কোটালের শরণাপন্ন হতে হয়।লেখক মূলত তাকে জননী রূপে চিত্রায়িত করেছেন। মা সন্তানের জন্য কতটুকু করতে পারে বা করে থাকে এটাই লেখক দেখিয়েছেন। আর্তসামাজিক চেতনানিষ্ঠা কথাশিল্পী শওকত ওসমানের জননী উপন্যাসে উঠে এসেছে ১৯২০ এর দশকের সময়কালে গ্রামের কৃষক পরিবারের জীবন চিত্রায়িত করেছেন। রেটিং৪.৮ রকমারি লিংক https://www.rokomari.com/book/6986/জননী
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইয়ের নাম: জননী লেখক:শওকত ওসমান প্রকাশনা: সময় প্রচ্ছদ: কাইয়ুম চৌধুরী পৃষ্ঠা: ২০৮ মলাট মূল্য:২৫০ পাঠ প্রতিক্রিয়া: আলী আজহার খাঁ, বাংলার অসংখ্য কৃষকের মতোই একজন কৃষক। মহেশডাঙা নামের এক অজপাড়াগাঁয়ে স্ত্রী সন্তান নিয়ে তার বাস। আজ তার সংসার চরম অভাবক্লিষ্ট, কিন্তু একসময় তার বংশের ভীষণ জৌলুশ ছিল । তার প্রপিতামহ আলী মজহার খাঁ ওহাবী আন্দোলনের শহীদ। তিনিই এ গ্রামে খা বংশের পত্তন করেছিলেন। তখন সম্পদ সম্ভ্রম সবই ছিল। কিন্তু আজ গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোডের পাশের গ্রামটিতে এসব শুধুই গল্প হয়ে ফেরে। এ বংশের চতুর্থ পুরুষ আলী আজহার খাঁ পুত্র আমজাদ ও কন্যা নঈমাকে নিয়ে কোনোমতে দিনযাপন করে। এই সংসারের হাল যে শক্ত হাতে ধরে আছে সে আজহার খাঁর স্ত্রী, দরিয়াবিবি, এ উপন্যাসের "জননী" । স্বামীর খামখেয়ালীপনা আর দুর্বিষহ দারিদ্রের চোখরাঙানী উপেক্ষা করে শক্তহাতে পরিচালনা করে সংসারকে। ক্রমে এই সংসারে আসে নতুন অতিথি, শরীফন, স্বাভাবিকভাবেই। কিন্তু একই সময়ে আরেকটি কিশোরের আবির্ভাব ঘটে এ সংসারে, সে দরিয়াবিবির প্রথম স্বামীর সন্তান মোনাদির। ক্রমে তাকে ঘিরেই আবর্তিত হতে থাকে কাহিনী। পৃথিবীতে অনেক শিশুই মায়ের স্নেহ পায়না, তাদের কথা সবাই জানে, ভাবে। কিন্তু যে মা বুকভরা স্নেহ নিয়ে বসে আছে, অথচ সে স্নেহবৃষ্টি বর্ষিত হওয়ার সুযোগ পায়না তার অন্তর্দাহনের কথা হয়তোবা এভাবে কখনো ভাবা হয়নি। মুখে যদিও তিনি বলেছেন, "কেন যে ইহারা গরীবের সংসারে ভিড় করিতে আসে!" , তবুও তাদের জন্যই নিজেকে তিলে তিলে শেষ করেছেন তিনি। তিনি যেন চিরচেনা বাঙালি মায়েরই প্রতিরূপ, যিনি সন্তানস্নেহে রণরঙ্গিনী রূপ ধারণ করনে। কারণ শুধু ঢাল তলোয়ার হাতে শত্রুর প্রাণহরণই তো যুদ্ধ নয়, সবচেয়ে বড় যুদ্ধ তো জীবনযুদ্ধ , যা একজন মানুষকে দুমড়ে মুচড়ে নতুন আদলে গড়ে তোলে। শেষকথা: বইটিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো অনেক বিষয় বিদ্যমান । সাম্প্রদায়িকতা থেকে সম্প্রীতি, বিশ্বাসঘাতকতা থেকে অকৃত্রিম সহযোগিতা- কি নেই এই একটি উপন্যাসে ! আর আছে প্রকৃতির অপরূপ বর্ণনা, যা অন্য দিক দিয়ে বইটির শিরোনামেরই প্রতিনিধিত্ব করে । শত উৎপাত সত্ত্বেও সকলকে আগলে রাখা প্রকৃতি-মা আর দরিয়াবিবি যেন একাকার হয়ে মিশে যায় "জননী" এই একটি শব্দের মধ্যে। (বি.দ্র.: এটা আমার জীবনের প্রথম রিভিউ। তাছাড়া আমি এই গ্রুপের অন্যতম জুনিয়র মেম্বার। তাই সকল প্রকার ত্রুটি মার্জনীয়) রকমারি লিঙ্ক: https://www.rokomari.com/book/6986/জননী