User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগীতা ::::::::::::::০৭:::::::::::::: বই- মেজদিদি লেখক:- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ঘরানা:- চিরায়ত গল্প প্রকাশনী:- জয় প্রকাশন রকমারি মূল্য:-৫৩ টাকা রেটিং:- ৫/৫ কেষ্টর বাবা নেই। মা মুড়ি ভেজে চেয়ে চিন্তে কেষ্টকে চৌদ্দ বছরের সুবোধ বালকটি করেছেন। নিজে না খেয়ে জোর পূর্বক ছেলেকে খাওয়াতেন। কেষ্টও মাঝে মাঝে এই সুযোগটি কাজে লাগাত। একবার একগাদা ভাত খেয়ে ঘুড়ি-নাটাই কেনার পয়সাও আদায় করেছে মায়ের কাছ থেকে। হঠাৎ একদিন কেষ্টর মা মারাগেলেন। মাতৃবিয়োগের কষ্টে কেঁদে-কেঁটে জ্বর বাধিয়ে ফেললেন। জ্বর সেরে গেলে ভিক্ষা করে মায়ের শ্রাদ্ধ করান কেষ্টা। গ্রামে আপন বলতে আর কেউ রইলো না তার। গ্রামের মুরুব্বিরা বললেন রাজহাটে তোর সৎ দিদি কাদম্বিনীরর স্বামীর বাড়ি। সে বড় মানুষ, তুই সেখানে গিয়েই থাক। বেশ ভালো থাকবি। গ্রামের এক নাপিত কেষ্টর মাকে মা ঠাকুরুন বলে ডাকতেন তিনি সদয় হয়ে কেষ্টাকে তার দিদির বাড়ি নিয়ে যায়। কেষ্টার দিদি কোনদিন কেষ্টকে দেখেনি। চিনেও না। বুড়ো নাপিত কেষ্টার পরিচয় দিলে কাদম্বিনী রেগে একগাল কথা শুনিয়ে দেন। কেষ্টকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বলেন। তখন নাপিত লোকটি বলেন "দিদিঠাকরুন, লক্ষীর ভাঁড়ার তোমার। কত দাস-দাসী, অতিথী- ফকির, কুকুর-বিড়াল এ সংসারে পাতপেতে মানুষ হয়ে যাচ্ছে। এ ছোঁড়া দু'মুঠো খেয়ে বাইরে পরে থাকবে। ভাই হিসাবে না রাখো, দুঃখি, অনাথ বামুনের ছেলে হিসাবেই রেখে দাও দিদি"। এমন কথা শুনলে পুলিশেরও মন গলে যাবে। আর কাদম্বিনীতো মেয়ে মানুষ। তাই সে আর কোন কথা বাড়ালো না। বুড়া কেষ্টকে আরালে ডেকে দু'চারটে শলা-পরামর্শ দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে চলে গেলেন। স্বভাব সুলভ কেষ্ট ভাতটা একটু বেশি খায়। তারমধ্যে আবার গত সন্ধ্যা হতে পেটে কোন দানা পরে নি। আজ আবার এতোটা রাস্তা হেটে হেটে দিদির বাড়ি এলেন। কাদম্বিনীর স্বামী নবীনের ধান-চালের আরত আছে। সে দুপুর বারটার পরে বাড়ি ফিরে "বক্র কটাক্ষে নিরিক্ষন করে" প্রশ্ন করেন "এটি কে"? উত্তরে কাদম্বিনী মুখ ভারী করে বলেন, "তোমার বড়কুটুম গো, বড়কুটুম"। নবীন তার শাশুরির মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছিলো। তার বুঝতে আর কিছুই বাকি থেকে না। হাজারো ভর্তষণা শোনতে হয় কেষ্টকে। কারনে অকারনে কাদম্বিনী তাকে গালমন্দ করতে করতে পাশের বাড়ির দোতলার বিশেষ একটি খোলা জানালার দিকে তাকান। পাশের দু'তলা বাড়িটি মেজভাই বিপিনের। তারও ধান-চালেরই কারবার। কিন্তু অবস্থা বড়ভাইয়ের মতো অতো ভালো নয়। তবু তার বাড়িটিই দুতলা। মেজবউ হেমাঙ্গিনী শহরের মেয়ে। সে দাস-দাসী রেখে বিলাসী জীবন যাপন করতে পছন্দ করে। লোকজন খাওয়াতে খুব ভালোবাসে হেমাঙ্গিনী। মোটা চালে চলে না বলে তার দুই জায়ে ঝগড়া করে, চার বছর আগে সংসার আলাদা হয়। এর পর দুই পরিবার আবার মিলেছে ঠিকই কিন্তু কলহ একটি দিনের জন্যও কমে নি। কারণে-অকারণে বড়জা তাকে দোষারোপ করতে থাকে। বিকেল তিনটার সময় হেমাঙ্গিনী বড়জার বাড়িতে আসে। কেষ্টা তখন কুয়ার কাছে কাপড়ে সাবান মাখছেন। তার দিদি দূরে বসে তাকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন কি করে অল্প সাবান খরচ করে কাপড় কাঁচতে হয়। মেজজা কে দেখে কাদম্বিনী বললেন, অনেক নোংরা কাপড় পরে কেষ্টা এসেছেন তাই সে তাঁর নিজের কাপড় পরিস্কার করছেন। হেমাঙ্গিনী কাপড় দেখে বুঝতে পারেন এখানে কেষ্টার কাপড়ের সাথে কম বেশি বাড়ির সবার কাপড় আছে। হেমাঙ্গিনী তার বড়জাকে বলেন দিদি এখানে তো শুধু কেষ্টার কাপড় নয়। এখানে বাড়ির সবারই কাপড় আছে। এমন দু'চারটে কথা শুনিয়ে হেমাঙ্গিনী নিজের কাজের লোক দিয়ে কাপড়গুলো কাচিয়ে দেয়। এবং বড়জা কে বলে রাতে কেষ্টা এবং পাঁচুগোপাল তার বাড়িতে খাবে। কেষ্টাকে হাতধরে হেমাঙ্গিনী বলেন তুই আমাকে মেজদিদি বলে ডাকবি। যে গরু দুধ দেয় তার লাথীও ভালো তাই হয়তো বড়জা মুখবুজে কথাগুলো হজম করে নিলেন। কয়েকদিন যেতেই কেষ্টার জামাইবাবু আরতের দুইজন কাজের লোককে ছাড়িয়ে দেন। তাদের অভাব পূরণ করেন কেষ্টাকে দিয়ে। কেষ্টা দূর দূরান্তে দেড়মনি বস্তা বয়ে নিয়ে যায়। দুপুরে কেষ্টা খেতে আসলে দেখেন তার দিদি ঘুমাচ্ছেন। সে এতোটাই ক্ষুদার্ত ছিলো যে বাঘের মুখথেকেও খাবার নিয়ে আসতে পারতো কিন্তু দিদিকে ঘুম ভাঙ্গানোর সাহস পায়না। কেষ্টার ছোট ভাগনী এসে বলে মা খেয়ে ঘুমাচ্ছে। তোমার খাবার রান্নাঘরে ঢাকা দেওয়া আছে। কেষ্টার মেজদিদি এগিয়ে এসে বলেন ষ্টার খাওয়া হয় নি আর তোর মা ঘুমাচ্ছেন? কেষ্টার মেজদিদি তাঁর বাড়ি থেকে এক বাটি দুধ নিয়ে এসে দেখেন কেষ্টা রান্নাঘরে বসে একথাল ভাতের সাথে অল্প একটু তরকারি নিয়ে গোঘ্রাসে খেয়ে যাচ্ছেন। একবাটি দুধ পেয়ে কেষ্টার মুখটা আনন্দে ভরে উঠলো। এই নির্মল আনন্দই যেনো দেখতে চান হেমাঙ্গিনী। কেষ্টাকে তিনি বলেন, "কিছু দরকার হলে মেজদির কাছে চেয়ে নিবি কেমন? খিদে পেলে মেজদির কাছে চলে আসবি। কেষ্টা দুপুরে নিজের দিদির ঘুম না ভাঙ্গিয়ে সোজা চলে যায় মেজদির বাড়ি। সেখানে খেয়ে সোজা আরতে। এই সুখটাও বেশিদিন সইলোনা কেষ্টার কপালে। কেষ্টার দিদি জানতে পেরে প্রচুর গালমন্দ করলেন এবং প্রহার দিলেন। কেষ্টার কষ্ট চোখে দেখতে পারে না তার মেজদিদি। ভাইয়ের কথা ভেবে সে নিজেও আড়ালে কাঁদে। দুই ভাই-বোন একে অপরকে চোখে হাড়ায়। তাদের ভাইবোনের সম্পর্কের মাঝে বড় দেয়াল তৈরি করে দেন কাদম্বিনী এবং তার স্বামী। কেষ্টাকি এভাবেই পঁচে মরবে তার বড়দিদির কাছে???? নাকি তার প্রিয় মেজদি কিছু করবেন তার জন্য? নাকি সে নিজে কিছু করবেন???? কি করে দেয়াল ভিঙ্গবেন তারা??? #পাঠ_প্রতিক্রিয়া:- শরৎ বাবুর সব দিদিই চমৎকার। মেজদিির তুলনা হয় না। তার অসাধারন লেখনিতে খুব সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে সেই যুগের পারিবারিক সম্পর্কগুলো। সেই সাথে গ্রামের সমাজ ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে অসাধারন শরৎ বাবুর মেজদিদি।